অন্তঃসত্ত্বার ভায়োলিন
বিটুল দেব
অন্তঃসত্ত্বার অপূর্ব সকাল
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চোখে ভায়োলিন।
নব প্রাণের সূক্ষ্ম অনুভূতিতে
কচি হাত; পাখির ডানার মতো আকাশহীন উদরে।
ধ্যানে নিশ্চুপ
বিশুদ্ধ গতিপথ
আর বাতাসে মাখোমাখো আনন্দ।
একটি মুজিব ইরমীয় কবিতা
দেলোয়ার হোসাইন
গেরাম ছাড়ছি বাক্কাদিন আগে, মনো নাই গরমো না মাঘে, তারফর খতো শীত গেল, খতো বরষা আইলো, আমি ছাইয়া রইলাম মেঘর দিগে, আমারেনি যদি এখবার নাম ধরি ডাখে, খেউ ডাখেনি খেউ ডাখে না, এই শহর আমারে ছিনে না, মাটির ঘ্রাণ লেগে আছে গতরে, আমি ছাড়তে ফারি না কত’রে, গেরামো যাইমু আবার ছান উঠলে, জোনাক দেখমু ফুকরির জলে, বাছি যদি আরো কিছু দিন, আদায় খরমু মা-বাফর ঋণ, আর মরি গেলে, মাটি দিবো সবে মিলে...
বাংলাদেশ
জোবায়ের মিলন
আমার অহংকার তোমার জন্য,
তোমার জন্যই খাদ্য-গ্রহণ, জল-পান,
শ্বাস-প্রশ্বাস।
এমন মাটি আর কোনদিন পাবো না।
একজন্ম, দ্বিজন্ম যে তত্ত্বই সত্য হোক, না হোক-
এমন গন্ধ আর কোনদিন পাবো না
কোথাও না,
কোথাও না।
এমন ছায়া কোথাও পড়বে না, পড়ে না
এমন রোদ কোথাও উঠবে না, ওঠে না
এমন দিন ও রাতের জোছনা
হাসবে না, হাসে না
ভরায় না তৃপ্তির সাত মহল।
আমার অহংকার তোমার জন্য
তোমার জন্যই খাদ্য-গ্রহণ, জল-পান,
শ্বাস-প্রশ্বাস।
প্রতিহিংসার মহাপ্রলয়
সুব্রত দাশ আপন
জাগ্রত ঘুমে বিভোর জাতি,
তাই কবিতার বারান্দায় আজো শুনি
ধর্ষিতা নারীর চিৎকার;
সুপ্ত বিবেকের অধঃপতন বলে
সমাজ, আইন, সংবিধানে
দেখি মুখোশপরা শয়তারের আড্ডা।
নরকেরকীটের বেসামাল রাজনীতি
জাহেলিয় যুগের আবির্ভাবে
বাকরুদ্ধ জনতার নিঃশব্দে পথচলা;
তন্দ্রাবিহীন বিবেকের কাঠগড়া
প্রতিহিংসার মহাপ্রলয়ে গণতন্ত্র আজ শিকড়হীন।
একটি কল্পনার রাত-বিরাত
সেলিম রেজা
নীল আকাশ মাথার উপর
বাড়ির কার্ণিশে কা কা স্বরে ডাকছে কাক
বাতাসে নারীকন্ঠ, স্টেশনে রেখে পদচিহ্ন;
যান্ত্রিক কোলাহলে পথচারী রাস্তা পার হয়ে-
মতিঝিলে এসে থামে
একটি কল্পনা;
অনিদ্রায় মাঝরাতে লালচে চোখ-
এপাশ ওপাশ করে বুকে টানে বালিশ
জীবনের রোজনামচায় হিসেব কষে বেহিসেবী মেজাজ
দীর্ঘাশ্বাস ঘড়ির কাঁটা ছুঁয় নিশিভোর
ঘুমের ঘোরে খুঁজে চিবুকের ভাঁজ
অশ্রুসমুদ্রে ভেজায় দু’চোখ
বেদনাভারে মিথ্যুক স্বপ্নসিন্দুক কাঁধে
প্রবল ইচ্ছে হংস মিথুন সাঁতারবিলাস
মুঠোফোনে অনবরত সুরের সিম্ফনি
উত্তাল তরঙ্গে আর ঢেউ খেলে না ডুবসাঁতার
একটি কল্পনা-
কেউ নেই, কেউ থাকার কথাও না
আছে একা, একাই চলছে আদিগন্ত পথ...
বইচোর মনচোর
সৈয়দ নূরুলআলম
ঢাকা শহরে চোরের উৎপাত বেড়েছে
প্রায়ই চুরি-চামারি, ছিনতাই হয় অলিতেগলিতে
ক্রমবর্ধমান এ ত্রাসে আতঙ্কিত সবাই।
কিন্তু বইচোর আর মনচোর একটিও বাড়েনি এত বছরে,
গত শতাব্দীর শেষ ভাগে যে তরুণ টিটিউশনি করতে যেয়ে
ছাত্রের বাসা থেকে সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’
চুরি করে অবলীলায় পাড় পেয়ে যায়। সেই একই যুবক
মৌমিতার মন চুরি করতে যেয়ে বৌদিও কাছে
হাতেনাতে ধরা খায়। এরপর আর হয়নি,বইচুরি-মনচুরি
কোনোটি তার। অথচ ঢাকাকে শুদ্ধ করতে মনচোর না হলেও
বইচোরের বড় বেশি প্রয়োজন, এই বৈরী আবহাওয়ায়।
অলব্ধ পতাকা
রুদ্র সুশান্ত
দেবী, শোন- তোর কাঁধে হাত রেখে ভালোবাসার রোমান্টিক উপখ্যান লিখে দিই, তুই চোখ তুলে থাকালে স্বর্গটা মর্তে বুক দাপিয়ে চলে আসে।
ঠিক যেন শ্যাওলা দেয়ালে একজোড়া টিকটিকির নির্মল বসবাস, এই পৃথিবীর গণতন্ত্র কিংবা জোতিষশাস্ত্র তাদের কোন ভাবনা দিতে পারেনি।
কে কি বললো, কোথায় কি হলো, তুই কাছে থাকলে আমার কখনো এসব মনে পড়ে না;
আমাকে যদি একটা বৃত্ত ভাবিস্ তবে ব্যাসের মধ্যবিন্দুতে তুই থাকিস্।
অযথা গনিতবিদ্যায় সহস্র ডিগ্রী না নিয়ে থিয়েটারের মঞ্চে তোর চোখে চোখ রেখে পড়ে যাবো রবীন্দ্রনাথ,
আর আমার কবিতার পান্ডুলিপি- যেসব কবিতার উত্থান হয়েছে দেবীর ভাবনা থেকে।
উন্মুক্ত মঞ্চের সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তোরে নিয়ে হিজল বন চলে যাবো, পাশে জারুল গাছের শীতল বাতাস সোহাগ মেখে দিবে তোরে, হিজলের বাগানে রঙ মাখিয়ে তুই আর আমি উন্মুখ হয়ে জ্যোৎস্না স্নান করবো- আর পৃথিবীর ললাটপটে লিখে দিবো আদিতম ইতিহাস।
স্বর্গে পুষ্প বৃষ্টি হবে তোর আগমনে-
আমি ভিখারীর মতোন সুখ ছুঁয়ে নিবো তোর ভালোবাসার নদী থেকে।
আমাদের মোহনপ্রেমের রিহার্সাল লিখিতি হবে মাঠের সবুজ রুমালে,
তোর নির্বাক চাহনির উজ্জ্বল মন্ত্রধ্বনিতে নৈবেদ্য পেতে দিবো আমি, গঞ্জে ফিরে এসে প্রেসক্লাবে জানিয়ে দিবো আমাদের ‘শুভ পরিণয়’।
হাতে হাত রেখে সিনেমাহল থেকে ফিরে প্রেমের বেহেলায় তুলবো নিষ্পাপ পাললিক সুর। মগজের ভায়োলিনে তোকে গেঁথে মহাসমুদ্রের মহাকল্লোলের মতোন তোর চোখে এঁকে দিবো- সহস্র জনমের সুখ, প্রস্তর যুগের প্রেমোপন্যাস, টিএসসির নাট্যমন্দিরে বার বার ‘দেবী’ নাম ধ্বনিত হবে।
ভালোবাসা নামে কোন নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখিনি, আমি নির্ভেজাল মোহনায় মেখে রেখেছি তোর ছোঁয়া, অগন্থিত প্রণয়বাক্য।
চাঁদ যেখানে জ্যোৎস্না দেয়নি, সেখানে পৌঁছে গেছে তোর হাসি।
একদিন নির্ঝঞ্জাট বাতাস নিয়ে তোর সম্মুখে এসে বলে দিবো- ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি’।
দেবী, তোর নয়নে লিখে নিস্ আমার নাম,
ধর্ম, কবিতা, জীবন সবখানেই ‘তুই’ একটি সর্বনাম।
ভালোবাসি তোরে, দেবী, ভালোবাসি।
এই হোক পৃথিবীর বৃহত্তম উপন্যাস।
চিরস্থায়ী অন্ধকার
নাফছি জাহান
তোমার নিক্ষেপ করা বেদনার চিৎকার শুনতে পাও?
অবিরত প্রতারণার ফাঁদগুলো কতোটা অনায়াসে
শৈল্পিক মনে গড়ে তুলেছিলে
আমায় আঘাত করবে বলে,
আশ্চর্যজনক ক্ষমতা ছিল তোমার অন্তরে।
অশ্রুজলে সিক্ত হয়েছি প্রতিক্ষণে
তবু বুঝতে পারিনি
বাহ্যিকতার বিপরীতে কেমন ছিল,তোমার অভ্যন্তরে।
প্রতিবাদহীন নিষ্প্রাণ কাঠের পুতুলের ন্যায় চলে এসেছি দূরে,
অন্ধকারের আগমন ঘটেছে এ জীবনে তোমার প্রার্থনাতে,
চিরস্থায়ী অন্ধকারের প্লাটফর্মে পৌছে গিয়েছি আমি
তুমিতো চেয়েছিলে এমনই।
মধ্যাহ্নের অধিকার
সতী
দূর্গাৎসব অদূরেই বৈ কি! বিষদ ও অভিমান উপেক্ষায় লাল পেরে সাদা শাড়ী সুখ রুপে। কোন এক মধ্যাহ্ন রাতে কুয়াশা হয়ে ছেয়েছিলে, টেনেছিলে চন্দ্র স্নানের নগ্নতায়।
উষ্ণাধরে ফিসফিসিয়ে বলেছিলে- ‘আমি প্রাণনাথ, তোমার প্রাণনাথ’ ‘দাও অধিকার আদিম গুহাবাসী উন্মুক্ত যৌবনা ললনার বক্ষাবেষ্ঠনে বাকলের মত’ ‘দাও অধিকার শাণিত পাথরাস্ত্রে নির্দিষ্ট লক্ষে আঘাতের’ ‘দাও অধিকার গাছের ডালে ঘর্ষণে ঘর্ষণে উৎপাদিত প্রথমাগ্নি ভীতিতে
নর ও নারীর কাছাকাছি হয়ে অদৃকার্ষণে ঘনিষ্ঠতায় কামাগ্নিতে জ্বলে উঠবার’ প্রাণনাথ.....
সেদিনের মধ্যাহ্ন রাতে নিদ্রিত সতী জাগ্রত
হবার পর থেকেই
স্বর্গীয় ফুলে তোমাতে অর্ঘিত হবার তপস্যায়। সত্যিকারার্থে কেউ না থাকার পরেও ‘কেউ আছে’ ভাবা কতটা
যাতনার তুমি জানো কিনা জানিনা! এবারের বিসর্জনের আগেই প্রাণনাথ আগত হলে
সহাস্যে দুর্দমনীয় প্রেমলীলায় তোমাতে সতীতে সংস্রব ঘটবে। তার পর দূর্গাৎসব হলেও অন্তত বিসর্জন হতো না।