জাফলংয়ের পথের বাঁকে
সংগ্রামপুঞ্জি
জাফলংয়ের পথের বাঁকে
আহাদ আদনান
অনিক দাশের ব্যাটারি চালিত গাড়িটা বেশ ঝকঝকে। পথে নেমেছে দুই মাসও হয়নি। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত গাড়িটা চালায় অনিক। ওর অবশ্য স্কুল আছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে ছেলেটা। তবে স্কুলে যেতে হলে নৌকা করে পিয়াইন নদী পার হয়ে যেতে হয় গুচ্ছগ্রাম। সেটাও জাফলঙেই, কিন্ত সম্পূর্ণ অন্য একটা পরিবেশে। শরৎচন্দ্রের ‘বিলাসী’ গল্পের মত এত কষ্ট করে বিদ্যার দেবীর আরাধনা করতে কোনই চাপ নেই অনিকের পরিবারের। সংগ্রামপুঞ্জিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মোটে দুইটি। প্রাথমিকেই তাই এই গ্রামের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ের পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়।
এই এলাকার ইতিহাসটি বেশ চমকপ্রদ। গোয়াইনঘাট একসময় ছিল জৈন্তাপুর রাজ্যের অধীনে। স্বাধীন সার্বভৌম এই রাজ্যের রানীর বিভিন্ন নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছি তামাবিল মহাসড়কের এখানে সেখানে। পলাশীর যুদ্ধের প্রায় আশি বছর পর, ১৮৩৫ সালে জৈন্তাপুর ব্রিটিশদের কব্জায় আসে। তখনথেকে মুসলমানরা এখানে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। দক্ষিন এশিয়ার একমাত্র চুনাপাথরের খনি, সমতল ভূমির চা-বাগান, খাসিয়া পল্লীর নিজস্ব জগত এই পর্যটনকেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ।
জাফলঙ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি স্পট। সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট। এখানে আছে পাঁচটি ‘পরগনা’। ধরগ্রাম, আড়াইখা, পিয়াইনগুল, পাঁচভাগ আর জাফলং। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ থাকে জাফলং জিরো পয়েন্ট, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা (মায়াবী ঝর্ণা) এবং কাছাকাছি আরও কিছু ঝর্নার দিকে। এই সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্নার ঠিক দক্ষিণদিকেই একই নামের গ্রাম। অনিক দাশের অটোগাড়িতে চেপে আমরা চলে যাই গ্রামের ভিতরে।
খুব ছোট, ছিমছাম আর পরিচ্ছন্ন একটা গ্রাম। ছোট ছোট টিনের চালওয়ালা একতলা-দোতলা বাড়ি। তিনতলা পর্যন্ত মাথা উঁচু করার সাহস পায়নি কোন ছাদ। এটাই এখানকার ঐতিহ্য। বাড়িগুলোর নকশাতে বাঙালিয়ানার চেয়ে ভারতের মেঘালয়ের ছাপ বেশি। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে সুপারি আর পানের চাষ হয়। সবচেয়ে বড় সুপারিবাগান এখানকার জমিদারের।
জমিদার কিন্তু মহিলা। আসলে এখানকার অধিবাসী মূলত খাসিয়া। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এই আদিবাসি ছাড়াও কিছু হিন্দু আর বৌদ্ধ অধিবাসী আছে গ্রামে। মোট সংখ্যা চার অঙ্ক এখনও স্পর্শ করেনি। খাসিয়ারা মাতৃ-কেন্দ্রিক পরিবার চর্চা করে। অর্থাৎ উপার্জন, তদারকি, সম্পদ বণ্টন, শাসনের ব্যাপারগুলো মেয়েরা দেখে। আর পুরুষেরা গৃহস্থালি কাজকর্ম, রান্নাবান্না, সন্তানপালনের কাজ করে। তবে ব্যাপারটা বাস্তবে খুবই অদল-বদলপ্রবণ মনে হল।
অনিকের ভাষায় এই গ্রামের মুল আকর্ষণ জমিদারবাড়ি। দুইতলা সাদার মাঝে নীলের কাজ করা বাড়িটা গ্রামের কেন্দ্রে। মোটামুটি হকি খেলার মাঠের অর্ধেক আয়তনের বাড়ির দোতলার বারান্দায় একজন মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনিক জানালো তিনিই জমিদার। বাড়ির ভিতরে যাওয়া নিষেধ। বিনাঅনুমতিতে ছবি তোলার প্রশ্নই আসেনা। জমিদারকে দেখে মোটেও মনে হলনা তিনি ছবি তোলার অনুমতি দিবেন। আমার সাথে ছিল সহকর্মী ডাঃ মাসুদ, ডাঃ রাশেদ আর তাদের একজন করে বাচ্চাসহ সহধর্মিণী। রাশেদ বলল, ভাই ছবি তোলা বাদ দেন।
গ্রামের শেষ মাথায় চা বাগান। কয়েক বর্গমাইল এলাকা জুড়ে সমভূমির এই চা বাগানটাও জমিদারের অধীনে। তবে এখানকার চা-পাতার মান পাহাড়ি পাতার মত এত ভালো নয়। সবুজ কার্পেটের মত বাগানটা দেখলে মনে হয় গা এলিয়ে দিই। কিন্তু মাসুদ বলল, আমরা কোনভাবেই গাছের কোন ক্ষতি করবনা। বাগানের পাশেই কিছু দোকানি (পুরুষ) চা-পাতা, সুপারি, পাথরের গয়না নিয়ে বসে আছে। আমাদের মত পর্যটকরাই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য। তবে অনিক আগেই বলে দিয়েছে, এখান থেকে কিনলে খুব ঠকবেন।
অধিকাংশ অধিবাসী বাসায় গরু, ছাগল, মুরগি পালন করে। এরা জমিদারকে নিয়মিত খাজনা দেয়। ভারত থেকে ব্যাবসায়িরা বিভিন্ন পন্য গাড়িতে করে নিয়মিত বিক্রি করে যায় এখানে। দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথাতো আগেই বলেছি। এখানে বাংলা ছাড়াও নিজেদের মাতৃভাষায় পড়ালেখা শিক্ষা দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকালে সবাই মিলে গায় ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। এছাড়া আছে গির্জা, খ্রিষ্টান কবরস্থান, একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। গ্রামের বাইরের দিকের পুরাতন সংগ্রামপুঞ্জি ভবনটি ছেড়ে নতুন গ্রামের ভবনটি ভিতরে চলে এসেছে।
জাফলঙের বিষদ বর্ণনা, যাওয়ার উপায় অন্তর্জালে ছড়িয়ে ছিয়িয়ে আছে। তবে আমার লেখার উদ্দেশ্য অপরিচিত এই গ্রামটির কিছুটা পরিচয় তুলে ধরা। জাফলঙে আসলে একটিবার সংগ্রামপুঞ্জি ঘুরে যাওয়া উচিত। ডাঃ পলি রাশেদ আর তানজিয়া মাসুদ আপনাদের জন্য নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু টিপস দিয়েছেন। আশা করি কাজে কাগবে।
১। শীতকালে জাফলং, বাছাকান্দি না আসাই ভালো। এগুলোর আসল মজা বর্ষায়।
২। ভাড়া করা গাড়ির চালকের সাথে নির্লজ্জের মত দামাদামি করে নিবেন।
৩। নদী পার হয়ে জিরো পয়েন্টে যাওয়ার জন্য ট্রলারগুলো সিন্ডিকেট করে গলাকাটা দাম হাঁকাবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে নৌকায় করে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন স্পটে যাওয়ার চিন্তা করতে পারেন।
৪। পুরো পরিবারসহ রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চাইলে সাথে বাচ্চা না আনাই ভালো।
৫। ঝর্ণার জন্য পাথর বেয়ে উপরে ওঠা খুবই বিপদজনক। বিশেষ করে প্রতিদিনই অনেকের মুঠোফোনের সলিল সমাধি ঘটে থাকে। পিচ্ছিল পাথরে পিছলে পড়ে অনেকের মৃত্যুও হতে পারে।
৬। ঝর্ণার পানিতে ভিজতে চাইলে শুকনো কাপড় সহ প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন।
ঝর্ণা দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক আসে জাফলঙে। সংগ্রামপুঞ্জি গ্রামটাও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন আপনার দর্শনীয় স্থানে।
অদৃশ্য ইকুয়েশন
অদৃশ্য ইকুয়েশন
আজাদ মণ্ডল
শেষ পর্যন্ত, তার সাথে আমাকে কথা বলতে হল। অথচ তার সাথে কথা বলা আমার কোন ইচ্ছে ছিলো না।
আমরা বসে ছিলাম ফুটপাতের পাশে যাত্রীছাউনীর বেঞ্চের দুই পাশে। প্রথম দৃষ্টিতে তার থেকে নিজেকে আমি আলাদা করে নিয়েছিলাম। তখন চোখে ছিলো সানগ্লাস আর বৃষ্টিফোঁটা থেকে বাঁচার তাড়াহুরো। কিন্তু, দ্বিতীয়বারে দৃষ্টিতেও আমার মতের কোন পরিবর্তন হল না। এবার বরং সানগ্লাস বিহীন চোখে আমি তার আরো অধিক কিছু দেখেতে পেলাম, তাতে আমার মনোজাগতিক অহংবোধের ধারাল দাঁত খেঁকিয়ে উঠল। আমি দূর থেকেই তার ময়লা শরীরের দুর্গন্ধ টের পেলাম। মার্জিত এবং সুগন্ধী মাখানো পোষাকের কলারে নাক গুজে আমি বৃষ্টিরাণীর কাছে জোড় হাত করে প্রার্থনা করলাম, ‘ এবার ক্ষেমা দে মা, পেট গুলিয়ে যাচ্ছে!’ বৃষ্টিরাণীর ক্ষমা পাওয়া গেল না, তবে রাগ পেলাম! বৃষ্টি আড়াআড়িভাবে পড়ে আমার পাশটা প্রায় ভাসিয়ে দিয়ে চলল।
একান্ত বাধ্য হয়ে বড় করে দম নিয়ে আমাকে তার দিকে সরে আসতে হল। কারণ, তার পাশটায় মাঝারি সাইজের বটগাছের প্রাকৃতিক শেড থাকায় বৃষ্টিজনিত অধিক নিরাপদ ছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে তার খুব কাছে যখন সরে আসতে হল, তখন তাকে নিয়ে আমার প্রাক মনোজাতিক হিসেব-নিকেষের ইকুয়েশন উলট-পালট হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম মস্তবড় ভুল করেছি। অফিস থেকে বের হওয়ার সময়ও কলিগ আমাকে মানুষের মনুষত্ব গুন নিয়ে কথা বলছিল। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমি তা ভুলে গিয়ে অসত্য এবং মিথ্যা ধারণায় পোষণ করেছিলাম। কারণ, পেট গুলিয়ে উঠার হেতু সে ছিলো না। ছিলো যাত্রী ছাউনীর পাশে থাকা ডাস্টবিন। তার প্রতি আমার আত্ম-অহমকিার তাছিল্ল্য অপবাদ সময় গড়িয়ে খগড় রূপ ধারণ করল। আমার আত্ম-অংকারে আত্ম-গ্লানির টোকা পড়ল।
এবার, তারদিকে আমি অনুশোচনার নতুন এক চোখে তাকালাম। আমার মনোজগত ভুল শুধরে নেওয়ার তাগাদা অনুভব করল। বটগাছের ঝুলে থাকা শেকড় সদৃশ চুল, পরনের ড্রেসটা নোংরা, হাতে লাগানো মেহেদি আর পায়ের দিকে চোখ বুলাতে বুঝতে পারলাম শরীরের অযতœ খুব বেশি দিনের নয়। গোলপানা ফর্সা সরল মুখের মুগ্ধতায় তাকে আমার পাগল ভাবতে দ্বিধা হল। তবে, আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হলাম। কারণ, তার দৃষ্টি ছিলো বাইরে। পীচঢালা রাস্তায় বৃষ্টি ফোঁটায় যে শিউলী ফুলের অবয়ব দেখা যায়, সেই মায়াবী দৃশ্যে সে ছিল একান্ত ধ্যানী। সোজাসুজি, আড়াআড়ি তালবেতাল বৃষ্টি পতনের কমবেশি শব্দ তাকে হয়তো মোহিত করেছিল। তার মুখের বিভিন্ন এক্সপ্রেশনে আমি সংক্রমিত হলাম। আমার হৃদয়গত অনুশোনার সাথে যোগ হলো কৌতূহল। অনুশোচনা আর কৌতূহলের সংমিশ্রণ আমাকে টেনে নিয়ে চলল বাইরের ঝুমঝুম বৃষ্টির তালে। আমি কল্পনা করলাম তাকে জনশুন্য যানবাহনহীন বৃষ্টিরত এক মায়াবী রাস্তায়। রাস্তার মাঝখানে সে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে মৌ মৌ করছে শিউলী ফুলের গন্ধ। শরীরের ক্লান্তি ধুয়ে স্পষ্ট হচ্ছে হাতের মেহেদী রঙ। সেই রঙে রঙিন হয়ে উঠছে পরন্ত বিকেলের চারপাশ। বটপাতা চিকচিক করছে আলোকিত হয়ে। জটা চুল গড়ানো পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে সমস্ত রাস্তার ময়লাদাগ। সে কখনো মুখে কখনো বুকে হাত লেপটে ঘুরে ঘুরে চোখ বুজে আলিঙ্গন করছে প্রকৃতির শুদ্ধতা।
তারপর আমার মোহ ভঙ্গ হল। রাজপথের জমে থাকা পানির কৃত্রিম ঝরনা উড়িয়ে চলে গেল দূরপাল্লার বাস। আমার মন আকুল হল। মোহ ভঙ্গের আকুল। তাই বলে প্রকৃতি তো শুন্য স্থান অপূর্ণ রাখে না। আবিষ্কার করলাম তার মিয়¤্রান দুটি চোখ আমার দিকে। আমি কেঁপে উঠলাম। মিয়¤্রান হলেও তার চোখে ছিল সমুদ্রের গভীরতা। অনেকটা সময় ধরে আমি আপন মনে নিমগ্ন ছিলাম তাকে নিয়ে। তবে, তার এক ধিয়ানি সাপের ফণার মতো চাহনীতে আমি বিচলিত হলাম। মনে হল তার চোখ কথা বলছে। প্রকৃতিস্ত হতে আমার কিছুটা সময় লাগল। তারপর মুচকি হাসি হাসলাম। বুঝাতে চাইলাম বৃষ্টি থামলেই চলে যাবো। তারপর আমি বিস্মৃত হলাম, সে কথা বলল-
তোর কী ক্ষতি করছিলাম বল ?
আমি ঘোরের মধ্য পড়ে গেলাম। নিজের মনোগত কাল্পনিক জগৎ থেকে আমাকে দ্রুত বাস্তবিক জগতে ফিরে আসতে হল। অধিক দুরত্ব না হওয়ায় অফিস শেষ করে সাধারণত হেঁটেই বাসাই যাই। আজও যেতে ছিলাম, মাঝপথে বৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই যাত্রী ছাউনীতে আশ্রয় নেওয়া। এমন পরিস্থিতিতে যে কেউ আশ্রয় নিতে পারে সে হোক ছাগল অথবা পাগল। আবার বৃষ্টিজনিত অলস সময়ে পরিচিত কারো সাথে কথাও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এই মেয়েকে তো আমি চিনি না। সে এভাবে লাভ ক্ষতি হিসেবের গরমিলের উত্তর আমার কাছে চাচ্ছে কেন? আমার দ্বিধা কেটে গেল। বুঝতে পারলাম মেয়েটা সত্যিই পাগল না হলেও কাছাকাছি। তারপরও মানবিকবোধে আমি আবার মুচকি হাসি দিলাম। এবার বুঝাতে চাইলাম আমি তার পরিচিতজন নই। তার কোন ক্ষতির হেতু আমি না।
হাসছিস কেন? উত্তর দে, আমারে কেন আনছিলি এই দোযখের শহরে?
দোযখের শহর? বিস্ময় হওয়ার একটা সীমা থাকে। মনে হয় আমি তা অতিক্রম করলাম। আচ্ছা, আমি কী স্বপ্ন দেখছি? বাইরে তুমুল বৃষ্টি আর যাত্রীছাউনীর নিচে কেবলমাত্র আমরা দুজন। জনপূর্ণ আর যন্ত্রিক এ শহরে মানুষ গাড়ির এমন আকাল পড়বে কেন? আবার এমন অগোছাল পাগলের মতো একটি মেয়ে যাকে কোনদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সে কিনা স্পষ্ট কথা বলছে জবাবদেহিতার স্বরে! আশ্চর্য বিষয় বটে। আমি কেন এই পাগলকে এই শহরে আনতে যাব? নিজের শরীরে চিমটি কাটলাম। ব্যাথা, তারমানে জেগে আছি। অনুশোচনা আর অধিক কৌতুহলের দোলাচালে ফাঁক গলে আমি এ কোন প্রশ্নজালে আটকা পড়লাম? যে তাকে এই শহরে এনেছে তার হয়ে কিভাবে আমি এমন ক্ষোভ মিশ্রিত প্রশ্নের উত্তর দিব? বাইরের কালো আকাশের ঘনঘটা আমার মনের আকাশে ছড়িয়ে পড়ল। তার জবাব চাওয়ার উত্তর সহজ নয়। প্রতারিত মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়েও থাকা যায় না। তবুও তার অভিযোগের ব্যক্তি যে আমি নই। সেটা তো বলতেই হবে,
আমি হেসেছি কারণ তুমি ভুল দরজায় কড়া নেড়েছ, আমি তোমার সে নই।
এবার সে নিশ্চুপ। আগের মতোই বাইরের বৃষ্টিতে ধ্যানী। সে আমার উত্তর হয়তো শুনেনি কিংবা শোনতে চায়ও নি। আমিও আবারও তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কথা বললাম-
আচ্ছা, যে তোমাকে এই শহরে এনেছে সে কী তোমার প্রেমিক?
কোন উত্তর নাই। তবে, প্রশ্নটি মন হল তাকে আন্দোলিত করল। এবার, সে যে চোখে আমার দিকে তাকাল তা ¤্রয়িমান নয়। তাতে ছিল আগুন। তারপর সে যা করল তাতে আমার মনে হলো সত্যি আমি জেগে নয় স্বপ্ন দেখছি। হঠাৎ-ই সে গায়ের কামিজ উপরে তুলে বুক দেখিয়ে বলল, ‘দেখ, শুয়োরের বাচ্চা ,ওরা আমাকে কিভাবে কামড়িয়ে ছিঁড়ে খেয়েছে, তুই কার হাতে তুলে দিয়েছিলি আমারে? তুই আমারে বাড়ি দিয়া আয়।’ এই বলেই সে দৌড়ে গিয়ে ডাষ্টবীনের ময়লা আবর্জনা ঘাটতে লাগল।
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়, আকাশের বিদুৎ চমক আমার সারা শরীরে তরঙ্গায়িত হল। আমার সারা শরীর ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। মনে হল তপ্ত উনুনে আমি বসে আছি। তার দিকে তাকাতে আমার ভয় হল। কী নিদারুণ ট্র্যাজেডি! আসলে মেয়েটি কে? কোথায় তার বাড়ি? কোন পাষাণ তাকে এই বয়সে এই মর্মস্পর্শী বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে? উত্তর মিলাতে পারলাম না। মেয়েটি এলোমেলো পা ফেলে বৃষ্টির মধ্য অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমিও রাস্তায় নেমে পড়লাম। আমার কলিগের কথা মনে পড়ল, ‘রাস্তা-ঘাটে অসংখ্য মানুষ হরেক বেশে চলাচল করে। প্রত্যেক মানুষই জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। ঠিকমতো ঘাঁটাঘাটি করলে প্রত্যেকজনের কাছ থেকে রহস্যের গুপ্তখনি পাওয়া যেতে পারে। যে রহস্যের বেশিরভাগ ইকুয়েশনের শেষ উত্তর শত চিন্তা-ভাবনা করেও মেলানো যাবেনা।’ পাগল সদৃশ মেয়েটির জীবনাবৃত্তের রহস্যের ইকুয়েশন মাথায় নিয়ে আমি অগনিত মানুষের মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু আমার শেষ রক্ষা হল না। মনে হল আরো অসংখ্য অদৃশ্য ইকুয়েশন আমার মাথায় ক্রমাগত যোগ হয়ে চলছে...
পদাবলি : ০১
একটি ভিনদেশী ভাবনা ও তুমি
ফজলুর রহমান
তোমার চুলে বিলি কাটি বলে আমি বন্য এমন যারা ভাবে তারা ভুল ভাবে।
আমি আলো নেভা অন্ধকারে তোমার মন হাতড়ে ঝিনুক খুঁজি,
প্রেমের হারানো মুক্তো সে ঝিনুকে পাবো ভেবে কতবার ডুবি আর ভাসি।
তখন তো কেউ আমাকে মন ডুবুরি বলে না,
প্রেমে নিন্দার জলে ডোবে সবাই,
আমি কেবল ভাসি;
কই আমাকে তো কেউ ভালোবাসার ভেলা বলে না।
তোমার চোখ ছোব এমন আকুলি-বিকুলি দেখে যারা আমাকে বেহায়া ভাবে তারা ভুল ভাবে।
তুমি তাদের বলে দাও মদ, সিগারেটের নেশা আমার নেই,
আমি তাদের মতো মাতালও নই,
দিনে- দুপুরে পড়ায়, মহল্লায় চিৎকারে আমি ঢি ঢি ফেলে দিই না।
ভিন্ন নারীর শরীরের মানচিত্রের খোঁজে রাত-দুপুরে অচেনা দরজায় কড়া নাড়ি না।
তোমার চোখে যে জাদু-টোনা তার আছর ছাড়াতে;
আমার এক পুরুষের কাল কেটে যায়,
যত বড় গুনিনই ধরি না কেন আমার ঘোর কাটাতে পারে না।
যারা বলে তোমার রূপে আমি বেহুঁশ, মৃতের মতো পড়ে থাকি তারা ভুল ভাবে।
তোমার, কেবলই তোমার রূপে বুঁদ হয়ে;
তোমার নির্মাণ কারিগরকে খুঁজে ফিরি,
কী ভীষণ আকুলতায়!
কী প্রগাঢ় ব্যাকুলতায়!
কী নিবিড় আরাধনায়!
আমি ঘুমে ঘুমে জেগে রয়,
তোমাকে আবিষ্কারের নেশায়।
তোমার খড় বিছানো মনের পথ ধরে;
ওলি-গলি হাতড়ে তোমাকে ভুলতে গিয়ে,
তোমাকে নিঃশ্বাসের মতোন কেমন যেনো জাপটে ধরি।
নামাগলির নদীরা
রনি বর্মন
নগর ব্যস্ততার এ জীবনে সন্ধ্যা নেমে এলে-
নাসাগলির নদীরা আরও রূপসী হয়ে ওঠে। রূপবতী সে নদীর পা ক্রমে লম্বা হতে থাকেÑ লম্বা হতে-হতে ভ্রমন পরিক্রমায় বহু দূর বিস্তারের পর, ফিরে আসে পত্রে ।
ঘুরে ঘুরে পাঁকা হাতের সহচর্যে বেড়ে ওঠে
স্বপ্নবাস্তবতার সব রাতগুলো।
যে রাত মেহেদী রাঙানো হাত-
পিপিলিকার ডানা হয়ে উড়েছিলো আকাশে-আকাশে ইচ্ছে ঘুড়ির মতো। সেই হাতের ইশারায় কতো যে মেঘের মৃত্যু লেখা হয়েছিলো, সে হিসাব ধরে রাখে নি কেউই।
২.
ঘোর লাগা ভোরের আগেই চাঙা হয় নামাগলির শেয়ার বাজার। অনুভূতির অংশ ভাগের ব্যস্ততায় রঙিন নদীরা খুঁজে নেয় জীবনের বিকল্প স্বাদ।
সভ্যতার দোকানে তারা, সোনার দামে সাবল বেচে পানির দরে ঘুম কিনে খায়।
সাবল চলতি বাজারের নতুন মূদ্রার নাম।
সারি সারি সাজানো গল্প
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
ট্রেন কোনো স্টেশনে থামলেই গল্পের গন্ধ ছাড়ে
জল গড়িয়ে পড়ার মতো কিছু লোক গল্প কিনতে নামে
যেখানে আলো ভাগ ভাগ হয়ে যায়
ঠাণ্ডাও কেনা থাকে কয়েকজনের
সেখানে তো পায়ে পায়ে গল্প
গল্পেরও আবার কতরকমের ছিরি
এক একটা বাড়ি তো উঁচু হয়েই যায়
ডাকলেও ফিরে তাকায় না
ছাদে উঠে চারপাশে পিঁপড়ে দেখেও শান্তি নেই
কেউ কেউ তো গল্পে বাড়িই পায় না
বাড়ির সংজ্ঞা জেনে উদাহরণ খুঁজে পাওয়াই দায়
ছড়ানো আলোতেই তারা আসন পেতে বসে
কিন্তু এ ট্রেন তো থামতেই চায় না
ভেতরের আলমারিতেই সারি সারি
সাজানো থাকে যাবতীয় গল্প
বাইরে থেকে দেখাও যায় না তাদের
গল্প তো আর সবাই চায় না
যারা চায় আলমারি খুলে দেখে নিতে বাধা নেই
চোখ আকাশে উঠে যায়
আমরা থেমে থেমে লোক দেখে দেখে গল্প বানাই
আর
গল্প শুনি
কত কাল আগে গল্প তৈরি করে
সাজিয়ে রাখা আছে
প্রয়োজনে যে কেউ পেড়ে নিয়ে
পড়ে নেবে গল্প ।
বিষাদের অনুবাদ
আরিফুর রহমান
বিষাদের অনুবাদে পুষ্প ফোটাতে পারতেন আব্বা!
তখন, দাম্পত্যে
পা দিয়েই বুঝ্ছিলেন পিছল পাথর!
ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন।
সেলাই যন্ত্রের চাকা ঘুরাইয়া নতুন সংসার
আগাইয়া নেয়া শিখ্ছিলেন একদিন।
সেই থেকে শত বিষাদও
হা হা! হাসিতে উড়াইয়া দিতেন
ছড়াতেন কড়া রঙের পুষ্প হাসি!
মঞ্চের জাঁদরেল অভিনেতা যে!
প্রত্যেক শীতে প্রাইমারির মাঠে নামতো নাটক
অন্তত দশটা গ্রাম বিষ্ময় ভরে দেখতো
আব্বার মঞ্চ কাঁপানো অভিনয় 'হা হা হা!
জীবন, তুমি যতোই রঙ পাল্টাও
পথে নাও মোড়, কষ্ট দাও, দাও শত যন্ত্রণা!
আমিই জিতবো শেষে।
প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে গেড়ে দেবো
বিজয় রঙের পতাকা। ...হা হা হা!'
আমি এখনও
পুব পাড়ার কাদের পাগলার কাছে
হো হো হা হা-র ছেলে!
অলৌকিক রাজহাঁস কাজী রুপাই
চিরুনীর চিবোক থেকে ঘ্রাণ নিচ্ছি তোমার
চুলের দুর্বোধ্যতার।পরিত্যক্ত রুমালের নগ্নতা থেকে নিচ্ছি কুদরতিময় আধ্যাত্মিক নুন;
তোমার অগ্রন্থিত ঠোঁটের মহড়া থেকে নিচ্ছি
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার পরিপূর্ণ রণ-কৌশল আর স্তনের একাগ্রতায় উনোনের খড়কুটো পুড়া শব্দের জাগতিক বুদবুদ অথবা বিশ্ব পেক্ষাপট
তোমার ঐশ্বরিক যোনিগৃহ থেকে নিচ্ছি এক লক্ষ চৌরাশি হাজার প্রজাপতির মায়াবী রহস্য নাভিশ্বাসের স্ফীত ডানার আত্মাবিশ্বাস আর
সুদীর্ঘ জিরাফের স্বম্ভাবনাময় দার্শনিক রক্তবীজ
পৃথিবীর ভিতরে আটকে আছে মানুষ;মানুষের ভিতরে পৃথিবী। আর ধ্বনি প্রতিধ্বনির গতির ভিতরেই ডুবে থাকে একটি অলৌকিক রাজহাঁস
অতৃপ্তি দেখিবার বেদনা
রেজাউল রেজা
তৃতীয় নয়নে তোমাকে দেখিবার চেষ্টা করিয়া যাই কিন্তু আবছা দেখিতে পাই।
দেখিব কেমনে-কখনও যে নয়নে নয়ন রাখিয়া দেখা হয় নাই।
হৃদয়ের দেওয়ালে কল্পনার রং তুলিতে তোমাকে আঁকিতে চাই
আঁকিতে গিয়া বার বার আটকিয়া যাই
কোথায় লাল কোথায় হলুদ কিংবা কোথায় কৃষ্ণবর্ণ লাগাইতে হইবে তাহা ঠাহর করিতে নাহি পাই।
কখনও কখনও তোমার চুলের গন্ধ অনুভব করিবার চেষ্টা করিয়াও ব্যর্থ হইয়া যাই।
কারণ একটাই-আজ অবধি তোমায় আ-তৃপ্তি দেখিবার সৌভাগ্য হয় নাই।
তুমি লেটার বক্সে
সজল কুমার টিকাদার
তুমি লেটার বক্সে
গোটা গোটা অক্ষরে লেখা
আমি চিঠিটি রেখে দিলাম।
বাইরে এবার ডানার মত রোদ
কিংবা পাথুরে মেঘ যা-ই আসুক
আমার কিছু যায় আসে না।
এখন চাষির মত অপেক্ষা, দেখি
কবে ডাক দেয়
কাক্সিক্ষত ফসল-সোনা!
পদাবলি : ০২
আহ্বান
মাহফুজা মতি জেরিন
ব্যস্ত ভাবনার আড়ালে বাজে অদৃশ্য অশনি সংকেত,
পাশে ঝুলে পোড়া বিবেক, লীন মানবতা
ডুবে যাওয়া হাদিসের শাসানো ফলাফলে-
অন্তঃত্বক জ¦লে।
বুঝেনি ললাটে লাভার চুম্বন তেজ
আসমান ছোঁয়া ধাঁধায়
বর্তমান ফুঁড়ে ঐ ভবিষ্যতে উঁকি ঝুকি মারে
তাড়নার উঁইপোকা,
আর তাতেই সিধানো ধংসমন্ত্র।
যুবকের বাহুগুলো কোথায়?
ধরণীর বড় দরকার।
রয়ে থাকা
মীর সাহাবুদ্দীন
ভালো কবিতা কেউ প্রকাশ করেনা
তোমার চোখে চোখ রেখে কবিতা লিখেছি
তুমি মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলে সেই কবিতাটি
কোন পত্রিকা প্রকাশ করেনা
তোমার হাসি নিয়ে একটি গান করেছি
তুমি মুগ্ধ হয়ে বার বার শুনেছিলে
সেই গানটি কেউ আর রেকর্ড করেনা
কাটাতার নদী ও গাড়ি পেরিয়ি যে গল্প গড়ে উঠেছে
সেই গল্প গুচ্ছ কোন প্রকাশক প্রকাশ করেনা
একটি গাঙচিল একটি সাদা সাড়স দেখে
চেয়েছিলাম তার পা ধরে উড়ে যেতে
কেননা আমার উড়োজাহাজ ছিলনা
সেই অনুভূতি প্রকাশ করেছি আর লোকে ছিঃ ছিঃ করেছিল
বলে ছিল তোমায় ভুলে যেতে
তুমি গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিলে
নিজের ভাগ্য কে বদলে নিতে
আমিও বদলি হয়ে যাই শহরের দূলের সাথে
অথচ সেই গল্প কবিতা গান কিছুই আমাকে ভোলেনি
নিজের কৈশর ও লজ্জার কাছে হেরে গেছি
রয়ে গেছি তোমার কথা গুলো গিলতে গিলতে
বিপ্লব প্রেম ছাড়া অন্য কিছু নয়
রাফাতুল আরাফাত
যে পথ দিয়ে আমার ফেরার কথা ছিল
তা অবরোধ করে আছে-
অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা।
হেঁমা, প্রেম না বিপ্লব কোন দিকে যাবো আমি?
সেদিন বলেছিলাম বিপ্লবী,
বিপ্লব প্রেম ছাড়া অন্য কিছু নয়।
তুমি যখন অধিকার আদায়ের দাবিতে রাজপথে গলা ফাটাও
আমার মনে হয়, জানালার কাছের বেলীফুল বাগানটা
ভরে আছে সাদা ফুলে, যার ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে পুরো ঘরটা।
বিপ্লবী, বিপ্লব প্রেম ছাড়া অন্য কিছু নয়।'
কুহেলিকা ও রোদ্দুর ভালোবাসা
সুমন আহমেদ
পূর্ণ যৌবনে-যৌবনা; একটা হেমন্ত-তোমাকে
উৎসর্গ করবো বলেই-এক জীবনে এতো আয়োজন।
রাত শেষে পাখির কলতানে ঘুম ভেঙে যাবে- তুমি নামে আমার
পৃথিবীর; চৌকাঠ পেরোতেই জড়িয়ে নেবে ঘোর কুয়াশার চাদরে,
তোমার দুধে আলতা দু’চরনের স্পশ্রের হৈমন্তী ভালোবাসায় ধন্য হবে বলে দীর্ঘ প্রতীক্ষায় দূর্বাঘাস আর শিশির বিন্দু।
শিউলিঝরা ভোরে-তিতাস পাড়ে কলসি কাঁখে তোমার আগমনে
সুখের উচ্ছ্বাসে হিমেল হাওয়ায় দোলবে কমলি লতা...
আর পূবাকাশে উদয় হবে রক্তিম এক রবি; ঠিক তখনই
তোমাকে বুকে জড়িয়ে নেবে-কুহেলিকা ও রোদ্দুর ভালোবাসা।
সাময়িক ব্লক
সাময়িক ব্লক
ইয়াকুব শাহরিয়ার
নীলা আজকেসহ আমাকে ফেসবুকে পাঁচশ বার হবে ব্লক করলো। খুব সামান্য ব্যাপারে এমনটা হয়। পরে নিজে থেকেই আবার ব্লক খুলে দেয়। এবার আর সেটা হবে বলে মনে হচ্ছেনা। অন্যান্যবার আমি কল দিয়ে বুঝিয়ে বলি তারপর ব্লক খুলে। এবার তার উল্টোটা করেছি। তার ফোন নাম্বারটাই আমার ফোনবুক থেকে ডিলিট করে দিয়েছি। নীলা আমার তিন বছরের জুনিয়র। অনার্স ২য় বর্ষে ইকোনোমিক্সে পড়ে। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে। ইন্টারমিডিয়েটের ২য় বর্ষে পড়ার সময় আচমকা পরিচয় হয়ে প্রেম। তাই হয়তো ইমোশান খুব একটা কাজ করে না। সম্ভবত হঠাৎ করে হয়ে যাওয়া প্রেমে ইমোশান কমই থাকে।
সুনামগঞ্জের পথঘাট আমার চেয়ে ভালোই চিনে নীলা। কলেজ রোডে তাদের বাসা হওয়ায় ওদিকটায় তার সাথে খুব একটা সময় কাটানো হয়নি। ইদানিং দেখা করবার জন্য খুব চাপ দিচ্ছিলো। আমি যাবো যাবো করে অনেকটা সময় পার করে দিয়েছি। আর না যেয়ে পারছিই না। যেতেই হবে। না হলে ব্যাকআপ। ব্যাকআপ শব্দটা তার কাছে পান্তাভাতের মতো। যখন তখন বলে ফেলে। যেনো কিছুই না ব্যাপারটা। আমাকে মেনটেন করে চলতে হয়। যখন মাথা ঠান্ডা হয় তখন বলে- ‘আমু, আমি তোমার সোনাবউ না? আমাকে বিয়ে করবানা? বিয়ের পরেও এসব করবো, তোমাকে কিন্তু মেনটেন করে চলতে হবে। আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলছি, তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।’ অনেকবার এসব বলে কেঁদেছে। আমিও খুব ভালবাসি নীলাকে। সুন্দরী বলতে যা যা গুণ থাকা দরকার সবটাই ওর আছে। আমার কালো চেহারায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থাকবে সেটাই পছন্দ ওর। একটু লম্বা হলেও চলবে। দেখতে কবি সাহিত্যিকদের মতো লাগবে। তবে লেখালেখি করি একদমই চায় না। কবিতা নীলার কাছে সতীনের মতো। এর কারণ জানিনা।
ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজের জন্য আগের দিন রেডি করা একটা আর্টিক্যাল লিখে শেষ করেই বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য হালুয়ারঘাটের সুরমাভ্যালিতে। নীলা সেখানেই আসবে। হাছননগরের বাসা থেকে বেরিয়ে আমাকে কল দিয়ে জানিয়েছে। একটা ছেলে বন্ধুও যাবে ওর সাথে। সাহেদ। দু’জন একসাথে দেখা করে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে বলল ‘ডব ধৎব ৎবধপযবফ যবৎব.’ আমিও গতি বাড়াই। নিজের কালো রঙের বাইকে করে দ্রুত পৌঁছে যাই সুরমাভ্যালিতে।
ইচ্ছে করেই গেইটের বাইরে বাইক লক করে রেখে দ্রুত চলে যাই ভিতরে। সেখানে গিয়ে চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছি না যে এটা কেমন করে হয়। চোখ কচলাতে শুরু করলাম। ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে দেখলাম। না, যা দেখছি তা সত্যিই। নীলা সাহেদের হাত ধরে হাটছে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের মতো। সমস্ত শরীর ঘামতে থাকে। দ্রুত ছোটে যাওয়াতে যে এমনটা দেখতে হবে তা কোনো ভাবেই মানতে পারছিলাম না। ভীষণ ভালোবাসি নীলাকে। তাকে কখনোই হারাতে না চাওয়ার ভয়টাই আমার সমস্ত শরীরে কাঁপুনী ধরিয়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা ভীষণ দুর্বিষহ ছিলো। শরীর ভীষণভাবে কাঁপছে। মানতে পারছি না। বিড়বিড় বলতে লাগলাম, না এমনটা হতে পারে না। হতে পারে না। আমি ভুল দেখছি। নীলা আমার সাথে এমনটা করতে পারে না। শরীরের এমন কাঁপুনী ও বিড়বিড়ানিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় শাওনের। আমু, এ্যাই আমু! বলে ডাকতে লাগলো শাওন। শাওন আমার রুমমেট। একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে সে। তার ডাকে আমি থতমত খেয়ে চোখখোলি। সব কিছু চিমচাম। আবচা আলো রুমের মধ্যে। আমার মুখের উপর শাওনের চ্যাপ্টা মুখ। হাত দিয়ে ঠেলে তাকে সরালাম। উঠে বসার পর বুঝতে পারলাম যে, স্বপ্ন দেখেছি।
ঘুম ঘুম চোখে ফোন হাতে নেই। ম্যাসেঞ্জারে কতকিছু লিখে নীলার অনেকটা ম্যাসেজ। বিশটার বেশি কলও দিয়েছিলো। ড্যাটা অফ করে ফোন সাইলেন্ট মুডে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন নক করতে যাবো তখন দেখি আমি ব্লক্ড। ফোনেও কন্টিউ বিজি...
প্রেমের কবিতা : সাজেদুর আবেদিন শান্ত
প্রেমের কবিতা
সাজেদুর আবেদিন শান্ত
এবং প্রিয়ন্তী
রুপন্তী, ষৌড়শী, বসন্ত কুমারী, নীলাম্বরী, প্রেয়সী
এখন আবার তোমাকে প্রিয়ন্তী নামে ডাকতে ইচ্ছে হয়।
ডাকলেই বা কি ???
ভালোবাসি শব্দ বলার পর নামে কোনো জায় আসে না।
নাম তখন নিছক অনর্থক হয়ে পরে।
মানুষ টাই মুখ্য।
ভালোবাসাটাই সব।
দুঃস্বপ্ন
প্রতিরাতে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায়
তোমার দুঃস্বপ্নে
একাকি ভাবি
তোমাকে ভালোবাসা দরকার
নয়তো অন্যায় হবে।
শোনো প্রেয়সী
আমি সহস্র পাপ করতে আগ্রহী
কিন্তু অন্যায় না।
ছোয়াছে
ভালোবাসা কি ভীষণ ছোয়াছে!
প্রথমে আমার হলো তারপর তোমার।
কই তোমার তো ভালোবাসা প্রতিষেধক কোনো কাজে আসলো না?
ভ্রান্ত
আমরা বারবার মিথ্যাটাকে ভালোবাসি
আমরা বারবার মানুষ চিনতে ভুল করি
আমরা বারবার মানুষ চিনতে চাই
আর আমরা বারবার প্রেমে পড়ি
ভালোতে বসতি
আমার ভালোবাসা গুলো খুন করব।
বড্ড বেশি জ্বালাতন করে,
ভালোবাসি বলেই কি হাতে হাত রাখতে হবে?
ভালোবাসি বলেই কি এক সঙ্গে ঘুরতে হবে?
সব ভালোবাসার পরিনতি কি বিয়ে?
সব ভালোবাসাই কি সফল?
ভালোবাসা মনের উৎকর্ষ,
ভালোবাসা ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয়।
কিছু ভালোবাসা আছে সূর্যের মত সত্য,
কিছু ভালোবাসা আছে চাদের মত সুন্দর,
কিছু ভালোবাসা আছে নদীর মত গভীর,
কিছু ভালোবাসা আছে পাহাড়ের মত স্থির,
সব ভালোবাসার পরিনতি বিয়ে নয়
কিছু কিছু ভালোবাসা অন্তরেই কবর হয়।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)