প্রথম দিকে যখন করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে ইটালীতে তখন বেশ সফলতার সঙ্গেই ইটালী তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ।
সাবধানতা অবলম্বন হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র ইটালীই চীনের সাথে সকল ফ্লাইট বাতিল করে দেয় অতি দ্রুত ।
বিমান বন্দরে থার্মাল ক্যামেরা বসান হয় একমাত্র ইটালীতেই তখন ।
ইটালীর প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্প কোন্তে
বলেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আমাদের ব্যবস্থা সব চেয়ে শক্তিশালী এবং কার্যকর ।
আসলে প্রথম দিকে এমনটাই ছিলো সমস্ত কার্যক্রম ।
তবে এত সাবধানতার ভেতরেই মস্ত বড় একটা ভুল ছিল চীন বা আক্রান্ত কোন দেশ থেকে তখন যে সব পর্যটক বা যাত্রী আসতো তাদের ঠিক তখনই হোম কোয়ারেন্টাইনে চৌদ্দদিন থাকা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিলে তা হত ইটালীর জন্য এক যুগান্তকারী কার্যকর পদক্ষেপ ।
কিন্তু প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ এবং চিকিত্সা ব্যবস্থা না করে এদের এয়ারপোর্ট থেকে ছেড়ে দেয়াই হয়েছিল ইটালীর চরম এক ভুল ।
সৃষ্টিকর্তার এটাই ছিল ইশারা ।
যে দুজন পর্যটক মিলান বিমান বন্দর থেকে রোমে এসেছিলেন তারাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সর্বপ্রথম ।
আরেকজন ইটালীয়ান উহান থেকে ফিরে অসুস্থ হন ।
তখন তারা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান ।
আর যে বিশেষ এক রোগী কডোনা শহরে সামান্য রকম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন তাকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয় ।
ঠিক তার দুদিন পর পরই এই রোগীর মারাত্মক শ্বাস কষ্ট শুরু হলে রোগী ফের হাসপাতালে ভর্তি হন ।
আগের রোগী এবং পরে এই রোগী যখন হাসপাতাল আর বাসায় আসা যাওয়া করেছিলেন তখন এই রোগীদের প্রতি কোন রকম সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি । যার ফলশ্রুতিতে উক্ত হাসপাতালের ডাক্তার নার্স ষ্টাফ রোগী সহ পুরো কডোন শহরে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাসটি ।
আর সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে লোম্বারডী বেরগামো মিলানো সহ আশ পাশের সব এলাকা ।
হয়ত অতীতের এমন কোন কর্মের ফল আজ এ ভাবে ইটালীকে কড়া গন্ডায় দিতে হচ্ছে । ইতিহাসের অনেক সাক্ষ্য তাই বলে ।
সৃষ্টিকর্তা ক্ষমা করুন ।
এ ছাড়া ও ছিল আরও কিছু ভুল যা বুঝতে গিয়ে সময় ক্ষেপণ হয়েছে যথেষ্ট ।
ঐ সব আক্রান্ত এলাকা গুলোতে লক ডাউন করে বর্ডার বন্ধ করে দিলে ভাইরাস রোম শহর পর্যন্ত বিস্তৃত হতো না ।
মিলানো থেকে এক বন্ধু তার রোমের বন্ধুর বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলে পরবর্তীতে রোমের বন্ধু ও আক্রান্ত হয়ে পড়ে । আর এ ভাবেই ভাইরাসটি রোমে অবস্থান নিতে সক্ষম হয় ।
যখন রোমে ভাইরাস চলে আসে আর অবস্থা বেগতিক হয়ে যায় ঠিক তখনই পুরো ইটালী হয়ে যায় লক ডাউন ।
বর্তমানে সেই সব আক্রান্ত এলাকা সমূহের অবস্থা খুবই ভয়াবহ । সেই সব শহরে এত মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে যে তাদের কবরের জায়গা হচ্ছে না । সেনাবাহিনীর বহর লাশ নিয়ে লাইন ধরে যাচ্ছে অন্য শহরে ।
তবে এটা ইটালীর স্বচ্ছতা । কারন একমাত্র ইটালীই দেখাচ্ছে সরাসরি কতজন মারা যাচ্ছে প্রতিদিন এবং লাশ গুলো স্থানান্তরিত করে সেনাবাহিনী নিয়ে যাচ্ছে অন্য শহরে এবং সেখানে কি ভাবে কবর দেয়া হচ্ছে । পক্ষান্তরে চীন সহ অন্য কোন দেশের এ সব ব্যাপারে তেমন কিছু দেখা যায়নি বা যাচ্ছেও না স্বচ্ছতা ।
প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্প কোন্তে বলেছেন
আমরা মহামারীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে মারা গেছি.আর কী করতে হবে তা আমরা জানি না। পৃথিবীতে সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে। একমাত্র সমাধান আকাশের কাছে।
কায়মনপ্রাণে প্রার্থনা করছি ইটালী সহ সব দেশ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য ।
নিজের পদচারণায় নিত্য যে পথ মুখরিত হতো অসংখ্য টুরিষ্টদের ভীড়ে সেই দেশ ইটালীকে আল্লাহ্ যেন ক্ষমা করেন এবং শেষ রক্ষা করেন ।