বদলেছে মানুষ মানুষের মুখ
মুহিব্বুল্লাহ ফুয়াদ
ভাঙা সাঁকোটা আর নেই
এখানে এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে ইঁট, বালু, সিমেন্ট থেকে জন্ম নেয়া ছোট্ট একটি পুল
ডাকঘর তো সেই কবেই ইন্তেকাল করেছে
পুরোনো কাগজে ভরা ডাকবক্সে ধরেছে ঝঙ
গড়ে উঠেছে জোয়ার আসর
লতাপাতায় ভরে উঠেছে ময়দান
এখানকার ঘরবাড়িগুলোরও ঘটেছে আমূল-পরিবর্তন
বদলেছে মানুষ মানুষের মুখ, গাঁয়ের রঙ, পৃথিবীর রূপ
কত চেনা হয়ে গেছে অচেনা!
কতো স্মৃতি নতুনের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে সবুজ
আমিও তো বদলেছি টোল পড়েছে গালে
চেহারাটাও আগের মতো নেই
চিরুনি করা নিকশকালো চুলগুলো দোল খায় না হালকা সমীরণে
যেন উসকো-খুসকো মরুভূমির প্যাঁচানো লতাপাতা
চেয়ে থাকে না কেউ চোখ ধাঁধানো টি-শার্টে দিকে
মুগ্ধ হয় না কেউ....
এমনকি
মনমাতানো পারফিউমের ঘ্রাণ’ও এখন ফিকে হয়ে গেছে
হাওয়ায় শুকিয়ে গেছে সব ঘ্রাণ
পড়ে আছে শুকনো পাতার মতন খালি শিশি
বয়সের ভারে সবই বদলেছে
তবে,
বদলায় নি শুধু আমার মন
প্রেম ভালোবাসা।
প্রিয়ার মতো শরতের আকাশ
মুহাম্মদ ইমদাদ হোসেন
শরতের নীলাকাশ আজ নীলাভ নেই ঝুমঝুম বৃষ্টি ঝরছে অঝর ধারায়
এযেনো বর্ষার মুষলধারে অবিরাম বর্ষণ,
আজকাল ঋতুরাও রূপ বদলায় যখন তখন ঠিক যেনো আমার প্রিয়ার মতন।
নদীর দু’কুলে শুভ্র সুকোমল কাশফুল
আজ আর দোল খাচ্ছে না বাতাসে,
সন্ধ্যার আকাশটি রঙধনুর আবীরে সপ্ত রঙে শোভিত হয়নি আজ,
যেনো অভিমান করেছে ঠিক আমার প্রিয়তমার মতো।
দিনের গগণে সুর্যেকিরণ যায়নি দেখা রাতের আকাশে জ্যোৎস্না
কিংবা তারার মেলা বসেনি আজ যেনো গোসসা করেছে সবাই ঠিক আমার প্রেয়সীর মতো।
শরতের আবহাওয়া আর আমার শ্রেয়সীর মাঝে কোনো তফাত নেই আজ।
ভাঙারির দোকান
আসহাবে কাহাফ
লালনের আখড়ায় অবিরাম বাজে দেহতত্ত্বের গান
গানের তালে সাজাই কাগজ পুরাতন লোহা প্লাস্টিক
কিছুটা দূরে যতœ করে রাখি ছোটো-বড়ো কাচের বোতল
তার পাশে তামার তার- থরে থরে সাজানো অন্যান্য জিনিসপত্র
প্রতিদিন ফেরিওয়ালা আসে-যায়, বাড়তে থাকে মালের সারি
কমতে থাকে চলাফেরার জায়গা - এ আমরই ভাঙারির দোকান।
দেহপাঠ
আশরাফ চঞ্চল
তোমাকে পাঠ করি প্রতিনিয়ত
পাঠ করি স্তন
নিতম্ব
নাভি।
তোমাকে পাঠ করি প্রতিনিয়ত
পাঠ করি গ্রীবা
কপোল
চুল।
তোমাকে পাঠ করি প্রতিনিয়ত
পাঠ করি ঠোঁট
দেহের উপত্যকা
উরুভাজের অনিন্দ্য সুন্দর!
সুহাসিনী
রজব বকশী
হাঁটছি একা
হাওয়ায় বেজে ওঠে রিনিঝিনি সুর
নরম রোদ্দুরে সুহাসিনী
তার মায়াবী দুচোখ ভাসমান দূরের নৌকা
মেঠোপথে ধান শালিকের গান
কত গল্প কথায় জেগে উঠি
ফড়িঙের পিছে ওড়ে মন
উঁকি দেয় দুরন্ত কৈশোর
পাখির বাসায়
রঙিন ঘুড়ির ডিগবাজিতে
ধূলি¯্রােতে লিখি হীরামতি পদাবলি
আঁকি শস্যক্ষেত
ছোট নদী
গ্রাম গ্রামান্তর
রূপকথার রাত
দেখি ঘাসের ডগায় সমুদ্র নোঙর করে
ডাকে বিপন্ন সবুজ টের পাই
আজ শূন্যের বাগানে দীর্ঘশ্বাস হয়ে উড়ে লুপ্ত মেঠোগান
অসমাপ্ত যৌবন
স্বপন গায়েন
দীর্ঘশ্বাসের ভিতর লুকিয়ে আছে অলীক স্বপ্ন
অসমাপ্ত যৌবনে এসেও থমকে গেছে জীবনের পথ
কাশফুল নিয়ে ওদের মাথাব্যথা নেই।
দারিদ্র্যের ঘূর্ণাবর্ত জীবন তছনছ
নীল আকাশের নীচে অমাবস্যার কালো ছায়া
ভোরের আলোর মাধুর্য ওরা অনুভব করতে পারে না।
শারদীয়া উৎসব আসবে যাবে তবুও...
ভোরের শিশির ভিজিয়ে দেয় হৃদয়ের হ্রদ
দারিদ্র্যের ভাষা অলিখিত থাক গোপন বন্দরে।
ঘুণপোকা কুরে কুরে খায় হাড় মজ্জা অস্থি
সারাটা জীবন লুকোচুরি খেলতে খেলতে কাটিয়ে দেয় শরীরের মধ্যে
অন্ধকারের কাব্যে পা-ুলিপির ছেঁড়া পাতাগুলো আজও বড়ই বিবর্ণ।