হিমঘর
আহাদ আদনান
ফ্ল্যাট থেকে বস্তিতে যাওয়ার পথটা পায়ে হেঁটে যেতে লাগে ঘণ্টা খানেক। লকডাউন দেওয়ার পর শিউলি ভেবেছিল চাকরিটা মনে হয় চলে যাবে। সবাই বলছিল, লকডাউন জিনিসটা একধরনের ১৪৪ ধারার মত একটা ব্যাপার। ঘর থেকে বের হলেই ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ। কিংবা গুলি টুলিও চালিয়ে দিতে পারে। বস্তি থেকে বের হওয়া যাবে না। ফ্ল্যাটে যেতে না পারলে সাহেব হয়ত এক দুইদিন সহ্য করবেন। তারপর খুঁজে নিবেন নতুন বুয়া।
বাস্তবে লকডাউন অত কড়াকড়ি হল না। সিদ্ধিরগঞ্জের বিদ্যুৎ বিভাগের এই কলোনি’র মাথায় বাঁশ দিয়ে ঘের দিয়ে, লাল পতাকা টানিয়ে দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হল ঠিকই, কিন্তু শতভাগ নিশিছদ্র নয়। ছুটা বুয়ারা তাই কাজ চালিয়ে যেতে পারল। শিউলির কাছে বরং মনে হল এত নিরিবিলি হাঁটার সুযোগ মন্দ কি। রাস্তায় কেও নেই, বিরক্ত করার লোক নেই, উৎপাত করার ছেলেরা নেই। চোখের জল টপটপ করে পড়লেও ধরা পড়ার সম্ভাবনা নেই। একলা নিজের মত করে কান্না করার এমন সুযোগ কবে পায় শিউলিরা?
হাতের চার বাটির টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে বিকেলে চলে আসার সময় কলোনির মাথায় আসতেই পুলিশ বাধা দিল।
‘কোথায় যাচ্ছেন? বের হওয়া নিষেধ’।
‘আমি ছুটা বুয়া। দশটা থেকে চারটা কাম করি। এখন যাইতে না দিলে রাস্তায় বইসা থাকতে হবে’।
‘তোমাকে ঢুকতে দিয়েছে কে? করোনা বাড়ছে, শুনোনি? লকডাউন কড়া হয়েছে। সব সিল করে দেওয়া হবে’।
‘আজকের মত যাইতে দেন। কাল থেকে আসুম না’।
‘হাতে কী? টিফিন বাটিতে কী আছে’?
‘খাবার। মাংস ভুনা। খাইবেন’?
‘গেট লস্ট’।
যেতে যেতে শিউলি মনে মনে হাসে। কাল থেকে সে এমনিও আর আসবে না। কড়া করে লকডাউন দিক সরকার। তার কাজ সারা। বস্তির পিছনে কিছু কুকুর সারাদিন আবর্জনা খুঁজে বেড়ায়। শিউলিকে দেখে ওরা ঘেউঘেউ শুরু করে। আনন্দের চিৎকার। অন্নদাত্রীকে চিনে ফেলেছে সারমেয় বাহিনী।
খুব করে আজ গোসল করে শিউলি। গত পনেরো দিন ধরেই করছে সে। ম্যাডামের বডি শাওয়ারটা একদিন চুরি করে এনেছিল। ফেনা ফেনা করে গোসলের মজাই আলাদা। আজকের মত ডলে ডলে গোসল সে প্রথম দিনও করেনি। বুক ভরতি সাহেবের লালা, কামড়ে স্তন ছুলে রক্ত, যোনিতে থকথকে বীর্য, ফুলে যাওয়া ঠোঁট, পিঠ জুড়ে নখের আঁচড়, জামায় রক্তের দাগ, শরীরে রক্তের গন্ধ, এগুলো কি বডি শাওয়ারে দূর হয়? পক্ষকাল ধরে সে এই গন্ধ দূর করতে পারে নি। আজ মনে হয় তার ঈদ। আজকের গোসল ঈদের গোসল।
সাহেব ম্যাডামের ডিভোর্স হয়ে গেছে মাস দুয়েক। তারও ছয়মাস আগে ম্যাডাম ফ্ল্যাট ছেড়ে গেছেন। উনাদের হাতাহাতি, অশ্রাব্য গালাগালি অনেক শুনেছে শিউলি। তার কি আসে যায় তাতে? ম্যাডাম কাজের খুঁত ধরতে বসে থাকেন না, নিজের রুচি মত রান্না করা যায়, স্বাদ নিয়ে কেও আপত্তি করে না, বেতন ঠিকমত পাওয়া যায়, হেঁটে হেঁটে কাজে আসা যায়। ভালোই আছে সে। কিংবা ভালোই ছিল এতদিন। ওর নিজের স্বামী কাজ করে সিলেট। জাফলং পাথরের আড়তে বউ নিয়ে থাকা যায় না। মেয়েটা পড়েছে ছয়ে। ওকে স্কুলে পাঠিয়ে এই সাহেবদের ফ্ল্যাটে কাজটা সে আনন্দের সাথেই করে।
সাহেব কাজ করে বড় একটা ফার্নিচারের কারখানায়। সারাদিনের কাজ। শুক্রবার ছাড়া দেখা হয়না ঠিকঠাক। ম্যাডাম ফ্ল্যাটেই থাকতেন। ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দোটানায় পড়ে শিউলি। তাকে কি আর রাখবে সাহেব? খালি ফ্ল্যাটে কাজ করতে দিবে? সিসি ক্যামেরা নেই। এসব বিল্ডিংয়ে চুরির সম্ভাবনা, সুযোগ বেশি। একজনের অপরাধ আরেকজনের কাঁধে পড়ার আশংকাও অনেক। সাহেব তবু ডুপ্লিকেট চাবি তুলে দেয় ওর হাতে। কাজের স্বাধীনতা বেড়ে যায় অনেক।
কয়েকমাস চলে যায়। ডিভোর্সটা হয়ে গেছে এতদিনে। বস্তির অনেকেই বলেছিল এই ফ্ল্যাটের কাজটা ছেড়ে দিতে। শিউলি গর্বের সাথে বলে দিয়েছিল, ‘আমার সাব মানুষ ভালা। এই কাম ছাড়া যাইবে না’। করোনা আসার পর থেকে সাহেব এক প্যাকেট মাস্ক কিনে দিয়েছিল ওকে। ফ্ল্যাটে ঢোকার সাথে সাথে হাত স্যানিটাইজার দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করে ঢুকতে হবে। এসব নিয়মকানুন ভালোই লাগত শিউলির।
যেদিন লকডাউনের ঘোষণা আসল ভয় আর আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশেই। কেমন যেন যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা। খুব ভোরে চুপি চুপি বস্তি থেকে বের হয় শিউলি। মেয়ের স্কুল বন্ধ। ঘরেই থাকবে সে। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ। কলোনির মাথায় বাঁশ দিয়ে আটকানো। ছুটা বুয়া বলে সে ঢুকেও পড়ে ভিতরে। কঠোর না শিথিল লকডাউন এগুলো হিসেব করা শিখেনি তখনো লোকজন।
ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তার মানে সাহেব ভিতর। পাঁচ-ছয় বার বেল বাজানোর পর খুলে দরজা। সাহেবের চোখ লাল। ঘুম কাটেনি এখনো। ঘরে কেমন যেন গন্ধ। মদের গন্ধ এমন হয়? রান্নাঘরে কলটা খুলতেই পিঠে শক্ত হাতের স্পর্শ টের পায় শিউলি। ভয়ের হিম শীতল স্রোত বয়ে যায় মেরুদন্ড বরাবর। প্রচন্ড চিৎকার সাহেব থামিয়ে দেন সিগারেট আর মদে ভেজা ঠোঁটের পেষণে। পাশবিক শক্তিতে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ওকে আছড়ে ফেলে জানোয়ারটা। ঘড়ির কাটার কয়েকটা ঘূর্ণনে শিউলি নিজেকে আবিস্কার করে বিবস্ত্র একটা লোকের বুকে। একটা সুতো নেই শরীরে, ধ্বস্তাধস্তির চিহ্ন প্রকট হয়ে আছে ঠোঁট, স্তন, পিঠ আর নিতম্বে। উরু বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে এক খাবলা বীর্য।
পনেরো মিনিট পর। বিছানার চাদরটা শরীরে প্যাচিয়ে কাঁদছে শিউলি।
গ্রাফিক্স : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ‘অ্যাম স্যরি। কি করে কি হয়ে গেল। তোকে কমপেনসেট করে দিব আমি। অনেক টাকা দিব। প্লিজ মুখ খুলিস না। মুখ খুললে কি হবে শোন। তোর দোষ খুঁজবে সবাই, সংসারটা ভাঙবে, চাকরি যাবে, পেপারে তোকে নিয়ে কিসসা রটবে আর আমার ছিঁড়বে বাল। কি করবি ভাব’।
কামিজ আর ব্রা’টা ছিঁড়ে গেছে। ওয়ারড্রবে ম্যাডামের পুরনো জামা পাওয়া যায় একটা। শরীরটা ঢাকার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। অনেকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে কাঁদে শিউলি। দড়ি আছে, কেরোসিন আছে, ধারালো ছুরি আছে, এমনকি ইঁদুর মারার বিষও আছে। এগুলো কোনোটাই টানে না ওকে। সে অন্য ধাতুতে গড়া।
সেইদিন বিকেলের কথা। ভারি এবং ভরা টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে হাঁটছে সে। সারাদিনের কান্নায় চোখ ফোলা। শরীর ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে আসছে। অনেক কষ্টে হাঁটছে সে। রাস্তায় এমনিতে লোক অনেক কম। বিকেলে বলে বাজারের ছুতোয় বেরিয়েছে কিছু লোক। আর লকডাউন দেখার উৎসাহী বাঙালি তো থাকেই। সবাই কি তার দিকে তাকিয়ে আছে? চোখ দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে সবাই? টিফিনের বাটিগুলো কেড়ে নিয়ে খাবলে খাবলে খেয়ে ফেলবে আদা, রসুন আর হলুদ দিয়ে কষানো মাংস? অথচ সম্পূর্ণ বিনা বাধায় পুলিশের বাঁশের সীমানা পার হয়ে যায় শিউলি।
ছোট একটা ঘর। ধুপ ধুপ শব্দ হচ্ছে। কাঠের খাটিয়াতে চাপাতি দিয়ে মাংস কুচি কুচি করছে একটা লোক। ‘বাজান, তুমি আইলা কবে’? ‘দেখ মা, তোর লেইগা গরুর রান আনছি। আয়, চাপাতিটা ধর। তোরে মাংস কিমা করা শিখাই’। ছোট হাতে চাপাতি নিয়ে কোপ দিতেই এক খাবলা রক্ত ছিটকে যায় লোকটার মুখে। ‘কীরে, তোরে কইছি গরু কোপাইতে, আর তুই দেহি মানুষের কল্লা কোপাইতিছিস। মালটা কে? তোর সাব না’? মুখটার দিকে তাকাতেই কয়েক মিনিটের জন্য শেষ রাতে আসা ঘুমটা ভেঙে যায় শিউলির। পেশায় কসাই পিতাকে মারা যাওয়ার পনেরো বছর পর স্বপ্নে দেখল সে।
পরের দুইটা সপ্তাহে শিউলির ভয়, আতংক কমতে থাকে। লকডাউন ব্যাপারটা খারাপ লাগে না তার। আরেকটা বিষয় তার ভালো লাগে। করোনা জাঁকিয়ে বসার পর লোডশেডিং যেন উধাও হয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের এই এলাকাটায় আগে দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যেত। অনেকবার ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়েছে ম্যাডামের। এটা নিয়ে শিউলিও ভয়ে ভয়ে ছিল। এখন আর পচনশীল কিছু নষ্ট হচ্ছে না। ফ্ল্যাট খুলে শিউলি ডিপ ফ্রিজটা খুলে রাখে। নিজের জন্য কয়েকটা রুটি আর সবজি বানাতে বানাতে আলগা হয় ফ্রিজের পলিথিনের প্যাকেট। মাংসগুলো ভুনা করে সে ভরে ফেলে ক্যারিয়ার। মাঝে কিছুক্ষণ বসে সে টিভি দেখে। দেশে করোনা বাড়ছে। মৃত্যু সংখ্যাও বাড়ছে। হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। করোনার ভয় যদিও ছুঁতে পারে না তাকে। এসব খবরে আগ্রহও তার কম। তার ভালো লাগে ‘ক্রাইম পেট্রোল’। ইংরেজি ভয়ের ছবিও তার ভালো লাগে। মেয়ে বলে খুনাখুনি, রক্ত, জিঘাংসা খারাপ লাগতে হবে, কে বলেছে? এটা সে আগেও দেখেছে বিপদেও তার মাথা থাকে শীতল। হিম শীতল। ডিপ ফ্রিজটার মত ঠান্ডা।
কাল থেকে কঠোর লকডাউন। কাজে আর যাবে না সে। যাওয়ার দরকারও নেই। আজ শেষ দিন ফ্ল্যাটটা মনের মত করে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে রেখে এসেছে সে। শুকনো গামছা দিয়ে ডলে ডলে জানালার হাতল, দরজার কপাট, চুলার সুইচ, মেঝে, বটি, তৈজসপত্র, কুরবানির সময় লাগে বলে সাহেবের শখ করে কিনে আনা চাপাতি মুছে এসেছে সে। তার হাতে ছিল ওষুধের দোকান থেকে কিনে আনা গ্লাভস আর পায়ে মোজা। ঘরের কোনো ইঞ্চিতে নেই কোনো ফিঙার প্রিন্ট।
আজ ভেবেছিল খুব আরাম করে একটা ঘুম দিবে। কিন্তু এতো অস্থির লাগছে। হিম শীতল মাথাটা গরম হয়ে যেন টগবগ করছে। সে ভালো করে জানে পুরো কলোনিতে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। সাহেবদের বিল্ডিংটা বানিয়েছে ডেভেলপার কোম্পানি। ফ্ল্যাটটা তার নিজের কেনা সম্পত্তি। ভিতরে কে আছে, কি করছে, খোঁজ নেওয়ার কেও নেই। শিউলি খুব সচেতনভাবে বিদ্যুতের মেইন সুইচ, গ্যাসের চাবি, দরজার তালা বন্ধ করে এসেছে। পুরো কামরায় এক বিন্দু রক্তের চিহ্ন নেই। যে জামাগুলোতে রক্তের দাগ ছিল, অল্প অল্প করে চুলার আগুনে পুড়িয়েছে সে। ছাইগুলো সময় নিয়ে, একটু একটু করে ফ্ল্যাশ করেছে। প্রতিটা মোবাইল বন্ধ করেছে। সেগুলো এখন সিদ্ধিরগঞ্জের নর্দমায় ডুবে আছে। অসামাজিক সাহেবটার বলার মত বন্ধু, প্রতিবেশি, কলিগ নেই। তার দিকের একটা মেহমান আসেনি এই কয় বছরে। শিউলির কোনো ছবি, চিহ্ন নেই এই শহরে। কিসের এত ভয় তার?
রাতের পর রাত যায়। করোনা কমতে থাকে দেশে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে থাকে। তালা লাগানো ফ্ল্যাটটার কথা কেও মনে রাখে না। ডিভোর্সি ম্যাডাম আরেকটা বিয়ে করে কানাডা চলে গেছে, খবর পেয়েছে সে। কারখানায় দীর্ঘদিনের অনুপস্থিত কর্মচারীর বদলে নতুন কর্মী নিয়ে নেওয়ার কথা। ফেসবুক আইডিতে হয়ত নোটিফিকেশন আর মেসেজের পাহাড় জমছে। হাজার ‘ফ্রেন্ড’ওয়ালা লোকটার আদৌ কোনো বন্ধু ছিল? শিউলি চলে এসেছে সিলেট। দিনগুলো ভালোই কাটার কথা তার। শুধু মাঝরাতে মস্তিষ্ক নামের ডিপ ফ্রিজটার বিদ্যুৎ চলে যায়। গরম হতে থাকে জাইরাসগুলো। সেখানে চলতে থাকে বীভৎস এক চলচ্চিত্র।
সদ্য ধর্ষিতা নগ্ন একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। পিছনে বিবস্ত্র এক জানোয়ার তাকিয়ে হাসছে। সিগারেটে টান দিতে দিতে উঠে দাঁড়ায়। নগ্ন অবস্থায় সে যায় বাইরের টয়লেটটার দিকে। সুইচটা জ্বালাতে যাবে এমন সময় পাথরের পুঁতার মোক্ষম এক আঘাতে চৌচির হয়ে যায় খুলির পিছন আর ডান দিক। পুডিঙের মত এক খাবলা মগজ লেপটে যায় টয়লেটের প্লাস্টিকের দরজায়। মেয়েটা তখনো নগ্ন। সুতোর কোনো আবরণে সে রাখতে চায় না কোনো প্রমাণের অস্তিত্ব। লাশটা টেনে নেয় সে টয়লেটে। কৈশোরের পর আবার হাতে তুলে নেয় চাপাতি। অসুরিক শক্তি ভর করে কাজ করে খেটে খাওয়া বাহুতে। গরুর মাংসের চেয়ে অনেক সহজ মানুষের নরম দেহ কোপানো। ঝামেলা করেছিল অন্ত্রের নাড়িভুঁড়ি। বমি আটকে রাখা যায় নি। তিন তিনটা পলিথিনে মুড়ে আস্ত ভুঁড়িটা ফ্রিজে রেখে জমিয়েছিল সে। একদিন সুযোগ বুঝে পাথরে বেঁধে ডুবিয়ে দিয়েছে সে নর্দমায়। অন্তকোষ আর শিশ্নটা সে কুপিয়েছে দেহের সব শক্তি দিয়ে। ঘৃণায়, ক্ষোভে, কষ্টে তার চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছিল।
ছোট ছোট পলিথিনের প্যাকেট করে সে মাংসগুলো রেখেছিল কঠিন হিমে। পচা গন্ধ আর প্রমাণ লোপাটের একটাই পথ ছিল তার সামনে। বীভৎস এক রাস্তা। প্রশ্ন দুইটাই। পুলিশ টিফিন ক্যারিয়ার খুলে চেক করলে বুঝতে পারবে মাংসটা কোন প্রাণীর? কুকুর কি খায় সেদ্ধ ভুনা করা নরমাংস? উত্তর পেয়ে বড় একটা পাথর নেমে যায় বুক থেকে। দুই সপ্তাহ পর ডিপ ফ্রিজ খালি হয়। কুকুরগুলো কেমন তাগড়া হয়ে গেছে এই কয়দিনে। সাফসুতরো ফ্ল্যাটটায় এয়ার ফ্রেশনার ছাড়া অন্য কোনো গন্ধ নেই। নিখুঁত একটা খুনের চলচ্চিত্র সাঙ্গ হয়ে আসে।
শুধু দিনে দিনে মস্তিষ্ক নামের হিমঘরটা বিদ্রোহ করতে থাকে মেয়েটার।
ফ্যাকাল্টি, শিশু বিভাগ, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা