বহুরূপী মানুষের নিপুণ চিত্রায়ণ
বহুরূপী মানুষের নিপুণ চিত্রায়ণ
মীম মিজান
মানুষ বহুবর্ণিল। এই বর্ণ তারাই দেখতে পান যাদের দেখার চোখ আছে। উপলব্ধির বোধ আছে। এমনই দেখার চোখ ও বোধসম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছেন শফিক সেলিম। কেননা তার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ন্যাশনাল কারিকুলাম এন্ড টেক্সটবুক অব বোর্ড বাজার আইল্যান্ড’র পুরোটা জুড়ে এই মানুষের বহুরূপীতার চিত্রায়ণ হয়েছে নিপুণভাবে।
কাব্যগ্রন্থটির নাম কবিতাটি সচরাচর দেখা কবিতার থেকে ভিন্ন। পুরো কবিতাই সংলাপ। আসলে রাজনীতিক যারা তারা কীভাবে শোষণ করছে তারই এক নিপুণ চিত্র। এক লোক চুরি করে মানে পকেট মারে। মানুষ যখন রাস্তা পারাপারের জন্য আইল্যান্ডে দাঁড়ায় তখন তাদের দৃষ্টি থাকে শা শা বেগে ধাবিত লক্কর ঝক্কর গাড়ি ঘোড়া পেরিয়ে ওপারে যাওয়া। দৃষ্টি সেদিকেই নিবদ্ধ। এই ফাঁকে, চোর হাকে। চেইন খুলে, পকেট হাতড়ে সব নিয়ে নেয়। আমরাও রাজনীতির কাছে বন্দী। ইলেকশনে দাঁড়িয়ে জনপ্রতিনিধি আমাদের সবকিছুও ওভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা টের পাই না। যখন সম্বিত ফিরে, চোর ধরাছোঁয়ার বাইরে। চোরের কথার মাধ্যমে রাজনীতির সেই চোরা পথ বলছেন কবি:
: আইল্যান্ডে খাড়াইলেই?
: হ, খাড়াইলেই সব কিচু আমার।
: ক্যামনে?
: ইলেকশনে খাড়াইলেই যেমনে নেতারা দ্যাশের গুয়া মারে তেমনে’
এ কবিতায় তিনি বেশকিছু বিষয়ের খোলাসা করেছেন। যেমন শিক্ষিত হলে কী করে ব্যাংক ডাকাতি করা যায়। মেয়ে শিক্ষিতা হলে কার সাথে বিয়ে দিবেন এমন। চোরকে তাই কবির জিগ্যেস আর চোরের উত্তর:
: লেহাপড়া হিকলে কি করতি?
: ব্যাংক লোন নিতাম।
: তারপর?
: ক্যাসিনু খেলতাম, টাকিলা খাইতাম, গাড়ি নিয়া ঘুরতাম, মাগি...
: তর পুলারে কি করবি?
: লেখাপড়া হিকামু, বড়ো চোর বানামু
: তর ম্যায়ারে কি করবি?
: লেহাপড়া হিকামু, বড়ো চোরের কাছে বিয়া দিমু’
উন্নয়ন উন্নয়ন বলে যে জোয়ার। তারই নিচে মানুষ না খেতে পেয়ে, বিনে চিকিৎসায় মারা যায়। আর কিছু বললে চোখে কিছু দেখে না জনগণ। আর যতো সমালোচনা। এই সমালোচনার দারুণ মঞ্চায়নের কবিতা ‘তুমি মিয়া আজাইরা’। কবি বলছেন:
‘আন্দা নাহি তুমি?
‘এত্তো বিজলি বাত্তি, এত্তো ফালাই ওভার, বিলডিং, এত্তো উন্নয়ন কিচ্চু দেহো না?
গণভবন গিল্লা খাইবার চাও?’
আসলে গরীব মানুষেরা কি গণভবন গিলে খেতে চায়? পারবে কি? না। তারা চায় নাগরিক অধিকার। মৌলিক অধিকার, মানবিক জীবন যাপন। যা আমলা, রাজনীতিক আর পাতিরা খেয়ে বিদেশের ব্যাংক ভরেছে, সুরম্য বাড়ি গড়েছে। আবার যারা উচ্ছিষ্ট ভোগী তারাও কম যায় না। কাকের মতো চোখ বুঝে মহারাজের জয়গান করে। এমনই জয়গানের পঙ্ক্তি রচনা করে এসব নিকৃষ্ট মানুষের চরিত্র চিত্রায়ণ করেছেন এভাবে:
‘আমি সরকারি চাকরি করি
সরকার আমাগো খাওয়ায়
দ্যাশ বালো আচে’
শুধু কি আমলা বা সরকারি চাকুরে? অকবি, কুসাহিত্যিক, অপসংস্কৃতি সাধক এরাও কম যায় না। শিল্প যেমন তার স্বসময়কে ধারণ করবে তেমনই তা হবে গণমানুষের। কিন্তু এদের কোনও সৃজন মানুষকে ধারণ করে না। নারী শরীর, প্রেম, প্রকৃতির স্তুতি গাইতে গাইতে বেহুশ। কবি একই কবিতায় এসব মুখোশ আঁকছেন:
‘এহুন বরষা মাস-খালি প্রেমের কবিতা লেহুম
আর পুরোনো প্রেমিকার বিলাউজের মাপ কতো
তাই ভাবুম’
(দ্যাশ বালো চলচে...)
আইনের চোখ নাকি অন্ধ। কাউকে দেখতে পায় না। যার অপরাধ তারই শাস্তি হয়। দেশের সংবিধানও আইন। দেশের নাগরিকদের অধিকার রক্ষার আইন। কিন্তু সেই সংবিধান এখন দেখতে পায়। তার চোখে ক্ষমতাসীন, পুঁজিপতিরা নিষ্কলুষ। যত অপরাধ গরীব হয়ে জন্মানোতে, বিরোধী মত হওয়ায়। তাই সেই সংবিধানের প্রতি নিদারুণ খেদোক্তি কবির:
‘খাড়াইয়া মুততাচি
দেহি, ছেঁড়া বইয়ের পাতা
পাতার উপরে ল্যাহা ২৭ নম্বর আর্টিকেল
উপরের ল্যাহা বাংলাদেশের সংবিধান’
(আমাগো সংবিধান)
সংবিধানে অধিকার সংরক্ষিত থাকলেও তার বাস্তবায়ন না থাকায় দেশের সব মানুষই সমালোচনা করে। বিশেষ সমালোচনার স্থান চায়ের দোকান। এক কাপ চা, আর গ্যালন গ্যালন সমালোচনা। এমনই সমালোচনায় বস্তি থেকে সংসদ ভবন এমনকি জাতিসংঘ ও মার্কিন মুলুকও উঠে আসে। কবির কাব্য পঙ্ক্তি বরাবরই নির্মম সমালোচনায়। এমনই নির্মম সমালোচনায় নাকানিচুবানি খাচ্ছেন রাঘববোয়ালরা। দায়িত্বশীল ব্যক্তির উক্তি ছিলো ‘সরল বিশ্বাসে ঘুষ খাওয়া যাবে।’ কবি তাই বলছেন:
‘দুর্নীতি কিচু না
সরল বিশ্বাসে করেন, ক্ষমা পাইবেন
তবে ভুলেও কিন্তু ইচ্চাকিত দুর্নীতি করবেন না
সুযোগ লুইট্যা ন্যান। দ্যাশ যাইক গুয়া মারা’
(চাওয়ালা)
বইটি দুটো ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে ছয়টি কবিতা। আর দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ ‘সোনার মাকড়ি’ অংশে আছে আঠারোটি কবিতা। দ্বিতীয় অংশের কবিতাগুলোতে কবি নিজের ব্যক্তি জীবনের কথা বলেছেন। কিন্তু ব্যক্তিকে বিশ্বের একজন করে তুলে প্রকাশভঙ্গী এমন করে দিয়েছেন যা হয়েছে সব মানুষের। সবার জীবনের প্রতিচ্ছবি। এককথায় গ্রন্থটিকে বলা যায় মানুষের আয়না। সে প্রান্তিক হোক আর ভুড়িওয়ালা মালদার হোক সবাই স্থান করে নিয়েছেন এখানে। যে গরুর চামড়া ত্রিশটাকা বিক্রি হয় সেই চামড়ার জুতো গুলিস্থানের সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটে বিক্রি হয় হাজার টাকার উপরে। প্রান্তিক শ্রমিক তাই ভেবে দিশেহারা। এরূপ চেটেপুটে খাচ্ছেন সবাই। সে প্রসঙ্গ ও বুনন হামেশাই দেখা যায়।
‘সোনার মাকড়ি’ কবিতাটিও গরীব-প্রান্তিক মানুষের। মায়ের সম্পদ বলতে একজোড়া সোনার মাকড়ি। তাই বারংবার সুদে বন্ধক রাখতে হয় স্থানীয় স্বর্ণকারের কাছে। কেননা পরীক্ষার ফি দেয়ার সামর্থ্য নেই মায়ের। পরে নিতান্ত কষ্টে মাকড়ি জোড়া ফেরত নেয়ার টাকা জোগাড় করেন মা। এ যেনো সারা বাংলাদেশের মেটে মজুরের চিত্র।
বোধসম্পন্ন কবি ‘হাসপাতাল’ নামক কবিতায় মানুষের জীবনের দু’টি কান্নার কথা বলেছেন। একটি কান্না বাবা মারা যাওয়ার। আরেকটি নতুন শিশুর ওয়াও। বোধের খোঁজ করতে বলেছেন ‘মানুষের সময় হয় না’ কবিতায়। নিজেকে জানা সব থেকে বড় কাজ। কবি বলছেন:
‘শকুন বদলায়ে যায়। মানুষের সময় হয় না
নিজেকে দেখার।’
কৃষকদের নিয়ে দু’টো কবিতা লিখেছেন তিনি এখানে। কৃষকদের মহত্ত্ব তুলে ধরেছেন মমত্ববোধের কবি:
‘কৃষকের প্রাণ নিয়ে ধানেরা বয়স্ক হয়
তাই, কৃষকের চেয়ে বড়ো কোন ভগবান দেখি না’
(কৃষক)
বঞ্চিত করছি প্রান্তিক মানুষকে। আর পাহাড়, বন-বনানী, প্রকৃতিকে নিজেদের বিলাসিতার জন্য ছেটে-কুটে শেষ করছি। কিন্তু তাতে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়োল মারছি। কেননা এই প্রকৃতিতেই আমাদের বাস। তাদের ধ্বংসে নিজেদেরই সর্বনাশ। কবি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন:
‘আপনি দেখলেন
আপনি মূলত খেয়েছেন আপনার নিজের হাত, পা এবং হৃৎপি-’
(আপনি একজন মানুষ)
মানুষ। এই মানুষই আবার শ্রেষ্ঠ দুশমন মানুষের। জাত-পাতের জন্য কত্ত যে মানবের কবর রচিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কবি ‘নাম’ শীর্ষক কবিতায় এ বিষয়টি পরিস্ফুটন করেছেন। দায়। পিতার দায়। মাতার দায়। সন্তানের দায়। কিন্তু এই দায় শুধু পিতা-মাতারাই করে যাচ্ছি। আবার সন্তান হিশেবে পিতা-মাতার দায় এড়িয়ে যাচ্ছি। তাদের ইহধাম ত্যাগে পাবো স্বস্তি। সমস্যা নেই আমাদের ইহধাম ত্যাগের আকুল প্রত্যাশি হবে আমাদের সন্তান। এমনই বিষয়বস্তু ‘বিক্রি’ ও ‘বাবা’ কবিতার। সবচেয়ে বড় চপেটাঘাত দিয়েছেন কবি আমাদের দুই গালে। পঙক্তি দু’টো :
‘পাঁচ ভাইবোন মিলে পরামর্শ করি
বাবা মাকে বিক্রি করলে কেমন হয়’
(বিক্রি)
আমরা কি মানুষ হবো না। না দু’পেয়ে জন্তু হিশেবে থেকে যেয়ে হাম্বা হাম্বা ডাক দিয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুরবো? তবে এ মানুষের স্থান লোকালয়ে না হয়ে হোক আমাজনে। আর যদি সত্যিকারের মানুষ হতে পারি তাহলে লোকালয় হবে শেখ ফজলল করীমের কাব্যের স্বর্গ।
ভাষার ব্যবহারে কবির অকৃত্রিমতা লক্ষণীয়। ঠিক যেনো শহীদুল জহিরের গল্পের প্রান্তিক থেকে সংসদ ভবনের বাসিন্দারা কথা বলছে। প্রচ্ছদটি উপলব্ধির জন্য পুরো কাব্যগ্রন্থের শব্দে শব্দে পরিভ্রমণ দরকার। কবি মমিন মানব ফ্ল্যাপে যে কথাগুলো লিখেছেন তা কাব্যগ্রন্থের সারাৎসার। মজার বিষয় কোনও যতিচিহ্ন ব্যবহার করেন নি মমিন। আর একটি বিষয় হচ্ছে যে, যত প্রাতিস্বিক কবি আছেন তাদের কবিতায় ছন্দ আছে। আছে অলংকার। শফিক সেলিমের সব কবিতাই গদ্য। গদ্যের মধ্যে একটি স্বাদ আস্বাদিত হলেও ছন্দের অন্যান্য বিষয়গুলো আমার দৃষ্টিতে পড়ে নি। আমার পরামর্শ থাকবে, কবিতার ভাব, ভাষা, আবহ ও বুননে তার যে দক্ষতা সেখানে যদি ছন্দ ও অলংকার যোগ হয় তাহলে আরও মনোহর হবে কাব্য কানন।
প্রকাশক: বাংলা জার্নাল
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি-২০২০
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত
মূল্য: ১৩৫ টাকা
মিত্রকথা
মিত্রকথা
১
সংবাদপত্রের সঙ্গে প্রায় দুই দশকের সম্পৃক্তি খবরেন্দ্রনাথের। সঙ্গনাথ মজুমদার তার সমসাময়িক সহকর্মী। কণ্ঠস্বরবাংলায় খবরেন্দ্রনাথ নিউজ এডিটর আর সঙ্গনাথ অ্যাসিস্ট্যান্ট নিউজ এডিটর হিসেবে কাজ করে। মিত্রবহুল চ্যাটার্জি সাব এডিটর। সে ওদের অনেক জুনিয়র। ঢাবি থেকে জার্নালিজমে অনার্স শেষ করেছে। মাস্টার্সও করছে। একই সঙ্গে চাকরি করছে। যাতে করে গ্রামে থাকা মা, বাবা এবং বোনের জন্য কিছু পাঠাতে পারে। কণ্ঠস্বরবাংলায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে সিভি পাঠিয়ে দিয়েছে। অ্যাক্সপিরিয়েন্সের ঝুলি না থাকলেও দক্ষতা ও জ্ঞান থাকার ফলে খবরেন্দ্রনাথের উৎসাহেই তাকে নিতে সম্মত হয়েছেন এডিটর অমলচন্দ্র তালুকদার। সে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক কাভার করে। ন্যাশনাল ডেস্কে আছেন রঙ্গলাল মুখার্জি। কাজকর্মে পুরোদস্তুর সাধক। সবসময় ফেসবুকে গানবাজনা পোস্ট করতে থাকে। স্পোর্টস ডেস্কের কাজী মুস্তাফা অবশ্য এগুলো পছন্দ করে না। তার মতে এসব খুবই গর্হিত কাজ। একবার ফেসবুকে এর বিরোধিতা করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়ে সে। পরে রঙ্গলাল ওকে ব্লক করে দেয়। অফিসে তাদের মধ্যে ব্যাপক ঝগড়াবিবাদ হলেও মিত্রবহুল এসব শুনতে চায় না। সে মনে করে, তার একটা অ্যাম্বিশন আছে। গ্রামে মা, বাবা আছেন। তাদেরকে দেখাশোনার দায়িত্ব তার উপরেই চলে এসেছে। আর ছোট বোনের বিয়েটাও দেয়া প্রয়োজন। ছেলেপক্ষ অবশ্য ওর বোনকে দেখতে এসেছিলো গত মাসে। কিন্তু কালো হওয়ায় পছন্দ করে নি।
মিত্রবহুল চ্যাটার্জি লেখালেখিতেও সিদ্ধহস্ত। অফিস থেকে বাসায় ফিরে না ঘুমিয়ে কবিতা লিখে সময় পার করে। মাঝেমধ্যে বড়সড় গদ্য লিখে ফেলে অফিসের অবসরে। সেসব অফিসের কম্পিউটারে একটা ফোল্ডারে সে রেখে দিয়েছে। ওতে আর কেউ হাত দেবে না। কারণ অফিসে যার যার জায়গায় বসা নিয়ম। গভীর রাতে চিন্তাভাবনা করার মধ্যে সে তৃপ্তি খুঁজে পায়। কবিতা লেখে দ্রোহের পক্ষে প্রেমের জবানে। দাম্ভিক রাজনীতির কবল থেকে একদিন এ দেশ মুক্ত হবেইÑএ নিয়ে তার তেমন মাথাব্যাথা না থাকলেও কবিতায় অসাধারণভাবে সেসব প্রশ্ন তোলে হরহামেশা।
২
উপমা নামে মেয়ে আছে অফিসে। কাজ করে কালচারাল ডেস্কে। গানও করে বেশ। অফিসের কলিগদের সঙ্গে সহজে মেশে না। তবে যেদিন থেকে মিত্রবহুল চ্যাটার্জি যোগ দিয়েছে, সেদিন থেকে তার খুব মনে ধরেছে। মিত্রবহুল চ্যাটার্জি অবশ্য এগুলো গুরুত্ব দেয় না। মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতেই পছন্দ করে না। একদিন উপমা তার পাশে বেশ ঘুর ঘুর করছিলো। একটা মেয়ে পাশে ঘুর ঘুর করছে আর বারবার তাকাচ্ছেÑবিষয়টা অস্বস্তির মিত্রবহুলের জন্য। কিন্তু কিছুই বলছে না। বরং নিজের কাজ করতে চেষ্টা করছে। সিরিয়াসলি নিচ্ছে না। উপমা কিন্তু ওর দিকেই বারবার ঘুরছে। কিন্তু মিত্রবহুলের একটা আলাদা শক্তি আছে। সে কোনোভাবেই খেয়াল করে নি। অস্বস্তি একটু হচ্ছে। তারপরও না। তখন উপমা নিজেই গিয়ে বললো, অ্যাইযে। শুনছেন। মিত্রবহুল একটু সামলে নিলো। এটা কোনো অফিসিয়াল বিহেভ হলো ? অ্যাইযে ? বললো, জ্বী, বলুন। উপমা বললো, ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস ডে সম্পর্কে কিছু লেখা লাগবে। আপনি দেবেন ? মিত্রবহুল বললো, কি ধরনের লেখা লাগবে ? উপমা বললো, নারীপ্রগতি টাইপ সামথিং। মিত্রবহুল তখন একটা কাগজ দিয়ে বললো, আপনার মেইল নম্বরটি দেন। লেখা পেয়ে যাবেন। উপমা কাগজটি একটু বিরক্তির সঙ্গে নিলো। তারপর নিজের মেইল নম্বর লিখে আবার মিত্রকে দিলো। মিত্র সেটা রেখে দিলো। উপমা চলে যেতে যেতে আবার ফিরে এসে বললো, আচ্ছা আপনার ফেসবুক আইডি কি যেন ? মিত্র বললো, কেন ? উপমা বললো, অফিসিয়াল মেটার নিয়ে আলোচনা করতাম। মিত্র তখন বললো, আমি অফিসের কারো সঙ্গে ফেসবুকে থাকি না। উপমা তখন ‘ওহ’ বলে নিজের কামরায় চলে গেল।
উপমা বেশ সাজগোজ করেই এসেছিলো। মেয়েরা যখন কোনো ছেলেকে পছন্দ করে বসে তখন কোনো এক অজানা কারণে একটু বেশি সাজগোজ করে ওই ছেলের সামনে ঘুর ঘুর করে। উপমা চেয়েছিলো মিত্র ওকে দেখে একটু তাকাক। মিত্র তা বোঝেনি অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করেছে। নিজের কামরায় এসে তাই মিত্রর উপর বেশ রাগ হচ্ছে উপমার।
কম্পিউটারে অনেকগুলো ট্যাবে খোলা আছে। তাতে আছে বিভিন্ন প্রকার সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট। যেকোনো প্রকার নিউজের আপডেট ঘণ্টায় ঘণ্টায় আসছে। কিন্তু সে ভাবছে অন্যকিছু। হঠাৎ কি যেন মনে করে সে পাশের ট্যাবে মেইল খুললো। এবার অবশ্য সে অবাক হয়ে গেল। মিত্রর লেখা দেখতে পেল। এত দ্রুত ? কিভাবে ? লেখা কি ওর রেডি ছিলো ?
৩
মিত্র যে রুমে কাজ করে সে রুমেই খবরেন্দ্রনাথ আর সঙ্গনাথ একসঙ্গে তদারক করে। উপমা আরেকটি রুমে কাজ করে। সংবাদ আজকাল পাইকারি ব্যবসায় হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকদিন পর আলু, পটলের বিক্রেতারা যেমন এ মহল্লা থেকে ও মহল্লায় ছুটে যায় বিক্রির জন্য সেভাবে সংবাদও বিক্রি করা হবে। খবরেন্দ্রনাথ আজ বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লো। তাই তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। এখন সঙ্গনাথ সামাল দিচ্ছে সব। এডিটর অমলচন্দ্র তালুকদার প্রতিদিন রাত আটটায় আসেন, এক ঘণ্টা বসেন। তারপর চলে যান। উপমা এখানে দুই বছর ধরে কাজ করছে। রাবির ম্যাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম থেকে অনার্স করার পর এখানে সে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেয়। পরে সঙ্গনাথ কালচারাল বিটে ওর দক্ষতা দেখে তাকে ওদিকটার দায়িত্ব দিয়ে দেন। সঙ্গনাথের সঙ্গে বিশেষ খাতির উপমার। অনেক দিন ধরে মিত্রকে এই পদে কাজ করতে দেখা উপমা এখন ভাবছে কিভাবে ওকে আরেকটু বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।
দুপুরে সঙ্গনাথের সঙ্গে মিত্রর বিষয়ে একটু খোলামেলা আলোচনা করলো উপমা। মিত্র তো অনেকদিন ধরে সাব এডিটর হিসেবে কাজ করছে। এবার একটু প্রমোশন হলে হয়তো ও উন্নতি করতে পারে। সঙ্গনাথও বিষয়টা ভাবলো। তাই তো, এ ব্যাপারে তো ভাবা হয় নি। আচ্ছা এডিটর আসুক। তারপর দেখা যাবে। এত কিছু যে হচ্ছে মিত্র কিন্তু কিছু জানে না। সে তার মতোই অভাবনীয় গতিতে কাজ করছে। কাজ শেষে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। মাস শেষে বেতন পাচ্ছে। র্যানডম।
ওদিকে কাজী মুস্তাফার সাংবাদিকতা জীবন ১১ বছরের। এখানে তার প্রধান কাজ হলো রঙ্গলালের সঙ্গে দেখা হলেই যেকোনোভাবে বিবাদ তৈরি করা এবং তার পেছনে মিত্রের কাছে অনেকগুলো কথা বানিয়ে বানিয়ে বলা। উপমা অবশ্য ওকে কোনোভাবেই দেখতে পারে না। কারণ কাজী মুস্তাফা অনেক আগে একদিন ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলো। টেম্পুতে উপমার সামনেই বসেছিলো কাজী মুস্তাফা। হঠাৎ কি মনে করে সে উপমার পাশে ঘেঁষতে থাকে। উপমার অস্বস্তি হলেও কিছু বলেনি। সেই কাজী মুস্তাফা এ পত্রিকার শুরু থেকেই স্পোর্টসে কাজ করছে। আগে পাক্ষিক স্বকণ্ঠ নামে একটি পত্রিকায় সে কাজ শুরু করে। পরে ওই পত্রিকার প্রকাশক মারা যাওয়ার পর প্রকাশকের ছেলেমেয়েদের উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত এডিটরকেও অপমান করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এর প্রতিবাদ হিসেবে ওই পত্রিকার চিফ রিপোর্টার জাহিদ, ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক এডিটর বাবলু মালিক আর স্পোর্টসের কাজী মুস্তাফা একযোগে পদত্যাগ করে চলে আসে ওখান থেকে। বাবলু মালিক এখন সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেছে, জাহিদ এখন নিজেই একটি পত্রিকা সম্পাদনা করছে আর কাজী মুস্তাফা এখন কণ্ঠস্বরবাংলায় কাজ করছে।
উপমার সঙ্গে এই রকম ঘটনা অবশ্য অফিসের কেউ জানে না। কাজী মুস্তাফাও আর এ বিষয়ে উপমার কাছে যায় না। উপমাও আর আসে না কাজী মুস্তাফার কাছে। ওদিকে মিত্রর প্রতি আলাদা ভালো লাগা উপমাকে নাওয়াÑখাওয়া ভুলিয়ে দিয়েছে। ফেসবুকে যেকোনো পোস্টে লাইক দিয়ে যাচ্ছে। আর মিত্র তাতে অতিষ্ঠ হয়ে উপমাকে ব্লক করে রেখেছে। ফলে উপমার ভেতরকার যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেল। সারাদিন দমবন্ধ লাগে তার। মিত্রর কাছে যেতে চাইলেও অফিসের কাজের চাপে যেতে পারে না। যখন তার সময় হয়, তখন মিত্র বাসায় চলে যায়।
একদিন সুযোগমতো অফিসের সামনের একটা চায়ের দোকানে উপযাচকের মতো দেখাও করে বসলো উপমা। মিত্র বিরক্ত হলেও কিছু বুঝতে দিলো না। উপমা বুঝতেও পারলো না।
‘আচ্ছা আপনার অল্প বেতনে চলে ?’
মিত্র বললো, হ্যাঁ। খুব ভালো চলছে।
উপমা বললো, আমি তো দেখতে পাচ্ছি চলছে না।
মিত্র বললো, না। খুব ভালো চলছে।
উপমা কিছু বললো না আর।
মিত্র দাঁড়িয়ে চা খেয়ে শেষ করে নিলো। ততক্ষণ উপমা উপযাচকের মতো দাঁড়িয়ে থাকলো। মিত্রর অস্বস্তি হলেও কিছু বললো না। বরং অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে শুরু করলো। তারপর যখন টেম্পুর দিকে যাবে মিত্র, উপমা তার পাশে পাশে আসতে শুরু করলো। সে মিত্রকে বললো, আপনাকে পাঠাও কল করে দেই ? মিত্র বললো, নো থ্যাঙ্কস। উপমা বললো, না আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি টেম্পুতে গেলে আপনার কোনো ক্ষতি হতে পারে। মিত্র বললো, আমার বিশ্বাস কোনো ক্ষতি হবে না। আর অ্যাকটা কথা, আপনি আমার সামনে আর কোনো দিন আসবেন না। আপনাকে দেখলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। উপমা তখন বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। মিত্র বললো, আর একটি কথা, অফিসে বারবার ঘুরঘুর করবেন না আমার কাছে। উপমা সায় দিলো। তারপর বললো, আমার একটি ইচ্ছা আছে। তা হলো, তোমার কোনো ইচ্ছাই পূরণ করবো না আমি।
উপমা দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে মিত্রের কাছ থেকে চলে এলো। ফেসবুকে আনব্লক করার ব্যাপারে বলতে চেয়েছিলো সে। ভেবেছিলো অন্তত ঘর করতে না পারলেও ফেসবুকে তার পোস্টগুলো দেখে মন ভরাবে। কিন্তু মিত্রর ভেতর ‘নৈব চ, নৈব চ’ মনোভাব তাকে হতাশ করে তুললো। এখন অফিসে মিত্রের রুমেও প্রয়োজন ছাড়া যায় না।
৪
এর মধ্যে অফিসে এক বড় কা- বেঁধে গেছে। এর আগে এডিটরের কাছে বলা হয়েছিলো মিত্রর প্রমোশনের ব্যাপারে। কিন্তু এডিটর দেখি, দেখবো বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলো। সঙ্গনাথ আর উপমা এ বিষয়ে বারবার আলোচনা করছে। কিন্তু এডিটরের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো কিছু হবে না। খবরেন্দ্রনাথকেও জানানো হয়েছে। মিত্র এসবের কিছুই জানে না। রোজকার মতো কাজ করে যাচ্ছে ও। ভারত আর চীনের মধ্যে পূর্ব লাদাখের সীমান্তবিরোধ নিয়ে আজ মস্ত রিপোর্ট লিখতে হবে। তিন শ’ শব্দ বেঁধে দেয়া হলেও লিখে ফেলেছে পাঁচ শ’ শব্দ। এত শব্দের মধ্যে রিপোর্ট ছাপার উপযোগী নয়। তাই সে শব্দ কমাতে শুরু করেছে। কিন্তু এ নিউজে তো সবটাই দেয়া লাগবে। সে তুলনায় পত্রিকায় স্পেস নেই। আজ ইন্টারন্যাশনাল পেইজে তিনটে বিজ্ঞাপন আর একটা বিশ্লেষণী মত ছাপা হচ্ছে। বিশ্লেষণী মত যিনি লিখেছেন, তিনি স্বনামধন্য কলামলেখক অরুণেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ। তার লেখায় শব্দ আছে আটশো। আবার ছোট দুই বোনের রিপোর্টও যাচ্ছে। তাই শব্দ তাকে কমাতেই হবে। খবরেন্দ্রনাথই মিত্রকে বলে দিয়েছে এসব।
রাতে এডিটর এলে আবার মিত্রর প্রমোশনের বিষয়টা তোলা হলো। সঙ্গনাথ আর উপমা এডিটরের সঙ্গে বসেছে। আজ মনে হচ্ছে এডিটর ফাইনাল কিছু বলবে। এর মধ্যেই মিত্র রিপোর্টটা সার্ভারে রেখে দিয়েছে। খবরেন্দ্রনাথ ওটা এডিট করছে। মিত্র গল্পগুজব করে না। কম্পিউটারে লেখালেখি করছে। হঠাৎ করে উপমা তার কাছে এসে বললো, এডিটর একটু ডাকছে। মিত্র মুষড়ে গেল। ভাবলো লেখার ব্যাপারে হয়তো। গিয়ে দেখলো সঙ্গনাথও আছে সেখানে। মিত্র এডিটরের সামনে বসলো। উপমা ওর পাশে বসলো। এডিটর বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর মিত্রর প্রমোশনের বিষয়টা জানিয়ে দিলো। তাকে শিফট ইনচার্জ হিসেবে রাখা হবে। মিত্র অবশ্য ভীষণ খুশিই হলো। এবার হয়তো বেতন কিছুটা বাড়বে। এর পেছনে যে উপমা সবসময় প্রস্তাবক হিসেবে ছিলো তা মিত্রকে জানতে দেয়া হলো না।
৫
মিত্রকে পাওয়ার জন্য উপমার এই সংগ্রামে ভাটা পড়ে গেছে। ডিক্টেটরিদের পন্থাবলম্বন করেছে মিত্র। উপমা অফিস শেষ করে আর মিত্রর সঙ্গে দেখা করে না। দেখা হয়ও না। মিত্র বোঝে নি কেন উপমা তাকে চেয়েছিলো। আর তার প্রমোশনের পেছনে উপমা কীÑই বা করেছে।
উপমা এখন এ পত্রিকা ছেড়ে দিয়েছে। এখন একটা রেডিওতে নিউজ হেডের কাজ নিয়েছে। মিত্র অবশ্য এখনও এখানকারই শিফট ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। তা ছাড়া উপমার স্বামী উৎপল একটা ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে। মিত্রর বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে। মিত্র এবার ঈদে বাড়ি যাবে না। কারণ ঈদের পর ব্যাংকের পরীক্ষা আছে। ছুটিতে একটু পড়াশুনা করে নিতে চায় সে। শিফট ইনচার্জ হয়ে আর কত দিন চলবে ?
৬
ঈদের পর প্রথমবারের মতো অফিসে এসেই হুট করে তার পুরনো এক বান্ধবীকে দেখতে পেল। কেউ নেই অফিসে। একটু পর সবাই আসবে। ভোরবেলায় এই মেয়ে এখানেই বা কি করছে একা একা ? নাকি সে ভুল দেখছে ? ভুলই হবে। সে তার টেবিলে বসলো। কিন্তু তার ভুল ভাঙলো যখন মেয়েটি তাকে সশব্দে বলে উঠলো, আসসালামু আলাইকুম। মিত্র অবশ্য ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে নিজের কাজের দিকে গেল।
অপ্সরা নামের ওই মেয়েটি মিত্রর সঙ্গে ঢাবিতেই পড়েছে। ঈদের মধ্যে পত্রিকার অনলাইন বিভাগ খোলা ছিলো। তখনই চাকরি হয়েছে তার। অফিসে সারাক্ষণ হিজাব পরে থাকে সে। রঙ্গলাল বাবুকে অবশ্য এতে বিরোধিতা করতে দেখছে মিত্র। কিন্তু কাজী মুস্তাফা এ নিয়ে অফিসে শোরগোল বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই রঙ্গলাল ওকে খেপাচ্ছে। মিত্রর পুরনো বান্ধবী বলে একটু গায়ে লাগছে তার। কিন্তু মিত্র এসবের মধ্যে তেমন থাকে না। যে যেমন থাকে, থাকুক, তার কি আসে যায়! উপমার মতো অপ্সরাও মিত্রকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু মিত্র কি তাকে ভালোবাসে ?
তার এত ভালোবাসার সময় নেই। অপ্সরা চাইছে, প্রত্যেক ছেলেরই মেয়েদের প্রতি টান থাকে। হয়তো মিত্র নিজে থেকেই বলবে ওকে। এ অপেক্ষায় আছে। কিন্তু মিত্রর এসবের চিন্তা নেই। সে এখন অফিসে কাজের ফাঁকে বিসিএসের পড়াশুনা করে। সামনে শনিবার ও রোববার ছুটিও নিয়েছে বিসিএসের জন্য। ব্যাংক জবে রিক্রুটমেন্টে ও টিকে গেলেও বেতন খুব বেশি না হওয়ায় ও না করে দিয়েছে। বিসিএসটা টিকে গেলেই কেল্লাফতে। তারপর এই প্রফেশন থেকে সরে যাবে। ওদিকে খবরেন্দ্রনাথও ভাবছেন রিটায়ারের কথা। সঙ্গনাথও তাই ভাবছেন। অমলচন্দ্র তালুকদারের সঙ্গেও বনিবনা হচ্ছে না মালিকপক্ষের। দ্রুত তাকেও ছেড়ে দিতে হতে পারে এ পত্রিকা। মালিকপক্ষ এখানে নতুন লোক নিতে চাইছে। পত্রিকার আউটলাইনও নতুন করে করতে চাইছে। সকলের বেতনও সাত মাস ধরে আটকে আছে। কর্মীরাও বেশ ক্ষুব্ধ মালিকপক্ষের ওপর। তবে এখনই আন্দোলনে নামছে না তারা। ওদিকে মালিকপক্ষের ব্যবসায়ও ভালো যাচ্ছে না।
পদাবলি
এখন কোথায় থাকে
মাজরুল ইসলাম
দিনকাল বড়’ই অদ্ভুত
মৃত্যুর পথে নতুন নতুন পথিক।
বুনো বাতাস লাগায়
কটিভূষণ হারানো লোকগুলি
কোথায় যাবে , এখন
ঘর ঘর আর্তনাদ।
লাল মেঘের ভেলার নীচে ছিন্নমূল মানুষ
ভিটে মাটি হারাবার আগেই
মরে বাঁচতে চায়।
অবহেলার স্তুপে প্রবিষ্ট লাশ
দিনকাল বড়ই অদ্ভুত
মৃত্যুর পথে নতুন নতুন পথিক...
একটা নীলাঞ্জনা ঢেউ
দ্বীপ সরকার
বহমান নদীতে নীলাঞ্জনা ঢেউÑ মানে সেই নীলাঞ্জনা আমার!
জাহাজ ভাঙ্গা তরঙ্গÑ আকাশে উড়ন্ত বলাকাদের খেউড়
পুরষবাদী মেঘ এসে থেকে থেকে ছায় দ্যায়
কি যে অপরুপ মেঘ, বাতাসে চুলের উপদ্রপÑদাপায়,
জাহাজের পাটাতনজুড়ে দৈব্যরেখার রোদ
জাহাজ থেমে, আনতে গিয়েছিলাম দুরে ‘শরতের হাওয়া’
আমি ছুঁতে যাই তাকে, শরতের হাওয়া হয়ে
অথচ অস্পৃশ্য সুখগুলো কেবলি কায়া
আমার মধ্যে কে যেনো আসে যায়Ñ যায় আসে
হাতের কব্জিজুড়ে শুধু নীল দূরত্ব
সেই নীলাঞ্জনা আমার, টিশার্টের ভাঁজে খুঁজে পেয়েছিলো সুখের উপমা
প্রকারান্তরে, কামিজের সান্নিধ্য পেয়েছিলো আমার বেহায়া আঙ্গুলও
ঢেউ আছড়ে আস্তাকুঁড়ে পাটাতনÑদোলে আর দোলে
আমিও দুলছি ভেতর বাহির দোলে একসাথে
সারা পৃথিবী দুলে উঠেছিলো সেদিনÑনীলাঞ্জনাও অকপটে স্বীকার করেছিলো
বিশ বছর পর
মৃত নক্ষত্ররাশি
অলোক আচার্য
আমি এসেছি ভাঙতে কালের দেয়াল
সহ¯্র বছর ধরে ম’রে যাওয়া
নক্ষত্ররাশিকে অক্সিজেন দিতে,
আজ যা তোমাদের কাছে
ব্ল্যাকহোলের তকমা পেয়ে গেছে।
পঁচতে থাকা শরীরের দুর্গন্ধটাও
ক্রমাগত সয়ে গেছে তোমাদের নাকে
সভ্যতার আঁচলে লুকিয়ে থাকা
অসভ্যরা আজ খ্যাপাটের দল।
আজ আমি ডাষ্টবিন ঘেঁটে
দু’বেলার খাবার খুঁজি
ঘেন্নায় চোখমুখ কুঁচকে আসে আমার।
আমি আজ এসেছি তাই
নক্ষত্ররাশিকে অক্সিজেন দিতে।
তুমি প্রেমের পুষ্প কাননের মালি
মোহাম্মদ আবদুর রহমান
অনেক বছর ধরে প্রেমের সুপ্ত বীজ গুলি
গুচ্ছিত রেখে ছিলাম হৃদয় উপত্যকায়
সংসার নামক ভুবনে পা রেখে
প্রেমের আলো, বাতাস ও জল দিয়েছ।
অঙ্কুরিত হয়েছে সুপ্ত বীজ গুলি
আসতে আসতে বড় গাছে পরিণত হয়েছে
গড়ে ওঠে এক বিশাল প্রেমের পুষ্প কানন
আর সেই তুমি প্রেমের পুষ্প কাননের মালি।
দহন
কবির কাঞ্চন
যে তোমারে মায়ার জালে
বন্দি করে পালায়
তারই জন্য কান্দো কেন
পোড়া মনের জ্বালায়।
যে কখনো দেয়নি তোমার
ভালোবাসার মূল্য
তারে আবার করছো কেন
প্রাণপাখির তূল্য।
যে তোমারে আঘাত দিয়ে
দূরে গেছে চলে
মিছামিছি লাভ কী বল
তারই কথা বলে।
নিমগ্ন স্মৃতির কুহক
রফিকুল ইসলাম
চায়ের কাপের বিকেলটা আজ আর নেই
আয়েশি চুমুকে ঠোঁটের ছাপের বিন্যাস,
আর স্বপ্ন বুনা বুকভর্তি কত কথার বিকেল
নিয়ে গেছে ঘরে ফেরা পাখিদের দল
হাজারও স্বপ্নের দোল খাওয়া ফসলের মাঠে।
ডুবে গেছে আঁচল-ভরে স্বপ্নবুনা প্রহরগুলো...
নেমে আসা নীলচে নিস্তব্ধ সন্ধ্যার বুকে,
আঁধার নির্জনতায় নিমগ্ন স্মৃতির কুহকে-
মৃত পুষ্পের ঘ্রাণ ভেসে আসে উষ্ণ অনুরাগে।
কে জানতো— অচেনা দ্বীপের মায়া...
আরাধ্য হয়ে উঠবে তোমার!
অধরা চাঁদকে ছুঁতে বড় ইচ্ছে করে,
রাতের আকাশ ছুঁয়ে একফালি চাঁদ ঝুলছে,
পাতলা মেঘগুলো চাঁদকে রেখে-
বাতাসের সাথে দূরে কোথাও ভেসে যাচ্ছে।
জানালার পাশে শতাব্দীবয়সী লেবু গাছটি
ঝিঁঝিদের গানে ঘুমে ঝিম ধরে আছে
রাতভর জাগে কিছু নিশাচর পাখি গাছে।
আর কেউ জেগে নেই শুধু আমি একা-
আর সাথে জাগে রাতের নিস্তব্ধতা।
সূর্য স্নান
সূর্য স্নান
শহিদুল ইসলাম লিটন
সুমন একজন নামকরা ডাক্তার, পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা তাকে আজ শুধু সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেনি স্থান করে নিয়েছেন অনেক মানুষের মনের মুকুরে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শফিক সাহেব অবসর পেলে মাঝে মধ্যে তাঁর কাছে আসতেন। মানুষের প্রতি তার এতো ভালোবাসা প্রত্যক্ষ করে তিনি একদিন জানতে চান তাঁর জীবন কাহিনী। ডা: সুমন আলাপ-চারিতার এক পর্যায়ে খুলে বলেন তার জীবনের সব কাহিনী। জন্মের পর তিনি তার পিতা-মাতাকে হারান, তারপর এক নিকট আত্মীয় তাকে লালন পালন করেন। অভাবের তাড়নায় সাত আট বছরে তিনি তাকে ভর্তি করে দেন এক এতিম স্কুলে। সেখানে তিনি মনোযোগ সহকারে লেখাপড়ার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অর্জন করেন সেই প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় শিক্ষকের কাছ থেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ-িবদ্ধ জীবনের নিয়মিত ধারায় চলতে থাকে তার শিক্ষা জীবন। সেখানকার কোমলমতী শিশুদের সাথে গড়ে ওঠে তার আন্তরিক সম্পর্ক। একাকীত্ম আর নিরানন্দ জীবনের দুঃখ ভুলে গিয়ে সুখ খুজে পান তিনি তাদের সাথে খেলাধুলা আর গল্প করে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে এক সময় পাঁচ বছর অতিক্রান্ত করে তিনি কৃতিত্বের সাথে যখন পঞ্চম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হোন তখন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ও এক সুহৃদয় ব্যক্তির সার্বিক সহযোগিতায় তিনি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করেন। সেই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একসময় তিনি কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করেন। অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে, চাকুরী খুঁজতে থাকেন। এক সময়ে আবাসিক একটি হোটেলে ম্যানেজারের চাকুরী পেয়ে যান তিনি। তার সততা ও কাজের দক্ষতা দেখে তার মালিক ভীষণ খুশি হয়ে যান তার উপর। মালিক একসময় বেড়াতে নিয়ে যান তাকে লন্ডনে। লন্ডনে পৌঁছার পর মালিকের মেয়ে সুমির সাথে পরিচয় হয় সুমনের। অপরূপ সুন্দরী সুমি ক্রমান্বয়ে সুমনের সাথে তার গভীর ভালোবাসা গড়ে উঠে। সুমি সুমনকে নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ায়। সাগর, নদী, পাহাড়-পর্বত সে দুচোখ ভরে উপলব্ধি করে প্রকৃতির সব অপার সৌন্দর্য। আবার শহরে যখন ঘুরে বেড়ায় তখন শহরের চাকচিক্যে লাল নীল বাতি আর ঝাকঝমক দেখে বুঝাই যায়নি দিন রাতের তারতম্য।
সুমন সুমির দুচোখ দিয়ে থাকিয়ে কি যেন মনে মনে ভাবতে থাকে এই দুচোখের ভিতর লুকিয়ে আছে কতইনা স্বপ্ন, যা শুধু তার পক্ষে অনুভব করা যায় কিন্তু প্রত্যাশা করা যায় না। জনম দুঃখী সুমন ভাবে আমি কি করে সুমিকে পাবার আশা করবো। এই কথা ভাবতে ভাবতে তার দুচোখ ভরে অশ্রু ঝরতে থাকে। তাঁর না বলার কথাগুলো যেন সে চোখের জল দিয়ে বুঝাতে চায়। সুমি খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে সে দুহাত দিয়ে সুমনের চোখের পানি মুছে দেয়। আর বলে আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছি। তোমাকে নিয়ে বেড়িয়েছি তখন আমি উপলব্ধি করেছি তোমার চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য আর সততা। সুতরাং আমি তোমাকে প্রস্তাব দিচ্ছি আমি তোমাকে জীবন সাথী বানাতে চাই। আজ থেকে তুমি আমার। সুন্দর, সুশ্রী আর লাভণ্যময়ী সুমি কিভাবে সুমনকে আপন করে নেবে ভাবতেই পারে না সুমন। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। সুমন ভাবে সুন্দর ও সৎ চিন্তা চেতনায় যারা জীবন কাটায় তাদেরকে বিধাতা নিজ হাতে পুরস্কৃত করেন। আমার মনে হয় আমি যেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। মহান আল¬াহর কাছ থেকে আমি পুরস্কারপ্রাপ্ত। পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। সুমন যখন সুমির হাতে হাত রাখে তখন তার মনে যেন এক অনুপম প্রশান্তি অনুভূত হয়। তারা ভাবে এই বন্ধন যেন গভীর ভালোবাসা ও পরম মমতার অটুট বন্ধন মহাকালের মহা প্রলয়ে যদি আমরা কখনো হারিয়ে যাই, তখন কিন্তু এই ভালোবাসা পিছন থেকে ডাকবেই বারবার সুমন-সুমি।
সুমন ভাবে জীবন তরিতে পা দিয়েছি মাত্র আমরা দু’জন। কিন্তু জীবিকা অর্জন করবো কিভাবে এবং কোনপথে। সুমন সুমির কাছ থেকে একটি রাত চেয়ে নেয়। যে আজ সারা রাত আমি আমার প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অতিবাহিত করবো। যিনি আমার সৃষ্টিকর্তা, আমি আজ সারারাত তাঁর ইবাদত বন্দেগি করবো। মনপ্রাণ উজাড় করে তাকে ডাকবো। আমার বিশ্বাস যিনি আমাকে একজন সৎ ও পূণ্যময়ী স্ত্রী দান করেছেন। তিনি অবশ্যই আমাকে জীবিকার একটি পথ সুগম করে দিবেন। সুমন নফল নামাজ পড়তে পড়তে একসময়ে জায়নামাজের উপর ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাত্রে সে স্বপ্নে দেখে সাদা কাপড় পরিহিত এক সুন্দর মহিলা তার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। আর বলছেন সুমন বাবা আমার, আমি তোমার দুঃখিনী মা- জন্মের পর তোমার মুখ থেকে মা ডাকটি শুনতে পারিনি। বাবা আজ তোমাকে নিজ চোখে দেখা ও আদর করার সুযোগ আল¬াহপাক কিছু সময়ের জন্য আমাকে দান করেছেন। তোমার ইবাদতে মুগ্ধ হয়ে মহান আল¬াহপাক আমাকে পাঠিয়েছেন তোমার কাছে। আমার ইচ্ছা তুমি ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে। এতে একদিকে ডাক্তার হয়ে তুমি আর্থিক স্বচ্ছলতা পাবে, অন্যদিকে মানুষের সেবা করার সুযোগও পাবে। মায়ের কথা অনুযায়ী সুমন ডাক্তারী পাশ করে সুমিকে নিয়ে দেশে চলে আসে। দেশে এসে সুমন কিছুদিন, দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। এবং বিভিন্ন অঙ্গন প্রত্যক্ষ করে। জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে সে দেখতে পায় কিছু অন্যায় আর অসঙ্গতি। যেখানে প্রতিবাদের ভাষা খুব নীরব। কিছু মানুষ স্রোতের তালে তালে চলতে চায়। সুমন ভাবে, যেহাত মানুষের কল্যাণে প্রসারিত হয় না, দুঃখী মানুষের চোখের জলে যে হৃদয় কাঁদে না তাকে কি করে প্রকৃত মানুষ ভাবা যায়। সুমন মনে মনে শপথ নেয় আমি আমার কর্মের পাশাপাশি সেবা ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষের চিত্ত জয় করবো। সুমন অন্যান্য ডাক্তারের মতো নিয়মিত হারে রোগী দেখলেও যারা গরীব অসহায় তাদের জন্য সে তার দ্বার রেখেছে উন্মুক্ত। কেউ সামন্য টাকা দিয়ে, কেউবা বিনামূল্যে তার কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে তিনি সাধ্যমতো দান-খয়রাত করে থাকেন। মানুষ আমাকে স্থান করে দিয়েছে গভীর ভালোবাসা ও পরম মমতায়। সূর্য যখন পূর্ব আকাশে উদিত হয়, তখন কত অমিত তেজ ও অপরিসীম শক্তি দিয়ে তার আলো বিলিয়ে দেয় এই পৃথিবীর বুকে। সূর্যের উত্তাপে অনেক সময় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। একটু প্রশান্তির জন্য আমরা কেউ পাখা, ফ্যান, এসির বাতাস অনুভব করি। কেউবা গাছতলায় গিয়ে শান্তি অনুভব করে। কিন্তু দিবসের শেষভাগে আর সন্ধ্যার পূর্বলগ্নে আমরা যখন দেখি মিষ্ঠিরোদ, হিমেল বাতাস প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমরা কেউ কিভাবে উপলব্ধি করি জানিনা। কিন্তু নিঃসন্দেহে এতে রয়েছে প্রভুর অনুপম মহিমা ও অসীম কুদরতের নিদর্শন। সূর্য যখন লাল আকার ধারণ করে বলের মতো হয়ে পশ্চিমা আকাশে হেলে পড়ে মনে হয় সে বড় ক্লান্ত তারও ঘুমের প্রয়োজন। পরদিন সে যখন উদিত হবে আবার সে পূর্বের মতো তেজ ও শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করবে, উত্তাপ ছড়িয়ে দিবে সমগ্র পৃথিবীর দিক হতে দিগন্তে। বিধাতার ইশারায় রহমতের সাগরে স্নান করে সূর্য যেমন আলো দিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে। ঠিক তেমনি আমরাও যদি হিংসা বিদ্বেষ ও বিবেদের বৃত্ত থেকে বের হয়ে মনুষত্বের আলো দিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করতে পারি, তবেই উপকৃত হবে গোঠা সমাজ ও দেশ।
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল¬াহপাক একটি একটি করে সুযোগ দিয়ে আমাকে যেভাবে উন্নত জীবন দান করেছেন, আমার মনে হয় এটাই যেন আমার জীবনের সূর্য স্নান। আমার দেহের ভিতরে লুকিয়ে আছে যে প্রদীপ যা এতোদিন অন্ধকার ও পাপের কালিমায় নিমজ্জিত ছিলো, মহান আল¬াহপাক আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন সঠিক পথ। দুহাত তুলে যখন আমি বিধাতার কাছে প্রার্থনা করেছি একটি সুন্দর জীবনের জন্য আ¬াহপাক খুশি হয়ে আমাকে সুন্দর জীবন দান করায় আমি পরম করুণাময়ের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
গ্রাম: চান্দাই পশ্চিম পাড়া
উপজেলা: দক্ষিণ সুরমা, জেলা: সিলেট।