আমি আর...
সোহেল বীর
চারিদিকে জমাট অন্ধকার, মুখোমুখি তুমি আর আমি
যে ছাতার নিচে আমরা বসে আছি
তা ক’দিন আগেই একটি বহুজাতিক কোম্পানি অনুদান দিয়েছে
ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বর্ধনের মহান দায়িত্ব নিয়েছে তারা
‘সেট’ স্কুলের সামনের এই ছাতাটা এ ক’দিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে
শ্রাবণ দিন- অযাচিত বৃষ্টিদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে
এত শীতলতার মাঝেও আমার শরীরে তীব্র উষ্ণতা
জ্বরাক্রান্ত এই শরীরে তোমার সঙ্গ আমাকে শীতলতা এনে দেয়
আমার কপালে হাত দিয়ে পরিমাপ করার চেষ্টা করো উষ্ণতার পরিমাণ
তোমার হাত এখন বরফশীতল
তোমার দেহের শীতলতা তিরতির করে আমার শরীরের শিরা উপশিরা ভেদ করে
পরম প্রশান্তি খুঁজে পাই তোমার স্পর্শে
রাত ক্রমাগত গভীর হতে থাকে, হলমুখি হই আমরা
এখনও বর্ষা আসে,
জমাট অন্ধকারে ছাতার নিচে বসে থাকি
মুখোমুখি আমি আর নিংসঙ্গতা!
সুলক্ষণা
রওশন রুবী
সুলক্ষণা কোথায়া থাকে বৃষ্টি বলো; কোথায় মেঘের বাড়ি
বৃষ্টি ধুয়ে দুঃখ নেবো; নেবোই দেখো মেঘের বাড়াবাড়ি,
আমি যে সেই জেনে ছিলাম দাঁড়াও তুমি কালোমেঘের পর
আষাঢ় শ্রাবণ ভাদ্র মাসে জলের ছলে কাঁপাও থরোথর।
সুলক্ষণা নাওনি কেন গোলাপ বকুল চাইছো মেঘ আর বারি
বলছি শোন ছোট্ট থেকেই মেঘ চিনি না কোথায় পাবো বারি।
মেঘ কি তোমার চোখের মনি মেঘ কি খুবই কালো
পাহাড় বেয়ে নামে যেমন রোজ বিহানে কাজল পরা আলো?
সুলক্ষণা বললে নাকো; দেখলে নাকো; ভাঙছো পথের পথ
ক্লান্তি ধুয়ে নিতেই দেখো ছায়া হয়ে আছে তোমার পেছনে অশ^থ।
বর্ষার বয়স একুশ বছর
নূরনবী সোহাগ
লক্ষ অথবা কোটিতম বর্ষা নামলো; রাতের শরীরে
তবুও তার স্নিগ্ধ ধারায় এতটুকু বৃদ্ধের ছাপ নেই!
ঝিরঝিরে হিন্দোলে কি মাতাল সমীরণ
হাজার বছর ধরে; বর্ষার একই নিবেদন প্রিয়তমাদের কাছে!
‘আমায় একটু ছুঁয়ে দাও,
আমি যে তোমার জন্যেই ঝরছি অবিরাম; অজ¯্র হয়ে।’
বর্ষার চিরসবুজ ধারায়
যুগে যুগে কত নারী নিজেকে হারায়!
বর্ষার উন্মাদ ঘ্রাণ
কেড়েছে কত উদাসীর মধ্যরাতের প্রাণ
কত পুুরুষ! এ বর্ষায় করেছে কামিনীর লোভ।
চেয়েছে ভেজা শরীরের নির্লজ্জ আলিঙ্গন!
বর্ষায়, বিরহ ভিজেছে নতুন প্রেমে।
থোকা থোকা কদম হেসেছে শাঁখে
তবু বর্ষার বয়স হল না, একুশ থেকে বেড়ে!
বলিনি কখনো বর্ষাটাও ফুরিয়ে যাচ্ছে
ইকরামুল হাসান শাকিল
অতোটা দূরেও যেতে নেই যতটা দূরত্ব ফিরে আসা যায় না
সেইসব বর্ষার ঝিরিঝিরি আঁকিবুকির আঙিনায় থইথই ঝলমলে অভিমানে
আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে
বুকের মধ্যে বেড়ে উঠা কদমগাছ শালিক হয়ে উড়তে শিখেছে
যেভাবে নিথর হয়ে দাঁড়ানো ঘুঘু তোমার সামনে আবোল তাবোল
তোমার ভেজা শরীরের চেয়ে আরো বড়ো কোনো ভাষা নেই আমার
কখনো বলিনি তোমায়-
বলিনি কখনো বর্ষাটাও ফুরিয়ে যাচ্ছে, আমিও ফুরিয়ে যাচ্ছি
যতটা দূরত্ব ফিরে আসা যায় না।
গোলাপ আমিও ফোটাতে জানি
আশিক বিন রহিম
পরী,
ওপাড়ার যুবাদের মতোন রক্ত গোলাপ আমিও ফোটাতে জানি
ঝিল থেকে পদ্ম এনে আমিও আঁকতে পাড়ি খোঁপা।
এই যে নোনাঘাম সিক্ত হাত দেখছো তুমি;
এই হাতে আমিও কলম ধরতে জানি, লিখতে পারি কবিতা
আর ভাঁজ করে দিতে পাড়ি চিঠি, হলুদ খামে।
আমার রোদ্রে পোড়া ধূষর ঠোঁট দেখে অযথা আঁকতে যেওনা
ভাবনার নক্শি কাঁথা; তুমিতো জানো- চুম্মন শিখতে
মক্তবে যায়নি কোনো পুরুষ!
তুমি ফুল চিনো, গোলাপ ক্যাকটাস গ্লাডিয়েস দেখেছো
শুনেছি নাইট কুইনের সাথে সখ্যতা আছে বেশ
অথচ কচুরী ফুলের রং জানা নেই তোমার।
পারফিউম চিনো তাই বড়ি স্প্রে আর এয়ার ফ্যাসনার খোঁজ
শুধু বোঝ না, কাঁদা মাটি সেদ্ধ ধানেও সুগন্ধি আছে
ঘন্ধ আছে পাটের আঁশ আর সবুজ ঘাসেও।
পরী,
ক্ষেতের আইল গুঁড়িয়ে দুটি আবাদি জমি এক হয়ে
ফসল ফলাতে আমিও দেখেছি, যেমন করে দেখেছি-
পাহাড়ের জলকে সাগর জড়িয়ে নেয় বুকে।
শুধু এটুকু দেখিনি
আকাশের চাঁদ কখনো মাটিতে দোলাতে পা।¬¬
বুনন
শ্যামলী বিনতে আমজাদ
কবিতার বীজ বুনেছি মননে
দগ্ধ অন্তঃকরণে হাসতে পারি তাই,
চর্চা করি শুদ্ধ স্বকীয় চিত্তের-
বিদীর্ণ হোক যত জাল আছে মিথ্যের।
কবিতার বীজ বুনেছি মগজে
শঙ্কা ভুলে স্বপ্নজাল বুনি তাই,
রঙ্গিন মোড়কে ভেজাল আছে যত-
নষ্ট সমাজে চাই শুদ্ধতা তত ।
অবাক বোতামের ভেতর থেকে
দ্বীপ সরকার
চিনা বাদাম ছিলছি-
ক্রমশঃ ছিঁড়ে যাচ্ছে যেনো যৌক্তিক বাদামের শরীর,
শার্টটি লজ্জা টের পেলে হৈমন্তী দুপুর ঘামতে থাকে-
পরিচিত প্রজাপতিরা খুলে দিলো অবাক বোতাম...
আমি বাদাম ছিলছি আর হাঁটছি
রোদবালিকা আছড়ে পড়তে লাগলো ক্রিয়াশীল অন্তরে
নিশ্চুপ খোসাসমূহ খসে খসে পড়ছে রোদবালিকার গায়ে,
শহুর হাওয়ায় উড়ে দিচ্ছি গহীনতীর,
ধূসর রঙা কাক এসে ঠুকরে খাচ্ছে অবাক বোতামের ভেতর থেকে দুঃখরুটি !
আত্মীয় ও পরিচয়
টিপু সুলতান
পিচ্ছিল পথে হেঁটে যাওয়া
পায়ের আঙ্গুলগুলো বলে যায় এবার আসি-
নিখিলেস দাঁড়িয়ে
ঘাসের পাহাড়ে ভাটফুলের গন্ধ শুঁকে নিঃশ্বাস চোয়ায়
ভালো থেকো ভেঁজা পথ।
লিখে রেখ দিন তারিখ
শতাব্দী, যুগে যুগে আর যদি ফিরে না আসি-
বাঁকফেরা চৈচৈ আনন্দের পুরাতন পাড়াগাঁয়।
চিনে নিও শামুকের অলসগতিতে
আকাশে বৃষ্টির ফেরিওয়ালা,
শালিক ভেঁজা দুপুরে
ধানক্ষেত, ভুট্টা, গম
বাতাসের পাল দোলানো দিগবিজয়ী ওড়া কুয়াশায়।
ঢের বক্রতল সারিসারি গাছের ডেরায়
ক্লান্ত চাষী ও ক্লান্ত মুসাফীরের রেখে যাওয়া
নবাঙ্কুর পাতার হাঁড় পাঁজরে
বহু রূপ গরিমে-সুরতহল দৈনন্দিন
আত্মীয় ও পরিচয়।
বেনেবউ
মাহবুবা নাছরিন শিশির
গোলাপের সাথে সই পেতে কবে বেনেবউ গেছে চলি
কত দূরে গেছে? আসবে কী ফিরে? কিছুই যায়নি বলি
অসহায় একা গোলাপের ব্যথা শুনে কাঁদে বনভূমি
কান্নার সুর শোনেনা পাখিরা, শোনে আধ ফোটা কলি।
একটা গোলাপ অকালে ঝরলে হয়না কারোর ক্ষতি
রোজ রোজ কত ফুটবে গোলাপ নজর তাদের প্রতি
অগোচরে কোন বেনেবউ কবে বলেছিল ভালোবাসি
মুখে না বলেও মনেতে গোলাপ দেখেছিল তার গতি।
অভিমান ছিল, মায়া ছিল আর ছিল আস্থার ছবি
অবিশ্বাসের ধাঁধাঁয় গোলাপ হয়েছে দুদিনে কবি,
বেনেবউ তাকে শুনিয়েছে গান, শিখেয়েছে সুর, লয়
প্রিয়কে হারালে প্রিয়ারাও বোঝে আঁধার জীবন রবি!
কত বেনেবউ, বউ কথা কও, কাতর ব্যাথার গানে
গোলাপের সেই বেনেবউ সখা চেয়ে আছে কার পানে
থাকুক সে সুখে কাছে কিবা দূরে, তবু তার ছায়া ভাসে
মাতাল বাতাস ভরে ওঠে কেন চেনা মহুয়ার ঘ্রাণে!
ভুল প্রেমিকের মুগ্ধ কথায় দগ্ধ চিত্ত-মতি
দেহ না দিয়েও মনের সূচি হারিয়েছে কত সতী
গোলাপ ভীষণ আবেগপ্রবণ সহজে দেয় না মন
বিশ্বপ্রেমিক প্রেম নিবেদনে তাকে করে শুধু নতি!
গানের পাখি বেনেবউ তবু নন্দিত সারা বনে
বকা খেতে হয় চুপ থাকা জনে, মন খারাপের ক্ষণে
গোলাপ বিরহী নয় মোটে নয় ভুল প্রেমিকের প্রতি
বনের গোলাপ একদিন হবে সাচ্চা প্রেমির কনে।
অকালের দেশ : উজাড় হচ্ছে প্রকৃতি ও বনভূমি
তাপ বেড়ে গেছে পৃথিবীর আর অগ্নি গিয়েছে চুমি
বোমারু-ঘাতক, শোষক-খাতক অরাজকতার দেশে
গোলাপের পরকাল; ইহকালে সুখে থেকো তুমি!