রহস্যময় হাসি
নাদিয়া কানিজ
বাইরে ঝুম ঝুম বৃষ্টি পড়ছে আর বাসে বসে সেই বৃষ্টির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহার। নিহারের মনে পড়ে এমনই এক বর্ষাস্নাত দিনে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সে বসে পড়েছিল নির্জন নদীর ধারে। নদীর ধারে বসে বৃষ্টি দেখতে নিহারের বরাবরই ভালো লাগে। সেদিনও তাই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে নদীতে বৃষ্টি পড়া দেখছিল।
হঠাৎ একজন বয়স্ক লোক ছাতা মাথায় করে নিহারের সামনে উপস্থিত হলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন নিহারের দিকে। লোকটির দিকে তাকিয়ে রইল নিহারও। নীরবতা ভেঙে লোকটি ধমকের সুরে নিহারকে বললেন- ‘দেখতে তো ভদ্র ঘরের ছেলে বলে মনে হয়! বৃষ্টির মধ্যে নির্জন জায়গায় একা একা বসে আছ কেন?’
নিহার কিছু বলল না। শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল লোকটির দিকে। কোন উত্তর না পেয়ে লোকটি হেটে চললেন। নিহার চুপ করে বসে রইল।
কিছুক্ষণ পর কী মনে করে নিহার লোকটির পিছু পিছু হাটতে শুরু করল। লোকটি পিছন ফিরে আশ্চর্য হয়ে তাকালেন। নিহার কিছু না বলে শুধু হাসল। এবার দ্রুত হাটতে লাগলেন ভদ্রলোক। নিহারও তার গতি বাড়িয়ে দিল। লোকটি আবারও পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলেন নিহার আগের মত অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসছে। ভয় পেয়ে গেলেন তিনি। এবার দৌড়াতে শুরু করলেন। নিহারও লোকটার পিছু পিছু দৌড়াতে লাগল। লোকটি প্রচ- ভয় পেয়ে পিছন ফিরে দেখলেন নিহার এখনও সেই অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসছে। ওরা প্রায় লোকালয়ের কাছাকাছি এসে পড়েছিল আর তখনই লোকটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।
সম্বিত ফিরে পেয়ে নিহার শুনল বন্ধু ফাহাদ তাকে বলছে- ‘আমরা চলে আসছি এইবার বাস থেকে নামতে হবে।’
নিহার বাস থেকে নামল এবং ফাহাদকে বলল- ‘তুই আমার ব্যাগ নিয়ে বাসায় চলে যা, আমি কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজব।’
ফাহাদ ব্যাগ নিয়ে বাসায় রওনা হল আর নিহার বৃষ্টির মধ্যে হেটে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে একটা ডাক শুনতে পেল “এই যে ভাইয়া!”
পেছন ফিরে দেখল একটা দশ- বারো বছরের ছেলে সম্ভবত টোকাই তার দিকে দুইটি কদম ফুল এগিয়ে দিয়েছে।
ফুলগুলো পেয়ে নিহারের মন আনন্দে ভরে উঠল। সে ফুলগুলো নিয়ে একবার আকাশের দিকে তাকাল আর ভাবল তার সেই রহস্যময় হাসির কথা। কিন্তু এ কী! ছেলেটা গেল কোথায়? নিহার ভাল করে চারদিক তাকাল। কিন্তু সেই ছেলেটাকে কোথাও দেখা গেল না। নিহার খুব আশ্চর্য হল। আবার ভালও লাগল তার ফুলগুলো পেয়ে। তারপর আবার নিহারের সেই রহস্যময় হাসি।