ভ্রমণ : লাউচাপড়া



 লাউচাপড়া
তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন

ভ্রমণ মানুষের অন্যতম প্রিয় শখ। আর ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত একটি স্থান রয়েছে যার নাম লাউচাপড়া পিকনিক স্পট যা অনেকেই হয়তো জানেন না। প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে কিংবা ঘন অরণ্য, পাহাড়ি ঝরনা, পাখির কিচিরমিচির ডাক, যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত মায়াঘেরা অঞ্চলে যেতে চায় না এমন মানুষ খুব কমই বোধ হয় পাওয়া যাবে।
আপনি যদি আপনার একাকিত্বকে দূর করতে চান, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান, প্রকৃতির সাথে যদি কথা বলতে চান তবে আপনার জন্য সেরা জায়গাটি হতে পারে লাউচাপড়া ইকোপার্ক । আপনি চাইলেই ঘুরে যেতে পারবেন এই ঐতিহ্যবাহী লাউচাপড়া দিয়ে। ছোটবড় পাহাড়ের সঙ্গে সারি সারি গাছগাছালির ঘন অরণ্যর মোহনীয় রূপ আপনাকে মোহিত করবে। আর সঙ্গে যদি পরিবারপরিজন, বন্ধুবান্ধব, প্রিয়জন থাকে তবে তো কথায় নেই। সুখের সাগরে ভাসতে থাকবেন কোনো বিকল্পই নেই। আবহাওয়া পরিবর্তন করতে চাইলেও আপনি চলে আসতে পারেন লাউচাপড়ায়।


কেন আসবেন লাউচাপড়াঃ

প্রতিটি জায়গা ভ্রমণ করার পিছনে যেকোনো একটি উদ্দেশ্য মানুষের থেকে থাকে। তেমনি লাউচাপড়া আসার জন্যও রয়েছে কিছু আশ্চর্যজনক কারণ যা আপনাকে অবশ্যই চমকিয়ে দিবে। আপনার ভিতর আগ্রহ জন্মাবে এখানে ঘুরে যাওয়ার জন্য। তবে এবার শোনা যাক সেই আশ্চর্যজনক ঘটনা কি !
প্রায় দেড়শ ফুট উঁচু অবকাশ কেন্দ্রের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে ৬০ ফুট উঁচু টাওয়ার। যেখানে উঠলেই দেখতে পাবেন দিগন্তে সারি সারি ছোটবড় সবুজ পাহাড়। চোখের পড়বে সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য এবং দেখতে পাবেন ভারতের ছোট শহর মহেন্দ্রগঞ্জ।সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কথা হচ্ছে এখানে একটি অদ্ভুত গাছ রয়েছে। গাছটির নাম হচ্ছে ধুতধুরাণী গাছ। প্রকৃতপক্ষে এ গাছের নামটি আঞ্চলিক বা উপাধি নাম। আবার কেউ কেউ এই গাছের নাম ঝুরঝুরাণী বলেও অভিহিত করে থাকেন। এই গাছের মূল রহস্য হচ্ছে অনেক বছর যাবৎ এ গাছের গোড়া হতে পানি আসছে। যা এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। বলা হয়ে থাকে এ পানি অনেক পবিত্র এবং এ পানি পান করলে শরীরের রোগমুক্ত হয় ও অনেক উপকার হয়। এই গাছের পাশেই রয়েছে একটি মাজার। অনেকেই এই মাজারে এসে নামাজ পরে, শিন্নি দিয়ে থাকেন ফলে মনের আশা পূর্ণ হয় বলে অভিহিত আছে। এই গাছের পানি দিয়েই এলাকার মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন ফলে তাদের কোনোপ্রকার নলকূপের প্রয়োজন হয়না। এছাড়াও চারপাশে রয়েছে রাবার গাছ। রাবার গাছের কষই হচ্ছে মূলত রাবার। রাবার কষ সংগ্রহ করে রাবার উৎপাদন করার কারখানাও রয়েছে এখানে। পুরো পাহাড় আর বনভূমি লাউচাপড়া ও ডুমুরতলা, এ দুটি মৌজায় বিভক্ত। কয়েকটা গ্রাম রয়েছে এখানে। এসব গ্রামে বাঙালিদের সাথে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ গারো, কোচ, হাজং অধিবাসী পরিবার বাস করে। তাদের জীবনযাত্রাও উপভোগ করার জন্যও আসতে পারেন লাউচাপড়ায়।

যেভাবে আসবেন লাউচাপড়াঃ

জায়গাটি বর্তমান ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলায় অবস্থিত। জামালপুর জেলা সদর থেকে ৩৮ কিলোমিটার ঠিক উত্তরে বকশীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বকশীগঞ্জ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত লাউচাপড়া। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে চলে আসতে পারেন সরাসরি জামালপুর জেলায়। তারপর জামালপুর থেকে বাস অথবা সিএনজি দিয়ে বকশীগঞ্জ বা সরাসরি লাউচাপড়ায় আসতে পারেন। লাউচাপড়া আসার পথে দেখতে পাবেন পাকা রাস্তার দুপাশে গ্রামীণ জনপদ, ফসলের মাঠ ও সবুজ বৃক্ষ।

পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থাঃ

যারা দূর থেকে এখানে আসে, তাদের জন্য জামালপুর জেলা পরিষদের পক্ষ হতে ‘ক্ষণিকা’ নামে একটি পিকনিক স্পট নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে থাকার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করা রয়েছে। তবে এখানে থাকতে গেলে আগে থেকেই অনুমতি নিয়ে আসতে হবে, তার জন্য রয়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। তাছাড়া ‘ক্ষণিকা’ স্পটের পাশাপাশি অবকাশ কেন্দ্রের পাশেই রয়েছে ‘বনফুল’ নামে বেসরকারি একটি রিসোর্ট। এখানে আপনি পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারবেন। লাউচাপড়া, অন্যান্য নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মতোই নিরাপদ। তাছাড়া এর সাথেই রয়েছে বিজিবি ক্যাম্প। সকল প্রকার সতর্কবার্তা তারা দিয়ে থাকেন। ফলে আপনি অনেকটা নিশ্চিন্তে এখানে কয়েকদিন ঘুরে যেতে পারবেন।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট