ধানশালিক
জীবন রাজবংশী
একটি ধান শালিকের সঙ্গে আমার অন্তরে অন্তরে ভাব হয়েছিল খুব।
বড্ড মিষ্টি পাখি জোর আসতো আমার পাকা ধানের ক্ষেতে, খুটিয়ে খুটিয়ে ধান খেতো আর নানান বেশ মজার অঙ্গ ভঙ্গি করত।বড়ো ভালো লাগতো ।
এখন অনেক, দিন হয়ে গেল, আর দেখা হয়নি ।
শেষ যেদিন দেখা হয় সিতার অলঙ্কারের মতো চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল সোনালী পাকা ধান। আর কয়েকটি না বলা শুকনো ডানা।
আজও ধান পাকলে ক্ষেতে য়ায়, খুঁজি তাকে। বাতাসে নাচে রুনু ঝুনু তালে সোনালী ধান।
অনেক পাখি আসে, সে আর ফিরল না ,
তার দিকেই আমার টান।
তুমি খুঁজলেই মেঘের নৃত্যে বৃষ্টি হয়
মিসির হাছনাইন
তোমাকে খুব করে চাই দেখা হোক,
প্রিয় কথা শুনি ভালো থাকার শোক।
আরো কত অবসরে মনে পড়ে হৃদয়,
তুমি খুঁজলেই মেঘের নৃত্যে বৃষ্টি হয়..।
আমাকে ভেবো না আমি অসহায় ফুল
ঝরে পরা তোমার চুলে কতগুলো ভুল,
ফুলরে পাপড়ি খোলা বুকরে হুলুস্থুল
পাড় ভাঙা নদীটা’র হারানো এক কূল;
আরো বরিহে হারানো মেঘকাব্য লিখে,
হৃদয়ে হৃদয়ে কথা হয়; ধর্যৈবদ্যিা শিখে
অতরিক্তি রাগী সমুদ্র মিথ্যেবাদী মাছের
সংসার; খোলস পাল্টে শাড়িপরা অরণ,
আরো উপরে হরিণীর চোখের মধ্যে দেখো-
তুমি খুব করে খুঁজলেই মেঘের নৃত্যে বৃষ্টি হয়..।
অ-সুখ
সানাউল্লাহ বিপুল
দুঃখের সমান আকাশ
আকাশের ওপাশে সমুদ্র
সমুদ্রে জল নেই
শুধু লবন আর বালি
চৈত্রে চৌচির নদীর তলি।
রৌদ্রে শুকোয় ক্ষুধার রুটি
নিয়ে দৌড়ায় তৃষ্ণার্ত কাক
জলের মধ্যে জেলে
বৃষ্টির অপেক্ষায়
লবনবিহীন পানির আশায়।
নদী ভাঙনের শব্দ
কলিজা শুকোয় তীরে
নির্ঘুম রাত আকাশে চাঁদ
কলকলানো শব্দে
কারো হৃদয় জুড়ায়।
ক্লান্ত শ্রান্ত জীর্ণ দৃষ্টি
অসীমে চোখ শূন্যে মেলায়।
একই ডালে দুটি মুকুল
সোহেল রানা
একই ডালে দুটি মুকুল
তাকে আলাদা করি কী করে!
আত্মীয় পরিজন কিংবা বন্ধু
কে নাই কার? তাই তো
আমরা শালিক পাখির মতো একই মাঠে
উড়ে উড়ে বসি
গা ঘেঁষাঘেঁষি করি, খাবারের খোঁজ করি
আমাদের ছোট নদী - হড়াই
তার মতো আর কেউ নাই -
ছোট ছোট ঢেউ - যেন মায়ের মতন
তার পরিধিও অনেক
তেমনই আমাদের মাঝে বন্ধন সুতোর মতো,
জড়ানো। সুপ্রাচীন।
আটদাপুনিয়া, সান্দিয়ারা- ফুটে আছে দুটি ফুল
আমি আমিই আছি
মোহাম্মদ আবদুর রহমান
আমাকে দেখলে কি তোমার ভিখারী মনে হয়?
একটি চাঁদের মালিক হয়েও আঁধারে আছি
আসলে আমার এখন কৃষ্ণপক্ষ চলছে
শুক্ল পক্ষে অবস্থান করার সময় অজ¯্র আলো দান করেছি।
তুমিও একটু আলোর জন্য চাতকের মত আর্তনাদ করেছিলে
তোমার শরীরে আলোর মিছিল গড়ে তুলে ছিলাম
কিন্তু ভুলে গেছো সেই দিনের ঐতিহাসিক মুহূর্ত
গাছের পাতা গুলো হয়তো নতুন
তবে গাছের শাখা প্রশাখা গুলো আজও মনে রেখেছে
নীরবে স্মৃতির স্তুপের মাঝে খুঁজবে নাটকের সেই দৃশ্য গুলো
আসলে তুমি দারুন পালটে গেছো
আমি কিন্তু আমিই আছি।
ফিরে যাবার সনদ
আবু হানিফ জাকারিয়া
নিশ্বাস সমান দুরত্বে দু’জন মানুষ
নিস্তব্ধতা করে রেখেছে তাদের গ্রাস।
মৃদুসুর তুলে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে,
নিঃশব্দে ছাড়া তাদেরই গভীর শ্বাস।
আগন্তুকের মত তৃতীয় কোন প্রাণী
টিকটিক শব্দে জানান দেয় অস্তিত্ব।
ক্ষণস্থায়ী জীবনের সেই শুধু সাক্ষী
আজকের নীরবতা কিংবা নিস্তব্ধতার।
আষ্টেপৃষ্ঠে তাদেরকে জড়িয়েছে
বোবাকান্না, আতংক, মৃত্যুভয়।
দু’জন দু’জনকে অনুভব করে,
হৃদয়ের গহীনেও তাদের বসবাস।
একটু আগেই যে জেনে গেছে তারা
ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় আর বেশিদিন নয়।
কম্পিউটারে ছাপানো সাদা কাগজ
যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যাবার সনদ।
কেউ সুখে নেই
শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া
কেউ সুখে নেই নিজ স্থলে কিংবা কর্মস্থলে,
কেউ দুখে নেই স্ব-শরীরে যত দুঃখ লোকালয়ে।
মানুষ বিলাসিতার চাদরে ঘুমিয়ে রয়, নিজের মৃত্যু ভুলে।
কত-শত চন্দ্রারাত স্বপ্ন আঁকা উঁচু-নিচু ভবন,
সেসব চার দেয়ালে আবার হাজারও বিচ্ছেদের সুর।
কত ভালবাসা-বাসি, কত আহাজারি অশ্রুপাতে শেওলা ভরা দেয়াল।
আসলে কেউ সুখে নেই।
কেউ সুখে নেই নিজ ঘরে কিংবা কবরে,
কেউ দুখে নেই পরিপাটি-গোছানো ঘর, জরাজীর্ণ মন।
দুনিয়ার সমীকরণ কষা-কষি জবাব চলে পরপারে।
হিসাব-নিকাশের ব্যস্ততায় চলে যাবে যুগ-যুগান্তর কিংবা মহাকাল।
তবুও জরাজীর্ণ দেহ পড়ে রবে বেহিসাবে অপরিপূর্ণতায়।
আসলে ইহকাল আর পরকাল কোনো কালেই সুখ নেই, কেউ সুখে নেই।
সুখ বলতে কিছুই নেই, কিছুই নেই।
আমি এক অথৈ দরিয়ার মাঝি
কৃষাণ দ্বিরেফ
নিকষ ভূতূড়ে আঁধারের আলিঙ্গনে
আমি এক অথৈ দরিয়ার মাঝি
যার কোনো একাডেমিক সিলেবাস নেই
সার্টিফিকেটের লোভ দেখিয়ে লাভ নেই
পার্থিব পরীক্ষা দিতে অনিচ্ছুক।
কাউকে বুঝতে; বোঝাতে চাই না আর
ভেতরে জমেছে তরল এসিড
এন্টাসিড প্লাস খেয়ে যুক্ত করে ক্ষার
পানি করে দিচ্ছি কাউকে পাওয়ার সুখ
কারা কাচপোকা সংসারে উৎসুক?
বোঝাপড়া সেরে সাব্যস্ত করার মতো
অতিকায় জ্ঞান অর্জনে অভ্যস্ত
আমি কখনও হতে পারেনি নিশ্চয়
কাউকে লালন করা— আমার স্বভাবে
কখনো যায় না; আমিও তটস্থ।
তরল শরাবে সরল স্বভাবে চলি
নিয়ত দুর্যোগে দুর্বিপাকে ন্যস্ত
কাউকে চাইনি বোঝাতে-বুঝতে আর
চারপাশ ঘিরে আছে অথৈ পারাবার
ফেনিল সলিলে হয়েছি বিন্যস্ত।