শহরের অসম প্রেম
মোহাম্মদ অংকন
প্রতিদিন সকাল হতেই পাশের বাসার ছাঁদগুলোতে রোদ এসে পড়ে। ছাঁদে জমে থাকা সারা রাতের বৃষ্টির পানিতে যখন রোদ পড়ে, বিশুদ্ধ পানি তখন ঝলমল করে ওঠে। বাতাসের ধাক্কায় মৃদু ঢেউ খেলে যায়। সেই পানিতে পড়া সূর্যের তীর্যক রশ্মি সোজা সুবোধের চোখে গিয়ে লাগে। তারপর সুবোধ ঘুম থেকে জেগে ওঠে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বিশাল আকাশের একাংশ দেখে। পরিষ্কার আকাশ। আকাশ দেখতে দেখতে সময় বয়ে যায়। তবুও সে বিছানা ছাড়ে না। কিছুক্ষণ পর ঘর থেকেই বুঝতে পারে প্রতিদিনের মত আজও হাজার হাজার লোকজন অফিস, আদালত ও হাট-বাজারের দিকে ছুটছে। খোলা জানালা দিয়ে গাড়ির হর্ণ ও রিক্সার বেলের টুনটাং আওয়াজ কানে আসে। সবাই যেন ব্যস্ত, সে বোধটুকু সুবোধের হয় তখন। তারপরও তার চোখের ঘুম ছুটে পালালেও স্বপ্ন দেখা একদমই থেমে থাকে না। সারা রাতেও তার স্বপ্ন দেখা হয়ে ওঠেনাই। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল হয়তো। স্বপ্নরা কাছে ভিড়তে পারে নাই। তাই এই শেষ সকালে শহরের মত জেগে ওঠেতার হাওয়ায় ভাসানো সাদাকালোকয়েকশত অগোছালো স্বপ্ন। এগুলোকে ঠিক স্বপ্ন বললে ভুল হবে বোধহয়। এগুলো তার বিচ্ছিন্ন কিছু ইচ্ছে, কিছু আশা।
সুবোধ ক্যাম্পাস থেকে ফিরে সাঝবেলা দু’টো টিউশনি করায়। মাস শেষে কিছু টাকা-পয়সা হাতে পায়। নিজের খরচখরচাদির টাকা রেখে বাড়িতেও পাঠাতে হয় সেসব টাকা।বলা চলে, মাস শেষে আবার খালি হাতে পড়ে যায়। তবুও তার ইচ্ছে হয় কিছু টাকা জমিয়ে একটি দু’চাকারগাড়ি নেওয়ার। কেন এমন ইচ্ছে হয় সুবোধের? সে প্রতিনিয়তই দেখে তার শহুরে বন্ধুরা নামি দামি গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করে। তারা সহপাঠিদের নিয়ে এখানে সেখানে বেড়াতে যায়। তাই সুবোধ মনে করে,‘তারও যদি একটি গাড়ি থাকতো তাহলে তারও অনেক বন্ধু-বান্ধবি জুটতো। হয়তো তাদের সঙ্গে নিয়েকোনো একদিনবহুদূরে চলে যাওয়া যেত। সদ্য মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখা যেত।’ এসব ভাবার সময় সুবোধ তার দরিদ্র পরিবারের কথা একদমই ভুলে যায়। তার স্বপ্ন বিলাসী মনে তাকে তাড়া দেয়। ‘গ্রামে থাকুক নাপরে গর্ভবতী বোন কিংবা অসুস্থ বাবা। কিছুটা সময় হারিয়ে যাই না হয় অচিনপুরে।’প্রতিটি মুহূর্তে¦ এমনই কয়েকশত ইচ্ছে ভাসে সুবোধের নিজস্বআকাশে। মেসে যখন একাকী থাকে, তখন কল্পনার জগতে চলে যায়। আবার যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটে তখনও কল্পনায় যেন হোঁচট খায়। কেউ হয়তো হাত আগলে বাঁচায় তাকে। সম্মানবোধ থেকে ‘সরি’ বলে আবার হাঁটতে থাকে। কিন্তু সে যতই স্বপ্ন দেখুক আর ইচ্ছের বীজ রোপন করুক, দিনের শেষে সেসব ইচ্ছে রং হারিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যায়। স্বপ্ন দেখার জন্য আবার রাত লাগে। ফিরেও আসে শহরের রঙিন রঙিন রাত।কিন্তু স্বপ্নগুলো আর বাস্তব হয় না। শুধু প্রেক্ষাপট বদলে যায়।
নয়টা বেজে যায়। সুবোধ তখন ভীড় বাসেতে বাদুড় ঝোলা হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিয়েছে। ছাত্র মানেই হাফ পাশ। আর তাইতো কন্ডাক্টররা সিটের বন্দোবস্ত করে দেয় না। ব্যস্ত সময়ে অনেকেই সুবোধের মত ঝুলে ঝুলে গন্তব্যে পাড়ি জমায়। কেউবা অফিস আদালতে, কেউবা সুবোধের মত ক্যাম্পাসে ছুটেছে।ঘামের ঘ্রাণেতে নারী-পুরুষরা মাখামাখি হয়ে যায়। কেউ নাক আটকে ধরে। আবার কেউ ম্যানিব্যাগ সামলায়। সুবোধের সেসব দিকে কোনো নজর থাকে না। কেননা, তার তো কোনো ম্যানিব্যাগই নাই। দু একশত যা আছে তা ডান পকেটের কোনো এক ভাজে পড়ে আছে। সুবোধেরই নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তাই দৃষ্টি তার অন্য দিকে খেলা করে। সিটে বসে থাকা কোনো এক যুবতির দিকে তার চোখ চলে যায়। মনে মনে সেই যুবতির সৌর্ন্দযের প্রশংসায় বিভোর হয়ে পড়ে। দু’চার জন যাত্রী ধাক্কা দিয়ে পাশ কেটে চলে গেলেও তার বোধোদয় হয় না। সে ভাবে, ‘শহরের মেয়েরাই ঝুঝি সকল সৌর্ন্দযের আধার।তাদের অঙ্গে সবসময় বেলী ফুলের গন্ধ শোভা পায়।’ তারপর কারো কারো সাথে সময় বুঝে একটু আধটু চোখাচোখি হয়। শহরের যুবতিরা মৃদু হাসে। আবার কেউ কেউ নাক ছিটকায়। পরের স্টপেজে যখন মেয়েরা নেমে যায়, তখন তার অপ্রাসঙ্গিক ঘোর কাটে। তাদের উষ্ণ সিটে বসে বাস্তব জগতের কথা ভাবে। ‘শহরের মেয়েদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা অন্তত আমার মানায় না।এ এক অসম প্রেম। এতে শতভাগ ব্যর্থতা রয়েছে।’
শহরের রাজপথ ধরে বাস চলে অবিরাম গতিতে। আর একটু পাড়ি দিতে হবে। তারপর রংধারী সুবিশাল ক্যাম্পাস। মোবাইলের ঘড়ির দিকে সুবোধ তাকায়। সময় দেখে। মোবাইলের আলো নিভতে না নিভতেই একটি ম্যাসেজ আসে। ইনবক্স খুলতেই ইরানির নামটি ভেসে ওঠে। ‘আজ নোমান স্যারেরক্লাসটাবাদ দিও সুবোধ। প্লিজ, প্লিজ! আমি আর তুমি ক্যাফেটেরিয়াতে বসব। তোমাকে আমার আজ কিছু বলার আছে।’ ম্যাসেজটা দেখে সুবোধের জ্ঞান ফেরে। তারপর তার ডান হাতটি প্যান্টের পকেটে ঢুকায়। আগুলের ভাজে নোটগুলো ফেলে গণনা করে কতটাকা আছে। মোবাইলে তারিখ দেখে, আজ কত তারিখ চলছে। এই ইরানি হল শহরের বড়লোকের দুদালি। সুবোধের সাথে সখ্যতা আছে। হয়তো সুবোধের প্রেম প্রত্যাশী। সুবোধ তা মেনে নিতে পারে না। তার হাত খরচ দেখলে সুবোধের মাথা ঘুরায়। সুবোধ ভাবে, ‘ওর থেকে দূরে থাকাটাই আমার জন্য নিরাপদ।’ কিন্তু ইরানি তাকে সর্বত্র খুঁজে বেড়ায়। ইরানি নানা কারণেই সুবোধকে বন্ধু বানিয়েছে। আবার ভালোও বাসতে চায়। ক্লাসের যাবতীয় পড়ার খোঁজখবর জানা, এ্যাসানমেন্ট করা, কবে কোনো বিষয়ের ক্লাস টেস্ট সব তথ্য যেন সুবোধ জানে। তাই অনেকেই তার পেছন ছাড়ে না। সুবোধ ভালো ছাত্র। তাই এসব বিষয়ে সে বরাবরই বন্ধুসুলোভ। কিন্তু ভয় তার ওদের সাথে মিশলে কখন যে কিসের ট্রিট দেওয়া লাগবে তা বুঝে উঠা মুশকিল। ওরা সারাক্ষণ এর জন্মদিন, ওর পার্টি ইত্যাদি নিয়ে থাকে। এসব করতে যেমন টাকার দরকার, তেমনি সময়েরও দরকার। তার আরওভয়, ইরানির মত আরও কেউ যদি তার প্রেমে পড়ে যায়, তাহলে তাকে নিয়ে শহরের নামিদামি রেস্টটুরেন্টে যাওয়া লাগতে পারে।শহরের কসমেটিক্সের দোকানেও যাওয়া লাগতে পারে। যা সুবোধের জন্য জুলুম।
প্রতিদিন বিকালের দিকে সবার ক্লাস শেষ হয়।অনেকেই বাসায় চলে যায়। অনেকে ক্যাফেটেরিয়াতে বসে, চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়। কিন্তুসুবোধের তন্নিম্যাডামেররুমে ডাক পড়ে যায়। তন্নি ম্যাডাম দেখতে যেন সুবোধের সহপাঠিদের বয়সী। চেহারায় চেনা যায় না যে তিনি একজন শিক্ষিকা। কিন্তু বয়স তা হবে বত্রিশের উপরে। তারপর আবার তাঁর এখনও বিয়ের কাজটি সমাপ্ত হয় নাই। সুবোধকে তিনি কি কারণে প্রতিদিন ক্লাস শেষে ডাকেন তা নির্ণয় করা কারও সম্ভব নয়। তবে যে কাজগুলো হয় তা সর্ম্পকে টুকিটাক জানা যাক এখন। সুবোধ ভালো ভালো কবিতা লিখতে পারে। বিশেষ করে রোমান্টিক প্রেমের কবিতা। তবে সে আবৃত্তিতে একদমই কাঁচা। যতদূর অনুধাবন করা যায়, সেগুলো শুনতে সুবোধকে ডাকেন তিনি। তাই বলে প্রতিদিন? একবার সুবোধ বলেছিল,
: ম্যাডাম, রোজ রোজ কবিতা আবৃত্তি আমার ভালো লাগে না। আর আপনিও জানেন, আমি ভালো করে আবৃত্তি করতেও পারিনা।
তখন ম্যাডাম উত্তরে বলেছিলেন,
: তুমি কি ভালোভাবে পরীক্ষায় পাশ করতে চাও হে যুবক?
তারপর থেকে সুবোধের অন্তরে ফেল করার ভয় ঢুকে যায়।সে ভাবে, ‘যেনতেন ভাবে হলেও আমাকে কবিতা আবৃত্তি করতেই হবে।’আবার সুবোধ এরকমও ভাবে, ‘ম্যাডামের মন অন্য কিছু চাচ্ছে না তো?’ তারপর নিজের জিহ্বায়কামড় দিয়ে তওবা করে।
সুবোধযখন তার ম্যাডমের কক্ষে কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়, তখন সে কেমন যেনহাঁফিয়ে উঠে। যেন তার মাথায় মালামাল, শ্রমিকের মত বহন করছে। ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসএসির বাতাসেও তার শরীরকে ঠান্ডা করতে পারে না সে। ম্যাডাম তার থেকে বেশি দুরে বসে নয়। আবার সে যখন আবৃত্তি করে, তিনি তখন টহল দেন, কণ্ঠ মেলান।সুবোধের হাফিয়ে ওঠা দেখে ধমক দেন। ধমক শুনে আবার কবিতা আবৃত্তি শুরু করে। তখন তার চোখে ম্যাডামেরচুলগুলো ভাসতে থাকে। লক্ষ্য করে দেখে, ম্যাডামের কপালের টিপটা কেন্দ্র বরাবর নাই। হাত দিয়ে টিপটা ঠিকঠাক করে দিতেই ম্যাডামই তাকে আলতোভাবে স্পর্শ করে জরিয়ে ধরে। যেন সুবোধের দেহে জোয়ার বয়ে যায়। তারপর সেছন্দহীন একটি কবিতা আবৃত্তি করে। আর ভাবে, ‘যাক বাঁচা গেল!ফেলটাঠেঁকালাম।’ এমন করে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে সুবোধের অসম প্রেমের পরীক্ষা চলে। এসব কেউ জানতে পারে না।
ততক্ষণে বেলা গড়ে যায়। সুবোধ ফিসফিস করে নিজেকে বলে, ‘আজওআমার বাসায় ফিরে যেতে সন্ধ্যা হবে।কখন যে ওদের পড়াতে যাব তা ভেবে পাচ্ছি না।’ সারাদিনের ক্লাস শেষে সুবোধের ক্ষুধা লেগে যায়। এ ক্ষুধা ফুসকা, চটপটির ক্ষুধা নয়।ডাল-ভাতের ক্ষুধা। কিন্তু ম্যাডামকে বোঝাতে পারে না। ম্যাডাম কি যেন এ ফাইলে ও ফাইলে রাখারাখি করে। আর সুবোধ ঠায় বসে থাকে।অতঃপর সুবোধের মোবাইলে ইরানির কল আসে। কিন্তু সুবোধ ধরে না। আবারফোনের পর ফোন আসে। ফোনের কম্পনে তার শরীরও যেন কম্পিত হয়।ইরানি শহরের মেয়ে হলে কি হবে সুবোধের ভালোই খোঁজখবর রাখে। তার চোখ বলে, সুবোধকে সে সত্য সত্যই মন দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সুবোধ তা কখনই মানতে রাজি নয়।
ইরানি সুবোধের সবই জানে। সে এও জানে, ম্যাডাম তাকে ইচ্ছে মতন তার পেছনে ঘুরায়। কখনও একটুখানি তাঁরকথা না শুনলে তিনিযখন তখন সুবোধকে ধমক চড়ায়। সুবোধের অবুঝ কষ্টগুলো দেখে ইরানির ভীষণ মায়া হয়।শুধুমাত্র ম্যাডামের কারণে সে সুবোধের সাথে ভালভাবে মিশতে পারে না। সরাসরি বলতেও পারে না তার হৃদয়ে জমানো কথাগুলো। ম্যাডাম একদিকে যেমন প্রতিদ্বন্দি, অন্য দিকে সুবোধের অনীহা লক্ষ্য করে। অনেক সহপাঠিই সুবোধের সাথে মিশতে চায়। কিন্তু ম্যাডাম তাদেরকে সুযোগ দেয় না। ম্যাডামের কাছে সুবোধ সবচেয়ে প্রিয়। শ্রেণিতে যখন সি.আর নির্বাচন করা হয়, তখন অন্য কোনো ছেলেমেয়েকে নির্বাচন করা হয় না। প্রতি সেমিস্টারে সুবোধকে সি.আর বানানো হয়। যাতে করে সুবোধ আর ম্যাডামের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। ক্লাসের দুষ্টু ছেলেরা সুবোধকে ক্ষেপায় আর বলে, ‘সুবোধ রে তোর তো কপাল খুলে গেছে, মামা। স্বয়ং ম্যাডামই তোর প্রেমে হাবুডুব খাচ্ছে।’ সুবোধ ওদের কথায় একদমই কান দেয় না। সে ভাবে, ‘এই ক্যাম্পাসে আমি যতই সুদর্শন হইনা কেন, আমি কখনইঅসম প্রেমকে মেনে নেব না।’
অতঃপর বিকাল সাড়ে পাঁচটা বেজে যায়। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে আসে। তখন মুক্তি পায় একুশ বছরের সুবোধ নামের নির্বোধ ছাত্রটা। তার আর দেরী সহ্য হয় না। ‘কখন বাসায় ফিরে যাব?’ কেউ পেছন ফিরে ডাকলেও যেন তাকানোর সময় থাকে না। তার মন তখন উদাস হয়। তার মনে তখন একটাই প্রার্থনা, ‘সাঁঝনেমে আসুক। আঁধারে ঢেকে যাক আমার দেহের অদৃশ্য ময়লাগুলো। আর পারছি না। শরীরটা বেশ ক্লান্ত। সারাদিন প্যান্ট আর শার্টের চিপুনিতে শরীরে যেন কয়েকশত দাগ বসে উঠেছে।বড্ড বিশ্রাম প্রয়োজন।’ তারপর আবার সেই চিরচেনা বাসে ওঠে। শরীরখানা সিটে বিছিয়ে দিয়ে বাসায় ফেরে।
তারপর..অন্ধকারের পর্দা নামে শহরে। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন বাতিগুলো ঝলসে ওঠে। সুবোধইচ্ছে করে বসে থাকে অন্ধকারে। সেদিন আর টিউশনিতে যাওয়া হয়ে ওঠে না। ক্লান্ত শরীরে যেন শহরের বাতির আলোগুলো এসে অকপটে ঝিলিক দেয়।সুবোধের মনের ভেতর অনেক কথাই লুকিয়ে থাকে। বলা হয় না কাউকে। প্রতিবাদও করতে পারে না। গ্রাম থেকে মায়ের ফোন আসে।
: বাজান, তুমি কি ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরেছ? দুপুরে কি খাবার খাইছ?
: মা, আমি ব্যস্ত আছি এখন। তোমাকে আমি পরে কল করব।
এই বলে মোবাইলটা সাইলেন্ট করে রেখে দেয়। মায়ের সাথে মিথ্যা কথা বলায় তারপর তার মনটা ভীষণ পোড়ে। অতঃপর তার মনেরগ্লানিগুলো চাঁদেরবিচ্ছিন্ন কপালে গিয়ে আঘাত করে। তার মনটা মরে যায়। জেগে থাকে নিস্তব্ধ রঙিন শহর। সুবোধের চোখের ক্লান্তির ঘুম আসে। তারপর আসে কয়েকশত স্বপ্ন, এসে আঘাত করে। কিন্তু ঘুমের ভেতর প্রবেশ করতে পারে না। তারাও সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। শহরের মেয়ে ইরানির মত তারাও সুযোগ খোঁজে। কিন্তু ম্যাডামের মত করে তাকে কেড়ে নেয় ঘুম।
প্রতিনিয়ত এভাবেই অসম প্রেমের কিছু উপাক্ষান নিয়েই জেগে থাকে সুবোধের শহর। তার দুঃখগুলো যুগান্তরের বাহনেরা নিজ দায়িত্বে বহন করে চলে।আর তার ইচ্ছেগুলো চুপসে যায়, সে খোঁজ কেউই রাখে না। সবাই তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে মনটাকে নিয়ে খেলতে চায়। তার শরীরকে টক তেঁতুলের মত করে চুষতে চায়। তার শরীরে যে হৃদয়টা দারিদ্রতার কষাঘাতে মরেগিয়েছে, তার খোঁজ কেউ রাখে না। সে তার মেধার বিকাশের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে তাও কেউ অনুধাবন করে না। সুবোধ পরক্ষণে শান্ত¡না পায় এই ভেবে যে হয়তো তার মত অনেকেই আছে এই শহরে যারা কি না তাদের ইচ্ছে কে বির্সজন দিয়ে অসম প্রেমে গা ভাসাচ্ছে। অতঃপর সুবোধের চোখ বন্ধ হয়ে আসে। বিছানায় পড়ে রয় সুদীর্ঘ দেহ। আর ঘুমের ঘোরে সুবোধ বলতে থাকে, ‘কবে আমি মুক্তি পাবো?’ অপরদিকেঅপেক্ষায় থাকে আরেকটি সকাল সুবোধকে জাগিয়ে ব্যস্তময় অসম প্রেমের শহরে নিক্ষেপ করতে।