ঈদ ও শৈশব
সাঈদ চৌধুরী
এই সময়গুলোতে কবিতারা তখন প্রায়ই কবিতা হয়ে উঠতো
রমজানের দিনে স্কুল বন্ধ থাকায় সারা দিন শুধু দৌড়ে বেড়ানো
বাবার বাইরে থাকা আর মায়ের অশান্ত ব্যস্ততা
আর ফাঁক গলে আমি তখন খেলার নেশায় বুদ দিশেহারা !
যোহরের আযান কানে আসলে মনে হত, থাক না
আরেকটু না হয় খেলেই বাড়ি যাই
ততক্ষনে আছরের আযান কানে বেজে উঠতো
তখন কেবল আমি সব খেলা ছেড়ে গলির মোড়ের সাইকেল স্ট্যান্ড থেকে
ছোট্ট একটি সাইকেল ভাড়া নিয়েছি মাত্র
পাঁচ টাকায় এক ঘন্টা !
এই ছেড়ে কি আর বাড়ি ফেরা যায় ?
এক ঘন্টা হয়ে কখন যে দেড় ঘন্টা আর দু ঘন্টা চলে যেতো
তা যেন ইচ্ছে করেই ভুলে থাকতাম...
বাবার অফিস থেকে আসার সময় হয়েছে বুঝি
এবার আর থাকা যাবে না
দৌড়ে চলে যেতমা বাড়ির পথে,
বাড়িতে ঢুকতেই মায়ের সেই চির চেনা রুপ
কাল থেকে তোকে আর রোজা থাকতে হবে না
না খেয়ে থাকে, নামাজ পড়ে না এক ওয়াক্ত
সে হয়েছে আবার রোজাদার !
বাবা বলতো নাও হয়েছে, ছোট মানুষ এতটুকু করছে
তাই বা কম কিসে !
বহমান সময় কি আবার ফিরে আসে ?
এভাবেই ঈদ আসার আনন্দ সময় চলে আসতো
মনে কেনাকাটার উচ্ছলতা বেড়ে উঠতো
বাজার, মার্কেট, হকার সব একাকার করে কত্ত কিছু কেনাকাটা
রাতে ঘুম আসতো না, কখন আসবে ঈদ
কখন সকালে নেবো সালামী...?
ঈদ আসতো, বাবার সাথে নামাজে যেতাম
সবাইকে অনেক অনেক বার করে সালাম করতাম
এবং সালামী পেতাম,
তারপর সে দিনটাও চলে যেতো
এক এক করে জীবনে অনেকগুলো দিন কাটানোর পর মনে হল
এখন যখন ঈদ আসে তখন যেন আসলে কি একটা নেই
আগে যেমন একটা লাটিম কেনার জন্যও মন হাহাকার করতো
এখন আস্তো একটা প্রাইভেটকার আছে
কিন্তু তাতে যেন কোন সুখের ছন্দ নেই,
এখন একজন প্রেয়সী পাশের বিছানায় ঘুমায়
তবুও কেন জানি মনে হয় তাতেও দৈব কোন টান নেই!
বছর বছর চলে গিয়ে আমাদের প্রাপ্তির খাতায় যা যোগ হয়
তার নাম হচ্ছে অযাচিত হারানো সময়,
অযাচিত অপ্রাপ্তি আর হাহাকার করে শৈশবে ফেরার নিরন্তর ব্যর্থ চেষ্টা
ঈদের দিন
শরীফ সাথী
ঈদের দিন ব্যাতিক্রম আয়োজন আমার।
তোমাকে নিয়ে নদীর তীরে বসে
বৈকালী হাওয়ায় চাওয়া পাওয়ায় শুধু তুমি আর আমি।
নয়নের মিষ্টি চাহনী ঠোঁটের মধুর হাসির
মাখামাখি দৃশ্য নদীর ঝরণা জলের স্বচ্ছ পর্দায় দেখবো,
ঠিক যদি আমার সময়ে তোমার সময় হয়।
ঈদ
আবু ইউসুফ সুমন
রহমত মাগফিরাত আর নাজাতের সুগন্ধে ভরপুর পবিত্র রমজান শেষে
আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাখুশির সওগাত নিয়ে চাঁদ হেসেছে, কাল ঈদ।
এই ঈদ রোজাদারের সারামাসের সকল ইবাদতের যেন এক মিষ্টি ফলাফল
মুসলিম উম্মাহের মহব্বতও কোলাকুলিতে মেতে উঠার সুন্দর দিন।
ছোটদের কদমবুসি আর সালামি প্রাপ্তির আনন্দে সজ্জিত ঈদের ক্ষণ
গরিবদুঃখীর একসাথে জামায়াতে নামাজ পড়ার সাম্যবাদের নাম, ঈদ।
নিজের সুখ অন্যের সাথে বিনিময়ে উজ্জীবিত করে ঈদের আগমন
ধনীদের জন্যে ঈদ হলো উদারতার দৃষ্টিউন্মুক্তকারী শিক্ষার পাঠশালা।
ঈদের দিনে তুমি
মোঃ শফিকুল ইসলাম
ঈদের দিনে যখন আমি উদ্ভ্রান্ত এক মনে
ছট-ফট করে তোমার কথাটি ভাবিতেছি ক্ষণে ক্ষণে।
হালকা হাওয়ায় মেঘেরা ছাড়িছে তাহারি চিপা রস
দোকানের তরে বসেছিনু আমি অন্তর করে বস।
আমি যখন ব্যস্ত হলাম দোকানের কিছু কাজে
অপরুপ তুমি সেজেছো তখন মাচ্ছাক্কলির সাজে।
বৃষ্টির মাঝে চলেছ তুমি ঢঙের হাঁটা হেঁটে
পশ্চাৎ থেকে দেখিয়া আমার অন্তর যায় ফেটে।
হৃদয়ে আমার উঠিল তখন প্রবল বেগে ঝড়
একাকী তুমি চলিতেছ আজ আমারে করিয়া পর।
পৃথিবীতে যেমন এক ভাগ মাটি আর তিন ভাগ পানি
এতো পানিতেও চাতক পাখির তৃষ্ণা মেটেনা জানি।
মেঘ হতে যদি এক ফোটা জল চাতক পাখি পায়
সেই জল টুকু তৃপ্তি করিয়া তৃষ্ণা মেটাতে খায়।
তাই সে চাতক দিবানিশি যেন থাকে সে মেঘের আশে
নিষ্ঠুর সেই মেঘ যদি তবে বয়ে যায় অন্য দেশে।
কি হবে সেই চাতকের দশা ভেবেছ কি একবার
তেমনি দশা করে দিলে তুমি এই ঈদে আমার।
কত লোকের সাথে কতো কথা বলি পরান ভরে না মোর
তোমার সাথে একটি কথাতে ঘুচিত অন্ধ ঘোর।
একথাটি কেন বোঝনা গো তুমি পুরিয়ে মারো কেন মোরে
জলের মাছেরা ডাঙায় যেমন ছটফট করে মরে।
অনেকের সমুখে মিষ্টি হাঁসিয়া বলিতেছ তুমি কথা
আমার নয়নের আঢ়াল হইয়া ঘুরাইতেছ মোর মাথা।
তুমি যখন ফিরিতেছ বাড়ি পথে মোর মুখোমুখি
হৃদয়ে তুমি করেছিলে আঘাত হয়েছিলাম বড়ো দুঃখী।
ওড়না দিয়া মুখটা ঢাকিলে আমার নয়ন হতে
দুঃখ তখন ছরায়েছিলে মোর বিরহের পথে পথে।
বুঝেছিলে কি তখন কতটা আঘাত করেছিলে তুমি মোরে
যে আঘাতে আজ ডুবিয়া মরেছি গভির অন্ধ ঘোরে।
ওগো তুমি কেন এতটা পাষান, দয়া কি নাই মনে
ঈদের দিনেও তোমার আঘাতে কাঁদিতেছি ক্ষণে ক্ষণে।
পূণ্য
লুৎফুন নাহার লোপা
বছর পেরিয়ে চলে আসে শাওয়ালের দিন
পুনর্বার পূণ্য জমাবো ভাবতে ভাবতে দেখি
পৃথিবীরর বায়ূূ অনেকটাই ঢুকে গেছে শরীরে।
আমার পরিজনেরা মিশে যায় বাজারের ভিড়ে,
আমিও তাদের পথে হেঁটে ঁেহটে বাড়ি ফিরি।
রঙিন আবাসন কেপে উঠে আনন্দের নামে,
আর কতটুকু নিশ্বাসে তৈরি হবে ভালোবাসা
রাতের প্রর্থনা ঝুলিতে ওঠে না আমার;
আমি ক্লান্ত ভীষণ; শুধুই ঘুমোতে চাই।
ঈদ আসুক
স্বপন শর্মা
ঈদ আসুক একামনা সর্বক্ষণ সর্বঋতু চাওয়া
আনন্দ নিরান্দ যা হোক; ছুটি হবে তার, ফিরবে ঘরে
অফুরন্ত সময় দুজনার মাঝে-
মুখোমুখি বসে থাকা, অল্প স্বল্প কথার পিঠে কথা
দু'জনার জমানো কথাগুলোর স্ফুরণ গতি।
সেই আঠার, তারপর নিত্য প্রার্থনা ঈদ আসুক।
ছুটি শেষ, এতো দিন পর মনে হতে থাকে কি যেন
বলা হয়নি, অপেক্ষা করতে থাকা বৎসরের আরেকটা
মানুষের চাহিদার শেষ নেই। সেই মানুষ তার মানবিক তারণায় যখন
প্রার্থনা করে জানিনা সেটা কতটা কাজ হয়!
নাহ...এসব আর না, ঈদ আসুক সেই চির যৌবনা আগের মতো
যেখানে ষোড়শী খুঁজে পেত তার কামনা, যুবক পেত কাঙ্খিত ধন।
সর্বসাধারণের মতো করে রোজ রোজ একই পথ ধরে।