পদাবলি
পলায়ন ইচ্ছেসমূহ
দ্বীপ সরকার
বেড়ালছানার মেঁও মেঁও,উঠোনে সন্ধ্যার ডাক-
সন্ধ্যা হলেই গেরস্থ্যদের ডাকে ওরা;
ওখানে ছাদের ওপর মুখিয়ে আছে লোভের ঝিঙেফুল
দেয়ালে দেয়ালে পাতানো আছে আত্মার খিড়কি
ওরা আমাকে টানে গভীরের সিটকি ধরে
ঘরগুলো ক্ষমা করলেই আমার পলাতক ইচ্ছেদের লাগেজে ভরিয়ে
আমি ফিরবো- ফেরাই উচিত
ঘরের আদি ডাক- কার ভালো না লাগে ?
আমার ঘরেরও হাত আছে- আমাকে ডাকে
আমার ঘরেরও চোখ আছে- আমাকে ইশারা করে
আমার জন্মঋণ আমাকে টানে
ঐতিহ্যের বর্শিতে ঝুলে থাকা শতাব্দীর মাছ,
কার্ণিশে নতজানু হয়ে বসে থাকা কুসুম করোটি
আমার প্রতিক্ষাায় আছে- ওরা এভাবেই থাকে
আমার ঘর পলায়ন ইচ্ছেসমূহ ফিরতে চায়
কারণ,মা সেদিন বলেছিলনন- ‘রাগ বেশিদিন ধরে রাখতে নেই’
রঙধনু মন ও আলো ছায়ার কাব্য
ফজলুর রহমান
তাঁতি যেমন করে রঙিন সুতো দিয়ে বোনে জামদানি;
তেমনি করে আমি গহিন জলে বুনেছি ভালোবাসার সালক।
পানাপাতা, খড়কুটো, কলমির ঝাড় সরিয়ে দেওয়ায়,
সে জল এখন ঘুমভাঙা ভোরের মতন শুভ্র।
মুলি বাঁশের ছায়া পড়ে সেখানে,
শ্রাবণের ভিজে রোদ এবেলা-ওবেলা ঘুরে ফিরে যায়।
তুমি দেখো তোমার বুকের মতন সেখানে ফুটবে নীল পদ্মের কুঁড়ি।
হাওয়ারা ফিসফিস করে কথা কয়;
ছাতিম গাছ বেয়ে বেয়ে চাঁদটাও নেমে পড়ে জলে।
বাসকের শুকনো পাতায় তোমার আঁচলের খসখসে শব্দ;
জ্যোৎস্নারা কান খাঁড়া করে,
তোমার নিঃশ্বাসের ধ্বনি গুণে গুণে,
বাতাস রাতের দরজায় এসে দাঁড়ায়।
বোবা মেঘ কড়া নেড়ে নেড়ে,
মুখভার করে ফিরে যায়।
অন্ধকার ডিঙিয়ে তুমি আলোদানি হয়ে ওঠো;
কী লাজুক,কী কোমল, কী সতেজ তোমার আধফোঁটা মুখ!
অনুভূতির ডাশা খুলে দাও তুমি,
তোমার রঙধনু মনের দর-দালানের ভাঁজে ভাঁজে
ভেজা রোদ্দুরের ওম।
সে দালানের পলেস্তারার চোরা ফাটলে
যে বটের চারা মাথা ফুঁড়ে আকাশ দ্যাখে;
তার কচি শ্যামল পাতারাও তোমার মনের রোদ,ছায়া,
আর বৃষ্টিতে লকলকিয়ে কী দারুণ বেড়ে ওঠে।
ভালোবাসার আবেগ
কাব্য কবির
যখন বাতাসের বৈঠা হাতে নিয়ে সবুজের
বুকে ভালোবাসার ঢেউ খেলি তখন কে
যেন আমার গোলাপী হৃদয়টায় এসে
ধাক্কা দ্যায়, তখন আমি ভালোবাসার
আবেগে পাথর হয়ে যাই। তখন আমার
কানে কানে কে যেন এসে বলে,
ভালোবাসি তোমাকে, ভালোবাসি। বড্ড
বেশিই ভালোবাসি। যখন স্বপ্নমাখা
ভালোবাসার দৃষ্টি দিয়ে প্রকৃতি দেখি
তখন প্রকৃতির মাঝে বসে কে যেন হাসে,
মনে হয় ও আমার প্রিয়সী। ও আমাকে
শিশির যেমন দূর্বাঘাস ভালোবাসে,
চাঁদ যেমন তারাকে ভালোবাসে
ঠিক তেমন’ই ও আমাকে ভালোবাসে।
আমি ওর ভালোবাসার পরশ পেলে
ভালোবাসার আবেগে পাথর হয়ে যাই।
অন্তিম ইচ্ছে
শারমিন সুলতানা রীনা
যতটা দিয়েছো পূর্ণতা
আড়ালে তার ততধিক শূণ্যতা।
সকল আকাংখা তোমার বুকেই
কাটে সাঁতার।
সাঁতারে পটু নই মোটেও
ডুবে যাই অতল তিয়াসায়।
মৃত্যুকে বড় ভয়
তোমার কাছে গচ্ছিত সব ইচ্ছে
তুমি কি হবে?
আমার শেষ যাত্রার সাথী?
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
ধোঁকা
ধোঁকা
আহমদ মেহেদী
আরে ভাই! পত্রিকার এসব বিজ্ঞাপন সবই ভুয়া, বানোয়াট। সবই বাটপারি! নাজমুলের এসব কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করেই পত্রিকার জ্য উপজেলার সামনের দোকানটিতে এলাম। রাতে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে গিয়ে নজরে এল বিজ্ঞাপনটি “টক- তে সেলসম্যান নিয়োগ, বিস্তারিত ০১৮৫২.....।” জাতীয় দৈনিকের এমন একটি বিজ্ঞাপন সেদিন আমার মগজে টক ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়েছেল। পরদিনই সকালে ঐ নাম্বাররে কল করতেই অসম্ভব ভদ্র এবং মার্জিত ভাষায় একজন বলে উঠল-
- আস্সালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আস্সালাম। ভাইয়া গতকাল পেপারে একটি বিজ্ঞাপন দেখলাম এজন্য ফোন করলাম।
- জি, আপনি কোথা থেকে বলছেন?
- চাঁদপুর থেকে।
- আপনার নাম? পাসপোর্ট করা আছে আপনার?
- হ্যাঁ, করা আছে।
আমরা আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সিলেক্ট করব। ছো, আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত হন। আপনার সিভিটা ঁশ......@মসধরষ.পড়স এই মেইলে পাঠিয়ে দেন।
আমি একটি বেশি প্রস্তুত হয়ে গেলাম। যখন স্বপ্নে দেখলাম টক -তে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করা শুরু করে দিয়েছি। সেই আনন্দে কয়েকজনকে বলেও দিলাম শীঘ্রই বিদেশে চলে যাচ্ছি। কাছের মানুষ বেলাল শুনে আমাকে কিছুটা সতর্ক করে দিল। বিনা পয়সায় লন্ডনে যাবি বিষয়টা ক্লিয়ার না, তবে দেখে শুনে পা বাড়া। তার কথায় বিরক্ত হলাম। সত্যিকার অর্থে এদেশের লাখ লাখ বেকার মানুষ মনে প্রাণে একটি বিশ্বাস নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে পত্রিকার এসব বিজ্ঞাপনকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করে থাকে, যা সেদিন নিজেকে দিয়ে বুঝেছিলাম। দিনটি ছিল বুধবার। দুপুরের দিকে ঐ না¦ার থেকে একটি এসএমএস আসে- টক -তে সেলসম্যান নিয়োগের বাছাই কাজ প্রায় শেষ। দশজন সিলেক্ট করা হয়েছে, আপনার অবস্থান টক- ০১ (এটাই আপনার কোড নাম্বার) পিন কোড নাম্বার টি ভুলবেন না। আগামী ২৬ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্ট অফিসে ভাইভা হবে, পাসপোর্ট নিয়ে চলে আসবেন আর বিকাশ করে মেডিকেল ফি বাবত ৮৮০০ টাকা পাঠিয়ে দিবেন তিনদিনের মধ্যে। না পারলেও জনাবেন, আমরা অন্য আকেজনকে খুঁজে নেবো। আমিতো খুশিতে আত্মহারা। কদিন বাদেই চলে যাচ্ছি স্বপ্নের লন্ডন। তাই এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে টাকাটা ঐ নাম্বারে পাঠিয়ে দিলাম। ফিরতি এসএমএস- ঞযধহশং ধ ষড়ঃ ড়ভ. এড়ড়ফ ষঁপশ.
স্বপ্ন বুঝি সত্যি হতে চলছে। তখনি কতো দায়িত্বনির্ভর চিন্তা করা শুরু করে দিলাম। কতো টাকা বেতন পাবো! প্রথমেই বাড়ির রাস্তা আর কবরস্থানটা ঠিক করবো। অতি আনন্দে আমি ঘুম হারালাম।
তখন আরও কিছু কাছের মানুষকে খবরটি জানলাম। তারা প্রাণভরে দোয়াও করলেন। অনেকে টাকা দিতেও রাজি ছিল যে যার সাধ্য অনুসারে। আমার মাকে সারপ্রাইজ দেবো ভাবছি। প্রথমবারে মা আমার বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।
বাবা শুনলে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবেন। মনে মনে বাবাকে বলেই ফেললাম- “দেখো বাবা, আমাদের আর অভাব থাকবে না, এক ঘরে সবাই থাকতে হবে না। মুশফিকাকে মেডিকেলে পড়াব। সামিয়াকে ধুমধাম করে বিয়ে দেব। বিয়েতে আমার বন্ধুদের দাওয়াত করবো। বাবা তোমাকে বলে রাখি, আমার কিন্তু একজন স্পেশাল গেস্ট আছে, মেহেরিন তাঁর নাম!”
কিছু অপেক্ষা আনন্দের হয়। আমিও অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই দিনটির জন্য, প্রত্যাশিত সুখবরটির জন্য।
একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ঐ নাম্বারে কল দিলাম। আশ্চর্য! সইচড অফ। আমি চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম। দুই মাস ধরে চেষ্টা করছি এখনও নাম্বারটা বন্ধ! নাজমুলের কথাই সত্য হল। বিশ্বাস করে আবারও ধোঁকা লেখাম। এমনিতেই সংসারে অনেক ঝামেলা। সুমনের টাকা কোথা থেকে দেবো? সেদিন আমার এই পৃথিবীর প্রতি ঘৃণা জন্মেছিল খুব। যে ঘৃণার আগুনে একটি রাজ্য পুড়ে যেতে পারতো। বিজ্ঞাপন মালিক আমাকে ঠকিয়েছে। আমার সেদিন সমস্ত মানবজাতিকেই ঠকাতে ইচ্ছে করেছিল। আমার বিশ্বাসের ভিত্তিটাও নড়েচড়ে উঠল। কেনো এমন করে মানুষ? আমার মাতৃভূমির মানুষ?
অবশেষে মনের মাঝে কিছু ভাবনার উদয় হলো। সেই মানুষটি আমাকে ধোঁকা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু এই কয়দিন আমাকে যে স্বপ্নের মাঝে বিভোর রেখেছিল এটাই বা কম কিসের! কিছু স্বপ্নের কাছে অর্থ তুচ্ছ বিষয় এমনটাই মনে হয়েছিল সেদিন, যেদিন আকাশটাও আমার ছিল।
নোয়াগাঁও, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
ধারাবাহিক উপন্যাস : উর্মিলা নগরে থাকে : পর্ব ১১
(গত সংখ্যার পর)
অথবা ঝিনুক নীরবে সহো ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও, ভিতরে বিষের বালি মুখ বুজে মুক্তা ফলাও। এক বুক শূন্যতায় ভাসতে থাকে উর্মিলা। হু হু করে বাড়তে থাকে বুকের ভেতরকার দহন। যার বোধ ভাষা ওর জানা নেই। কেবলি হাহাকার। উর্মিলা কি জানে ঝিনুকের মতো সর্বংসহা একজন ঊনিশের তরুণী, ভাঙতে ভাঙতে নিজেকে আবিষ্কার করে ভুবনের সব দায়ভার তার স্কন্ধে। ওর চোখের কোনায় জল জমতে থাকে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে বিকেল নেমে আসছে। নিরুত্তাপ রোদের ঔজ্জ্বল্য ক্ষীণ হয়ে আসছে।
ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা বেজে যায়। রুবী ঘুমের মধ্যেই ছিল। রুমের দরজা খুলে দিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বলল, ‘দীপু ভাই, আমাকে রূপকথার বই দিয়েছে। এটা কি তার ঠিক হয়েছে? আমি কি বাচ্চা মেয়ে?’
কিছু বলার আগেই ও লাইটের বিপরীতে মুখ নিয়ে ঘুমের আশ্রয়ে চলে যায়। প্রাত্যহিক কাজ শেষ করে উর্মিলা যখন বিছানায় এল তখন এগারোটা বেজে গেছে। রুবী মৃদু স্বরে নাক ডাকছে। টেবিলে বেবী আপার ডায়েরি আর কলম।
বিছানায় গা এলিয়ে বুকের কাছে বালিশ নিয়ে ডায়েরির পাতা ওলটাতেই ওর লিখতে ইচ্ছে করে, আজ তিরিশে এপ্রিল, ১৯৮৯ সাল। আজ আমার কলেজের প্রথম দিবস। আমার মনে হলো, আমি যেন এক অন্ধকার গহ্বর থেকে হনুমানের মতো হামাগুড়ি দিয়ে আলোর দিকে হাঁটতে লাগলাম। শুভপুর গ্রামের উর্মিলা নামের এক নারী আবছায়ায় পথরেখায় মিল খুঁজতে থাকে। আত্মায় লালন করে, এই তো মুক্তির একমাত্র পথ। বাবা তুমি আমাকে আশীর্বাদ করো। আমি যেন বেবী আপা হয়ে জন্ম নিই। কী অদ্ভুত কা-। ক্লাস থেকে বেরিয়ে রিকশা নেব। ঠিক এ সময় ল্যাম্পপোস্টের ওপাশ থেকে দীপু ভাই এগিয়ে এল। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। কিছু বোঝার আগেই দীপু ভাই বলেন, ‘বেবী আপার বারণ থাকলেও কী হবে। ভাবলাম দেবী তো নগরে আগন্তক। রাত-বিরাতের ব্যাপার। বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।’
রিকশায় উঠে বলে, ‘উঠুন।’
মন্ত্রমুগ্ধের মতো কোনো ব্যবধান ছাড়াই দীপু ভাইয়ের পাশে বসে বলি, ‘আপনি সিগারেট খান?’
‘না খাই না। আজ খেতে ইচ্ছে করল।’
‘ও।’
‘আপনি কি রাগ করেছেন?’
‘না।’
কোনো কথা ছাড়াই বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে চলে যায় দীপু ভাই।
১২.
শুক্রবার। সকাল থেকে নিজের ভেতরে উত্তেজনা অনুভব করে উর্মিলা। আজ বেবী আপার সঙ্গে থাকতে হবে। আজই প্রথম বেবী আপার একান্ত সান্নিধ্য পাবার সুযোগ। ইতোমধ্যে বেবী আপার দেওয়া প্রায় সব বই পড়ে ফেলেছে। অর্থনীতি উর্মিলা বুঝেনি। কিন্তু হো চি মিন-এর সংগ্রামী জীবন ওকে আকর্ষণ করেছে বেশি। রুটস লেবেল থেকে উঠে আসা একজন মানুষ কীভাবে একটি নেশনকে বিপ্লবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। অবিকল আমাদের বঙ্গবন্ধুর মতো। তিন হাজার বছরের বাঙালি জনগোষ্ঠীকে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে গেছেন। বাঁশের লাঠি হাতে কামানের সামনে বুক পেতে দিতে দ্বিধা করেনি মানুষ। তাঁর জন্য পেয়েছে একটি স্বাধীন ভূখ- এবং লাল-সবুজ পতাকা।
উর্মিলা নিজের মধ্যে একটু একটু করে পরিবর্তন অনুভব করে। শুভপুরের বন-বাদাড়ে ঘাস-ফড়িংয়ের পেছনে ঘুরে বেড়ানো উর্মিলার ক্রমেই মৃত্যু ঘটছে। তার জায়গায় বাসা বাঁধতে শুরু করেছে দৃঢ় ক্রোধে এক মানবিক সত্তা। জীবন এবং জগৎকে আবিষ্কার করার দুর্নিবার আকর্ষণ। বিশ্বাসের ঝুল বারান্দায় শেকড় গজাতে শুরু করেছে। উর্মিমালা, উর্মি তুই পারবি। হঠাৎ উর্মিলার মনে হয় বেবী আপা কি বই- সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন করবে? করতে পারে। দীপু ভাই তো সে রকম ইঙ্গিতই দিয়েছিল।
‘কী বলবে ও!’
‘সত্যি বলবে।’
যা বুঝেনি তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই ওর। বোঝার জন্য ঢের দিন অপেক্ষা করছে।
যদি জিজ্ঞেস করে প্রিয় চরিত্র কে? বলব, বঙ্গবন্ধু, আর চে গুয়েভারা। একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। অন্যজন যোদ্ধা। রাইফেল হাতে বাঙ্কারে লাফিয়ে পড়ে শত্রু নিধনের অব্যর্থ সৈনিক। আর শহীদ জননী দেশমাতৃকার ইস্পাত দৃঢ় মমতাময়ী ছায়া। উর্মিলা সেই ছায়াতলে দাঁড়িয়ে প্রাণভরে নির্মল বাতাস গ্রহণ করতে চায়। কার্বনশূন্য সুশীতল বায়ু। আহা!
‘বেবী আপা আমাকে থ্রি-পিস দিয়েছে। দারুণ।’ রুবী বলে।
‘ভালো। আমাকে কলম আর ডায়েরি।’
‘তুই বিদ্বান হবি, তাই কলম দিয়েছে। আর আমি নায়িকা হব তাই থ্রি-পিস? বলে উচ্চস্বরে হাসতে থাকে রুবী।
বেবী আপার গিফট রুবী খুশি হয়েছে। ধোবাউড়া রুবীকে বেবী আপা খুশি করেছে, ভেবে আনন্দিত হলো উর্মিলা। কত চাওয়া পাওয়ার বঞ্চনা রয়েছে ওর। সংসারে এসে একেক জনের একেক রকম স্বপ্নবিলাস। রুবী নিজকে বঞ্চিত করবে কেন?
বেলা আড়াইটার দিকে মকিম চাচা ওপরে উঠে এল।
‘মা-জননী। গাড়ি প্রস্তুত। আপনার রেডি হতে হবে যে।’
‘আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি?’
উর্মিলা দশ মিনিটের মধ্যে বের হতে পারল না।
ক’মিনিট গেল কী পড়ে বেবী আপার সম্মুখীন হবে!
বাবার দেয়া পুজোর সালোয়ার-কামিজের সাথে কুমারী বিনুনি করে বের হতে পনেরো মিনিট পেরিয়ে যায়। তবুও মনের মধ্যে শঙ্কা অনুভব করে। বেবী আপা কী পছন্দ করে তা ওর জানা নেই। তারপরও ভরসা, এ মাটি-মানুষের জন্য যার দীঘির অতলস্পর্শী মমতা সে কি এর বাইরে?
ইন্দিরা রোড থেকে বেবী আপাকে পিকআপ করে গাড়ি যখন রূপসী বাংলা অতিক্রম করছে, ঠিক তখন বেবী আপা বলল, ‘তুমি কি জানো তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি?’
‘জি-না আপা।’
শহীদ মিনারে। ওখানে প্রতিবাদ সভা আছে।’
‘কেন?’
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হতে। আমি আর শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বক্তৃতা করব।’
‘শহীদ জননীর সঙ্গে দেখা হবে।’
‘হ্যাঁ। তুমি তার বইটি পড়েছ?’
‘জি আপা, এইরকমও হয়? যতবার পড়েছি আমার চোখে বারবার জল এসেছে।’
‘খুশি হলাম উর্মিলা। উনি হলেন আমাদের জাগ্রত বিবেক। প্রতিকূলতায় কীভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় জননী বঙ্গমাতার কাছে শিখবে।’
বেবী আপার এমন সাধারণ রমণীর মতো কথা বলায়Ñউর্মিলার চোখে জল এসে যায়।
উর্মিলা অনুভব করে ওর হাত পা ঘেমে উঠছে। ছুটে চলা রাস্তার যানবাহনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপা, আমি তো এতকিছু জানি না।’
‘জানবে। জানতে জানতে একসময় নিজেকে তখন আর শুভপুরের উর্মিমালা ভাববে না। ভাববে জননী বঙ্গভূমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’
উর্মিলা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
ততক্ষণে টিএসসি পেরিয়ে শহীদ মিনার থেকে একটু দূরে গাড়ি ইন করে।
বেবী আপা একটি ফাইল উর্মিলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘যতœ করে রেখো, আর আমাকে ফলো করো।’
উর্মিলা তাকিয়ে দেখে শহীদ মিনার লোকে লোকারণ্য। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ঢেউ। প্ল্যাকার্ড ফেস্টুনে সয়লাব চারপাশ। আর গগনবিদারী চিৎকার, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।’
‘খুনি এরশাদ বিদায় হও।’ এ সময় মাইকে ঘোষিত হচ্ছে, এখন এ সমাবেশে উপস্থিত হচ্ছেন, বর্তমান বাংলাদেশের নারীমুক্তি আন্দোলনের বলিষ্ঠ নেত্রী, দেশ-বিদেশে একজন যুদ্ধবিরোধী মানবিক চরিত্র হিসেবে স্বীকৃত, বাংলাদেশের শহীদ জননীর ছায়াযোদ্ধা আমাদের প্রিয় বোন, বেবী তাসমিন, আমাদের বেবী আপা।
চারদিক দিগন্ত প্রকম্পিত চিৎকার, বেবী আপা এগিয়ে যাও, আমরা আছি তোমার সাথে।’
হাত উঁচু করে সমাবেশকে অভিবাদন জানিয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান বেবী আপা।
উর্মিলা তাকে অনুসরণ করে।
মাইকে তখনও ঘোষিত হচ্ছে, ‘আমাদের সম্মানিত অতিথি প্রিয় আপনজন, বেবী তাসমিন মঞ্চে আসন গ্রহণ করছেন। আর অল্পক্ষণের মধ্যে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মঞ্চে উপস্থিত হবেন। আপনারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।’
এ সময় শাপলা চত্বর থেকে এক বিশাল মিছিল আসছে। মেডিকেল গেট, বকশিবাজারের দিকের রোড আর বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল খেলার মাঠের দেয়াল ঘেঁষে শতাধিক পুলিশ সমাবেশ বেষ্টন করে রেখেছে।
মিছিলের কণ্ঠস্বর যেন উত্তাল সমুদ্রের গর্জন করতে করতে শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে আসছে। ‘স্বৈরাচার এরশাদ নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।’
উর্মিলা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনুভব করল কে যেন ওর মধ্যে ভর করছে। সমাবেশের সহস্র কণ্ঠস্বর একাকার হয়ে শিরায় শিরায় বসতি গেড়েছে। একবার সমাবেশ, একবার বেবী আপার দিকে তাকাতে থাকে। ওর মনে হয় ও কি এরকম সমাবেশ আগে দেখেছে? না ও কিছুই দেখেনি। শুভপুর তো এরকম না। নির্ভার। নিস্তরঙ্গ। স্বৈরাচার কেন? কে স্বৈরাচার? ওর মাথায় তালগোল পাকাতে থাকে।
মাইকে বক্তৃতা চলছে। কে বক্তব্য রাখবে, কী বক্তব্য রাখছে তার কোনো শব্দই ওর কানে ঢুকছে না। একবার মনে হয় এ সমাবেশে কি দীপু ভাই এসেছে? আসতে পারে। বেবী আপার পছন্দের মানুষ। নিশ্চয়ই স্বাধীনতাকামী। জনতার স্বপ্নদ্রষ্টা।
মাইকে ক্রমাগত বক্তৃতা-চলছে। টিএসসি থেকে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিল আসছে শহীদ মিনারের দিকে। মিছিলের অগ্রভাগে শহীদ জননী। পাশে সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। কালো চশমা পরিহিত শহীদ জননী জনতার উদ্দেশে হাত উঁচু করতে করতে মঞ্চে উঠে এল।
জনতার গগনবিদারী চিৎকারের মধ্যে উর্মিলা লক্ষ করল শহীদ জননী বেবী আপার বুক জড়িয়ে ধরে বলল, বেবী ক্যামন আছ?’
‘জি খালাম্মা ভালো। আপনার শরীর ক্যামন?’
‘ভালো না। গলার ব্যথাটা বেড়েছে। শাহরিয়ার ছাড়তে চায় না।’
‘আমি তো আপনার জন্য এসেছি।’
‘তুমি তো আসবেই।’
উর্মিলা অত্যন্ত কাছে থেকে শহীদ জননীকে দেখতে থাকে। কী নির্মল মুখ। চুলের সাথে কোথায় যেন সূচিত্রা সেনের মিল আছে। এমন ব্যক্তিত্বময় নারীর মুখ উর্মিলা আগে কখনো দেখেনি। তার মস্তিষ্কে সদ্য পঠিত একাত্তরের দিনগুলির চরিত্র ছায়া ফেলতে থাকে। আর একটু একটু করে অদম্য সাহস বুকে ভর করতে থাকে। এ সময় মাইকে ঘোষিত হয় এদেশের নারী নেত্রীর পুরোধা, মানবাধিকার কর্মী, সংগ্রামমুখর নির্যাতিত মানুষের প্রিয় কণ্ঠস্বর বেবী তাসমিন আমাদের বেবী আপা।
বেবী আপা একবার সমাবেশের দিকে তাকিয়ে উর্মিলার দিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে মাইকের দিকে এগিয়ে যান।
উর্মিলা বেবী আপার মুখের দিকে তাকায়।
(চলবে)
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
শব্দমিছিল : ইমরান মাহফুজ
শব্দমিছিল
ইমরান মাহফুজ
লালশাকের অভিনয়
বাবার ডান পাশে খেতে বসেছে আমেনা। মাছের ঝোলে রান্না করা নতুন লাউ মরমীয় সঙ্গীতে আয়েশ করে খাচ্ছে সবাই। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বাবা নুরল আলম। পাশে থাকা এলোকেশী ছোট মেয়েটির লালশাক খুব প্রিয়।
খাওয়ার সাথে পলিয়ে বেড়ানো ভাবনাগুলো ধরা দেয় মনের খেয়ালে। শৈশবে লালশাকের ঝোল দিয়ে রক্তের অভিনয় করতো আমেনারা। আর এখন রক্ত দিয়ে লালশাকের অভিনয় করে জীবন খেলায় ভুলিয়ে দেয় মা-বাবার শোকাশ্রু।
বাবারও প্রার্থনা দুুপুর ঢেকে দিক শিশিরমমতায় ঘাসফুলের কান্না!
কথোপথোন
মায়ের বুক থেকে নগরে বীজ এনেছি যতন করে
ইটরঙা বিকেলে আয়েশি ভঙিতে রুয়েছি টবে!
দিনরাত ঘামশ্রমে বিলিন সময় কর্পোরেট রসুই ঘরে
চেনাগত সন্ধ্যায় ক্লান্ত জ্যামে বাসায় ফিরি
দশকজুড়ে দেখি বীজ থেকে গাছ বসা পাতায়
ফুরসত পেলে আদর করি!
অথচ তাকায় না- কথা কয় না- ফল তো অনেক দূর।
মা বলে পাগল ছেলে, শহরে গাছ ফলবতী হয় কী রে!
মৌনতার বর্ণমালা
(একুশের কনিষ্ঠতম শহীদ ওহিউল্লাহকে)
উপত্যকাজুড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে চক্রাকার উদ্ভিদ
হিংস্রচোখ তন্নতন্ন করে বেড়ালের মতো
খুঁজে ফিরছে ভাষাপ্রেমীদের-
রক্তাক্ত তা-ব লিলা থেকে বাদ যাচ্ছে না
কুয়াশার আড়ালে থাকা ভূমিহীন কিংবা অশ্রুহীনরা!
সহমরণে চৌচির নদী- বিষাদের গীত গেয়ে চলছে।
পাখিদের বিচিত্রবোধে দেবদূতও হতাশাগ্রস্থ!
ফুটপাতে ঘুমিয়ে পড়েছে কোলাহল-
নবাবের হাইওয়ে জীবনানন্দ বাড়ি ফিরছে।
ওহিউল্লাহ বাকরখানী হাতে বাবার অপেক্ষায়-
পলাশি থেকে দেখছে সবুজ পৃথিবী! কাছে ডাকছে স্বপ্নরা।
হঠাৎ বাঁ দিক থেকে একপলক তাকাতেই-
রোদের মানচিত্রে ভাষাহীন অবুঝপ্রাণ
আঁধারের শহরে ওহিদের শরীরজুড়ে মৌনতার বর্ণমালা।
মেঘমল্লার স্বপ্নে জেগে থাকে ফাগুনের বাংলাদেশ।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
শব্দমিছিল : সেলিম রেজা
শব্দমিছিল
সেলিম রেজা
নিতান্ত’ই কবিতা মৃত্যু নয়
মুখের দিকে তাকিয়ে একেবারেই বুঝতে পারোনি
কী ভীষণ কষ্টে আছি
তোমার দেয়া পুরানো বইগুলি এখনো পড়ছি
অঝোর ধারায় ঝরে বেদনার জল
অভিমানে ফিরালে মুখ, ভেজা চোখ
আর কতদিন? কতটা প্রহর কাটাবে একেলা?
মরে যাবার কথা বার বার ভাবছি
কবিতাও লিখছি মৃত্যু কামনায়
যদি সত্যি মরে যাই কে নেবে খোঁজ খবর
অনিয়মে কে বকবে?
মনে পড়ে গভীর রাতে বিনিদ্র চোখে চোখ রেখে
বুকের ভালোবাসা দেখাতে;
ইদানীং কাছে যাবার তাগিদ অনুভব করি
দূরত্ব ঘোচাতে জোর করি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
কথা ছিল পাহারাদার হয়ে মৃত্যু ঠেকাবে
যতোদিন যাচ্ছে বাড়ছে বয়স
হেঁটে যাচ্ছে সময়, তুমিও দূরে;
মৃত্যুর কবিতা লিখতে লিখতে যদি সত্যিই মরে যাই
ভেবে নিও এটা নিতান্ত’ই কবিতা, মৃত্যু নয়।
নষ্টালজি
মনে করে দেখ এই শহরে ক্যামন ছিলে
কিভাবে জড়িয়ে ছিল চিরচেনা রাস্তাঘাট
সন্ধ্যায় অফিস ফেরত সেই ফুটপাত
গভীর আবেগে কতটা পথ হেঁটেছো
টঙ দোকান
টঙ দোকানে মাটির ভাঁরের চায়ে চুমুক
যেন ছুঁয়ে দেয়া ঠোঁটের কোণে কালো তিল;
অমৃত লাগে যখনি গা ঘেঁষে বসো তুমি..
নতজানু আমি
সময়ের ঝরাপাতায় স্মৃতির ক্যানভাস
দুঃসহ কষ্টে দু’চোখে অশ্রুর বন্যা
পিতামহ, নিশ্চুপ- নিরব মৃত্যু শয্যায়
তুমি চলে গেলে সহস্র যোজন দূরে
আজন্ম বাঁধন ছিন্ন করে
তোমার প্রস্থানে উড়ে যায় স্তদ্ধতার কালো মেঘ
আমি আছি দূরে-বহুদূরে
মায়ার বাঁধন ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে
তবুও মন ছুটে যায়......
নৈঃশব্দ প্রহরে স্মৃতির ক্যানভাসে
ভেসে ওঠে তোমার অবয়ব
কখনো সখনো কাছে এসে দাঁড়াও
কখনো বা কথার ছলে মাথায় হাত বুলিয়ে যাও;
কখনো বা বলে যাও- আফসোস করো না
তোমাকে স্মরণকালে
হারিয়ে ফেলি জাগতিক শক্তি,
উপদেশ আর স্নেহের সাগরে
নতজানু আমি বিষণ্ন কোনো স্বপ্নে-
চাঁদের সামনে...
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
শব্দমিছিল : মাহমুদ নোমান
শব্দমিছিল
মাহমুদ নোমান
তোমাকে হারাই খুঁজবো বলে
তোমাকে হারাই
বৃষ্টিভেজা রাতে ঘরে ফিরলে
ধূমায়িত চায়ের কাপে
জোড়া নাকের ঘষা,
চুমুকে চুমুকে গিলে
ফের আঁধারে লুকাই...
মেঘের বাহুডোরে ঘোড়া
তলিয়ে যায়-
নদীর জোয়ারে ভেসে আসে
খড়কুটো,
মরিচ ক্ষেতের ফলফলাদি-
বাঁ বুকে শ্বাস আটকে যায়
নিজেতে ভর দিয়ে দাঁড়াই
অশ্রু আর মুছতেই, পারি না...
শীতসন্ধ্যায়
ঘর থেকে বের হতে পারি নি
যেন মেঘাকাশের নিচে
ঝিরঝিরে হাওয়া,
ঠোঁটে এসে চমকে যাচ্ছে;
কাতাল মাছ ডাঙা এসে ধড়পড়াতে-
কানকো কেটে ফুলকা টানছে
বটকীর ঠুঁটায়,
কাগজের নৌকা ডুবে ডুবে যায়
আমি জেগে ওঠছি ডুব থেকে;
শীতের খুচরো আবেগ
আমার দু’চোখজুড়ে মেঘ
আকাশে খুঁজতে যেওনা
কুয়াশার সমুদ্রে ডুবে,
রাতভর ফেরারি জাহাজে
ফিসফিসানি শুনেছি...
সূর্যের চকমকানিতে-
ওলুয়া মাছের মতো,
সমুদ্রকূলে পড়ে আছি
প্লাস্টিকের তেরপালে...
নড়াচড়া করছে
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানি না...
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
শব্দমিছিল : মিসির হাছনাইন
শব্দমিছিল
মিসির হাছনাইন
ধানের গীত
উঠান জুড়ে ইরি ধানের ঢিবি। খড়ের পাহাড়ে ঘর বানায় দুষ্ট কিশোর-কিশোরী। মনে পড়ে, রাত জেগে গরুর ধান মাড়াই; ওগো, শৈশব দৌঁড়ায়... কোথায় হারায়?
হেমন্তের শীতে গেন্ধাফুল ফুটেছে কিছু, উঠানের পাশে। ফুলের গন্ধে ভুলে গেছি কত কত ভুল। ধান নিয়ে উড়ে যায় দুপুরের বুলবুল।
খালি বিলে নাড়ার আগুনে ধান সিদ্ধ করে গেরস্থের বউ-ঝি। রাত করে কৃষক বাজার থেকে ফেরে- চাদর গায়ে বিড়ি টানে, ধানের গন্ধ শুঁকে।
পুড়তে পুড়তে ধান, ভাত হয় কৃষাণীর উনুনে। কার পায়ের নূপুর বাজে, ধানের ভিতর ঢেউ! কৃষাণীর কষ্ট বুঝে বুঝে আড়ালে হাসে কেউ।
কৃষকের বেটা আমি ধানের গীত গাই,
শহরের সস্তা হোটেলে ভাত কিনে খাই!
কনকলতা
কনকলতা চারাটা দিন দিন বড় হইতেছে বুকেরু ভিতর। নষ্টে যাওয়া জীবনটা শীতের কুয়াশায় স্বচ্ছ পাতায় ভিজতে ভিজতে ভালোর দিক হাঁটতেছে... অনুভব করতেছি, চারাটা আস্তে আস্তে বুকের হৃদপি-টা জড়ায় ধরেছে যেমন করে দেয়াল জড়ায় ধরে পরগাছা লতা।
আমার কষ্টে নাকি কনকলতারও কষ্ট হয়, বুক কাঁপে, খারাপ লাগে, মন ভালো থাকেনা, ফুলও ফোটে না।
তবুও, এইসব শীতের কুয়াশায় কারো উঠানে যেন না ফোটে বেদনার বিষফুল।
প্রেম এবং মৃত্যু
পুরোটা দিন নষ্ট হয়
জীবন ভাবতে ভাবতে...
আমার মধ্যবিত্ত বাবা
ওপাশ থেকে বলেন-
বাবা আর কতদিন!
আমি বলি-
বাবা, মা কেমন আছেন?
ভিতরে ভিতরে কিসের এতো প্রেম
আমার যে মৃত্যু হয় প্রতিদিন।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
শব্দমিছিল : জাহিদ আল হাসান
শব্দমিছিল
জাহিদ আল হাসান
জীবন
পানির সন্ধানে একটি তৃষ্ণার্ত কাক
আকাশে উড়তে উড়তে উড়তে উড়তে...
হঠাৎ মরে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়
ভুল
স্নায়ুযুদ্ধ শেষে ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়ে । দু’টি অচেনা হাতে জড়িয়ে রেখেছে প্রেমিকার বাহু-
এমন দেখতে দেখতে মূহুর্তে তার ঘুম ভেঙে যায় ।
অবিশ্বাসের বুকে ভারি পায়ে হাঁটে দীর্ঘশ্বাস।
বন্ধ মুঠোফোন। কালো ইনবক্স। ভয়। আত্মঘাতী রাত।
অথচ প্রেমিকার চোখে বইছিল এক লবণাক্ত জলপ্রপাত ।
বুক
এইসব পাঁজরের গভীরেও
অসহায় পড়ে আছে শূন্য ঘর
তৃষ্ণার্ত ঠোঁটের মতো
অনর্গল তোমারই কথা বলে...
তাই কামিনী শরীর ছোঁয়া হাতে
তোমাকেই গড়ি। যেনো-
নিশীথ রাতের আলোকিত মহারথী।
পৃথিবী কেবল প্রেম, নারী তার নদী
আহত হৃদয় বেয়ে- চলে নিরবধি।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
শব্দমিছিল : নূরে জান্নাত
শব্দমিছিল
নূরে জান্নাত
অস্থায়ী শব্দ
চন্দ্রভোগ আমাবস্যা থেকে পূর্ণাঙ্গ পূর্ণিমা পর্যন্ত আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে
তোমার জন্য।
কুয়াশা ঘেরা কনকনে শীতও কাঠ ফাটা রোদ্দুর জানে
আমি ক্লান্ত নই
তোমার পথ চেয়ে।
শরতের মেঘও
কালবৈশেখী ঝড় জানে
আমার হৃদয় প্রাচীরের পুরুর পরিমাপ!
সবি জানে ওরা
শুধু তুমিই জানো না
আমার যথার্থতা,
তুমিতো পুরুষ!!
ইভে প্ররোচিত তোমার
অপেক্ষা নামের অস্থায়ী শব্দ।
তোর তুলিতে
লিওনার্দোর মত আঁকিয়ে ফেল আমায়। আমার অরঞ্জিত চিত্র অপেক্ষায় থাকে তোর তর্জনীই অধর আঁকানোর।
আঙ্গুলেই আঁকাস আমার চিবুক নাকি তোর অধরে!
তোর ছবি আঁকবার দৃশ্য আমার ভালো লাগে খুব।
তুই যখন উদম বুকে
আমায় আঁকিস
তোর বাম পাজরে চোখের মাঝে অনেক রঙ থাকে!
আঁকানোর মাঝ পর্যায়ে যখন তোর চিপ থেকে এক ফোঁটা
ঘাম রঙের পাত্রে পরে
আমার ভারী মায়া জাগে।
আমি চাইলেই একটা পূর্ণ চিত্র হতে পারি! তোকে কষ্ট করে আর আঁকতেই হতো না! যদি আঁকতেই না পারিস
আমার আশকারায়...
তবে লিওনার্দোকে ছাড়িয়ে যাবি কি করে?
অভিমানের সীমান্তে
বদলে গিয়েছে তোমার পৃথিবী কাটা তারের এ প্রান্তে আমিও আমার চোখের জল!
তোমায় দেখলাম অনেকদিন পর! সেই তেমনই আছো
প্রথম দেখায় যেমন ছিলে! তবে চুলও গোঁফের কাঁচা পাকা ভাবটা আমার বুকের ব্যথাটা বাড়ালো; তুমি এখন পয়তাল্লিশ
আমি কুড়ি!
খুব বেমানান তোমার আর আমার সমান্তরাল হওয়াটা!
কি জানি!! মাঝে মাঝে আমি
কেন যে কেঁদে উঠি!
বলে দিতে ইচ্ছে করে সীমান্তের বেড়াজালের প্রতিটি ধাতুকে...
‘বলে দিও ঐ মানুষটিকে ..
ওকে সত্যিই আমি ভালোবেসেছিলাম। আমিও ফালানির মত
মৃতদেহে ঝুলে আছি অভিমানের সীমান্তে!
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
তুমি অথবা একখণ্ড সারল্য
তুমি অথবা একখণ্ড সারল্য
জাহাবী নোমিন
তুমি যখন উঠোনে রোদে শুকানো ধানগুলো পা দিয়ে নাড়িয়ে দিতে; মুখের ঘামগুলো যখন বাঁশির মত তোমার নাক বেয়ে বেয়ে খেঁজুর রসের মত টুপটাপ ঝরত; আমি কি দারুণ মুগ্ধতা নিয়ে তোমাতে ডুবে যেতাম; তোমার এমন সারল্য ভরা মুখ দেখে সাত জনম বাঁচতে ইচ্ছে করত । যদি সুযোগ হতো; তোমাকে নিয়ে এই পাড়াগাঁ ছেড়ে দূরে কোথাও ছোনের কুঁড়ে তুলে সংসার পাততাম । জানো পরী; তোমার জন্য আমার বেদম মায়া হয়; আমার অবুঝতা বেড়ে চলে । তোমাকে বোঝাতে পারিনা; আমার সবক হৃদকথন । কিছু একটা চেয়ে বসি তোমার মনের কাছে । পরী; তোমার ঠোঁটের নিচের দু’টো মিষ্টি তিলক; কি ভালো লাগার অভিপ্রায় জাগায় আমার । যদি তা ভাষাতে দিয়ে বর্ণনা করার সুযোগ হতো; তবে তাই করতাম । কেন জানি; এক আকাশ মুগ্ধতায় আমার ভাষাগুলো আটকে যায়; আমার কথারা লুকিয়ে পড়ে ইথারে ।
একদিন তোমার কাছ থেকে খুব শোনার স্বাদ হয়েছিল । আচ্ছা; আমি তোমার কে ? তুমি আমার কে ? বলতো একবার ।
তুমি বলেছিলে- আমি তোমার মন; তুমি আমার মন । তোমার এমন সরল কথা আমাকে প্রচ-রকমভাবে কাপিয়ে তুলেছিল । কি ভালো লেগেছিল আমার বোঝাতে পারবনা ।
এত সময় পেরিয়ে এসেও মনে হয়; তোমাকে বুকে তুলে নিয়ে আমি বেজায় সুখে আছি । আমি কি দারুণ বেঁচে আছি ।
জানো; পরী- তোমাকে এত্ত ভালো লাগার; ভালোবাসা কত উৎস খুঁজি আমি । তার ইয়াত্তা নেই । দিনের পর দিন আমার জন্য তুমি কত উৎসাহে অপেক্ষায় থাকো; কত পাবর্ণ চলে যায়; কত সবুজ পাতাগুলো ধূসর হয়ে যায় । নিদ্রাগুলো বিনাশ হয়ে যায় । তুমিও স্বকিয়তায় অনড় ছিলে ।
তুমি- কত সুন্দর করে আমাকে শুনিয়েছিলে যে- জানো পাগল; আমি তোমার কাছে কেন এসেছি ?
আমি সত্য মনে জানতে চেয়েছিলাম- কেন পরী?
তুমি বলেছিলে- কারণ তোমার মত করে আমাকে কেউ কোনোদিন বুঝতো না; তোমার মত করে এমন পরাণ খুলে কেউ ভালোবাসতো না । তোমার মত করে আমাকে কেউ কোনোদিন চায়নি; চাইতো । তুমি আমার রক্তে মিশে যাওয়া হিমোগ্লোবিন । তুমি আমার সাহস; তুমি আমার অণুপ্রেরণা । আমার উচ্ছ্বাস; আমার দেহের শক্তি; আমার সামর্থ । আমার পাগল মন ।
তোমার এমন মায়াজাগানিয়া কথা আমাকে কত পাগল বানিয়েছিল; কবি বানিয়েছে । তোমার জন্য প্রতি শব্দ সাজাই; কবিতা লিখি । পরী- তুমি তো থাকো কেবল আমাতে । আমার রক্তে; আমার শিরায় । আমার দেহে ।
পরী- আমি কি চাই জানো? আমি চাই- সর্বসময় আমার পাশে কবিতা হয়ে থাকো; গল্প হয়ে চলো । আমি তোমার প্রাণ খুলে ভালোবাসব; কাছে ডাকবে; বুকে তুলে ঘুম পাড়িয়ে দিব । স্ব-হাস্বে তুমি আমার দিকে তাকিয়ে বলবে- পাগল আমার !
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
লাবণ্য
লাবণ্য
জুয়েল মাহমুদ
জোনাকিরা চারদিকে মিটিমিটি আলো ছড়াচ্ছে। চাঁদের জোৎস্নায় চারদিক অপরুপ। যেন চাঁদনিপসর রাতের লাবণ্যময় আলো। পুকুরের পানিতে সেই চাঁদের আলো জ্বলজ্বল করছে। পুকুর ধারে বাঁশরি তার বাঁশি নিয়ে এই সুর তুলে হারিয়ে গেল এক অচিনপুরে। হঠাৎ ডানায় চড়ে তার সামনে হেসে খিলখিল করে হাসতে লাগলো এক কন্যা। বড় দুটো ডানা। মাথায় ফুলের খোঁপা। আজ অচিনপুরের বসন্তের প্রথম দিন। তাই এমন সাঁজ। বাঁশরি তার মন খেয়ালে সুর তুলেই চলছে। এবার কন্যা তার পাশে এসে বসলো। বাঁশরি তার বাঁশি বাজানো বন্ধ করে দিল।
কে তুমি কন্যা?
আমি এই অচিনপুরের লাবণ্য। তোমার বাঁশির সুর আমাকে উদাস করেছে। সত্যিই তুমি খুব সুন্দর।
আচ্ছা বাঁশরি তুমি কি আমার রাজ্যের রাজা হবে?
বাঁশরি বলল, আমি সামান্য বাঁশরি। কি করে তোমার রাজা হয়।
লাবন্য বলল, আমিতো আমার রাজা হতে বলি নাই তোমাকে। আমি বলেছি আমার রাজ্যের রাজা হতে। বাঁশির রাজা। তুমি আমাকে রোজ বাঁশি শোনাবে। তুমি যাবে আমার সাথে?
বাঁশরি বলল, আমি রাজি। কিন্তু কিভাবে?
লাবন্য বলল, আমার ডানায় উঠো। বাঁশরি তার ডানায় চড়ে রাজ দরবারে পৌছালো। সেই দরবারে আরও অনেক সুন্দরী কন্যারাও রয়েছে। বাঁশরি বলল, এরাও কি লাবণ্য? না, এরা আমার দরবারের দাসী, আমার খেদমত করে। এভাবে চলে গেল কয়েক মাস। বাঁশরির বাঁশিতে মুগ্ধ হয়ে উঠে লাবন্য। একদিন লাবন্য তার দরবারে বড় আয়োজন করল। অচিনপুরের পরীরা সবাই আসলো। বাঁশরির প্রেমে ব্যাকুল হয়ে লাবন্য ভোজ আয়োজনে বলল ‘হে বাঁশরি আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি কি রাজি?
বাঁশরি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সবাই তাকে স্বাগতম জানাতে শুরু করল। হঠাৎ ভোজ আয়োজনে ঝড় বইতে শুরু করল।মুহুর্তের মধ্যে সব যেন উদাও হয়ে গেল। কোথাও কোন চিহ্ন রইলনা। বাউলা মনে উদাসী হয়ে দিন কাটাতে লাগলো বাঁশরি। কোথাও চলে গেল লাবণ্য? কোথায় অচিনপুর? কোথায় অন্য পরীরা। শুধু ভাঙ্গাজোড়া দরবার। বাঁশরি সেখানে দিনকাটাতে শুরু করে। মাঝেমাঝে মনে পড়ে লাবণ্যের সাথে কাটানো সময়গুলো। মনে পড়ে চন্দ্রিমার রাতে তার কোলে মাথা রেখে বাঁশির সুর শুনে ঘুমিয়ে যেত লাবণ্য। তখন তার ঘুমের চেহারা দেখে সে বলত সত্যিই তুমি রাতের আকাশপটের চন্দ্রিমার লাবণ্য। তখন হাত দিয়ে তার চুলগুলো সাজিয়ে দিত। এসব কথা মনে পড়ে বাঁশরির। এভাবে কেটে যায় চার বছর। একদিন বাঁশরি দরবার থেকে দূরে জঙ্গলে হাটছে। হঠাৎ তার পায়ের সাথে কি যেন লাগলো। সে পাতা সরিয়ে দেখে ঝড়ের সময় হারিয়ে যাওয়া বাঁশি।
বাঁশিটি পেয়ে বাঁশরি খুশিতে আতœহারা হয়ে উঠলো। সে দৌড়ে সেই রাজদরবারে গেল। এবং যেখানে ভোজ আয়োজন হলো সেখানে বসে বাঁশিতে সুর তুলল। আর চোখের পানি ছেড়ে দিল। বাঁশির সুর অনেকদূর পৌছে গেল। দরবার থেকে অনেক দূরে একগুহায় ঝড়ের সময় স্মৃতিশক্তি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল লাবণ্য। বাঁশির সুর শুনে ডানায় চড়ে বাঁশরির সামনে এসে বলল- ‘হে বাঁশরি কে তুমি? বাঁশরি তাকে জড়িয়ে ধরে বলল ‘আমি বাঁশরি, তুমি আমার লাবণ্য’।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps
শব্দমিছিল : শামীম আরেফীন
শব্দমিছিল
শামীম আরেফীন
আজ তুমি হলুদ
হাওয়া
বৃষ্টির পর যতটা বাড়ে গাছের দেমাগ—তার চেয়েও অধিক সবুজ
তোমাকে দিয়েছে নিটোল বাড়াবাড়ি। 'ঘড় ঘড়' জড়িয়ে যাচ্ছে
ক্যাসেটের ফিতে। থাক তবে বাকি শব্দালাপ। হাত ফসকে ভেঙে
গেছে ঘড়ির মহড়া। সময় কি ভেঙেছে তাতে? কাঁটার পেছনে কাঁটা
সাদা কালো সাদা কালো ছুটে যাচ্ছে হাওয়ার মহল্লায়। তুমিও
আজ হলুদ হাওয়া। মেঘ থেকে তাড়িয়ে আনো—হিমেল হরিণের
ঝাক। অথচ পালক কুড়াতে এসে ঢুকে পড়েছি সেলুন ঘরে।
জোকস শোনানো অন্ধ নাপিত—ছেটে দিচ্ছে মাথাভর্তি ভিউকার্ড
তুমি কি ছোট হয়ে যাচ্ছো নৃ? ক্যাসেটে আটকে আছে ফিতে।
তোমাকে শুনতে পাচ্ছি না আর।
সার্কাস
একখানা অর্ধেক দুপুর—গোল হয়ে আছে
রাতের বৃষ্টিচিহ্ন তখনো স্থির
বিড়ালের ডাক মেখে নড়ে ওঠে বাতাসে
চুল থেকে চিরুনির যৌনতা ধুয়ে দিয়েছে মেঘ
অবশিষ্ট গন্ধের কাছে নত হয়ে আমরা
কতিপয় তরমুজ—শুয়ে আছি;
ফালি ফালি দেহভর্তি লাল সিনেমার শোরগোল।
ছায়া
ছায়া রোগ
ঘুমন্ত মানুষ হিসেবে তোমার গ্লাসের আরো অতলে গিয়ে
নড়ে উঠলাম। এ বাড়ি ও বাড়ি তুমি নাচাচ্ছো ঘুঙুর
দেখে—দুঃখ পাওয়া প্রসঙ্গে আমিও চুপ।
এভাবে মলিন দেখায় তোমাকে।
এই কড়কড়ে রোদের করাতে আর কাটছে না দিন। বোতাম
খসার পর খুলে রেখেছি প্রেমিকের জামা। তলপেটে চাপ চাপ
ব্যথায় মেখে আছে প্রতিহিংসা। ভরাট পথের উপর ওই
ছায়া ছায়া রোগ—টেনে নেয় আরো বেশি ঘুমের অতলে।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)