অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
সব একটি একটি দরকার
হিলারী হিটলার আভী
আরও একটি ক্রসেড দরকার
আরও একটি বিশ্বযুদ্ধ দরকার
আরও একটি দুর্ভিক্ষ দরকার
আরও একটি প্লাবন দরকার
আরও একটি আইয়ামে জাহেলিয়া দরকার,
আরও একটি বিশ্ব-মীরজাফর দরকার
আরও একটি আদমি গতরের নিধনকারী দরকার
আরও একটি জংলী-ড্রাকুলা দরকার
আরও একটি ডাইনোসর দরকার,
আরও একটি পাতাল-ক্ষয়ী ভলকেনো দরকার
আরও একটি উৎস-ক্ষয়ী-সূর্য দরকার,
আরও একটি আলামতধারী দরকার,
কসম- সব একটি একটি দরকার
নয়তো বিশ্ব-মানবতা বুঝবে না কোন দেশের-ই সরকার!
ভালোবাসাগুলো যেন পাথরকুচির পাতা
মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী
ভালোবাসাগুলো এখন কেন আবার পাথরকুচি পাতা হয়
নতুন করে তারা জীবনের কথা কয়
স্বপ্নের মাঝে আসে কখনোবা জাগরনেও আসে
তবে কি আবার বৃক্ষ, হবে পাতা ফুল জন্ম দিবে
কি জানি !
তারা কিন্তু পাথরকুচির পাতার মতো আবার জন্ম নিচ্ছে।
একদা যাদের কাছে আমার রোজ যাতায়াত ছিল
তারা পথের বাঁকে বাঁকে কেমন করে হারিয়ে গেল
বুঝতেও পারলাম না, জানতেও পারলাম না
সেটা কি আমার অবহেলায় না তাদের দোষে
কি জানি!
তারা কিন্তু পাথরকুচির পাতা হয়ে আবার জন্ম নিচ্ছে।
বাসন্তীরা স্বপ্নে আসতো, স্বপ্নেরা আসতো বাস্তবে
অনেকদিন তাদের কোনো আসা যাওয়া ছিল না
আমিও তারপর আর মহুয়া তলায় যাইনি
বকুল তলায় থেকে গেছি কারও টানে, কিন্তু কেন
কি জানি !
তারা কিন্তু পাথরকুচির পাতার মতো আবার জন্ম নিচ্ছে।
যারা আমার কবিতায় ছন্দ হয়ে হাজিরা দিত
মৌনতায় লুকিয়ে থাকায় এখন আর কবিতা লিখি না
ঝাউবনে নির্ঝঞ্ঝাট বাতাসে আওয়াজ তোলে
তারা আর কচি সবুজ ঘাসের কার্পেটে বসে না কেন
কি জানি !
তারা কিন্তু পাথরকুচির পাতার মতো আবার জন্ম নিচ্ছে।
ঝুলে আছে নেটওয়ার্ক
রবীন বসু
সম্মুখে অস্তির দিন পড়িমরি ছোটে
বাকলের গন্ধ থেকে গাছের আহ্লাদ
কোথাও ধরেছে বহ্নি আগুনের তাপ
কুঠারে ছেদন হচ্ছে বৃক্ষদের প্রাণ
মানুষের মতিভ্রম দুষ্টচক্র জাগে
মুনাফার লোভে লোভে জিভের স্খলন
লালা ঝরে ধতুচক্রে ফেটে যায় মাটি
হিসেবি সন্ধান জানে কতটুকু জল
মেশালে দুধের গন্ধ থেকে যাবে ঠিক
এই যে বিমর্ষ দিন ক্লান্ত মনে ছোটা
ঘামের ক্ষরণ নিয়ে মানুষের হাঁটা
অন্নের সংস্থান আর গৃহের আশ্রয়
অনিকেত ঝুলে আছে ফোরজি নেটওয়ার্ক
সভ্যতা কোথায় যায় সেটাই দেখার!
ক্ষণস্থায়ী কদমফুলের প্রতি
স্বপন শর্মা
সুশোভিত পুষ্পমঞ্জরিতে-
কদম ডালে ফুটলে কেন?
ফুটলে যদি এই আষাঢ়ে
হতভাগা এই চাষাড়ে
ডাকলে কেন?
ডাকতে তোমায় কে বলেছে?
এই আমাকে বৃষ্টিবাদল বর্ষাকালে।
কদম ডালে পাতার ফাঁকে চুপিসারে
আমায় তুমি এমন করে
মিষ্টিমধুর সুবাস নিয়ে ডাকলে কেন?
টাপুরটুপুর মিষ্টি সুরে
আমায় তুমি রাখলে দূরে, ডাকলে কেন?
বর্ষা উদ্যাপন
রোহিণীকান্ত রায়
কোনো এক বর্ষায় অনাবৃষ্টির অভিশাপ
কুড়ানো পঙ্ক্তিমালা
বৃষ্টি ঝরুক, না ঝরুক
আজ বর্ষা
গ্রীষ্মের তাবৎ প্রখর তা-বতা নিয়ে
যতই আগুন ঝরিয়ে
পুড়–ক সোনাফলা মাটি
এই অভিশপ্ত শ্রাবণ
তবু আজ বর্ষা ...
কিন্তু যারা বোঝে না
এই সব কাব্যের আদিখ্যেতার ভাষা,
জানে না পুঁথি অধ্যয়ন
শুধু ত্বকে
প্রকৃতি চেখে নিয়ে
কাল-টাল করে নিরূপণ
জানিনে এবার কী করে করবে
গোবেচারি’রা বর্ষা উদ্যাপন ...
শিল্পী
অসীম মালিক
এই আলপথ ধরে চলে যাও ।
দেখবে, রিমঝিয়ম বৃষ্টিমুখর দিনে
জল-কাদা-মাটি মেখে
ঈর্ষার সেরা মঞ্চে
আবহসঙ্গীতে তাল মিলিয়ে
হাঁটু গেড়ে ধান রূইছে
আমার শিল্পী বাবা ।
বাবার কণ্ঠে ,
এত মধুর মেঠো সুর
কে এনে দিল জানিনা ।
শুধু জানি ,
বামহাতের কনুই দিয়ে
উপেক্ষিত বীজআঁটি তিন আঙুলে চেপে
ঈর্ষার চোখ আঁকে
মুন্ডেশ্বরীর পলি খুঁজে নেওয়া
আমার মাটি-প্রেমী বাবা ।
একবার মাঠের দিকে তাকাও !
আলপথে বিছানো সবুজ কার্পেট ধরে
একচিলতে আকাশ মাথায়
ওই আদিগন্ত মাঠের দিকে হেঁটে যায়
মাটির ক্যানভাসে গর্বিত বাবা ।
নির্লিপ্ত চুম্বন
আহমেদ ইউসুফ
সুখের মতন শৌখিন ব্যথায় নি®প্রভ জীবনে
যদি কখনও আলোর আলেয়া এসে ওড়ে যায়
বিপন্ন বিস্ময়ে তন্ময়ে দেখব- বিচিত্র জীবন।
কল্পিত আখ্যানে খোয়াবের দৃশ্যে বিনিদ্র রজনী
অস্পষ্ট আলোয় মলিন মুখোশে বিগত বিকেল
গোধূলির মতো এসে উঁকি দেয় পড়ন্ত বেলায়।
হাওয়ার কাফনে ফুলের রেণুকা মেখে নেব গন্ধ
মৃতের মতন সচেতন চোখে দেখব পৃথিবী
লাশের মুখশ্রী কত না সুন্দর শীতল মায়ায়।
অথচ কেউই রাখবে না কিছু বুকে ধরে স্মৃতি
ঝিলাম নদীর স্বপ্নের ভেতর ডুবে যেতে যেতে
কাশ্মীরের মেয়ে সন্তর্পণে দেবে নির্লিপ্ত চুম্বন
মৃত্যুর মতন অতৃপ্ত তৃষ্ণায়- ঢলছি যখন।
বিজলির বেগে সরে যেতে যেতে দেখব ত্রিকাল
অজ্ঞাত কবিরা কখনো বোঝেনি লীলা-লাস্যে-চলা
ধরণী; তরণী- মোহের মওকা- দাবাড়ুর চাল।
চার কুড়ি বয়স
নাসিমা হক মুক্তা
লেপা উঠোনে একজোড়া চোখ
কী যেন আঁকছে!
যে নারী শাড়ি গুঁজে সুখ বাঁধে
খানাখন্দরে
সেখানে লাঙলের পাল গরুবলদ খুঁজে
পুরো গাঁয়ে গতর খেঁটে মিলে না-
দু’খানা উর্বরা বলদ ছাড়া
তবুও চাষা ঘষামাজা করে চারা রুয়ে যায়- খেতে।
যে হাত কষে দু আনা পয়সা জন্মে
সে হাত ফুলের কুঁড়ির মত!
জীবন শরমিন্দা হলেও
মনের সুখের চেয়ে পেটের সুখে অঙ্গশোভা বাড়ে।
মানব ভাগ্যেবাঁক- নদীর মত
চার আঙুলের কপাল ভাঙলেই পরে আহ্লাদ
যেন আর ফোটে না
চার কুড়ি বয়সও মানুষ পায় না।
রিক্ত অমাবস্যা
নুশরাত রুমু
দোয়েলের শিসে সুখের অনুরণন শুনি না কোথাও
শৈতপ্রবাহের মতো মনের আকাশে সূর্য লুকিয়ে,
আস্থাহীন বিবেক ঘুমিয়ে আছে বদ্ধঘরে।
মনোবৈকল্যে বিষাক্ত আজ জীবনের রসব্যঞ্জনা।
রিক্ত অমাবস্যায় তবু চলে আহুত আলেয়ার খোঁজ।
যান্ত্রিক আওয়াজে অতৃপ্তি বাসা বাঁধে মনের কুঞ্জে।
বাঁশের ঝাড়ে বাতাস কুড়িয়ে নেয় দুঃখের ঝরাপাতা,
ফেরিওয়ালার ডাকে সাড়া নেই কারও।
তাই রোমাঞ্চহীন কবিতারা সংঘবদ্ধ হয়,
নিস্তব্ধ দুপুর কেঁদে যায় অন্তিম সুরে...