পদাবলি




ক্যানভাসার
ইলিয়াস বাবর

সিরিয়াসলি বলছি,
মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না লোকটার সাথে তোমাকে দেখতে- আরেকটু স্মার্ট, আরেকটু গর্জিয়াস কেউ

আরে এখন কী আর বোকাটি আছি- দিনভর বসদের আদেশে স্থির থাকে মাথা এ ডেস্ক, ও ডেস্ক- আর্দশ কেরানি বটে ফরমাল লুকে ঘেমে যায় বুক পেকে যায় বুকের চারা, মাথার লাট!

তিন সত্যি করে বলছি, খচ্চরটা তোমার সাথে যায় না মোটেও আগুনসুন্দরীদের চাই হারবাল কোম্পানির নায়ক নিদেনপক্ষে বাবা-ব্যবসায়ী।

ওসব বাদ দিয়ে অন্যপৃষ্টায় যাই তবে ওহে, পড়াশোনাটা কমপ্লিট করো চাকরিটা ছেড়ো না কিন্তু পারলে সেরে এসো হানিমুনপর্ব

আরে না না, নিজেরটা কি আর বলা যায়! বলছি না, তোমার যোগ্য ছিলাম তবে ও-ব্যাটার চেয়ে আমাকেই মানাতো ঢের বিশ্বাস না-হয় ধরে দেখো এই হাত!


আয়না কষ্ট বোঝে না
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম

দেখা যাক, আয়নাটা কতক্ষণ
ঝাপসা হয়ে থাকে?
আমিও চিরুনির দাবি পূরণে
বাধ্য থাকবো না।

মাথার কেশের গোড়া
আঁচড়ানো- কোনো দায় তো
আয়নাকে লিখে দেইনি...


যতবার শরতের রাতে নেমেছি
জোবায়ের মিলন

সমগ্র পাপের বোঝা নামিয়ে
যে রাতে মিশেছিলাম মনের খেয়ালে, সুখে, আনন্দে
সে রাতে শরতের রাত, জোয়ার হয়ে নেমেছিল উঠানে-
রাশি রাশি ফুল এঁকে ভরিয়ে দিয়েছিল বাড়ির দেয়াল,
ঘরের মেঝ, বিছানার সুতা
ড্রেসিংটেবিল, পানির ঝাড়।
নিষ্পাপ আঁতর গন্ধ সে রাতে ছড়িয়ে পড়েছিল মহল্লার
মোড়ে মোড়ে, সে গন্ধে দিশাহীন হতে দেখেছি
অনেককে।

-যতবার শরতের রাতে নেমেছি একা
নিঃসঙ্গতার সাথে সহবাসে
ততবার পৃথিবী বৃষ্টি ধৌত হয়ে উঠেছে জেগে
সহস্রাব্দের কালো ঝরিয়ে হয়েছে দেবীর শরীর।

-মৌন অন্ধকার খুঁড়ে কখনোই যাইনা ফাল্গুন অথবা
গ্রীষ্মের কাছে। সব নামে রাম থাকেনা, শুনেছি প্রবাদে।
নীলাম্বরী রাতেই পেয়ে যাই জন্ম সুখ, সাধের সুখ-
শরত ছেড়ে কোনো হাতেই রাখিনা তাপান্বিত হাত;
হয়ে উঠিনা শিশুতোষ অবুঝ মাতাল; পাপহীন হইনা-
আর কোনো রজনীর সাথে। শরতের কাছেই খুলে রাখি
পৃথিবীর সমস্ত বস্ত্র।







যমুনা যাত্রা
জান্নাতুল ফেরদৌস লিসা

দুই বছর প্রেমের পর
বাবা যেইদিন আমাদের চার হাত এক করে দিলেন,
পুরো এলাকা লাল নীল আলোয় ভরে উঠেছিলো।
বাবা খুব খুশি হয়ে আয়োজন করেছিলেন।
কত কল্পনা খেলা করছিলো ভাবনায়!
সেই যে বৃষ্টি ছুঁয়ে কথা দিয়েছিলে
প্রতি বর্ষায় ভিজবো আমরা,
মনে আছে তোমার?
আচ্ছা আমাকে দেয়া কথাটা হারিয়ে গেছে,
নাকি সেই বর্ষা?
হিসেবটা আজ বড্ড গোলমেলে।
আচ্ছা এখন কি তাকে নিয়ে বৃষ্টি বিলাস চলে?
বৃষ্টিকেই ভাসাও বুঝি প্রেমের জোয়ারে?
আচ্ছা, সে কি তোমায় প্রতিদিন এত্ত এত্ত পয়সা দেয়
তোমার মদের গ্লাস পূর্ণ করতে?
মনে আছে, বিয়ের ছয় মাসের মাথায়
একদিন সব গয়না নিয়ে গেলে,
যেখানে মায়ের শেষ স্মৃতিটাও বাদ যায়নি।
আচ্ছা, এখনো তোমার সাথে অফিসের সেই বস আসে-
তোমার বউকে ছুঁয়ে দিতে?
মনে আছে, আমি তাকে চড় মেরেছিলাম বলে
তুমি আমায় কি বলেছিলে?
মনে আছে, তাকে চড় মেরেছিলাম বলে -
কিভাবে আমার গলা চিপে দিয়েছিলে?
আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেখেছিলাম তোমার লাল চোখ
যেই চোখে একদিন প্রেম পড়েছিলাম,
পড়েছিলাম তোমার মনের কথা।
মনে আছে, আমার নিথর দেহটা
কেমন পাঁচ টুকরো করে বস্তায় ভরে যমুনার বুকে ফেলে দিয়েছিলে।
সেদিনো কেমন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো,
তুমি আমি আবারো ভিজলাম।
না পারলাম তোমায় কিছু বলতে,
না পারলাম তোমার হাতে হাত ছুঁতে।
আমার শরীরে প্রাণ থাকলে তোমায় এত কষ্ট করতে দিতামনা।
কত কষ্টে ভারি বস্তাটা টেনে নিয়ে যাচ্ছিলে।
বৃষ্টিতেও কেমন বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছিলো তোমার কপালে!
বিশ্বাস করো, নিজে গা ভাসাতাম যমুনায়।
আচ্ছা, সে কি তোমায় এত্ত এত পয়সা দেয়?
তোমার লম্পট বসের চাহনির উত্তরে মুচকি হাসি দেয়, মদের গ্লাস ভরে?
সুখেই আছো বলো?



ক্ষুধার্থ মানচিত্রের কবি
জাকারিয়া প্রীণন

তোমার সাক্ষাৎ পাবো এই খবর জানে ধানফুল
গুপ্ত বাতাস ফাশ করেছে তোমার আগমন
তোমাকেই আসতে হবে তোমার উপেক্ষণে
নদী পেরিয়ে জলাশয় ছাড়িয়ে
কাশবনে উড়া প্রজাপতিটির মতো।

তোমার সম্রাজ্যের আন্দামানে আমি সে
গৃহহারা সৈনিক যার পিছুটাননেই কোনো
আমাদের যুগল জীবনের সমান্তরাল পথ ধরে
এই ক্ষুধার্থ কবির মানচিত্রে তোমাকে আসতেই হবে।


শতজন্ম
সৈয়দ শরীফ

হতেও পারে জন্ম আবার;
আমাদের দেখা হয়ে যাবে হয়তো একদিন
এই চিরচেনা অস্পষ্ট পথে- গতজন্মের সকল
অপ্রাপ্তিগুলো মিটিয়ে নেবো শৈল্পিক প্রণয়ে;

সন্ধ্যার তন্দ্রালোই যেহেতু দিনের অন্তিমক্ষণ,
সেহেতু এর আগেই দেখে নেবো নিজেদের;
ঢুকে পড়বো দু’জন দু’জনায়, গভীর থেকে
আরও গভীরে- শীতলভাবে মিলিয়ে নেবো সবকিছু;

হারিয়ে যাবো তো সহসাই এই পৃথিবীর পথ হতে,
আসবো ফিরে আবারও হয়তো নবজন্মের স্রোতে।



উত্তর পরাগায়ন
টিপু সুলতান

ছন্দ মিলুক না মিলুক-
এসব আমাকে পাগল করে ফেলে
কবিতার নতুন শব্দরা
আবেগে ঠাসা ঘোরতর উত্তরণ মুখের অনাধুনিক!
কখনো লিখছি মানুষের মুখাবয়ব, কখনো লাশের;
এসবে কেউ কাছে টানে। কেউ দূরে ঠেলে-
প্রত্যেকদিন আকাশের মতন
শাদা খাতায় আঙ্গুল নেড়ে
কালো কালিতে রক্ত ঝরায়, অরণ্য ও ফুলের ওপর
উত্তর পরাগায়নে; দু’হাত মেলে ধরে
সোনা-রোপা ঐশ্বর্যের রেখো প্রেম
সংসারে বাতির দিয়াশলাই।

গহীন অন্ধকারময়
সিঁড়িভাঙ্গা কালোর ভেতর থেকে মুঠো করে আনে
চেনা অচেনা মুখগহ্বর
সকলকে বলে ভয়ার্ত সাপ নয়-
ফুল ফোটানোর হলুদ রেণু
ফের আহবান! হাজার বছরের অনন্য জগৎ...


দগ্ধ ক্ষরণ
মারুফ আহম্মেদ নয়ন

সেই নামে মুগ্ধ হই, অমৃত গরল ধারা ঝরে পড়ে অবিরল। ঝরে পড়ে সুগন্ধী ফুল, তিক্ত বিষাদ, হৃদয় গ্রন্থি থেকে ক্রমাগত ঝরে বিষাক্ত লালা। সেই নামে শুরু করি প্রথম, হৃদয়ে দগ্ধ ক্ষরণ, প্রণয়ের প্রথম পাঠ, প্রথম পরিচ্ছেদ। সেই নামে পাঠ করি, হৃদয়গত ব্যাকরণ, পাখির ডানা ঝাপটানোর দৃশ্যে লিখে ফেলি, এই রকম হৃদয়ে দগ্ধ ক্ষরণ, প্রণয়ের প্রথম অভিধায় তোমাকে পাই, আমি মেলে ধরি আমার সমস্ত অসুখ, দীর্ঘতর ক্ষয়ক্ষতি।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট