সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সব্যসাচী লেখক। গদ্য ও কবিতায় অসাধারণ সৃষ্টি তাকে স্মরণীয়
করেছে। পূর্ব-পশ্চিম উপন্যাসে ইতিহাসের ধারাবাহিক ঘটনাবর্ত উপস্থাপিত হয়েছে। বাঙালির
সংগ্রাম, শৌর্যবীর্য, আত্মত্যাগ, দিনযাপন, প্রেম, বিরহ সমাজ রূপান্তরের কাহিনী বিস্তৃতভাবে
বিবৃত হয়েছে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
তাঁর রচিব উপন্যাস আত্মপ্রকাশ। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: একা এবং কয়েকজন (পৌষ ১৩৫৭),
আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি (মধ্য চৈত্র ১৩৭২), বন্দী জেগে আছো (ফাল্গুন ১), আমার স্বপ্ন
(বৈশাখ ১৩৭৯), সত্যবদ্ধ অভিমান (বৈশাখ ১৩৮০), জাগরণ (হেমবর্ণ ২৫ বৈশাখ ১৩৮১), দাঁড়াও
সুন্দর (১৩৮২, মন ভালো নেই (আষাঢ় ১৩৮৩), এসেছি দৈব পিকনিকে (১৩৮৪) দেখা হলো ভালোবাসা
বেদনায় (জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৬), স্বর্গ নগরীর চাবি (১৩৮৭) সোনার মুকুট থেকে (চৈত্র ১৩৮৮)। কিশোর
উপন্যাস: ভয়ংকর সুন্দর। নীল লোহিত, সনাতন পাঠক এবং নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে অসংখ্য রচনা
তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পঞ্চাশ দশকে কবিতার স্বতন্ত্রধর্মী বক্তব্য
ও ‘কৃত্তিবাস পত্রিকা’ সম্পাদনার মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে বিশেষভাবে আবিভূত হন। তার রচিত
কবিতায় কাহিনী বিস্তার, সৌরভ মাদকতা ও আকর্ষণ দীপ্র। অন্তস্পর্শী ভাষা, বক্তব্যের দীপ্য
উপস্থিতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাকে সৌন্দর্যমি ত করেছে। সুনীল ছন্দ্র ও ছন্দহীন
কবিতার রচয়িতা হিসেবে সমান জনপ্রিয়। ভ্রমণ বিলাসী কবি স্বদেশ থেকে বিশ্বব্রহ্মা- পর্যন্ত
সঙ্গী থেকেছেন স্বপ্ন, দুরন্ত প্রেমময় স্বাধীন সত্তার সাথে। ‘একা ও কয়েকজন’ প্রথম কাব্যগ্রন্থে
তার একাকীত্ব যন্ত্রণা, অভিমান, অতলস্পর্শী আকাক্সক্ষার কাছে সমর্পিত হয়েছিল। স্বপ্নতাড়িত
সুনীল প্রকৃতি, নারী ও বেদনাবিধুর সত্তায় গ্রথিত হয়ে যে কবিতা রচনা করেছেন তা পাঠকের
চেতনাকে সম্মোহিত করে। ক্লেদাক্ত জীবনকে অগ্রাহ্য করে তিনি ক্রমাগত স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের
কাছে ফিরে গেছেন। জীবনকে আবিষ্কার করা তার প্রধান কাজ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসংখ্য
কবিতার মধ্য থেকে কিছু কবিতা নিয়ে এই রচনার সূত্রপাত। হৃদয়স্পর্শী কবিতা সুনীলকে নতুনভাবে
বার বার উদ্ভাসিত করে। এই সব কবিতা কালের প্রবাহে দিন দিন উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।