ধারাবাহিক উপন্যাস ।। পর্ব ০২।। শাদমান শাহিদ (রামবন্দনা)



শাদমান শাহিদ 
রামবন্দনা


পুরান বইয়ের ঘ্রাণে যে আলাদা এক ধরনের মাদকতা আছে। সেটা সবাই বুঝতে না পারলেও তুমি পারো। প্রতিটি বইয়ের দেহে লেখকের ঘাম জড়ানো। কারো কারো নাকে সে-ঘামগন্ধ ডলসি আ্যান্ড গাব্বানা কিংবা মিস দিওর চেয়েও প্রিয়। ইচ্ছে হলে ঐ ছেলেটার কথা ভাবতে পারো। পার্টির অফিসে তোমার পিনোন্নত বুক আর মেদহীন ঝুরঝুরে ফিগারের দিকে তীরের ফলার মতো যে বারবার তাকাচ্ছিলো। বয়সটা তোমার চেয়ে বছর পাঁচেক কম হলেও কামদ উত্তেজনায় ভরপুর। পার্টিতে নতুন ঢুকেছে। সংশোধনবাদিদের খপ্পরে এখনো পড়েনি। ভাবতে পারো উত্তরবঙ্গের ঐ যুবকদের নিয়েও। যাদের কথা পত্রিকায় এসেছে। আহা রে! ছেলেগুলো শুধু অভাবের নিষেধাজ্ঞায় সংসার পাততে না পেরে ঢাকায় যেয়ে অ-কোষের রগ কেটে খোজা হয়ে গেলো। অথবা রাজনীতি নিয়েও কিছু সময় খরচ করতে পারো। দেবতা-ছায়াদেবতা-রিমোট কন্ট্রোলাররা এখন অনেকটা বেকায়দায়। শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপ-নেপাল-ভুটান-মায়ানমার এখন পুরোপুরি চীনের বগলে। বাকি আছে কেবল বাংলাদেশ। এটা হাতছাড়া হয়ে গেলে তেত্রিশকোটি তেত্রিশকোটিই, হাজারকোটি মিলেও দাদাদের পতন ঠেকাতে পারবে না। চতুর্দিক থেকে ইলাস্টিকে টান পড়বে আর অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো একটি একটি করে খসে পড়বে।
এমন সরল সমীকরণের পরও বাঙালি দেবতারা বুঝতে চাচ্ছে না। আনাড়ি লোকের মতো অভিনয় করেই যাচ্ছে। হাবভাব এমন—যেনো মান্যবর ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কথাবার্তা আর বাচন-ভঙ্গি দেখলে মনে হয়, হাজারটা ক্ষমতার ঈশ্বর তাদের নিঃশ্বাসের গরম বাতাসে উড়ে যাবে। সে-মোহেই কিনা... যখন যা ইচ্ছে, করে যাচ্ছে। রাতকে দিন, দিনকে রাত করতে মুহূর্ত সময় নিচ্ছে না। ইচ্ছে হলো তো সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মুহূর্তে সৃষ্টি করে দিচ্ছে খা-ব-দাহের শত উপমা। যখন যাকে ইচ্ছে গুম-খুন-ধর্ষণ করে চালিয়ে দিচ্ছে ধর্মের নতুন অধ্যায় হিসেবে। কারো কিচ্ছুটি করার নেই, বলার নেই। মুখটা খুললেই বিপদ। চেতনার (সুবিধাবাদ-জিন্দাবাদ) এসিড ছুড়ে ঝলসে দেবে আমূল। তা সম্ভব না হলে, হুকুমের গোলাম পোশাকধারী ছায়াদেবতারা রয়েছেই, তাদেরকে ব্যবহার করবে। যারা জনগণকে কেবলি ২০ নম্বর গ্রেডের কর্মচারি মনে করে। পান থেকে চুনটা খসলেই বানচুতের বাচ্চা বানচুত, মাঙির পু, খানকির পু, শালির বেটি শালি বকতে বকতে বুকে-পিঠে-পাছায় লাথি মারতে মারতে থেতলে দেয়। জনগণ চতুর্থশ্রেণি-পঞ্চমশ্রেণির কর্মচারির মতোই সব পাইকারি হজম করে। মার খায়। কোনো দিন তারিখ নাই, আফ্রিকার ক্রীতদাসের মতো খোদার তিনশো পঁয়ষট্টি দিন তারা মার খায়। মার খেতে খেতে ভুলে যায় একদিন তারাও মানুষ ছিলো। পৌরষ ছিলো।
এসব ভাবতে গিয়ে যখন মাথাটা ধরে আসে, তখন ঘুমোতে ইচ্ছে করে। অবোধ শিশুর মতো ঘুমোতে ইচ্ছে করে। ঘুমের সুড়ঙ্গ দিয়ে বাবার কাছে যেতে ইচ্ছে করে। যদি যেতে পারতাম, বাবাকে আবৃত্তি করে একটি কবিতা শুনিয়ে আসতাম—
‘তুমি নেই বলে ঢাকাও দু:খ পাচ্ছে, খুব কষ্ট পাচ্ছে ইটের গাঁথুনি
গাঁথুনির জমা চুন, পাথরে-লোহায় জড়াজড়ি সুরকি-কাঁকর
সিমেন্টের মায়ামমতার ভেতরে জীবন, জীবনের ভেতরে মৃত্যুর কীট,
ভেন্টিলেটরের ফাঁক- ফোকর, অন্ধকার
আর প্রাণ, কষ্টের দুহাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে
শহরের পুরোনো দালানকোঠা, মতিঝিল হাফপ্যান্ট পরা এক
মফস্বল কিশোরের মতো কেবলি আকাশ তার নীল করে দিতে থাকে
আমি দেখি... দেখতে দেখতে যাই...বহুদিন পর আমি এইভাবে
কিছুই দেখি না।
কিন্তু ঘুমোতে পারি না। কেবল শুয়ে থাকি। পারতোপক্ষে কোথাও যেতেও ইচ্ছে করে না। নাসিমাকে দিয়ে বাজার করাই, ইউটিউবে সার্চ দিয়ে পছন্দ মতো রিসিপি দেখে রান্না করি। খাই-দাই-টিভি দেখি। বোরিং লাগলে নাসিমার সাথে গল্প করি। মেয়েটা বেশ বুদ্ধিমতী। অজপাড়া গাঁয় জন্ম হলেও খুব অল্পতেই শহুরে চরিত্র রপ্ত করে ফেলেছে। যখন যা প্রয়োজন ইশারা দিলেই চুকে যায়। এমনকি সেক্স বিষয়ক আলোচনা করলেও কম যায় না। টিভিতে হারবালের বিজ্ঞাপন দেখে দেখে সব আয়ত্ত্ব করে ফেলেছে। সে-সাথে সে গ্রামীণ মেয়ে, গ্রাম্য বদ্দি-কবরেজদের টোটকা সম্পর্কেও বেশ দখল। কার্তিক মাসে কেনো কুকুর পাগল হয়ে যায়, চড়–ই পাখির মর্দানা শক্তি বেশি কেনো, অর্গাজম অবস্থায় ইঁদুরের অবস্থা কেমন হয়, কোন জাতের পুরুষ স্বয়ং কামদেব। চড়–ই মাংসের কিমা কীভাবে তৈরি করতে হয়, কুমারিলতার ডগা কতটুকু কাজে লাগে, সবই অকপটে শেয়ার করতে পারে। যদি বলি, হে রে তোর নেশাখোর মরদটা তোকে সময়-টময় দেয় তো? তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কোথায় যেনো হারিয়ে যায়। কোথায় যে হারায় হয়তো সেও জানে না। হারিয়ে যাওয়ার জন্যেই বুঝি পৃথিবীতে নারীকুলের আবির্ভাব। যুগে যুগে সবকালে সবসমাজে পুরুষরা ভোগ করে বেড়াবে। আর নারী, সে কেবল হারাবে। অষ্টপ্রহর হারাবে। অধিকার থেকে হারাবে, বিছানা থেকে হারাবে, ইচ্ছে-চিন্তা-সিদ্ধান্ত থেকে হারাবে।
আমিও তখন আর এগুই না। ওকে ছেড়ে দিয়ে খোলা জানলার গ্রিল ধরে যতক্ষণ ইচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকি। আকাশ দেখি। ধুলিময় শূন্যে উড়ে বেড়ানো পাখি...ফেরিওলাদের লোক ঠকানোর দৃশ্য...রহিম মিয়ার চা-খানায় খদ্দেরদের আসা-যাওয়া এবং চা খেতে খেতে আষাঢ়ে গপ্প মারা...ক্লাবের তালাবন্ধ দরজাটা...খুচরো বাঁচানোর জন্যে অটোরিক্সাঅলার সাথে যাত্রীদের ঝগড়া আমাকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। বিরক্তি লাগে মোড়ে কদমগাছ আর ইলেক্ট্রিসিটির খুঁটিতে খুব শক্তভাবে বাঁধা ঢাউশ ঢাউশ ফোর কালারের ব্যানার-ফ্যাস্টুন-সাইনবোর্ডগুলো। কোথায়, কী উল্টাইছে, সেসব প্রচারের বড় বড় অক্ষরগুলো ‘লাগবা বাজি’র কন্ডমবিজ্ঞাপনের মতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কী কারণে জানি না, তখন তলপেটে চাপ বেড়ে যায়। পালাতে ইচ্ছে করে। পালাতে ইচ্ছে করে ইতিহাসের প্রতিটি অক্ষর থেকে। অর্জনের প্রতিটি বাঁক থেকে। সারি সারি লাশের উপর দিয়ে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-প্রতিশোধ সব গা থেকে ধুয়ে-মুছে মানুষ-দেবতা-শয়তানমুক্ত অজানা-অচেনা কোনো এক অচিন দ্বীপে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। যেখানে সকালের সিএনজিটা দুপুর গড়াতে না গড়াতে ল্যাম্বোরগিনি ভেনেনো অথবা লাইকান হাইপার স্পোর্ট’এর মতো দামি গাড়ি হয়ে চোখের সামনে বিদ্যুৎবেগে উড়ে বেড়াবে না। যেখানে চরিত্রহীনের বিষদৃষ্টি পাঁচ-সাত বছরের অবুঝ শিশুর নাক-মুখ-চোখ-বুক হয়ে দেহের আর আর পথ বেয়ে গড়াবে না। সিডাক্সিন ট্যাবলেট মিডিয়া থাকবে না। ধারা-উপধারায় প্যাচ লাগানো কৌটিল্যের জাল থাকবে না।
ইদানিং একটা রোগে ধরেছে। অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ি। সাচ্চু ভাইয়ের সাথে দেখা হলেই বলে, এতো ব্যস্ত হইও না। আবেগ আর তাড়াহুড়ো দিয়ে আর যাই হোক বিপ্লব হয় না। আর দৈবাৎ হলেও ক্ষণকালের জন্যে। একপলকের বিপ্লবের জন্যেই কি এভাবে সর্বস্ব নিঃশেষ করে যাচ্ছি! মেহনতি-বঞ্চিত মানুষকে কিছু দেবার জন্যেই যেহেতু পথে নেমেছি, তখন আরো সময় লাগবে। তোমরা তৈরি হয়েছো, এখন অন্যান্য শাখাতেও আমাদের কিছু লোক প্রয়োজন। ওগুলো হয়ে ওঠলেই মালকোচা দিয়ে নেমে পড়বো।
আমি তো বুঝেছি এবং বুঝেছি বলেই বইয়ের শেষ পাতাটির মতো লেগেও রয়েছি। কিন্তু আবেগ নির্ভর অপেক্ষাকৃত তরুণদেরকে তো বোঝানো যাচ্ছে না। ওরা সারাক্ষণই অঙ্ক কষে। বড়োদের এক্টিভিটিস দেখে যখন হিসেব মিলাতে পারে না, তখনই বুকের নিচে মাটি পাওয়া পিঁপড়ের দলার মতো সব ছড়িয়ে যায়। এজন্যেই বলি, আগে সিদ্ধান্ত স্থির করুন। কোথায় যাচ্ছি এবং কতদিন পর। তখনই কাজে গতি আসবে। কর্মীরাও সক্রিয় থাকবে। কয়েকদিন আগে স্টারপ্লাস বারে কবি অদ্বৈত বাড়ৈর সাথে দেখা। প্যাগ গিলতে গিলতে অনেক কথাই হলো, দেখলাম তারও কাঁসুন্দির শেষ নেই। সবকটা কর্মী বাষ্পের মতো যে যে-দিক পারে ছিটকে গেছে। বিজ্ঞাপনের অভাবে সুবলের লিটলম্যাগটা বন্ধ... কোটা বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে মার খেয়ে বুলবুল এখন পঙ্গুহাসপাতালে...নাবিলা বৈদেশিক কর্মস্থান মন্ত্রণালয়ের হাত ধরে সৌদি গিয়েছিলো, সেখানে বাড়িঅলা বাপ-ছেলের পালাক্রম ধর্ষণধকল সইতে না পেরে লুকিয়ে ফিরে এসেছে। এখন যেমন তেমন একটা কাজ চায়...পিপলু কবিতা লেখা বন্ধ করে দিয়েছে, কী হবে কবিতা লিখে, কবিতা তো মানুষ পড়তে চায় না, এই তার অভিমান। এই ব্যাধি নাকি জহিরকেও সংক্রামণ করেছে, সদ্যপ্রয়াত শওকত আলী শোকসভায় লোক সমাগম না হওয়ায় অতিথিদের অধিকাংশই ভাষা হারিয়ে নিরীহ শামুকের মতো নিজ নিজ খোলসে আশ্রয় নিয়েছে। আতিক বাংলালিংকের পার্টটাইম চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে মঞ্চে আবার সক্রিয়। সক্রেটিসের চরিত্রটা নাকি কারোই হচ্ছে না। আশা জাগানিয়া সংবাদ মাত্র একটা, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী নমিতা দি’রা নাকি মত পাল্টাইছে, দেশ ছেড়ে কোথাও যাবে না। অদ্বৈতর অবস্থাও তেমন ভালো নয়। দ্বিতীয় সারির এক দৈনিকে কাজ করে। পারিশ্রমিক হিসেবে যা ধার্য, তাকে কোনোমতেই বেতন বলা যায় না। তাও আবার অনিয়মিত। কখনো কখনো নাকি তিন-চার মাসও পেরিয়ে যায়। হাতে মান্নান সৈয়দের কাব্যসমগ্র ছিলো। ওখান থেকে চারটা লাইন শোনালো। লাইনগুলো যেনো জীবিত আত্মার সমষ্টি। ডায়রিতে টুকে এনে বেশ কয়েকবার পড়েছি। এখন মুখস্থ।
...তারপর যতোবার কল্যাণে গিয়েছি, কে হেঁকেছে:
‘এ দেশ তোমার নয়!’ ভালোবাসা-প্রবেশের কালে
বেজে ওঠে তুঙ্গ নাদ: ‘বেরোও এখান থেকে তুমি!’
ঘৃণা রেলোয়ে বেয়ে ছেড়ে যাই ভালোবাসা-লোক।
মাঝে-মধ্যে হতাশ হয়ে গেলে লাইনকটা কুমিল্লা-শ্রীপুরের ট্যাবলেটের মতো কাজ দেয়। আর অন্যরা তো আমাদেরকে নিয়ে কেবল খেলেছে। ‘দুঃশাসনের রক্ত চাই’ বলে দাবি তুলেছে। বলেছে, ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ আমরা এসব দাবির পক্ষে সাড়া দিয়ে বারবার নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেশকে দুঃশাসনমুক্ত করেছি। পরক্ষণেই দেখা গেছে দেশ আমাদের হাতে নেই। দেশ চলে গেছে দেবতা-ছায়াদেবতা-ভ্যাম্পায়ারদের দখলে; যাদের চোখে আমরা কেবলই ঘৃণীত জীব। যারা আমাদেরকে সাইজ করার জন্যে দিন-রাত ফরমা বানায়। সেসব তৈরি ফরমায় পড়ে আমাদের নিজস্ব অস্তিত্ব আজ প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ কে না জানে এই জনপদে আমাদের অবদানের কথা। কে সৃষ্টি করেছে এসব? জানি, কেউ স্বীকার করবে না। কিন্তু আমরা তো জানি, আমাদের হাত-পায়ের ছোঁয়া না পেলে এসবের কিছুই হতো না। ঢাবি, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন, শাহবাগ; কিছুই হতো না সববঞ্চিতের হাত-পায়ের ছোঁয়া না পেলে। এবং সিনেমার এক্সাইটিং দৃশ্যের মতো এগুলো একদিনেও হয়নি। কখনো রক্ত দিয়ে কখনো বুকের পাজর গুড়ো করে তিল তিল করে গড়ে তুলেছি সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। এসব করতে গিয়ে সময়ের বাঁকে বাঁকে কতোকিছু যে ঘটেছে, কতোকিছুর যে মুখোমুখি হয়েছি; তা কেবল আমরা জানি। আর জানে পরদেশি বাতাস। তারা কতোবার যে স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে, আর কতোবার যে বুনেছি চোখের তারায়। এসব বকবক করা কোনো তক্ষকের জানার বিষয় নয়। দিনের সূর্য আর রাতের চাঁদ-তারা সাক্ষী; কতোবার যে ভেবেছি—এটা হবে ওটা হবে। এভাবে করবো ওভাবে করবো। আর ভুল হবে না। কিন্তু কীভাবে যেনো ভুল হয়ে যায়। ভুলের মাশুলও গুনেছি অসংখ্যবার। মাশুল দিতে দিতে বুঝে ফেলেছি—আমরা স্্েরাতের সাইডে পড়ে গেছি। যেখানে কেবলই ভাঙনের শব্দ। কেবলই ভেঙে যায়। চুরমার হয়ে যায়। সবকিছু।

ভাঙনের থুরে ভাসতে ভাসতে অনেকেই অনেককিছু ভাবতে থাকে। সাবটাইটেল স্মার্ট গ্রুপের আরিফ, বিপ্লব, রঞ্জু, প্রবিররা ভাবে সাবটাইটেলের পাশাপাশি একটা নাট্যদলও করবে। অভিনয়ের মাধ্যমে লোকদেরকে যতো সহজে কনভেন্স করা যায়, তা নাকি কোনো মাধ্যমে সেকি পরিমাণও সম্ভব নয়। হয়তো তাই। ঋত্থিক ঘটকও এমনটাই বুঝেছিলেন। যেজন্যে লেখালেখি ছেড়ে ফিল্ম জগতের অবতার হয়েছিলেন । কতোটুকু সফল হলেন তা নির্ণয় করতে হয়তো আরো সময় অপেক্ষা করতে হবে। সোহাস ভাবে চাকরির পেছনে না দৌড়ে, বাবার টাকা আছে, তা দিয়ে একটা প্রাইভেট ক্লিনিক খুলবে। ব্যবসার পাশাপাশি গরিব-গোরবাদের জন্যেও গেইট খোলা থাকবে। তাদেরকে ফ্রি-ভিজিটের সাথে টুকটাক ওষধপত্রও প্রদান করা হবে। রেণু ভাবে ক্ষণকালীন সঙ্গিনী হবে। এই যেমন  কোনো নিঃসঙ্গ মানুষ, যার টাকা-পয়সা আছে কিন্তু কথা বলার মতো তার পাশে কেউ নেই। রেণু সেখানে যাবে। চুক্তি মোতাবেক তার সাথে সঙ্গ দেবে। এভাবে সে কারো মা, কারো বোন, কারো আবার প্রেমিকা-ট্রেমিকা ইত্যাদি হবে। মন ফুরফুরে থাকলে আমিও অনেককিছু ভাবি। ভাবি, একটা গাড়ি ডেকে কয়েকদিনের জন্যে শহরের বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসবো। বিশেষ করে সালুয়া, মাছিমপুর, ডুমরাকান্দা, ভিটিগাঁও থেকে। সবকিছু মরে গেলেও কীভাবে যেনো এখনো গ্রামগুলো বেঁচে রয়েছে। আকাশের মতো বিস্তৃত ফসলি জমি। লোকেরা চাষবাস করে। কোনো খেতে আলু, কোনো খেতে মরিচ, কোনোটাতে আবার পাহাড়ি জুমচাষের মতো টমেটো-ভরবটি-করলা একসাথে। এসব ছাড়িয়ে গেলেই দৃষ্টিকাড়া বিস্তীর্ণ ধানী জমি। এসময় বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে পোয়াতি ধানখেতগুলো এক চাপে সব থুর খালাস করে দেয়। কা--পাতা ছাড়িয়ে শুধু শীষগুলো উপরে ওঠে ঘাড় কাত করে বাতাসের অপেক্ষায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বাতাস এলেই ছায়ানটের সারিবদ্ধ একঝাঁক তরুণ-তরুণীর মতো ডানে-বামে মৃদু দোলে ওঠে, তখন এক অপরূপ সুরের মূর্ছনায় পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। হয়তো নিজেকেও খুঁজে পাবো।
কখনো ভাবি, আরিফদের দলে আমিও থাকি না কেনো? ছেলেগুলো বেশ চৌকষ। হলিউড, ইরানি, কোরিয়ার বেশ কিছু জনপ্রিয় ছবির সাবটাইটেল করে ইতোমধ্যেই পারঙ্গমতার পরিচয় দেখিয়েছে। তাছাড়া অভিনয় জগতের টুকটাক কিছুতো আমারও জানা-শোনা আছে। পার্টির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক থাকাকালীন সময় দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে বেশ একটা ভালোলাগার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো। মহানগর নাট্যমঞ্চ, মহিলা সমিতি, উদীচী, মুক্তধারা, ছায়ানট ইত্যাদিতে ঘনঘন যেতাম। ওখানেই পরিচয় সাজ্জাদের সাথে। সাজ্জাদই শিখিয়েছিলো কীভাবে একটা সফলমঞ্চের ছক আঁকতে হয়....

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট