কবিতা...



আড়াল 

ফাহাদ আজিজ


কিভাবে যাওয়াকে চলে যাওয়া বলে 

বলতে পারো?

তুমি তো যাওয়ার নাম করে কেবল 

আড়াল হয়েছো;

মূলত তুমি বাসা বেঁধেছো আমার হৃদয়ে।


চলে যদি যাও তবে একেবারেই যাও না;

সবকিছু ছিন্ন করে, সব স্মৃতি মুছে দিয়ে, 

যেভাবে যাওয়াকে সত্যিই চলে যাওয়া বলে। 


তোমার আড়াল হওয়ায় আমার চোখের কোণে 

যে পানি জমেছে তা মোছার সঙ্গে সঙ্গে 

যদি স্মৃতিরাও মুছে যেতো....



কাঙ্খিত ঘুমের অতিথি

দেলোয়ার হোসাইন

(অকস্মাৎ প্রয়াত শিক্ষক আব্দুল মুকিত স্মরণে)


অলৌকিক সুখে লুটিয়ে

পড়েছে তোমার আয়ু,

মাবুদের দরবারে তুমি

কাঙ্খিত ঘুমের অতিথি।


আমাদের চোখে কেবল

জলের জায়নামাজ,

বিচ্ছিন্ন কথোপকথনে

শুধুই ফেরার তাড়া...!




চেয়েছি মানুষ হতে

সাজ্জাদুর রহমান 


মানুষের প্রতিরূপ হতে চাইনি

চেয়েছি মানুষ হতে

ব্যাধ হয়ে জন্মাবার মধ্যে অভিশাপ

নরকের ছিঁচকাঁদুনে ভন্ডামী বিলাপ

মানুষ এমনটি করেনা কস্মিনকালে

মানুষ ফেরেশতার প্রতিরূপ।


নির্বোধ আততায়ী চোখে হলুদ সন্ধ্যাকে

ভোঁদকা মনে করে বুকপকেটে সেঁটে দেয়

পকেট ভরে থাকে জিন্দা লাশ

ইচ্ছে ভাঙা শব্দেরা ছটফট করে

অপাংক্তেয় ঋণের দীর্ঘ দ্বন্দ্বে 

বৃক্ষ জড়িয়ে ধরে 

পবিত্র মাটিতে অক্সিজেন খোঁজে

পাতার শরীরে পাখিপ্রেম, পরিণয়

মানুষ কে হতে পারে-

আমি মানুষ হতে এসেছি।




একাকিত্বের ষোড়শী 

আব্দুল্লাহ আল আম্মার


পরমুহূর্তে পুনরায় বয়ে যায় দখিনা বাতাস 

জান্লার কার্নিশে ভেসে উঠে পায়রার ভাবুক চিত্র, 

অজানা করো চুল

সুডৌল অস্তিত্বের নুপুর ঝংকারে, 

জমে থাকা বৃষ্টির শেষ ফোটাটিও

চায়ের সাথে মিলিত হয়। 

পায়রার ভাবুক অস্তিত্বের দ্বিতীয়টি উড়ে আসে জান্লার কার্নিশে। 

তাদের মিলনে, 

নব যৌবন প্রাপ্ত কামুক দৃষ্টি জোড়া 

সাঁতরে বেড়ায় 

নেচে ওঠে ষোড়শী কন্যার গ্রীবা,

প্রশস্ত বক্ষ,

মাতাল ওষ্ঠা ধরের লজ্জাহীন হাসি।

ষোড়শী নাভিতে, 

আমি নির্লজ্জ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি 


অতঃপর সঙ্গম শেষে, 

পায়রাদের শ্রান্ত দেহগুলো আঁধারে হারায় 

চায়ের উষ্ণতা মেটাবার পর বৃষ্টিও থেমে যায় 


বাদ মাগরেব

আমি তখনও, 

নব যৌবনের একাকিত্বের জান্লায়, 

কেবল নগ্ন যুবতীর তাম্শা দেখি!



তৃষিত মানবজমিন

সাজু কবীর


স্বপ্ন জাগানিয়া দুধেল আকাশ নেমেছে ধরাতে

ফিসফিস, কানাকানি, জড়াজড়ি সংগোপনে

কত কথা প্রেমময়, কত নির্ভয় সৃজনী-প্রণয়

শুকনো মাটির কোয়া ঠেলে মাথা চাড়া দেয়

ঝাঁক ঝাঁক কচি সবুজের স্বপ্নসুখ-ভরা মনে।


অথচ এ মানবজমিন পানিশূন্যতায় কাতরায়

অনাবাদী ঘর-দোর, ঘুঘু নাচে সুনসান আঙিনায়

আলোকসকাল কিংবা নক্ষত্রের রাত দূর অজানায়

আর কত দিন অপেক্ষায় থাকা দুঃখ-জানালায়!


তবে কি আকাশ নামবে না আমাদের এ তপ্ত ধারায়?



ওগো বনহংসিনী ! 

আদনান আল মিসবাহ 


উন্মোচিত পর্দার আবরণ ভেদ করে আবারো কেঁদে দিলে তুমি 

আমার খন্ডিত হৃদয়ের উপকূলে উর্মিমালা আছড়ে পড়েছে 

সেই জ্বলন্ত অগ্নির লাভাযুক্ত উর্মিমালা 

গোলাপের রং কেটে যার থেকে আগুন নিয়েছে-সুকুমার্য ঈগল 

ওগো বনহংসিনী !

প্রণয়লীলার রক্ত স্রোতে আজও তোমার হিংসুটে মুখ ভাসে 

আজও বানরের নাচ দেখে আমি প্রতারিত হই!

বিচ্ছিন্ন সুতাগুচ্ছ থেকে আমায় শিখতে হয়- বৈষয়িক জ্ঞান 

নিবরাসের ছন্দহীন ঘুড়ি আমাকে ঘরহারা করেছে, শোনো 

ছায়াবীথির মন্ত্র মুগ্ধতা, শুষ্ক মলিন গোলাপের নৈব্যক্তিক হাসি 


ঈগল এখনো জীবিত প্রিয়তমা!

খানিক দূরেই হিংস্র নখরের আচরে অক্কা পেয়েছে গোলাপ ফুল 

অথচ আমি বিলক্ষণ জানি, 

বুর্জোয়াতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কাছে তোমার দায়বদ্ধতা ছিল না

পুঁজিপতিরা গণতন্ত্র ফলাবার আগেই তুমি কেঁদে দিলে 

আজন্ম লালিত প্রণয়-ভেঙে দিলে 

নির্বাপিত হলুদ পাতার শরীরে লিখে দিলে-তোমার নাম 

তুমি জানোনা, ঝরাপাতার বিধানেও রয়েছে নিজস্ব শৈলী

এরা নির্দিষ্ট বাতায়ন পথে আপন শাখা বিস্তার করে

সত্যি বলতে কি !

পুঁথিগত বিদ্যা এখানে কাজে আসে না।


পোড়া শহরের বিষন্ন স্মৃতি 

বশির আহমেদ 


জলনিধি ঢেউ তুলে আলুথালু তুফান বাতাস 

নির্মেদ আকাশে দোলা দিয়ে যায় চঞ্চল মেঘের বাসর 

ঘুম চোখে স্বপ্ন দেখি প্রেমিকার ঠোঁটে অনুভূতির ফুল

নিথর দুপুর শেষে বিকেলের সুখ আসে সবুজ ঘাসে 

জানিনা কেমন আছে পোড়া রোদের শহরে আদুরি পাখি। 

নগরীর পথে পথে প্রিয় ক্যাম্পাসে আনন্দ ছড়ায় 

কেশিয়া জাভানিকা অথবা গ্রীস্মের বাহারি প্রসূন।

গোধূলির নরম আলো রেখে যায় নন্দন ভিলার চিলেকোঠায় 

পোড়া শহরের বিষন্ন স্মৃতি।



আমি চাইলে তোমার বাঁকা ঠোঁট

মিসির হাছনাইন


আমি চাইলে তোমার বাঁকা ঠোঁট কেটে দিতে পারি

যদিও আমি কোন চিত্রশিল্পী নই, আঁকতে পারিনি

সেই চিত্রকল্প যেখানে তুমি হয়ে ওঠো হীন, নিলর্জ্জ

বেহায়া সে রঙগুলো তবুও তো আকাশে ফুটেছিল

ঐ দেখো একটা নক্ষত্রে আমার বাড়ি, অচিন গাঙে

দুলে দুলে তুমি বিদেশিনী ঘোমটা পরা হেলেঞ্চা বধূ

এইবার আমি বাদশা- যখন-তখন চাইলেই পারি,

তোমার নাক কেটে পরিয়ে দিতে নক্ষত্র সোনার নথ

যে রূপের এতো অবহেলায় পরোনি তুলে রাখা শাড়ি,

আমি চাইলে সে শাড়িটা তোমাকে পরিয়ে দিতে পারি

লিখে রাখতে পারি- কতগুলো হতাশার সুর সম্ভাবনা 

আর, এক ব্যস্ত পৃথিবীর বেঁচে থাকার স্নিগ্ধতা, শান্তি

লিখি- বুকভর্তি তুমিহীন নিরবতা বিষাদের গানে গানে 

নিজ ভাষায় কারা যেনো গেয়ে ওঠে শ্রাবণের মাঠ জুড়ে..




মোড়লকে কেটে ফেলো

হিলারী হিটলার আভী 


কুড়ানির অভিমত দরগাতলারশেওড়াগাছে ভূতের আড্ডাখানা 

চৌকিদারেরও অভিমত তাই 

মোড়ল সাহেব নাকি নিজের চোখে শেওড়াগাছে ভূত দেখেছে 

সেন্টু গু-াও নাকি শেওড়াগাছে মাঝে মধ্যে ভূত দেখতে পায়। 


তো এখন আর কি 

কেউ বলছে শেওড়াগাছটিকেই কেটে ফেলতে হবে 

কেউ বলছে দরগাতলাকেই নিশ্চিহ্ন করতে হবে 

কেউ বলছে মাজারে মানত বন্ধ করলেই ভূত খাদ্যাভাবে পালিয়ে যাবে। 


শুধু জটাধারী নগ্ন মইজু পাগল বলছে 

মোড়লকে কেটে ফেলো তাহলে শেওড়াগাছের ভূত এমনই পালিয়ে যাবে। 


এখন একটি জীবন্ত প্রশ্ন হচ্ছে 

মোড়লকে কাটবে কে? কে কাটবে মোড়লকে?

মোড়লকে কাটার মতো অস্ত্র এ উপমহাদেশে নেই 

একারণেই এ উপমহাদেশে মোড়ল শালা ছিল 

                                       মোড়ল শালা আছে 

                                  মোড়ল শালা-ই থাকবে!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট