নোনাজলে ভেজা স্যাঁতসেঁতে বালিশ
শহিদুল আলীম
দু’চোখের নোনাজলের ঝর্ণা বুকে চুষে নেয় নিরীহ বালিশ, যেমন করে নিতাম চুষে তোমার ঠোঁটের অতুল্যতেজ বিষ, অবাক লাগে এতো জল কী করে ধরে তার বুকের অধরে, দিনের জমানো বিন্দু বিন্দু গ্লানি মাথা রেখেই ঢালি তার সদরে
নদী নয়, সাগর নয়, রোজ রাতে ঝর্ণা নামে বালিশের বুকে-
নিষ্প্রাণ জড়-কাপড়-তুলো তবুও ভিজে যে কারো দুঃখে, নোনাজলে ভেজা স্যাঁতসেঁতে বালিশ। কখনো করেনি দ্রোহ, প্রবঞ্চিত হৃদয়ের আগুনের ঝাঁজে ভেঙে দিলো সুখের মোহ;
ভালোবাসা ভুলে লাথি দিলো হৃদপি-ে- মাংসের পুতুল, অবুঝ জড়পদার্থ বালিশ প্রেম বুঝে না; তবুও কেমন অতুল!
হায়- বিধি; মিথ্যে মায়ার সংসারে জোড়েন এ-কেমন জোড়, নিমিষেই অর্ধাঙ্গ হয়ে যায় নাগিন; সাধের সংসার বিষফোঁড়!
আমার পরিচয়
তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন
যে নাবিক পথ হারিয়েছে, আমি সেই নাবিকের সহযাত্রী-
যে নদী চাঁদের আলোয় স্নান করে আমি সেই নদীতে সাঁতার কাটি।
যে প্রেমিকা পুড়িয়ে ফেলেছে তার প্রেমিকের চিঠি;- আমি তার প্রেমিক!
যে কবির কাব্যের পা-ুলিপি হয়ে গেছে ধূসর; নিভে গেছে জীবনের সব রঙ,
সে কবি হবার জন্য আমি বুক চাপড়াই।
রক্তের দামে যে দেশ কিনেছে স্বাধীনতা-
আমি সে দেশের পরাধীন নাগরিক।
ধর্ষিত নারীর গর্ভে যে শিশু জন্মাবার আগেই মৃত্যুকে করেছে আলিঙ্গন;
পৃথিবী জেনে রাখুক, আমি সেই ধর্ষিত মায়ের সন্তান!
বাবার হাত
আহমদ মেহেদী
তোমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকা আমার ডানপিটে দিনগুলো,
আজ কত দূরত্ব এ পারের বয়ে চলার ষ্টেশনগুলোতে-হুলস্থূল ভিড়ে
তোমার হাতে বাঁধাই করা আমার ছেলেবেলার বইয়ের খোঁজে,
তোমার আনা দেয়াল ঘড়িটার নিরবচ্ছিন্ন স্রোত- আমাকে ভীত করেনা
আমার একাকিত্বে চান্নির সাথে হাটতে তুমিই শিখেয়েছিলে-
কোন এক চাতক পাখির সাথে।
তোমার যতা দুঃখ আর গ্লানিমুক্তির জন্যে তুমি আমায় জন্ম দিয়েছিলে,
এ সংসারের বেদখল উৎকণ্ঠায় বরাবরই আমার ললাটে রাজ তিলক
দেখার আজন্ম গোপন ইচ্ছে,
দেখিলে না, দেখিতে পারিলে না- জানিতে পারিলেনা তোমার আধুনিক
ছেলেটি তোমার জন্যে বৃদ্ধাশ্রমের কথা একটি মুহূর্তের জন্যেও ভাবেনি !
চারপাশে এত কোলাহল-মধুরতা-বিশালতা, তুমি ছাড়া মনে বিন্দুমাত্র সাড়া দেয় না,
আমার সঞ্চিত স্বপ্নের মাঝি, বাবা- তুমি নেই !
জীবনের মহাসংকটে, প্রভু-অর্থের মহান মিছিলে একটি বুলেটের ভয়ে,
বাবা তোমার পূণ্যময় দুটি হাতের স্পর্শ পেতে বড় বেশি ইচ্ছে করে !
একাকীত্ব আজ বহুদূর!
কোহিনুর আকতার
নিঃসঙ্গতার তাড়নায়
গোপন বেদনার যেই নৃত্য ছিল হৃদয়ে;
সেই চাপা ক্ষত থামলো আজ-
কবিতার প্রণয়ে,
ভালোবেসে কে যেন ডেকে ডেকে যায় !
মন হয় উচাটন;
চুপিসারে সারাক্ষণ-
কবিতায় মাথাগুঁজে আয়েশে ঘুম যায়!
যতটুকু পাবো কবিতার ছোঁয়া
হৃদয়ে তার আবিষ্ট সুর
পাওয়া না পাওয়া- নেই বিভ্রম
আর নয় বিচ্ছেদ কাতরতা-
একাকীত্ব ছুটি নিয়ে আজ বহুদূর !
সুন্দরী মেয়ে
স্বপন শর্মা
প্রাতঃ ভ্রমন, প্রতিদিনের মতো চলতে চলতে;
হঠাৎ দেখি ফুটপাতে এক মৃত দেহ!
চমকে উঠি করুণ বীভৎস মূর্তি দেখে।
ঠাওর করি মৃত মেয়েটির বয়স কত হতে পারে...
ষোল যে পেরোয়নি তা নিশ্চিত-
এই সময়ে সে পৃথিবীকে দেখেছে
লুণ্ঠনের অবাধ উপনিবেশ; মানুষ রূপি পশুর
শ্যেন দৃষ্টি, তীব্র লোভ আর দস্যু প্রবৃত্তি।
ফুটপাতে মুখগুঁজে পড়ে আছে।
কোথায় থাকত মেয়েটি? তার সুতীক্ষè চীৎকার,
হয়ত সমাজ শুনতে পায়নি।
বিক্ষত দেহ দেখে... ভাবি, বাঁচার আকুতির কথা,
সেই প্রার্থনা, কেউ শুনেনি-
অনেককে ছাড়িয়ে একা একা-
পৃথিবী থেকে অনেক, অনেক দূরে।
আজ থেকে সে নিরাপদ;
নিরাপদ তার গোটা পরিবার সমাজ সংসার
আর ছুটতে হবেনা খাদ্যের জন্য
কিংবা অন্যের খাদ্য-হতে ত্রন্ত,
নিরাপদ কারণ আজ সে মৃত।
আজ আর কেউ নেই ডিস্টার্ব করবার,
মানুষের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্টের মতো
পড়ে রইল ফুটপাতে,
শীতল, রক্তাক্ত, বিকৃত দেহে।
যাদের হাতে ফোন, ক্যামেরা ছিল-
ফটোগ্রাফার আজকে সবাই,
নিরব, নিস্তব্ধ আঙ্গুলে চেপে এগিয়ে গেল;
নিষ্ঠুর বিদ্রুপের মতো পিছনে ফেলে
জীবনচ্যুত এক সুন্দরী মেয়েকে।
নেবে কি সেই দায়িত্ব?
রেজাউল রেজা
দেখিবার তরে ব্যাকুল হিয়া, বুঝাইব কি দিয়া!
প্রথম দেখার পরেই নেশায় পড়িয়া গিয়াছি প্রিয়া।
এখন বার বার দেখিতে ইচ্ছা করে।
কোথায় লুকাইয়া রহিয়াছ তুমি? আমি যে খুঁজিয়া মরি!
একবার কি দেবে দেখা?
আর একটা বার কি আসিবে আমার অক্ষির সম্মুখে?
দেখিতে চাই, আমি প্রাণ ভরিয়া দেখিতে চাই।
আমার শুকনা মরু সদৃশ হৃদয়টাকে তোমার দর্শনের ৎ
স্বচ্ছ জলকণায় ভিজিয়া নিতে চাই,
দেখার ব্যাকুল ইচ্ছেটাকে দমন করিতে চাই।
নেবে কি সেই ইচ্ছা দমানোর দায়িত্ব?
একটা বার দেবে কি দেখা?
রচিত হোক ঐতিকহাসিক প্রেম
এম এ ওহাব মণ্ডল
যেখানে সীমান্ত তোমার
সেখানেই হোক আমার শরণার্থী জীবন।
দুঃখ গুলো ধুয়ে যাক
মেঘের জলে।
রোদেলা আসমানে হেসে ওঠুক
একফালি আলো।
বুনো হাঁসেরা দল বেঁধে ছুটে যাক
উছলে পড়া জলের কোলে।
ব্যালকুনির টবে চাষ হওয়া ক্যাকটাস ফিরে পাক
সবুজ তারুণ্য।
রাতের হেলাল ক্যান্ডেলের মতো গলে পড়ুক
তোমার কাঁঠবাদামি অবয়বে।
আর আমি!!
তোমার কাজলমাখা জোড়া চোখের কালজয়ী কবিতা লিখে
ইতিহাসে বুনে দিই একটি নাম।