চাকমা বাড়ি

 

                                                                                                   অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ


চাকমা বাড়ি

মিসির হাছনাইন 


খাগড়াছড়ি শহর থেকে কয়েক মিনিট হাঁটলেই এক পাশে নেমে গেছে পাহাড়ের সরু পথ। একপাশে কতগুলো ফুল ফুটে আছে। পাহাড়ের ঐ চূড়ায় উড়ে যাচ্ছে একটা পাখি, সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। এই পাশে একটা জুম ক্ষেত, ভুট্টা চাষ হয়েছিল, কয়েকটা গাছ এখনও দাঁড়িয়ে আছে। নিচে নেমে গেছে ঝুকিপূর্ণ পথ, এরপর একটু হাঁটলে ঐ তো ঝর্ণার শব্দ কানে বাজছে, এই ঢালু পাহাড় নিচে নেমেই ঝিরিপথ বয়ে গেছে। হাড়িতে জল নিচ্ছে একজন চাকমা নারী, সে অনেকটা ভিজে গেছে। আশেপাশে কোথাও তার বাড়ি। সে ঝর্ণার পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আশেপাশে কয়েকবার দেখলো, তারপর নিজ ভাষাতে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চললো ঐ উচু টিলাতে। পাহাড়ের এক ঢালে মাচাং ঘর, জুম চাষেই তাদের সংসার। ফসল বাজারে বিক্রি করেই ঘরের খরচ চালায় নীলিমা চাকমা। খুব ভয়ে আছে সে, এই বছর ঘর মেরামত না করলে তাঁর মাচা ভেঙে পড়বে, কিন্তু মিস্ত্রি খরচ সহ আরো কিছু কাঠ কিনতে তো অনেক টাকার কারবার। এসব ভাবলেই তাঁর স্বামীর উপর খুব রাগ হয়, সে কোন কাজ করে না সারাদিন খালি মদ খায়, মদ বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে দশবার। এখন সে আশা ছেড়ে দিয়ে মদ বানানো দেখে আর মদ খায়, সংসারের প্রতি কোন খেয়াল নেই, নীলিমা মা হতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। অথচ, চেহারায় বুঝাই যায় না তার দুঃখ, কি কিউট পুতুলের মতন দেখতে, আর এই নারীর লুকিয়ে লুকিয়ে কান্নায়থ মাঝে মধ্যে মনে হয় ঈশ্বর কেন এতো কষ্ট দিচ্ছে তাকে! তবুও দিন যাচ্ছে, কোনমতে ধার দেনা করে কিছু টাকা জোগাড় করেছে সে। এরপর বাড়িটা মেরামত করে নেয়। 

হঠাৎ এক সাধু ভিক্ষুর সহচার্যে তাঁর স্বামীর অদ্ভুত পরিবর্তন হয় এখন আর প্রতিদিন সে মদ খায় না। স্ত্রীকে নানান কাজে হেল্প করে। বসে বসে সুন্দর সুন্দর ছবি আর্ট করে, সে নীলিমা চাকমারও একটি ছবি এঁকেছে। এবং আরো অনেক পাহাড় আঁকা ছবি বিক্রি করে রিগ্যান চাকমা। এক মাস আগে সে পুরস্কার জিতেছে দেড় লাখ টাকা। এর কিছুদিন পরই নীলিমার ভাগ্য দারুণ ভাবে খুলে যায় রিসোর্ট ব্যবসায়। কতগুলো চোখ ঝর্নার সৌন্দর্য উপভোগ করে পাশাপাশি মাচাং ঘরে বসে। সামনের ঝোপে একটা জবা ফুল ফুটেছে সাদা রঙের’ এর ছায়ায় দুপুর রোদে কে দৌড়ে পালিয়ে গেল..? নীলিমা চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো, তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিল।


তিন মাস পর বর্ষার টানা বৃষ্টিতে বাইক এক্সিডেন্টে পাহাড় ধসে মর্মান্তিক মৃত্যু হল রিগ্যান চাকমার। শুরু হলো নাকি ভেঙে গেলো চাকমা বাড়ির জীবন যুদ্ধ, কয়েক দিন পর মা হয় নীলিমা চাকমা..।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট