অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে
রুদ্র সাহাদাৎ
খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে কতক্ষণ আর শেষ নিঃশ্বাসে কাঁদে আদমজীবন
তওবা তওবা বলছে মুখ,এখন স্বীকার করতেই হয় বাস্তবতা,
রাত্রির কালো ছায়া,
কালো রাত্রির মায়া
এতো হিসেবনিকেশ এতো এতো কাজ স্বার্থহীন নয় কিছু, স্বার্থের অন্তরালে আরও স্বার্থ
শেষ প্রান্তে শেষ কথা - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
দাগ নেই, অভিশাপ
অলোক আচার্য
হাতের আঙুল কেটে রক্ত পরছে
এক ফোঁটা
দুই ফোঁটা
অজ¯্র ফোঁটা
আশ্চর্য! নিচে কোনো রক্তের দাগ নেই
সেখানে অভিশাপ, ধ্বংসের-ক্লান্তির।
একটা চুমুর অভাব
রফিকুল নাজিম
একটা চুমুর আয়ূ থাকে বড়জোর মিনিট পাঁচেক
নিউরন কেন্দ্রের উত্তেজনার পারদও নিম্নমুখী হয়
ক্লান্তি নামে চোখের পাতায়; আলস্যের ধূলো জমে
গাণিতিক ছাঁচে গল্পেরও সীমারেখা থাকে সুনির্দিষ্ট।
বিছানার চাদর রাতকে সহনশীলতার গল্প শোনায়
কল্পনায়-আবছায়ায় তোমাকে আধেক পাই; অথবা পাইনা
হাতে পাই তো বুকে পাইনা, চোখে পাই তো ঠোঁটে পাইনা
ঠোঁটে পেলেও আরো অনেক কিছুই থেকে যায় অসমাপ্ত!
তারপর সারাদিন আমি শুদ্ধ সূত্রে যাপিত জীবনের অংক কষি,
অথচ ভেতরে ভেতর আমি একটা চুমুর অভাবে প্রায়শ’ই মরি!
গাব গাছে ভবিষ্যৎ বক্তা
মিসির হাছনাইন
দূর গ্রামে বসে আজিজুল খনকার
গাছের সাথে করল মানুষের বাণটানা,
কুফুরী কালাম লিখে শেষবার
পানিতে ভাসায় অতীত অভিশাপ।
তারপর থেকে বাড়ির পাশের
গাব গাছটায় পাখি বসে না,
কি এক ভবিষৎ তাতে ভর করেছে,
কেউ তাকে দেখছে না, কেউ আর-
ভাবছে না। তবুও, স্বার্থপর কেউ ভালো নেই
অদেখা ফুলের লোভে খুঁজছে জীবনের মানে।
আরো কত ভালো থাকায় উড়ে গেল
বাদুড়ের কান্না, ফেলে আসা স্মৃতিপ্রেম,
নষ্ট জীবনের লেনদেন, অতিরিক্ত আহ্লাদ,
ক্ষমা চাওয়া করুণ মুখের অসহায় চাহনি,
হৃদয়ের সব অপরাধ তুলে নিয়েছে গাছটি
এক ঘোর অমাবস্যার সন্ধ্যায়
কি এক ভবিষ্যৎ তাতে ভর করেছে
গাব গাছটার মৃত্যু হলে-
এই মানুষটাও জীবন্মৃত শুধু হাসে আর কাঁদে।
একটি চারাগাছ
মনোজ চৌধুরী
ক্ষুধার্ত পাখির মতো-
একটি চারাগাছ সালোকসংশ্লেষ ভিক্ষে চাইছে
অধীনতা দেশ ও নারীর মতো নয়
মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইছে গনগনে আগুনের মতো ভিড়ে
বাঁচতে চাইছে...
মাটির হাত পা ধরে
পাতাঘরের অকথ্য ধ্বনির উপর বারবার আঘাত চিহ্ন
আগামীর সাইরেন সূচিত করে যায়...
এক যূথবদ্ধ ক্যাকটাস
একটি চারাগাছ নগ্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে- পড়ে থাকলো
আর্তনাদ করতে করতে।
কোন জেলে পাঠাবে
ফাহিম আহমদ ছামি
তারপর, আমাকে জেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো-
কিন্তু কোন জেলে? তাদের মাঝে দ্বন্দ বেধে গেলো!
আমি সীমাহীন মামলার এক আসামী; রায়ের উর্ধ্বে
ছুটেছি রাজপথে, জয় করে ভয় উঠেছি গর্জে
সত্যের নেশায় মিথ্যাকে চুরমার, তোয়াক্কা না করা-
নির্ভয়ে উড়েছি, ছুড়েছি; তবু দেইনি ধরা।
আমাকে শাস্তি দিতে নতুন বিধান লিখতে হবে
বিচারক; হাতে কলম ধরা আগে শিখতে হবে-
আমি জালেমের গৃহ পোড়া ছাইয়ে মেজেছি দাঁত,
সোনার গুদাম ভেঙ্গে- গরিব খাবে তাই এনেছি ভাত
প্রণামের বদলে লাল চোখ ছিলো ধূর্তের আতঙ্ক
যুদ্ধের জন্য ভরেছি গর্ত, খুড়েছি সুড়ঙ্গ।
এবারে আমাকে ফাসি দাও, নয় ফেলে দাও গর্দান
মরে যাবো আমি; অমর হয়ে থেকে যাবে প্রাণ!
ছায়া ছাড়া চলা দায়
নাহিদ্র ইমন
শৈশবে কৈশোরে বাবাদের ভালো লাগে
এর বাদে বয়সের নাদানিতে কাল লাগে
কিছুদিন যেতে যেতে বট ছায়া খুঁজে ফিরে
গ্লানিমাখা পুত্রেরা আসে ফের বাপ-নীড়ে
বুঝে যায় বাপ ছাড়া, ছায়া ছাড়া চলা দায়
বাবাদের ভরসায় ছেলে সব, সব পায়।
জোনাকি বা জোছনা
মাসুদ পারভেজ
স্তব্ধ সময়
নিরুত্তের জানালায় হাজারো প্রশ্নের হাওয়া,
শুধু আমার নির্বাক চেয়ে থাকা;
নিথর নির্জীব এক কাগুজে হৃদয়, যার কবিতা ছাড়া কিছুই নেই
তবুও ঐ বেহায়া চাঁদ হেসে যায়- কারে বুঝাই এই অবসাদ!
ধীরে ধীরে হেঁটে যে পথ জীবনকে দিয়েছে রঙ- কিভাবে ভুলে যাই, ভুল করি বিভ্রম বেহাত আলোয়;
কিভাবে বলি আকুলতার প্রখর প্রার্থনা তোমার পায়ের নূপুর হয়ে রয়, কীভাবে বুঝাই!
তুমি জানো না, যে জীবন কান্না দিয়ে লেখা সে রঙধনুতে হাত বাড়ালেও বৃষ্টি ঝরে।
এই যে আমাদের ছোট ছোট ঢেউ বুকের জমিন না ছুঁয়ে চোখের কিনারে ভীড় করে
এই যে মুহূর্ত গুলো যাচ্ছে আমাদের অন্তরের চেনা জানা কিন্তু অনন্ত দূরত্বের
ভালোবাসা সে তো কান্নার প্রতিশব্দ
সুখ সে বাস করে দুঃখের বিরান ভিটায়
সম্পর্ক সেটা নিবিড় হয় অশ্রুর জলরাশিতে
অশ্রুর ফোঁটায় ফোঁটায় তোমার ছবি বুকের ভাজে ভাজে মেঘের মত চর হয়ে যায়,
দেখো একদিন আমাদের উঠোনে অনেক বৃষ্টি হবে অনেক!
আরো বারো বছর পরে,
যখন কান্নার রঙ বদলে যাবে, যখন স্বপ্নের অবশিষ্ট বলতে কিছুই থাকবে না
আমি সেদিনও বলব জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি তুমি;
তুমিও বলতে পারবে তোমার সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি- সেটা আমি।
স্মৃতি বন্ধি অতীত
মাঈনুদ্দিন মাহমুদ
পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট কুঠিরে
স্মৃতি বন্ধি অতীত,
হেঁটে যায় কিশোর বেলার সোনালী বিকেল।
ইচ্ছে করে
কাঁদা মাখা উদোম গায়-
আরো একবার ফিরে যেতে বাঘমারা গাঁয়।
আজও অমলিন ফেলে আসা দিন
দুপুরের সোনা ঝরা রোদ
ডেকে নিয়ে যায় স্মৃতি ঘেরা গাঁয়
মনটা যে মানে না প্রবোধ।
হিম ঘরনার কবিতা
শেখ একেএম জাকারিয়া
এখনও হিম পড়েনি পৌষের মতো
তবু হেমন্তে লিখা হয় হিম ঘরনার কবিতা
এই হেমন্তে ধুলোবালির পথে,
এখনও শিশির-কুয়াশায় স্যাঁতসেতে হয়ে উঠেনি
কখনো-সখনো শিশিরবৃষ্টি ছুঁয়ে দেয় ঘাসের সবুজ শরীর
লঘু কুজ্ঝটিকার প্রাতে সহসা দেখা মিলে
পিয়াইন নদে, ডুবে আর ভাসে একঝাঁক পানকৌড়ি
নরম ঢেউের বুকে কুয়াশার কু-লী ভাসে
গরম জলের ধোঁয়া দেখি হাওয়ার বুকে উড়ে
সূর্যের আলো চুপিচুপি ঢেকে দেয় কুহেলিকা
¤্রয়িমাণ আলোর ঝলকে মাকড়সার ঝাল
কেঁপে ওঠে পৌষের হিম আসার সংবাদে
বিমর্ষ চোখে হেমন্ত বসে থাকে নদীর তীরে
কুজ্ঝটিকার বুক চিঁড়ে একটু রোদের অপেক্ষায়
যদি এই হেমন্তে সুখের দেখা মিলে।
আমি রয়ে যাব
ইউনুছ ইবনে জয়নাল
আমি রবে যাব-
এখানে অবারিত মাঠে,
পাড়ার সাথিদের নিয়ে দুরন্তপনায়
মেতে উঠব বাংলার স্থলে জলে ঘাটে।
তোমাদের যেখানে খুশি- চলে যাও
ফিরে ফিরে ডেকো না আমায়,
না, টেনো না আমায় জামা ধরে, জেনো
আমার মাতৃকোল এখানে এ বাংলায়!
আমি প্রথম কাঁন্না কেঁদেছি এ মাটির পরশে
শৈশব থেকে পৌড় ছুটেছি এ পথে ভাই,
আজ অন্তিম তরী ভিড়িয়ে এ ক্ষিতির পরশেই
মাতৃকোল সম চির নিদ্রায় নয়ন মুদিতে চাই।
তোমাদের যেখানে খুশি- চলে যাও
অগ্নিগর্ভ নেত্রে অন্বেষণে দিক বেদিক,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত সূর্যদগ্ধ হতে চাই না আমি
বাংলায় আমার প্রাণ জুড়ায়, মাতৃভূমি ঠিক।
আহা! অমৃত স্বাদ, স্বপ্নের বনুন জীবনানুভূতি
এর প্রতি হৃদে জাগে সতত হাজারো আকূতি,
প্রাণের স্পন্ধন প্রেমের সঞ্চালন নাড়ীর গতি
কুলে ক্ষণে মানবাগমন মমতায় গাঁথা মতি।
আমি রয়ে যাবো-
এখানে অবারিত মাঠে একেলা,
হৃদয় চিরে চিরে দেখাতে পারি, দেখ
আমি ঢের ভালবাসি আমার জন্মভূমি বাংলা।