সুফিয়া কামালের কবিতায় ঋতু ও প্রকৃতি- মীম মিজান

সুফিয়া কামালের কবিতায় ঋতু ও প্রকৃতি- মীম মিজান

সুফিয়া কামালের কবিতায় ঋতু ও প্রকৃতি
মীম মিজান

তিন দেশের তিন অভিজ্ঞতার সংমিশ্রনে অনন্য বাংলা সাহিত্যের প্রজ্জ্বল মহিলা কবি সুফিয়া কামাল। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তিনি যেমন করেছেন ঋদ্ধ তেমনি সমাজ সংস্কারমূলক কাজেও তার অবদান নারী হিশেবে প্রথমস্থান লাভের দাবীদার। তার জীবন বহুমুখী। তার সৃজন কর্মও বহুমুখী। তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ ও ডায়রির জাতীয় গদ্য ও শিশুতোষ গ্রন্থও রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। তার সাহিত্যকর্মগুলোর মান ও প্রভাব ছিল বিশ্বমানের। সেজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার কবিতা অনূদিত হয়েছে। যেমন- জার্মান, রাশিয়া, চীন, ইতালি, চেক, ভিয়েতনাম, হিন্দি, গুজরাট ও উর্দুতে। এই শক্তিমান কবি ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুন (সোমবার,  ১০ আষাঢ় ১৩১৮ বঙ্গাব্দ),  বেলা ৩টায়, বরিশালের শায়েস্তাবাদস্থ রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সমাজের নানা কুসংস্কারের মধ্যেও তিনি স্বশিক্ষিত হয়েছেন। অনেক চড়াই উৎড়াই পার করে দ্বিতীয় সংসারে এসে জীবনের পূর্ণতায় মিশেছেন। জনকল্যাণকর কাজ ও সাহিত্যে বিশিষ্ট অবদানের জন্য সুফিয়া কামাল অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৬১ সালে তিনি  পাকিন্তান সরকার কর্তৃক ‘তঘমা-ই-ইমতিয়াজ’ নামক জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন; কিন্তু ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি তা বর্জন করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫), ডড়সবহ’ং ঋবফবৎধঃরড়হ ভড়ৎ ডড়ৎষফ চবধপব ঈৎবংঃ (১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক (১৯৯৬), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭) ইত্যাদি। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের খবহরহ ঈবহঃবহধৎু ঔঁনরষবব গবফধষ (১৯৭০) এবং ঈুবপযড়ংষড়াধশরধ গবফধষ (১৯৮৬) সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাভ করেন।
সমগ্র জীবন সমাজ সংস্কারের কাজে ব্যয় করে ১৯৯৯ সালে ২০শে নভেম্বর শনিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে এই অনন্য নারী মৃত্যুবরণ করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২৮শে নভেম্বর তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

দীর্ঘশ্বাসের পর খুঁজতে যাই ঘুমের বড়ি-ইলিয়াস বাবর

দীর্ঘশ্বাসের পর খুঁজতে যাই ঘুমের বড়ি-ইলিয়াস বাবর

দীর্ঘশ্বাসের পর খুঁজতে যাই ঘুমের বড়ি
ইলিয়াস বাবর


তাজ্জব হয়ে যেতে পারি তবে আশ্চর্য হই না। তারও কারণ আছে অবশ্য- আমাকে শোয়ার খাটে  প্রায়-ঘুমন্ত দেখে ভাগিনারা আওয়াজ খেয়ে ফেলে। তারা ইশারায় দরোজা খোলে, বন্ধ করে। আমি আড়চোখে-তখনো ঘুমপরি আমার চোখে আসেনি তার শক্তিমত্তা নিয়ে, ফলে আমি লুকোচুরি খেলি ঘুমের সাথে, ভাগিনাদের সাথে। খাটের দারুন আরামদায়কতায় চোখ বন্ধ করতে চেষ্টা করি কিন্তু দিনান্তের যাবতীয় প্যাচাল মনের পর্দায় ভেসে ওঠে- তারই অপপ্রচার আর বেহুদা জ¦ালাফালায় আমি পিঠ বেডের সাথে লাগালেও বুক থাকে উপরের দিকে। নিজের সাথেই একটু বোঝাপড়া করতে চেষ্টা করি- থাক না ওদের কৈশোরের নানান কাজ, মাঝরাতে তাদের ভদ্রহাসি আর মার্জিত আচরণ আমাকে নিয়ে যায় কোন এক শূন্য দীঘিতে। সেখানে দীঘির চিকচিক জলে হয়তো পদ্ম হাসে না, মাছেদের লাফালাফিতে মাছরাঙা আসে না কখনো, আসে বালকের দীর্ঘশ্বাস! আমাদের কী কখনো দীঘির দিকে যেতে দিয়েছে? অজানা এক জুজুর ভয়ে আমরা সংবরন করতাম লোভের রঙিন সামিয়ানা। কখনোসখনো, দুপুরের তপ্তরোদে- মায়েদের ঘুমিয়ে রেখে ঠিকই উপভোগ করতাম রোদের  সোনালু আভা। ঝিমধরা রোদাল হাওয়া ঠিকই দেখতাম দীঘির পাড়ে, রাস্তার কোণে দাঁড়িয়ে থাকা তেতুঁল গাছটা। তেতুঁল গাছের ভয় জাগানিয়া ইতিহাস কৈশোরের পাড়ে নাড়া দিতে না পারলেও হা হা হাসতাম বেঘোরে। কেউ একজন চাচাগোছের, আমাদের দেখলে ধমক দিতো, হুংকার দিতো লক্ষিছাড়া বলে। লক্ষিছাড়া হতে পারি কিন্তু সময়য়লা হবার সুযোগে আমরা উদোম দৌড়তাম, উপভোগ করতাম জীবনের মধু।

সাক্ষাৎকার-রাহাত রব্বানী

সাক্ষাৎকার-রাহাত রব্বানী


বেদনা আমার জন্ম সহোদর : ইজাজ আহমেদ মিলন
-রাহাত রব্বানী


ইজাজ আহ্মেদ মিলন মূলত কবি। অন্তর্ভেদী দৃষ্টি এবং নিজস্ব শৈলীর সমন্বয়ে প্রেম ও দ্রোহের কথা ব্যক্ত করেন রূপকের অন্তরালে। নানা ছন্দময় ভঙ্গিমায় চারপাশের দারিদ্র্য, রাজনীতি, শোষণ আর কুসংস্কারে বেড়ে উঠা চিত্র নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেন কাব্যের পঙ্ক্তিতে। প্রেম-ভালোবাসা, দু:খ-কষ্ট, বিরহ-বেদনাও উপেক্ষিত নয় তাঁর লেখায়। ¯্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাসী ইজাজ তাঁর কবিতায় বারবার অদৃশ্যের দর্শন খুঁজে ফিরেছেন।
 ‘নষ্ট শরীর ভিজে না রৌদ্রজলে’ শীর্ষক তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০০৯ সালে লাভ করেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম (চ্যানেল আই) এবং সিটি ব্যাংক প্রবর্তিত ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার’। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রবর্তিত ‘ বজলুর রহমান স্মৃতি পদক ’ পেয়েছেন বর্ষসেরা সাংবাদিক হিসেবে। বরেণ্য সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, ‘ইজাজের কবিতার হাত বেশ শক্তিশালী এবং তিনি একদিন অনেক বড় কবি হবেন, যদি তাঁর সাধনায় ছেদ না ঘটে।’ এরপর প্রবীণ রাজনীতিক মো. রহমত আলীর পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক জীবনী নিয়ে ‘কালের আয়নায় এড. মো. রহমত আলী’ রচনা করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ গ্রন্থটি প্রসঙ্গে লিখেছেন ‘এড. রহমত আলীর অর্ধ শতাব্দী-ব্যাপ্ত রাজনৈতিক জীবনের এমন অনেক অজানা অধ্যায় ইজাজ আহ্মেদ মিলন রচিত এই গ্রন্থটিতে বর্ণিত হয়েছে, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় গবেষকদের কাজে লাগবে’। 

গল্পটি শুনতে চেয়ো না-সোহেল নওরোজ

গল্পটি শুনতে চেয়ো না-সোহেল নওরোজ


গল্পটি শুনতে চেয়ো না
সোহেল নওরোজ

একে একে তিন কাপ চা শেষ করলেন হাফিজুল হক। এই কাজটা তিনি রোজ করেন। প্রথমে পান করেন চিনি ছাড়া আদা চা। এটা গিলতে তার বেশ কষ্ট হয়। মুখের ভেতর বিশ্রী একটা অনুভূতি হয়। তবে গলা পরিষ্কারসহ পেটের উপকারের জন্য এই চায়ের নাকি বিকল্প নেই! আপ্তবাক্য মেনে নিয়ে দ্বিতীয় কাপের জন্য অপেক্ষা করেন। কিছুক্ষণ পর আসে ঘন চিনি দেওয়া লেয়ার চা। এই চা তৈরির ফর্মুলা আলাদা। পান করার চেয়ে চেয়ে দেখায় বেশি আনন্দ। লালচে লিকারের নিচে ঘন সাদা চিনির স্তর। কেউ কারো সীমানা অতিক্রম করছে না। তিনি চিনির ওপরের স্তরের লাল লেয়ারটুকুতে ধীরে ধীরে চুমুক দেন। চিনির অংশ ভুলেও মুখে দেন না। এত ঘন চিনি তার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। ডায়াবেটিস না থাকলেও তিনি বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন। দ্বিতীয় কাপ চা খাওয়ার পরপরই তৃতীয় এবং শেষ কাপ চা মুখে দেন। এই চা খাঁটি দুধের তৈরি। ওপরে হালকা সর ভাসে। চিনি হতে হয় পরিমান মতো। জহুরা লিকার আর রং চা ভালো বানালেও দুধ চা বানাতে পারে না। দুধ-চিনির পরিমাণে গ-গোল পাকিয়ে ফেলে। লিকারের ব্যাপারটাও ঠিকমতো ধরতে পারে না। তাই দুধ চা-টা বাইরে থেকে ফ্লাস্কে করে আনাতে হয়। তালাত মিয়া দুধ চা ভালো বানায়। দোকানের তালা খুলে রোজ প্রথম যে কাজটা করে তা হলো মফিজুল সাহেবের জন্য চা বানানো। যে-সে চা না, সর ভাসা স্পেশাল দুধ চা।