মানুষ
ইলিয়াস বাবর
নাছের ভাইয়ের অমন হৃদয়বিদারী কান্না-অশ্রুর সাথে ‘খোদা রহম করো’ নামক শব্দবন্ধ স্পষ্টভাবে শুনতে পেয়ে নিজের কান নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়ি আমি। এ কি আমাদের নাছের ভাই? জীবনের অর্ধেক আয়ু শেষ করা নাছের ভাইকে আমরা জানি খোদার অস্তিত্বকে অস্বিকার করা বান্দা হিসেবে। ম্যালাদিনের মেলামেশা, আড্ডাগল্পে নিজেকে নাস্তিক প্রমাণে ব্যস্ত রাখেন তিনি। বলেন, এসব ধর্ম-আল্লাখোদা ভীরুদের কাজ, আমার নয়। গ্রাম থেকে আসা, বাপদাদার রীতিতে মক্তবে কাটানো সকালগুলো তখন চোখে ভাসে, থাপ্পড় লাগায় দিলে। শিশুদের কণ্ঠ মিলিয়ে সূরাপাঠ, কোরান কি রেহালে বেখেয়ালে পায়ের স্পর্শ হলে চুমু খাওয়া, বুকে কপালে লাগিয়ে আদব প্রকাশের দৃশ্যের সাথে কোনভাবেই যায় না নাছের ভাইয়ের ভাষা। পুত্রের অকাল বিয়োগে অশ্রুপাত আর রহমের প্রার্থণায় আজকের নাছের ভাইকে আড্ডার নাছের ভাইয়ের সাথে মেলাতে কষ্ট হয় আমার। মানুষ কি তবে...
না না, আরেকবার অবশ্য নাছের ভাইকে এমন মোলায়েম আর প্রার্থণার ভঙ্গিতে পেয়েছি আসিফ ভাইয়ের বাসায়। খাবারদাবার, হাতিঘোড়া মারার পর কণ্ঠে গান তুলেছে তখন আসিফ ভাই। আচমকা লক্ষ্য করি, রুমের জিনিসপত্র কাঁপছে, এমনকি বসার পালঙ্কও! যার যার হুশ হাতে নিয়ে দৌঁড়াতে ব্যস্ত হলে আসিফ ভাই সাবধান করেন, দৌঁড়োলে হুড়োহুড়িতে পা ভাঙবে, পাঁচতলা থেকে নামতে গিয়েই দেখবেন জান খতম! ওমা, নাছের ভাই কই? এই ঘোর কম্পনে তার মতো মুরব্বি আমাদের দিশা না দিয়ে কই গেলেন! প্রায় অন্ধকারে, রুমের এক কোণে নাছের ভাই দেখি ভয়ে কাঁপছে। বিড়বিড় করে পড়ছে, ইন্নি কুনতুম মিনাজজোয়ালিমিন... কাছে আসতেই ইশারায় জানায়, আজান দাও, ভূমিকম্পের সময় আজান দিতে হয়! আসিফ ভাই গানের সুর অতীত করে আজান ধরে, দূর থেকেও শোনা যায় আজানের ধ্বনি, উলুর ধ্বনি। পরিবেশ শান্ত হয়ে এলে নাছের ভাইই আড্ডার মধ্যমনি, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে থাকি কতিপয় বেপথু মরদ। আজকের অশ্রুর সাথে ভূমিকম্পকে মেলাতে রুচিতে লাগে বেশ। সন্তানহারা পিতা নাছের ভাই, ব্যথায় ব্যাকুল আজ তার হৃদয়। নাছের ভাইয়ের অকালমৃত সন্তানের লাশ দাফন শেষে বাসায় ফেরার পথে কেবলি মনে প্রশ্ন জাগে, মানুষ কত প্রকার ও কী কী?