যেদিন বারোমাস ফুঁসে উঠলো
নাসিমা হক মুক্তা
হঠাৎ খসে পড়ল একখ- মেঘ
দিগন্তের গায়ে হাউমাউ সুর তুলে বৃষ্টি
ঝমঝম বৃষ্টি, শব্দটি দারুণ শিহরিত
সমস্ত শরীরজুড়ে মন পরাগ চিকচিক করছে
মুখোমুখি জীবন!
আমি দেখছি, একা, পাশে আছি শুধু নিজেই
কিভাবে যে মেঘমেলা,
ঝরঝর ঝরে পড়ে
অনুভবে খুনসুটির নানান ছলের করতালি
আমি মানুষ, একা তালি ওঠে না
কেবল মনে ভাসে বৃষ্টির পর যে জল ঢেউ খেলে
সেরকম পুকুর চায়
বৃষ্টির মতো করে ইশারা ইশারা ঢেউ খেলবো
অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা জলসেচ
হাওয়ার পালের সাথে রঙ বদলে
চঞ্চুর মুখে বুনে সুখ
বুকের মধ্যে যেদিন বারোমাস ফুঁসে উঠলো
তখন’ই বৃষ্টি উধাও
বছরের পর বছর অনাবাদি থেকে গেল
তার পরের জীবন.....
স্রষ্টার নেশিলা ফুঁক
আসিফ আহমদ
এখন স্রষ্টার দু’আঙ্গুলের মধ্যখানে আমি।
খানিক আগেই মস্তকে আমার অনল দিয়ে ফুঁকতে শুরু করেছেন তিনি।
আর আমি শেষ হতে শুরু করেছি একটু একটু করে।
অথচ এই খানিক আগেই আমি সযত্নে গচ্ছিত ছিলাম চামড়ার মোড়কে ।
সেখান থেকে বের করে মস্তকে আগুন দিতেই,
আমি একটু একটু করে ধূসর হয়ে ঝড়তে শুরু করেছি।
শেষ হতে শুরু করেছি স্রষ্টার প্রতিটি নেশিলা ফুঁকে...!!
ফ্রেম
কনকজোতি রায়
মন জুড়ে তারাহীন আকাশ
হৃদয়ে অলীক কল্পনার অনুরনন
চোখের পাতায় ভেসে যাওয়া টুকরো টুকরো মেঘ।
অনেকদিন বৃষ্টি হয়নি,
সিঞ্চনের আশায় পাতাগুলি হলুদ
শুষ্ক ধানের শিষে ফলে না মমতার ফসল,
ক্ষয়িষ্ণু শিকড় উৎপাটনের অপেক্ষায়,
ধুমকেতুর মতো হঠাৎ এসেই মিলিয়ে যায়
লাল নীল আর সবুজ স্বপ্নগুলো,
ভালবাসার মোড়কে নকল সোনা
বাজারদর তারই সবচেয়ে বেশী
অলিতে গলিতে হীরের টুকরোর ছড়াছড়ি।
প্রজাপতিটা আসেনি অনেকদিন
ওটা শুধুই রং ভুল করে
ধরতে পারলে বাঁধিয়ে রাখতাম
সুদৃশ্য ফ্রেমে,
নিরাভরন নয়, মালা দিয়ে।
চলে গেলে রেখে যাবো ঢেরবেশি
রফিকুল নাজিম
বিস্তৃত আকাশ ও নীল জোছনা- আমি রেখে যাবো
চলে গেলে রেখে যাবো ধানক্ষেতে উতলা বাতাস
পরিচিত পাখি, নাম না জানা ফুল, সবুজ লতাপাতা।
আমি চলে গেলে রেখে যাবো নদীজাত মায়া; দুই তীর,
আমার দুরন্ত শৈশব, উচ্ছ্বল কৈশোর ও তাগড়া যৌবন,
আমি চলে গেলে রেখে যাবো কেবল তোমাকে ও প্রেম।
আমি চলে গেলে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো সব অবহেলা
বুকে পোষা অভিমান, গৃহস্থালি দুঃখবোধ।
লাল, নীল, বেগুনি রঙের কষ্ট। বিরহকাল। বৈরীতা।
সন্ন্যাসচারিত মন ও বর্বর কাম কামনা- আমি রেখে যাবো
এবং উচ্ছন্নে যাওয়া এই বাউ-ুলে প্রেমিককে
আমি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবো তোমার অলক্ষ্যে; ওপারে।
গণতন্ত্র
মাসুদ পারভেজ
কাঁধের উপর নিজের লাশ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দরবেশ বাড়ি,
ছোট দরবেশ ধমক দিয়ে বলল- হাঁট
আমি হাঁটতে থাকলাম.....
পথি-মধ্য মেজ দরবেশ পানের রক্ত সোনার বালুতে পিক দিয়ে বলল- পারা দিস না, সোনার দাম কইমা যাইবো; পথ ফিরাইয়া দৌড়া।
আমি দৌড়াতে থাকলাম...
একবছর পর বড় দরবেশকে পেয়ে গেলাম, বললাম এই লাশের বয়স কত?
তিনি বললেন- যেইদিন প্রথম ভোট দিছিলি, সেইদিন থেকেই তোর কাঁধে। চিন্তা লইস না আর কদিনই তো। আরেকটু জোরে দৌড়া।
আমি আমার লাশ কাঁধে নিয়ে একশো বছর দৌড়াচ্ছি।