প্যারিস, অভিমানী শস্যের মন
ফকির ইলিয়াস
অভিমানগুলো নদীজন্মকে ঢেকে দেয়। অথবা নদীগুলো
ঢেকে দেয় হাতে লেখা হলুদ ডায়েরি। যারা প্যারিসের
পথে পথে লিখে যায় নিজেদের নাম; কিংবা যারা ঊননিদ্রা
সেরে আবার মুখ মুছে দুপুরের সূর্যে, তারা গায়ে পরতে
ভালোবাসে দুঃখের পরিধান।
একসময় আমারও রোজনামচা লেখার অভ্যেস ছিল। পারিনি
শিখা'র উজানে দাঁড়িয়ে লিখে যেতে সকল বিরহের প্রণালী।
যে মেয়েটি ম্যাপল বৃক্ষের নীচে বসে বড় ক্যানভাসে লিখে
রাখছে তার অভিমান, তাকে আমার কোনো চিত্রশিল্পী বলে
মনে হয় না। বরং নিজের নাম ভুলে যাওয়া মানুষটির মতো
তাকে প্রতিস্থাপিত কোনো মূর্তি মনে হয়। ভর দুপুরেও কী
তবে চাঁদ নেমে আসে মাটিতে! লিডো ডি প্যারিস- নামক
শো’টির আলোর সিম্ফনি আবার আমার চোখে মুখে এসে
পড়ে। ‘হানি লোকাস্ট’ বৃক্ষের যে পাতাটি সবুজের আভা
ধারণ করে আছে এই আগস্টে, তা-ও হলুদ হয়ে ঝরে
পড়বে আসছে অক্টোবরে। মেঘশস্যের মন নিয়ে খেলছে
যে ‘খিলাড়ি’- একদিন বৃক্ষও তাকে থামতে বলবে। দাঁড়াতে
বলবে আকাশের অধিক উচ্চতায়।
বিজ্ঞাপন
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
একদিন আমার বইয়ের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে যাবে তোমার শহর।
বিলবোর্ডে বিলবোর্ডে কবিতার চরণ,
চকলেট কিংবা কনডমের পাশে বইয়ের প্রচ্ছদ-
প্রচারের মাধ্যম হবে বিশ্বসুন্দরী।
তোমার অন্তর্বাস আকর্ষণীয় হলে আমার শিল্পও প্রচারযোগ্য।
বই বিক্রিতে আমিও হতে পারি কর্পোরেট,
তোমার শহরের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাবে আমার ছবি।
যমক বেতের অভিশাপ
শাহীন মাহমুদ
স্যার সেই সকাল থেক্কা রিক্সাখান চিৎ কইরা ফালাই রাখলেন
সূর্য এখন মাথার উপর
এই বারের মতন মাফ কইরা দেন স্যার
আপনে কত বড় বিদ্বান- আইনের মানুষ
ভুল না হয় করছি-মাফ কইরাদেন স্যার
ঘরে দুইডা ছাওয়াল, ক্যানসার রুগী মা
রিক্সা চালাইতে না পারলে মহাজন মাফ করবোনা ।
ঘরের ছাওয়াল গুলান না খাইয়া মরবো
মা আমার ঔষধ না পাইলে মইরা যাইব ।
আপনে আমার আল্লা খোদা সবি
রিক্সার গদির নীচে দুইডা যমক বেত আছে
পাগলা কুত্তা আর শরাবখোরের হাত থেইকা বাঁচার জন্য রাখছি
ঐ বেত দুইডা দিয়া আমারে যতো খুশি মারেন
আমারে রিক্সাটা দিয়ে দেন স্যার ।
-এই শালা ফকিরনীর বাচ্চা
খালি পকেটে বের হস কেন?
পকেটে দশ বিশ টাকা রাখতে পারিস না ?
শালা .........।
অন্য এমন দিনে
শারমিন আক্তার
তোমার আমার অন্য এমন দিনে মেঘেদের অভিসারে আর্দ্র শহর;
বৃষ্টিযাপন; সূর্যমলিন চাদোয়ায় আড়মোড়া, বাসি ঘুম-
ফোঁটা ফোঁটা জল চোখে বিরহিত, অভিমানী দিন । ‘বিকেলটানে সলতে ফুরলো;
যেতে পথে ফেলে গেছে প্রিয় পঙ্ক্তিমালা’ । সংক্রমিত আকাশ জুড়ে আমি-তুমি
কাঁদাখচিত জলছাপে সিক্ত, দুঃখবিলাসী ।
ডানা ঝাপটানো, পিচ্ছিল বাতাসে পথ ভুলি যেন ‘তবে তাই হোক’
হারানো ডায়েরীর সহজাত পিছুটান ঐ কবিতাটা আবার একটু পড়বে ?
মধ্যবর্তী চোখ
সিয়ামুল হায়াত সৈকত
একিলিসের ঘোড়া যখন ফুল
মধ্যবর্তী চোখে সেসব চোখদই
আজ, বিপ্রতীপ দুঃখ পোষে মনের শহর
যেনো হারিয়ে ফেললেই তুমি নয়!
এক জলজ্যান্ত শহর, মিথের মতো
ভাঁজওয়ালা পৃষ্ঠাগুলো অতীতের
আর আমরা যা রাখি
চোখে তুলে সব
বিস্কুটের ঠোঙায় সব দৈত্যের শহর
এসে, দ্যাখো মুখ তুমি ও তুমি।
ভালোবাসি যতো অসুখের মতো