অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
স্বপ্ন নষ্ট করে দিলো...
সাহেদ বিপ্লব
সাত আট বছরের বালক আবিদ। দুই তিন মাস হলো বাবা মা মারা গেছে এক সড়ক দূর্ঘটনায়। এখন আপন বলে বড় ভাই ছাড়া কেউ নেই পৃথিবীতে।
তাই বড় ভাইয়ের কাছে থাকা। বড় ভাই খুব আদর করে। বলা চলে বড় ভাইয়ের জানের জান আবিদ। ছোট ভাই ছাড়া কিছু বোঝে না কিন্তু এই ভাবে তো চলে না মা বাবা এখন নেই।
ছোট ভাইকে দেখাশুনা করার জন্য একজন মানুষের দরকার। তাই বড় ভাই একদিন বিয়ে করে ভাবি নিয়ে এলো।
ভাবির হাতে আবিদকে তুলে দিলে বলল, আজ থেকে তুমি বাবা তুমি মা। আমার ছোট ভাইয়ের কেউ নেই তুমি আর আমি ছাড়া।
নতুন বৌ হয়ে আসা মিতালি কিছুই বলল না।
আবিদকে মেনে নিতে পারলো না মিতালি কিন্তু আবিদ ভাবীকে জড়িয়ে ধরে বলল, ভাই আর তুমি ছাড়া আমার পৃথিবীতে কে আছে ?
মিতালি ভাইকে দেখানোর জন্য মাথায় হাত দিলো কিন্তু মনে মনে অনেক রাগ। একা থাকবো একা খাবো এটা আবার কি উৎপাত। একদিন এই বাড়ি থেকে উৎপাত না তাড়ায় তাহলে আমার নাম মিতালি না।
দুই চার দিন মিতালি কিছু বললো না আবিদকে চোখে চোখে রাখলো, ভাবলো এতো তাড়াতাড়ি কিছু বলা যাবে না। বলতে গেলেই ঝামেলা হতে পারে। তার চেয়ে কিছু দিন দেখে নেই, তারপর দেখবো কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়।
বড় ভাই সকাল হলেই মাঠে চলে যায়। বাবা বেশ জমিজমা রেখে গেছেন। এই সব দেখতে হয় তাকে।
আবিদ সকালে স্কুলে চলে যায় ফেরে বিকালে। এসেই ভাবীকে জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে খেতে দেও, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে। মা প্রতিদিন স্কুলে টিফিন দিয়ে দিতো। তুমি ব্যস্ত থাকার জন্য দিতে পারো নাই।
তোমার মা যা করেছে আমাকে তাই করতে হবে নাকি ?
আবিদ একটু হাসি দিয়ে বলে কেন করবে না, তুমি তো আমার মায়ের মত।
মায়ের মত কিন্তু মা তো না।
মা হয়ে গেলেই তো হয়।
তোমার মার হতে আমার বয়েই গেছে বলে একটু মুখ বাঁকা করে রাগতে রাগতে চলে গেলো ঘরে ভেতর।
আবিদ অবাক হয়ে ভাবীর যাবার পথের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ভাবী ঘরের ভেতর গিয়ে বসলো আর বাহিরে আসলো না।
আবিদ বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রুমে এসে বসে রইলো আর ভাবলো মা থাকলে এমন হতো না। স্কুল থেকে ফিরতেই মা পথের দিকে তাকিয়ে থাকতো। আসতেই বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতো। আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দিতো এটা সেটা খেতে দিতো কিন্তু কি হলো এসব এমন তো হবার কথা ছিলো না। মনে করেছিলাম ভাবী এসে মায়ের অভাব পুরণ করে দিবে বলেই একটা দীঘঃশ্বাস ছাড়লো।
অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে ভাবীর রুমে গিয়ে বলে আমার ক্ষুধা লেগেছে, খেতে দাও।
তোমরা দুইটি ভাই আমাকে কি পেয়েছো সব কিছু আমার কাছে চাও। আমি তোমাদের বাড়ির কাজের মানুষ নাকি পানিটাও পর্যন্ত মুখে তুলে দিতে হবে।
আমি কি তাই বলেছি। আমি তো খাবার চেয়েছি।
যাও টেবিলে খাবার রাখা আছে।
আবিদ টেবিলে গিয়ে দেখে একটি রুটি রাখা। এটা খেলে আমার কিছুই হবে না। গিয়ে শুনি আর কোথাও খাবার আছে কি না।
ভাবীর কাছে এসে বলল একটা রুটি, এটা খেলে আমার তো কিছুই হবে না। অন্য কোথাও খাবার রাখা আছে কি ?
আমি খাবার পাবো কোথায় ? যা ছিলো তাই রেখেছি। একজন তো মাঠে কাজ করতে করতে শেষ তুমি তো সাহেব হয়েছো। স্কুলে যাও আর আসো এতো খাই খাই করো কেন বলেই রাগতে রাগতে উঠে গেলো। আবিদ কি বলবে বুঝতে পারছে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে খাবার রুমের দিকে পা বাড়িয়ে দিলো। কি আর করা ক্ষুধা যখন লেগেছে এখন এটা না খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। রুটি খেয়ে দুই গ্লাস পানি খেয়ে বসে রইলো।
খাবার রুমে এসে ভাবী বলল, এই ভাবে বসে থাকলে চলবে ? বাড়িতে কত কাজ আমি একা করতে পারি না। এই নে সাবান কাপড়গুলো ধুয়ে নিয়ে আয়।
আমি তো পারি না।
পারি না বললেই হবে, আমি কি একা একা কাজ করতে করতে মরবো তোদের বাড়িতে আর তুই বসে বসে খাবি।
এমন ভাবে কথা বলছো কেন ভাবী।
কীভাবে বললে তুমি খুশি হবে! আমার আর কোন কাজ নেই তোমাদের দুই ভাইকে খুশি রাখতে আমি মরি তাই তোমরা চাও।
এমন কথা বলছো কেন।
আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই না কাপড়গুলো ধুয়ে নিয়ে আয় আমি রান্না করতে গেলাম বলেই রাগতে রাগতে রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে চলে গেলো মিতালি।
আবিদ বসে বসে কাঁদতে লাগলো আর মনে মনে বলতে লাগলো মা আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। আমি এমন জীবন চাই না। তুমি পৃথিবীতে চলে যাওয়ার পর আমার কপালে সুখ চলে গেছে। ভাই বিয়ে করে ভাবীকে নিয়ে এসে আমাকে সুখ দিতে চেয়েছিলো কিন্তু তা আর হলো না।
মিতালি রুম থেকে বের হয়ে হাসলো আর মনে মনে বললো এমন কষ্ট দেবো তোকে একদিন এই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবি।
রাতে ভাই বাড়িতে আসতেই বলে আমি তোমার বাড়িতে থাকতে পারবো না।
কেন কি হয়েছে, এই বাড়ি তোমার কি এমন ক্ষতি করলো।
তুমি তো সকালে বাড়ি থেকে চলে যাও আর ফেরো রাতে কিন্তু এই বাড়িতে কি হয় একবার জানতে চেয়েছো?
কি জানবো, কি হয়েছে?
তোমার ভাই আমার কোন কথা শুনতে চায় না। কিছু বললেই রেগে যায়।
ছোট মানুষ তো এতো কিছু বোঝে নাকি।
খাবার তো ঠিকি বোঝে এতোগুলো ভাত দিলাম একাই খেয়ে ফেললো আমার জন্য একমুঠ রাখলো না।
মিতালির কথা শুনে আবিদের ভাই হাসলো।
তুমি হাসছো আমি সারাদিন না খেয়ে রয়েছি।
না খাওয়ার কি আছে চাউল তো ঘরে আছে, এক কেজিতে না হলে তিন কেজি দেবে। তাহলেই তো হয়ে গেলো।
এই ভাবে খেয়ে খেয়ে পথের ভিখিরি হবো নাকি, আমার ছেলেমেয়েরা এসে কি খাবে।
সে চিন্তা আল্লাহ করবে।
তুমি তোমার চিন্তা নিয়ে থাকো বলেই রাগতে রাগতে চলে গেলো।
এ আবার কেমন বিপদ হলো ছোট একটা ভাই আমার তাকে নিয়ে কত অভিযোগ।
এই দেখ তোমার ভাই কি করেছে বলেই বেশ কিছু কাপড় তার সামনে তুলে ধরলো।
কি হয়েছে।
তুমি দেখছো না কি হয়েছে। তোমার ভাইকে দিয়েছিলাম ধুতে, আমি রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলাম একটু সাবার দিয়ে রাখ আমি পরে ধুয়ে নিয়ে আসবো কিন্তু দেখ সবগুলো কাপড় ছিড়ে ফেলেছে।
তুমি আবিদকে এটা দিতে গেলে কেন ? ওকি এই সব পারে নাকি।
এ পারে না ও পারে না সব কিছু আমি পারি।
বড় ভাইয়ের একটু রাগ হলো আবিদের প্রতি তাই জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।
আবিদ ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, ভাইয়া আমাকে ডেকেছেন।
এই কাপড়গুলো দিয়েছিলো ধুতে কিন্তু এই ভাবে ছিড়ে ফেলেছিস কেন ?
আবিদ অবাক হয়ে গেলো তারপর বলল, আমি তো ছিড়িনি।
মুখের উপর কথা। ছিড়ে বলছিস ছিড়িনি।
না ভাইয়া কোথাও আপনার ভুল হচ্ছে।
ভুল আমার হচ্ছে না, তোর বলেই মুখে এতো জোড়ে থাপ্পর দিলো।
আবিদ মাটিতে গিয়ে পড়লো।
মিতালি মনে মনে হাসলো এমনটাই চেয়েছিলাম। একদিন এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সুখে থাকবো, শান্তিতে থাকবো। আমার সুখ ঠেকায় কে।
আর কোনদিন এমন করলে তোর কপালে কি যে হবে। আর কিছু না বলে মিতালিকে নিয়ে ঘরে গেলো।
আবিদ কাঁদতে লাগলো কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারলো না। কি আর বলবে। বলার মত কিছু নেই।
অনেকক্ষণ কেঁদে রুমে ফিরে এলো। রাতে এক বারও খবর নিলো ভাই এমন কি ভাবী মিতালি। খাবারের জন্য ডাক এলো না। আবিদ ইচ্ছা করে ডাকও দিলো না খাবারের জন্য। অনেক কাঁদলো এক সময় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরল।
ঘুম ভাঙলো মিতালির ডাকে এই যে সাহেবের বেটা এতো বেলা করে ঘুমালে চলবে। উঠতে হবে না।
ডাক শুনে উঠে দাঁড়ালো।
অনেক হয়েছে এবার আমার সাথে কাজ করতে হবে।
আমার স্কুল আছে।
আমার পুরা কপাল তোমার ভাই মাঠে যাবে তুমি স্কুলে যাবে আমি চাকরের মত কাজ করে তোমাদের খাওয়াবো। আজ অনেকগুলো কাজের মানুষ নিয়েছে, তাদের খাবার দিতে হবে।
আমি কাজ করতে পারবো না।
কেন পারবি না, তুই পারবি তোমার বাপ পারবে।
বাবার কথা শুনে আবিদ রেগে গিয়ে বলল, আমার বাবার কথা বলবে না।
বললে কি হবে।
ভালো হবে না তোমার।
আমার ভালো হবে না, না তোর ভালো হবে না বলেই একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো মিতালি আবিদের মুখে।
আবিদ ভাবতে পারেনি ভাবী এমন ভাবে মুখে থাপ্পর বসিয়ে দিতে পারে।
আমাকে মারলে ?
মারার কি হলো, এখন থেকে শুরু, তোর ভাই এলে তাকে দিয়ে আবার মার খাওয়াবো।
আবিদ কি বলবে বুঝতে পারছে না। কাঁদতে লাগলো।
মায়া কাঁন্না দেখিয়ে লাভ হবে না। আজ থেকে আমার কথার এদিক সেদিক হলেই কি পরিমান মার হবে, বলেই মিতালি থেমে গেলো।
আবিদ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কি ঘটে যাচ্ছে তার সাথে কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিলোনা।
গেলি না পানি আনতে। দাঁড়িয়ে থাকলে আবার মারবো কিন্তু।
আবিদ মার খাবার ভয়ে পানি আনতে গেলো চোখ মুছতে মুছতে। কিছুক্ষণ পর পানি নিয়ে ফিরে এলো।
এই ভাবে কথা শুনবি। না শুনলে তোর খবর আছে।
আবিদ কিছু বললো না।
দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? এই ভাবে দাঁড়িয়ে আমার চেহারা দেখলে চলবে না। লবণ নিয়ে আয় ঘর থেকে।
আবিদ কিছু না বলে মিতালির কথা মত লবণ আনতে চলে গেলো। আগের মত লবণ নিয়ে ফিরে এলো।
বয় এখানে।
আবিদ বসলো।
পিয়াজগুলো খোসা ছাড়িয়ে দে।
আমি পিয়াজের খোসা ছাড়াতে পারি না, চোখ দিয়ে পানি আসে।
চোখ দিয়ে পানি আসে তাই না বলেই এতো জরে থাপ্পর বসিয়ে দিলো।
আবিদ মাটিতে পড়ে গেলো তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমাকে মারলে কেন ?
আগেই বলেছিলাম আমার কথা না শুনলে কি হয় তোর কপালে। এখন বুঝেছিস।
আবিদ কাঁন্না করতে লাগলো।
মায়া কাঁন্না করে লাভ হবে না। এই বাড়িতে থাকলে হলে কাজ করে থাকতে হবে।
আবিদ কাঁদছে আর পিয়াজের খোসা ছাড়াচ্ছে। পিয়াজের খোসা ছাড়ানো হয়ে গেলে বলে রসুনগুলো খোসা ছাড়িয়ে দে। তারপর মরিচের বোটাগুলো ফেলবি, কথাটা মনে থাকে যেনো।
আবিদ কিছু বললো না কাঁদছে আর পিয়াজের খোসা ছাড়াচ্ছে।
মিতালি ডাক দিলো আবিদ...।
আবিদ উত্তর দিলো না, কেননা মিতালির উপর তার খুব রাগ।
আমার কথা তোর কানে যায় না বলেই কান ধরে উপরে তুলে ধরে এতো জোড়ে আবার কিল বসিয়ে দিলো পিঠের উপর।
ওরে মারে বলে এক চিৎকার দিলো আবিদ।
আমি বলেছি না আমার কথা না শুনলে কি হয় তোর কপালে। যা পানি নিয়ে আয় কলপাড় থেকে।
আবিদ কাঁদতে কাঁদতে কলপাড় থেকে পানি নিয়ে এলো।
রাতে মন মরা হয়ে শুয়ে আছে মিতালি
আবির বেশ কিছুবার নাম ধরে ডাক দিলো কিন্তু উত্তর পেলো না।
আবার ডাক দিলো কিন্তু তখনো উত্তর পেলো না। তারপর কাছে গিয়ে বলল, কি হলো আমার কথা কি তুমি শুনতে পারছো না এই বলে যখন হাত ধরে টান দিলে তখন দেখলো কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে মিতালি।
কি হলো তোমার?
মিতালি তখনো কিছু বলল না, মিতালি জানে এই ভাবে বেশ কিছুক্ষণ কথা না বললে পুরুষ মানুষের রাগ বেড়ে যায়। যখন রাগ হতে হতে একশো থেকে দুইশো হলেই বললে কাজ হবে।
কথা বলছো না কেন, এমন কি হলো যে কথা বলা যাবে না। আমি দিন রাত খেটে মরি আর তুমি আমার সাথে রাগ করে থাকবে।
মিতালি আবিরের বুকের উপর পড়ে এমন করে শব্দ করে কেঁদে দিলো।
আবির মিতালির কাঁন্না দেখে মনে করেছিলো মা অথবা বাবা মারা গেছে।
এমন ভাবে কাঁন্না করলে আমি থাকতে পারবো ? সবার মা বাবা চিরদিন বেঁচে থাকে না। সবাইকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে।
এই কথা শুনে মিতালি আরও রেগে যায়।
আমি কি রাগের কথা বলেছি।
তুমি কিছু না শুনে কথা বলতে যাও কেন ? আমার মা বাবা কেউ মারা যায়নি।
আল্লাহ বাঁচালো এই রাতের বেলায় যেতে হলো না।
তোমার সাথে আমার আর কোন কথা নেই বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো মিতালি।
আবির হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলল, কি হয়েছে একবার না বললে আমি বুঝবো কীভাবে।
কাঁন্না ভরা কন্ঠে বলে তোমার কষ্ট দেখে আমার ভালো লাগে না। সারাদিন তুমি মাঠে খাটো আর তোমার ভাই লেখাপড়ার নাম করে স্কুল ফাঁকি দিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়।
ঠিক আছে এতে কাঁন্নার কি হলো। আমি কাল স্কুল গিয়ে স্যারের সাথে কথা বলবো।
মিতালি মনে মনে বলল, আমি যে ভাবে বোঝাতে চাই সেটা বুঝতে পারছে না তাই বলে আমি তোমাকে বুঝাতে পারছি না।
বুঝিয়ে বলো।
তোমার ভাই লেখাপড়ায় তেমন ভালো না। এই ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে তেমন ফল হবে না। তুমি কাল থেকে মাঠে নিয়ে যেতে পারো।
আবির বলল কি বল বুঝতে পারছে না। তারপর বলল, দেখি কি করা যায়।
তুমি সারাদিন মাঠে কাজ করো আবিদ যদি খাবার নিয়ে যায়, তাও তো তোমার উপকার হলো।
তুমি ভালোই বলেছো।
মিতালি হেসে দিলো এতোক্ষণে বুঝেছো বলতে বলতে বুকের উপর গড়িয়ে পড়লো হাসতে হাসতে।
সকালে মাঠে যাওয়ার সময় বড় ভাই আবিদকে মাঠে নিয়ে গেলো। এখন থেকে আবিদের কাজ হলো বাড়ি থেকে খাবার আনা কাজের লোকদের পানি খাওয়ানো। এটা সেটা এগিয়ে দেওয়া।
লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেলেও অন্য দিক দিয়ে খুশি ভাবীর হাত থেকে বেঁচে গেলাম।
ভাবীর কথা মত একটা গরু কিনে নিয়ে এলো। এই গরু দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হলো আবিদকে। এখন গরুর ঘাসকাঁটা এই সব নিয়ে থাকতে হয়।
মিতালি এখন মনে মনে খুশি আবিদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিলাম আর কিছুদিন যাক তারপর অন্য ব্যবস্থা করবো।
আবিদের সারাদিন মাঠে থাকতে হয় গরু দেখা, মাঠে খাবার দিয়ে যাওয়া। বাড়িতে ভাবীর বকুনি মাঝে মাঝে পিটের উপর মার। আবিদ ভাবতে লাগলো সে কোন পথে হাঁটবে। একদিন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লো সে আর কোনদিন এই বাড়িতে আসবে না। কোথায় যাবে তার কোন ঠিকানা জানা নেই। আবিদ এখন পথে পথে ঘুরে বেড়ায় কোন ঠিকানায় ঠায় হবে তার সে জানে না।