মা একটি মহাকাব্যের নাম



 মা একটি মহাকাব্যের নাম
মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম

‘মা’ একটি শব্দ। এই শব্দ সৃষ্টির পেছনে থাকে কষ্টময় দীর্ঘ এক ইতিহাস। একজন মেয়েকে মা হওয়ার জন্য নিতে হয় জীবনের ঝুঁকি। প্রায় নয়-দশ মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার পর সন্তান ভূমিষ্ট হলে মা ভুলে যায় সেই কষ্টময় ইতিহাসের কথা। সন্তানকে লালন পালন করে মা বড় করে তোলে। তাতেও রয়েছে কষ্টের এক দীর্ঘতম পথ। যেই পথটি প্রত্যেক মায়ে অতিক্রম করে সন্তানের পৌঁছে নেয় মানুষ হওয়ার দিকে। যেই মা না হলে সন্তান এই পৃথিবীর আলো দেখতো না। অনেকেই সেই মায়ের সন্তান হয়ে মাকে বৃদ্ধাবস্থায় পাঠিয়ে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে। এই কাজটি শিক্ষিত সন্তানদের দ্বারা সাম্প্রতিক সময়ে বেশি ঘটছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

আমার বয়স এখন প্রায় ১৯ বছর। আমিই পরিবারের বড় ছেলে। আমার ছোট এক ভাই ও বোন রয়েছে। আমার মা গৃহিণী, বাবা ব্যবসায়ী। ছোটকাল থেকে মায়ের সান্নিধ্যে থেকে দুইটি দশক অতিক্রম করতে চলেছি। এখনো আছি মায়ের সান্নিধ্যে। এই দীর্ঘ সময়ে মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া আমার বহু ঘটনার আজ সাক্ষী আমি। আজ মা দিবসে পাঠকদের সম্মুখে তুলে ধরবো আমার সাম্প্রতিক জীবন থেকে মায়ের কিছু স্মৃতি-

ক্লাস ফোর-ফাইভে থাকাকালীন আমার সাথে সমবয়সীদের মাঝে মাঝে ঝঁগড়া হতো। মায়ের কাছে অভিযোগ আসতো। আমি বাহির থেকে বাসায় ফিরলে মা জানতে চাইতেন- কেন অভিযোগ এলো? আমার মতামতের ভিত্তিতে যদি আমি দোষী হই তাহলে মা কখনো ছাড় দিতেন না। দোষী সাব্যস্ত হলেই মাইর অবশ্যম্ভাবী। বেশ কয়েকবছর পূর্বে আমাদের বাড়িতে রেখে মা আন্টির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সকালে গিয়েছেন দুপুরেই ছোট ভাই নারিকেল গাছের শুকনো ঢালে ঝুলে চড়তে গিয়ে হাতে হালকা ব্যাথা পায়। বাবা মাকে ফোন দিয়ে সেই খবরটা জানান। ফোন করার এক ঘন্টা সময় অতিক্রম না হওয়ার পূর্বেই মা চলে এলেন বাড়িতে। তখন ঘড়িতে বিকাল তিন কি চারটা বাজে। ছোট ভাইকে দেখেই মা শান্ত হলেন। বাড়ি আসার পর জানতে পারলাম- মা খাবার প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও দুপুরের খাবার না খেয়েই চলে এসেছেন। এইটা থেকে কিছুটা হলেও ধারণা করা যায়- সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার বিশালতার পরিমাণ। গত মাসে আমি পরীক্ষা দিয়ে শহর থেকে বাড়ি ফিরলাম রাত আটটার দিকে। বাড়ি ফিরেই হাত-মুখ ধুঁয়ে আসতে আসতে নয়টা বেজে গেল। শরীর বেশ ক্লান্ত। তাই মাকে দ্রুত রাতের খাবার দিতে বললাম। মা বললেন- একটু দেরী হবে। সেই একটু দেরী হওয়াটা আমি সহ্য করতে না পেরে পানি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। মা একটু পরে খাবার প্রস্তুত করে আমাকে ডাকলেন খেতে। বেশ কয়েকবার ডাকার পরও আমি গেলাম না। শেষ পর্যন্ত খাবার আমার বিছানায় নিয়ে এলেন। আমি আর না বলতে পারলাম না। ওঠে খাবার গ্রহণ করলাম। আমি চার বা পাঁচ বছর বয়সী নয়। আমার বয়স উপরে উল্লেখ আছে! মায়ের কাছে আমি এখনো পাঁচ বছরের শিশু।

গত দুই তারিখে মা তাঁর মাকে (আমার নানী) হারিয়েছেন। সেদিন রাতেই নানীকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। বাবাসহ আমরা রাতেই বাড়ি ফিরে আসি। মা আর ছোট বোন আসে সকালে। সেদিন বেলা এগারোটার দিকে মাকে কে একজন ফোন করে। তখন আমি চা খাচ্ছিলাম। মা এদিক থেকে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন- ‘মা’ শব্দটা আমাদের জীবন থেকে চলে গেছে আর কি! ‘মা’ বলে আর কাউকে ডাকতে পারবো না’। মায়ের কথা শুনে আমার চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো। আপন মাকে হারিয়ে মা এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠতে পারেননি। আহা!  ‘মা’ কি মিষ্টি মধুর শব্দ! কত কিছুই না জড়িয়ে আছে এই শব্দের মাঝে। মা দিবসে সকলের প্রতি অনুরোধ- আমার মা সহ পৃথিবীর সকল মায়েদের জন্য দোয়া করবেন। মাকে কোন অবস্থাতেই কষ্ট দিবেন না।

প্রতি বছরে ‘মা’ দিবস' একটি নির্দিষ্ট দিনে এলেও মায়ের প্রতি ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে। মা দিবস আসার কারণ হিসেবে আমি দেখি- মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার পরিমাণটা বাড়ানো। অর্থাৎ অতীতের চেয়ে মা দিবসের দিন থেকে আগামীতে মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, যারা মাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে তাদের কাছে টেনে নেয়ার দিন হিসেবে। মা দিবসের প্রত্যাশা- পৃথিবীর সকল মায়েরা ভালো থাকুক, নিরাপদে থাকুক। বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর সন্তান কর্তৃক কষ্টের স্বীকার থেকে দূরে থাকুক। পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি ভালোবাসা, শুভেচ্ছা।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট