শব্দমালা
সাদিক আল আমিন
জেঠ মাস
জেঠ মাসে ওরা বিয়ে করে। জেঠ মাসে ওরা পানপাতা চিবিয়ে বৃষ্টিতে নাচে তা-ধিনধিন। বৃষ্টি থামলে ওরা হলদে সালোয়ার পরিহিতা নির্লিপ্ত বালিকাকে ভিজে চপচপ হেঁটে যেতে দেখে। দেখতে দেখতে মেঘ ঘনিয়ে শুরু হয় ঝড়। জেঠ মাসে ওরা ঝড়ের বিপরীতে নিজেদের দেহ ঋজু রাখার চেষ্টা করেÑ উড়োচুল সারিসারি ডাবগাছের মতো। জেঠ মাসে সব হলুদ ভিজে যায়। জেঠ মাসে সব গাছে মৌসুমি ঘ্রাণ। জেঠ মাসে ওরা টিনের ছাউনিওয়ালা টাঁটির বেড়ার ঘর বানিয়ে থাকে ফাঁকা কান্দরেÑ তালগাছের বাবুই পাখি যেন। একটু পরেই আবার উড়ে যায় টিন, তাঁতিবাবুইয়ের বাসা, হলুদ সালোয়ার। জেঠ মাসে শ্বশুরঘর থেকে আব্বার বাড়িতে ফিরে আসে ঘরজামাই সোলটেশ। গত জেঠেই ওর বিয়ে হয়েছিলÑ মনে করতে করতে বৃষ্টিতে ভিজে আর পানপাতা চিবায় সে।
অতীতকাল
বুনোহাঁস খুঁটে খুঁটে খায় মানুষের
মাটিতলে লুকিয়ে রাখা অতীত
খেয়ে বড় হয়; হতে হতে
বুকভর্তি পালকে মেলে দেয় সমস্ত শাদা
শাদার ভিতরে লুকিয়ে থাকে ধরণীর ওম
ওমের ভিতরে থাকে সুখ, অন্তিম আমোদ
বুনোহাঁস আমোদে ডানা মেলে উড়ে যায়
ফেলে যায় তার নিজের অতীত
মানুষ সেই অতীত চুমে কবিতা লেখে উপমায়
অথচ নিজের অতীত নিজের কাছে
কেন এত তেতো লাগে প্রিয়?
গন্ধবকুলের শুভ্রশোক
আমার ভীষণ রোগা দাদীমার ক্রমেই কমছে আয়ু
সেই সাথে দাদাও পাল্লা দিয়ে যুবক হয়ে ওঠে
কী করুণ জীবন দান করে আবার থেমে গেছে জরায়ু!
ভাঙা রাতের ভেজানো কপাটে জীবনকথা ফোঁটে
আমি ছোট শিশু হবে বয়স চার কি পাঁচ
আলোহীন কলহাস্যে দেখছি কতো শোক
ভুলে থাকো যদি, পারবে না কখনো করতে আঁচ
দেখে ফেলেও না দেখার ভান করা অসতর্ক চোখ
নিভু নিভু চেরাগের কেরোসিন মৃদু হাওয়ায় কাটায় রাত
দেখে নিও তখনÑ হাফপ্যান্ট-পরা আমাকে, ভাবুক
জীবনের জানা নেই আছে তখনো কতো ঘাত-প্রতিঘাত
আমি গালে হাত দিয়ে একা বসে থাকি উজবুক
দাদা পিঠে শীর্ণ হাত চাপড়ে বলে, ‘বেটি সে কার?’
আমি অকস্মাৎ খুব চমকে লজ্জায় মুখ চেপে ধরি তার
বিরতি
আরও একটু সময় দিলে
হাসবো আমরা
আপাতত বিষাদ নিয়ে
থাকতে দাও
কিছুটা সময়
কে জানে!
হয়তো-বা বিষাদেই লুকোনো আছে
তোমার হারানো গ্রাম, সবুজ ধানখেত
আমি কেবল-ই কৃষক হয়ে
চষে বেড়াই তোমার ভূমি
সহস্র বর্গমাইল
আপাতত বিষাদেই থাকি নিহিত
বৃষ্টিরাত, ঝড়গ্রাম, বোশেখ, রাতের বাতাস
কেমন শূন্যসুখের লোভ জাগায়!
তোমাকে পাওয়ার থেকেও
লোভনীয় সে লোভ
আরও একটু সময় দাও
বিষাদ চুমি
তারপর না’হয় মিথ্যে হাসি
হাসবো দু’জন!