পদাবলি

পদাবলি




একগুচ্ছ কদম
আহমদ মেহেদী

এই আমি-
জীবনের এপিঠ-ওপিঠ ভাবতে ভাবতেই
দীর্ঘ ৩০ বছর পার করে দিয়েছি
কখনো রাতের মাতাল সমীরণে,
কখনো রাতের নিস্তব্ধতায়
আবার কখনো বরষা রাতের জ্যোৎস্না- পরীর নিমন্ত্রণে
জেগে থাকে আমার দু’টি বিক্ষুব্ধ চোখ
এই আমি, জেগে আছি ঐ দূর পৃথিবীর পথ চেয়ে।

এই আমি ও জীবনের-
জন্মবিলাপ, জন্মপাপ, জন্মবিলাস, জন্ম-টান তোমার প্রতি
যোগ বিয়োগের সন্নিকটে
আমি আমার রাজ্যের সবকটি দ্বার
খুলে রাখি প্রহরী বিহীন
কেননা- আমি জেগে থাকি, আমাকে জেগে থাকতে হয়।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় পিতা ও সংসারের টানা পোড়েন নিয়ে ভাবতে হয়।


তাদের মুখে একটু হাসি দেখলে শঙ্খ রাতের পাখিরা
আমাকে আপন মনে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়,
‘হে বৎস,এবার একটু ঘুমাও- তোমার রাজ্যের আজ আমরা প্রহরী।
তবুও ছুটে চলা, তবুও জেগে থাকা তুমি
যদি আস এক গুুুচ্ছ কদম হাতে  আবার রাতের কামনায়।



হোলি
আয়মান বারী

সবুজের বুক চিরে আজ রক্ত হোলি উদযাপন!
এই কি আমার স্বাধীন বাংলা?
ক্ষমতার কাছে ন্যায্য দাবি হয় যেথা লুণ্ঠিত!

আন্দোলনের গণ জোয়ার কেড়ে নিচ্ছে অত্যাচারীর ঘুম,
লাঠিয়ালেরা নেমে গেছে, চলছে গুম আরখুন।
খুঁজে পাবেনা স্বজন তোমায়
ফিরবেনা আর ঘরে চোখ রাঙানো স্বৈরাচারী
পাঠাবে ঐ কারাগারে।

গায়ের জোরে, পায়ে ঠেলেহচ্ছে গদি লুট
মেনে নেওভাই, দেখে যাও শুধু- রবে কত আর চুপ!
আমার ভাইয়ের রাঙা খুনে রাজপথ রঞ্জিত,
হায়েনার দল খামছে ধরেছে মানচিত্র ক্ষত-বিক্ষত!

বোনের চাপা আর্তনাদে আকাশ-বাতাসভারী
ঋণের হিসেব মিটিয়ে সব তবেই ফিরব বাড়ি।
বাংলা মায়ের দামাল ছেলে নেও শপথ হাতে রেখে হাত
গুড়িয়ে দাও ক্ষমতার চূড়া ভেঙে দাও বিষদাঁত।




তুমি নামে বিচ্ছেদ
সুমন আহমেদ

তুমি নামে কত বিচ্ছেদ- কেবল শুধু আমিই জানি...
বসন্ত ক্ষণে অশান্ত মন- হৃদশূন্য পাতাঝরা বৃক্ষের মতো।
চৈত্রের হাহাকার বয়ে যায় অবিরাম শূন্য হৃদয়ে!
বিষণœ রোদ্দুরে পুড়ে পুড়ে ছাই অসহায় বুকের জমিন;
একফোটা সুখের বৃষ্টির প্রত্যাশায় কতনা আহাজারি।
বেলা-অবেলায় ভাঙে হৃদয়কূল বেদনার ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ।
পাখি মন এখন আর সন্ধ্যা হলে ফেরেনা আপন নীড়ে।
বর্ষা চোখ শ্রাবণ ধারায় ভিজিয়ে দেই রাত্রির শহর; রাতের নিয়ন
আলোতে খুঁজে বেড়াই চিরচেনা মুখ- সেই হারানো সুখ;
না পাওয়ার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে-
প্রতিক্ষণ অবুঝ মন করে যায় তোমার অভিসার।
বুকের জমিনে তিলে তিলে গড়ে উঠা তরুশাখা দুমড়ে মুচড়ে
দূরে নিক্ষেপ করে- বিচ্ছেদ নামের কালবৈশাখী তুমুল ঝড়।



স্বপ্ন উঁকি দিক
আবু ইউসুফ সুমন

বিবর্ণ মুখের গুমোট বাধা একটি নিস্তব্ধ রাতে হেসে উঠে সকল অজানা কষ্টগুলো
চিন্তার আবদ্ধ করিডোরে ভাবনারা নিশ্চল হয়ে যায় অমাবস্যার অন্ধকারে।

হাজারো পূর্ণতা আর অপূর্ণতার সমীকরণ ভেসে উঠে নিষঙ্গ মনের সুগভীর অন্তরালে
ভালো না থাকার উষ্ণ  নিশ্বাসে ভারী হয়ে উঠে চারপাশের মৌন পরিবেশ।

প্রিয়জনদের পদচারণায় উদাও হয়ে যাক চোখ বাধা অপ্রত্যাশিত এই মুহূর্তগুলো
সদা-হাস্যজল কাছের মানুষগুলোর স্বপ্ন উঁকি দিক প্রশান্তির খোলা বাতায়নে।

বৈরাগ্য বাসা না বাধুক ধর্মীয় কোনো বিধানের বিচ্ছিন্নতায়
বিশ্বাসীদের হৃদয় প্রতিটি  ক্ষণে পরিপূর্ণ  থাকুক ফজরের সু-মিষ্টি  বাতাসে।


যৌবনের নবারুণ
পরান জহির

প্রতিজনমেই যৌবনের পায়ে আমি এঁকে দিই
দুরন্ত দূর্বার ছবি। বুকে আঁকি সমুদ্রী জলছবি।
যৌবনের কণ্ঠে ফোঁটাই নিযুতকোটি ফুলকলি
যৌবনের আকাশে উড়াই মুক্ত পাখির উড়াল।
যৌবনের ললাটে আমি নবারুণের দৃশ্য আঁকি।

যৌবনের দীপ আমায় পথ দেখায় ধুঁধু আঁধারে
পথ ভুলিনা আমি-পথ দেখাই। পথ সৃষ্টিও করি।
পায়ে পায়ে গর্জে উঠে শিকল ভাঙার নৃত্য-সুর
থেমে যেতে জানেনা যৌবন- যেতে হবে বহুদুর।


জয়
মিসির হাছনাইন

তেইশ বছরের জীর্ণ খাতা উল্টে দেখি-
আমার জয়ের পাতা শূন্য।
 শেষ রাতের চোখ বুজে জীবনের সাদা পৃষ্ঠায় ওড়ে যাচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো....

সাদা মেঘ ওড়ে অসীম আকাশে। শ্রাবণের বৃষ্টি ঝরছে,
একি! ভিজে গেছি আমি। পুকুর জলে ভাসছে নীল আকাশ,  নীলপদ্ম ফুটে আছে পাশে।
একটা পানকৌড়ি দুপুর জলে উড়ে গেল,
জীবনের যৌবন মধুময়, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ জয়।


অন্ধকার
সৈয়দ শরীফ

ভাবো,
কোনো এক নদীর মাঝখানে একটি
নৌকো- একটি তুমি একটি আমি;
আমাদের চারপাশ কী বিদঘুটে অন্ধকার !
কয়েকশো কোটি তারা স্বাভাবিক নিয়মে জ্বলছে-
কিছু চামচিকে বা বাঁদর উড়ে যাচ্ছে
আমাদের চোখের ঠিক তেরো হাত উপর দিয়ে;
(অন্ধকারে খুব ঝাপসা লাগছে দেখতে)

তুমি ভাবতে পারো,
আমাদের চারপাশ সত্যিই খুব অন্ধকার;
যেহেতু অমাবস্যা চলছে- যেহেতু এখানে
বলা হয়নি ল্যাম্প অথবা জ্বলন্ত কুপি’র গল্প।
তুমি ভাবতেই পারো- আমরা ভেসে চলছি
এক অন্ধকার রাত ও কূল নেই এমন
কোনো নদীর স্রোতে; খুব সহজেই ভাবতে
পারো এসব, যদি এরচেয়ে নিকষ কোনো অন্ধকার
তোমার ভাবনাশক্তিতে আঁচড় কেটে না যায়...

নারী সিরিজ-১
পার্থ কর্মকার

শেষ বিকেলের আকাশ সুন্দর কিন্তু রহস্যঘন।
ঠিক যেন একটা লাল পেরে কাঁচা হলুদ শাড়ি পড়া নারীর দেহ কাঠামো।
নীল আকাশ পরিবর্তন হয়, পরিষ্কার আকাশ মেঘ বাদলের জালে ভরে যায়।
পরিবর্তনের এই খেলা আমি বুঝতে পারি না।
বুঝতে পারি না আমি নারীর দেহের আঁকাবাকা জালের ভেতর সেই রহস্যঘন মনকে।
যা আমাকে আবার সেই আকেশের কাছেই আছড়ে ফেলে।
আকাশ -নারী
সব সুন্দরই কি একই ভাবে রহস্যঘন?

সবুজের দোসরেরা
সাদিক আল আমিন

শ্রাবণকে কখনো জরাজীর্ণ বাস্তুহারা হতে দেখেছো ?
উদোম হৃদয়ে তার বস্ত্রহননের বেদনা বোঝো ?
এতোদিন ওম’ভরা গানে গেয়ে গেছো করুণতম আস্ফালন!
এখন ফিরতি পথে টাকনুভরা জল, আলক্ষেত পদতলে পাড়ি দাও...
শাড়ি গুটিয়ে নাও হাঁটু অবদি; বর্ষা রূপসী...
এবার আমাদের কথা হোক জারুল-জামরুলে
ভেজা কদমের পাতায় পাতায়, শব্দ হোক, উন্মাদনায়।
আমাকে কোনোদিন শীতল রক্তে দেখতে পাবে হয়তো,
আবার তখন ভেবো...
সবুজ পাতারা কতো ভোরে গোসল সেরে রেখেছে সেদিন!

যান্ত্রিকতা
সা’দ সাইফ

স্থির মানবতা; ধেয়ে আসছে কাষ্ঠ পুতুল।
থেমে নেই রোবটের পাষ- আচরণ।
নির্বিকতা অতীতের চৌচালা ঘরে পিদিম জ্বালায়।
অন্ধকার ঘরে আলোর স্ফূরণ; তবু থেকে যায় আঁধারের ছাপ।
আসমান ভরা দেয়া, মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে চতুর্পাশ।
নেই কুকুর বিড়ালের সেই পাঠ্য প্রবাদ।

নির্জীব প্রাণে বাজে কোলাহলের ডামাডোল। থেকে থেকে বের হয় মিষ্টি পাশবিকতা।
আঁধারের কাছে আলোর চিঠিতে চাঁদরাত দেখার সুকরুণ আবদার।
তবু দিনশেষে বেঁচে রয় সিক্ত আবেগের হলুদ খাম।

নষ্ট স্বপ্ন
রুহুল আমিন রাকিব

দগ্ধ অনলে পুড়ে আমার যতনে গড়া ভালোবাসা।
তুমি সেই ধোঁয়া উড়াও পুবাল হাওয়ায়
শীতল করো তোমার দেহ।
অনলে পোড়া অবয় দেখে একটুও মায়া হয়না তোমার মূর্তি ময় পাথর মনের।
আমার আত্মা পোড়ার গন্ধে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বনের পাখি;
থমকে দাঁড়ায় গাছের সবুজ পাতা।
থেমে যায়, নদীর ঢেউ, অবিরাম ডুকরে কেঁদে উঠে পাহাড়ের ঝর্না;
অথচ তুমি সেই কবেই ভুলে গেছ আমার কথা,
সোনার বালিশে মাথা রেখে,
রূপার পালঙ্কে ঘুমাও তুমি।
আর আমি আজও হৃদয় পোড়ার দগদগে ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছি-
একটি সোনালি সকালের অপেক্ষায়।



প্রতিশ্রুতি
শোয়াইব শাহরিয়ার

প্রতারক স্মৃতি মগজে হানে প্রণয়ের ঢেউ
ময়ূর উড়ে আসে;
ঝড়ো হাওয়া হয়ে নিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে!

খুব ভোরে বেদনার ঢেউ বরফ হয়ে আসে
তখন দু'হাতে জ্বালাই প্রতিশ্রুতির আগুন—
থৈথৈ বৃষ্টি নামাই;
ঠোঁটজুড়ে আঁকি নৈসর্গিক তৃপ্তিবিধান।

তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে না তুলতেই নামে বিষণ্ণতা
বলি, বিষণ্ণতার করিডোরে ঢেলে দাও পৌরাণিক মদ—
দ্যাখো, কিভাবে আমরা ভালোবাসার সর্বোত্তম চূড়ায় উঠছি...


যে ভালোবাসার শেষ নেই : রুমান হাফিজ

যে ভালোবাসার শেষ নেই : রুমান হাফিজ


যে ভালোবাসার শেষ নেই
রুমান হাফিজ

ক্লাস, টিউটোরিয়াল, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন এসবের ঝক্কিঝামেলা সামাল দিতে দিতেই অবস্থা বেহাল। অফ ডে গুলাও কেমন জানি পানসে পানসে মনে হয়। ভার্সিটি লাইফে একঘেয়েমু বাসা বেধে ফেলতে বোধ হয় খুব একটা সময় নেয়নি!
ঈদের ছুটি ঘোষণা হতে না হতেই সব গুছিয়ে টুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালাম। কি যে শান্তি মনের মাঝে দোল খায় তা বলে কয়ে বুঝানো অসম্ভব! যাকগে ঈদ কেটে গেলো সুখে শান্তিতে।
কিন্তু...! বন্যার পানিতে আশপাশ ডুবে আছে সে অনেকদিন থেকেই। সমস্যা ওখানেই। ঈদের পরদিন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম একটা কাজে। কিছু পথ যেতে না যেতেই আচমকা পা পিছলে  পড়ে যাই।
বন্যার পানি রাস্তার উপরিভাগেও ছুই ছুই অবস্থা। আমার পুরো শরীরটাই পানিতে ডুবে একাকার। কোন উপায়ান্তর না দেখে ফের বাড়ির দিকেই রওয়ানা করতে হলো । কাপড় চোপড় পাল্টে নিতে গিয়ে বুঝতে পারি ফোনটাও ভিজে গেছে । অনেকবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু না। ফোন আর অন হয় না। খুশির দিনে এমন একটা ঘটনায় সব যেন শেষ করে দেবার মতো অবস্থার তৈরী হল। কারণ এই ফোনটাই আমার একমাত্র সম্বল। ল্যাপটপ, ট্যাব কিংবা এই জাতীয় কোন কিছুই আমার নেই। যদিওবা এগুলোর থাকাটা আমার দরকার।

ঈদের সময় বলে কথা। ফোনকল, টেক্সট এককথায় যোগাযোগ অন্য সময়ের চাইতে বেশি থাকে। খানিকটা চাপা স্বভাবের এই আমি ঘটনাটা কাউকে বলা হয়নি। কিন্তু বড়াপুর থেকে লুকিয়ে রাখা! আর যাই হোক সম্ভব না। ঘটনার আদ্যোপান্ত সবটুকুই ওর সাথে শেয়ার করি।
বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে ছোট বোনের ফোন থেকে টুকটাক জরুর সেরে ফেলার চেষ্টা করি।
ঈদের ছুটি শেষ। আবার চলে যেতে হবে। বাড়ি ছেড়ে চলে আসার মুহূর্তটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি কষ্টের সেই সাথে যোগ হলো ফোনটা নষ্ট হওয়া। হঠাৎ বড়াপুর ফোন-
‘রুমু কই তুমি? (বড়াপু আমাকে রুমু বলেই ডাকে) 
‘এইতো, বাড়িতে।
ওকে, যাচ্ছিস কবে চিটাগং?
‘টিকিট সংগ্র হলে আগামীকালই যেতে পারি।
‘আচ্ছা, এক কাজ কর যাওয়ার আগেরদিন শহরে চলে আয়। আমিও আছি। দেখা হলো। নতুবা যাওয়ার আগে যেকোনোভাবেই হোক, আমার সাথে দেখা করে যাবি, কেমন!     
‘ওকে, আসলে নক দেবো।
ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে না পারলেও বাসে করে যাবো ভেবে আগেরদিন শহরে চলে আসি। বড়াপুর সাথে দেখা হয়। একটা কফি শপে নিয়ে গেলো। কফি আর চা আমার একটু বেশি পছন্দ।
কফি খেতে খেতে অনেক গল্প হলো। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া আর ফোন নষ্ট হওয়ার কষ্ট যেন মুহূর্তেই ধূমায়িত কফির চুমুকে হারিয়ে গেলো!
বড়াপু একটা শপিং ব্যাগ বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। কি এটা? বড়াপু কিছুই বলতে রাজি হলো না। ওর একটাই কথা, ‘খবরদার, ভুলেও এটা বাসায় না যাওয়ার আগে চেক করতে যাবি না’
কিন্তু নাছুড়বান্দা আমার জোরাজুরিতে বড়াপু বলতে রাজি হলো।


‘তুই যখন আমাকে বলছিলি যে, তোর ফোনটা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে তখন আমার খুব বেশি খারাপ লাগছিল। জানিস, আমি তখন চিন্তা করছিলাম। তোর বড়বোন হয়ে আমি ফোন ইউজ করবো আর তুই ফোন ছাড়া! বিশ্বাস কর, এটা ভেবে খুব বেশি কষ্ট পাচ্ছিলাম। আমার হাতে আপাতত তেমন টাকা পয়সাও নেই। স্কুল থেকে স্যালারী এখনো পাইনি তাছাড়া  ঈদে টুকটাক শপিং করে হাতটা খালি হয়ে যায়। আরো ভালো একটা ফোন দিতে পারলে ভালো লাগতো। আপাতত এটা দিয়েই চল। প্লিজ লক্ষী ভাই আমার। রাগ করিস না, প্লিজ!’
বড়াপুর কথাগুলো আমার হৃদয়ে বানের জলের মত হুহু করে ধাক্কা দিচ্ছিল। জিহ্বায় কখন যে কামড় দিয়ে বসে আছি ঠিক মনে নেই। অশ্রুসিক্ত চোখে অপলক তাকিয়ে আছি বড়াপুর দিকে। কিচ্ছু বলতে পারিনি। মুখ দিয়ে বের হচ্ছিলোও না। এ আমার পাগলী বড়াপুটার ভালোবাসা। যে ভালোবাসার শেষ  নেই, শেষ হবেও না।                                                       

পূর্ণ প্রতীতি : রুমানা নাওয়ার

পূর্ণ প্রতীতি : রুমানা নাওয়ার


পূর্ণ প্রতীতি
রুমানা নাওয়ার

ভালোবেসে বিয়ে করেছে ওরা। আহির আর মাহি। দু’জনেই এমবিবিএস শেষ করেছে মাত্র । বয়সটা টগবগে। বল্গাবিহীন ঘোড়ার মতো। মাহি অসুস্থ জেনেও আহির ভালোবেসেছে বিয়েও করেছে পরিবারের অমতে। বাবা মা একমাত্র ভাইটাকে ত্যাগ করেছে ভালোবাসার টানে। কত স্বপ্ন দু’চোখ জুড়ে। মাহিকে সুস্থ করে তুলবে ওর চিকিৎসা বিদ্যার সবটুকু দিয়ে। কিডনির সমস্যা মাহির। দু’টো কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার পর মা র একটা কিডনি নিয়ে মাহির বেঁচে থাকা। আহির সব মেনে বিয়ে করেছে মাহিকে। প্রথম প্রথম তেমন আমল দিতো না বেখেয়ালি মেয়েটি।
মাহি কেমন জানি দুর্বল। শারিরীক কোন আকর্ষণ নেই আহিরের প্রতি। অথচ ঐ সময়টায় একটা ঘোরের ভিতর যায় নতুন কাপলদের। শারিরীক সম্পর্ককে ভয় পেত মাহি। জোর করে তো আর ওসব চলেনা। ভিতর থেকে তাগাদা আসতে হবে। আহির তবুও দমেনা। সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় উপোষী শরীরটার ক্ষিধে মিটাতে। মাহিকে চাঙা রাখতে চায়। তবু বিবাহিত জীবনের নয় বছরে নয় বার ওদের শরীর মিলেছে। তাও ঔষধ দিয়ে মাহিকে। কি অবর্ণনীয় কষ্ট নিয়ে  রাতের পর রাত েেকটেছে সেটা কেবল আহির জানে। ২২ /২৪ বছরের শরীরটা কান্না করতো ডুকরে ডুকরে। আদর চাইতো শরীর ভীষণ আদর। নিপাট বেডশিটটা খাটটা ওর সাথে গুমড়াতো কষ্টে। দাঁতে দাঁত চেপে কামকে দমন করতো আহির। আর বেচারা মাহি কি করবে। ওর শরীর তো এসব বুঝেনা। কাছে টানেনা।
ডায়ালাশিস করে করে ওর শরীরটী বিপর্যস্ত। যে সময়টা আহির বর নিয়ে মধুচন্দ্রিমায় থাকার কথা। সে সময়টায় ওর মাহিকে নিয়ে ডায়ালাশিসের রুমে ডায়লাশিসে দিন যায়। বিয়ের একবছর না যেতেই আত্বীয় স্বজনরা ফিসফাস করতে থাকে বাচ্চা কেন নিচ্ছি না। মাহি অসুস্থ। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ফেললে মঙল হবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। আহাম্মকরা বুঝে না বাচ্চা দেয়ার সামর্থ্য নেই ওদের ছেলের। শরীর যে কয়বার মিলিত হয়েছে তাও আহির চেয়েছে বলে। ওটা তে যতোনা মাহি এক্টিভ ছিলো তার চেয়ে ঢের এক্টিভ ছিলো আহির। তো এভাবে বাচ্চাকাচ্চা কোত্থেকে আসবে বুঝাতে পারেনা ওদেরকে। যতসব চিন্তা ওদের তার চেয়ে বেশী চিন্তায় পরে আহির। তারপর বলতে শুরু করলো বউ রাতে বাইরে ডিউটি করে বাচ্চা কিভাবে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো কথা। ওর ভিতর ঘরে মন পাঁজরে কি হচ্ছে সেটার খোঁজ কেউ নেয়না। বাবা মাকে খুব ফিল করে তখন। শ্বশুর শ্বাশুড়ীও অনেক ভালো। বুঝে সব। আহিরকে মেয়ে মনে করে ওদের। ছেলের সব অক্ষমতা শেয়ার করে ও শ্বাশুড়ীর সাথে। যাকে ও গাল ভরে মা ডাকে। এভাবে দিন যায় মাস যায় বছরও কিছু মাঝখানে অতিবাহিত হয়। আহির ব্যস্ত ক্যারিয়ার নিয়ে স্বামী র চিকিৎসা নিয়ে। ডায়লাশিস করে বাঁচিয়ে রাখে মাহিকে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? হাঁপিয়ে উঠে মাঝেমাঝে প্রচন্ড আত্ববিশ্বাসী মেয়েটি। শেষ পর্যন্ত কি হবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কিছুই বুঝতে পারেনা। তবুও আশায় বুক বাঁধে। আত্বীয় স্বজনের টিপ্পনী  তো আছে। থোড়ায় কেয়ার করে ও এসব। তবুও শ্বশুর-শাশুড়ির ইচ্ছে তার মাতৃত্বের স্বাদ এসব মিলে বাচ্চার জন্য মন আকুল হয়। একটা ফুটফুটে বাচ্চা হোক ওর আর মাহির। মাহির স্মৃতি থাকুক তার পোড় খাওয়া জীবনে। কিন্তু মাহি তো অক্ষম। শেষ পর্যন্ত সবায় মিলে সিদ্ধান্ত নেয় বাইরে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করবে। কথা অনুযায়ী কাজ। চলে গেলো দুজন পাশ্ববর্তী ইন্ডিয়ায়। অনেকে চিকিৎসায় ফল পেয়েছে ওখানে।

টেষ্টটিউব বেবি নিতে হবে আহিরকে।
টেস্টটিউব বেবি নেয়াতে স্পার্ম ডোনার হবে মাহী। মাহীর অহ্মমতার জন্য ৪৪ টা ইনজেকশন আহিরের শরীরটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো। তবুও তো সুখ। সন্তান আসছে তার শরীরে। মা হবে আহির মা। অনেক কষ্টের মাঝেও একদলা সুখ এসে উথলায় বুকের কাছে। প্রজাপতি হয়ে নাচে নানা বর্ণিল ডানায়। মাস দুয়েক পর মাহী আহিরকে নিয়ে চলে আসে বাবা মার কাছে। বউকে দেখে শ্বশুর শ্বাশুড়ীর খুশী আর ধরেনা। মাহির সন্তান পেটে ধারন করছে তাদের বউমা। এর চেয়ে সুখের খবর আর কি হতে পারে তাদের জীবনে? মাহিই যেখানে অস্তগামী সূর্য তাদের কাছে।

দিন যায় আহিরের শরীর ভারী হয়। টুইন বেবির অস্তিত্ব ওর শরীরটায়। শরীর তো ভারী হবেই। বাবা মা ফুপু আত্বীয় পরিজনরা বাহবা দেয় মাহির বীরত্বে।
একটা না দু দুটো বাচ্চার জন্মদাতা মাহি। সাবাস!
নিন্দুকের মুখে চুন কালি দিতে এর চেয়ে সমুচিত জবাব আর কি হতে পারে? সন্তানই জন্ম দিতে পারবেনা বলছিলো সবাই সেখানে এরকম খবর তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। আহির হাসে মুখ লুকিয়ে। আর ভাবে বাহবাকে নেয়ার কথা আর কে নেয়। হায়রে অবোধ মানুষজন।

প্রার্থিত দিনে জন্ম নেয় আহিরের বেবী। ১ম যে আসলো সে চিৎকার করে আশপাশ জানান দিলো ওর আসার খবর। ২য় জন একটু ক্ষীণ স্বরে। আহিরের পৃথিবী ঝলমলা রোদ বসন্তে। মাহিও দারুন হ্যাপী। বাবা হওয়ার আনন্দ মা হওয়ার আনন্দ অন্যরকম। যে হয়েছে সেই বুঝে। যারা হয়নি তারাও এ আস্বাদের অপেক্ষায় হয়তো।

দু’টোর নাম মিলিয়ে রাখা হয় পূর্ণ আর প্রতীতি। একটু একটু বড় হতে থাকে ওরা। আর ঘরটা হাসে ওদের দৌঁড়াত্বে। দাদা দাদীও ওদের জন্য পাগল। সময় কাটায় ওরা নাতনীদের নিয়ে। পুরো ঘরটায় সুাখের আবাস। মাহিও আগের চেয়ে বল ফিরে পায় শরীরে যেন। মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ওর হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে।
বিধাতা সুখ বুঝি সইতে পারেনা বেশী দিন। মাহির শরীর আস্তে আস্তে দূর্বল থেকে দূর্বলতর হতে শুরু করলো। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলো শরীরে। কিডনির সমস্যা তো আছেই। ডায়ালাশিস এ ও আর কাজ হয়না। বাবা মা চোখে অন্ধকার দেখলো যেন। এমন কেনো হলো ছেলেটার। কত আশায় বুক বেঁধেছিলো ওরা। বউ বাচ্চা সব হলো ছেলেটার। সুখের কিনারায় এসে আবার দুঃখের সাগরে ভাসতে লাগলো ওরা।


দীর্ঘ দু’মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে এক ভরা জ্যোৎস্নালোকিত রাতে সবাইকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে মাহি চলে গেলো পরপারে। মেয়ে দু’টোকে খুব কাছে চাইতো শেষের দিকে। অসুখের অবর্ণনীয় কষ্টে চেহারাটা এত খারাপ হয়ে গিয়েছিলো পূর্ণ প্রতীতি ভয় পেতো বাবার কাছে যেতে। মারা যাওয়ার সময় পাশে রেখেছিল তাদের। চোখ ভরে দেখেছিলো তার আদরের কলিজা দুটোকে। আর আহির তো বুকে পাষাণ বেঁধে ছিলো। যে মাত্র মাহি নাই হয়ে গেলো দুনিয়া থেকে তখনই তার ধৈর্য্য’র বাঁধ ভেঙে গেল যেন। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো মেয়েটি। মাহির বুকে আঁচড়ে পড়লো ঢেউয়ের মতোন।
এমন তো কথা ছিলোনা মাহি। তুমি আমাকে একা রেখে কোথায় যাচ্ছ? আমি সর্বস্ব ত্যাগ করেছি তোমার জন্য। আর তুমি?
এ বলে আবার বুক ফাটা আর্তনাদ করতে লাগলো। উপস্থিত সকলে কান্না করতে লাগলো আহিরের বিলাপে। বাবা মাও শোকে পাথর বনে গেলো। তাদের প্রথম সন্তান মাহি। বুকটা ভেঙে যেতে লাগলো কষ্টে।

দিন যায় সময়ের হাত ধরে। পূর্ণ প্রতীতি বড় হতে থাকে আহির আর দাদা দাদাীর ছায়ায়। আহির সারাদিন কর্মব্যস্ততায় কাটায়। নিজেকে ডুবিয়ে রাখে কাজে। ভুলে থাকতে চায় মাহিকে। ঘরে ফিরলেই চোখ আর বুকটা উচলায় তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য। মাহির ঘামে ভেজা শার্ট টা বুকের কাছটায় জড়ায় আনমনে।

সত্তা : রওনক নূর

সত্তা : রওনক নূর


সত্তা
রওনক নূর

বিয়ের দিনে মেয়েদের হাতের মেহেদীর রং তার স্বপ্নগুলো বুনতে থাকে। ছোট্ট থেকে যে স্বপ্ন নিয়ে একটু একটু করে একটি মেয়ে বড় হয়, সেই  রঙিন স্বপ্নগুলো মেহেদীর রংকে আরো গাঢ় করে। কিন্তু রুচিকার চোখের জল তার হাতে আঁকা মেহেদীর স্বপ্নগুলোকে ধূসর করে দিচ্ছে। অথচ এই মেয়েটিই  তার বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতো। খুব সাদামাঠা ভাবেই  রুচিকার বিয়েটা হচ্ছে। বিয়েতে দুই পরিবারের লোক ছাড়া বাইরের কেউ নেই। এই বিয়েতে রুচিকার মত সবার মনেই কোন আনন্দ নেই।  বিয়েটা শুধু রুচিকার বোনের সন্তানটার মুখের দিকে  তাকিয়ে হচ্ছে, যে সন্তান আজ থেকে রুচিকাকে মা বলে ডাকবে। রুচিকার মা হওয়ার স্বপ্ন পূরন হলেও বোন হারানোর কষ্টে সব আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে।
ছোটবেলা থেকে রুচিকা জানে ও কখনও মা হতে পারবেনা। কিন্তু ওর মনে মা হবার তীব্র আকাঙ্খা সেই  বুঝতে শেখা থেকে। বড় বোন সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর থেকে তার সব দায়িত্ব রুচিকার উপর ছিলো। সেই থেকে  রুচিকা বড় বোনের বাসায়। বোন প্রায়ই রুচিকাকে বলতো আমি না থাকলে তুই আমার বাচ্চার মা হয়ে যাস। আজ বোনের মুখের সেই  কথা সত্য হতে যাচ্ছে। বাচ্চা জন্মের সময় বোনের অনাকাঙ্খিত মৃত্যু আজ প্রত্যেকটা সম্পর্ককে বদলে দিচ্ছে।
বাসর ঘরে ঢুকতেই  এহসান দেখলো রুচিকা বাবু সোনাকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অনাকাঙ্খিত হলেও তার একমাত্র শ্যালিকা আজ থেকে তার বউ। যদিও সে চোখে কখনও দেখেনি সে রুচিকাকে।  সন্তানের কথা চিন্তা করেই সে রুচিকাকে বিয়ে করেছে। রুচিকা অবশ্য এহসানকে ভাইয়া বলেই  ডাকে। খুব কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার জন্য। প্রতিটি মেয়ে বাসর রাতটা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখে, আর রুচিকার বাসর রাতটা কাটছে বোনের সন্তানকে বুকে নিয়ে। বিয়েটাতে অবশ্য এহসানের অনিচ্ছা থাকলেও রুচিকার ইচ্ছাটা ছিলো। কারন রুচিকা বাবু সোনার মা হতে চেয়েছিলো।
রুচিকা প্রথম দিন থেকে বাবু সোনার মা হয়ে গেছে। এহসান খুব অবাক হয় মেয়েটিকে দেখে । পৃথিবীর কারো বোঝার ক্ষমতা নেই যে রুচিকা বাবু সোনাকে জন্ম দেয়নি। সব সম্পর্কগুলোতে ও স্বাভাবিক থাকলেও এহসানের সাথে এখনও স্বাভাবিক হতে পারিনি। দু’জন মানুষ এক ছাদের নিচে, এক বিছানাতে শুধুমাত্র সন্তানের জন্য কাটিয়ে দিচ্ছে দিনের পর দিন। এহসানও কখনও স্বামীর অধিকার নিয়ে রুচিকার কাছে যায়নি। তবে স্বামীর অন্যান্য সকল দায়িত্ব পালন করতে এহসান সবসময় রুচিকার পাশে থাকে।
রুচিকার সমস্ত কিছু জুড়ে শুধু বাবু সোনা। বাবু সোনা একটু একটু করে বড় হচ্ছে। আধো আধো মুখে বুলি ফুটছে। তার মুখের প্রথম শব্দটা ছিলো মা। যেদিন প্রথম বাবু সোনা মা বলে ডেকেছিলো সেদিন রুচিকা চিৎকার করে কেঁদেছিলো। তার আনন্দের অশ্রু দেখে এহসানও গোপনে চোখের জল ফেলেছিলো। মা হওয়ার এত  তীব্র আকাঙ্খাই মেয়েদেরকে সব রকম সেক্রিফাইস করতে সাহায্য করে।
রুচিকার মা এসেছে ওদের বাসায়। উনি বুঝতে পেরেছেন যে এহসান আর রুচিকা এখনও স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে নেই। বিকালে এহসান আর রুচিকার মা রুচিকাকে বুঝালো যে তাদের সন্তানের জন্য হলেও স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক তাদের মধ্যে গড়তে হবে। রুচিকা কিছু না বলে চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝরালো। শুধু বাবু সোনাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে সে। তার কোন স্বপ্নে এখনও এহসান নেই। শুধুমাত্র মা হবার তাড়নাতে সে  এসহানকে স্বামী হিসাবে গ্রহন করেছে। কিন্তু এহসানের কথা যে সে ভাবেনা সেটাও নয়। সে এহসানকে শ্রদ্ধা করে। যে সম্মান তাকে এহসান দিয়েছে তা হয়ত আর কেউ তাকে দিতোনা।
বাবু সোনার হঠাৎ জ্বর আসাতে রুচিকা খুব উদ্বিগ্ন । সারাটা দিন কিছু মুখে নিলোনা সে। মধ্যরাতে এহসানের ঘুম ভাঙাতে সে অবাক হয়ে দেখলো রুচিকা জেগে আছে, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বাবু সোনার দিকে। এহসান প্রথম বারের মত রুচিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ‘কিচ্ছু হবেনা আমাদের কলিজার টুকরার, ও খুব ভালো থাকবে। তুমি ভয় পেওনা।’ এহসানের কথা শুনে রুচিকা কাঁদতে লাগলো। আজ প্রথমবার এহসানকে তার নিজের স্বামী মনে হচ্ছে। খুব নির্ভর করতে ইচ্ছে করছে।


আজ বিয়ের দুই বছর হল রুচিকা আর এহসানের। কিন্তু এহসানের কাছে দিনটি অন্যান্য দিনের মত সাধারন একটি দিন। বাসায় ফেরার সময় কিছু না ভেবেই  রুচিকার জন্য এক ডজন কাচের চুড়ি কিনে আনলো এহসান। বাসায় ঢুকেই সে অন্য এক রুচিকাকে দেখতে পেলো। খুব সেজেছে আজ মেয়েটা। সবুজ শাড়ীতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে। কপালে লাল রঙের টিপ ওর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরও বহু গুন। আজ রুচিকাকে সত্যিই  বউ বউ লাগছে এহসানের কাছে। ঘরে ঢুকতেই  রুচিকা এহসানকে  জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আজ থেকে আমি আমার সন্তানের বাবার সত্যিকারের স্ত্রী  হতে চাই।’  এহসান কোন কিছু না বলেই  শক্ত  করে জড়িয়ে ধরে তার সন্তানের  মাকে।  দুজন দুজনের  এতটা কাছে যায় যেখান থেকে একজন  আরেকজনকে  খুব আপন ভাবে অনুভব করা যায়।