বৃষ্টি পড়ে !

বৃষ্টি পড়ে !


অপেক্ষায় ছিল সালমা।অনেক দিনের অপেক্ষা-অনেক বছরের অপেক্ষা।ঢাকা থেকে শামীম রওনা দিয়েছে।
সকালেই বিমান থেকে নেমে ফোন করেছিল,আসছি বউ।উতলা বউটি খুশীতে ডগো-মগো।প্রায় তিন বছর পর স্বামী আসছে।

থৈথৈ উতলা মন থেমে যায়।যখন সালমার ছোট ভাই ও শামীমের ছোট ভাই ঢাকা থেকে, ফিরে এসে বলে,শামীম ভাইয়ের রোগ হইয়িছে,কঠিন রোগ।পুলিশ বলেছে,করোনা হইছে,সে এখন ঢাকাতে হাসপাতালে থাকবে।
দড়বড়িয়ে বৃষ্টি হওয়ার দৌড়ের মত, হঠাৎ থেমে থেমে গুমড়িয়ে ওঠে, সালমার মনের ভিতর।সে যখন আগুন ঝাপ দেবে ভাবছিল, তখন আগুনটা দড়দড় করে, পানি ঢেলে দিয়ে নিবিয়ে দিলো,এই দুঃসংবাদ।

চৈত্রের জোছনাময় রাতে  ঘরে শুয়ে,একা-একা এপাশ-ওপাশ করতে থাকে।সালমার শাশুড়ি আল্লা-আল্লা করে করে,কেঁদে-কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে।এখন শুধু সালমার আকুতি, বুকভরা যন্ত্রণা,ঢেউ ওঠা পানির মত উথলিয়ে উথলিয়ে উঁপচিয়ে পড়তে চায়।  তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে।ভরা কলস রেখে, হতভাগ্য স্বামী, ভাগ্য ফেরাতে বিদেশ যায়।টাকা-পয়সা কম পাঠায়নি বাড়িতে।অনেক অনেক টাকা পাঠিয়েছে।সে টাকা দিয়ে সুন্দর একটি বাড়ি বানিয়েছে।ছোট ভাইটার লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছে।মাঠে দু'চার বিঘা জমিও কিনেছে।শুধু সালমায় বুকে পাথর বেধে, স্বামীর অপেক্ষায় থেকেছে। এসব ভাবতে ভাবতে, সালমা ক্লান্ত হয়ে যায়।পাড়াঘরের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘরের চালের উপর টুপটাপ কিছু হুড়োজবর পড়ার শব্দ হলো।এরপর শ-শ-শ শব্দে, হালকা ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে।সালমা পাশ ফিরে শুতেই বুকের গহীনে বাতাসের অংশ প্রবেশ করে।বুকটা তার হালকা ভাবে প্রাণ ফিরে পায়।এতক্ষণ যে দম বন্ধ হয়ে আসছিল, তা থেকে একটু মুক্তি পায়।ঘর্মাক্ত ব্লাউজটা নিজের মাথাটা একটু উঁচু করে, খুলে ফেলে।অন্তর্বাসটা আর খোলে না।তবু জোরে নিঃশ্বাস নেয়।
শামীমকে ভেবে আর কি হবে?তবুও মনটা চঞ্চলা টুনটুনির পাখির মত, নেচে নেচে বেড়ায়।শামীম বাঁচবে তো?যদি মরে যায়,আর ফিরে না আসে? তার সামনে সাদা কাফনে মোড়ানো লাশের দৃশ্য ভেসে ওঠে।

গ্রামের মানুষ সবাই মিলে, খাটোয়া কাঁধে নিয়ে, গোরস্থানের দিকে যেতে দেখেছে বহুবার।সালমা যে ঘরে থাকে, ওই ঘরের বেশ দূর দিয়ে, গোরস্থানে লাশ নিয়ে যাওয়া দেখা যায়।অনেকদিন সে, জানালার পাশে এসে দেখেছে,ওই গ্রামের মৃত মানুষকে নিয়ে যেতে। তার শরীরের লোম নেই,তবুও যেন, যে কটা আছে, সেগুলো খাড়া হয়ে, কাটা হয়ে যায়।দ্রুত উঠে গিয়ে,জানালা বন্ধ করে দেয়।তার বড় ভয় করছে।জানালা বন্ধ করার সময়, আকাশের চাঁদের আলো এক ঝলক তার শুকনো মুখে লেগে, হারিয়ে যায়।বিছানায় গড়া দেওয়ার আগে, কিছুক্ষণ বসে থাকে।ব্লাউজটা দু'হাত উঁচু করে, পরে নেয়।তারপর কাঁইত হয়ে শুয়ে পড়ে।হাতের উপর মাথা রাখে।অমনি প্রতিদিনকার পথ আগলিয়ে দাঁড়ানো,সেই বদমাইশটার মুখোচ্ছবি ভেসে ওঠে।তার নাম মিয়াজান।শামীমের সহপাঠি ছিল।অথচ বিয়ে হওয়ার পর থেকে প্রায় এ বাড়িতে আসতো।তার চোখেমুখে ছিল একধরণের দুষ্ট হাসি।সালমা দেখেও না দেখার ভান করতো।শাশুরি ছেলের বন্ধু হিসেবে,তাকে বেশ যত্ন করে,আদর করে ডাকে,আয়সু বাপ-বইসু।

 হতাশার এ রাতে, বার-বার তার মুখের ছবিটা,বোতামখোলা বুকের ছবিটা,  গালজড়ানো হাসিটা সালমাকে মাদকের মত টানছে।মিয়াজানের মুখোচ্ছবি ছাড়া, সে আর কিছুই দেখতে পারছে না।বাইরে থেকে খুব ধীরে ধীরে বৃষ্টি পড়ার শব্দ ভেসে আসছে।সালমার উত্তপ্ত শরীরটা ধীরে ধীরে মিয়াজানের চোখে চোখ রেখে, হারিয়ে যায় ঘুমঘরে।ঘরের চাল থেকে বৃষ্টি পড়ে টিপটপ-টিপটপ....।

জল

জল


আজ বৃহস্পতিবার। ছুটির দিন। মিরাজ বাড়ি ফিরেছে, একদিনের ছুটি নিয়ে। শুক্রবারে সন্ধ্যার আগেই তাকে মাদ্রাসায় পৌঁছতে হবে। নয়লে একশত টাকার জরিমানা দিতে হবে তাকে। মিরাজের সে জরিমানা দেওয়ার ইচ্ছে নেই। কারণ, সে ভালো করেই জানে, তার বাবা কত কষ্ট করে টাকা রোজগার করে!

মিরাজ শহরের মাদ্রাসায় পড়ে। শহরের মাদ্রাসাগুলোতে সাধারণত লেখাপড়ার মান উন্নত হয়। তাতে বেশ কড়াকড়া নিয়ম-কানুনও থাকে। হয়তো এ ছোটখাটো নিয়মনীতিগুলোই লেখাপড়ার মান উন্নত করার প্রধান মাধ্যম।

মিরাজ প্রায় তিনমাস পর বাড়ি ফিরেছে। অথচ ওর বাড়ি মাদ্রাসা থেকে বেশি দূরে নয়। মাত্র কয়েক কিলোমিটারের দূরত্ব। তবুও লেখাপড়ার চাপে তেমন বেশি বাড়ি আসা হয় না ওর। মিরাজ বাড়ি আসবে শুনে, তার মা আজ ঘরের পোষা মুরগিটা রান্না করে রেখেছে। সাথে বাজার থেকে ইলিশ মাছ আনিয়েছে। ভাজি করবে বলে। ডাল ভাত তো আছেই।

রাতে যখন মিরাজের মা ছেলের সামনে খাবার পরিবেশন করে, তখন মিরাজ একবার লুকোচুরির মতো মায়ের মুখ দেখে নেয়। যাতে তার 'মা' টের না পায়, তাই মায়ের চোখ মিরাজের চোখে পড়ার আগেই দৃষ্টি আবার ফিরিয়ে নেয়। 
মিরাজের এখন বুঝার বয়স হয়েছে, যে মা তার কাছে সব সময় সংসারের অক্ষমতাগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে রাখে। লেখাপড়ার ক্ষতি হবে ভেবে, কখনো ওসব বলে না, বা বলতেও চায় না।

মিরাজ মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করে, শুধু ও বাড়িতে এলেই, ঘরের সবার মুখে দু চারটা ভালো খাবার জোটে। গোশত রান্না হয়। বড় বড় মাছ ভাজি হয়। সবাই ভালো ভালো খাবার খায়।

মিরাজ কোনো কথা বলে না। এখন চুপচাপ খেয়ে নেওয়াই ভালো। তা না হলে  মা গভীর রাতে পাশের ঘরে একাএকা ফুঁপিয়ে কাঁদবে। কেনো কাঁদবে? সে জানে না। কাঁদার কারণও সে আন্দাজ করতে পারবে না। এরকম ঘটনা একবার না, অনেক বারই ঘটেছে! আর বরাবরই এ কারণ উদঘাটনে সে ব্যর্থ হয়েছে। মিরাজ খোদার কাছে ওয়াদা করেছে, আর কখনো এসব আজেবাজে কথা বলে মাকে কাঁদাবে না। মায়ের মনে কষ্ট দিবে না। সে চায় না, মা কাঁদুক। মাকে কাঁদতে দেখলে ও'রো যে ভীষণ কান্না পায়।

সংসারের কোনো কথা জানতে চাইলেই  মা কেঁদে ওঠে। মায়ের চোখেমুখে অশ্রু ছলছল করে। তার অলক্ষিতে দু ফোঁটা চোখের অশ্রু ফেলে সবার অলক্ষ্যেই মুছে ফেলার চেষ্টা করে। কারণ, মা চায় না, তার এ অশ্রু বিধাতা ছাড়া আর কেউ দেখুখ।

ভাত পাতে থাকতেই মা একসময় নিরবতা ভাঙলেন।
মাদ্দাসার বোডিঙের অবস্তা ক্যামন'রে?
খাওয়ন-টাওয়ন বালা দ্যায় তো? দিনদিন এমন রোগা হয়ে যাইতাছস ক্যান?

চট করে একটা জবাব দিয়ে দিলেই হতো। কিন্তু বারো বছরের মিরাজের বড় অহঙ্কার। এ বয়সেই পৃথিবীর বাস্তবতা ওকে ''পুরুষ" বানিয়ে তুলেছে। মায়ের প্রশ্নের সাথে সাথেই ওর সামনে বোর্ডিংয়ের খাবারের চিত্রটা ভেসে ওঠে। 

আজ সকালে ও শুধু ডাল দিয়ে কোনোরকমে দু-মুঠো ভাত নাকে-মুখে দিয়েছে। বিকালে খেয়েছে, আলু ভর্তা দিয়ে। ডালের অবস্থা যা, একেবারে স্বচ্ছ পানি। ডাল আর পানির মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করা কখনো সম্ভব না। এখন মিথ্যা বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই মিরাজের। নয়লে মা অনেক কষ্ট পাবে। মিরাজ মাকে কষ্ট দিতে চাই না, আর কখনোও না।

মিরাজ বললো, বোর্ডিংয়ের খাবার খুব ভালো। কী দারুণ স্বাদ! এক্কেবারে তোমার হাতের রান্নার মতো। ডালের মাঝেও তোমার হাতের রান্নার স্বাদ পাওয়া যায় মা। 

মা খুব খুশি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে মিরাজের। আরো দুটো ভাত পাতে দিতে চাইছিলেন তিনি। মিরাজ আপত্তি জানিয়ে বলে : 
পেয়েছ কি তুমি, আর কত খাব?

খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে, মিরাজ বাইরে এসে চোখ ফেরায়। আম গাছে সবে বোল ধরেছে। পেয়ারা গাছে কয়েকটা পেয়ারা বেশ বড়বড় হয়ে গেছে। সুপারি গাছগুলোতে কয়েক ছড়ি পাকা সুপারি। নারিকেল গাছে অনেকগুলো নারিকেল শুকনো হয়ে আছে। কলা গাছের কলাগুলো হলুদ-পাকা রঙ ধরেছে।

মা ডেকে বললেন, "এ্যাই মিরাজ, একটা পেরা নিয়ে আয় তো, খাওনের হর ফল-টল খাওয়া অনেক বালা।''

মিরাজের মন তখন অন্য কোথাও! মিরাজ ফলের কথা বাদ দিয়ে বাবার কথা বলে, বাবার খবর কি মা? 
উনার হাল-হাকিকত কেমন যাচ্ছে, দিনকাল ভালো যাচ্ছে তো?

মা বললেন, দিনকাল তো ত্যামন বেশি বালা যাইতাছে না'রে বাবা! সব আগের মত্তোই আচে! আগে য্যামন আছিলো, ঠিক ত্যামনই আছে সব। এতটুকু বলেই মা থামে।
মিরাজ বুঝতে পারে, মা, এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলতে চায় না। যা বলেছে এতটুকুই নিয়ে মিরাজকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

মিরাজ তখন কোনো কথা না বলে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাড়ির সামনে ফুলেশ্বরী নদী চোখে ভাসে। আকাশে এক টুকরো মেঘ জমে আছে। নানা রঙের পাখির মেলা বসেছে দূরের এক শূন্যস্থানে। আম গাছের ডালে বসে হলুদ রঙের একটি পাখি খুব সুন্দর শিষ বাজাচ্ছে। যেন সে শোকগাথা গায়ছে। মিরাজের পাখির সুরটা খুব ভালো লাগে। 

আস্তে আস্তে মিরাজ বাড়ির আঙ্গিনা পেরিয়ে মেঠোপথে পা দেয়। মনে মনে ভাবে, হোক অভাব! তবুও নিজের বাড়ি অনেক ভালো! কারণ, এ বাড়িতে মা আছে, বাবা আছে, ভাইবোন আছে, বন্ধু-বান্ধব আছে, আত্মীয় স্বজন আছে, সবাই আছে। কিন্তু শহরে তাঁর প্রিয় বলতে কেউ নেই। কেউ-ই নেই।

বড় রাস্তায় পা দিতেই মায়ের গলা মিরাজকে জড়িয়ে ধরে।
:এ্যাই মিরাজ, এ্যাইমাত্র আইলি। এহন আবার কোনহানো যাইতাছস?

মিরাজ মায়ের কথা শুনে সামনে পা না বাড়িয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসে। এসে, ঘরের আঙ্গিনায় বসে পড়ে। সামনের লেবু গাছটার কয়েকটি হলুদ ঝরা পাতা বাতাসে নিরুদ্দেশ হয়। মিরাজ চেয়ে চেয়ে সে নিরুদ্দেশ হওয়া পাতাগুলো দেখে। লেবু গাছটাকে দেখে।
এ গাছটাকে দেখলে মিরাজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। শৈশবস্মৃতি। নিজ হাতে সে এ গাছটা মাটিতে রোপণ করেছিল। প্রায় বছর তিনেক আগে। যখন গাছটা রোপণ করছিল, তখন কেউ-ই ভাবেনি, এ ছোট্ট গাছটায় পাতা ধরবে। ডাল গজাবে। লেবু হবে। কারণ, এটা চারাগাছ ছিলো না। ছিলো শুধুমাত্র একটি ডাল। সে ডালটিই আজ লেবুগাছে পরিণত হয়েছে। অনেকগুলো লেবুও ধরেছে গাছটিতে। মিরাজের  এ কীর্তি যেই শুনে সেই মিরাজের খুব প্রশংসা করে। আর বলে, তোর হাতে আল্লাহ অনেক বরকত দিছেরে মিরাজ! তুই পারবি, সব পারবি!

মাদ্দাসায় লেহাপড়া ক্যামন হয়'রে?
ছোট্ট  করে প্রশ্ন করে মিরাজের মা।
মিরাজও  ছোট্ট করেই উত্তর দেয়, ভালো।
নিজের অজান্তেই মিরাজ মায়ের সামনে আগের প্রশ্নটিই জুড়ে দেয়, আব্বুর দিনকাল কেমন কাটছে মা? আব্বু কি এখনো ঠিকমতো বাসায় ফিরে না?

মায়ের চোখ চিকচিক করে। মুখে কথা ফুটে না। মনে হল, অনেক কষ্টে মা মুখ খুললেন।
"তোর বাহের দিনকাল্যো বেশি বালা যাইতাছে না'রে খোহা! আয়-রোজগারও ত্যামন বালা দেখতাছি না! জানিস তো, আজকাল্যো ব্যবসাপাত্তি করলে কত্ত বেগ পোহাইতে হয়! কত্ত রহমের দালাল-বাটফারদের হান্দে হড়তে হয়! তোর বাহের বেলায়ও এর ব্যত্যয় ঘটতাছেনা'রে বাবা!
এ্যাইতো কয়েকদিন আগেও এক ভণ্ড লোহের ধান্দার মইধ্যা হড়ছে! অনেক ট্যাহা মাইর দিছে। ট্যাহা দিবো না। চাইলে আরো বড় বড় হুমকি দে, "জানে মেরে ফেলব এক্কেবারে, বেশি কথা কইস না, কি বাল করবি করগা!'' এ ভয়ে তোর বাবাও আর ট্যাহা চায় না। যা গেছে গেছেই, এ্যাহন আর জানডা দিলে কি হইবো! ট্যাহা তো আর ফিইরে আইতো না!

কথাগুলো বলতে বলতে মায়ের গলা থিতিয়ে ওঠে, কাঠ হয়ে আসে, শুকিয়ে যায়। এক কথা আরেক কথার সাথে আটকে যেতে শুরু করে। মা শিশুর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। মুখ থেকে আর কথা বেরোয় না!

মিরাজ ব্যাপারটা আঁচ করতে পারে। সে আর কথা বাড়াতে চায় না। জন্মের পর থেকেই সে ওর বাবার অবস্থা স্বচক্ষে দেখে এসেছে। নতুন করে আর কি-ই-বা জানবে, কি-ই-বা দেখবে!

গ্রামের খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ  সন্ধ্যার পর পরই খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়ে। নিথর দেহের মতো ঘুমিয়ে যায়। গ্রামের বেশির ভাগ লোক রাতের প্রথম ভাগেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু ওর বাবা বাড়ি ফিরে  রাত প্রায় বারোটা একটার পর। কখনো সারারাত বাজারের টং দোকানগুলোতে ঘুমে নির্ঘুমে কাটিয়ে দেয়। পথচারীদের বিশ্রামের জন্য নির্মিত বেঞ্চে বসে, মাথা ঠেকিয়ে সারারাত পার করে দিতেও, তার কোনো মাথাব্যথা নেই। ঘরে আসলেই তার যত সমস্যা, যত অশান্তি। ঘরের কারো চেহারা দেখলেই তাঁর চোখে রাগ ঝিলিক দিয়ে ওঠে। কাঁধ ফুলে ওঠে, গদগদ করে। যত রাগ, অভিমান সব যেন ঘরের লোকদের সাথেই। আর কারো সাথে নয়। 

টাকা! হ্যাঁ এ টাকার অভাবেই মানুষটা যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে। বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে, এখন রাস্তার ভিখারি হতে বসেছে।

ছেলেবেলা থেকেই মিরাজ তার পিতার এ অবস্থা  দেখে এসেছে। কিন্তু আগে তেমন একটা সে এসব নিয়ে ভাবেনি। এখন মিরাজের বুঝার বয়স হয়েছে। সে এখন ঠিকই বুঝতে পারে, কি কারণে তার পিতা গভীর রাতেও বাড়ি ফিরে না! এর পিছনের গল্পটা কি? এখন সে অনায়াসেই এসবের ডিটেলে ঢুকতে পারে। এবং এর নথিপত্র খুব সহজেই বের করে আনতে পারে।

মিরাজ যখন ক্লাস সিক্সে পড়ে, তখন ওর পিতা কোমরে মারাত্মক আঘাত পায়। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে দিন কাটে ওদের। দু'বছর যাবৎ তার পিতা অসুস্থ ছিল। কোনো কাম-কাজ করতে পারেনি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে দুমড়ে-মুছড়ে কাতরিয়েছে। ক্ষুধার্ত পাখির মতো ছটফট করেছে। মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মতো সারা দিন-রাত বিছানায় শুয়ে শুয়ে, শুধু আল্লাহ আল্লাহ নাম জপেছে। যাতে পরিবারের এ নরক হালতে তাঁর মৃত্যু না হয়। তাঁর মৃত্যু হবে, ছেলেটা যখন বড় হবে। সংসারের সব দায়িত্ব কাঁধে নিবে। তখন ছেলের হাতে সংসারের সব মামলা-মোকদ্দমা তুলে দিয়ে পরম শান্তিতে স্বর্গবাসে চলে যাবে। তখন তার মৃত্যু হলে বিন্দুমাত্র আফসোস থাকবে না। কিন্তু এখন! আফসোসের সীমা থাকবে না!

মিরাজ তার পিতার দুঃখ দুরাবস্থার দিনগুলো দু-চোখে প্রত্যক্ষ করেছে। তার পিতাও মায়ের মতোন সংসারের অক্ষমতাগুলো সব সময় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কখনো বুকের পাঁজরের নিচে লুকিয়ে থাকা ব্যথাগুলো বুঝতে দেয় না। উল্টো আরো ছেলেকে বলে,
"বাচা, আমার জন্য দুঃখ করিস না। আমাদের দুঃখে কেঁদে মরিস না। আমরা সুখেই আছি। তুই মন দিয়ে লেখাপড়া কর। সুন্দর, সাফল্যমণ্ডিত জীবন গড়।''

এখন জোছনার সময়। রাতের খাবারের পর মা দু-মুঠো ভাত মুখে দিয়ে শুয়ে পড়েছে। একা বাড়ি কেমন খাঁ খাঁ করছে। সারা আকাশ জুড়ে রূপালি আলোর মেলা বসেছে। ছোটবেলায় ঠিক এ সময়ে সে মা বাবার কাছে ভূত পেত্নীর গল্প শুনতো। এখনো তার বয়সী ছেলেমেয়েরা দাদা-দাদুর কাছে গল্প শুনার বায়না ধরে। কিন্তু মিরাজের আর এসব অলীক গালগল্প শুনতে এখন আর ভালো লাগে না। তা হলে সে কি বড় হয়ে গেছে ? বারো বছরের মিরাজ মনের অজান্তেই নিজেকে নিজে এ প্রশ্ন করে বসে!

তারও মন চাই, পাখির মতো, মুক্ত বিহঙ্গে ডানা মেলে আকাশে উড়তে। সমবয়সী বন্ধুদের সাথে হাসি-খুশিতে আড্ডা দিতে। রাতের আঁধারে কেঁদে কেঁদে বালিশ না ভিজিয়ে সারারাত অজ্ঞানের মতো নাক ডেকে ঘুমোতে। কিন্তু সে তা করতে পারে না। কারণ এ বয়সেই "বাস্তবতা'' তাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। সমবয়সী অন্য কেউ এর ধারে কাছেও যেতে পারেনি। প্রচণ্ড দুঃখ-কষ্ট ওর জীবনকে অন্য দশটি ছেলে থেকে আলাদা করেই ছেড়েছে।

মিরাজ লক্ষ্য করে, ও বাড়িতে এলেই টানাপোড়েনের একটা সংসার মুহূর্তেই আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ভালো ভালো খাবার রান্না হয়। ইলিশ মাছ ভাজি হয়। কিন্তু এ আনন্দ ওর মনে ধরে না। এ আনন্দ ওর চোখ-মুখ আঁধার করে দেয়। ওর বুকে জোয়ার তোলে। সে জোয়ারে ওর হৃদয় ভেঙে খানখান হয়ে যায়।

সন্ধ্যায় দু-মুঠো ভাত খেয়ে পুকুর ঘাটে চলে যায় মিরাজ। মিরাজের ছায়া জোছনার জলে ধরা পড়ে। বাতাসে জল কাঁপে। মিরাজের ছায়া কাঁদে। ওর দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ে। সকল বেদনা বুকে চেপে নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দেয়, দুঃখ করিস না মিরাজ। দেখিস, একদিন ঠিকই তুই অনেক বড় হবি। অনেক টাকা কামাবি। মা বাবার দুঃখ ঘুচাবি। ওদের মুখে হাসি ফুটাবি।

মিরাজ আর কিছুই ভাবতে পারছে না। পুকুরের স্থির জলের মতোই ওর দু চোখ পুকুর হয়। এত জল সেখানে। শুধু জল আর জল।

করোনা, স্বদেশ ও রমজান

 করোনা, স্বদেশ ও রমজান


এক করোনা ভাইরাসে কুপোকাত পুরো বিশ্ব। থমকে গেছে জনজীবন। মানুষ মরছে আর মরছে। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, চীনসহ বিশ্বের বহু শক্তিধর রাষ্ট্র আজ মৃত্যুপুরী। মৃত্যুর সময় আর শেষ বিদায়ে পাশে থাকছে না স্বজনরাও। বিদায়ী যাত্রায় যথাযথ সম্মানটাও পাচ্ছেন না বেশিরভাগ মানুষ। মানুষ মিশতে পারছে না মানুষের সাথে। মেলাতে পারছে না হাতের সাথে হাত। পুরো পৃথিবী যেন আজ অমানবিক হয়ে ওঠেছে। এই ভয়াল করোনা ভাইরাস আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশেও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। সেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেও জ্যামিতিক হারে। লাশের মিছিলও শুরু হয়েছে। এই মিছিল কত দীর্ঘ হয় তা কারো জানা নেই। যদিওবা বিভিন্ন মহল অত্যন্ত ভয়াবহ পূর্বাভাস দিচ্ছে। এই পূর্বাভাস যেন মিথ্যা হয়। আমাদের দেশ তথা সরকার শুরুর দিকে করোনা ভাইরাসকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো খুব একটা পাত্তা দেয়নি। অথচ সেই আমেরিকায়ই এই ভাইরাস এখন সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে। আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে। জানি না, এমন সামান্য কিছু ভুলের মাশুল আমাদের দেশকে কত বড় করে দিতে হয়। বৈশ্বিক পরিস্থিতির আলোকে পর্যালোচনা করলে মনে হয়, আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। মৃত্যুপুরী ইতালি, চীনের শুরুটাও এমন ছিল। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। তবুও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। এতো উন্নত রাষ্ট্র যেখানে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সেখানে আমাদের ক্ষেত্রে তা কতটুকু সম্ভব তা দেখার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

কিছুদিন আগেও আমরা সরকারের দোষ প্রচার করতে করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষিয়ে তুলছিলাম। কেন লকডাউন করছে না, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করছে না? সহ নানা প্রশ্ন তুলছিলাম। আসলে এই প্রশ্নগুলো সঠিক ও যৌক্তিক হলেও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতালির মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ নয় যে, দেশ লকডাউন করে দিলে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে যাবে, ঘরভাড়া মওকূপ হয়ে যাবে। যদিওবা আমাদের দেশের মন্ত্রীদের কথার ফুলঝুরিতে মনে হবে আমরা ইতালির চেয়েও শক্তিধর কোন রাষ্ট্রের নাগরিক! কিন্তু বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। যা পিপিই, কীট, আইসিইউসহ নানা চিকিৎসা সামগ্রী সংকটের মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। দেশে  মাত্র ছোবল দিয়েছে করোনা। এই শুরুতেই আমাদের খাদ্য বিপর্যয় নেমে এসেছে। ব্রাকের এক জরিপ বলছে- 'দেশে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের ঘরে কোন খাবার নেই। প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের ঘরে ১/৩ দিনের খাবার মজুদ আছে।' এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন বাংলাদেশ। বিশ্বের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি ভারত। সেই ভারতেও খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মেখালা কৃষ্ণমারথী। এই কঠিন সময়ে বিত্তশালী ব্যক্তিরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, দাঁড়াচ্ছেন। মানুষ খাবার নিয়ে ছুটছেন অসহায়দের বাড়ি বাড়ি। মনে হচ্ছে অসুস্থ একটি দেশে কোন সুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। পাশাপাশি এই কঠিন সময়ে মানুষকে চরিত্রের সার্টিফিকেট দেয়া দেশের কতিপয় জনপ্রতিনিধি মেতে ওঠেছেন জনগণের চাল লুটপাটে। আবার কোন কোন কোম্পানী বাড়িয়ে দিয়েছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। আসলে সবকিছুর আগে মানুষ হওয়াটা জরুরী। 

সরকার কয়েক দফা বাড়িয়ে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে। দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। বলতে গেলে দেরীতে হলেও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সাধ্যমতো ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে মানুষের অসচেতনতা। বাড়ি থেকে অপ্রয়োজনে বের হতে নিষেধ করা হলেও মানুষ তা মানছে না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই। তারা অবাধে ঘুরছে, ফিরছে। আগের মতো চালু রেখেছে চা দোকানের আড্ডাও। এমনকি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণরাও ছাড়তে পারেনি খেলার মাঠের মায়া। মসজিদ, মন্দিরে মানুষের উপস্থিতির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। অথচ এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে দেশ ও মানুষের স্বার্থেই। আর গ্রামাঞ্চলের প্রশাসনও খুব একটা কঠোর নয়। মানুষের প্রতি, দায়িত্বের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা আছে বলে তারা হয়তো মনে করে না। নয়তো প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য হয় কেমনে! করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ, মহল্লা কমিটির মতো ছোট ছোট ক্ষেত্রগুলোকেও গুরু দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। নয়তো এই অসচেতন, দায়িত্বজ্ঞানহীন জাতিকে বাঁচানো কঠিন হবে। জাতির মৃত্যু হলে বিলীন হয়ে যেতে পারে দেশের অস্থিত্বও। কাজেই এই যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে।

এদিকে আমাদের মাঝে সমাগত হয়েছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমযান। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আগের বছরগুলোতে রমযানপূর্ব এই সময়টাতে মানুষ ব্যস্থ থাকতো প্রস্তুতির কাজে। জমে ওঠতো হাটবাজারগুলো। বিত্তবান কেউ কেউ চলে যেতেন ওমরাহ পালন করতে। সবকিছু মিলিয়ে বলতে গেলে রমযানের একটা আমেজ বিরাজ করতো সর্বত্র। কিন্তু এবারের অবস্থা ভিন্ন। রমযানের ভালো খাবার তো দূরের কথা; মানুষ ঠিক মতো দুইবেলা খাবার জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে। কলকারখানা, গার্মেন্টস থেকে শুরু করে সবকিছু বন্ধ। মানুষ গৃহবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এদিকে পরিস্থিতিও দ্রুত অবনতির দিকে হাঁটছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মানুষকে ভাত খেয়ে রোজা পালন ও ভঙ্গ করতে হবে। অনেকের ক্ষেত্রে সেই সুযোগও হবে কিনা সন্দেহ। এই কঠিন সময়ে মানবতার খাতিরে বিত্তশালীরা অসহায়দের পাশে দাঁড়ালে কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হতে পারে। বিশেষ করে দান, সদকা যেন সুষমভাবে বন্টন হয়। ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে সৃষ্টি হলে এখানে ভাইরাসের আক্রমণের পাশাপাশি অগণিত মানুষ মরবে খাদ্যের অভাবে। ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর মনোবিদ ইয়োয়েল আনবান বলছেন- 'করোনায় আত্মহত্যা ও মানসিক বিকারগ্রস্ততা বাড়বে।' আমাদের দেশে আত্মহত্যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পরিবারের কর্তা যদি অধীনস্থদের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারে ব্যর্থতার দায় নিয়ে আত্মহনন করা ছাড়া উপায় কি! আর এখন তো পালাবার কোন পথও খোলা নেই। খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে হয়তো বেঁচে যাবে এদেশের অনেক মানুষ।


শব্দমালা : সেলিম রেজা

শব্দমালা : সেলিম রেজা


শূন্যতার বুকে আঁকা প্রেমরেখা

পথে নামতেই দুঃখের সাথে দেখা
সে কী কান্নাকাটি বুকে জড়িয়ে
পথিক কখনো থেমে থাকে না পথে
ফিরতে পথেই দেখা হবে হয়তবা!!!
মরা পাতায় ফিরে প্রাণ
চোখ মেলে তাকায় দূরপানে
কে যেন দাঁড়িয়ে আছে শরীর ঘেঁষে
কতোকাল ধরে!
শূন্যতার বুকে এঁকে দিলো প্রেমরেখা
কতোকাল রে!
নৈঃশব্দের রাতে লোপাট জোছনা
কেউ জানে না
কেউ দেখে না
কেউ ডাকে না



দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্নালুপ্রেম

দূরে থেকেও ছুঁয়ে যাও অনায়াসে
বাধা না মেনে একটু উষ্ণতার খোঁজে
নেমে পড়ো কবিতার দীঘিতে;
মুঠোফোনে আলাপচারিতা
সময় গড়িয়ে দীর্ঘ হয়
নিতান্তই ঠুনকো ভৌগোলিকরেখার বিস্তৃতি
কতটা কাছে শুধু আমরাই জানি
বুকের ভেতর পুষে রাখা দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্নালুপ্রেম
সময়ে কাঁদো
কাঁদি আমিও
এইতো সেদিন ঢেউখেলা সমুদ্রবাতাস
খোলাচুলে হাত বুলালে ঘাসফুল
প্রয়োজনে শূন্যতা মিশে যায় অসীম শূন্যতায়
প্রয়োজনে শরীরের বাঁধনগুলো মহাস্রোতে ভেসে যায়
এইখানটায় চুপচাপ বসে পড়ো
বিরহী বাতাসে প্রেম পূর্ণতায়
চলুক বোঝাপড়া
বেদুঈন সময়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তুমিও বলতে পারো
এবার দেখা হলে দেবো না যেতে…


করোনা কালের হিটলার-মরণব্যাধি

করোনা তুমি জানো!
অভুক্ত মানুষদের আমি বলেছি
করোনার জেদ বেড়েছে
দেশ থেকে দেশে ঘুরছে-ফিরছে
সবখানে বাড়ছে হাহাকার-শংঙ্কা
বাড়ছে লাশের সারি;
বিশ্বঅর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
বিশ্ববাজারে মন্দা, লকডাউন, আইসোলেশন
কতদিন কতমাস কতবছর কে বা জানে!
পিতার জন্মশতবর্ষ গেলো
স্বাধীনতা দিবস গেলো
বৈশাখ গেলো, ছুটি গেলো
বিদেশ ফেরত মায়াও গেলো
অলি-গলিতে আড্ডাও গেলো
চেনামুখগুলো স্মৃতি হলো
শোকে কাতর হবার সময় কই!
মানুষ নিরুপায়
প্রতিটি মুহুর্ত মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়াচ্ছে মানুষ
পৃথিবী আজ মৃত্যুপুরী
সামাজিক দূরত্বের সর্তকবার্তা
যেখানে কমেছে ভিড়
সেখানেই বেঁচেছে প্রাণ;
রহস্যময় করোনা
একটু শান্ত হও
এখন আমাদের ফেরার সময়
ফিরতে দাও
আমাদের জেগে উঠার সময়
জাগতে দাও
আরও ক’টাদিন বাঁচতে দাও
দরজা-জানালা সবই বন্ধ
এখন ঘর আছে, সেই ঘরে মানুষ নেই
যোগাযোগের খিলআঁটা
স্থবির বিশাল রাজ্যপাট
অন্ধকারে ঘুমিয়ে পাড়া-মহল্লা
কালের হিটলার করোনা তুমি
ইতিহাস সেরা মহামারী মরণব্যাধি।


শব্দমালা : নুরুল ইসলাম বাবুল

শব্দমালা : নুরুল ইসলাম বাবুল


রং 

গায়ে মেখে নেব আজ উৎসবের রং
তোমার গালেও লাগিয়ে দেব রক্তজবার লাল,
সবকিছু রাঙিয়ে দেব;
আকাশও থাকবে না নীল
 সাজবে রংধনুর সাতটি রঙে,

রং মেখে মেখে আজ শুয়ে থাকবো
পৃথিবীর শরীর জুড়ে।


শহরমুখি

একদিন শহর থেকে ফিরতে ফিরতে
ঘরে নিয়ে আসতাম পথের ধূলিকাদা,
আজ সেই মেঠোপথ কংক্রিটে মোড়া;

গ্রামীণ অনাত্মীয়ও শহর চেনে,
মেকআপে ঢাকা মুখ গুুুনগুন করে;
হুইসেল বাজাতে বাজাতে চলে যায়...

গ্রামগুলো আজ বড্ড শহরে চেনে।


তোমার স্বভাব

কোন কম্পনেই আমি কাঁপি না
অথচ তোমাকে কাঁপতে দেখলেই
থরথর কেঁপে উঠি,
তাবৎ ভয়েই আমি নির্ভয় থাকি
কেবল তোমাকে ভীতু হওয়া দেখলেই
আমি ভীষণ আতংকিত হয়ে যাই...

কেননা, আমি তোমার স্বভাব চিনি।



রাখালের বাঁশি

রাখালের বাঁশি বেজে উঠলে নেচে ওঠে ঘাস
উড়ে উড়ে খেলে যায় পথের ধুলোবালি,
তখন আমার পুড়তে থাকে মন
তখন আমার ভাঙতে থাকে গৃহকোণ
তখন আমি ভেসে চলে যাই আকাশে...

ও রাখাল কোথায় তুমি?
নিশিদিন বাজাও তোমার বাঁশের বাঁশি।



সূর্যমুখি

চোখ মেলে আকাশ দেখি না
ঠিক যতবার তোমাকে দেখি
তোমার পায়ে ঘুঙুর বেজে ওঠার আগে
তোমার চুলগুলো মেঘ হয়ে উড়ে যাওয়ার আগে
শেষবারের মতো অন্ধ হতে চাই না আমি।
সূর্য হওয়ার আগেই তুমি তো জানো-
আমি তোমার সূর্যমুখি।


তুমি

তোমাকে দেখলে দেখা হয়ে যায় রাতের জোছনা
তোমার মুখের কথা শুনলে শোনা হয়ে যায় পাখিদের গান,
তখন আমি মধ্যরাতের মতো স্তব্ধ হয়ে যাই
বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকি;
তখন মেঘের আড়ালে মুখ ঢাকে চাঁদ
পাখিরা চুপচাপ থাকে

 আমি কেবল তোমার এলোকেশে মেঘডম্বর আকাশ দেখি।



তুমি আসো না

তোমাকে কাছে পেলে ভেঙে চুরমার হয়ে যাই
অবশিষ্ট অহংকারটুকু গুড়ো-গুড়ো হয়ে যায়,
বুকের ভেতর আনন্দের ডুগডুগি বাজে
অথচ তুমি ঝুলে থাকো শূন্যে...

মাঝে মাঝে শোনাও শুধু আগমনী গান
সে গানে বেদনা জাগে আমার
কেননা, আসি-আসি করে তুমি আসো না।


আহ্বান

এখানে ফেলো তোমার পায়ের ধুলো
সযতেœ আমি মাথায় মাখিয়ে নেব,
তোমার জন্য রেখেছি যে ফুলগুলো
উজাড় করে হাতভরে তুলে দেব।

এখানে উড়াও এলোমেলো ওই চুল
তপ্ত বুকে বৃষ্টি নামবে তবেই,
শুধরে নেব জীবনের যত ভুল
পৃথিবীর বুকে স্বর্গ নামতে হবেই।


তোমাকে দেখাব

তোমাকে দেখাব আকাশের ঘন নীল
তোমাকে দেখাব খয়েরি ডানার চিল
তোমাকে দেখাব সবুজ মাঠের বুক
তোমাকে দেখাব বাংলা মায়ের মুখ
তোমাকে দেখাব নদীনালা খালবিল
তোমাকে দেখাব রংধনু ঝিলমিল
তোমাকে দেখাব বিচিত্র ফুল-ফল
তোমাকে দেখাব সাঁঝের জোনাকিদল
তোমাকে দেখাব আমাদের এই গ্রামে
কী যে অপরূপ পূর্ণিমারাত নামে।


স্বপ্ন

এখনো রেখেছি কিছুটা স্বপ্ন জমা
কেউ কি আছো স্বপ্নবিহীন ঘোরে?
তার কাছে চাই অতি সবিনয়ে ক্ষমা
এসে নিয়ে যাও স্বপ্ন দুচোখে ভরে।

স্বপ্নবিহীন জীবনে আসে না দুপুর,
হৃদয়ে বাজে না কখনো সুখের নূপুর।

একটা জীবনে হাজার স্বপ্ন থাকুক
ভাঙে যদি তার দুচারটা অবিরত,
শতবাধা-ঝড় জীবনে আসবে আসুক
তা বলে হয়ো না বেদনার কাছে নত।




চালচোর !

চালচোর !


একদম হাতে নাতে ধরা পড়েছে। তাও এমন মহামারীর দিনে!যখন পৃথিবীর সব মানুষ ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করছে।ঠিক তখন হেকিম মেম্বারের ঘরের মেঝে থেকে একে একে ত্রাণের আঠারো বস্তা চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।বাতাসের গতিতে খবরটা ছড়িয়ে গেলো পুরো শান্তিরহাট গ্রামে।লোকজন দৌঁড়ে আসছে মেম্বারের বাড়ি দিকে।ইতোমধ্যে খবরের কাগজ ও টিভির লোকেরাও চলে এসেছে।কেউ কেউ পুরো ঘটনা মোবাইল লাইভে প্রচার করছে।

দু'জন কনস্টেবল হেকিম চোরাকে গরুর দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে।কুরবানির গরুর মতো গ্রামবাসী তাকে আগাগোড়া দেখছে।মেম্বারের সকল কাজের সহকারী মজিদ হেকিমকে কানেমুখে বললো,'কইছিলাম হুজুর,এই গজবের ভিত্রে চুরি কইরেন না। হুনছেন আমার কতা?যান,এহন জেলে গিয়া পঁইচা মরেন।' মাথা নিচু করে লাটিমের মতো ঝিম ধরে আছে হেকিম।হঠাৎ সে মজিদের টুটি চেপে ধরে,'হারামির বাচ্চা মজিদ,তুই আমার লগে ইমুন নিমুকহারামি করতে পারলি?'

পলাশ,নরসিংদী। 

অণুকাব্য

অণুকাব্য


১.
আমি নাহয় তোমার দিকেই যাব,
যেমন করে যাচ্ছি আজও করাতকলে।
ইচ্ছেমত রাঙিয়ে নেব সমস্ত দাগ
প্রলয় সরোদ খুব বাজাবো কড়ির ছলে;

২.
আচ্ছা, তুমি কেমন দেয়াল!
আমার নিখোঁজ খবর পাও নি আজও?
আভোগ ও ধূলির সারগামে;
কেন, গ্রাফিথির হয়ে সারাটাদিন বাজো?

৩.
বিশ্রামের কাছেও আমি অচেনা, যুদ্ধাহত!
কবেকার ক্লান্ত ক্লোরোফিল যেনো
প্রত্যহ সেলাই করে খরচের যাবতীয় ক্ষত,
তীর্থের মতো স্থীর রয়েছে এখনও।

৪.
চাক্ষুষে চাও শুশ্রূষার যোগ্যতা?
কার্পাস ছিঁড়ে দেখাও কেন পুষ্পভীতি?
আয়ুর্বেদ সপক্ষে না থাক আর,
তবুও আমি বদলে দেব জখমের রীতি।

৫.
ইন্দ্রসভায় দেখা হয় নি বলে
চাষের বিভূতি ঢেউ ভাঙে ক্রমাগত!
মন্ত্রমুগ্ধ জমিনও কৌতূহলে,
ঈর্ষার স্মারকে থেকে যায় অক্ষত।

৬.
মাংসই যদি মারণাস্ত্র কুটনৈতিক বেশ্যার! 
তবে, বসন্তকে কেন রুখে দিচ্ছো না প্রিয়?
স্থির দৃষ্টিতে গীত হোক যাবতীয় অনশন
গোপন রেখো যুদ্ধ বিরতি, উতল ইন্দ্রিয়;

শাস্তি বিষয়ক আলাপ !

শাস্তি বিষয়ক  আলাপ !


হক মারা চোর  মুখোশ  কিনে নেয় । মানুষের সহ  রঙিন   অনেক মুখোশ।  চাউল  সামান্য চুরি বলে তার বড় ভাই। বুঝার সময় আসেনি তার,  সংক্রামণের  দিনে চাউল মানে আমাদের পরমান্ন!  প্রাণ  টিকিয়ে রাখে । মানুষ স্বপ্ন দেখে। ভাত স্বপ্ন।  এবং তারাই ক্ষেতে খামারে চাষ দিবে সোনালো  ধানের অপেক্ষায়!

হক মারাদের  ফয়সালার কথা আসে। তাও অদৃশ্য  বইয়ের পাতায়। আর অদৃশ্য  থুতু। ভিন্ন আলাপেও  প্রস্তাব আসে। দেখে শিখার কথা  সমর্থন করে অনেকে।
নগরে উন্নয়ন জোয়ার,সত্যিই তো দৃশ্যমান ,  আমরা এগিয়ে যাই ,  শৈল্পিক  টয়লেট  সহ । 

আইসল্যান্ডীয়  শাস্তির কতা আলাপ হয়। লাইক বাটনে  হাত চাপে ভুক্তভোগী জনগন ।  চাউল চোরের  শাস্তি  এমন হলেও মন্দ না।  প্রশ্রাব খানার পাত্রের প্রলেপ হোক চোর মানুষের ছবি ।  
বড়ভাইয়ের দুই বছর!  ছোট- মেজো এক বা মাস -ছয়েক। 
হয়তো বদলে যাবে ওরা, বড় চুরির হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেলেও যেতে পারে । আমরা জনগন, আগামীদের বলে দেব ।  শুনো, " আমরা চোরের মুখে  প্রসাব করে তাড়িয়েছিলাম  সমস্ত চোর"!


কুলগাঁও, , বায়েজিদ, চট্টগ্রাম 

চিঠি ও কবিতা

চিঠি ও কবিতা


প্রিয় সামীর,

তুই ভালো নেই জানি। তাই জিজ্ঞেস করলাম না কেমন আছিস!
আজ ৬/৭ বছর হয় তোর কথা মনে হয় না। বলতে পারিস ভুলেই গেছি । তবে তুই চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন নীরবে কেঁদেছি। মাথায় শুধু একটি কথাই ঘুরপাক খেতো মানুষ কীভাবে পারে এতটা বেইমান হতে? এত দ্রুত?  কীভাবে সম্ভব এমন?  তোকে ভেবে প্রায়শই  তোর কাছে  পত্র লেখতে বসতাম ।  কিন্তু দুয়েক লাইন লেখার পর আমি লেখার শক্তি হারিয়ে ফেলতাম, হাতের আঙ্গুল গুলো কেমন যেনো উদ্ভূত ভাবে  কেঁপে উঠতো খুব।  তাই অনেক গুলো চিঠি অর্ধেক লেখাই রয়েগেছে পুরনো ডাইরিতে।  কী জানি! হয়তো আমিই অপরাধী ছিলাম তাই আঙ্গুল গুলো এমনভাবে কেঁপে উঠতো অথবা তোর এমন নীরব চলে যাওয়ায় আমার ক্ষোভে মন অনশন করে বসতো।

কথা দিয়েছিলাম এক সাথেই আমরা সর্বত্র ঘুরে বেড়াবো।  অথচ পারলি না কথা রাখতে। সেদিন বড্ড তাড়া দেখিয়ে খুব সুকৌশলে ওয়াদা ভঙ্গ করলি। চলে গেলি!  সেদিন এত তাড়া ছিলো তোর যে আমি সব কিছু গুছিয়ে উঠার আগে তুই  ট্রেন চড়ে বসলি। পারলাম না, আমি সেদিন তোর সাথে যেতে পারলাম না। সেদিন ট্রেনের আচরণটাও ছিলো বেশ  অদ্ভূত ছিলো অপেক্ষা  করলই না। সেদিন খুব অপরাধী মনে হলো নিজেকে।বারংবার নিজেকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম "আমি এতো অলস কেনো?  তুই তো জানিস আমি একটু স্বাভাবতই অলস।  অলস জেনেও সেদিন তুই  আমায়  সময় দিলি না। সে জন্য অবশ্য তোর উপর খুব রাগ হয়েছিলো। এখন যে নেই তা নয়। হয়তো সে কারনেই ভুলে গিয়েছি তোকে এবং এখনও আছি। 

এক সাথে সম্পূর্ণ পাড়া ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা।  পাড়ার এমন কোন ফল ছিলো না যে আমরা চুরি করিনি।এর জন্য কত সালিশ ই না বসেছিলো। সব সময় দোষটা তুই নিজের কাঁধেই নিয়েছিস।  তুই একটু বেশী রগচটা ছিলি কেও কিছু বললেই রেগে যেতি আচ্ছা এখনো কি সেখানে রাগ দেখাস। এখন অবশ্য রাগটা কমে যাওয়ার কথা তোর। সেখানের মানুষ কি আর তোর এমন রগচটা স্বভাবকে তোয়াক্কা করবে। কীরে  আগের মত  তোর প্রিয় গানটা গলা ছেড়ে গাওয়া হয়?   হয় না হয়তো! 

ও তোকে তো বলাই হয়নি তোর একটি ইচ্ছা ছিলো না? ভাবছিস কি ইচ্ছে।  আরেহ!  ঐ যে ঐ ইচ্ছেটা  যে খুব ভালো একটি মেয়ে আমার জীবন সঙ্গী হোক।  হ্যাঁ রে পেয়েছি খুব ভালো একটি মেয়ে পেয়েছি।  এইইইই হাসবি না কিন্তু?  আমি মানছি আমি মদন ছিলাম কিন্তু এখন আর নেই। খুব বেশী আধুনিক না হলেও চলার মত হয়েছি।  তুই এক সময় আমার সব সৎ সাহসের মাধ্যম ছিলি।  আমি মানছি তোর অভয়ে ই চলাফেরা করতাম কিন্তু বিশ্বাস কর একটা জীবন সঙ্গী পেয়েছি যে ঠিক তোর মতই ভালোবাসে।  কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কি জানিস তাকে হয়তো পাবো না।আমার তো এখনো চাকরি' ই  হয়নি পাবো কি করে বল। কোন পিতা কি তার মেয়েকে কোন বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবে বল। তাই তো হণ্যে হয়ে পড়েছি  নিজেকে যোগ্য প্রামাণের জন্য একটি চাকরির খোঁজে।  তবে মেয়েটা না খুব ভালো রে । এমন মেয়ে  ভাগ্যবান মানুষের কপালেই জুটে।  ঠিক তোর মতো।  

ওহ ভালো কথা জীবনসঙ্গীর  কথা বলতেই মনে পড়ে গেলো।  আচ্ছা তোর কি মনে পরে তানিয়ার কথা? তুই বড় বেইমান রে তাকেও ভুলে গেলি তোর সাথে নিতে। কত ভালই না বাসতো মেয়েটি তোকে। তুইও ভালোবাসতি এটা মিথ্যা নয়। ভালো না বাসলে কি  আর কেও রাত জেগে জেগে প্রিয় মানুষের কথা ভাবে।  ভালো না বাসলে কি আর ছোটখাটো ঝগড়ায় সারা রাত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।   অল্প দিনের প্রেম তোদের তারপর বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ।  কত স্বপ্ন দেখেছিলো মেয়েটা তোর বউ হবে কিন্তু সে সময় টুকু ও দিলি না তুই। কি এমন অভিমান ছিলো তোর যা আমি জানি না?

বিশ্বাস কর তোর ক্ষতবিক্ষত দেহটা দেখে আমার থেকেও বেশী ভেঙ্গে পড়েছিলো মেয়েটা।   চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছিলো সে।  তার কান্না যেনো এখনো কানে ভাসে।  ঐ ছোট ছোট চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ার দৃশ্যটা এখনো যেনো চোখে ভাসে আমার।  বিয়ের আগেই স্বামীর এমন দেহ কোন মেয়েই দেখতে চায় বল। 

কি নির্মম বল পৃথিবীটা। ট্রাকে চাপা খাওয়ার  দুদিন পর ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে ফিরে আসলি বাড়িতে।  কি দুর্গন্ধই না  ছিলো তোর শরীরে। মিনিটেই বাতাসকে বিষাক্ত হয়েগিয়েছিলো।  জানিস তোর দেহটা রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছিলো কেও যায়নি  তোর কাছে। সেদিন শুয়েছিলি তুই।  এত মানুষ তোর আশেপাশে থাকতো সর্বদা।  কত মানুষকেই না চালিয়েছিলি নিজ অর্থে। কিন্তু সেদিন কেও আসেনি একাকী পড়েছিলো তোর নিথর দেহ।শুধু আমি ,  তানিয়া  আর তোর মা ছিলো তোর কাছে। হাড়গুলো  এত গুড়ো হয়েছিলো যে কেনটা হাত আর কোনটা পা তা চিহ্নিত করাই ছিলো সবথেকে কঠিন কাজ। একমাত্র তোর মুখটাই ছোঁয়ার মতো ছিলো বলতে পারিস। যা দেখে তুই তোকে শনাক্ত করতে পেরেছি।  

আমার  মনে আছে তুই একদিন বলেছিলি যে তোকে আমি কোনদিন  কাঁধে নিতে পারবো না।  তুই ঠিক ই বলেছিলি।  সেদিন তোর কথার মর্ম বুঝেছিলাম।যখন তোকে শেষ বারের মত কাঁধে নিয়েছিলাম  গোরস্থানে নেওয়ার জন্য খুব কষ্ট হয়েছে আমার।  মনে হচ্ছিলো কেও আমার কাঁধে সম্পূর্ণ পৃথিবীটা তুলে দিয়েছে। আমি নুয়ে পড়ছিলাম। মনে হচ্ছিলো এ পথ বুঝি ফুরাবার নয়। এতটাই  কষ্ট হচ্ছিলো যে চোখের পানি গুলো টলমল টলমল করছিলো। খরা চোখে বৃষ্টি এলো বলে। 

জানিস আজও তোর কথা মনে পরতো না।  আমার বান্ধবী আছে একজন তার জীবনসঙ্গীর নামে তোর নামে।  হাঠাৎ তার মুখে এই নাম শুনে ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।  তাই তোকে আজ মনে করা।  আবার হয়তো ভুলে যাবো বছর ছয়েক এর জন্য। 

আজ রাখি রে। আজ আর লেখতে পারছিনা। আঙ্গুল গুলো আবার কাঁপা শুরু করেছে। আর কিছু লেখার শক্তি ফুরিয়ে গেছে। যদি সৃষ্টির প্রভু সহায় হয় তাহলে তোর ভাবিকে নিয়ে চিঠি লেখবো। সেদিন হয়তো বেশি লেখার শক্তি পাবো কারন ঐ যে বলেছিলাম সে ঠিক তোর মতোই সাহস যোগাতে পারে। তাই তখন ভেঙ্গে পরার ভয় নেই। সে পর্যন্ত এই চিঠি টা যত্নে রাখিস।


ইতি
পত্রের ভাষায় বুঝে নিস।



কালো গোলাপ
মোঃ নুরুজ্জামান 

আমি কথা রেখেছি সুরঞ্জনা
আমি কথা রেখেছি। 
এই দেখ তোমার জন্য বেগুনী রঙ্গের শাড়ি আর  চুড়ি  এনেছি।

বছর দুয়েক আগে এই শাড়ি আর চুড়ি গুলো দিতে পারিনি শুধু  অযোগ্য ছিলাম বলে। 
এই দেখ আজ ঠিক কিনে এনেছি।
 
আমি কথা রেখেছি সুরঞ্জনা
আমি কথা রেখেছি। 

দ্বিতীয় বার মা হবার পর খুব অভিমান নিয়ে আমার কাছে সময় চেয়েছিলে। 
 
 আজ আমি ঘন্টার পর ঘন্টা তোমার পাশে দাড়িয়ে থাকি সুরঞ্জনা। শুধু তুমি নিশ্চুপ। 


তোমার মনে আছে বঙ্কিম সমগ্র এনে দেওয়ায়  আমার পছন্দের সবগুলো পিঠে বানিয়েছিলে। 
সেই বঙ্কিমেও আজ ধূলো জমেছে। 

আমি কথা রেখেছি সুরঞ্জনা
আমি কথা রেখেছি। 

 সমুদ্র পাড়ে একটি পূর্ণিমারাত  চোখে চোখ রেখে  কাটানোর কথা ছিলো।  
  কত পূর্ণিমারাত আসলে গেলো শুধু আমাদের  জোৎস্না দেখা হলোনা। 

পছন্দের কালো গোলাপে তোমার বারান্দা সাজিয়ে দিবো বলেছিলাম।  এমন ভাবে তোমার কবরে সাজাবো ভাবিনি।  তবুও আমি কথা রেখেছি। শুধু তুমিই কথা রাখনি।

আমি কথা রেখেছি সুরঞ্জনা
আমি কথা রেখেছি। 

ধানশালিক ই-পেপার সাময়িকভাবে বন্ধ !

ধানশালিক ই-পেপার সাময়িকভাবে বন্ধ !
তারুণ্যের শিল্প সরোবর : ধানশালিক : সংখ্যা ১৪৫
শুক্রবার, ০৩ এপ্রিল ২০২০
[বিঃদ্রঃ করোনা ভাইরাসের কারণে সাময়িকভাবে ধানশালিক ই-ম্যাগ বন্ধ আছে । বর্তমান অবস্থা স্বাভাবিক হলে আবার পুনরায় ধানশালিক প্রকাশ হবে; ইনশাআল্লাহ]







মায়াগাশি

মায়াগাশি



 মায়াগাশি একটা গ্রামের নাম। নামটা প্রথম যার মুখে শুনি, তিনি আমাদের বেলু ভাই। অনেকদিন হয়ে গেলো বেলু ভাইকে দেখি না। বেঁচে আছে না মরে গেছে, আল্লা মালুম। সোহাগ, মিরু, প্রণব তারাও কিচ্ছু জানে না। কোথা থেকে আসতেন, কার কাছে আসতেন, কেনো আসতেন। কিছুই জানা সম্ভব হতো না। পাছে তিনি কষ্ট পান, এজন্যে বেশি ঘাটাঘাটিও করিনি কেউ। তবে তাঁর ব্যাপারে একটা পিনপিনে সন্দেহ যে কাজ করতো না, তা নয়। সন্দেহের সাথে ভাষার টোন মিশিয়ে কেউ কেউ ভাবতাম নিশ্চয়ই তিনি উত্তরবঙ্গের কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক পার্টির সাথে জড়িত। হয়তো খুনটুনও করে থাকতে পারে। আত্মগোপন করতেই বোধহয় এদিকে আসা। এর আগেও এসেছিলো একজন। তিনি পুরুষ নন, নারী। আমরা যাকে কমলা দি ডাকতাম। আমাদের কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লেকচারার ছিলেন। বয়স কম, অথচ ব্যক্তিত্বে সকলের মন জয় করে ফেলেছিলেন। তিনি যখন ক্লাস নিতেন, আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়তাম। কথা তো নয়, যেনো আবৃত্তি করছেন। সে সাথে হাসি, চোখের চঞ্চলতা— দিনটাই সার্থক হয়ে যেতো। পরে শুনলাম, তিনি আন্ডারগ্রাইন্ড রাজনীতির সদস্য। পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে।
বেলু ভাইয়ের ব্যাপারেও আমাদের একটা অস্বস্তিকর সন্দেহ ছিলো। তারপরও আমরা ভালোবাসতাম। তাঁর কথাগুলো অমৃতের মতো গিলতাম। মাইনাস পাওয়ারের মোটা ফ্রেমের চশমা। কী যেনো খুঁজে বেড়ায় দুটো চোখ। মাথায় অবিন্যাস্ত চুল, গালে উসকোখুসকো দারি। দীর্ঘদিন আধুয়া জিন্সের শার্ট-প্যান্ট। সবমিলিয়ে অপছন্দ লাগতো না। সোহাগের লাইব্রেরিতে শেষ যখন দেখেছিলাম, প্রাণ খুলে গল্প করেছিলেন। গল্পকাররা সাধারণত বেশি কথা বলেন, তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। একটা পরিমিত বোধ তাকে ঘিরো থাকতো। হয়তো এজন্যেই তাঁর প্রতি আমাদের আগ্রহের কমতি ছিলো না। তিনি কখন ফের আসবেন, আমরা যেনো অপেক্ষায় থাকতাম।
সোহাগ তখন মার্ক্সবাদÑলেনিনবাদে দীক্ষা নিচ্ছে মাত্র। সামনে যাকেই পেতো মার্ক্সÑলেনিন সম্পর্কে চমকপ্রদ যত কথা একে একে বলতে শুরু করতো। আমরা যারা তাকে চিনি, তারা মজা নিতাম। কেউ কেউ বিরক্তও হতো। ‘গ্লোবালাইজেশন যুগে এসব অচল। পৃথিবীর কোথাও সমাজতন্ত্র নাই।’ এসব বলে কেউ কেউ তর্ক করতো। পা-িত্য দেখাতো।
বেলু ভাই এলে সোহাগসহ আমরা সব প-িৎ অবুঝ হয়ে যেতাম। কিন্ডারগার্টেনের শিশুর মতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চোখ বড়ো করে তাঁর দিকে চেয়ে থাকতাম। এমনকি বলন কাইজির শিস্য মোবারক ভাই পর্যন্ত বেলু ভাইয়ের কথা শুনে বোকা হয়ে যেতো। ‘দেহতত্ত্ব করবা মিয়ারা, দেহতত্ত্ব? পঞ্চতত্ত্ব বুঝো? কি কি মিশায়া পঞ্চতত্ত্ব, বলতে পারবা?’ মোবারক ভাইয়ের এসব ঝারিঝুরিও সেদিন যেনো কোথায় পালিয়ে যেতো।
বেলু ভাই যখন আসতেন, শিল্পÑসাহিত্যের বিভিন্ন শাখা নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণ করতেন। কে কাকে নকল করে বিখ্যাত হয়ে গেলো। বাদ দিতেন না কিছুই। একদিন কথা প্রসঙ্গে মায়াগাশির কথা তুললেন। মায়াগাশি একটা আজব গ্রাম। কারো চোখ, যকৃত কিংবা কিডনি প্রয়োজন তো, ওখানে গেলেই কাজ হয়ে যায়। কারো সন্তান লাগবে, হাজার পাঁচেক দিলেই চলবে। রক্ষিতা লাগবে, তাও মিলবে অনায়াসে।
‘রক্ষিতা’ শব্দটি উচ্চারিত হতেই আমি অন্যরকম কিছু কল্পনা করতে লাগলাম। আমার একটা বাতিক, সেটা তুলারাশির লোক বলেই কিনা—। আমি অল্পতেই সম্মোহিত হয়ে পড়ি। সবকথাকেই গুরুত্ব দিই। যে বিষয়েই কথা হোক, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি এবং অল্পতেই বিভ্রমঘোরে হারিয়ে যাই। ঘটনার ভেতর ঢুকে চরিত্রদের ভিড়ে ঢুকে পড়ি। এর আগে মোবারক ভাই যখন দেহতত্ত্বের বয়ান শুরু করতো, আমি তখন মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা ও যৌন সঙ্গম ইত্যাদি মশলা মিশিয়ে এক ধরনের রসায়নে ভাসতে থাকতাম। ‘কসমিক সেক্স’, ‘কামসূত্র’, তিব্বতি ফ্রি-লাইফ’, ‘নাথ সাহিত্য’ ইত্যাদি বইয়ের ভেতর বিভিন্ন স্থির চিত্রগুলো জীবিত হয়ে আমার চারপাশে কিলবিল করে বেড়াতো। বিশেষ করে ‘নাথ সাহিত্য’ এর গোপীচন্দ্র যখন হীরা নটীর বাড়িতে ষোল হাজার গোপিনীর সঙ্গে ওপেন ক্রিয়াকলাপে মগ্ন হয়, সেসব দৃশ্য পর্নফিল্মের রিলের মতো আমার উৎসুক চোখে টলটলিয়ে ভাসতে থাকতো।
চা-কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বেলু ভাইয়ের শেষ কথাছিলো, ইচ্ছে করলেই যে কেউ মায়াগাশীতে যেতে পারে। সে-রাতেই বেলু ভাইয়ের কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম। তখনই দেখি সহজিয়া বাউলের মতো পাকুরগাছটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে। যার ছায়ায় গেলেই ভালো লাগে। বসে পড়তে ইচ্ছে করে। আশপাশে মাইল তিনেকের ভেতর কোনো বাড়িঘর নেই। হাওড়ের মাঝখানে গাছটা। হয়তো এজন্যেই ক্লান্ত পথিক এর ছায়ায় এসে বিশ্রাম নেয়। বসে। শোয়। কেউ কেউ ঘুমিয়েও পড়ে। ঘুম একটা মহৌষধ। যতক্ষণ ঘুম ততক্ষণ ক্ষুধা নেই। হ্যাজাক লাইটের গোল আলোর মতো, যেটুকু ফর্সা ততটুকুই অন্ধকার মুক্ত।
গাছটার পেছন দিকে যেতেই মোটা আইলটা চোখে পড়লো। তাতে মানুষ চলাচলের চিহ্ন স্পষ্ট। পেন্সিলের মোটা দাগের মতো একটা রেখা আইলটার পিঠের দারা ধরে বয়ে গেছে। বেলু ভাই বলেছিলো, রেখা ধরে হাঁটতে হবে। আমি হাঁটতে লাগলাম। মাইল দেড়েক যেতেই তারগাছটাও চোখে পড়লো। তখন বিকেল। গাছের ছায়াটা পুবদিকে ধীরে ধীরে লম্বা হচ্ছিলো। ছায়া ধরে গেলে জিয়ংগা নদী। নদীর পাড়ে মেড্ডাগাছের সারি, চিতাঘাট, কবরস্থান। পাড় ধরে একধরনের ভূতড়ে নির্জনতা ঘুরে বেড়ায়। ওদিকে আমার কাজ নেই। আমি যাবো ছায়াটা বিপরীত দিকে।
আমি বিপরীত আইল ধরে হাঁটতে লাগলাম, প্রথমেই চোখে পড়লো, ছোট একটা জঙ্গল। হয়তো এটাই সে জঙ্গল, এক সময় যা ছিলো পাখিদের অভয়ারণ্য। এখন কিচ্ছু নেই। খা খা করে শূন্য। নগ্নÑনির্জন জায়গা দেখলেই আমার ভয় হয়। মনে হয়, চার দিক থেকে কারা যেনো চেয়ে চেয়ে দেখছে। ভয়ে দেহটা একবার আমূল কাঁটা দিয়ে উঠলো। জঙ্গলটা পেরোতেই বড়সড় একটা গৃহস্থ বাড়ি। সম্ভবত ওটাই সামন্তবাড়ি। যাদের সরাইলা কুকুরটা ভল্লাঘাট বাজারে যেয়ে আর ফেরে না। বাড়িটা থেকে সিঁদলশুটকি পোড়ার গন্ধ ভেসে আসছে। বাঁপাশে একটা বাড়ি, ওখান থেকে ধুপধোঁয়ার গন্ধ নাকে লাগছে। উলুধ্বনিও উঠলো কোনো একটা ঘর থেকে। সাথে কাঁসার টনটনানি। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এলেও একে একে সবার সাথেই দেখা হতে লাগলো। ওই লোকটার সাথেও দেখা হলো, যে ঢাকায় যেয়ে অ-কোষের রগ কেটে হিজড়া হয়ে গেলো। তার নাম নূরুলদীন। নাম শুনেই আফসোস বেড়ে গেলো। আহ! কী নামের ছেলে কী হয়ে গেলো। সৈয়দ হক সারাজীবন শহরে কাটালেন বলে এই নূরুলদীনদের দেখে যেতে পারেননি। এদের কারো একজনের সঙ্গে তাঁর দেখাটা হলে আমরা আরেকটা মহৎ কিছু পেতাম। জিজ্ঞেস করি, ‘কেনো এটা করলেন? সংসার না পাতেন, গরম পানি ব্যবহার করতেন। হাদিসে তো এমনই লেখা।’ সে তখন টিপটিপ করে চোখের পানি ফেলে, কথা বলে না। হয়তো অভ্যাসবশত কথার ভেতর হিজড়ার ভাষা ঢুকে গেছে। শুনলে সিরিয়াস মুডটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে আমার; সে ভয়েই নিজেকে সংযত করে নেয়। দেখা হয়ে যায় করিমের বোন সাকিনার সাথেও। মাটির চুলোয় খরÑবিচালি দিয়ে রান্না বসিয়েছে। রান্না বলতে বতুয়াশাক আর মলামাছের শুটকি। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী এবং আবেদনময়ী হওয়ার পরও তার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যায়। জৈবিক চাহিদা কার নেই? তারও আছে। হয়তো ওটাকেই দমন করতে গলায় এতোগুলো তাবিজ। তার মায়ের জবাব, ‘গেরামের বেবাক জোয়ান হিজড়া অইয়া যাইতাছে গা। ঢাহাত যায়া রগ কাইট্যা আয়ে। এহন মাইয়াগোর কী অবস্থা অইবো কন।’ ঠিক এই সময় দেখা হয় আক্কাসের বাপ আবদুল আওয়ালের সঙ্গে। একমাত্র ছেলেটারে হারিয়ে বেচারা একেবারে শামুকের মতো হয়ে গেছে। তবলিগি লেবাস, আটইঞ্চি লম্বা কিসের যেনো একটা ডাল দিয়ে দাঁত ঘষাচ্ছে। অনেক টোকাটুকি করলাম, কোন কথা বের করতে পারলাম না। ‘কতা কয় না, মানু দেকলে খালি চায়া থাহে। একমাত্র পোলাডারে জ্বীনে মাইরালাউনের পর থিকা ইমুন অবস্থা। আগে ইমুন আছিলো না, বাজারের ভিটখান লইয়া চেয়ারম্যান সাবের সঙ্গে অনেক দেন-দরবার করিছে। কোনো দরবারেই মাতবর সাব জিততে পারে নাই।’ করিমের মায়ের মুখ থেকে কথাগুলো শুনতে শুনতে তাকিয়ে দেখি, লোকটা চোখের আড়ালে চলে গেছে। জানতে চাইলাম, ‘সত্যিই কি জ্বীনে মেরেছে?’
‘এমা ইতা কি কন! জ্বীন হুজুর তো এইডাই কইলো।’
হঠাৎ খেয়াল হলো তাদের ভাষার টোনটা যেনো চেনা চেনা লাগছে। ময়মনসিংহ, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট কারো সঙ্গেই মিলছে না। আবার পরিচিতও। কোথায় যেনো শুনেছি। কল্পনায় একে একে সব বন্ধুকে সামনে বসিয়ে কথা বলতে লাগলাম। না, কারো সাথেই মেলাতে পারিনি। ঠিক এ সময় বেলু ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। হা, তাঁর মুখের ভাষাই তো এটা। তিনি শিক্ষিত লোক বলে গ্রাম্যভাষায় আদর্শ চলিতের রং মেখে উচ্চারণ করেন। টোনটা তো ঠিকই অভিন্ন। তার মানে বেলু ভাইয়ের বাড়ি এ মায়াগাশিতে! তাঁর পোশাকÑআশাক আর সংস্কৃতিবোধ মিলিয়ে দেখলে আমার জোর সন্দেহ, হয়তো তিনি মায়াগাশির সামন্ত পরিবারেই সন্তান। নদীটা মরে গেছে, এখন রেখটাও যায় যায় বুঝি। ‘আঘাট ঘাট হবে, আপথ পথ হবে’— এধরনের এক কথা লোকমুখে প্রায়ই শুনি। হয়তো ওটারই আয়োজন চলছে। একবার ভেবেছিলাম, কাউকে জিজ্ঞেস করে চেয়ারম্যান সাহেবের বাংলোটাও ঘুরে দেখে যাই। ঠিক তখন দরজায় কড়ানাড়ার শব্দে আমার সম্বিৎ ফিরে আসে।
সিটকিনি খুলে দেখি তাহের কবিরাজ। তুলারাশির লোক বলে, তার কাছে আমার বেশ কদর। তাহের জানে, তুলারাশির লোক ঠাডায় মরলে, তার লাশ তার কাছে লাখ টাকার মাল। আর শনিÑমঙ্গলবার মরলে তো কোনো কথাই নেই। আমার লাশ পাহারা দেয়ার জন্যে আত্মীয়স্বজনকে কবরের পাশে সাতরাত জেগে থাকতে হবে। এই তো গেলো আমার মরার পরের খবর। জীবিত থাকতেও কম মূল্য নয়। প্রতি শনিবার আমার চুল নেয়ার জন্যে তাহের বাসায় এসে বসে থাকে। আমার চুল দিয়ে তাবিজ বানায়। সে তাবিজ তাহের বিভিন্ন হাটে মজমা বসিয়ে বিক্রি করে। মহিলাদের নানান রোগের মহৌষধ। এখানেই শেষ নয়, যাদুটোনা, বানমারা, অবাধ্যকে বশ করা, হারানো মাল ফিরে পাওয়া ইত্যাদি জটিল কাজেও আমার চুলের পাওয়ার অব্যর্থ। এজন্যে কবিরাজরা আমাকে যথেষ্ট তাজিম করে। বিশেষ করে তাহের। সে আমার চেয়ে চারপাঁচ বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও আমাকে গুরু মানে। এজন্যে আমিও মাঝেমধ্যে দুয়েকটা ফুটÑফরমাশে তাকে ডাকি।
কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমাকে রাঙামাটি ট্রান্সফার করা হয়েছে। চাকরি করতে হলে এসব সহ্য করতে হয়। তাহেরকে একটা পিকÑআপ ভ্যান ভাড়া করতে বলেছিলাম। হয়তো ওটারই খবর নিয়ে এসেছে।

বেলু ভাই নাই হয়ে গেলেন। আমিও চাকরির সুবাদে দেশের এক কিনারা তথা রাঙামাটিতে পড়ে রইছি। পরিচিত কারো সাথেই দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। এখন কাপ্তাই হ্রদ আর পাহাড়ই কথা বলার সঙ্গী। আর মাঝেমধ্যে কল্পনায় মায়াগাশিতে ঢুকি। নূরুলদীনÑসাকিনাদের সাথে দেখা হয়। কথা হয়। দেখি—নূরুলদীনের মাথার চুল লম্বা হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেয়েদেরকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে সাকিনার গলার তাবিজের গুছাও বসে নেই। দুই বুকের মাঝখানে কায়তনের তলায় একটা একটা করে বেড়েই যাচ্ছে।

ভাঁটফুল

ভাঁটফুল



... তারপর আমি তাঁর পিছন পিছন হাঁটতে থাকি। সে দুই বার পিছনে তাকিয়ে আবার হাঁটতে থাকে, কিছু দূর গিয়ে আবার পিছনে তাকায় এবার উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে আগের চায়ের দোকানে এসে বসে। একটা সিগারেট জ্বালায়। ওস্তাদ, কামডা হইয়া যাইবো এতো টেনশন লওনের কিছু নাই। কথাটা বলার সাথে সাথে আমারে ডেকে পাশে বসায় হারু হাওলাদার। চোখে কালো সানগ্লাস পরার কারণে চোখ দেখা যাচ্ছে না, চৈত্রের এই দুপুরেও ফুলহাতা শার্টের উপরে খয়েরী রঙের কোট পড়েছে সে, কি রকম একটা অস্থিরতা তাঁর ভিতরে যে কেউ দেখলে বলে দিতে পারবে..!! হঠাৎ বলে ওঠে
-ব্যাটা, দেশ চালাই আমরা, কাজ হইবো, এইডা তুই যেমন জানস, তালগাছের বাইল্লা পাকিও জানে। পিছন পিছন কই যাইতেছিলি??
-আসলে হইছে কি ওস্তাদ, ফুলঝুরি নামের একটা মেয়ে যে কিছুদিন আগে খুন হইছিল, সেই ব্যাপারে...!!
-ধুর ব্যাটা এসব আমি অনেক আগেই ভুলে গেছি, বাদ দে, তুই একটা কাজ কর, ঘণ্টা খানেক পর, কাটাখালী নদীর পাড়ে আমার নৌকায় আয়.. 
এই বলে হারু হাওলাদার আবার হাঁটতে থাকে নদীর পাড় দিয়ে.. অনেকদূর যাওয়ার পর আমি আবার তাঁর পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম। একবার কি দুইবার পিছনে তাকিয়ে হাওলাদার নৌকায় ওঠে।

-ওস্তাদ, চলি আইছি..
-এতো তাড়াতাড়ি আইলি কেন হারামজাদা। আচ্ছা যা হোক শুন, নৌকা ভর্তি মালপত্র আছে, এগুলো নিয়া সোজা গাঙ দিয়া মনপুরা যাবি, সব গুলা বিক্রি দিয়া নগদ টাকা লইয়া আইজ সন্ধ্যার মধ্যে আমার বাড়িত আইবি, পারবি না..??
- কি কন ওস্তাদ, আমি বুঝছি অন্য কেইস, আমি মানুষটা খারাপ হইতে পারি কিন্তু এই কাম আমি করতে পারুম না, দেশের এই পরিস্থিতিতে গরিবের হক মাইরা খামু। আমি পারুম না। আপনে.....
-এই কেডা আছত, ওরে ধইরা নৌকায় উঠা.. হারামাজাদা হারামখোর তোরে.....

আমি দৌড়াচ্ছি.. পিছনে তিনজন। কোন দিকে যাচ্ছি বলতে পারতেছি না.. শুধু দৌড়াচ্ছি..  আঙুলের ফাঁকে কয়েকটা ভাঁটফুল আটকে আছে.. আমি দৌড়াচ্ছি... 

শব্দমালা : আকাশ মামুন

শব্দমালা :  আকাশ মামুন





পোড়াও তোমার প্রেমাগুনে

ভালোবেসে পতঙ্গ ঝাপ দেয় জলন্ত আগুনে¾ মরিতে
আমি প্রিয় দিয়েছি ঝাপ তোমার প্রেমাগুনে¾ পুড়িতে
পোড়াইয়ো পোড়াইয়ো আমায় করিও খাঁটি¾ স্বর্ণসম
আলিঙ্গনে এদেহের পাপ যত করিও মাটি¾ প্রিয়তম
আমিতো নিরূপায় প্রেমিক কৃষ্ণ¾ তনুমন
কামে প্রেমে খুঁজিও ওগো রাধে¾ অনুক্ষণ
পুন্ন স্নানে হয় যদি মোচন দেহ মনের পাপ¾ সমূলে
ওগো রাধে উন্মোচিত হও দিব আমি ঝাপ¾ সে জলে

রেখো না রেখো না আড়াল ওগো প্রেমময়ী¾
হৃদয়ে ভীষন জ্বর¾ জিহ্বায় মেপে নাউ দেহের উত্তাপ


অনন্ত প্রতীক্ষা

হে উদ্ভিন্নযৌবনা তীলোত্তমা
এখানে এই রুক্ষ নগর¾ রোদের হলকা
ধিরে চলা বিকেলের গুই সাপের মত লিকলিকে জিহ্বা
শীতাতপ কক্ষের জানালায় নগরের ব্যস্ত বাথান
এক জনাকীর্ণ পানশালায় সম্মুখের খালি চেয়ারের দিকে তাকিয়ে 
তোমার আরধ্য প্রতীক্ষায়¾ কেটে যায় অনন্তকাল

তবে কি আমি বিকল হয়ে পড়ে থাকা কোন চক্রযান
যে তার প্রতীক্ষিত যাত্রীর প্রতীক্ষায় প্ল্যাটফ্রর্মে পড়ে আছে¾ যত্নহীন একা


ভুল বাগানের ফুল

আলোকিত নগর, প্রক্ষেপিত আলো ঠিকরে পড়ছে
যেন মানুষের ভিড়ে শরতের রোদ লাগা চকচকে মেঘ
পলেস্তারার মতো প্রসাধনের প্রলেপ দেওয়া
হাসিহাসি কৃত্রিম মুখ¾ নিটোল ঠিকরে পড়া চোখ
দেখে মনে হবে ভোরের স্নিগ্ধতায় ফোঁটা কোন ক্যামেলিয়া

অথচ আমি জানি, দূষিত নদীর মত দুঃখের কালো জল নিয়ে
কি ভীষণ উচাটনে নিরন্তর ছোটে চলা তোমার
কোন এক সন্ধ্যায় কাঙ্ক্ষিত গন্ত্যব্যের প্লেন ধরতে না পেরে
ভুল প্লেনের সওয়ারী হয়ে ভুল গন্তব্য চলে যাবার কি নিদারুণ কষ্ট

আমিও ফোঁটে আছি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভুল বাগানে
অন্তিম বিকেলের রক্তিম আভায় কোন ফুল ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে
একদিন পৌঁছে যাব তোমার কাছে¾ পরিচিত আঙিনায়
নদী হয়ে মোহনায় মিশে যাবো একসাথে¾ সাগরের টানে



প্রেমিক কৃষক

এই সব চাষবাস নিড়ানি আমার ভালো লাগে
আজন্ম প্রেমিক কৃষক আমি-উতলা হৃদয়
হে শস্য ভুমি অকর্ষিত তোমার উর্বরা বুক
লাঙলের ফলায় চিড়ে-খুড়ে চাষেই আমার তৃপ্তি
আর অপেক্ষা কত কাল-বোশেখের বৃষ্টির
টুইটুম্বুর তোমার অমরা-চলো এই শীতেই বীজ ছিটাই
দিনে দিনে বাড়ছে দেনা কমছে ফসলের দাম
তবুও তোমার উর্বরা জমিনের মদন কৃষক আমি
তোমার নরম মহুয়া ঘ্রাণের ফল-ফসলেই-
পূর্ণ হোক প্রেমিক হৃদয়ের শূন্য গোলা



বিরহ বিলাপ

অনেক দূরে চলে গেছে
বন্ধু খবর রাখেনি
অনেক দূরে চলে যাব
বন্ধু খবর পাবে না
ভালোবেসে ফুল ফোঁটবে
মালা গাথা হবে না
হয়তো রব পাশাপাশি
পাশে পাওয়া হবে না
হয়তো মিলবো প্রতিদিনই
মনের খবর পাব না
মন বলবে কাছে যাও
কাছে যাওয়া হবে না
ভালোবাসা বেঁচে রবে
ভালোবাসা হবে না


বিরহ বিলাপ

মনের পলল জমিনেতে আসবে বলে আসলে না
ঘাস গজিয়ে দাম বেঁধেছে বন্ধু খবর নিলে না,
হাতের কাছেই মুঠোফোন- জানি আছে খন্ডহীন অবসর
তবুও কেন হৃদয় দুয়ারে এঁটেছ তালা-নাও না খবর?
ক্লান্ত বিষন্ন বিকেল তোমার একা কেটা যায় ধিরে
আমিও একা থাকি বিষন্ন পৌড়ের একাকীত্ব ঘিরে
এই ব্যস্ত শহর যানজটের মত থমকে যায় চোখে
তবু দেয়ালে টাঙানো ঘড়ি বেজে যায় টিকটিক আপন সুখে
তোমার হয়তো আয়েশি সময় পরিমিত আড্ডা যোগব্যায়াম
চকচকে শহরে ঘিরে থাকা অর্জন ছেলে-মেয়ে যশ খ্যাতি
আমার দরিদ্র জিরজিরে শহরে নির্ভার নিস্তরঙ্গ জীবন
লোকসানি এক প্রেমিক আমি লোকসান আমার অগুনতি



বিপ্লবীর আর্তনাদ

উর্বরা সময়ের স্ফিত অমরা-নিশিক্ত হবার অপেক্ষায়
নপুংশক আমি¾ বিপ্লবের ময়দানে পিতা হবার সক্ষমতা হারিয়েছি
জনতার টুটি চেপে মদ্যপ রাজা ক্ষমতার মসনদে বসে
মা হবার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কাতরায় কুমারীবধু মাতৃভূমি
উন্নয়নের মিথ্যে বুলিতে ছেয়ে গ্যাছে শহর
বিপ্লব আজ শুধু টেলিভিশনের ক্যামেরায় বন্দি
উপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ চলে পুব থেকে পশ্চিমে
শান্তির নাামে দেশে দেশে যুদ্ধ চালায় বেনিয়া মহাজন
শিশুদের কান্না¾ নারীদের আর্তনাদ ভাসে বাতাসে
যুবকেরা কাঁদতে ভুলে গ্যাছে¾ প্রতিশোধের মন্ত্র জপে বসে

প্রতারক কথকের ভিড়ে দিকভ্রান্ত জনতা
প্রতিদিন হারায় নাগরিক অধিকারের চাবি
এমন উর্বরা সময়ে পৌরুষ দৃপ্ত চে তোমায় মনে পড়ে
আর নপুংশক আমি অপারগতার আগুনে পুড়ি
আবার যদি ফিরে আসার সুযোগ পাই হে পিতামহ
কথা দিলাম জনতার মঞ্চে বিপ্লবী শ্রমিক হবো


অনন্তযাত্রা

এই মহাসড়ক পেরুলেই পৌঁছে যাব নতুন পরগনায়
পথের ধারে ছড়িয়ে আছে যাদের কঙ্কাল তারা আমার পূর্বপুরুষ
হালটানা গরুর মত মানুষের ক্ষয়িষ্ণু জীবন
চলতে চলতে পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করে
আমিও অনুসরণ করে চলছি আজন্ম
ওয়ারিশ সূরে বেছে নিয়েছি পূর্বপুরুষের চাষী জীবন
বাবা বলেছেন-দাদার মত চওড়া বুকের ছাতি আমার
বাঘের সাথে পাঞ্জা লড়ে ফসল ফলাই ক্ষেতে
এবার ফসল পরিপক্ব হলেই ঘরে ফিরব মহাসমারোহে
মহাজন সফল চাষীকে বুকে টেনে নিবে আদরে

জয়ের নেশায় ক্ষিপ্র বেগে যে ঘোড়া ছুটে যুদ্ধের ময়দানে
তাকে ফেরানোর দুঃসাহস করা পতঙ্গের ন্যায় আগুনে ঝাপ দেওয়ার সামিল
দিগ্বিজয়ী সৈনিক আমি চলছি আলীর বাহুবল নিয়ে
ফিরাতে এসো না কেউ-মহাজন আমার প্রতীক্ষায়
হে মহাজন অপার করুনাময় যদি আমি নিঃস্ব হই
অনাবৃষ্টি ঝড়ে ফসল না হয়-তবে ক্ষমা করবেন আমায়
হে মহাজন যদি মৌসুম না বুঝি-যদি ঘুমাই বেঘোরে
যদি ভুল ফসল ছিটাই জমিনে-তবে ক্ষমা করবেন আমায়
যদি হাট ভঙ্গে যায়-শুন্য থলে হাতে ফিরে আসি ঘরে তবে ক্ষমা করবেন
আমি অবাধ্য নই-বাধ্য অনুচর কেবল হাটের তামশায় ভুলে ছিলাম