গুচ্ছকবিতা
সেলিম রেজা
দিনলিপি-৭৪
স্বপ্ন কখনো সখনো কষ্ট দেয়-
বলেই পিছু হটে অনেকেই;
স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচে ! সুখের
আঁচে নিজেকে বাঁচাতেই এসো ।
দিনলিপি-১০৮
টিনএজ সময় বিলবোর্ডজুড়ে বুকের চশমা
হরেকরকম রঙে এক একটি উদোম শরীর
মডেলিং বালিকা নয় যেন শিকারী সি-গাল
অন্তর্বাস খুলে তাকিয়ে আছে স্বপ্নের চারা ।
কথোপকথন
কেমন চলছে হিমশীতল দিন!
-এই তো সাধারণ মানুষের জীবন যেভাবে যায়
সাধারণ কে অসাধারণ করলে ক্যামন হয় !
-অসাধারণ করার ইচ্ছে নেই
ইচ্ছেঘুড়ি উড়াতে চায় না মন?
নাকি ইচ্ছে করেই ডুবে থাকা চিরচেনা সেই জীবনে!
-উড়াটাই সব নয়
-নিজের কল্পনায় উড়িতো প্রতিক্ষণ
বেশ তো
-তবে মাটিতে পা রেখে
তাহলে তো আর চিমটি কাটতে হবে না
-মানুষ পাখি নয়
পাখি থেকেও বেশি মানুষ
উড়তে পারে, ঘুরতে পারে ইচ্ছেমত। পাখি তা পারে না।
পাখি তো পাখি, সে তো মানুষ নয়: স্বপ্ন তাকে ছুতে পারে না
মানুষ স্বপ্নে বিভোর হয়। স্বপ্ন পূরণে যুদ্ধ করে, সময়ে লড়ে বেসুমার
-মানুষ বুদ্ধিমান যদি সে জনে কোথায় তার সীমা
তবুও মানুষের আহুতি সীমানা পেরোতে
মানুষ স্বাপ্নিক, শুধু দরকার একটু রঙ এর।
মানুষ হতাশ হলেও আবার ঘুরে দাঁড়ায়
পাখি তা পারে না।
আশা, স্বপ্ন তাকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সাহস যোগায়
-হ্যা তাই
মানলেন তো আমার লজিক, যুক্তি !
অবশেষে হেসে কুটিকুটি, উত্তরে-
-মানলাম
সবুজ জমিনে ঝরে পড়া রক্তজবা
ঝোঁপে ঝাঁড়ে ঘেরা পুকুরপাড়, ভুতুড়ে অন্ধকার
নির্ঘূম রাত্রি অকুতোভয় যুবকের তীক্ষ্মদৃষ্টি
সবুজ গাছের আড়ালে, সামনেই ভয়ংকর মৃত্যু;
চোখের পলকেই হামাগুড়ি দিয়ে এগুই তুখোড় নওজোয়ান
তারা আজ একতাবদ্ধ, অহমিকায় জীবনবাজী
রেখে লড়বে মিলিটারিদের কুপোকাত করতে;
কাদা- পথ-মাঠ-ঘাট মাড়িয়ে স্বপ্ন দেখে
একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের...
মিলিটারিদের শোষণ- লুন্ঠন- অত্যাচারে
ঘেন্নায় গা জ্বলে
হায়েনাদের বুটের আওয়াজ, কুচকুচে জল্লাদী
চেহারা দেখে জ্বলে ওঠে চেতনার নিউরোন
সবুজের সমারোহে সোনার বাংলা
মা-মাটি- স্বাধীনতার মান বাঁচাতে তারা আজ যোদ্ধা।
বুলেটের দ্রিম দ্রিম শব্দের আর্তনাদের
সুর ধরে পাখি সব উড়ে যায়
রক্তজবা ঝরে পড়ে সবুজ জমিনে
লাল সূর্যের রক্তিম আভায়।
কালে কালান্তরে ইতিহাস হয়ে রয়
সবুজ জমিনে ঝরে পড়া রক্তজবা।
পিপাসার জলে মৃগহরিণের জৌলুস উৎসব
মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে উড়ুক্কু শব্দগুলো
স্পর্শে লজ্জাবতী লতার মতন কুঁকড়ে যায়;
নীলিমার নীলে ঘষে দেয় নাক নিটোল সারস
সাধনার সাধক প্রেমরাগ বাজে মথুরা বৃন্দাবনে
কামুক ঋষি চোখ বুজে, সব্যসাচী বৈরাগী
বাসনার হলাহলে ঢেঁকুর তুলে
ঈশ্বরের সমাপ্তিহীন ক্ষুধায় মাগে জল
সময়ে কাটে চাঁদ করে দু’ভাগ
কালের সাক্ষী বেবিলন, মিশরের পিরামিড
আঁকাবাঁকা গিরিপথে উম্মাতাল পথিকের কানাকানি
সারাদিন খেলা করে চুমো খায় গালে
লাল শালুকের ঢেউ ওঠে সন্ধ্যার আকাশে
উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা মাংশালু ঢিবি-সাংহাই সিটি
ঠোঁটের ধারালো চুম্বনের মতো উত্তাল সমুদ্দুর
পিপাসার জলে মৃগহরিণের জৌলুস উৎসব।