প্লাটফর্ম

প্লাটফর্ম



প্লাটফর্ম
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা

যাত্রীরা অপেক্ষায়!
দুপাশে সমান্তরাল রেললানইন,
হাজারো মানুষের ভীড়ে দাঁড়িয়ে দেখি ,
সবাই কেমন ছুটছে এপাশ ওপাশ।
কতো অচেনা আওয়াজ !
চারপাশে কতো ভিন্ন আয়োজন!
একের পর এক রেলগাড়ী এসে স্থির হয় এখনে।
নীরবে কতো স্বপ্নের পরিভ্রমণ হয়!
চর্ম চক্ষু দেখে নানা অবয়বে,
হরেক পোষাকী ঢঙে,
এপথে শুধুই অগনিত মানুষের আসা যাওয়ার!
আগত ট্রেনটা দ্রুত বগি ভর্তি করে,
ফেরার প্রস্তুতি নেয় আবার!
খানিক পরেই ভিন্ন নামে ,
ভিন্ন যাত্রী নিয়ে ফিরে যায়,
অসংখ্য স্লিপার,পাথর,দূর্বা ঘাস আর
চেনা গ্রাম উপশহর পেরিয়ে,
সুষম কালো ঐ সমান্তরাল লৌহ পথ ধরে।
জানালার পাশে চুপ হয়ে আছি ।
ফিরে আসার আকুতি নিয়ে ঢুকরে কাঁদে,
ফেলে আসা সৌম্য শান্ত ঐ প্লাটফর্মটা!


সহকারী প্রধান শিক্ষক
বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ চট্টগ্রাম,

কলসিওয়ালী

কলসিওয়ালী


কলসিওয়ালী
মাহদী হাসান

নদীর ঘাটে একলা আমি, শান্তি তো নেই মনে,
ঘাট ও নদী সবই আছে— নেই তুমি এই ক্ষনে।
কই হারালে, কই লুকোলে, নাওনি বিদায় শেষে,
হন্যে হয়ে খুঁজছি তোমায়; বন্য পাখির বেশে।

সাঁঝ-সকালে কলসি কাঁখে, আসতে দুলে দুলে,
মিষ্টি ভোরের মাতাল হাওয়া খেলতো তোমার চুলে।
নুপূর পায়ে আলতা মেখে, আসতে নদীর ঘাটে,
এ হৃদয়ের জমিন ধরে— ফিরতে আবার বাটে।

নদীর বুকে ঢেউ জাগাতে; আনতে জোয়ার মনে,
ভাল্লাগে না; পড়ছে মনে— সকাল সন্ধ্যা ক্ষণে।
শূন্য এখন এই নদী ঘাট শূন্য মরুভূমি,
পরিযায়ী পাখির মতো, কই হারালে তুমি!

ঐ মেঠো পথ পায় না ছোঁয়া, আলতা মাখা পায়ের,
সবুজ জমিন বিরানভূমি প্রাণ বুঝি নেই গাঁয়ের!
পাখ পাখালি সুর হারালো, গাছপালা সব নিথর,
চিনচিনে এক বিষের ব্যথা, জমছে বুকের ভিতর।

অনেক বছর পার হয়েছে, হয় না চোখাচোখি,
কী যে হলো হঠাৎ করে; কই হারালে— সখি!
নাম জানি না, ঘর চিনি না, মন সঁপেছি শুধু
ছন্নছাড়া এই পাখি মন; দেখছি এখন ধূ-ধূ।

ভালোবাসি হয়নি বলা হাতটা রেখে হাতে,
হয়নি বলা মনের কথা— কী হয়েছে তাতে!
ভুল পড়েছি! চোখের ভাষায় ভুল ছিল কি লেখা!
কলসিওয়ালী, সময় করে করতে কেনো দেখা!

চাইনে জবাব— কলসিওয়ালী, বড্ড ভালোবাসি—
আগের মতো দেখতে যে চাই— বাঁকা ঠোঁটের হাসি।


আকবরশাহ, চট্টগ্রাম।

বৃষ্টি এবং অনুভুতি

বৃষ্টি এবং অনুভুতি


বৃষ্টি এবং অনুভুতি 
সাবেকুন নাহার রোদ 

আকাশটার আজ হয়েছে কি? মনে হয় যুগ যুগ ধরে কাঁদেনি অথবা যুগ যুগের জন্য কেঁদে নিচ্ছে।
কথায় আছে না,যুগের পেট সাঝে ভরায়,সেই আরকি!
আকাশ তোর এতই দুঃখ?তা আমার সাথে শেয়ার করলেই তো পারিস-----কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।
সেই বিকেল থেকে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে বন্ধ হওয়ার কোন নাম গন্ধই নেই!
একটু কমছে তো আর একটু বাড়ছে।যারা ছাতা নিয়ে বেরিয়েছে তারাও বৃষ্টিতে ভেজা থেকে রেহাই পায়নি। বৃষ্টি যে তালে হচ্ছে একই তালে বাতাসও।
আজ বাড়ি থেকে বেরোনোটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।যারা বাজারে এসেছে তাদের অধিকাংশই এখন পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারেনি।বাড়িতে হয়তো গৃহিনীরাও রান্না বসাতে পারেনি।রাত ন'টা বাজতে চলেছে। পড়ার সময়টা আজ দু'ঘন্টা দেরি হয়ে গেল।
ভাগ্যিস কাল শুক্রবার।ক্ষতিটা পুষিয়ে নেয়া যাবে।বাড়িতে গেলেই মা-বাবা বকাবকি শুরু করে দেবে।সন্ধ্যার পর কখনও বাইরে থাকিনা অথচ আজ রাত ন'টা! যাক,বৃষ্টি হওয়াটা তো আর মানুষের হাতে নয়। সব ওপর ওয়ালারই ইচ্ছে।
মহিম ভাবছে আর বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটছে।হাতে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট টুকুই অবলম্বন। ক্ষণে ক্ষণে বিজলি চমকাচ্ছে। তখন অবশ্য লাইটের প্রয়োজন হয় না।রাস্তার চারপাশে একবার তাকিয়ে নিতে গিয়ে গাছের আড়ালে মহিমের কি যেন চোখে পড়লো। বিজলি চমকানো তখন বন্ধ হয়ে গেছে। মহিম মোবাইলের আলোটা এবার তুললো গাছের আড়ালে। দেখলো সাদা একটা কাপড়। দেখে যা মনে হলো তাতে শাড়ির আঁচল কিংবা ওড়না হবে হয়তো।টাপুর-টুপুর করে বৃষ্টি পড়ছেই।তবে এই মুহূর্তে কিছুটা কমেছে।মহিম চিৎকার করে বলল, কে ওখানে,ওখানে কে?মহিমের চিৎকারের সাথে সাথেই মনে হলো কাপড়টা আরো গাছের আড়ালে চলে গেলো। মহিমের কৌতূহল বেড়ে গেল। ভূত-পেত্নী নয়তো!
ধুর,এখন আবার ওসব আছে নাকি।তবে মহিম গাছটার ওপাশে গেল না।সেখানে দাঁড়িয়েই জোরে জোরে বলতে লাগল কে ওখানে, বেরিয়ে আসুন বলছি।বেরিয়ে আসুন, কে ওখানে? কে,কে ওখানে----।
বলতে বলতে আলোর বিপরীত পাশ থেকে কে যেন  বেরিয়ে এলো।মহিম আলোটা ঘোরালো।দেখলো একজন মেয়ে মানুষ। বৃষ্টিতে ভেজা।দুই হাতে বুক ঢেকে রেখেছে। মেয়েটি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এত রাতে অচেনা একটা মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়তো ভয় করছে।লজ্জাও পাচ্ছে হয়তো। কারণ তার শরীর বৃষ্টিতে একদম ভিজে গেছে। মহিম আলোটা অন্য পাশে ঘোরালো। তারপর জোরে জোরে বলছে, কে আপনি?ওখানে কি করছিলেন?মেয়েটি মাথা নিচু করেই বলল, বাসায় যাচ্ছিলাম।বৃষ্টির মধ্যে আটকা পড়ে এখানে লুকিয়ে ছিলাম। 
মহিম কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল।তারপর বলল, আমাকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন।আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমার সাথে আমার বাড়ি যেতে পারেন।নয়তোবা এত রাতে কোথায় যাবেন। মেয়েটি এবার মুখ তুলে মহিমে দিকে তাকালো। আলোটা নিচে ছিল। অন্ধকারেই মহিমের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি ভাবছে-সত্যিই তো এত রাতে সে কোথায় যাবে,রাতটা কাটাবেই বা কিভাবে। এখন যে পরিস্থিতি তাতে বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নটা বহুদূরে।কিন্তু এত  রাতে একটা অচেনা,অজানা মানুষকে কেন জানি মেয়েটির নির্ভয় মনে হলো।তাছাড়া সে বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজছে।বৃষ্টি কখন শেষ হবে তা তো বলা যায় না। তার চেয়ে বরং এই লোকটির সাথে তার বাসায় যাওয়াটাই সমীচীন। মেয়েটির নীরবতা দেখে মহিম আবারো বলল, নিশ্চয়ই ভয় হচ্ছে এত রাতে একটা অজানা মানুষের সাথে তার বাড়ি যেতে। তবে আমি আপনাকে অভয় দিচ্ছি। বিশ্বাস করে আপনি আমার সাথে যেতে পারেন।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, আপনার বিশ্বাসের অমর্যাদা আমি কখনোই করবো না।
মেয়েটি আস্তে করে মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে।
তারপর মহিম মোবাইলটা মেয়েটির হাতে দিয়ে সামনে চলতে লাগল। তাকে অনুসরন করে মেয়েটিও চলতে লাগল। কিছুদূর সড়কপথে হাঁটার পর এবার আলে নামতে হবে।নামার আগে মহিম জুতা খুলে মেয়েটিকেও জুতা খুলতে বলল। মেয়েটি বলল সে জুতা খুলবেনা,এভাবেই যেতে পারবে।মহিম আর কিছু না বলে চলতে লাগল। মেয়েটি পেছন থেকে আলো দেখাচ্ছে। কয়েক পা হাঁটার পরই মহিম আর আলো দেখতে পেল না,পেছন থেকে কিসের যেন শব্দ শুনতে পেল।টাপুর-টুপুর বৃষ্টি  তো পড়ছেই।পেছনে ফিরে দেখলো মেয়েটি কাদার মধ্যে পড়ে গেছে। মহিম কাছে এসে বলল,আপনাকে যে বললাম জুতা খুলতে।বুঝলেন তো এবার।
উঠুন। দেখি মোবাইলটা আমাকে দিন।জুতা খুলে আমাকে দিন।আপনি সামনে যান পেছন থেকে আমি দেখাচ্ছি। আর হ্যাঁ,আঙ্গুল টিপে টিপে হাঁটবেন।বুঝতে পেরেছেন? সামনে যান।এবার আর মহিমের কথার অবাধ্য হলোনা মেয়েটি।
তার কথা মতো আঙ্গুল টিপে টিপে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল।
 বিকেল থেকে বৃষ্টি হওয়া রাস্তার অবস্থা একেবারেই কাহিল।সারারাত বৃষ্টি হলে লোকে তো আর সারারাত বাজারে থাকবেনা। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই সবাই বাড়ি ফেরা শুরু করেছে। কেউ আসছে আবার কেউ হয়তো আগে গেছে। এরই মধ্যে আল পিচ্ছিল হয়ে গেছে। যার কাদা মাটির পিচ্ছিল রাস্তায় হাঁটার অভ্যাস নেই তারা এ রাস্তায় আঁছাড় খাবেই তাতে কোন সন্দেহ নেই।মেয়েটির হাঁটার ধরন দেখে মহিম মনে মনে   
হাসছে আর ভাবছে হয়তো সে এরকম রাস্তায় কখনও হাঁটেইনি।
এত ধীরে ধীরে হাঁটছে -----ভাবার মাঝে মহিম লক্ষ্য করল মেয়েটি হাত উপরে তুলে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। মহিম দুই হাত পিছনে ছিল। তাড়াতাড়ি করে এসে বাম হাত দিয়ে মেয়েটির কোমরে ধরলো। না ধরলে চিৎপটাং হয়ে জমিনের মধ্যে পড়ে যেত।
কিন্তু রাস্তা যে পিচ্ছিল, তাতে অপ্রস্তুত অবস্থথায় কাউকে এভাবে ধরলে সেও যে পড়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ থাকেনা।সেটা ভেবে মহিম ডান হাত দিয়েও মেয়েটিকে   
ধরলো। ঠিক সে মুহূর্তে আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো।মেয়ে মানুষ রাতে বিড়ালের জলন্ত চোখকে বাঘের চোখ মনে করে ভীত সন্ত্রস্ত হতে পারে।আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো কেন নয়!
মেয়েটি ভীষণ ভয় পেয়ে মহিমকে জড়িয়ে ধরলো। মহিম বুঝতে পেরেছিল যে সে প্রচন্ড ভয় পেয়ে ছে।
তারপরও সে বিব্রত বোধ করলো। কয়েক  সেকেন্ড পর মহিম বলল,ভয় পাবেন না।
হয়তো অন্য কোথাও বাজ পড়েছে। 
উঠুন,ছাড়ুন আমাকে।

মেয়েটি ধীরে ধীরে মহিমকে ছেড়ে দিয়ে বলল, আমি এভাবে হাঁটতে পারবো না।এরকম বাজে রাস্তায় আমি কখনো হাঁটিনি।
মহিম বলে,তাহলে কিভাবে হাঁটবেন শুনি। 
মেয়েটি বলে,আমি আপনার হাত ধরে হেঁটে যাবো।
মনে হচ্ছে ছোট্ট বাচ্চার আবদার,হাত ধরে যাবে!
তবে এ মুহূর্তে সে আবদার না মানার কোন অবকাশ নেই।বারবার এভাবে পড়তে থাকলে বাড়ি পৌঁছাবে কখন। তাছাড়া এরকম রাস্তায় যে কেউ হাঁটতে পারবেনা।হাঁটার জন্যে প্র্যাকটিস লাগবে। অবশেষে মহিমকে সে আবদার মানতে হলো। মহিম ভাবছে,কি যে ঝামেলায় পড়লো সে!তাও আবার মেয়ে মানুষ ----মেয়ে মানুষ মানেই হাজারটা ঝামেলা। তবে এতে মেয়েটির যে উপকার হচ্ছে সেটা ভেবে মনকে প্রবোধ দিল। 
মেয়েটি মহিমের হাত ধরে চলতে লাগল। এভাবে এই বৃষ্টি ভেজা রাতে দুজনে  ভিজতে ভিজতে বাড়ি পৌঁছল। 
গ্রামের বাড়ি। বাড়ির দরজা অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে।
বাড়ি পৌঁছে মহিমরা সোজা টিউবওয়েলের কাছে গেল।
মহিম টিউবওয়েল  চাপল।মেয়েটি হাত-পা ধুয়ে টিউবওয়েল চাপতে চাইলো যাতে মহিম হাত-পা ধুতে পারে।মহিম বলল,তার আর দরকার হবে না,সে নিজেই পারবে।
তারপর বারান্দায় এসে মহিম মা,মা বলে ডাকতে লাগল।
মহিমের মা ঘর থেকে বের হয়ে আসতে আসতে বলে, আজ এত দেরি হলো কেন বাবা,তুমি তো এত রাত পর্যন্ত বাইরে ------বলেই থমকে গেল।
অচেনা মেয়ের দিকে চোখ পড়তেই তিনি হকচকিয়ে গেলেন।
ছেলের দিকে বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তাকালেন। 
মহিম মাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বলল,মা তোমাকে পরে সব বলছি।তার আগে উনাকে কাপড় পাল্টাবার ব্যবস্থা করে দাও।তিনি অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে ভিজছেন।তাকে আমার ঘরে নিয়ে যাও।তাড়াতাড়ি যাও।পরার জন্য তোমার কিছু কাপড় দাও।
মহিমের মা চিন্তায় পড়ে গেল কি কাপড় দেবে।তার তো একটা মাত্র শাড়ি তোলা আছে।
তাও আবার পরে পরে পুরানা হয়ে গেছে। এমন একটা শাড়ি মেয়েকে কি দেবে।মহিমের মা ভাবছে,দেখে তো মনে হয় কোন বড়লোকের মেয়ে। ফর্সা, লম্বা লম্বা চুল,ছিপছিপে গড়ন। কি পরতে দেবে।মহিমের মার এবার মনে পড়ে গেল তার একটা বিয়ের শাড়ি আছে  শাড়িটা খুব সুন্দর। তেমন টা তো পরা হয়নি।
দুই-একবার যা পরেছিল,তবে নতুনই আছে।
তাহলে সেটাই দেয়া যাক।কেথাকার কোন মেয়েকে যে মহিম এত রাতে আনল আল্লাহই জানে।
কী কান্ড যে করলো! তবে নিজের ছেলের প্রতি সম্পূর্ন বিশ্বাস আছে মহিমের মা'র।
আর কোন চিন্তা-ভাবনা না করে বিয়ের শাড়িটা বের করে দিলেন। 

মেয়েটি লক্ষ্য করল,খুব সাধারণ ভাবে ঘরটা সাজানো।
একটা খাট,খাটের সাথে লাগানো মহিমের পড়ার টেবিল,একটা শোকেস,একটা আলনা আর দুটো চেয়ার।
দেখতে যতই সাধারন হোক না কেন এত সুন্দর  পরিপাটি করে সাজানো যে তার মনটা খুব সহজেই  বসে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর মহিম ঘরে প্রবেশ করলো। ঢুকেই দেখলো মেয়েটি লাল ঝিকিমিকি একটা শাড়ি পরেছে। এটা নিশ্চয়ই মায়ের। তবে এত সুন্দর শাড়ি যে মায়ের ছিল সেটা তো কখনো মহিম দেখেনি।বৃষ্টিতে ভেজা চুলগুলো পিঠে মেলে দিয়েছে। শাড়ির আঁচলটা এক পাশে ছেড়ে দিয়েছে। কারেন্টের আলোয় মহিম মেয়েটিকে খুব ভালভাবে দেখলো। মনে হচ্ছে শহরের কোন এক মেম সাহেব বুঝি তার ঘরে বসে আছে। শাড়ির আঁচলটা মাথায় দিলে মনে হবে যেন এক সুন্দরী রাঙা বধু।মহিম আরো দেখলো ডাগর ডাগর দুটি নেত্র যেন তার পানে চেয়ে রয়েছে। মহিমের নেত্রও অচেনা দুটো  নেত্রের পানে।তবে মা যে তার পাশে রয়েছে সেটা মহিমের খেয়ালই ছিলোনা।মা'র কথা মনে হতেই চোখ নামিয়ে নিলো। 
মেয়েটি বলল, দাঁড়িয়ে আছেন কেন, বসুন। 
মহিম বসলো  সে মুহূর্তে তার বাবাও ঘরে ঢুকলো।
ইতোমধ্যে মহিম তার বাবাকে সব বলেছে। বাবাকে বসতে বলল। 
আঙ্কেল, আসসালামু আলাইকুম। সালাম দিয়ে মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো। 
বস মা বস,আমি মহিমের কাছ থেকে তোমার বিপদের কথা শুনলাম।তেমার নাম কি মা?
মহিমের মা তাড়াতাড়ি করে বলল, ওর নাম অর্থি।তোমরা বসে গল্প করো আমি খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
তোমার বাড়ি কোথায় মা,বাবার নাম কি? 
কমলপুর,বাবার নাম মোসলেম উদ্দীন। 
কী করেন তোমার বাবা? 
জ্বী আঙ্কেল, বাবা নৌবাহিনীতে চাকরি করেন। 
এভাবে কিছুক্ষণ গল্প করার পর মহিমের বাবা ওকে বলল, বাবা তোমরা গল্প করো আমি দেখি তোমার মা কি করছে।
মহিমের বাবা উঠে যাবার পর অর্থি মহিমকে জিজ্ঞেস করলো, কিসে পড়ছেন? 
অনার্স তৃতীয় বর্ষ।আপনি? 
আমি এবার এইচ.এস.সি পাশ করলাম। এডমিশন হয়নি এখনো কোথাও। 
ও,ভালো। 
বাসায় আর কে কে আছে? 
আমরা এক ভাই এক বোন। বড় আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। 
ওহ্...
তো,তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
গিয়েছিলাম নানুর বাসায়,প্রাণপুরে।
বাসায় ফোন করে দাও। নয়তো সবাই চিন্তা করবে।এই নাও ফোন।
না,না।ফোন করা যাবেনা। এ বিপদের কথা শুনলে মা কান্নাকাটি করবে।কাল তো যাচ্ছিই।
যাই  হোক,আমাদের বাড়িতে তোমার খুব কষ্ট হবে।কষ্ট করে ম্যানেজ করে নিও।
ছি!ছি!কষ্ট বলছেন কেন। কষ্ট আর কেথায় হবে।কষ্ট হবে তখনই যখন ------
অর্থি বাকি কথাটা বললনা।চুপ করে রইলো।
যখন?কখন কষ্ট হবে শুনি।
না,না থাক এমনিতেই বললাম।
এমনি বলো আর যাই বলো কষ্ট  তোমার হবে সেটা বলার অপেক্ষা  রাখে না।আচ্ছা,তুমি বস আমি দেখি মা কি করছে। 
মহিমের মা ডিম ভাজছিল।ভাজা শেষ। এখন ওদের জন্য খাবার নিয়ে যাবে।মহিম মার কাছে এলে প্লেট আর  পানির জগ নিয়ে যাওয়ার আদেশ হলো। টেবিলের ওপর ওগুলো রাখার পরই মহিমের মা ঘরে ঢুকলো।
শুধু ভর্তা আর ডিম ভাজা দিয়েই খেতে হবে মা।তোমার নিশ্চয়ই অসুবিধে হবে।
কি যে বলেন না আন্টি, অসুবিধে হবে কেন।ডিম ভাজা আর ভর্তা আমার খুব প্রিয়।
আচ্ছা মা খাও।মহিম বস বাবা।খেয়ে নাও তারাতারি।অনেক ক্ষিধে পেয়েছে। 
খাওয়ার পর মহিম বলল, মা তোমরা এখানে থাক। আমি আর বাবা ওই ঘরে। 

রাতটা সেভাবেই কেটে গেল।

পরদিন মহিমের ঘুম ভাঙলো সকাল সাড়ে সাতটায়। উঠে ব্রাশ করে রান্না ঘরে মা'র কাছে গেল। সকালের নাস্তার জন্য পায়েস  রান্না হচ্ছে। মহিমের মা ওকে অর্থিকে  ডাকতে বলল নাস্তা করার জন্য। উঠে হাতমুখ ধুয়ে  নিতে।
মহিম ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বলল, আমি কি আসতে পারি?
অর্থি আস্তে করে বলল, আসুন। 
উঠে পড়ুন, নাস্তা করবেন। 
কোন উত্তর পেল না।মহিম দিনের আলোয় অর্থির চোখে চোখ রাখল।দেখলো চোখ দুটো কেন যেন লাল হয়ে গেছে। আবার বলল,তারাতারি উঠে পড়ুন।
অর্থি আস্তে করে বলল, আমি উঠতে পারছিনা।মনে হচ্ছে আমার খুব জ্বর এসেছে। মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে।
জ্বর এসেছে! মহিম এবার কাছে এলো। আমি কি তোমার কপালে হাত দিয়ে দেখতে পারি কতটা জ্বর এসেছে?
এত  সংকোচ করছেন কেন? কাল যখন আমি আপনার হাত ধরে পুরোটা রাস্তা এলাম কই আমি তো সংকোচ করিনি। 
মহিম আর কিছু না বলে কপালে হাত দিল।দিয়েই হাত নামিয়ে নিয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে বলল, সেকি! জ্বরে তো তোমার কপাল পুড়ে যাচ্ছে!মাকে বলোনি কেন, আমাকে বলোনি কেন?তারপর দৌড়ে গিয়ে অন্য ঘর থেকে দুটো কাঁথা এনে গায়ে দিয়ে দিলো। রান্নাঘরে গিয়ে মাকে টেনে নিয়ে এসে বলে,মা তুমি ওকে দেখ আমি ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি। বলেই দে ছুট।কারও কোন কথা শুনার প্রয়োজন মনে করলো না।
খানিকক্ষণ পর এসে মহিম দেখে তার মা অর্থির কপালে জলপট্টি দিচ্ছে। ডাক্তার রোগীর অবস্থা দেখে ওষুধ দিয়ে চলে গেল। 
মহিম মাকে বলে, খাইয়েছ কিছু?
-খেতেই চাচ্ছে নাতো। 
আমি খাবোনা,খেতে ইচ্ছে করছেনা -অর্থি কাথার ভেতর থেকে আস্তে আস্তে জবাব দেয়। 
কিছু খেয়ে নাও বলছি, না খেলে শরীর আরো ভেঙে পড়বে।মা,একটু পায়েস নিয়ে আসতো। ও খাবে আমি বলছি। 
আমি খাবো না প্লিজ।
অর্থি, না খেলে তুমি ভীষণ অসুস্থ  হয়ে পড়বে তো। একটু খেয়ে নাও। 
মহিমের মা পায়েস নিয়ে এসে অর্থিকে অল্প অল্প করে খাইয়ে দিচ্ছে। সে এক পলক মহিমের দিকে আর এক পলক তার মায়ের দিকে চেয়ে খেতে খেতে প্লেটের সব পায়েস খেল।মহিমের মা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে অর্থির মুখ মুছে দিল। 
এইতো  লক্ষ্মী মেয়ে, এখন ভাল লাগছে না?মহিম একটু মুচকি হেসে বলে।
অর্থি মাথা নেড়ে সায় দিল। 

আজ সারাদিন অর্থির বিছানায় শুয়েই কাটলো। বাড়িতে যাওয়ার কোন কথাই সে বলল না। মহিমরাও এ বিষয়ে কিছু বলল না।জ্বরটা পুরোপুরি না ছাড়লেও একটু লেগেই ছিল। রাতে এর প্রকোপ টা বেড়ে গেল।জ্বর এতই বেড়ে গেল যে সে জ্বরের চটে প্রলাপ বকতে শুরু করেছে। কখনও বলছে, রাজন স্কুলে যা,রাস্তায় সাবধানে যাবি,কারো সাথে ঝগড়া ঝাটি করবি না।আবার মহিমের মাকে জড়িয়ে ধরে বলছে,মা ঐ গানটা একটু গাও না,"সুখ তুই যাসনে এ সংসার ছেড়ে, আলো হয়ে থাকিস তুই আধারের মাঝে। " গাও না মা, গাও,গাও।
এ অবস্থাটা মহিমকে কেন যেন পীড়া দিচ্ছে। কি করবে ভেবে উঠতে পারছেনা।সে তার মাকে অর্থির কপালে জলপট্টি দেওয়ার জন্য বলল। ডাক্তারকে ফোন দিল। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এলো। ওষুধ দিল।ওষুধ খাইয়ে দিয়ে মহিমের মা অর্থির মাথায় হাত বুলাতে লাগল। আর তাতেই ও স্নেহকর প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল।কিন্তু মহিম আর ওর মা ঘুমাতে পারলো না।ওর মা ধারাবাহিক ভাবে জলপট্টি দিচ্ছে আর ও চেয়ারে বসে বই পড়তে লাগল। দুইদিন ধরে ওর পড়া হয়নি।এখন আর পড়া হচ্ছে কই।একবার বইয়ের পাতায় চোখ বুলাচ্ছে তো আরেকবার অর্থির দিকে। কি হলো এটা। মেয়েটাকে আনলাম আমার বাড়িতে অথচ এসেই এই অবস্থা। এতে তো কারো হাত নেই।রোগ, সুস্থ্যতা সবই তো আল্লাহর ইচ্ছেতেই হয়।আর মানুষের কর্মটা উপলক্ষ্য মাত্র।ওর বাড়িতে একটা ফোন পর্যন্ত করা হলোনা।না জানি বাড়ির সবাই কি চিন্তাই না করছে।
সেটা না হয় পরে,আগে ওর সুস্থ্যতাটা।
ওর ঘুম পাচ্ছেনা।ঘুমালে যদি আবার অর্থির জ্বর বেড়ে যায়। এমন টা ভাবতে ভাবতে  রাত অনে----ক টা হয়ে গেল। মহিমের মা অবশ্য ওকে বলল ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু ও বলল এখন ঘুম আসছেনা,ঘুম পেলেও চলে যাবে।
অর্থির কপাল টা কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। জ্বর অনেক টা কমে গেছে। 
মহিমেন মনোযোগ এবার বইয়ের পাতায়।পড়তে লাগল মনোযোগ দিয়ে। এরই মাঝে লক্ষ্য করল মা চেয়ারে বসেই খাটে মাথা পেতে ঘুমিয়ে পড়েছে।কিন্তু ও ঘুমালোনা।
তখন প্রায় রাত ১ টা।অর্থির ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে দেখে আন্টি চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। তার একটা হাত ওর শরীরে। মহিম বই পড়ছে। তাহলে  কী মহিম ঘুমায়নি!ও উঠে বসতে চাইল।মহিম দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে বলল,উঠছো কেন?শুয়ে থাক,শুয়ে থাক।
এখন কি অবস্থা,জ্বর সেরেছে?অর্থি উঠেই বসল।বলল,এখনও জেগে আছেন,ঘুমাননি?
আমার কথা বাদ দাও। তোমার কেমন লাগছে এখন?
কপালে হাত দিয়ে দেখুন দেখি জ্বরটা এখন আছে কি নেই। 
মহিম একটু মুচকি করে হাসল।বলে তোমাকে দেখেই বুঝেছি তুমি ভালো হয়ে গেছো।এরই মাঝে ওর মায়ের ঘুম ভেঙে গেল। 
মা,এখন কেমন লাগছে মা?দেখি জ্বর ছেড়েছে কি না।কপালে হাত দিয়ে দেখলেন একদম জ্বর নেই।দেখেই কী খুশি! মা এখন কেমন লাগছে সুস্থ্য লাগছে না?
আন্টি,আপনার মত একজন মায়ের সেবা পেলে সুস্থ্য হতে কতক্ষণ সময় লাগবে!
আমার খুব ভাল লাগছে আন্টি। আমি সুস্থ্য হয়ে গেছি।
আচ্ছা মা ঘুমিয়ে পড়।মহিম তুমি এখনও বই পড়ছিলে বাবা। ঘুমাতে যাওনি কেন? 
না মা,ভেবেছিলাম হঠাৎ করেই যদি আবার অর্থির জ্বরটা বেড়ে যায় তাই বসেছিলাস।এখন যখন সম্পূর্ন সুস্থ্য তাহলে যাই।
তোমরা শুয়ে পড় মা।বলেই মহিম চলে যাচ্ছিল।যাওয়ার পথে দরজার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে অর্থির দিকে একবার চেয়ে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল। মহিমের মা অর্থির পাশে শুইলো।অর্থি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ওর ঘুম আসছে না।ও ভাবছে এ পরিবারের মানুষ    
গুলোর কথা। ভাবছে মহিমের কথা।ইশ,এতরাত পর্যন্ত সে আমার জন্য জেগে আছে আমার জ্বর বেড়ে যায় কি না!
অজানা একটা লোককে বিশ্বাস করাটা আমার একদম মিছে যায়নি। ওর যেন কিছুতেই ঘুম আসছেনা। এপাশ-ওপাশ করতে করতে মহিমের মাকে জড়িয়ে ধরলো।ঠিক যেন মায়ের পরশ পেয়ে সন্তানের ঘুম আসলো। কিছুক্ষণ পর ও ঘুমিয়ে গেল। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ওর বাড়ির কথা মনে হলো। এবার তো বাড়ি যেতে হবে।বাড়িতে ফোন দিয়ে আপাদমস্তক সব বলল। মহিমদের বাড়ির ঠিকানাও বলল। ঐ মুহূর্তেই আসতে বলল যেন,এসে নিয়ে যায়।
তারপর মহিমের মাকে গিয়ে বলল যে,ওর মা আসছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

মহিমের মা বলে সেকি! মা আজকেই যাবে?
হ্যাঁ আন্টি, আজকেই যাব।
মহিমের মা থাকার জন্য জোর করলো না।কারণ অচেনা-অজানা একটা মেয়ে বাড়িতে থাকলে গ্রামের লোকে খারাপ ভাবতে পারে।তবে তাকে চিন্তিত মনে হলো এই জন্য যে,বাড়িতে নতুন মেহমান আসবে তাকে কি দিয়ে আপ্যায়ন করাবে।পয়সা তো নেই যে,বাজার থেকে কিছু কিনে নিয়ে আসবে।বিষয় টা অবশ্য তিনি মহিম আর ওর বাবাকে গিয়ে জানালেন।মহিম বলে,একটা যে মুরগী ছিল সেটাই রান্না করতে।ওর মা তাই করলো।মুরগীর সাথে সাথে পোলাও রান্নার বন্দোবস্ত করলো। 
সকাল দশটার দিক অর্থির মা আর ছোট ভাই রাজন আসলো। মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না!
দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর বিকেল বেলা অর্থিকে এখন বাড়ি যেতে হবে। এই মানুষ গুলোকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।তাদের স্নেহ-ভালবাসা,সেবা-শুশ্রুষা পেয়ে সেও যেন তাদের হাসি-কান্না,সুখ-দুঃখ,আনন্দ-বেদনার সাথে একাকার হয়ে গেছে।
তাদের ভালোবাসার ভাগীদার হয়ে গেছে। কি করে ছেড়ে যাবে এদের।কষ্ট  হবে যে ভীষণ! 
বাড়িতে যাওয়ার আগে সবাই মিলে মহিমের ঘরে বসে গল্প করছে।অর্থি সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। মহিমের মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।
কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলে,আন্টি এই দুইটা দিন আপনি আমাকে মায়ের অভাব বুঝতে দেননি।
বুকে আগলে ধরে আপনি আমার সেবা করেছেন।
নিজের সন্তানের মত ভেবেছেন।মহিমের মা অর্থির চোখের পানি মুছে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করলেন।মা,কখনো যদি এই বাড়ির মানুষ গুলোর কথা  মনে পড়ে তাহলে চলে এসো।
ভাল থেকো মা,বেঁচে থাকো।
ঘর থেকেই বের হওয়ার আগে অর্থি ওর মাকে বলে,মা তোমরা একটু বাইরে যাও আমি আসছি।সবাই ঘর থেকে বের হয়ে গেল। শুধু মহিম রইল।
অর্থি ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো।
মহিম,জানি না আমি আপনাকে কতটা বিরক্ত করেছি সেই প্রথম থেকে, কতটা অসুবিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছি।তবে যাই করিনা কেন আমাকে মাফ করে দেবেন।বলে দু 'হাত উঠালো।মহিম নিজের অজান্তেই ওর হাতের উপর হাত রাখলো। ছিঃ ছিঃ অর্থি,এভাবে বলোনা।
আমরা কি কখনো তোমাকে পর ভেবেছি।
তুমি তো আমাদের মাঝে পরিবারের সদস্য হয়েই ছিলে।
অর্থি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,এই দুইটা দিন ভাবিনি আমি অপরিচিত বাড়িতে,অপরিচিত মানুষের সাথে ছিলাম।আপনাদের উদার ভালোবাসা পেয়ে আপনাদের মাঝে আমি মিশে গেছি।ছেড়ে যাচ্ছি,কষ্ট হচ্ছে। 
অর্থি,তুমি যখন জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকেছিলে তখন আমার মাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলে,মা আমাকে ঐ গানটা শুনাওনা,"সুখ  তুই যাসনে ----------------
আমার কথা না হলেও সেই মায়ের কথা কখনো ভুলে যেওনা।কখনো যদি মনের অজান্তে মনে পড়ে  নির্দ্বিধায় চলে এসো। 
ছি!এভাবে বলছেন কেন। মনের অজান্তে!, আপনারা আমার জন্য যা করেছেন তা আমি ইহজগতে ভুলবনা।
এ গরীবের ঘরে না জানি তোমার কত কষ্ট হয়েছে। পুতুল খেলা মনে করে সেটা ভুলে যেও।
পুতুল খেলা না!ঠিকই বলেছেন।নয়তো কষ্টের মাত্রা যে বেড়েই যাবে।কখনও যদি মনে হয় আপনার জীবনে আকস্মিকভাবে কেউ এসেছিল তাকে এক নজর দেখার ইচ্ছে করবেনা বুঝি?
অর্থির বাড়ির দরজা সব সময় এই মহৎ, আদর্শবান,বিশ্বাসী মানুষটার জন্য খোলাই রবে।
অর্থি!
ভাল থাকবেন, খুব ভাল। আপনার সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। 
বাইরে চলো,তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
মহিমরা অর্থিদের রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলো। মহিম এক দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে রইলো। অর্থিও বারবার পেছনে ফিরে তাকালো। 

সেদিন রাতে মহিমের চোখে ঘুম আসছেনা। বারবার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দৃশ্য গুলোর কথা  মনে পড়ছে। অর্থির জড়িয়ে ধরা, হাত ধরে আসা,লাল বেনারসি পরে বসে থাকা, কপালে হাত দিয়ে জ্বর অনুভব করা,ডাগর-ডাগর  চোখে চেয়ে থাকা। "অর্থি, তুমি চলে গেলে কিন্তু যে স্মৃতি গুলো রেখে গেলে সেগুলো যে পিছুটান হয়ে আমায় ডাকবে!কি একটা অকস্মাৎ হাওয়া বয়ে গেল জীবনে।
কোথাকার কোন শহরের একটা মেয়ে এসে আমার মৃত অনুভূতির জীবনে প্রাণ সঞ্চার করে চলে গেল। অনুভবতাকে জাগিয়ে দিয়ে গেল। অর্থি!তুমি আমার জীবনে এভাবে কেন এলে?তুমি অর্থি না হয়ে অন্য কেউ তো হতে পারতে।অর্থি,তুমি আমার কাছ থেকে কি নিয়ে গেলে জানিনা কিন্তু দিয়ে গেলে কিছু আবেগ,অনুভূতি,ভালো লাগা আর সুখ জড়ানো ব্যথা।
জানিনা তোমার সাথে কখনো দেখা হবে কিনা। যখন হবে তখন আমাকে কি তোমার মনে পড়বে?এই গরীব ছেলেটাকে কি কখনও  দেখার ইচ্ছে করবে?"

পূর্ব বালাগ্রাম,জলঢাকা,নীলফামারী।

বরফীয় শোক

বরফীয় শোক


বরফীয় শোক
রফিকুল নাজিম

কমরেড,
আপনার চোখ কি সুন্দরের পূজারী,
মনটা কি মায়ায় পড়তে চায় বাঁধা?
চোখের পাতায় দিন বজ্রআঁটুনি খিল
হয়ে উঠুন হৃষ্টপুষ্ট বোকারাম গাঁধা। 

সত্য সুন্দর আজ নির্বাসিত রূপকথা 
মানুষেরা ঘুমায় আফিম ঘুমের ঘোরে, 
নবভোরের চোখে আঁকা মৃত্যুরবার্তা 
শহুরে পাড়ায় দাজ্জালের দল ঘুরে।

শীতনিদ্রায় চলে যান গোপনে,হে বিপ্লবী
একচোখা দাজ্জাল খুঁজে খোলা দু'চোখ, 
লাশকাটা ঘরে ঘুমান,শ্লোগান ভুলুক মুখ
বরফীয় রক্তে ঘুমাক কমরেডের শোক।


পলাশ,নরসিংদী।

পাহাড় ও মেঘের কথোপকথন

পাহাড় ও মেঘের কথোপকথন


পাহাড় ও মেঘের কথোপকথন
সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

কিছু মেঘ দলবেঁধে গান ধরে আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক সময় হঠাত্ একটা মেঘ একটি পাহাড়ের চূঁড়ায় এসে ধাক্কা খেল। মেঘ পাহাড়ের কাছে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাইলে, পাহাড় খুব গম্ভীর ভাবে হেসে ক্ষমা করে দিল। মেঘ তখন সাহস নিয়ে পাহাড়ের সাথে গল্প করা শুরু করলো।

মেঘঃ ও পাহাড় ভাই, কেমন আছো তুমি?
পাহাড়ঃ এই তো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি। তুমি নিশ্চয়ই বেশ ভালোই আছো। মনের আনন্দে গান গেয়ে ভালোই তো ঘুরে বেড়াচ্ছো।

মেঘঃ হুম, তা ঠিক বলেছো কিন্তু তোমার গলায় কেমন যেন অভিমানী সুর। তোমার কি হয়েছে বলো?
পাহাড়ঃ কি বলবো বলো, দিনে দিনে আমার ভূপৃষ্টের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে কিছু মানুষ, দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

মেঘঃ তোমার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম। তবুও তোমার সময় কাটে ভালো। তোমার সমস্ত শরীর জুড়ে সবুজ অরণ্য, কতো গাছগাছালি, কতো পশুপাখি, কতো গান আর কতো সুর, আহা.. তোমার কি আনন্দ...
পাহাড়ঃ হা হা হা... সেটা অবশ্য ঠিকই বলেছো কিন্তু ওই যে কিছু মানুষের কথা বললাম। ওরা শুধু মাটি কেটে নেওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হয়নি। দিনে দিনে আমার গাছগাছালি কেটে উজাড় করে দিচ্ছে, পশুপাখি গুলো মেরে ফেলছে। মাঝেমধ্যে আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়, পশুপাখি গুলো পালিয়ে যাচ্ছে আরও গহীন অরণ্যে। আমিও ওদের বিদায় দিচ্ছি, মানুষের কাছ থেকে দূরে গিয়ে বাঁচুক।

মেঘঃ সত্যি তোমার কথাগুলো শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। মানুষ যে কতোটা নিষ্ঠুর, কতোটা নির্মম, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা, এই নিষ্ঠুর মানুষদের সম্পর্কে কিছু বলো।
পাহাড়ঃ এদের সম্পর্কে কি বলবো বলো, লজ্জা..!! লজ্জা..!! লজ্জা..!!

মেঘঃ কি হলো পাহাড় ভাই, তোমার চেহারা এভাবে ফ্যাকাশে হয়ে গেল কেন?
পাহাড়ঃ মানুষ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করো না মেঘ, আমার ভীষণ কষ্ট হয়। কি বলবো ওদের কথা, কতো অন্যায় অবিচারের সাক্ষী হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি।

মেঘঃ তবুও তুমি বলো, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে। এই মানুষদের অন্যায় অবিচার থেকে আমরাও রেহাই পাচ্ছি না। ওদের কারণে দিনে দিনে আমাদের পরিবেশ সাংঘাতিক রকম দূষিত হয়ে যাচ্ছে। তাই এই মানুষ গুলো সম্পর্কে জানতে চাই।
পাহাড়ঃ বেশ, তবে শোন। আমি ওদের হাজার হাজার অন্যায় অবিচার দেখেছি আর নীরবে সহ্য করে গেছি। এই তো, কিছু দিন আগের একটা রাতের ঘটনা বলি, শোন তবে।

মেঘঃ হ্যাঁ, আমিও খুব অধীর আগ্রহে বসে আছি, শুরু করো। ওই রাতে কি হয়ে ছিল?
পাহাড়ঃ হঠাত্ করেই মাঝ রাতে একটি বাচ্চা মেয়ের চিত্কার করা কান্না শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল।

মেঘঃ বাচ্চা মেয়েটির কি হয়ে ছিল পাহাড় ভাই?
পাহাড়ঃ উহ্, কি বলবো তোমাকে, লজ্জা..!! লজ্জা..!! লজ্জা..!!

মেঘঃ ধেত্, আসল ঘটনা বলতো তুমি, সেই কখন থেকে বসে আছি। কি হয়ে ছিল ওই বাচ্চা মেয়েটির সাথে?
পাহাড়ঃ আমার ঘুম ভাঙতেই দেখলাম কিছু নরপিশাচের দল ওই বাচ্চা মেয়েটিকে উলঙ্গ করে পালা ক্রমে ধর্ষণ করে যাচ্ছে। খুব সুন্দর পরীর মতো চেহারা বাচ্চা মেয়েটি চিত্কার করে কান্না করে যাচ্ছে আর বারে বারে জ্ঞান হারাচ্ছে।

মেঘঃ কি বলছো পাহাড় ভাই...!!! এটাও কি সম্ভব...!!! বাচ্চা মেয়েটির কান্না শুনে ওদের কি একটুও দয়া মায়া হয়নি???
পাহাড়ঃ ওদের আবার দয়া মায়া, হেহ্... বাচ্চা মেয়েটি যতোই চিত্কার করে কান্না করে যাচ্ছিল, ওরা তখন আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠে ছিল।

মেঘঃ তোমার কথাগুলো শুনে মানুষের উপর প্রচন্ড রকম ঘৃণা জন্মে গেছে। যাইহোক, তারপর কি হলো বলো?
পাহাড়ঃ বাচ্চা মেয়েটির তলদেশ দিয়ে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল আর সেই রক্ত দিয়ে ওরা হোলি খেলা করে ছিল। আর বলতে পারছি না মেঘ, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

মেঘঃ আমার চোখে পানি চলে এসেছে, তবুও শুনতে চাই। দয়া করে আমাকে পুরো ঘটনাটা বলো, যতোই কষ্ট হউক তোমার। বাচ্চা মেয়েটির সাথে শেষ পর্যন্ত কি হয়ে ছিল?
পাহাড়ঃ বাচ্চা মেয়েটি এক সময় থেমে গেল। আর কোন শব্দ করছে না। নিথর শরীর আমার বুকে রেখে শুয়ে রইলো কিন্তু তখনও অত্যাচার অব্যাহত ছিল। এক সময় নরপশু গুলো ক্লান্ত হয়ে গেল। তখন বুঝতে পারলো, বাচ্চা মেয়েটি এখন মৃত।

মেঘঃ উফফঃ কতোটা নিষ্ঠুর... কতোটা নির্মম... তুমি ঠিকই বলেছো, ওরা মানুষ নয়, ওরা পশু। তারপর কি হলো বলো???
পাহাড়ঃ ওদের চেয়ে আমার পাহাড়ি পশু গুলো ঢের ভালো। ওরা হচ্ছে নরপশু, সবচেয়ে নিকৃষ্ট পশু।

মেঘঃ হ্যাঁ, তা তো বটেই। যাইহোক, তারপর কি হলো???
পাহাড়ঃ তারপর ওরা মেয়ে বাচ্চাটিকে আগুনে পুড়িয়ে চলে গেল। পরীর মতো সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েটির শুধু কঙ্কাল টুকু অবশিষ্ট রইলো।

মেঘঃ সত্যি, তুমি ঠিক বলে ছিলে, লজ্জা..!! লজ্জা..!! লজ্জা..!! এই ঘটনা শুনে আমার চিত্কার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে হচ্ছে বজ্রপাত করে এর প্রতিবাদ করি।
পাহাড়ঃ তবে তাই করো। আমি হয়তো পারছিনা কিন্তু তুমি চাইলে পারবে মেঘ, তুমি পারবে, অবশ্যই পারবে।

মেঘঃ একদিন এই সুন্দর পৃথিবী ধ্বংস হবে এই মানুষ গুলোর অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারে। যাইহোক, আজকে গেলাম, তুমি ভালো থেকো।
পাহাড়ঃ হুম, একদম ঠিক বলেছো। আমার আর ভালো থাকা, জানিনা কতো দিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো। তুমিও ভালো থেকো।

কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ, ঢাকা।

আবৃত্তি

আবৃত্তি


আবৃত্তি
সাহিদা সাম্য লীনা

 এই জানিস বীথি, শিহাব আমাকে খুব ভালবাসে। ওর জীবনের চেয়েও বেশী। কথাগুলো বলছিল আবৃত্তি। ওর মুখে শিহাবের এতো প্রশংসা দেখে অবাক হয়েছিলাম। ওর বলার ধরনে বোঝা যাচ্ছিল শিহাবকে আবৃত্তিও  ভালবাসে। কথায় কথায় কেবল শিহাবের কথা আবৃত্তির মুখে ইদানিং।
 দুজন দুজনকে যে বড় বেশী ভালবাসে তা নিশ্চিত।  দুজনেই কøাস শেষে চোখে চোখে কথা বলে। এরপর দূরে কোথাও পার্কে চলে যায়। হাতে হাত ধরে দুজনে হাঁটে ,কথা বলে। কত কথা। এতো কথা, কোথায় পায় কে জানে। শিহাব আবৃত্তিকে বলে অনেকের মাঝে তুমি একজনা, এতো হাজারের মাঝে আমি তোমাকে পেয়েছি। তোমার মতো কেউকে পাব আগে ভাবিনি। যেদিন তোমাকে ইউনিভার্সিটির বারান্দায় দেখেছি , আমার মধ্যে যে কী হচ্ছিল তা বোঝাতে পারবনা। তোমার হাসি, তোমার কথা,তোমার চলন, বলন দু’মাস দেখেছি। যত দেখছি ততই, তোমার প্রতি আমার ভাল লাগা তৈরি হয়েছে। ভাবিনি তোমাকে পাব! বল,কখনো ছেড়ে যাবেনা!
আবৃত্তি  শিহাবের কথা শুনে হাসে আর মুখ লুকায় শিহাবের বুকে। বলে দূর কাছে এসেছি কি ছেড়ে যাবার জন্য! আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবনা।   শিহাব আবৃত্তি কথা দেয় দুজন দুজনকে।তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবনা শিহাব। তোমাকে ভোলা,আর  ছেড়ে যাবার শক্তি আমার নেই। জানিনা, সামনে আমাদের জন্য কী প্রতিক্ষা করছে। দুজন দুজনকে পাব তো!  শিহাব আবৃত্তির মুখে হাত চেপে ধরে। দূর, কী বলছ!  আমাদের ভালবাসা সত্য, আমরাএকে ওপরকে ভালবাসি।এটাই সত্য। আর কী লাগে! সব বাধা আমরা পেরুতে পারবো। তুমি যাই বল আমি তোমাকে বিহনে থাকব না। তোমার পিছুও ছাড়বনা। আবৃত্তি শিহাবের কথা শুনে কেঁদে ফেলে বেশ আবেগে।  শিহাব আবৃত্তির চোখ মুছে বলে আবৃত্তি  আমি  আজ যেমন কালও তেমনই, তোমারই থাকবো।
আট মাস কেটে গেল শিহাব আবৃত্তির সম্পর্কের। প্রতিদিন নিয়মিত ওদের দেখা, কথা হয়। বাসায় গেলেও একে ওপরের ছবি ম্যাসেঞ্জারে আদান প্রদান করে। যেদিন দেখা হয়, আবৃত্তি মাঝে মাঝে দেরী করে এলেও শিহাব আবৃত্তির অপেক্ষায় শিউলী গাছটার কোল ঘেঁষে বসে থাকে। সিগারেট চলে তখন ক্ষনে ক্ষনে। আবৃত্তি এলে সিগারেট ফেলে দিয়ে ওর বুকে মাথা লুকায়। আবৃত্তি ভালো গান করে। শিহাবের মন খারাপ হলেই গান গেয়ে শিহাবকে ঠিক করে ফেলে। মোবাইল রিং টোনটাও আবৃত্তির গানের কন্ঠে শিহাব করে রাখছে।  
আবৃত্তি স্কুল মাষ্টারের মেয়ে। ওর পড়াশোনা চলে  অনেকটা ওর নিজের টাকায়। আবৃত্তির বাবা গ্রামের বাড়ি থেকে প্রথম প্রথম টাকা পাঠালে, আবৃত্তি চিটাগাং থিতু হলে,সবকিছু চেনাজানা হলে, বন্ধুবান্ধব জুটলে ধীরে ধীরে ওদের মাধ্যমে তিনটা টিউশানি জোগাড় করে। গ্রামে বাবাকে নিষেধ করে টাকা পাঠাতে। বাবা শুনেনা ।  দুৃএকবার সামান্য হলেও পাঠায় মেয়ে পারছে কি চলতে’ এই ভেবে।
শিহাবের সাথে সম্পর্কের শুরুতে জানত না আবৃত্তি যে টিউশানি করে। একদিন ওর আসতে দেরী দেখে শিহাব জানতে চায়,আবৃত্তি তখন জানায় ,ওকে তিনটা টিউশানি করতে হয়। তখনি শিহাব জানতে পারে ওর পুরো ফ্যামিলি প্রোফাইল। শিহাব জানার পর আবৃত্তির পড়াশোনার খরচটা নিতে  চাইলে আবৃত্তি রাজি হয়না।বলে দেখ,এতে নিজেকে আমার ছোট মনে হবে। আমি একজন শিক্ষকের মেয়ে। আমার পরিবারকে আমি ছোট করবো না। দেখ আমি ঠিকই পারবো। শিহাব আর কিছু বলতে পারেনি সেদিন।
আজকে, টিউশানির পর আবৃত্তি শিহাবের সাথে পুরো সময় কাটায়। রাত ন’টার মধ্যে রেস্তোরায় ডিনার সেরে শিহাব আবৃত্তিকে ওর হোষ্টেলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় আসে।
শিহাবের রুমে আসে ওর মা। খেতে ডাকে। মা আমি খাবনা। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। প্রায়দিন ছেলের এমন কথা শুনে আজ একটু রাগ দেখায় শিহাবের মা। তোর কী হয়েছে বলতো?  তুই ইদানীং বাইরে খাস? কেন? তোর কী হয়েছে?
শিহাব কিছু বলেনা। ওর মা বলে,তোর বাবা তোর বিয়ে ঠিক করেছে। আগামী পরশু ওদের বাসায় যাব আমরা। তুই ওদিন বাইরে যাবিনা।
মায়ের কথা শুনে শিহাব অবাক হয়।বাংলা ছবির কাহিনী মনে হলো শুনে। শিহাব বলে মা তুমি কি  ফান করছো। আচ্ছা চল খাব। মা বলে না আমি সিরিয়াস। আমরা তোর জন্য মেয়ে ঠিক করেছি। এতে ফান করার কি আছে? শিহাবএবার মায়ের কথায় একটু ধাক্কা খায়। মা-বাবা কি ওর একটু পরিবর্তনে সন্দেহ করে বিয়ে দিতে চাচ্ছে  না তো! মা আবারো ওয়ার্নিং দিয়ে চলে যায়।
শিহাব শিল্পপতি বাবার দু ছেলের একজন। বড়ছেলে। বাবার ব্যবসার কিছুটা ইতিমধ্যে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। পড়াশোনাটা শেষে পুরোপুরি বাবাকে  সাহায্য করা ওর ইচ্ছা। কিন্তু হুট করে বিয়ে এটাতো শিহাব মানবেনা। তাছাড়া ও এখন আবৃত্তির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আবৃত্তি যখন চাইবে ওরা বিয়ে করবে।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে শিহাবের। ফ্রেশ হয়ে  টেবিলে আয়। তোর বাবা ডাকছে। শিহাব ভাবনায় পড়ে। কী যে, মুশকিল! কী শুরু করলো ওরা না জানি।
আধ ঘন্টা পর শিহাব আসে টেবিলে। বাবার সাথে পাঁচ দিন পর দেখা নাস্তার টেবিলে। বাবা সকাল ,সকাল চলে যায় অফিসে নানা কাজে। কখনো ঘুমে থাকে, পরে যায়। শিহাব যায় আগে ,কখনো বাবা আগে যায়। শিহাবের যেদিন ক্লাসে যাবে সেদিন মা’ই উঠিয়ে দেয়। ফাঁকে ফাঁকে অফিস যায় শিহাব।
বাবার মুখোমুখি হতে শিহাবের কেমন জানি লাগছে। বিয়ে ঠিক করার কথা শুনে মনে হয়। শিহবের বাবা বলে কী বাবা কেমন চলছে দিনকাল? তোমার মার কাছে শুনলাম তুমি বদলে গেছ আজকাল, যাক এখন তোমার জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছি। তোমার বিয়ে দেব ভাবছি। মেয়েটা আমাদের এক পার্টনারের। দেখতে ভাল,সুন্দরী। তোমার ভালো লাগবে।
বাবা আমি বিয়ে এখন করবো না। আগে পড়াশোনা।তারপর  আমি আরো স্টাবলিশড হবো। তারপর হবে এসব। ছেলের কথা শুনে বাবা মা বিস্মিত! বলে আরে একবার মেয়ে দেখবি, তারপর না হয়। শিহাব বলে না বাবা।এটা হয়না।শিহাবের  বাবা একটু কঠোর হয়েই বলে,দেখো আমি কথা দিয়েছি কাল তাদের বাসায় যাবো। মেয়ের সাথেও আমার কথা হয়েছে। আমরা না গেলে তারা আমাদের ভালো বলবেনা। বলবে মিথ্যুক, প্রতারক। বাবা চলে যায়। শিহাব মাকে বলে। কাজ হয়না।
শিহাব কিছু ভেবে পায়না। আবৃত্তিকে ও কথা দিয়েছে। যেখানে মেয়েদের বিয়ে আগে হয় সেখানে ও ছেলে হয়ে , ওর বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগছে ওর বাবা-মা। আর একটা বছর পরেই ওর পড়া শেষ ,মোটামুটি মাষ্টার্সটা শেষ করে ব্যবসাতে লেগে যাবে পুরোপুরি এই ভাবনাই ছিল শিহাবের।  তারপর আবৃত্তিকে নিয়ে সংসার পাতা। কত স্বপ্ন! কেমন ওলট-পালট লাগছে শিহাবের।
সকাল গড়িয়ে দুপুর। শিহাবের দেখা নেই। আবৃত্তি অস্থির হয়ে উঠে। এমন তো কখনো হয়নি। শিহাব কাজ থাকলে বলে দেয়। আজ দেখা হবেনা বা কখন হবে। একটা কিছু তো জানায়।  আবৃত্তি টিউশানি শেষ করে ফোন দেয় বাস স্টপেজে এক পাশে গিয়ে। শিহাব ফোন ধরেনা। কয়েকবার ট্রাই করে আবৃত্তি। ধরেনা। আবৃত্তি মন খারাপ করে হোষ্টেলে ফিরে। রুমে ঢুকতেই রুমমেট  বীথি বলে কী রে আবৃত্তি আজ জলদি ফিরলি? আর মন খারাপ কেন? আবৃত্তি বলে, বড় লোকের ছেলেরা সব খারাপ হয় তাই না রে বীথি? বীথি বলে কেন রে শিহাবের সাথে কিছু হয়েছে তোর? আবৃত্তি বলে না, এখনো কিছু হয়নি।  হবে মনে হয়। বীথি বলে কি বলিস! আরে ধূর! কিচ্ছু হবেনা। তোদের ভালবাসা তো গভীর বলেছিলি না? আবৃত্তি নিরুত্তর। আজ বোধহয় শিহাবের কোন সমস্যা থাকতে পারে। দেখবি ও তোকে ফোন দিবে। তুই শান্ত থাক।
  রাত বাড়ে, আবৃত্তির ঘুম আসেনা। শিহাবের ছবিটা হাতে নিয়ে চেয়ে থাকে। গরীবের মেয়ে হয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে সে! শিহাব ওকে পরিবর্তন করেছে ভালবাসার জগতে ঢুকিয়ে। এখন সেখান থেকে শিহাব ছাড়া বের হওয়া সম্ভব না। আবৃত্তির মন প্রাণ সবই এখন শিহাবের। 
মাথার কাছে ফোনটা সুরে সুরে বাজে। শিহাবের পছন্দের টোন।আবৃত্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে শিহাব। রিসিভ করেই পর পর প্রশ্ন। শিহাব বলে সরি, আবৃত্তি, আজ আমি ঘর থেকে বের হতে পারিনি। মা একটু অসুস্থ ছিল। মায়ের হার্টের  সমস্যা দেখা দিয়েছে। মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম। তাছাড়া... বলে থেমে যায় শিহাব।
আবৃত্তি এতক্ষন শুনলো মনোযোগে সব।ওর মায়ের সুস্থতাও কামনা করলো। আবৃত্তি বলে, কি যেন বলতে চাইলে,, .? শিহাব  বলে না থাক কাল এসে জানাবো সব। তোমার সাথে অনেক কথা।
আবৃত্তির ঘুম আসেনা  সারা রাত। কেমন যেন ভয় হলো শিহাবের কথা শুনে। রাতটা কোন মতে কাটে আবৃত্তির। মুখটাও ধুতে মন চাচ্ছেনা ওর।একরাতেই চোখ ফুলে কি অবস্থা!
 বীথি দেখে বলে হায়, আবৃত্তি এমন হলে চলে? জীবনে কত সময়, এর চেয়েও খারাপ যাবে। এমন তো হবে, হতেই পারে। কোন সমস্যা গুরুত্ব দিতে নেই। দেখ, আমি কত প্রেম করি। ওরা আসে আর যায়,যাবে। আমরাও মেয়েরা আসবো,যাবো। তুই শিহাবকে বুজতে দিস না তোর মন খারাপ অবস্থা। ওর কাছে ছোট হবিনা। দেখিয়ে দে আর একটা প্রেম করে। আবৃত্তি কি মনে করে হাসলো। বলে, বীথি দেখ তোর মতো সবাই না রে।সবাই যদি এমন হতো! ভালই তো ছিলাম আমি! কেন যে শিহাব এলো জীবনে। জীবনটা নষ্ট করতে একটা ছেলেই বুঝি যথেষ্ট! আমি শিক্ষক বাবার সন্তান। মফস্বলে ছিলাম। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছিলাম। কেন যে এসব করতে গেলাম! বলে কাঁদলো।
ভার্সিটির ৩য় তলার বারান্দা থেকে নিচের দিকে তাকালে দেখে শিহাব দাঁড়িয়ে ঝাউ গাছটার কাছে। আবৃত্তি অস্থির হয়ে উঠে শিহাবের কাছে যেতে। এ সময় শিহাবই ফোন দেয়। আবৃত্তি ফোন রিসিভ করেই হাঁটা দেয়। শিহাব বলে ক্লাস শেষ হলে আস। ফোন রাখতেই এক মিনিটে হাজির আবৃত্তি।  শিহাব দেখে আবৃত্তির চেহারার হাল! বুজতে পারে ও কি টনেশনে আছে। আবৃত্তিও দেখে শিহাব  অন্যদিনের মতো নয়। মুখটা ফ্রেশ না। কেমন যেন চোর, চোর লাগছে।
একটু দূরে গিয়ে নিরিবিলিতে বসে ওরা দুজন। যেখানে প্রায়ই ওরা বসে। পাহাড় দেখা যায় এখান হতে। আবার পাহাড়ের ঢাল বেয়ে রাস্তা উঁচা নিচা। শিহাব শুরু করে, বলে আবৃত্তি আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। এই বলেই সে আবৃত্তির হাত দুটো ধরে বলে প্লিজ আবৃত্তি আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমার যোগ্য না,আমি তোমার জন্য ছিলাম না। আল্লাহ তোমাকে আমার জন্য রাখেনি। আমি এমন হবে জানলে কখনো তোমার ছায়ার কাছেও আসতাম না। আবৃত্তি শিহাবের প্রতিটা লাইন শুনে কেঁপে উঠলো । যা বুঝার বুঝে ফেললো। বললো, তুমি কি বিয়ে করে ফেলেছ? শিহাব মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে থাকে। আবৃত্তি আবারো প্রশ্ন করে।
শিহাব গত পরশুর সব ঘটনা বলে। মা সেদিন আমাকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছিলনা বাসা হতে। নানা গ্যাঞ্জাম আর ঘর ভর্তি মেহমানে ভরে রেখেছিল। আমার ছোট ভাই আহাদকে লাগিয়ে রেখেছিলে  যাতে সে ফলো করে । যখনি  দরজার কাছে যাই; মা বলে চিৎকার করে  আহাদ । মেহমানের লজ্জায় কিছু বলতেও পারছিলাম না। এভাবেই বেলা তিনটা পর্যন্ত। বাবা আসে । এরপর সবাই মেয়েদের বাসায় যায়। আমাকে জোর করে নিয়ে যায়। কথাবার্তা হয়। মেয়েরা সিদ্ধান্ত নেয় সেদিনই বিয়ে পড়াবে। বাবা-মাও রাজি হয়। আমি বাধা দেই। কিছু বলতে যাই। এসময় মা আমাকে বাধা দেয়। বাবার চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিলনা। আমি উঠে চলে আসতেই মেয়ের বাবা বলে, আপনার ছেলে মনে হয় বিয়েতে রাজি না। এটাতো ঠিক হলোনা। মেয়ে তখন ওখানে ছিলো। বললো বাবা এমন ছেলেকে আনলে যে আমাকে বিয়ে করবেনা, আমি দুদিন পর আমেরিকা যাচ্ছি। উনি রাজি না হলে থাক। হাজবেন্ড নিয়ে যাবার কথা ছিলো। আমি না হয় একাই যাব এই বলে মেয়ে চলে যাচ্ছে দেখে শিহাবের মা বলে না মা ও রাজি, আসলে হঠাৎ করে তো সব, তাই। তারপরও মেয়েটা বলে না আন্টি আমার মনে হয় ঠিক হবেনা। মেয়েটা ভাল ছিলো ,দেখলাম। কিন্তু বাবা-মা এর বাড়াবাড়ি ভাল লাগছিল না।
আমি মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলতে চাইলে মা কি বুঝে না করে, হঠাৎ মা এর হার্টের ব্যথা শুরু হয়। মা শিহাব বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে জ্ঞান হারায়। মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই আমরা। মা এর জ্ঞান ফিরে আসলে মা আমাকে প্রমিজ করায়, ’আজ এক্ষুনি এই মেয়েকে বিয়ে কর। নইলে আমার মরা মুখ দেখবি। আমি আর ফিরবনা।’ মা এর কথায় দু-ভাই কেঁদে উঠি।  বাবা বলেন তোরা যা খুশি কর। আমাকে অপমান করার আর টাইম পেলিনা।এসব কথা শুনে, পরিবেশ অনুকূলে দেখে আমি সেদিনই বিয়ে করি ওই মেয়েকে। আক্ত হয়ে যায় আমাদের। সেদিন তাদের বাসায়ই থাকি দু’পক্ষের সিদ্ধান্তে। কথা হয় আমেরিকা থেকে চারমাস পর এলে দেশে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। মেয়েটা আমেরিকা ছোট থেকেই থাকে।তার চাচা মামারাও। পড়াশোনা সব সেখানে। সেখানে তাদের একটা ব্যবসা দেখাশোনা করে।তবে বাঙ্গালি কালচারে মেয়েটা বেড়ে উঠে। বাবা মাকে, বলেছে দেশে আমি থাকতে পারবো আসা যাওয়ার মধ্যে। তার আপত্তি নেই। এই বলে শেষ করে শিহাব আবৃত্তির মুখের দিকে তাকায়।
 আবৃত্তির পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সব শুনলো । চোখের পানি পড়ছে অনবরত..। শিহাবের কষ্ট হয়। হাতটা দিয়ে মুছতে চায়, যেই হাতটা বাড়ায় অমনি আবৃত্তি ওর হাতটা জোরসে সরিয়ে দেয়। উঠে দাঁড়ায়। যাবার পথটার দিকে পা বাড়ায়। শিহাব বলে, আবৃত্তি আমাকে ক্ষমা করো, আবৃত্তি কিছু বলেনা। শিহাব বলে এভাবে যেওনা। কিছু একটা বলো প্লিজ! আবৃত্তি বলে  ছি! এতো সব হবার পর আর কি কথা? যাও বউ নিয়ে সুখে থাকো। শিহাব বলে আমি তো ওকে আমার ভেতর থেকে মেনে নিইনি। পারবনা। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কারো কাছে নিজেকে দিতে পারবনা। তুমি চাইলে আমি তোমাকে যখন বল বিয়ে করবো। দেখবে এ মেয়ে তখন আমাকে ডির্ভোস দিবে।আবৃত্তি এ কথা শুনে শিহাবকে থাপ্পড় মারে। বলে, ছি ! শিহাব , এভাবে মেয়েদের জীবন নষ্ট  করার মানে হয়না। কাঁদতে কাঁদতে আবৃত্তি চলে যায়। শিহাবও কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। আর পেছন থেকে ডাকে আবৃত্তি সত্যি আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি...আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবো, ওই মেয়েকে একদিন আমি তোমার কথা বলবো। আমার যা হবার হবে।
আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালবাসি। আবৃত্তি আর পিছু ফিরেনা। চলে যায় ওর গন্তব্যের দিকে। বুজতে পারে শিহাব তাকে জ্বালাবে। ও স্থির করে আর নয় এমন, শিহাব যেন আর চান্স না পায়,ওকে যে ভুলতেই হবে  ।
পাহাড়ের নীরবতায় আঁকা বাঁকা পথে যেতে ওর এতক্ষণের কষ্টের মুহুর্তটা কেন যেন কেটে যায়। সকালে বীথির কথাগুলো মনে পড়ে।  আবৃত্তির বাবার স্বপ্ন ওকে  এ মুহুর্তে  সুখ দেয় কিছুটা।
আবৃত্তি সে সুখে পা বাড়ায়। কি যে এক ভবিষ্যত সুখ ভাবনা ওর  হৃদয়ে দোল খাচ্ছে।


সাহিত্যিক ,সাংবাদিক
ট্রাংক রোড, ফেনী