ফুটপাতে ভাগ্যের টিয়াপাখি
ফুটপাতে ভাগ্যের টিয়াপাখি
প্রিন্স আশরাফ
শ্যামলী শিশুমেলার টিকেট কাউন্টারের ঠিক সামনের জায়গাটা থেকে একটু সরে গুড়োদুধের বিজ্ঞাপনের বিশাল ছাতার সূর্য আড়াল করা রোদের ছায়ায় ফুটপাতে টিয়াপাখি নিয়ে বসল জ্যোতিষী সামাদ।
জ্যোতিষীর কাজের মধ্যে কাজ ছাতার ছায়ায় চুপটি করে বসে থাকা। ফুটপাতের এই জায়গাটুকু যেমন কিনে নিতে হয়েছে, তেমনি ছায়াটুকুও। ছাতার ছায়ার জন্য শিশুমেলার দারোয়ান মজিদকে মাসোহারা দিতে হয়। এই শহরে কিছুই মাগনা নয়, এমনকি ছায়াও!
সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় বসে বসে ঝিম ধরে পড়ে থাকতে হয়। পথ দিয়ে ¯্রােতের মতো এগিয়ে যায় মানুষ, ফুটপাতের ভাগ্যের টিয়াপাািখর দিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায়? তারপরেও ভাগ্যবিড়ম্বিত দ্এুকজন নি¤œ আয়ের মানুষ সেই প্রবল ভিড়ের মধ্য থেকেও টিয়াপাখিকে লক্ষ্য করে দাড়িয়ে পড়ে, নিজের ভাগ্য ও ভবিষ্যত গুনে নিতে চায়। বিনিময়ে দশ-বিশ টাকা। দিন শেষে হয়তো দুইশ আড়াইশটাকা। তাতেই চারটে প্রাণীর কোনমতে দিনগুজরান হয়। বয়সী বাজা বউ, সত্তোরোর্ধ হাড্ডিচর্মসার বৃদ্ধা মা, ও আপন সন্তানের মতোই রুটি রুজির জোগানদাতা টিয়াপাখির কোনমতে পেট চলে।
ফুটপাতে রঙচটা ছাতার নিচে দাবার ছকের মতো বড়ো বড়ো ছক আঁকা প্লাস্টিকের কাগজটা বিছিয়ে বসতে না বসতেই শিশুমেলার গেটের ভেতরে ঝিমুতে থাকা দারোয়ান মজিদ বন্ধ গেটে হাতের চকচকে লাঠি দিয়ে শব্দ করে, ‘জইতিষি ভাই, আজকারথন এইহ্যানে বইসা আর কুনু লাভ হবে না। মানুষ পাইবেন কই?’
জ্যোতিষী কলোনীর গেট থেকে বেরিয়েই এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে। রাস্তাঘাট দোকানপাট সবর্ত্রই মানুষের আনাগোণা খুবই কম, একেবারেই হাতে গোণা। কিন্তু সে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সে খুব একটা কথা খরচ করে না। জ্যোতিষীর মুখের এক একটা শব্দও দামে বিক্রি হয়!
শিশুমেলার গেটের দিকে এগিয়ে এলো জ্যোতিষী। কাধে বসা টিয়াপাখি জ্যোতিষীর চলাচলের সাথে নিজের শরীরের ব্যালান্স করে নিচ্ছে। ‘মজিদ ভাই, ঘটনা কি? আপনার পার্কও কি আজ বন্ধ নাকি? কোন ছুটিছাটা?’
‘খবর জানেন না কিছু? আপনে আবার কেমন জইতিষি?’ জ্যোতিষির সাথে মজিদের সম্পর্কটা কিছুটা বন্ধুত্বের, কিছুটা দেনদরবারের।
জ্যোতিষি দুদিকে মাথা নাড়ে, সাথে সাথেই কাধের টিয়াপাখিও দুদিকে মাথা নাড়ে। তাই দেখে হেসে ফেলে মজিদ। ‘ছুটি মানে জনম জনমের ছুটি। এই ছুটি কবে শেষ হবে আল্লামাবুদই জানে!’
জ্যোতিষী উৎসুক চোখে দারোয়ানের দিকে তাকায়, পাঞ্জাবীর পকেট থেকে স্বস্তার সিগারেট বের করে বাড়িয়ে দিল।
দারোয়ান সিগারেট নিল, ‘আমাদের চাকরিটা এখনও আছে, আল্লায় জানে তাও থাকে কিনা? কি এক করুনা ভাইরাস আইছে বিদ্যাশ থাইক্যা, হাজারে হাজারে মানুষ মাইরা ফালাইতাছে।’ মনে পড়তেই পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরে নেয়।
তখনই ব্যাপারটা খেয়াল হয় জ্যোতিষীর। এই করোনা ভাইরাসের কথা সে শুনেছে। বারবার সাবান পানি দিতে হাত ধুতে হবে, মুখে মাস্ক পরতে হবে, মানুষের থেকে দূরে সরে থাকতে হবে এগুলো সে জানে। আবার এও জানে দেশের সরকার বলেছে এই দেশে এই ভাইরাস হবে না, হলেও পাত্তা পাবে না। সেই মতেই সবকিছুই তো চলছিল, এখন নতুন করে আবার কি হলো?
নতুন করে খবরটা মজিদই জানায়। সরকার করোনা ভাইরাসকে রুখে দেওয়ার জন্য পনেরদিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে এবং বলেছে তাতেও কাজ না হলো আরো পনের দিন, এভাবে বাড়তেই থাকবে।
শনি রাহু কেতুর গতিপথ ও খবরাখবর জানা জ্যোতিষী বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। মানুষই যদি না থাকে তাহলে মানুষের জন্য অপেক্ষা করে ফায়দা কি? তবুও এসেই যখন পড়েছে, আর কলোনীর একচিলতে গা ঘেষাঘেষির ঘরে ফিরতে মন চায় না বলেই সে দারোয়ানের দিকে কাচুমাচু চোখে তাকিয়ে বলল, ‘একটু বসে দেখি। বউনিটা হয় কিনা!’
দারোয়ানও আর কিছু না বলে ফাকা পার্কের ভেতরে ঢুকে পড়া কুকুর তাড়াতে এগিয়ে গেল।
জ্যোতিষী দাবার ছকের প্লাস্টিক বিছিয়ে পার্কের দেয়ালের দিকে বসে কাপড়ের ঝোলা থেকে একের পর এক ভাগ্যগণণার জিনিসগুলো বের করে খুব বিছিয়ে রাখে। কাধের টিয়াপাখি নিচে নেমে গম্ভীরভাবে পায়চারী করতে থাকে। হস্তরেখা বিচারের হাতের তালুর রেখা আকা প্লাকার্ড, কতগুলো হলদেটে হয়ে যাওয়া কড়ি ও একটি লালরঙের প্রচ্ছদের পঞ্জিকা, একটা সরিষার তেলের বোতল, এগুলো ছকের একপাশে গুছিয়ে রাখে। ছকের মধ্যে নানারকম অক্ষর, জাফরানি রঙের আরবী হরফ, অংক সংখ্যা, হিসেব রোদের মধ্যে তাকিয়ে থাকলেও তার হিসাব মেলে না।
কোথায় শনি, কোথায় মঙ্গল, কোথায় রাহু, কোথায় কেতু অবস্থান করলে অদৃষ্টচক্রের কোথায় কি ঘটে সেগুলো আগ থেকে ছক কষে বের করে জ্যোতিষী। জ্যোতিষী হাত দেখে রাশি বিচার করে তার সমন্ধে ভালোমন্দ বলে দিতে পারে। একটি স্লেটের উপর চক দিয়ে দেগে অংক কষে লোকটির জীবনের অবধারিত পরিণাম, আসন্ন পরিণামের আভাস, ভবিষ্যতের খবর বলে দিতে পারে। মানুষের কররেখা দেখে, এমনকি স্বপ্নের বর্ণনা শুনেও ভবিষ্যতের অনেক ভালোমন্দ সম্ভবনার কথা আগাম বলে দেয়।
তবে সবচেয়ে বড় আর্কষণ টিয়াপাখির ভাগ্য গণনা। ছেলেবুড়ো সবারই টিয়াপাখির ভাগ্য গণনায় বেশি আগ্রহ দেখা যায়। টিয়াপাখির কানের কাছে মন্ত্রপুত কড়িগুলো নিয়ে জ্যোতিষী বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ে টিয়াপাখিকে কিছু একটা নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথেই টিয়াপাখি বহু ব্যবহারে মলিন হয়ে যাওয়া কাগজের খামগুলোর উপর দিয়ে একবার এপাশ ওপাশ হেটে অপেক্ষারত মানুষটির উৎকণ্ঠা তাতে বাড়ায়। অনেকগুলো খাম নেড়েচেড়ে একটা খাম তার বাকানো ঠোটে তুলে নিয়ে জ্যোতিষীর কাছে দেয়...
আজ এসবের কিছুই হবে না বুঝে ফেলেছে জ্যোতিষী। পার্ক বন্ধ, মার্কেট বন্ধ, স্কুল বন্ধ। এই ব্যস্ত রাস্তা ধরে ¯্রােতের মতো যে মানুষগুলো এতোদিন তার সামনে দিয়ে পার হতো, আজ সেই ¯্রােত একেবারে থেমে গেছে, মরা নদীর সোতার মতোই কোন জনমানুষের চিহ্ন বলতে গেলে নেই।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না জ্যোতিষীকে। মুখে মাস্ক পরা পুলিশ মেইনরাস্তার উপর থেকেই তার দিকে লাঠি উচিয়ে কুকুর তাড়ানোর মতো ভঙ্গিমায় ওখান থেকে উঠে যেতে ইশারা করে। জ্যোতিষী জানে, এই শহরের সবচেয়ে বড়ো মালিক হচ্ছে পুলিশ, মালিককে রাগিয়ে এখানে বসে থাকা যাবে না। সেও মুখে হাসি টেনে পুলিশের কাছে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিমা করতে গিয়ে বুঝতে পারে তার মুখে মাস্ক নেই, তাড়াতাড়ি হাসিটা গিলে ফেলে। একটা মাস্কের কত দাম কে জানে?
তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিষন্ন মুখে জনবিরল ফুটপাথ দিয়ে হাটতে হাটতে মাস্ক কোথায় পাওয়া যাবে ভাবতে থাকে। ওষুধের দোকানেই পাওয়া যাবে হয়তো। আগারগাওয়ের মোড়ের ফার্মেসীতে ‘মাছ আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই জানায়, ‘আছে, বিশ টাকা লাগবে।’
টিয়াপাখির ছোলা কেনার জন্য এই টাকাটা আলাদা করে রাখা ছিল। কিন্তু রাস্তায় পুলিশের লাঠিসেবা খাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই, কাজেই আগে জীবন বাচুক, টিয়াপাখির খাবার পরে দেখা যাবে। মাস্কটা মুখে দিয়ে হেটে হেটে বস্তির বাসায় চলে এলো।
বাশ দিয়ে লকডাউন দেয়া হয়েছে। সকালে বের হওয়ার সময়ও এরকমটি দেখেনি। দুই ছোকড়ার কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে বাশের নিচ দিয়ে ঢুকে পড়ল। ছোট্ট এক চিলতে ঘরে ঢুকতে দেখে বউ অবাক হলেও তেমন কিছু বলল না, সেও কানাকানিতে ঘরে বন্ধ থাকার কথা শুনেছে। ‘এরকম বন্ধ থেকে আমাদের কতদিন চলবে? হাড়ায় লাথি পড়লো বলে।’
জ্যোতিষ নিচু স্বরে বলল, ‘কোনমতে চালাও দেখি। আর মার শরীরের দিকে খেয়াল রেখো। বুড়োবুড়ির নাকি করুনার ভয় বেশি!’
‘আলাদা করে আর কি খেয়াল রাখব? তুমি যা আনবে তাই তো খাবে!’
জ্যোতিষী আর বউকে ঘাটাল না।
লকডাউনের পনেরদিনে একবারও বাড়ির থেকে বের হতে পারেনি জ্যোতিষি। চেষ্টাচরিত্র করে বের হলেও কোন লাভ হতো না। যেখানে মানুষই নেই সেখানে হাত দেখাবে কে? এদিকে বাড়িতে যতটুকু সঞ্চয় ছিল ধারদেনাবন্ধক সব করেও হাড়ার শূণ্য হয়ে গেল। মানুষের মুখে দুমুঠো তুলে দেওয়া তো দূরে থাক, অবলা পাখিটার দানাপানিও জোগাড় করা সম্ভব হলো না। বুড়িমার মতোই টিয়াপাখি নেতিয়ে যেতে লাগল। জ্যোতিষী আর বউ শুধু পানি খেয়েই কাটিয়ে দিল দুদিন। আশেপাশেরও ঘরগুলোরও অবস্থা প্রায় একই রকম। অনেকে পেটের তাগিদে ভিক্ষা করতে বের হয়েছে। জ্যোতিষীর এতোদিনের পরিচিতির কারণে সে ভিক্ষা করতে বের হতে পারছে না। অভুক্ত পেটে দাড়ে বসা টিয়াপাখির গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। এই টিয়াপাখি যে তার রুটিরোজগারের উৎস, সন্তানসম।
এরই মধ্যে বুড়িমা অসুস্থ হয়ে পড়ল। তবে তার মধ্যে করোনার কোন লক্ষণ নেই। না খেতে পেয়ে পেয়ে হাড্ডিচর্মসার শরীর আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। পেটে দানাপানি না দিলে আর বোধ হয় বাচানো যাবে না।
পনেরদিনে লকডাউন শেষ হবে বলে দম ধরে ছিল জ্যোতিষী। কিন্তু পনেরদিন পরে আবারও পনেরদিনের লকডাউন ঘোষণা করলে মুষড়ে পড়ল। ভিক্ষাবৃত্তি করতে হলেও ঘরে বসে হবে না, পথে বের হতে হবে। লকডাউন উপেক্ষা করে চোরের মতো বেরিয়ে পড়ল পথে। সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে চেয়েচিন্তে কয়েকটা টাকা জোগাড় করতে পেরেছিল। কিন্তু লকডাউন ভেঙে বের হওয়ায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সেটুকুও অর্থদন্ডি দিতে হলো।
দিনশেষে শূন্য হাতে ঘরে ফিরল জ্যোতিষী। টিয়াপাখির জন্য কটা দানাপানি জোগাড় করতে পেরেছিল। সেট্ইা পকেটে আছে। ঘরে ঢুকতেই মাংসের লোভনীয় মৌ মৌ গন্ধে অভুক্ত খিদেটা চাগাড় দিয়ে উঠল। দেখল বুড়িমাও উঠে বসে তৃপ্ত মুখে মাংসের সুপের মতো কি যেন খাচ্ছে। এই আকালের দিনেও বউ মাংস জোগাড় করতে পেরেছে দেখে খুশি হলো সে।
টিয়াপাখির দানাপানিগুলো বউয়ের হাতে তুলে দিয়ে আনন্দিত স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘কিসের মাংস রেধেছো?’
‘টিয়াপাখির!’ বউয়ের নির্বিকার জবাব!
পদাবলি : ০১
উপেক্ষা
মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ্
নেও, আকাশটা তোমায় দিলাম
এবার তো মুক্ত করো আমায়,
কেন ধুকে ধুকে মারছ বলো?
মিষ্টি প্রেমের যন্ত্রনায়।
এই রে, অসময়ে বৃষ্টি এলো
এখন তো আসতে পারো বুকে,
কেন মিছে মিছে পালাও বলো?
নিষ্ঠুর উপেক্ষার মন্ত্রণায়।
প্রতিক্ষায় সুস্থতার
রায়হান কিবরিয়া রাজু
চারদিকে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শোনা যায়
আজ শিমুল মরে, বকুল মরে
কাল রজনীগন্ধার শরীর চিঁড়ে আসবে
মৃত্যুর গন্ধথথ এমনটাই হয়ে গেছে বিশ্ব!
ঘাসের ডগায় অথবা ধুলোর বুকে মৃত্যুর আস্তরণ
পৃথিবীটা বড়ই দিশেহারা এ সময়
চাঁদ ভালো নেই, আকাশ ভালো নেই
ভালো নেই এসময়ের দুরন্ত পথ, ব্যস্ত শহর।
ভালো নেই প্রাক্তনের অকথ্য গালি
প্রেমিকার অশান্ত বুক
প্রিয়জনের সুস্থ-সুন্দর ভালবাসা
সবাই মৃত্যুতে ভর করে ছুটে জীবনের পথে
রোদের সাথে গল্প করে ভাল না থাকার
ভোরের আলোয় রাতের অন্ধকারের মতো মিলিয়ে নেয়
অসুন্দর-বিশ্রী অতীত, বর্তমান।
প্রতিক্ষায় সুস্থতার
আকাশ, পথ, ব্যস্ত শহর সবার সুস্থতার!
সবার চোখে অমোঘ বাসনা, স্বপ্ন দেখে-
পৃথিবী আবার কোলাহলে ভরবে
প্রাক্তন আবার গালি দিবে অকথ্য ভাষায়
প্রেমিকার বুকে নগ্ন উষ্ণতা খুঁজে নিবে ক্ষুদাতুর প্রেমিক
স্ত্রীর গালে-নাভিতে আবারো ঝলমল করবে সুখ
এই প্রকৃতি আবারো নোংরা হবে একদিন।
অপেরা আজও কবিতা বোঝেনা বাল
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম
অপেরা আজও কবিতা বোঝেনা বাল;
কেমন যেনো ভরহীনতার ভেতর
সুরক্ষিত আয়নাগুলো ভাঙছে অবিরত।
কেমন যেনো দুমড়ে থাকা সবুজ
ছুরির আদরে রাঙিয়ে নিচ্ছে উদ্বিগ্ন ক্ষত!
জরায়ুতেই গোপন রেখে গ্রন্থের কঙ্কাল।
অপেরা আজও কবিতা বোঝেনা বাল;
ধূলির মাধুরী কুড়িয়ে সারাটাদিন
ঢেউয়ের যাতনা মেলে ধরে বুনো ঘাসে।
ঘুড়ি কি জানে ঘড়ির আর্তনাদ ?
শ্বাসঘাত ছন্দ কখনও ফুরোয় অনুপ্রয়াসে?
যদিও চড়ুই সারাক্ষণ নিজের মধ্যে লাল।
অপেরা আজও কবিতা বোঝেনা বাল;
খড়কুটো সব ছড়িয়ে অন্ধকারে
ভবঘুরে স্থাপত্যের ভিড়ে নিভৃতে জ্বলে!
নিজের কাছে জব্দ করে মেঘ
বৃষ্টি হয়ে ঝড়ছে শুধু দারুণ কৌতূহলে।
ঠোঁটের গভীরে এঁকে পাখিদের হরতাল।
অপেরা আজও কবিতা বোঝেনা বাল;
ঈর্ষাবান্ধব বিছানাকে সে জানে,
জানেনা এখনও প্রাক্তন বীর্যের গোঙানি।
কবির নিকটে শস্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ
আমলকী রঙের যে কোনও নারীর যোনি;
যে কোনও নারীর খুন হয়ে যাওয়া গাল।
আজ সারাদিন ছুটি
রকিবুল ইসলাম
আজ সারাদিন ছুটি ওরে, আজ সারাদিন ছুটিÑ
বাতাস মেখে আজ সারাদিন করবো লুটোপুটি।
রাস্তাতে আজ ধুলোর গাদা
সেই ধুলোতে শরীর শাদা
মাখবো ধুলো সেই ধুলোতে পড়বো আজি লুটি
আজ সারাদিন ছুটি ওরে, আজ সারাদিন ছুটি।
রেললাইনের ধারে ধারে
জংলা ফুলের রঙ-বাহারে
দল বেঁধে আজ ফুলের রেণু আনবো না হয় খুটি
আজ সারাদিন ছুটি ওরে, আজ সারাদিন ছুটি।
বিলের জলে কাটবো সাঁতার
ঘর বানাবো কলার পাতার
বিল সেচে আজ আনবো তুলে টেংরা, টাকি, পুঁটি
আজ সারাদিন ছুটি ওরে, আজ সারাদিন ছুটি।
বন বাদারে পাখির মেলা
ওদের সাথেই কাটুক বেলা
পাখির গানে বন মাতাবো আমরা সবাই জুটি
আজ সারাদিন ছুটি ওরে, আজ সারাদিন ছুটি।
আজ সারাদিন ছুটি ওরে
তাই উঠেছি খুব যে ভোরে
ডলতে হবে চলতে হবে সকল বাঁধা টুটি
আজ সারাদিন ছুটি ওরে, আজ সারাদিন ছুটি।
আবার আমাদের দেখা হবে
রুদ্র সাহাদাৎ
দেহপাঠের রচনা পড়তে গেলেই রিরংসা জাগে
উদবাস্তু মন পালাতে চায়,
জীবনের সীমানা পেরিয়ে আরো দূর বহুদূর,
কোনো অজানায়, আমাদের দেহপাঠ হয়নি
আজও এই বসন্তেও।
কখন কী বলছি, কখন কী করছি, ঈশ্বর জানে।
প্রতিক্ষায় থেকো, এই করোনাকাল গেলে
আবার আমাদের দেখা হবে।
পদাবলি : ০২
বিলবোর্ড
শচীন ভট্টাচার্য্য
রাজধানীর এই পরিপক্ক ভাসমান জনস্রোতে,
কালচে পিচের বুক চিরে যাওয়া আইল্যান্ডে কিংবা ওভারব্রীজের সুনিপুণ মাতৃছায়ায় ;
রংচটা একটা মন নিয়ে দৌড়ে বেড়াই
বিলবোর্ড হবো বলে।
এই যাত্রায় বেশ কিছুক্ষন পর পর যে ঠুনকো আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে,
বিনিময়ের বাতাস তাকে রূপ দেয় সসীম নিরাশায়।
ভীষণ তেতো এ বাতাস উপেক্ষা করার সাধ্য নেই আমার
মফস্বলের নিষ্পাপ আঞ্চলিকতায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চেয়েও
বারবার ছিটকে পড়ে যাই বিনিময়ের ধাক্কায় এবং ধিক্কারে।
এই সব কিছুর মূলে প্রধান যে সমস্যাটি,
তার ¯্রষ্টাও যে আমরাই!
সুযোগ আছে দায় এড়ানোর?
তবে একদিন -
এই অপ্রতিরোধ্য বাতাসের প্রবল ভাংচুর হবে, মধ্যবিত্ততার কাছে মাথা নত করবে সহস্র বছরের প্রাচীন বিনিময় প্রথা।
ডাস্টবিনের অপরিচ্ছন্নতায় মিশে যাবে
সমস্ত জঞ্জাল, ধিক্কার, ধাক্কা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ শহরের আকাশে দেখা যাবে
কিছু মধ্যবিত্ত রঙিন বেলুন, স্বপ্নসুতোয় বাঁধা।
মিছিলে মিছিলে গমগম করবে রাজপথ-
একদল স্বপ্নচারী যুবকের ভিড়ে
চিৎকার করে কেউ বলে উঠবে,
‘আমি মধ্যবিত্ত, এসেছি এই শহরের বিলবোর্ড হবো বলে....’
কোলাহল
হাবিবাতুল উম্মে
হাতভর্তি রোদ,
চোখে সমুদের বসবাস-
এই সব জীবন;
ঘুম মিছিল চারপাশ।
একদিন তোমরাও কন্যার জনক হবে
রেহমান আনিস
যখন চোখের সামনে...
আমার বোনের ওড়না কেড়ে নেয়, চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে তুলে নিয়ে যায় অমানুষের দল।
আমার বৃদ্ধা মায়ের বুক ফাটা কান্নায় জায়নামাজ ভিজে যায়
আমার জন্মদাতা পিতা অশ্রুসিক্ত নয়নে মোনাজাত ধরে,
হে আল্লাহ! ইজ্জত রক্ষা করো!
সে ফরিয়াদও খোদার আরশে পৌঁছায় না।
অসহায় মেয়েটিকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রেখে একের পর এক নগ্ন পৌরুষ দহন নিবারণ করে চলে।
আমি অসহায়, বাবাও অসহায়; তবে কোথায় আশ্রয়?
কার কাছে আশ্রয় চাইবে রক্তাক্ত বোন আমার!
ওর শরীর আর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ সমান্তরাল আজ
আমার বোন বুঝি আমাকে ঘৃণা করে কাপুরুষ ভেবে
অসহায় মায়েরা বুঝি এদেশের তরুণদের প্রচন্ড ঘৃণা করে !
ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা করে আজ
অযোগ্য মনে হয় নিজেকে
ভাবতেই আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই,
এ যেন আমার পিতৃভূমি নয়
এ যেন স্বাধীন বাংলা নয়
এ যেন বর্বর পশুদের অশ্লীল অন্দরমহল
আমার প্রচন্ড ঘৃণা হয় নিজেকে পুরুষ পরিচয় দিতে।
এই স্বাধীন দেশে নারীরা কী কখনো মর্যাদা পাবে?
অন্ধকার দেখি দু’চোখে কোনদিন কী মানুষ হবো!
যদি ভাই হয়ে বোনের সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারি
যদি সন্তান হয়ে মায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারি
যদি স্বামী হয়ে স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারি
তবে এমন পুরুষ পরিচয় দিতেও আমার ঘৃণা হয়।
লজ্জা করে নিজেকে তরুণ পরিচয় দিতে।
যে তারুণ্য ‘৫২’ তে রক্ত দিয়েছিল
যে তারুণ্য ‘৬৯’ এ রক্ত দিয়েছিল
যে তারুণ্য ‘৭১’ এ রক্ত দিয়েছিল
যে তারুণ্য সামরিক শাসন উৎখাতের দাবিতে
রাজপথে নেমে বুলেটের আঘাতে লুটিয়ে পড়তেও মাথানত করে নি
যে তারুণ্য অপশক্তির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে বারবার রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে
সেই তারুণ্য আজ নিরব দর্শক অথবা ধর্ষক!
তারুণ্যের উত্তাপ কী আজ বিলীন হয়ে গেছে
নাকি ওদের রক্তেও পচন ধরেছে
প্রতিবাদের ভাষা কী ভুলে গেছে এদেশের তরুণেরা?
মনে রেখো, একদিন তোমরাও কন্যার জনক হবে!
গন্ধ সাবান
গন্ধ সাবান
মুহাম্মদ বরকত আলী
আমিনা খাতুন রান্না ঘর থেকে রিফা, রিফা বলে করেকবার ডাক দিলেও মেয়ের কোনো প্রতুত্তর পেলো না। চুলায় আগুন জ¦ালিয়ে পানির হাড়িটা চুলায় বসিয়ে বলল, ‘কোথায় যে গেল মেয়েটা, হাতে-পাতে একটু আধটু কাজ করে দিবে কিনা সে গুণ নেই। মা যে সেই সক্কাল ভোরে উঠেছে সে কথা তার খেয়াল আছে? নামাজ পর আমাকে যে মন্ডল বাড়ি যেতে হবে সেকথা কি জানে না? সময় মত না গেলে অন্য কাউকে নিয়ে নেবে। তখন বছরকার দিনটাই মাটি হয়ে যাবে।’
আমিনা খাতুন একা একাই বকবক করে চলেছে। মেয়ের জন্যতো আর কাজ থেমে থাকবে না। রিফা কতটুকুই বা সাহায্য করবে। টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে আসা আর এটা সেটা গুছিয়ে দেওয়া। মানে, ফুটফরমাশ খাটা আর কি।
আজ ঈদের দিন। কুরবানির ঈদ। ঈদের সকাল। সূর্য ওঠার আগেই আমিনা ঘুম থেকে জেগেছে। রিফা আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই সাদিয়াদের বাড়িতে গিয়েছে। সাদিয়ার ঈদের নতুন জামাটা দেখবে।
আমিনা খাতুন সেমাই রান্না শেষ করে লুচি বানানোর জন্য ময়দা তৈরি করছে। ঘরে অনেকদিনে পুরনো কিছু ময়দা ছিল। সেটুকু দিয়েই চালিয়ে নেবে।
মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসছে মুয়াজ্জিনের আহব্বান। কয়টার সময় ঈদের জামাত হবে সেটা বলছে। নিজ নিজ জায়নামাজসহ ঈদ গাহে আসতে হবে। সবার মুখে মাস্ক থাকা বাধ্যতা।
রিফা গমগম পায়ে বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়াল। আমিনা বলল, ‘কোথায় গিয়েছিলি, হ্যাঁ? কাজের সময় পাওয়া যায় না। আমার সাথে হাতে-পাতে একটু কাজতো করতে পারিস।’ একুটু বলে চুপ থেকে আবার বলল, ‘ কল থেকে পানি নিয়ে আয় দিনি।’
রিফা মুখ ভার করে বলল, ‘পারবো না।’
আমিনা মেয়ের মলিন মুখটা দেখে বুঝতে পরলো কিছু একটা হয়েছে।
‘কি হয়েছে? ঈদের দিন, বছরকার দিনে এমন মুখ ভার করে থাকলে হয়?’
রিফা নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার গন্ধ সাবান চাই।’
মেয়ের এমন আবদারের কাছে নিজেকে সত্যিই অসহায় লাগে আমিনার। তাইতো, মেয়েকে নতুন জামা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলেও অন্তত একটা গন্ধ সাবান কিনে দেওয়ার মত সক্ষমতা নিশ্চয়ই আছে। বছরকার দিন বলে কথা।
আমেনা বলল, ‘আমাকে আগে বলিসনি কেনে? সব কিছু কি আর মনে থাকে?’
রিফা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, ‘আমি ওসব কিছু জানি না, সাদিয়ার গন্ধ সাবান আছে। নতুন জামা আছে। মেহেদী আছে। আমিতো ওসব কিছুই চাইনি। একটা গন্ধ সাবানতো দিবে?’ কথা শেষে করেই ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করল।
আমেনা খাতুন রান্না শেষ করে মেয়েকে গোসল সেরে নিতে বলল। রিফার একই কথা সে গন্ধ সাবান ছাড়া গোসল করবে না।
রিফার বাবা হাসেম আলী বাড়িতে এসে দেখে মেয়ে কাঁদছে। মেয়ের কান্না দেখে আমেনাকে জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে।
রিফার বাবা দিন মজুর। সকালে বাসি পান্ত খেয়ে কোঁদাল, নিরাড়ী আর একটা ঝুড়ি নিয়ে কাজের জন্য বের হয় শহরের পথে। তার মত আরও কয়েকজন দিন মজুরের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। কারো ডাক পেলে ছুঁটে যায় তার পিছনে। কাজ করে দেয়। মজুরি পায়। এভাবে চলে সংসার। করোনার জন্য আজকাল তেমন কাজ হয় না। শহরের লোকেরা করোনার ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হয় কম। বাইরের লোক বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। এজন্য এখন প্রতিদিন কাজ হয় না। দু একদিন যা কাজ হয় তাতে থেকে কোনো মতে সংসার চলে। সরকারি অনুদান হিসেবে কিছু চাউল আর টাকা পেয়েছিল। তবেই রক্ষা। তানাহলে কিযে হত একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
আসেম আলী সকালে গিয়েছিল হোসেন মহাজনের বাড়ি। মহজনের কুরবানির গরুটার গা ধুয়ে দিয়েছে। কুরবানির দেওয়ার জায়গাটা পরিষ্কার করেছে। গোস্ত চুরানোর জন্য ছুঁরি-রামদা ধার দিয়ে প্রস্তুত করে তবেই এসেছে। ঈদের নামাজ শেষে করে একটু পানি মুখে দিয়েই মহাজনের বাড়িতে হাঁজির হতে হবে।
মহাজনের গরু কুরবানির দায়িত্ব হাসেমের উপর। প্রতি বছর তার জন্য এই কাজটা ধরা থাকে। লাভের লাভ বলতে গোস্ত চুরানোর জন্য দিন মজুরি হিবেসে কিছু টাকা আর বাড়ি ফেরার পথে কিছু গোস্ত পাওয়া যাবে। অন্তত তাকে গোস্তের চিন্তা করতে হবে না। ওদিকে আমিনাও মন্ডল বাড়িতে গরুর ভুড়ি সাফ করে দিয়ে কিছু গোস্ত আর ভুড়ির কিছু অংশ পাবে।
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সাবান কিনে দেওয়ার কথা বলে বাইরে বের হল হাসেম আলী। নামাজের আর অল্প কিছু সময় আছে। এর মধ্যে আমিনা বাইরে যেতে বারণ করলেও শুনলো না। মহাজনের কাছে থেকে অগ্রিম কিছু টাকা নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে একটা দোকানেও গন্ধ সাবান পেল না। গ্রামের মানুষ গন্ধ সাবান মাখেইবা ক’জন?
হাসেম মেয়েকে কথা দিয়েছে গন্ধ সাবান সে নিয়েই ফিরবে। মোকামের দোকানে থাকবে নিশ্চয়। কিন্তু ঈদে নামাজের সময় হয়ে আসছে। দোকান খোলা পাওয়া যায় কিন সেটই এখন সমস্যা। ঘাটে গিয়ে দেখে নৌকা আছে, মাঝি নেই। নৌকাটা ভাসিয়ে ছুটল নদীর ওপারে।
মোকামের সব দোকান বন্ধ। ঈদের নামাজ বাদ দিয়ে কে দোকান খোলা রাখবে?
হাসেমের কপালে চিন্তার ভাঁজ। উপায় না দেখে হতাশ হয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াতেই একটা ছোট্ট কাঠের দোকানের ভিতর থেকে ভেসে এল, ‘ক্যাডা?’ হাসেম যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেল। দোকানের ছোট্ট ডালাটা খুলে ভিতর থেকে একজন বৃদ্ধ লোকের মুখ বেরিয়ে এল। হাসি মুখে বলল, ‘কি চায়?’
হাসেম বলল, ‘গন্ধ সাবান। মেয়ের জন্য। একটা গন্ধ সাবান চাই।’
বৃদ্ধ লোকটার স্বজন বলতে কেউ নেই। সবাই নাকি ভারতে আছে। সুবল কাকা নামেই সবাই চেনে তাকে। দোকানে সারাদিন ব্যবসা করে রাতে দোকানেই ঘুমিয়ে থাকা। দোকান যেন তার বাড়ি।
সাবানটা হাতে নিয়ে হাসেম আলী টাকা এগিয়ে দিল। সুবল কাকা বলল, ‘এই ঈদে নাতির জন্যি গন্ধ সাবানটা ঈদ উপহার দিলাম। নিয়ে যাও।’ কথা শেষ করে দোকানের ডালাটা বন্ধ করে দিল।
মসজিদ থেকে ভেসে আসছে, ‘‘আর মাত্র কয়েক মিনিট সময় আছে। নিজ নিজ জায়নামাজসহ তাড়াতাড়ি ঈদ গা ময়দানে চলে আসুন।’’
রিফার হাতে সাবান দিয়ে বলল, ‘এই নে মা, তোর গন্ধ সাবান।’
রিফার মুখে চৌড়া হাসির ঝিলিক। মেয়ের মুখের হাসি দেখে আমিনা চোখে জল চলে এল। এ জল আনন্দের।