বর্ষার একগুচ্ছ কবিতা

  




বর্ষার একগুচ্ছ কবিতা
সাগর শর্মা

ছাতা

বর্ষার প্রথম বৃষ্টি হলো আজ। স্টেশন চত্বরে।
কতদিন পর দেখা হবে- বসে আছি কাউন্টারে।
তুমিও এলে ঠিক, বৃষ্টির পরে। দাঁড়কাক বসে
আছে দুইটা, এ্যান্টেনার তারে।

গাছের পাতায় বৃষ্টি ফোঁটা লেগে আছে এখনও।
তুমিও ঠিক আগের মতোই আছো।
শুধু পরনে শাড়ি, সিঁথিতে সিঁদুর ওঠেছে।
ঠোঁটে লাল লিপস্টিক এখনো তো মাখো;
এখনো সেই মাতাল হাসি চোখে ধরে রাখো।
বৃষ্টি আবারও এলো বলে-
আমরা দিব্যি হেঁটে যায় এক ছাতার তলে!


জ্বরে ও ঝড়োরাতে

ঘুমোতে না পারার ক্ষত নিয়ে সারারাত শুয়ে থাকি
চন্দ্রমল্লিকা- মাঝরাতে তুমিও কি অলক্ষ্যে জেগে
ওঠো, বালিকা? এমন ঝড়োরাতে আচানক কোন
ব্যথা অনুভূত হয়েছিল কি বুকে? এরকমও কি হয়,
দু’জন বহুদূরে জেগে আছি একই বেদনায় বা সুখে!
ঝড়ো হাওয়ার এই রাতে, ভাবতেও আনন্দ লাগছে তা!
জ্বর ও হাওয়ার ভেতর জেগে থাকে দু’চোখের পাতা।


বস্ত্রবালিকা

জলের জালে আটকে পড়ে-
একদঙ্গল মৎস্যকন্যা উঠে এলে ডাঙায়

সুই-সুতোর সঙ্গম সয়ে
                          ক্লান্ত পা পথে পিছলায়

পেছন পেছন হাঙররা তড়পায়
                                   তড়পাতে থাকে-

এসময় বেহায়া বৃষ্টি নেমে পড়লে
                    ওড়না-শেমিজ লেপ্টে থাকে
                                     অঙ্গের আয়নায়

হাঙরের দল আয়নাতে ছিপ ফেলে
                               বেসামালে টাল খায়
                                 টাল খেতে থাকে-

তখনই বেখেয়ালে গাল পাড়ে বস্ত্রকন্যা-
বৃষ্টিকে, না হাঙরকে বোঝা যায় না!



বৃষ্টি হয়ে গেল

বৃষ্টি হয়ে গেল কিছু আগে
ওখানে গরম কি পড়ে গেল?
এড়িয়ে ঝুমবৃষ্টি একেবারে-
                       বিপুল বৈরাগে
এই বৃষ্টিই বর্ষাকে বুঝি নিয়ে এলো!

এখনও গরম পড়ে গেলে বিকেলে-
                      যাও লেকের ধারে
আজও নৈঃশব্দ্যের বুক চিরে
স্বপ্নগুলো দারুণ উৎসাহে জাগে!

বৃষ্টি হয়ে গেল কিছু আগে-
ধুয়ে-মুছে, সাফ-সতুর করে দিয়ে গেছে
                     ময়লা যতসব একেবারে;
মনের গতরে বিবর্ণ ময়লা নিয়ে
                     কতকাল লেপ্টে থাকা-
                     কিসের অনুরাগে!

অথচ কচকচে পরিষ্কার এখানে চতুর্দিক;
          কেবল ঢোঁড়াসাপের মতো
            পথটি শুয়ে আছে একা
          
          কেবল দু-চারটে দাঁড়কাক
এখনও বসে আছে অ্যান্টেনার তারে।

কানের উল্টো পিঠের তিলটা আয়নায় এখনও
দক্ষিণের ঝড়ো হাওয়ায় নিয়ে আসে গন্ধ বুনো।



যদিও বর্ষা

মেঘলা বাদলদিনে নির্জন রাস্তায়-
দেখা হলে অকস্মাৎ বুকের পাড়ায়;
খানিক পুলক দোলা দিয়ে যাই
বসে ছিলাম দু’জন একা রেস্তোরাঁয়।

বৃষ্টি হলে ছাতায় দু’জন এঁটে যায়-
আড়ালে আড়ালে লোকে কী যে বলে;
গেছি হুডতোলা রিক্সায় সিনেমা হলে!
তবু বদনাম রটিয়ে দেয় পাড়ায়।

নদীর উপর সমুদ্রের ঢেউ খেলে
মেঘ জমে থাকে মেঘের আড়ালে;
অকস্মাৎ দেখা হলো কতদিন পর
পৃথিবীতে একা আমরা বহু বছর
কাটিয়ে দিলাম এক ভাঙা নায়;
ছলাৎছলাৎ ঢেউ বুক ভেঙে যায়
বাইরে যদিও বর্ষা। ভেতরে বিষাদ;
যখন মেঘলা দিনে দেখা হলো হঠাৎ।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট