ফিলিস্তিনের গল্প


 

ফিলিস্তিনের গল্প 

কাজী তানভীর 


তারুণ্যদীপ্ত ফিলিস্তিনি নওজোয়ান, আনাস। 

গত দুমাস ধরে ঘরদোর সাজাচ্ছিল। হবু প্রীয়তমা সায়মা ঘরে আসবে। সায়মা খুব সুন্দরী মেয়ে। 

সে দন্তচিকিৎসক। পরিবারদ্বয়ের মধ্যে বিয়ের আলাপালোচনা পাকা। ঈদের পরপরই তারা বিয়ের পীড়িতে বসবে, আল্লাহ তায়ালা যদি চান! 

মসজিদুল আকসাকে কেন্দ্র করে অর্ধ-রমাদ্বান পেরুবার পর জয়ানবাদি ইয়াহুদিরা রীতিমত ফিলিন্তিনিদের উপর জুলুমের খড়গ চালাতে শুরু করে। প্রতিদিনই নিরিহ ফিলিস্তিনিরা আহত হচ্ছে। একদুইজন করে শহিদের কাতারেও সারিবদ্ধ হচ্ছে! 

পুরো ফিলিস্তিন জুড়ে হাহাকার। আতঙ্ক! আকসা মসজিদকে ঘিরে ইস্যুটা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিগনিত হল। তাই ইয়াহুদিয়া স্রেফ আকসাতে সীমাবদ্ধ রয়ল না। তামাম ফিলিস্তিনের জনবসতি গুলোতেও হামলা শুরু করল। রকেট হামলা করল। বিমান হামলা করল। বহুতল ভবন, মসজিদ তাঁবু সবকিছু ধ্বসিয়ে দিল। ধ্বংসস্তুপ প্রায় শহর-নগর! 

ঈদের দিনও থেমে ছিল না দখলদার ইয়াহুদিদের এই পৈশাচিক বর্বরতা। বোমার শব্দে ঈদের দিনের সকাল হল ফিলিস্তিনিদের! সেদিনও শহিদ হলো অনেক মাসুম বাচ্চা। ধ্বংসস্তুপ পড়ে আছে ঈদের জামা-কাপড় জুতা ও খেলনার পুতুল! কী নির্মম! 

নওজোয়ান আনাস বর্ণনা করে ;

‘আমি সেদিন সায়মার কাছে গিয়েছিলাম। আশ্চর্য হলাম! এই নাজুক পরিস্থিতিতে সে হাসছিল। আমি বলেছিলাম, “ওয়াল্লাহি, তুমি আমার চেয়েও দৃঢ়। মনোবল প্রখর।  মাশাল্লাহ।”

সেদিন তার কাছে থেকে চলে আসি। গতরাতে যখন অভিযান শুরু হয়েছিল, তখন আমি সায়মাকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ লিখেছিলাম, তুমি কেমন আছ? সায়মা জবাব বলল, “আমি ভাল আছি, আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে।” 



আমি তাকে বলেছিলাম,“ কোনো নিরাপদস্থানে লুকে যাও”। দুর্ভাগ্যক্রমে, ম্যাসেজটি ওর কাছে পৌঁছালো না আর!  ঠিক তখনই বোমাবিস্ফোরিত হলো ওদের বাড়িতে। সব তছনছ হয়ে গেল। 

আমি সায়মাকে তার ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির ধ্বংসস্তুপে প্রায় ১০ ঘণ্টা যাবৎ অনুসন্ধান করেছিলাম। এই আশায় যে, সায়মা এখনও বেঁচে আছে। আমি খুব আগ্রহের সাথে ধ্বংসস্তুপের প্রতিটি ইট-পাথর সরাচ্ছিলাম। প্রায় ১০ ঘন্টা যাবৎ। এই আশায় যে, হয়ত সায়মা জীবন ধ্বংসলীলায় আটকে আছে।

অবশেষে, সিভিল ডিফেন্সের লোকেরা সায়মাকে পেল। তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল, তবে সে ধ্বংসস্তুপের তলে ছিল ! তার চারপাশে ধূলিকণা ও গুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল! তারমধ্যেই সায়মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়েছে।

সায়মা, বুকভরা আশা, ঈদানন্দ উদযাপন শেষে দীর্ঘপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নির্ধারিত বিবাহের দিনে

নববধূবেশে সজ্জিত হবে। নতুন জিন্দেগী গড়বে।

কিন্তু সে ও তার পরিবারের প্রত্যেকে শহিদ হয়ে গেল। বড় সৌভাগ্যবান তারা সকলে। সবাই এখন দুর্গন্ধযুক্ত পৃথীবি ছেড়ে বেশ আয়েশে আছে, স্বর্গে!

আমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহর কসম। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। 

সে ও তার পরিবার খুব সৌভাগ্যবান। তারা শহিদ হয়েছে। আর, একজন শহিদ ৭০ জন গোনাহগারকে

জান্নাতে নিয়ে যেতে সুপারিশ করতে পারে। 

আমি আশা রাখি , আমার প্রেয়সী সায়মার সর্বপ্রথম সুপারিশ আমার জন্যই হবে, ইনশাল্লাহ। 

আল্লাহ যেন তাকে আমার জন্য জান্নাতের হুরদের সরদার্নি বানিয়ে দেন। তার কিছু ডাক্তারি সরঞ্জাম এখনো আমার কাছে আছে। এগুলো ওর স্মৃতি। 

বহু বছর পড়াশোনা কোশেশ ও মেহনতের পর ডেন্টালিস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সায়মা! সে তার জীবনের সমস্ত কিছুকে দন্তচিকিৎসার জন্য আত্মত্যাগ করেছিল। আমার জান্নাতী প্রেয়সীর এই স্মৃতিগুলো আমাকে খুব আনন্দ দেয়!

আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নাসিব করুন। ’

কত প্রিয়-প্রিয়তমার গল্প শুনি। পার্থক্যটা হলো, 

এদের অনেকে আত্মহত্যা করে মরে জাহান্নামে যায়। আর অনেকে শহিদ হয়ে হাসিমুখে জান্নাতে যায়। পরকালের অনন্ত সুখশান্তি’ই আসল সুখশান্তি।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট