অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
আমার কবিতা
জীবন রাজবংশী
আমার কবিতা সহজ সরল
নিষ্পাপ সাওতালি মেয়ে-
প্যাঁচ বোঝেনা, বোঝেনা আঁকিবুকি।
গায়তে জানে, নাচতে জানে,
প্রকৃতির সনে।
আদিবাসী পোশাকে,
আস্ত একটা পুষ্প বাগিচা
মৌমাছি বন বন ঘোরে চারিপাশে
কখনো খোলা চুল,
কখনো খোপায় পাহাড়ি ফুল।
আমার কবিতা
অগ্রহায়ণে আস্ত হাতে ধান কাটে
ধরছে করুন সুর,
আমি তখন চলন্ত পথিক অতি দূর।
সেই সুর আজও বাজে প্রাণে,
তবে, বুঝিনি তার মানে।
সে সুর ছিল বড় অচেনা
তবে মনে হয়েছিল;
এক মেঘ কান্না ছিল তার গানে,
সেই সুর আজও বাজে আমার প্রাণে।
শিরোনামহীন-১
বঙ্কিমকুমার বর্মন
যুবতি রঙের মেঘ আমাকে ডাকে তাঁর স্বপ্নের খুব কাছে
যেখানে ফুলে ফলে ভরে উঠেছে গাছ
ঠিক তুমি যেন এই আকাশ মেনে উঠে দাঁড়িয়েছে ছাদে
কী এমন বিকেল ভরা ছিল আমাদের শার্টের বোতামে
এখন ক্রমশ ঠা-া হয়ে আসছে সমস্ত সম্পর্কের খেলাঘর, মাঠ
চাকরি নেই, তাই নিয়েই শুধু মুঠো ভর্তি স্বপ্নের সকাল
এভাবেই আমাদের হাঁ-হুতাশ পেরিয়ে যাচ্ছে কয়েকটা শরৎকাল ।
ঝরা পাতার কাব্য
রফিকুল নাজিম
বোটাখসা ঝরা পাতার ব্যথা আমার বুকে
উত্তরের বাতাসে নোনা দুঃখ লেগে থাকে
শীতনিদ্রা ভাঙলে গো কে মিঠে রোদ মাখে?
মাকড়সার জাল শিশির বিন্দু সূর্য পুষে রাখে।
বকুলতলায় বকুল ফুলের কান্না লেগে থাকে
সবুজপাতা বকুল ফুলের বিচ্ছেদ বুকে ঢাকে,
বানের ¯্রােতে জলের নাচন ভাঙে নদীর কূল
অঝোর ঘোরে বৃষ্টি জলে ভিজে কাগজ ফুল।
পদ্মবিলের পদ্ম কাঁদে-পাতায় ব্যাঙের নাচন
মেঘে মেঘে বিজলী হাসে-বুকে ব্যথার শ্রাবণ,
জল জোছনায় মরি যদি বকুল ফোটার দিনে
বকুলতলায় ঠাঁই দিও গো; গোপন জন্ম ঋণে।
পরশ্রীকাতর
সোহেল রানা
তার আকাশ ছিল
শরতের আকাশের মতোই নির্মল
আলোকোজ্জ্বল, সম্ভবনাময় দীপ।
অবশ্য পরমুহূর্তে ঘটে নি এমন আহামরি কিছুই
যা কিনা সৃষ্টি করে মেঘের ঘনঘটা
যদিও তা কখনও বলে-কয়ে হয় না
সুতরাং, যা ঘটবার ঘটেছেও তাই-
মনের অজান্তেই মেঘে মেঘে ঢেকে ফেলেছে সকাশ।
কবিতাশ্রম
হাফিজুর রহমান
আমি চাই- তোমরা ভালো থাকো-
ঘুনে খাওয়া কাঠের তাকে হেলান দিয়ে
আরাম করো শুয়ে - নিশ্চিন্তে;
পাঠকের দুর্ভিক্ষে মলাটে মোড়ানোয়-
পার করো সময়ের ¯্রােতে স্বস্তির ডিঙি।
আমি চাই, কেউ না বিরক্ত করুক!
দুমড়ে মুচড়ে না-যাক পাতাগুলো
ভেঁজা আঙুলের মড়মড়ে আঘাতে।
ভালো হোক সন্ধ্যে- আলোকিত ভোর
শান্তি ঝরুক, রাত-দুপুরের জ্যোৎস্নায়।
ভালো থেকো কবিতা, বিশ্ব-প্রযুক্তির গল্পে -
ঘুনে খাওয়া কাঠের তাকে হেলান দিয়ে।
দু’টি কবিতা
রাফাতুল আরাফাত
প্রতিদ্বন্দ্বী
পুরো পৃথিবীটা একটা কবিতার ভেতর ভরে ফেলেছি
ম্যাচবাক্সে যেমন করে কাঠিগুলো থাকে
নিজের কানের কাছে গুনগুন করি ঘুমপাড়ানি গান
যারা হেরে বসে আছে অসম কোনো খেলায়
যে খেলায় কেউ কোনোদিন জিতে না।
পরাজিত হতে হতে আমি নিজেকে একমাত্র নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী করে ফেলছি।
পরিযায়ী পাখি
বিছানায় শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে
তোমার চুলকে পাখির বাসা মনে হয়
আর হাতকে সাইবেরিয়া।
আমি পরিযায়ী পাখি হয়ে
চলে যাবো দূর উষ্ণ দেশে
আর ফেরার সময় কোনো পাহাড় থেকে
লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবো।
তার আগে কেঁটে ফেলবো ডানাগুলো
তোমার নরম গন্ধে।