তুমিও একদিন মহানাগরিক হবে
সম্পা পাল
তোমার শহরে এত রাস্তা !
রাস্তা কি কোনো বিশেষ আবেগের নাম ?
ইচ্ছের মৃত্যু পুড়ে গেলে দ্বিপ্রহর ডাকে।
বৃষ্টি হয়তো তোমারই সেই পুরোনো বান্ধবীর নাম।
আমি ভুলতে বসেছি
ট্রেনের গায়ে লেখা যাত্রীদের জীবনপঞ্জি।
তারাও তো কোনো গন্তব্যে নামবে!
তারা কি জানে এই সিটে কত যাত্রী কেঁদেছিল ?
কাঁদতে কাঁদতেই বা কত রাত্রি ভোর দেখেছিল ?
তোমার নগরেও পাগলের কিছু প্রলাপ থাকে
সেও হয়তো তোমার রাস্তার পুরোনো সাথী ছিল।
তার হাতে দিয়াশলাই দিয়ে তুমিও একদিন মহানাগরিক হবে...
বাবা
মনিরুজ্জামান প্রমউখ
আছে,
সব আছের দিবাকর আকাশ হচ্ছে বাবা।
না থাকার নিরাকার গভীরে
তবু এক ইঞ্চি আরাধ্য নমস্যের
জায়গা নিয়ে উর্বর দাঁড়িয়ে থাকেন বাবা।
যখন থাকবেন না নিরন্তর
মনে হবে বিবাদাঙ্ক পৃথিবীর
দরজাটা, বারান্দাটা, জানালাটা সর্বাধীন্য একা,
নিথর একা, দুর্বোধ্য একা, একলা পথের একা।
মিথ্যে করে আদাবরে
আর সব বলা গেলেও
কাউকে নরাধমেও যায় না বলা বাবা।
ঘুম পাড়ানী মাসী পিসির আনোখা গল্পগুলোর
স্মৃতিনিড়ানোর বেদাবদ্ধ অধিকর্তী মা হলেও
বোধালঙ্কারের চলাতে, বলাতে, লড়াতে, সয়াতে
জীবনের পূর্বজ বাণীবদ্ধ অঙ্কগুলো কষিয়ে দেন বাবা।
যতোক্ষণ থাকেন সওগাত বলবৎ ভূমি, জীবন আর পলিতে
জানদেখা দিয়ে যান অবিনাশী অনির্ণীত হীরক পরশ সরস বাবা।
জীবনের মানচিত্র
সাগর আহমেদ
কাক্সিক্ষত মৃত্যুতে বিভোর একজোড়া চোখ
রাত্রির উৎসবে মৃত্যুরা করে আত্মহত্যা
পৃথিবীর আকাশ যেন নীলে নীলে রূপান্তরিত
অভিমানে দূরে সরে যায় নক্ষত্ররা।
আমি বেদুইন রূপে হাঁটি পৃথিবীর সরল পথে
সৃষ্টির থেকে নিভে যাই গভীর অন্তে।
মিথ্যের মতো মৃত্যুতে জর্জরিত হই নিরন্তর
অদৃশ্য আত্মার অস্তিত্ব অবিশ্বাস্য মনে হয়।
যেহেতু মরে যাইনি-
ভোরের স্নিগ্ধতায় চোখ খুলে দেখি মায়ারোদ্দুর হাসে অনাদৃত হাসি।
মহা উল্লাসে ক্রমশ বাড়ছে মৃত্যুর দূরত্ব
নীরব নদীর স্রোতে ভাসে জীবনের মানচিত্র।
পাখির ঠোঁট
আসহাবে কাহাফ
ধনেশের ঠোঁটে দেখলে মনে পড়ে তোমার ঠোঁট
আরো একবার চুমু খেতে ইচ্ছে করে
এমন ইচ্ছে থেকেই বাড়ে অসুখ
শরীরের জ্বরে ভীষণ ভীতসন্ত্রন্ত
ক্যাপসুল গিলতে পারি না, তোমাকে পারি!
তুমিই কি জ্বরের মেডিসিন- নাপা এক্সটেন্ড?
তোমার হাতে মায়ের জলপট্টির স্পর্শ
মাথায় হাত রাখো, গা ঘেঁষে শুয়ে থাকো
থার্মোমিটারের পারদ আরো নিচে নামুক
আরো একবার চুমু খেতে খেতে বলি
পাখির ঠোঁটে চুমু খায় না, মানুষের ঠোঁটে অবিরাম খায়!
গোপনে প্রকাশ্যে যে যেভাবে পারে।
ফাঁকা কথা
মাজরুল ইসলাম
শরতের সকালে আকাশ জুড়ে মেঘ বেজে উঠল
ভালোবাসা দেখাতে, কিন্তু-
ফাঁকা ডাক ছাড়া
এখানে এখনও বৃষ্টির পানি ঝরল না !
সন্ধা প্রদ্বীপ
গৌর
সন্ধা প্রদ্বীপ আজ অসুখে ডুবে
তোমার অচেনা চাহনিতে
এখানে শুধু একবেলা বদনাম কুড়াই
আর প্রত্যহ সমীকরনে, সময় শেষ হয়ে আসে।
জানা ভয়, বুকের পাশে এসে
কান্না করে, মাঝে মাঝে হেসে উঠে
তিমির বিদারি কালো রাত কলঙ্ক করতে সাহস জোগায়
তুমি তাই রেখে গেছ পরা শূন্য খোলা মাঠ
দূর দিশারে তাকিয়ে আমি চলে যাই
তোমার কাছে
নিজের বদনাম নিজে নিজে করি
রৌদ্রস্নান
সানাউল্লাহ বিপুল
-কবিতা, তুমি আর খবর নাও না কেন?
-আমি এখন প্রখর রোদ্দুরে
দুঃখ শুকোতে ব্যস্ত
তুমি আমায় ডেকো না প্রিয়
আমি তো জলে ভিজে একাকার
বানের ডাকে পথ ভুলে পথ হারিয়েছি
যে পথে পেয়েছি শত দুঃখ
দুঃখ’ই এখন আমার আবরণ।
সেই পথে আর হয় নাকো ফেরা
পাইনা তোমার ঘ্রাণ
ঘ্রাণে আচ্ছন্ন থাকতাম লেপ্টে
পাগল প্রায় আমি আর ঘ্রাণ খুঁজে পাইনা।
তুমি ডাকলে
আমার আর দুঃখ শুকানো হবে না
ডেকোনা প্রিয়, আমাকে দুঃখ শুকোতে দাও।
অভিমান
সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
কোনো বেদনা আমাকে আর স্পর্শ করে না
বেদনার সাথে সন্ধি করে নিয়েছি যখন
ঠিক তখনই তুমি আবারও এলে ফিরে
সেই আগের মতই আমার আপন নীড়ে।
বৃথাই যাবে; যতই চেষ্টা করো না কেন?
তবে হ্যাঁ, আমার অনুভূতি যেন এখনো হয়নি শূন্য
এখনো আমি শীতল বাতাসে শিহরিত হই
ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠে চঞ্চল প্রাণ
বৃষ্টির আবেশে গুনগুন করে গাই সুমনের গান।
আমি এখন আর সেই আগের মত নই
আগুনে পোড়া ছাই হতে আবারও উঠেছি জেগে
মাথা নুইয়ে চলে যাওয়া মানুষটাই আজ প্রতিবাদী
যার হারানোর নেই ভয়, তার কী আর হবে ক্ষতি?
তুমি বরং যাও ফিরে; হয়তো এটাই শেষ দেখা
যখনই পড়বে মনে, স্মৃতির আঙিনায় হেঁটে যেও
ইচ্ছে হলে আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিও
জেনে নিও, তুমিই ছিলে আমার ভীষণ প্রিয়।
ফেরা
নেহাল অর্ক
বৃষ্টি বিহীন হিমেল বাতাস
নেংটা আঁধার, চায়ের কাপ;
পরশ ঠেকায় গহীন বুকে
চিঠির খামে মায়ার ছাপ।
আঙ্গুলের ফাঁকে চুলের ডগা
উন্মাদ সময়, ক্লান্ত চোখ;
প্রেমের পাশে শরীর ঘুমায়
বাতির নিচে লাজুক মুখ।
মনের ভিতর ভীষণ তৃষ্ণা
পানির গ্লাস, নিঃশব্দ রাত;
আঁধার মাঝে চোখের হাসি
ছাড়তে চাইলে টানে হাত।
টানাহেঁচড়ার আদিম খেলা
সন্ন্যাস জীবন, বিমর্ষ সময়;
কালের গর্ভে লুকিয়ে কাঁদে
পথের মাঝের সব পরিচয়।
সাদৃশ্য
বঙ্কিমকুমার বর্মন
বসে আছি একা, পাশে কেউ নেই তবুও বুকে বাঁধি শুক্লপক্ষের গান । মনে হয় প্রতিটি রাত্রি আনন্দে লাফিয়ে উঠছে দুই চোখে। পথে ঘাটে জোনাকির আলোর মহড়া, ঝলকে ওঠে হৃদয়ের গভীর বনভূমি। আড়ালে কত পাখি নিবিড় যাপন বুনে চলেছে রোজ কোমল আশ্রয়। বেদনাহত চাঁদ নেমে আসে গোবরজলে নিকোনো উঠোনে, পরম মমতায় হাত ধরাধরি করে বসাই চায়ের টেবিলে । দেখি আমাদের দু’জনেরই অনেক দুঃখ জমে আছে জামার বোতামে।
মিঠে গন্ধে ভরা রুদ্র পারাপার
রওশন রুবী
তোমার সাথে কোনদিন দেখা
করবো না করবো না করেও করে ফেলেছি সেদিন।
তুমিও ছিলে অদ্ভুত অপেক্ষায়, নিরুত্তর।
নীল সিঁড়িস্বর খুলে বলো নি-আছি!
একবার হাত বাড়িয়ে দেখ অসম্ভব সুন্দর
তোমার অপেক্ষায়। একবার চোখ বুজে দেখো-
রাতের অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে চেয়ে
আনমনা হয়েছে সব প্রগাঢ় প্রচ্ছদ।
কত কতবার ফিরিয়েছি আনমন।
ভুল করে একবার না হয় ডেকেই দেখ
স্বপ্নের কুসুম কী ব্যাকুল বেগে ফুটে ওঠে, দেখো!
পরাজয় নিবে না জেনেও পরাজিত হল
মিঠে গন্ধ ভরা এ রুদ্র পারাপার।
কালচিত্র
ঝুটন দত্ত
ভালোবাসার নামে চারপাশে গজিয়ে যাচ্ছে ব্যাঙের ছাতার মতো
দেয়াল ঘেষা সম্পর্ক,
যেন চৈত্রের সঙ্গম।
বৈশাখী ঝড়ের মতো অঞ্চল জুড়ে তর্জন-গর্জন;
অদৃশ্য টান না থাকলে
এসবের ভিত কতটা গুরুত্বপূর্ণ,
কতটা আঁধার ভেদ করতে পারে নিয়ন আলো,
তা আমার জানা নেই।
সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্র, পরিবার প্রেম ছাড়া সব অচেনা অচল;
প্রকৃত জীবন বয়ে চলে মানবিক প্রেমের ধারায়।