ইপেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ২০৪

ইপেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ২০৪

   তারুণ্যের শিল্প সরোবর ।। বর্ষ ৮ম ।। সংখ্যা ২০৪,

   শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪, ২৮ পৌষ ১৪৩০, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫ ।





























রূপান্তর

রূপান্তর

 


রূপান্তর

রাশেদ সাদী


এ এমন এক সময়, যা হাতে স্পর্স করা যাচ্ছে না, পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না; কিন্তু রয়েছে এর তীব্র অনুভব, কার্তিকের হাসফাস করা গরমে দৌড়ে হাঁপিয়ে ওঠার মতো, পানিতে ডুবে যাওয়ার এক অনুভূতি; হা করতে পারছ না পানি যাবে বলে, আবার ধরেও রাখতে পারছ না, গলগল করে পানি ঢুকে যাচ্ছে। এই দমবন্ধ করা পরিস্থিতির বয়ান দেবার চেষ্টা আমি অনেকবার করেছি। মনঃপূত হয়নি। আর এ জন্যই হয়তো আমি লিখে চলেছি। যেদিন মনে হবে আমি পেরেছি, সেদিন হয়তো ভাষার সঙ্গে এই যুদ্ধ আমার শেষ হবে অথবা অন্য রকম একটা সহাবস্থান তৈরি হবে। এসব পরিস্থিতিতে আগে থেকে আসলে কিছু বলা যায় না।   

বরং এ এমন এক সময় যখন শুধু কেঁদে ভাসিয়ে দিতে মন চায় নিজের ছোট্ট নৌকাটিকে। কারো সঙ্গে কথা বা দেখা হোক সেটা যেন মৃত্যুরও অধিক! এ এমন বোধ যার জন্ম মনের অপরিচিত কন্দরে। যেখানে শুধু একজন অশ্রুত, নিঃসঙ্গ মানুষের জায়গা ধরে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় জনের স্থান সংকোলান হয় না। এ এমন এক বোধ যা সেই ছোট্টকালের সমিরুদ্দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়।

সে সময় এমনই এক নভেম্বরের শীতে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল, হারিয়ে যাওয়া কফিলুদ্দিনের ছেলে সমিরুদ্দিন ফিরে এসেছে। তবে সে এখন আর কোন সাধারণ কেউ নন, অসাধারণ লোক। 

অসাধারণ লোক! 

তখন আমি ছোট। তবে পারিপাশির্^ক পরিস্থিতি বোঝা এবং তদনোযায়ী বুদ্ধিমতো ব্যবস্থা নিতে শিখে গেছি।

আমরা একটি খড়ের আগুনের স্তুপ ঘিরে বৃত্তাকারে বসে আছি আর আগুন উস্কে দিতে হাতের সেগুন গাছের লাঠির সহায়তা নিচ্ছি। আগুন দীর্ঘতর করতে এপাশের-ওপাশের বাড়ির ‘খড়ের পালা’ থেকে দুমুঠো খড় হাতিয়ে এনে আগুনের উপর ফেলছি। শুকনো মচমচে নতুন খড় পেয়ে আগুন দাউদাউ করে জ¦লছে। কুদ্দুস দাদা পাশ দিয়ে খুড়িয়ে যেতে যেতে বললÑ ‘সমিরুদ্দিন ফিরছে।’ 

সে এক খবর বটে! সমিরুদ্দিন ফিরেছে।

‘তাই নাকি!’ আমরা সবকটি ছেলেপোলে একযোগে চিৎকার করে ওঠলাম। কারণ শোনা গিয়েছিল একটা ঘিয়ে রঙের চাদর মুড়ি দিয়ে যে রাতে সমিরুদ্দিন স্থানীয় কবরস্থানে ঢুকে পড়ে, তারপর থেকে আর তাকে কেউ দেখেনি। সেদিন ছিল শোকাচ্ছন্ন এক শীতের রাত; কোয়াশায় ঢেকে গিয়েছিল চারদিক। ঘড়ির কাটা তিনটার ঘর অতিক্রম করে গেছে। 

সবুরুদ্দিনের সঙ্গে কেউ অপরিচিত ছিল না। কারণ সে রাস্তার মাঝে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যেত আর বাতাসকে শাসিয়ে চলত, ‘সর, পথ ছাড়! সড়ে দাঁড়া!’ অদৃশের দিকে আঙ্গুল তুলে সে চিৎকার করত। তারপর আবার চলতে শুরু করত। মানুষ বলতো, ‘ওসব জিন আর দেও-দানোর সঙ্গে ওর তক্ক।’ এসব বিষয়-আশয় ছিল সবুরুদ্দিনের জন্য স্বাভাবিক। তবে সে কোনোদিন নিজের মুখে বলেনি আমি জিন তাড়াই অথবা সে কোনোদিন কাউকে পানিপড়া বা তেলপড়া দেয়নি। তবে মাথায় তার সিট আছেÑ এমন কথাও কেউ কোনোদিন তার বিরুদ্ধে বলেনি। তাতে আমাদের ছোটদের মধ্যে তার সম্পর্কে এক ধরণের বিভ্রমের সৃষ্টি হয়েছিল।

তবে গ্রাম থেকে পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে কে বা কারা নাকি দেখেছিল সবুরুদ্দিন কবরস্থানে ঢুকছে; ঘিয়ে রঙের চাদরে মোড়ানো আর হাতে একটা লণ্ঠন। এরপর আর তার দেখা পাওয়া যায়নি। কত জন কত রকম কথা বলে তাকে নিয়ে। রোহিতন দাদি বলেছিল, একজন পরদানশীন পরী ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। তারপর তাদের দেশেই সংসার পেতেছে। ফলে আর কোনদিন সবুরুদ্দিনকে আমরা দেখব না।

এ জন্য দুঃখ ছিল সবচেয়ে বেশি আমাদের ছোটদের। কারণ আমরা যখন তার গ্রামের শেষকোণের বাঁশঝাড়ে ঢাকা বাড়িতে যেতাম, তাকে দেখতাম কাঠের ঘরের ছোট্ট জালনার একটা পাল্লা খুলে বসে আছে, আমরা যদি ডরভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাকে একটা মাটির ঢেলা দিতে পারতাম, সে সেটা বাতাসা বানিয়ে ফেরত দিত। যদি একটা পাথর দিতাম, সে সেটা মিষ্টি চকলেটে রূপান্তরিত করে হাতে ধরিয়ে দিত। আর এসব কারণে সমিরুদ্দিন নিয়ে আমাদের বিস্ময়ের অবধি ছিল না। আমাদেরই সমবয়সী আবু নসিব তার অভ্যাসবশত নাক খুঁটাতে খুঁটাতে বলেছিল, ‘এসব মজার মজার খাবার সমিরুদ্দিন কোথায় পায় জানিস?’ আমরা সবাই একবাক্যে বলি, ‘কোথায় পায়?’ ‘জিন এসে দিয়ে যান।’ 

নসিব এমন নিশ্চন্ত ভঙ্গিতে বলে, আমরা ধরে নেই এ না হয়ে পাড়েই না। নাহলে এসব সে পায়ই বা কোথায়? কোনো দিন তাকে বাজারে যেতে দেখি না, কোনো দোকানে যেতে দেখি না। ফলে বিভ্রমটা আমাদের হৃদয়ের তন্তুতে আরও শেকড়-বাকড় গড়িয়ে বসছিল। অথচ কোনোদিন আমাদের ভাবনাতেও আসেনি, তাহলে তার সদ্যনেভা চুলা, যেটা থেকে তখনও ‘ধিকিধিকি’ ধোঁয়া উঠছিল, সেটায় কী কিছু রান্না হয়েছিল?

আসলে এসব আমাদের মাথাতেই আসত না। আমরা তার ঢেরায় যেতাম ভিত-শঙ্কিত হয়ে, কম্পিত পদক্ষেপে।

এতসব খাবার যে আমরা পেতাম তার কাছে, তথাপি কচিৎ আমরা ও-মুখো হতাম। কারণ আর কিছুই না Ñওই ভয়। কীসে ভয় তা বলতে পারব না। কোনো দিন সমিরুদ্দিন আমাদের খালি-হাতে ফেরায় নি, কোনো দিন একটা ধমক দেয় নিÑ যতবার গিয়েছি তার হাসিমুখটিই দেখেছি। তারপরও সবসময় সেই অজানা ভয়ই আমাদের হয়েছেÑ যে জন্য আমরা তার কাছে বেশি যেতাম না। দল বেঁধে যদিও বা কখনো যেতাম দুরুদুরু বুকে, চলে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতাম। তার মধ্যে আমার ভয়টাই যেন ছিল বেশি। মনে হতো বুকে একটা পাথর চেপে বসেছে। ওখান থেকে চলে আসতেই সেই ভারী পাথরটা আস্তে করে নেমে যেত আর তখন সমিরুদ্দিনের দেয়া চকলেট মুখে রেখে চুষতে চুষতে বুক ভরে নিশ্বস নিতাম।

সেই সমিরুদ্দিন ফিরে এসেছে, শুনে আমাদের আহ্লাদের আর অবধি থাকল না। কিন্তু যেতে যেতে লেংড়া দাদা বা ‘বুইড়া কদ্দুস’ যা শুনালো তাতে আমরা হতাশ না হয়ে পারলাম না। 

সমিরুদ্দিন নাকি পীর হয়ে এসেছে। করো সঙ্গে দেখা দেয় না। দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে যে ঢুকেছে, তার আর দেখা নেই। যারা তাকে দেখেছে বলে দাবি করছিল, তাদের দু-একজনের কাছ থেকে নিজ কানে শুনেছে এমন একজন বলল, আবক্ষ দাড়ি আর গোঁফে ঠোঁট ঢাকা মুখ, মাংসহীন চোখের কোটরে বসে যাওয়া দুটো তারা এভাবে উচাটন হয়ে নড়ছে, যেন মায়াবী দুটো পাখী। খাচার দোয়ার খোলা পেয়েছে কি ওমননি উড়ে চলে যাবে। হাতে সাপের মতো আঁকাবাঁকা কালো লাঠি; মাথায় জোনাকির মতো একটা আলো জ্বলছিল।

তবে কে তাকে দেখেছে তা কিন্তু কেউ নিশ্চয় করে বলতে পারে না। তবে কেউ একজন দেখেছে, সে বলেছে। কে সে? তা আর জানার মতো সময় কই? কিন্তু সে যে এসেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। চোখে দেখাকে কি কেউ অস্বীকার করতে পারে?

প্রায় পড়ো ভিটের ঘরটিতে তিনদিন হল ঘোর রাতে এসে সে ঢুকে দোয়ারের পাল্লা দিয়েছে আর কেউ তাকে বের হতে দেখেনি। দোয়ারের নিচ দিয়ে কতজন কত রকম খাবার দিয়ে রেখেছে, সেখান থেকেও এক টুকরো রুটি পর্যন্ত নড়েনি। মিথ্যে বলব না, এতো মজার মজার খবার যে, দেখেই আমার জিবে জল এসে গেল।


উদগ্রীব জনতার সমাগম আরো বেড়ে গেল। এলাকার চৌহদ্দি পেরিয়ে এ সম্মোহন গিয়ে আছড়ে পড়তে লাগল আশপাশের গ্রামে। দলে দলে লোক আসতে শুরু করল। কিছু কিছু মানুষ সেই সকালে এলো, ফিরল সেই রাতে। কিছুতেই সে সমিরুদ্দিন পীরের মাজেজা না দেখে ফিরতে চায় না। হুট করে যদি বেরিয়ে আসে। কী ঘটবে কে বলতে পারে?

    পুরো এলাকা মানুষে গমগম করছে। এ উপলক্ষ্যে দুটো একটা চা-পানের দোকান বসেছে ওই বাড়ি কেন্দ্র করে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নিয়ে আরও কেউ কেউ আসার উদ্যোগ করছে। সেসব হঠাৎ হওয়া টঙ্গদোকানে বসে কেউ চায়ে চুমুক দিতে দিতে, কেউ পান মুখে পুরে দিয়ে, কেউবা আবার বিড়ি ধরাতে ধরাতে বুনো লতাপাতায় জড়িয়ে ধরা জীর্ণ বাড়ির দোয়ারের দিকে তাকায়, এই বুঝি সমিরুদ্দিন পীর মুখ বের করল।

    সমিরুদ্দিন একজন কামেল মানুষ। তার কাছে কত জনের কত কিছু চাওয়া। আমাদের ছোটদের চাওয়া কি কম। এবার বেশি বেশি মাটির ঢেলা দিয়ে বেশি বেশি বাতাসা নিতে হবে। ওসব ভয়টয় এখন অনেকটা কমে গেছে আমাদের। কিন্তু পীরসাহেবেরই যে দেখা নেই!

কয়েক দিন যেতে মানুষের সমাগম কমল বটে। কিন্তু কৌতূহল গিয়ে সেই আকাশ ছুঁলো। দূর-দূর থেকে লোকজন আসছে। এটা-ওটা মানত করে যাচ্ছে। মুরগী, আতপ চাল, ছাগলমাই এসে গেল মানতের। এমনকি এসব সুশৃঙ্খলভাবে চালাতে স্বেচ্ছাসেবক দলও গঠন করা হয়ে গেল।

কিন্তু মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ যেন কিছুতেই মানতে চায় না। তারা তাদের কাক্সিক্ষত মানুষটির মুখদর্শন করতে চায়, মাজেজা দেখতে চায়। ধীরে ধীরে সেই কৌতূলহ গিয়ে পড়ল ওই পড়ো ভিটের উপর। জড়াজির্ণ ওই ঘর অতো কৌতূহলের ভার সইতে পারে! 


ওটার ভেতরে আসলে সমিরুদ্দিন আছে? নাকি নেই? এই নিয়ে মানুষের মধ্যে দুই ভাগ হয়ে গেল। শেষমেশ মানুষের কৌতূহলই জয়ী হলো। কারণ এ এমন এক তৃষ্ণা যা আর কিছু দিয়ে মেটানো যাচ্ছিল না। সিদ্ধান্ত পাঁকা হলো, দোয়ার ভাঙা হবে। কিন্তু কে করবে এ কাজ? কার এতো সাহস?

সেদিন লক্ষাধিক মানুষ জমা হল বাড়িটি ঘিরে। লোকে লোকারণ্য। স্বেচ্ছাসেবক দলের হিসশিস দশা। আমাদেরর ছোটদের উপরেও কিছু কিছু দায়িত্ব এসে পড়লো। অনেকের মতো আমার দায়িত্ব পানির জগ আর গ্লাস নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। দর্শনার্থী পানি চাইলে মানি বাড়িয়ে দেওয়া। 

চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ওয়ার্ডের মেম্বার শাবল নিয়ে আসতে বললো। শাবল এলে সেটা তুলে দেয়া হলো মহল্লার মাতুব্বর মহর আলীর হাতে।

মহল্লার মাতুব্বরের হাতে জীর্ণ বাড়িটির, ততধিক ভঙ্গুর দোয়ারে শাবল পড়ছে। চারদিকে পিনপতন নীরতা। দেখে মনে হবে, এই কিছুক্ষণ আগে যে এখানে একটা উত্তাল সাগর ছিল, তা মুহূর্তের ব্যবধানে মুছে গেছে। আমি জগ আর গ্লাস নিয়ে বড়দের ফাঁকফোর দিয়ে শরীরটা ভেঙে-চুড়ে একদম দোয়ারের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালাম। কোনো শব্দ হচ্ছে না শাবলের আঘাত আর বাঁশঝাড়ের সরসর ছাড়া। 

দোয়ার দেখা গেল যতটা ঠুনকো মনে করা হয়েছিল ততটা না। সারি গজারির কাঠের দরজা। টাকডুম টাকডুম করে বাড়ি পড়ছে আর দোয়ার কুম্ভকর্ণের মতো নির্বিকার।

মহর মাতুব্বরের পঞ্চাশ উর্ধ্ব দেহের যে এ কম্ম না, সেটা বুঝতে পেরে তপন খুলে যাওয়ার ছুতোয় শাবল আইজুদ্দির হাতে তুলে দিল। আইজুদ্দি বছর পচিশের তাগড়া যুবক। সব সময় মৌজ-মাস্তি নিয়ে থাকে। তার কাছির মতো পাকানো শরীরের দুই-চার ঘা পরতেই দোয়ার খুলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে মৃদু একটা রব উঠল। সবাই যেন একসঙ্গে কথা বলে উঠল। যে যা নিয়েই কথা বলুক সবার কৌতূহল ওই ঘরের দোয়ারের দিকে।

চেয়ারম্যান সামসুজ্জুহা ম-ল তার কাচা-পাঁকা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে মেম্বার আর মাতুব্বরকে বললেন, কাউকে পাঠান ভেতরে?

এ কথার পর পুরো এলাকাজুড়ে সেই পূর্ব নিরবতা নেমে এলো। কেউ সামনে এগোচ্ছে না। একজন আরেক জনের দিকে তাকায় ‘তুই যা, তুই যা’র মতো করে।

অগত্যা আইজুদ্দিই বিরক্তমুখে তার মারওয়ারী ঘোড়ার মতো শরীরে একটা এগুয়ে বাঁক তুলে একলাফে ভেরতে চলে গেল। আইজুদ্দি পরে আমাদের গল্পচ্ছলে বলেছিল, ভেতরে গিয়ে দেখে সুন্দর করে একটা ছালার বিছনা পাতা। একলাফে ভেতরে গিয়ে, দ্বিতীয় লাফে বিছনায় শুয়ে রীতিমতো একটা ঘুম দিলাম। 

এরপর প্রায় আধা-ঘণ্টা তার কোনো খোঁজ নেই।

এদিকে রটে গেল সমিরুদ্দিনের ঘরে ঢুকে আইজুদ্দি নাই হয়ে গেছে। গুজব বলে কথা; দাবানলের আগে যার গতি, সঙ্গে আরও রঙ মেখে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে গেল সেই কেচ্ছা।

আইজুদ্দির মা ‘হায় হায় আমার পোলাডারে...’ বলতে বলতে ফিট খেল। ওদিকে আইজুদ্দি তো সমিরুদ্দিনের ঘরে আয়াসে নাক ডাকাচ্ছে। হঠাৎ চিৎকার-চেচামেচিতে তার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ রগড়াতে রগড়াতে বেরিয়ে আসে। তাকে দেখে মানুষের মধ্যে আবার নীরবতা নেমে আসে। আইজুদ্দির মা মানুষের ভীড় ঠেলে এসে ছেলেকে জাড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয়। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে, গাব হয়ে যাওয়া আইজুদ্দিকে পাওয়া গেছে। দেখে মনে হলো সে ঘুমাচ্ছে তার মুখের ভাব ছিল এমন! 

অদৃশ্য হলে মানুষের এমন হয় বলে সবাই ধরণা করে নিল সবাই। কারণ কারো যেহেতু অদৃশ্য হওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। ফলে এমন একটা ধারণা মুখ থেকে পড়তে-না-পড়তেই মানুষ লোফে নিল। তখন অবশ্য আইজুদ্দিনও এ বিষয়ে আর কিছু বলেনি। বলবে আর কী? আতঙ্কিত মাকে সামলানো তার দায় হয়ে গেছে। মা ছেলেকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছে। আইজুদ্দিন মাকে নিয়ে কোনো মতে জমায়েত থেকে সরে এলো।  

সে দোয়ার থেকে সরে আসায় অন্যদের সুযোগ হলো ভেতরে প্রবেশ করে কৌতূহল নিবারণের। কিন্তু ভয় সেই আদিম প্রবৃত্তির নামÑ যা মানুষকে, মানুষের চিন্তাশক্তিকে বিকল করে দেয়। আর সেই বস্তু যদি বড়দের সংক্রমিত করে তাহলে আর দেখহে হচ্ছে না। গোটা জনপদ অচল হয়ে পড়ে। সেটা যে কতটা ভয়াবহ এই প্রথম আমি নিজ চোখে দেখলাম। ওই রহস্যময় ঘরটিতে আর কেউ যেতে সাহস করল না। তবে মুহূর্তকালের ব্যবধানে সেই সুযোগ আর থাকল না। ইতোমধ্যে লাল নাইলনের রশি দিয়ে ঘেরাও করে ঘরে গণমানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এর কিছু দিন পর, আমাদেরকে রসিয়ে রসিয়ে গল্প বলল আইজুদ্দিনÑ

আরে কীসের কী! ভিতরে এক্কেবারে খালি। কিচ্ছু নাই। ফাঁকা। খালি একটা বিছনা পাতা দেখলাম। আমার আর মন মানল না। দপ করে বিছনায় পড়ে নাক ডাকায়া একটা ঘুম দিলাম। এই তো, ব্যস! এরে গাব-টাব করে দিয়ে কত কী বানায়া ফেলছে মানুষ। আরে পারেও মানুষ!

এই গল্প বলার আরও কিছু দিন পর, আইজুদ্দি সত্যি সত্যি গাব হয়ে গেল। কেউ আর কোনো তার হদিস পেলো না। ছেরের নাম জপতে জপতে তার দিছুদিন পর আইজুদ্দির মাও পাগল হয়ে কোথায় যেন চলে গেল। তাদের সংসার বলতে তো ওই আইজুদ্দি আর তার মা। যেভাবে একদিন কোথা থেকে উড়ে এসে গাঁয়ের পড়ো ইশকুলবাড়িতে জুড়ে বসেছিল; ঠিক সেভাবেই একদিন আইজুদ্দি আর তার মা গাঁ থেকে হাওয়া হয়ে গেল। এসেছিল একসঙ্গে, চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেল বিচ্ছিন্নÑ আগমন আর নিরগমনে তফাতটা ছিল এই। এবং কিছুদিনের মাথায় তাদের কথা ভুলও গেল গাঁয়ের সবাই।


রয়ে গেল কেবল সমিরুদ্দিন পীরের মাজার।

হাজার হাজার গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে এখানে এখন মানত দিয়ে যায়। যেখান থেকে এক সময় অদ্ভুদ জাদুবলে আমরা মিষ্টি চকলেট আর বাতাসা পেতাম, সেখানের সেই মিষ্টি জাদুগরটি আর নেই। সে এখন পীর, ছায়া পীর, মানুষের থেকে গ্রহণ করে ছাগাল-মুরগি-ডিম-চাল; প্রতিদান হিসেবে তাদের দেয় সন্তান, বিপদ থেকে মুক্তি আরও ইত্যাদি কারবার। সেখানে আমরা ছোটরা কতই না উপেক্ষিত। 

এলাকার গণমান্য লোকদের নিয়ে ইতোমধ্যে একটি মাজার কমিটি গঠন করা হয়ে গেছে। তারাই এখন এটি রক্ষণাবেক্ষণ করে, পরিচালনা করে। মাজারের ধারে-কাছে আমাদের ছোটদের ভিড়তে দেওয়া হয় না। কিন্তু আমি ঠিকই একরাতে কায়দা করে সেখানে ঢুকে পড়েছিলাম।


গভীর রাত। চারদিকে কুয়োর মতো নীরবতা। এমনকি পাখিদের বাসায় তাদের নড়াচড়া পর্যন্ত থেমে গেছে। প্রহরী-ভক্তরা বেদম সিদ্ধি টেনে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। তখন আমি শার্লক হোমসের মতো বেড়াল পায়ে এসে সমিরুদ্দিনের ঢেরায় ঢুকে পড়লাম। হাতে একটা ছোট্ট টর্চ, যেটা আমি হাত দিয়ে ঢেকে খুব কায়দা করে জ্বালিয়ে এগিয়ে গেলাম।

সমিরুদ্দিনকে এভাবে দেখে আমার দুঃখে কান্না চলে এলো। যে আমাদের বাতাসার জাদুকর, চকলেটের জাদুকর; জলচকির উপর তার মলিন একটা চটের বিছনা। এতে শুয়ে সমিরুদ্দিনের পা নিশ্চয় চকির বাইরে চলে আসতো। আড়াআড়ি একটা বাঁশের আড়। যেখানে আছে বলতে একটা ময়লা উড়না; হয়তো ওর মার। সমিরুদ্দিনের মা-বাবাকে আমি কোনোদিন দেখিনি। তার নিশ্চয় বোন ছিল, চাচা ছিল কিংবা অন্যান্য আরও আত্মীয়। তার বাবা-মা কেন কোনো আত্মীয় যে তার থাকতে পারে, তখন আমার মনেই হয়নি। চির নিঃসঙ্গ মানুষটিকে আমি এভাবে দেখেই অভ্যস্ত ছিলাম। 

যখন সেই উড়নাটা দেখলাম, তখন আমার খটকা লাগল, উড়নাটা কার? তার মা’য়ের? নাকি অন্য কারো? সে খবর আমার কোনোদিনই জানা হবে না। তবে এটা যে এক নারীর, তাতে আমি একশো ভাগ নিঃসন্দেহ। এ থেকে এই ধারণায় আসা যায়, বাড়িটিতে নারী ছিলেন বা নারীর গমনাগমন ছিল। এছাড়া ঘরে ছিল বলতে সাদা ছেড়া একটা লুঙ্গি। দোয়ারের পাশে একটা মাটির হাড়ি, তলানিটা মাটিতে বসে গিয়ে গোল বৃত্ত তৈরি করেছে; শুকনো খটখটে মাটির ভেতর তলা ডুবিয়ে দেয়ালের দিকে কাত হয়ে বসে আছে সেটা। 

দরজার উল্টো দিকের দেয়ালে ধর্ণা থেকে ঝুলছে একটা কাঠের টুকরো। সেখানে কতগুলো বই। পুরো করে ধুলো জমে আছে। বিভিন্ন রান্না আর মিষ্টি বানানোর নিয়মের একটি বইও ছিল সেখানে। সেখান থেকে নিয়েই একাডিমেকি বইয়ের বাইরে আমি জীবনের প্রথম বইটা পড়ি, দ্বিতীয় বইটিও। এটি ছিল কাউন্ট অব মন্টিক্রিসটো, অন্যটি রবিবাবুর ডাকঘর। আজ আমি কিছুতেই মিলাতে পারি না, সমিরুদ্দিনের ঘরে, যে কি-না পীরে বলে পরিচিত, তার ঘরে এসব কী করে এসেছিল!

অতঃপর সম্ভবত সেই ঘরটি বা ওই বইগুলো আমার ভেতর কী একটা রেখে যায়। যা আমাকে ক্রমেই সবার থেকে আড়াল খুঁজতে শেখায় এবং নিঃসঙ্গ করে তুলতে থাকে। ঘরটিতে জালনার কাছে রাখা ছিল সেই বিখ্যাত চেয়ার যেখানে বসে তিনি আমাদের বাতাসা দিতেন। একটা ভাঙা কাঠের সাদামাঠা চেয়ার সেটা, একটা হাতল ভাঙা।

ঘরে মনে হলো কেউ কথা বলে উঠল। আমি চমকে উঠে প্রায় চিৎকার দিয়ে উঠলাম। পরক্ষণেই দেখি ঘুলঘুলিটা দিয়ে হু হু করে বাতাস আসছে। ঘুলঘুলি দিয়ে বাতাস ঢোকার ফলেই এই শব্দ। বাতাসের তোড় যখন বেড়ে যাচ্ছে, ওই ঘুলঘুলি থেকে তখন এক ধরণের গোঙানির মতো আওয়াজ বেরুচ্ছে। তাই আমি বিভ্রমে পড়ে মনে করেছিলাম কেউ বুঝি পেছন থেকে কথা বলে উঠেছে।

সেদিন যদি চিৎকারটা দিয়ে উঠতাম আমার কী হতো জানি না। হয়তো আইজুদ্দির মতো আমিও গাব হয়ে যেতাম। তার চেয়েও বড় কথা, যদি নাই যেতাম ওই সমিরুদ্দিনের ওই সহস্যময় ঘরে, তা হলে কী হতো? হয়তো কিছুই হতো না। তবে বেঁচে থাকার এই দীর্ঘতম পথে সম্ভবত সেই রাত, সেই ঘর আমাকে আজও ওই নিঃসঙ্গ রাজার চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে, যার একটি হাতল ভাঙা, তা হয়তো আর হতো না।

সমরিুদ্দিন; আমাদের হারিয়ে যাওয়া মিষ্টির জাদুকর; আজ অবশ্য মিষ্টিই খেতে পারি না, ডাক্তারের নিষেধ, তাকে এভাবে আমার জানাই হতো না। আমার কেন যেন শুধু মনে হয়, মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন সমরিুদ্দিন নিজের নৌকাটা পৃথিবীর গোপনতম ¯্রােতে ভাসিয়ে দিয়ে একটি বই নিয়ে বসেছে। যে একদিন জাদুবলে একটি পাথরে পরিণত হয়েছে। যে পাথর ঝরঝর করে কাঁদছে।  

আমি সমিরুদ্দিনকে যদি বুঝে থাকি তাহলে আমিও তাই; আরেক সমিরুদ্দিন। আদতে আমরা নিজেদের কাছে আশ্রয় নেওয়া সেই নাবিক, যাদের জাহাজ মাঝ দরিয়ায় ডুবে গেছে; তাও সেই জন্মাবধিই। আমি কিংবা সমরিুদ্দিনÑ কেউ হয়তো কোলাহল, হৈ-চৈ পছন্দ করি না। সমিরুদ্দিনের মতো একদিন আমিও হয়তো পাথরে পরিণত হবো। কিন্তু কিছুতেই চাইব না আমার শেষ আশ্রয়টা একটি কোলাহলপূর্ণ, হইচইয়ের স্থানে পরিণত হোক। 


পুতুল বউ

পুতুল বউ

 


পুতুল বউ

দিপংকর দাশ


রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছুটে যেতাম তেঁতুল গাছের তলায়। মগডালে চড়ে তেঁতুল পেরে পকেট ভর্তি করে বসতাম পুকুর পাড়ে। আগে থেকেই পকেটে কাঁচামরিচ আর লবণ ভরে রেখেছিলাম। এবার তেঁতুলের সাথে এগুলো মিশিয়ে খেতাম। অত্যন্ত ঝাল। জিভে জ্বালাপোড়া করতো। তবুও এর স্বাদ বলার মত নয়। রিংকু আর সুমন দুটোই ঝগড়াটে। কথায় কথায় ঝগড়া করত। কখনো রিংকু সুমনের তেঁতুল কেড়ে নিত আবার কখনো সুমন রিংকুরটা কাড়ত। ঝগড়া থামাতে বেগ পেতে হত আমায়। যেভাবেই হোক থামাতাম। খাওয়া শেষ। মায়ের ডাকডাকি। বাড়ি ফিরে আসতাম। ওরাও নিজেদের বাড়ি চলে যেত।


খাওয়া দাওয়া শেষে স্কুলে যাওয়ার সময় আবার একসাথে তিনজন। নানান গল্প আর কোথায় কি আছে চুরি করার পরিকল্পনা করতে করতে স্কুলে গমন। স্কুল থেকে ফিরে মায়ের সাথে খাওয়া। খাওয়ার পর কি আর মায়ের কথা কানে আসে? ছুটে গেলাম নদীর পাড়ে। রহিমুদ্দিনের ডিঙিতে চেপে তিনজন গেলাম পদ্ম বিলে। কুড়িয়ে নিলাম অনেক পদ্ম। আসার সময় আবার ঐ দুই শয়তানের ঝগড়া। এক সময় রিংকু ধাক্কা মারে সুমনকে। সুমন পানিতে পড়ে যায়। টেনে তোলার দায়িত্ব তো আমারই। তুললাম টেনে নৌকায়। কোনো রকম তীরে আসলাম। পদ্ম দিয়ে মালা তৈরী করলাম।


এদিকে সিঁথি, ডলি, কেয়া আর সঞ্চিতা মিলে তৈরী করে পাতার ঘর। ওদের কাছে মালা নিয়ে হাজির হই আমরা। এক নতুন ধরণের খেলা আবিষ্কার করেছে সিঁথি। খেলার নাম পুতুল-বউ। বউ সাজবে সিঁথি আর বর কে হবে তাই নিয়ে চলছে যুদ্ধ। কিন্তু সিঁথি যাকে বলবে সেইতো হবে বর। সবার মুখ বন্ধ করে সিঁথি আমাকেই বর হিসেবে বেছে নিলো। আহ! পরম তৃপ্তি পেয়েছি আমি। খুশিতে আকাশে চিল হয়ে উড়তে ইচ্ছে করছে আমার। সিঁথি একটি শাড়ি পড়ে মাথায় পাতার তৈরী মুকুট পড়েছে। দেখতে পরীর চেয়েও সুন্দরী মনে হয়েছে ওকে। মন জুড়িয়ে গেলো।


রিংকু আর সুমন মিলে আমাকেও বর সাজাচ্ছে। পাঞ্জাবী পড়লাম। মাথায় ফুল আর পাতার তৈরী মুকুট। দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে আমাকে, রিংকু বলল। আমরা পাতার তেরী ঘরে (কনের বাড়িতে) পৌঁছে গেলাম। ওরাও তৈরী। বিয়ে শুরু। বিয়ে পড়াচ্ছে সুমন। তারপর কত্ত মজা হলো। পুতুল বউ খেলাটা আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় খেলার মধ্যে একটি। কেননা এই খেলার মাঝেই আমি সিঁথিকে বউ হিসেবে পেয়েছিলাম।


আজ আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষে। সিঁথিও। আমি বৃন্দাবন সরকারি কলেজে আর সিঁথি মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে। মনে পড়ে মাঝে মাঝে। কিন্তু কথা হয় না সাত বছর ধরে। হয়তো কাউকে পেয়ে গেছে মনের মতো। আমাকে ভুলে গেছে। কিন্তু আমি ওকে ভুলতে পারি নি। ভুলবও না। যখন চাকরি পাবো ওকে বিয়ে করবো সবার অনুমতি সাপেক্ষে। জীবনের প্রথম যাকে পুতুল বউ হিসেবে পেয়েছি আজীবন পেতে চাই ওকে, আজীবন।


পদাবলি : ০১

পদাবলি : ০১


 


এমন কইরা কেউ যায় 

জিয়া হক



তুমি হারাই গেছিলা সে-ই ভালো ছিল

দুই যুগ পর ক্যান আইসা ধরা দিলা তাও পূর্ণিমা চান্দের মতো

শুধু দূর থেইকা মুগ্ধ করো


ধার করা টাকায় কেনা আমার ছোট্ট লাল সাইকেলও হারাই গেছিল

কই আমি তো তার জন্য কান্দি না

দুঃখ করি না

মায়াও করি না


হারাই গেছিল আমার শিল্পীও যার আঁচল দিয়ে আমার মুখ মুইছা দিতো

স্কুলে টিফিনের সময় মুখের চকলেট কামড়ে ভেঙে অর্ধেক আমারে দিয়া দিতো 

কই আমি তো তার জন্যও কান্দি না

তারে মনেও করি না


আমার মা আমারে ইলিশ মাছের ডিম খাওয়াই দিতো

ঘুম থেকে তুইলা জোর করতো এক গ্লাস দুধ খাওয়ার জন্য

এহন মা’রেই খাওয়াই দিতে হয়

কই আমি তো মা’র জন্যও কান্দি না


আমি কান্দি না আমার সন্ধ্যা নদীর জন্য

যেই নদীর রূপ-ঢেউ আমারে পাগল করতো 

ফুল যেমন পাগল করে ভ্রমরকে প্রজাপতিকে


আমি কেবল তোমার সাথেই পারলাম না

তুমিই আমার ঘুমের মধ্যে ‘আপু আপু’ বইলা কাইন্দা ওঠা 

সেই দুই যুগ আগের রাবেয়া বসরি


তুমি এমন ক্যান কও তো

তুমি কোন দুঃখে আমারে ফালাইয়া

সাত সমুদ্রের ওপারে চইলা গ্যালা

এমন কইরা কেউ যায় ?

আইলা-সিডরও তো এমন কইরা কাউরে ভাইঙা-চুইরা যায় নাই!



কতভাবেই না পুরুষকে দেখো

ইয়াসিন আরাফাত 


নারী তুমি কতভাবেই না পুরুষকে দেখো

নারী তুমি কতভাবেই না প্রেমিককে দেখো।


কখনও সিদ্ধ ভাতের মতো থেঁতলে থেঁতলে দেখো

কোথাও শক্ত আছে কিনা।

কখনও টাকার মতো উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখো

কোথাও ছেঁড়া আছে কিনা।

কখনও কাপড়ের মতো নিংড়িয়ে নিংড়িয়ে দেখো

কোথাও জল আছে কিনা।


অথচ যেভাবে দেখার সেভাবে দেখো না;

পথের বালির মতো উড়িয়ে উড়িয়ে দেখতে পারো না?

আউলা বাতাসে প্রেমিক তোমার উড়ে যায় কিনা।

ফেনিল সমুদ্রে চিনির মতো নেড়ে নেড়ে দেখতে পারো না?

সাধু প্রেমিক তোমার নোনাজলে মিশে যায় কিনা।

দেখতে পারো না ঝরা পাতার মতো শুকিয়ে চৈত্রের রোদে?

রসিক প্রেমিক তোমার মর্মরে হয়ে ওঠে কিনা।


নারী তুমি প্রেমিককে কতভাবেই না দেখো

কেবল যেভাবে দেখার সেভাবে দেখো না।



দু’টি কবিতা

নুরুল ইসলাম তানঈম 


হৃদয় 


আকাশের নীলের মতো ছিলো আমার হৃদয়

বিশালাকার ও প্রসস্থ। 

তুমি,

সংকুচিত করে গুটিয়ে ফেলেছ

লাল শাড়ীর আঁচলের বৃত্তে!


নিষ্ঠীবন 


নিষ্ঠীবন ভাইবা থুক করে

ফেলে দিলে তুমি

অথচ,

আমি ততটা তুচ্ছ ছিলাম না;

যতটা তুচ্ছ করেছ তুমি!



আত্মহত্যা

শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া জয়


আত্মহত্যা মহাপাপ সে’তো বহুজনেই বা করে

কেহ বালুচর কেহ বা বিষাদের ঝড়,

জপে বেড়ায় বিষাদের নীল-জলাশয়।

                 তবে বা কেনো? 


মানুষ মরণশীল! আগ শেষে মরিবে আহা

তবে মৃত্যুর লাগি কাম্য যেনো,

দুয়ারে-দুয়ারে মৃত্যু জপে আলিঙ্গন পেতে সচরাচর। 


তরুলতা ঘেরা উদ্ভিদ-শেবাল বাঁচিয়া রয় প্রাণী,

বেঁচে রই মোরা।

স্বাদের জীবন বাঁচিবে যাহা দুঃখ-বিলাস আমাদের জীবন। 


অপ্রিয় হই প্রিয় বলে, অতৃপ্ত তৃপ্তির স্বাদে

হঠাৎ জীবন থমকে যাবে নিশ্চিত জেনেও, অনিশ্চিতের ভিড়ে।

তবু মিছেমিছি বিষন্ন কুঁড়ে খায় আত্মহত্যার চোবলে

তবুও দুয়ারে-দুয়ারে মৃত্যু জপে আলিঙ্গন পেতে সচরাচর।


মধুচন্দ্রিমা

এম সোলায়মান জয়


এক ভরা পূর্ণিমা রাতে হোক আমাদের মধুচন্দ্রিমা

পূর্ণিমার আলোয় আদম-হাওয়ার মতো

গভীর হোক আমাদের মিলন

ও আমার অপরূপা প্রেয়সী

লাল শাড়ির গভীরে তোমার লুকানো প্রেম

আমি জোঁকের মতো নীরবে চুষে নেব

গভীর চুম্বনের আস্বাদনে একাকার হব দুজনে

ইতিহাসের মতো অমর হবে আমাদের প্রেমকাহিনী।


চন্দ্রিমার উজ্জ্বল আলো এসে পড়বে

তোমার দুধবরণ কেন্দ্রনিন্দুতে

স্বেদ কপালে একে দেবো তিলক চুম্বন

কৃঞ্চকাজল চোখে পরিয়ে দিব মায়ার শিকল

আকাঙ্ক্ষার অসীম গহ্বরে হারিয়ে যাব দুইয়ে

কামনার সুখানুভব আগুনে পোড়াবো শরীরের আত্মা

হাত ধরো ও আমার স্বপ্নরাজ্যের সুকেশিনী

আলিঙ্গনে স্বাগত জানাও তোমার রূপের গৌরবে

দেখ-সহ¯্র শতাব্দীর পর প্রথম ভরা পূর্ণিমা জেগেছে

চিরচারিত উদ্দ্যোম ভালোবাসায় আজ হোক 

আমাদের মধুচন্দ্রিমা।


প্রতীক্ষা

হুসাইন আহমদ 


ভরা কার্তিকের দিন

ভিষণ ঠান্ডায় জবুথুবু হৃদয়ের চৌহদ্দি


আলগোছে তোমাকে ছোঁবো বলে

আমার কালান্তরের প্রতীক্ষা

দ্যাখো, কী গভীর হাহাকারে আকাশে 

ওড়ে বিষণ্ন প্রেমিকের দীর্ঘশ্বাস


নাভিফুলের সেই জলছাপ চিত্র 

এবং বুজে আসা কৈশোরিক প্রেমের ঋণ

তোমাকে ছোঁবো বলে আমার জন্মান্তরের প্রতীক্ষা


মেয়ে, সেলুলয়েডের রঙিন ফিতায় তুমি বন্দী 

তোমাকে ছুঁয়েও ছুঁতে পারি না কোনোদিন।


যদি কেউ বলে

হোসাইন জাহান


যদি কেউ বলে

নিষিদ্ধ হোক তোমার ধূসর পদচিহ্ন

দহনদিনের কোলাহলে,

তবে আর চাইবনা বৃষ্টি, জোছনা মাখা রাত

এ নির্মল নিভৃত কোলে।


যদি কেউ বলে

উদাস ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ভিজবে না

নিঃশব্দ একাকীত্বের ভীড়ে,

তবে দুঃস্বপ্ন নিয়ে নির্বাসিত হবো

শেষ রাত্রির তিমিরে।


আফ্রোদিতি ও আমি

দ্বীপ সরকার


একবার আফ্রোদিতির সাথে আমার দেখা হয়েছিলো

চলন্ত সিঁড়ির ওপরেÑসিঁড়ির ঝাকুনিতে আমাকে

ঝাপটে ধরে সামলাতে পেরেছিলো বটে


আরেকবার দেখা হয় মান্না দে’র গানের আসরে

তখন রাতের আকাশ খুব করে ডাকছিলো

‘এই আফ্রোদিতি এই আফ্রোদিতি’

আমি চিনে নিলাম তাকে


মানুষকে খুব করে চেনা যায়

যদি তার ভেতর আয়না থাকে


আফ্রোদিতির ভেতর 

ভিষণ রকমের একটা আয়না আছে

ভিষণ রকমের পৃথিবী আছে


শহরের পিচঢালা পথে আঙুরের মতো

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টসটসে স্মৃতির ভেতর

আমরা গভীরভাবে জড়িয়ে গেলাম


পদাবলি : ০২

পদাবলি : ০২

 



নস্টালজিক প্রতিপক্ষ 

মাসুদ চয়ন


প্রতিপক্ষের ঘাস লতা ও গুল্ণগুলো আজও আমাকে ভালোবাসে দৃঢ় চিত্তে

প্রতিপক্ষের নদী তীর হতে আজও বিরহী গন্ধ ভেসে আসে

গিড়িখাত ও মরুদ্যানে বেদনাব্যাঞ্জক প্রতিধ্বনি প্রবাহিত হয়

বিষন্ণ মেঘের আনাগোনায় নিস্তব্ধ হয়ে ওঠে সন্ধ্যার বাতাস

সন্ধ্যার সবথেকে শৈল্পিক অনুসঙ্গগুলো আমাকে খোঁজে

আমার জন্য কাঁদে 


সন্ধ্যা ছেড়ে শূন্যের দিকে হেলে যাচ্ছি ক্রমাগত

অশ্রু ঝরিয়োনা একা পাখি নীল কস্তুরি

আমিও ভালোবাসি

সত্যি ভালোবাসি


এই তো শীত আসি আসি করছে

সন্ধ্যা মাখানো নির্জন ছায়াঘন শৈত্য আমেজ

কুয়াশার নির্জন ¯্রােতে মৃত্যু গন্ধের স্বাদ নিবো ভাবছি

সন্ধ্যা ছেড়েছি তাই রাতের উদ্দেশ্যে...


মৃত্যু নিয়ে খেলতে ভালো লাগে

মৃত্যুর গালিচায় ভেসে ভেসে বিরহ কাতর যাপনে সিদ্ধহস্ত হয়ে বেঁচে থাকতে চাই...

কে চায় নস্টালজিক প্রতিপক্ষের অশ্রু ঝরাতে রক্ত ঝরাতে!!



গ্রেনেড ও স্বাধীনতার গল্প 

জাহিদুল ইসলাম 


আমি স্বপ্নে দেখলাম একটা কালো গ্রেনেড আমাকে দৌঁড়াচ্ছে। কেবল দৌড়াচ্ছি। দৌড়াতে দৌড়াতে পৌঁছে যাচ্ছি অন্য এক বায়ুমন্ডলে। আমি এখন শ্বাস নিতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি যেনো বিশাল এক গ্রেনেডের ভিতর ডুকে যাচ্ছি। আমার চোখ খসে পড়ছে মৃত্তিকায়। আমার হাত পা কাতরাচ্ছে ভীষণ রকম। 

এখন আমার পায়ে জুতোও নেই। আমি শরিয়তের সব আলখাল্লার খোলে ফেলেছি। আমি এখন নগ্ন। আমার চোখের সামনে মারিফতের এক বিস্তৃত প্রান্তর। প্রান্তর জুড়েই লাল আর সবুজের অনাকাঙ্ক্ষিত মিছিল। স্লোগান একটাই- স্বাধীনতা তুমি কোথায় যাচ্ছো??

অকস্মাৎ কে যেনো ছুড়ে মারলো একটা লাল কাঁচামরিচ আমাকে দিকে। আমি এবার দৌড়ালাম না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। মিছিল ভিতর থেকে আর্তচিৎকার করে বলে উঠলো গ্রেনেড গ্রেনেড বলে। আমি বুক উজাড় করে সেই গ্রেনেডের স্বাদ নিলাম। আমার দেহ ল-ভ- হয়ে উড়ে গেলো আকাশে।  

অসংখ্য কালো বাঘের হিং¯্রতা নিয়ে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলতেই দেখি আমার বুকের উপর হাজার হাজার কাঁচামরিচ ; রক্তাক্ত হয়ে গড়াগড়ি করছে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। 

আজ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল পুড়ছে না। পুড়ছে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত মানুষের তরতাজা হৃদপিন্ড। প্রতিটা হৃদপিন্ড জুড়ে এক একটা কাঁচামরিচ সাদৃশ্য গ্রেনেড। গ্রেনেডের পাজর জুড়ে লিপিবদ্ধ এক কেজি কাঁচামরিচের স্বাধীনতা চাই। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা চাই।



নিরুপমা, শূন্যহাতে

জহুরুল ইসলাম


নিরুপমা,

পালক গজানো পাখির ছানার মতো ছটফট করে মন-

বাতাসে বট পাতার নড়াচড়ায় চমকে ওঠে ।

আতœধ্যানের আসনে একটা ছবি ঝলমল করে।


সারা ঘরময় যে তুমুল আলোড়ন,

তা যেন দেখেও দেখোনা।

তুমি ছাড়া আর কেই বা আছে এ জগতে।

অথচ নিত্য ফিরে আসি শূন্য হাতে।


অনন্ত ঝড়ের পূর্বাভাসে আহত মন।

চোখের জোয়ারে তোমার আসন তো টলে ওঠে,

অতল তলে যে আগুনের তান্ডব!

তোমার সান্নিধ্যে সে আগুন নিভে যায়, নিরুপমা!



ব্যবধান

আবু বকর সিদ্দিক


যেই রাত আলোহীন সেই রাত আমার,

তোমার রাত্রি জোছনার শুভ্র চাদরে মোড়া,

আমার আকাশ জুড়ে বিষাদের মেঘ,

তোমার আকাশ রৌদ্র-ঝিলমিল।

তোমার আকাশ নির্মেঘ, নির্ঝঞ্ঝাট।

আমার বুকে আহত হৃদয়, চোখ বাষ্পাকুল।

তুমি অনিবার আনন্দ-প্রাণ, বাষ্পহীন লোচন তোমার। 

তুমি সুখ সায়রে নিত্য ভাসাও তোমার নাও, আর আমি দুঃখের তরী বাইছি নিরন্তর।

তোমার আর আমার মাঝে শুধু এতটুকুই ব্যবধান, বেশি না!



নির্ঘুমো মানুষগুলোর স্বার্থে

গোবিন্দলাল হালদার 


চোখে ঘুম না এলে আমার কিচ্ছুটি করার নেই। রাত 

রাষ্ট্রদ্রোহী ঘুমকে গণতান্ত্রিক রায়ে নির্বাসন দিয়েছে।

আমার দুচোখ কী তবে রাষ্ট্রদ্রোহী। এই কারণেই কী  

নির্ঘুমের মোড়কে আবদ্ধ হয়ে আছি। দয়া করে কেউ

আমাকে বের করার ব্যবস্থা করুন। এভাবে জীবনের উপর অত্যাচার মানেই তো আমি পাথর। 

একটি যুগ

পেরিয়ে গেল। ঘুমের আদালত আমার পক্ষে কেনো

রায় দিচ্ছে না। এখানেই আমার প্রশ্ন। তোমরা কী

নির্ঘুমো মানুষগুলোর স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয় বরাবর প্রার্থনা লিপি লিখতে জান না। 

তড়িঘড়ি মানববন্ধন করো। দেখবে জনতা দ্রুত এসে লাইনে দাড়িয়েছে।

সেদিন নির্বাসিত হাট্টিমাটিম ঘুমেরা বড়োসড়ো হয়ে আমার বাড়িতে এসে 

প্রকৃত ঘুমের দেশে নিয়ে যাবে।


পদাবলি : ০৩

পদাবলি : ০৩

 



শহুরে 

মোহাম্মদ আল রাহাত


ফ্রেশ আইয়ার ফুল অফ অক্সিজেন

কালীন ডাস্টবিনের পাশে তবুও 

মৃত মানবের লাশের ছবি আঁকা,

বাক্সে বন্দী কালীন এলিটরা

সপ্ন নিয়ে আসে আঁকে মৃতু রেখা।

এ শহর... 

প্রেম, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য 

সাগরের ঢেউয়ের মতো কাঁদছে। 

ক্ষুধার যন্রনা নিয়ে কিছু মানব

দার্শনিক হয়ে ধুয়াটে রাস্তায় হাঁটছে।

হাঁটছে এবং... 

ডাস্টবিনে কালিন ক্ষতচিহ্নের ব্যাথা  

আর, হৃৃদপিন্ডে চাপা অধিকার নিয়ে

কিছু কাফনবন্দীর জীবন কাঁধে

কক্সিজেন অপচয় করার অপরাধে।


ব্যথার সরোবর 

সা’দ সাইফ 


তুমি তো হারিয়ে গেছ কবেই, 

অথচ ভুলতে পারি না তোমাকে!

ভুলতে পারি না তোমার দেওয়া পাহাড় সমান কষ্ট, বেদনা

আর মৃত্যুর সমান অনুভূতি!!


ভবঘুরের মত পাগলা পথে চলে,

মাথার চুলের মত এলোমেলো বিচ্ছিন্ন মন।

স্থির থাকার মত মানুষ তো নই একমুহূর্ত আর।

এসব হয়েছি তোমারই অভাবে!


আমার সারাজীবনের জমা হওয়া দুঃখ, 

সবই তোমার যোগফলে।

আমার নীরব কান্না, চমকে চমকে ওঠা বাঁ পাশের চিনচিনে ব্যথা।

সবই দিয়েছ বিনামূল্যে। 


চলে যাওয়ার আগে মানুষ ‘আসি’ তো বলে যায়,

আর তুমি দীর্ঘদিন ভালোবাসি বলেও,

কোন নাম না জানা কারণে আমাকে জীবন্মৃত বানিয়ে গেলে!

এতএত মিষ্টি কথা,

এসব ছিল তোমারই বাহানা, সময়ের সদ্ব্যবহার। 


আমাকে বীজরুপে পুঁতে তুমি পেলে সারাজীবনের সোনালী ফসল,

আর আমি উচ্ছিষ্টই থেকে গেলাম!


ডিসেম্বরের শহর

তাওহিদ ইসলাম


জানালা ভেদ করেরোদের ছোঁপছোঁপ দাগ মুখে এসে পড়েছে। শীতের হীম আবহটা আগের মতো নেই। রোদ্রের শান্তিময়প্রখরতায় ভালো লাগছিল। ডিসেম্বরের শহরেকাপুঁনি ধরা শীত, পিঠা-পুলির আয়োজন, বৃষ্টিস্নাত কুয়াশা, রোদ্রের প্রশান্তি ছড়ানো তাপে কি নিদারুণ মুগ্ধতা। ঋতুর সাথে শহরের এতো পরিবর্তন-পরিবর্ধন! অবাক কান্ড। বাতাসে বইছে মুগ্ধতার আমেজ।


পুরো ডিসেম্বরপৌষ মাসের গুনকীর্তিতে পথের ধারে সটিয়ে দেওয়া আছে অর্ধশত পোস্টার। প্রতিবিম্বনিস্তব্ধতার দেয়ালে ফাটল ধরেছে শুনেছি। এ শহরগরমের ঘর্মাক্ত শরীর, লোডশেডিংথহা-হুতাশ এগুলো থেকে মুক্ত।

এ শহরে ড্রীম লাইটের হলদে-আশঁটে আলোয় ক্লান্তিহীন রেকেট খেলা হয় অর্ধরাত অব্দী। রোজ সকালে কুয়াশার ঝড়ে যাওয়াটা আমার বৃষ্টির মতো লাগে। 


বহুকাল ধরে লক্ষ করে আসা ঋতু বৈচিত্র্যের পালাবদল হবে এ‘মাস পর। ডিসেম্বর পর নতুন সালের সাথে এসে যাবে অনাগত নতুন মাস জানুয়ারি। স্মৃতির প্রতিবিম্বতায় আজাীবন বেঁচে রইবেসুখ স্মৃতি জড়ানো গত হওয়া প্রিয় ডিসেম্বর।  


মোলাকাত হবে

মূল : রুমি

অনূবাদ: নাহিদ্র ইমন


দূরে,

ভালো-মন্দের

সব ধারণার বাইরে।

সেখানে,

তোমার আর আমার

মোলাকাত হবে।



শোন, 

নিজের চাহতে এসেছি 

কাছে তোমার।

তুমি

আমার চেয়ে নিকটে

আছো আমার


এসো!

আমার থেকে আমায়

নাও কিনে।

আমি

হতে চাইনা বদনাম

তুমি বিনে।


আর্তনাদ ও মন পুড়া বাতাস 

সাব্বির আহমাদ 


দূর হতে বহুদূর ভেসে বেড়াচ্ছে আর্তনাদ।

হুহু কান্নার ঢেউ। মন পুড়া বাতাসে আজ মাদকতার গন্ধ। 

একটা শীতার্ত রাতের গাঢ় অন্ধকারে চাপা পরে যাচ্ছে বুক ফাঁপা দীর্ঘ শ্বাস। দয়া করে ;

দয়া করে আকাশের পথ দেখিয়ে দাও সুহৃদ 

কুয়াশার মায়াজাল খুলে আমার কবিতা 

পৌঁছে যাক পাষাণীর হৃদয়ের মণিকোঠায়।

যার কথা মনে করে কাঁদছে হৃদয় অকাতরে। 

সে কি আদোও জানে;

দূরের পাইন বনে তার তরুণ প্রেমিকের নতুন 

কবর খোঁড়া হচ্ছে?!


ট্রাই-এঙ্গেল লাভ =জিরো

ট্রাই-এঙ্গেল লাভ =জিরো

 



ট্রাই-এঙ্গেল লাভ =জিরো

জুয়েল মাহমুদ


বসে বসে কবিতা লিখছি আমি। আব্বু বাজার থেকে এসে বলল তোকে হোম কেয়ার সেন্টারে কোচিং করানোর জন্য চাচ্ছে।

তুই কি বলিস? আমি বললাম, নিসঙ্গ জীবনে আমি চাহি যারে সে আমাকে দিল ফাঁকি, ওগো প্রিয়তমা আজও আমি তোমাকে ডাকি।

আব্বু বলল মাথা গেছে। তুই পাগল হয়ে যাবি। দুপুরের ভাত খেলাম। যখন বিকেল হলো জমিনের আইল মেপে সে কাঙ্ক্ষিত সেন্টারে গিয়ে দেখা করলাম।

ভাবছি আহা! কত স্টুডেন্ট হবে কি জানি। খুব একটা ভাব নিয়ে গেলাম। সেন্টারে গিয়ে দেখি কোন স্টুডেন্ট নাই। কাল থেকে দুজন আসবে তারপর আস্তে আস্তে স্টুডেন্ট বাড়বে।আহা! এত ভাব ধরে গেলাম কি হইল? যাইহোক, কিছুদিন পর অমি নামে একটা ছেলে আসলো। ওরা চারজন। সাইন্সে পড়ে। আমাকে সাইন্সের সব বিষয় পড়াতে হবে। আমি প্রস্তুত।

মনের আকাশে যখন রং লেগেছে, রংধনুর রং সেখানে অবহেলিত। পরের দিন অমি তিনজন মেয়ে ও একজন ছেলে নিয়ে আসলো। পরিচয় পর্ব আব্দুল্লাহ, আয়েশা আক্তার, বেনে বৌ, ও তার বান্ধবী। 

বড় একটা লেকচার দিয়ে পাঠ শুরু করলাম।

আমি জানতাম অমির সাথে এখানে যে কোন একজনের রিলেশন আছে। কার সাথে? আয়েশা নাকি তার বান্ধবীর সাথ । যাক আস্তে আস্তে জানব। কিন্তু জানার আগ্রহটা বাড়লো অন্য একদিন যেদিন খোলা চুলের মিষ্টি খোঁপায় বেলীফুলের বেনীর মত সুন্দর সবুজকালারের জামা পরে আসা প্রিয়তমাকে দেখে।

তখন দুটি চরণ লিখেছিলাম

“তোমারই খোঁপায় দিব গুজে ফুল

প্রিয়তমা তোমার মাথায় রেশমি কালো চুল।

ভালো বেসেছি তোমায় ওগো প্রিয়তমা।

কিন্তু আমি ব্যার্থ প্রিয়তমার মন জয়ে। 

তা আজও উদঘাটন করতে পারিনি। হয়ত ট্রাই-এঙ্গেল লাভই হবে। অমি কে নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। তাই হলো। প্রচুর বৃষ্টি। আমি বসে আছি ক্লাসে। ওরা আসছে। তাদের দুজন আসলেও অমি আর আরেকজন মেয়ে আসে নাই। খোঁজ নিয়ে জানলাম তারা আসতেছে। জানালা দিয়ে দেখি, এক ছাতায় দুজন। রোমান্টিক একটা গল্পের নায়ক নায়িকা আমার চক্ষে ভেসে উঠল। এই যেন প্রেম মানেনা কোন বাঁধা মুভির সিন। বৃষ্টি হচ্ছে, চারদিকে রোমান্টিক পরিবেশ একজন আরেকজনের হাত ধরে বলছে, জানো তুমিই আমার স্বপ্নের সেই মানুষ। তোমাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয়। তুমি যখন আমার সামনে আসো আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সুখগুলো আমার। কথা দাও আমাদকে ছেড়ে যাবেনা।

হঠাৎ বৃষ্টি থেমে গেল, আমি ভাবছি হয়ত আকাশ তাদের এমন ভালোবাসা দেখে কান্না থামিয়ে দিল। আমি কথাগুলো ভাবতে থাকি। তারা দুজন আসলো। আমি বুজালাম তোমরা যা করোনা কেন, পড়া লেখা আসল। এভাবেই চলছে তাদের প্রেম। আমি তাদের নাম দিয়েছি বেঙ্গমা-বেঙ্গমী। অশ্বথু গাছের ছায়ায় যেন দুটো ভালোবাসার জুটি। আমার খুব হিংসে হত। আমার প্রিয়তমা আমাকে বুজলনা। অনুপমাকে একদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে প্রপোজ করছিলাম সে না করে দিলো। তখন এই হৃদয়ে বিরহের দোল খায়। ছন্দগুলোও তাল হারিয়ে আমাকে সবার কাছে অপরাধী করে দেয়। যাইহোক অমি ও মেয়েটির ভালোবাসা এতই বেশি যে মেয়েটি যখন আমার কাছে পড়ার জন্য অন্য জায়গায় যাইত অমি তাকে ভালোবাসার কসম দিলেই মেয়েটি প্রেমের জন্য বিসর্জন দেয়। মাঝেমধ্যে অমি আমার কাছে আসত। আমি তাকে কবিতা শুনাইতাম। সে এগুলো নোট করত। এই যেন নতুন কবির প্রেমের গল্প। আস্তে আস্তে তাদের প্রেম গভীর হয় আর আমার কাছ থেকে তারা অনেক দুরে চলে যায়। তাদের দিনগুলো ছিল চিরসবুজ স্মরনীয়। একটা নৈসর্গিক  সৌন্দর্যের কাহিনী। আচ্ছা তুমি কি আমায় সত্যি ভালোবাসো?

অমি:- হ্যাঁ। কেন একথা বললে? 

আমার না তোমাকে হারাতে চাই না। আমি তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই। 

অমি:- কেন, বিশ্বাস হয় না? দাড়াও।

বন্ধুদের ডাকি।

এই তোরা শুন। ও আর আমি এখন বিয়ে করব তোরা দুজন সাক্ষী। 

বান্ধবী:- কিভাবে? 

অমি:- আমরা এখন কালমা পড়ব, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে কবুল বলব তোরা সাক্ষী। 

তাদের গল্পটা যেন রাজ্যহীন রাজ্যের প্রেমকাহিনী। আমার বলতে ইচ্ছে করে “তোমার জন্য আমার হৃদয়ে পঁচন ধরেছে, তোমার ছোঁয়ায় আমি উল্বেসিত। তাদের মাঝে অনেক চিঠি আদান প্রদান হত। যা দিস্তায় বাঁধায় করার মত। একদিন তার খালাতো ভাইয়ের কাছে ধরা পড়ে গেল। শত বাঁধা দিও আলাদা করতে পারল না। হয়ত তাদের মনে ছিল পৃথিবীর সব একদিকে আর আমরা একদিকে। সাত সাগর পাড়ি দিব তবুও তোমাকে নিয়েই যাব। আমার মাঝে তাদের দূরত্ব বাড়লেও দূরত্ব কমেনি তাদের প্রেমে। যেন পোড়ামন মুভির দৃশ্য। 

হ্যালো, কী করো?

অমি:- পড়ি। তুমি? 

আমিও পড়ি

অমি:- খাইছো?

না, ইচ্ছে করে না। তোমাকে দেখতে খুব মন চাই। স্কুল বন্ধ। ভালো লাগেনা কিছু। 

এভাবেই তাদের রাত কাটতো। 

হঠাৎ তাদের গল্পে ভিলেনের আগমন ঘটে। ভিলেন রুপে পরিচালক আমাকেই প্রমোট করেন। এটাই ভাগ্যের পরিহাস। শত্রুহিসেবে আমার আবির্ভাব আমি মেনে নিতেই পারছিনা। মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। অমি পাগল হয়ে গেল। কারণ যাকে নিয়ে তার স্বপ্ন, বিসর্জন, আত্মত্যাগ নিঃস্বার্থ স্নেহময়ী সে আজ দূরে সরে যাচ্ছে। অথচ গল্পের ভিলেন শুরুর পার্টে থাকলেও মূল ভিলেন মেয়ের ভাই। 

তবুও আমি রয়ে গেলাম ভিলেনের কাঠগড়ায়। ভালোবাসা উজাড় করতে চেয়েছি পেয়েছি কারাদন্ড। আমিও চলে আসি এলাকা ছেড়ে। এদিকে আমার ভারত যাওয়ার কাগজপত্র রেডি হলে আমি চলে আসি ভারতের কলকাতা মোহনবাগান। আসার আগে আমি ছিলাম অসহায়। আমাকে মারার হুমকি প্রকাশ্যে দিলে কবি এখানেই নিরব। আমি ব্যর্থ বুঝাতে। 

হঠাৎ একদিন শুনি অমি মেয়েটিকে নিয়ে পালালো। সে তাকে নিয়ে মেয়ের আত্মীয়র বাড়িতে উঠে কিন্তু সেখানেই তাদের প্রেমের সমাধি হয়। এ যেন “প্রিয়া রে” মুভির সে দৃশ্য। শতশত আঘাত সইতে হলো। তবুও আশায় ছিল মেয়েটি তাকে বলবে, তার কাছে আবার এসে বলবে “আমি তোমাকেই ভালোবাসি”

যখন মেয়েকে ঘরে মেয়ের বড় ভাই আটকে রাখে তখন ছেলেটির হৃদয়ের অনুভূতি বুজার মত কেউই ছিলনা। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে আল্লাহর কাছে শুধু বলতো ওগো প্রভু আমি শুধু তাকেই চাই। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটতে থাকে আর ভিতরটা চিৎকার করতে থাকে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে জোরে চিৎকার করে কাঁদে আর বলে ‘হে স্বার্থপর আমি তোকেই ভালোবাসি। আমি তোকেই ভালোবাসি আমি তোকেই ভালোবাসি। হয়ত এই প্রতিধ্বনি ফিরে এসে তার কানেই বাজতো তার সুরেই কিন্তু উত্তর আসতনা তার প্রিয়তমার। 

স্বপ্ন বুনতে থাকা গল্পের প্রেমিকের স্বপ্ন সত্যি হলো, মেয়েটি বউ সেজেছে খুব সুন্দরভাবে। সে ভাবতে থাকে এইতো আমার প্রিয়তমা। কিন্তু তার বউ সাজাটা ছেলেটির জন্য খুঁশির ছিলনা। কেননা স্বার্থপর মেয়েটি তার জন্য বউ সাজেনি সেজেছে অন্যজনের জন্য। ছেলেটির হৃদয়ে তখন পোড়াগন্ধ শুরু হয়। ঘটে একটি ট্রাই-এঙ্গেল লাভ এর কাহিনি। মেয়েটির প্রাপ্তি হলেও ছেলেটির জন্য একুয়েল জিরো।


শব্দমালা : সুমন সৈকত

শব্দমালা : সুমন সৈকত


শব্দমালা 

সুমন সৈকত


নষ্টালজিয়া


নিরুদ্দেশ হতে হতে শাদা ফেনায় এঁকেছি

মানুষের ঘর্মাক্ত ললাটের জলছবি। তন্দ্রার ছলে,

আন্দুলিসিয়ার প্রান্তে ফেলে এসেছি

শাদা বাজপাখির ডানা, মৃত ঘোড়ার খুর-

বিপন্ন বসন্ত বিকেল,

আর সাঁওতাল মেয়ের শস্য বিলাস।


নক্ষত্রের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে

গাঙচিলের ডানায় উড়ে প্রাগৈতিহাসিক ভোর

নৈঃশব্দ অন্ধকারে

মাতৃ- জরায়ুতে জমাট বাধে

                আগামির স্পর্ধা...


আহা! বেদুইন, শূন্য উদ্যানে আজও খিলখিলিয়ে ওঠে

নাবালিকা জৈবিক পারদসন্ধ্যা।



রোড কুমিল্লা টু ত্রিপুরা 


মানুষ মরে যাচ্ছে হিংসার কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে লোভের কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে ভালোবাসাহীন পৃথিবীর কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে...

            মানুষ মরে যাচ্ছে; মানুষের কাছে!!!


মানুষ মরে যাচ্ছে ক্ষুধার কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে যুদ্ধের কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে মমতার কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে...

                  মানুষ মরে যাচ্ছে ; মানুষের কাছে!!!


মানুষ মরে যাচ্ছে দুঃখের কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে মিথ্যার কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে ঘৃণার কাছে

মানুষ মরে যাচ্ছে...

            মানুষ মরে যাচ্ছে; মানুষের কাছে!!!



নোঙর


(জললিপি বোঝনা তুমি নোনতা জলের ব্যাকরণ)


তোমার আত্মহননের পান্ডুলিপি এইমাত্র শেষ করে ঘরে ফেরার কথা ভাবতেই দেখি,  ঈশ্বরিণীর শাড়ির আঁচলে বাঁধা কিশোরী সন্ধ্যা। চরুটের গন্ধে মাতাল তখন মেথর সর্দারের উঠোন, আত্মস্থ করতে থাকি নগরের অন্ধগলির মাংশাসি প্রলোভন। নিষিদ্ধ গন্ধমের জল-পিপাসায় কাতর জমজ স্তন। কৃষ্ণাঙ্গ ঠোঁটে, মায়ার কলতান...


দূরগাঙে পড়ে রয় 

                      মাঝির হাহাকার,

                             ছেঁড়া “মাস্তুল”

                                        আর

 লোনাজলের শীৎকার।



পরম্পরা 


বেয়ারা স্বপ্নের শরীর বেয়ে ঝড়েপড়ে ‘মানচিত্র’, রক্তের ছোপ ছোপ দাগ- লাল মোরগের কন্ঠে প্রলম্বিত ভোরের আর্তনাদ। পৃথিবীর বয়স ক্রমশ বাড়ছে। সভ্যতার অটোবায়োগ্রাফি হাতে সারি সারি নর নারী হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে তা¤্রবর্ণ জনপদ পিছু ফেলে। সাইবেরীয় মেঘ-বালিকার গতর জুড়ে দূর্ভিক্ষের ক্যানভাস। ক্ষুর্ধাত শালিকের পাখনায় উদ্বাস্তু দিনলিপি। কোন এক অদৃষ্টের মোহে অনন্তকাল এ যাত্রা...। পৃথিবীর আয়ুস্কাল ধীরে ধীরে বাড়ছে...। ঘোরের পোষ্টারজুড়ে মৃত্যু উপতক্যায় নিঃশব্দ আলাপন ; ফিস ফিসিয়ে কে যেন হাঁসছে....


সারি সারি চোখ নক্ষত্ররাজি হয়ে দুলছে, কচি বিষন্ন মুখে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে-

বুবু আর কত দূর?

জানিনা... (স্বগতোক্তি) 

‘হয়তো আগামির স্বল্পতম সময়ের বাঁকে

                                               কিংবা

পূর্বপুরুষের মতো হারিয়ে ফেলবো আয়ুগুলো

উত্তর প্রজন্মের ললাটে”।।



কলম্বাস কিংবা সোয়ারি


ক্ষতের মতো অভিমানগুলো নিয়ে জেগে আছি। দৃষ্টিসীমানায় কি দারুন ভাবে খুলে পড়ে বিশ্বাসের পলেস্তারাদি....

প্লাবিত জোসনার ঘ্রাণে সেদিন তুমি খিলখিলিয়ে বল্লে, জানো! জানো! আমি রাণী ইসেবেলাকে স্বপ্নে দেখেছি, অমনি ভয় পেয়ে আমার শ্যামলা মুখমন্ডল কৃষ্ণবর্ণের প্রজাপতি  হয়ে উঠলো,  

তুমি বেশ অবাকই হয়ে ছিলে, বললে, এ আর এমন কি? মানুষ স্বপ্নে কত কি দেখে....

আমি কিন্তু সে দিন ঠিকই এক লুণ্ঠনকারী কলম্বাস সোয়ারিকে মস্তিষ্কের ভিতর দৌড়াইতে দেখেছি....



ফটোগ্রাফার


ভূগোল জন্মরহস্যে আস্তাবল থেকে বেরিয়ে পড়েছে “কালো”  ঘোড়াটি। সহ¯্র- কোটি আলোকবর্ষ দূরে গোপন অন্ধকারে ধ্যানমগ্ন কোন এক সৌখিন পূজারি, পাশের জঙ্গলে  বৃক্ষরাজির প্রার্থনার ক্যানভাসে কোরাস করে মৃত বালিকার লাশের কৈশোরিক চপলতা।

গন্ধবণিকের সাথে কফিতে চুমুক দেয় ছদ্মবেশধারী হত্যাকারী ফটোগ্রাফার। 


দিগন্তে ভেসে বেড়ায় ধূলিঝড়ের দুরন্তপনা। আহারে.... কৃষ্ণ- ঘোড়া !

নক্ষত্র- যোজনপথ এখনও বাঁকি;

অথচ 

তোর খুরে রাজ্যের ক্লান্তি....




মানুষ 


দাঁড়াশ সাপ তাড়া খেয়ে কও

আচমকা স্বপ্নে ঘুম ভাঙতো প্রাশয়ই,

সাপের ভয় বিস্তর আতংকে কাটতো কাঠুরিয়া বউ

সংসার উপার্জন ক্ষম সোয়ামির যদি কিছু হয় !

ইউসুফ নবীরে স্বপ্নের মাঝে খুঁজে বেড়াতো রোজ 

যদি স্বপ্নের ব্যাখা বলে দিতেন, দিতেন বুজ!

বজ্রপাতে আচমকা আগুন

সুখ পোড়ালো কাঠুরিয়া বউ !! বিদায় নিলো ফাগুন 

কাঠপেন্সিলের মতো শুকিয়ে যাওয়া অবয়ব 

চৌকাঠে দাঁড়িয়ে পাহারা দ্যায় মহাকালের উৎসব


ইউসুফ নবীরে কাঠুরিয়া বউ স্বপ্নে করেনা আর খোঁজ

মানুষ সাপে বিবর্তিত হচ্ছে যে রোজ।



চুম্বন


(তখন অস্তগামী সূর্য নিমগ্ন ছিলো গোধূলির ওষ্ঠে)


অভিলাষের পানপাত্রে চুমু দিয়েই জেনেছি

শীতলক্ষ্যার দীর্ঘশ্বাস বয়ে নিয়ে; সন্ধ্যা মেয়ের ঘরে ফেরা।

ধ্রুপদী জোসনায় ভাসবে বলে, হয়তো তুমিও 

কেঁদেছিলে সেদিন।

বি

র্ণ           হৃ

তা          দ

য়            য়

       যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত টাইগ্রিস ¯্রােতস্বিনী।

আর মাদক সন্ধ্যায়,

তোমার ঠোঁট প্রকম্পিত তখন

অঙ্ক শেখার ভুল ধারাপাতে...