ধারাবাহিক উপন্যাস : রামবন্দনা : শাদমান শাহিদ : পর্ব ১১



 রামবন্দনা
শাদমান শাহিদ

নদীর স্্েরাত বাধা পেয়ে যেমন বিকল্প পথ খুঁজে বেড়ায়। ক্লাব বন্ধ হওয়ার পর আমাদের অবস্থাও তদ্রƒপ। আমরাও বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে কেউ বারে, কেউ জুয়ার আসরে, কেউ আবার পার্কের কোণা-কানা দখল করে গাঁজার শাদা ধোঁয়ায় উড়তে থাকি। একসময় অবস্থা বেগতিক দেখে চৈতন্যোদয় ঘটে। ভাবতে থাকি; এভাবে চলতে পারে না। যেভাবেই হোক নতুন দেবতার খোঁজ করতে হবে। এ-আশায় একদিন গিয়ে ভিড় জমালাম ক্ষণিকালয়ে। দেশ-খ্যাত এক রিমোট কন্ট্রোলারের বাসা। এবিসি গ্রুপের মালিক। শুনেছি তিনি নাকি কন্ট্রোলার থেকে প্রমোশন পেয়ে দেবত্ব পাওয়ার আশায় মহল্লায় কাজ করতে চান। শুনে আমরাও খুশি। আমরাও তাকে সাহায্য করতে চাই। বললাম, আপনি উপরে কথা বলে আমাদের ক্লাবটা খুলে দিন। আপনি আমাদের পাশে থাকুন। সামনের ইলেকশনে আমরা আপনার পাশে আছি। তারপর তিনি খুশি হয়ে উপরে কথা বলে ক্লাব খুলে দিলেন। আমরাও আনন্দে বাকুম বাকুম করতে করতে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। তাকে করি প্রধান অতিথি। তিনিও কেতাদুরস্ত হয়ে আসেন। ভাষণ দেন। এবং ক্লাবের উন্নয়নের জন্য একটা চেকও লিখে দেন। তখন আমাদের মনে হয়, ‘সত্যেন সেন স্মারক বক্তৃতা’টা এখন শুরু করা যায়। এবং এ-ব্যাপারে প্ল্যান-পরিকল্পনা করার জন্যে উদীচী’র অন্যতম সংগঠক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব করিম আজাদ সাহেবের কাছে যাই। গিয়ে দেখি তাঁর মন খারাপ। তাঁর বড়ো মেয়ে আব্বাস আলী ভূঁইয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষিকা ফাহিমা আজাদের চাকরি চলে গেছে। অপরাধ গুরুতর। সে-ও বাবার মতো সাহিত্যের শিক্ষক না হলেও ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে আমাদের শহরে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তারও রয়েছে বেশ পরিচিতি। নিজে নাটক লেখে, নাটকের নিদের্শনা দেয় এবং অভিনয়ও করে। এজন্যে অধ্যক্ষ সাহেবও কলেজের সহপাঠ্য বিষয়ক নানান কর্মকা-ে তাকে ডাকে। দায়িত্ব দেয়। সে-ও গুরুত্ব দিয়ে পালন করে থাকে। কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যেও একাধিক দায়িত্ব দিয়ে তার সাথে বাড়তি কাজ হিসেবে বলেছিলেন, ‘উৎসবে  একটা নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যে আলী আকবর সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম; কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হলো না। সময় পেলে তুমি একটু তাকে হেল্প করিও তো।’
আচ্ছা স্যার। এ-নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। এটাও হয়ে যাবে।
তারপর থেকে সে আলী আকবর সাহেবকে সাধ্যমতো সাহায্য করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছোটো একটা স্ক্রিপ্ট বাছাই করে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মহড়া চালিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসে। গ-গোলটা বাধে উৎসবের দিন। উৎসবের দিন সকালে অধ্যক্ষ সাহেব নাকি তাকে ডেকে নিয়ে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বসমূহের হাল-হাকিকত সম্পর্কে জানতে চান, তখন সে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কীভাবে সেট করা হয়েছে তার বিবরণ বলতে বলতে পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার স্ক্রিপ্টটা অধ্যক্ষ সাহেবের হাতে দেয়। তিনি তখন স্ক্রিপ্টটা উল্টে-পাল্টে এক নজর চোখ বুলিয়ে সবকিছু পছন্দসই হওয়ায় খুশি হন। তারপর স্ক্রিপ্টটা তার হাতে ফিরিয়ে দিতে দিতে বলেন, ‘অতিথিদেরকে যেসব মেয়েরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেবে, তারা যথেষ্ট সুন্দরী তো? স্মার্ট-সুন্দরী-টল ফিগার না হলে কিন্তু অতিথিরা মনঃক্ষুণœ হতে পারে। আশা করি, তুমি এদিকটাও খেয়াল রেখে কাজ করবে। কারণ বলা তো যায় না, কার ভাগ্যে কোথায় কী লেখা আছে। এমন তো হতে পারে আমাদের কোনো এক মহান অতিথির চোখে কোনো মেয়ে লেগে গেলো, দেখা যাবে, এই এক ক্ষ্যাপেই আমাদের কলেজ বাজিমাত। তুমি তো জানোই আমাদের এক মহান জেনারেল এভাবেই বিয়ে করেছিলেন। স্কুল নাকি কলেজ পরিদর্শন করতে গিয়ে টল ফিগারের এক সুন্দরী মেয়েকে দেখে ঠাসকি লেগে গিয়েছিলেন। একবার চিন্তা করো তো সে-প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এখন কেমন হতে পারে? এজন্যই বলি, দেখো এমন একটা চান্স নিতে পারো কিনা।’



অধ্যক্ষের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর সে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে কাজের সময় ঠিকই দেখায়। অতিথিদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নিতে স্মার্ট-সুন্দরী-টল ফিগারের ছাত্রী না খুঁজে অপেক্ষাকৃত বেঢপ-শ্যামলবর্ণা এবং গরিব মেয়েদেরকে বাছাই করে মঞ্চে ওঠায়। আর সে উপস্থাপনায় একেকজনকে সুন্দর সুন্দর বিশেষণে বিশেষিত করতে থাকে। এতে উপস্থিত দর্শকরা হাত তালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানালেও মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিদের মুখের অবস্থা নাকি হয়েছিলো দেখার মতো। শুধু তা-ই নয়, একজন বিশেষ অতিথি নাকি মঞ্চ ছেড়ে চলেও যান। নীরবে চোখ-মুখ কটমটাতে থাকেন প্রধান অতিথিও। দুটো ঘটনাই অধ্যক্ষ সাহেবের চোখে ধরা পড়ে। তারপর তিনি স্বাগত ভাষণ দেওয়ার জন্যে মাউথ-পিস হাতে নিয়ে উপস্থিত সবার সামনে কেবল থাপ্পড়টা ছাড়া বাকি সবই করেছেন। তারপরও শেষ হয়নি। বিষয়টা গিয়ে গড়ালো মন্ত্রী বরাবর। শেষে যা হবার নয় তাই হলো। শুনে খুব খারাপ লাগলো। কয়েকবার ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ। নিশ্চয়ই খুব শক খেয়েছে। তাই ফোনে আর চেষ্টা না করে রাতে বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি সে শুয়ে আছে। দুদিন ধরে নাকি জ্বর। এ-অবস্থায় কেউ মোবাইলে ডিস্টার্ব করুক তা সে চায় না। এজন্য মোবাইল অফ করে রেখেছে। আমাদেরকে দেখে বারণ করা সত্ত্বেও বালিশে ঠেস দিয়ে উঠে বসে।
জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছো?
দু’দিন ধরে জ্বর। এছাড়া ভালোই আছি।
শুনলাম—
আমরা কথাটা শেষ করতে পারি না। তার আগেই সে বলতে লাগলো—নারী হিসেবে ওটা আমার কর্তব্য ছিলো। আমি করেছি এবং এজন্যে চাকরি চলে যাওয়ায় বিন্দুমাত্র আফসোস নেই। বরং আমি আরো খুশি। অন্তত শুরুটা তো করতে পেরেছি।
আমরা বললাম, এমন একটা তুচ্ছ কারণে মানুষের চাকরি চলে যায়!
সে তখন মুখে ছোটো একটি হাসি ফুটিয়ে বলে, এ-দেশে তো এরচে তুচ্ছ কারণে প্রেসিডেন্টের প্রেসিডেন্সি পর্যন্ত চলে যায়।
এখন কী করবে?
কী আর করবো, আপনারা পাশে থাকলে কোর্টে মামলা করতে পারি।
আমরা বললাম, কোর্ট কি আমাদের কথা শুনবে? কয়েক বছর ধরে যদ্দূর বুঝছি, কোর্টের ওপরও কোর্ট আছে। সেখান থেকেই সব নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা কি ঘোড়া ডিঙিয়ে সেখানে পৌঁছুতে পারবো?
আমরা সবাই সোজা হলেই সব সম্ভব হবে।   
আমাদের তখন রহিম মিয়ার ‘সহালে উডিয়া আমি মনে মনে...’ বিটলামি মার্কা ছড়াটা মনে পড়ে। আরিফ-সোহাস-রেণু তারা ডাকতে থাকে, চলেন এইবার যাই। সুযোগ পেয়ে বেরিয়ে বিকল্প পথে হাঁটতে থাকি। পাছে ভয় হয়, যদি কুকুরগুলো আবার দেখে ফেলে? আবার যদি ঘেউ ঘেউ করতে করতে সামনে এসে দাঁড়ায়? তখন? তার চেয়ে বিকল্প পথে হাঁটি।

সেদিন বিকল্প পথে হাঁটতে গিয়ে গুরুজির সাথে দেখা হয়। তিনি আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ। আমাদের বিপর্যস্ত চেহারা দেখেই বুঝে ফেলেছিলেন। বললেন—‘মেডিটেশন করো। নিয়মিত মেডিটেশন করলে দেহ-মন সতেজ হবে। দূর হবে মানসিক যতো রোগ।’ এমন পবিত্র বাণী শুনে একদিন চোখ বুজে বসে গেলাম। দিলাম ডুব নিজের ভেতর। সে-সাথে বেড়ে গেলো মরমিবাদ চর্চাও। ‘সকাল বেলা ধনিরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা... ’ কিংবা ‘লোকে বলে বলে রে ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার...’  মনে মনে গুনগুন গাইতে গিয়ে দেখি গানগুলো বেশ মধুর হয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে টের পাচ্ছি, ওমর খৈয়াম-রুমি-জামি থেকে শুরু করে মির্জা গালিব-হাসন রাজা-মনোমোহন দত্ত নামগুলো বেশ আপন হয়ে আসছে। এজন্যেই কিনা জানি না, একদিন শুনি প্রফেসর আকমল হোসেন ইউনিভার্সিটির চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসায় বসে মরমি চর্চায় ডুবে গেলেন। আমরা গেলাম তাকে সাধুবাদ জানাতে। তিনি তখন হারমোনিয়ামে আঙুল চালিয়ে মির্জা গালিবের পরপর সাতটি গজল গেয়ে আমাদেরকে অবাক করে দিলেন। গজলগুলো শুনতে শুনতে তন্ময়তায় ডুবে গেলেও হারমোনিয়ামে আঙুলের অতিরিক্ত চাপ দেখে বুঝে ফেলেছিলাম যে, প্রফেসরের কোথাও ভীষণ ক্ষরণ চলছে।
বললাম, স্যার, চাকরিটা কি ইচ্ছে করেই ছেড়ে এলেন? নাকি...
আজ সেদিকে না গেলে কি হয় না?
হয়। হবে না কেনো? দেশে যখন ইউনিভাসির্টিই ছিলো না, তখনো তো চলেছে। আজ এতো এতো ইউনিভার্সিটিতে কতো নক্ষত্র আলো ছড়াচ্ছে। সেখানে এক নক্ষত্র খসে গেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়; তবে কিছু নক্ষত্র আছে, যেগুলো খসে গেলে সারা পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসে।
কীসের গুণে যে এসব বলো, বুঝতে পারি না। আমার চোখে তো তেমন কিছু ধরা পড়ে না।  শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করে পৃথিবীর কতো দেশে গেলাম, কতো ইউনিভার্সিটি ভিজিট করলাম, কোথাও এমন অসভ্যতা দেখিনি। ছাত্ররাজনীতির নামের এমন নারকীয় তা-ব, এমন বর্বরতা পৃথিবীর আর কোথাও পাইনি। ওসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কর্ম ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। খাও-দাও, থাকো আর পড়ো। গবেষণা করে নতুন কিছু পেলে জানাও। সরকার থেকে শুরু করে প্রিন্ট মিডিয়া-ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সব প্রস্তুত; সাথে তোমার সম্মানীও। আর এ-দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে...। কথা শেষ না করে তিনি চোখ থেকে চশমা খুলে ওটার কাঁচগুলো টিস্যুপেপার দিয়ে মুছতে লাগলেন।
আমরা দেখি স্যারের চোখে-মুখে আষাঢ়ের কদমগাছ। শাখা-প্রশাখায় অসংখ্য ফুল নিয়ে এমন এক পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেকোনো সময় ভাঙনের লাগাম টেনে ধরতে পারে। এ সময় কিছু একটা বলতে হয় মনে করে, যে-ই মুখ হা করলাম, তখন আমাদেরকে সুযোগ না দিয়ে তিনিই আবার বলতে লাগলেন—
প্রতিবারই বিদেশ থেকে ঘুরে এসে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করবো বলে প্রস্তুতি গ্রহণ করি, ঠিক তখনই এমন একটা কা- ঘটে যায়। তখন আর কাজ করার মন-মানসিকতা থাকে না। দলগতভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয় না। তখন কী আর করা হাল ছেড়ে দিই। যা কিছু করেছি, একা একা। একার পক্ষে ষোলআনা কাজ দেখানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এই যে সব্যসাচি রবীন্দ্রনাথ, তিনিও মৃত্যুর আগে তাঁর অক্ষমতার কথা স্বীকার করে গেছেন। দলগত না হলে কোনো গবেষণায়ই পূর্ণতা পাওয়া যায় না। আমিও পারিনি। আর বোধ হয় পারবোও না। এখন তোমরা আছো। তোমরা চেষ্টা করলে পারবে। তোমাদের মধ্যে অনেকেরই হাত ভালো। চিন্তার জগতও পরিষ্কার। তোমরা চেষ্টা করলে পারবে। পুরোপুরি নির্মোহ হয়ে কাজ করতে হবে। তবেই মানুষ গ্রহণ করবে। কোনো প্রকার ফাঁক থেকে গেলে বা রেখে দিলে আজ না হয় কাল ধরা পড়বেই। তখন? তখন কোথাও স্থান পাবে না। 
স্যার, আপনি চলে এলেন কেনো?
আমি যে কেনো চলে এলাম, এটা নিজেও জানি না। মনে হলো চলে আসা উচিত। তাই—। তোমরা তো বাহির থেকে ইউনিভার্সিটির বড়ো বড়ো বিল্ডিং দেখো আর মনে করো অনেককিছু হচ্ছে। প্রতি বছর হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে ইউনিভার্সিটির সনদ নিয়ে ইট-বালি-সিমেন্ট মেশানো ঢালাইয়ের মশলার মতো বেরিয়ে যাচ্ছে। যাকে যেখানে লাগাবে, সেখানেই নিজের শক্তির প্রমাণ দেবে। আসলে বিষয়টা তা নয়। কিছুই হচ্ছে না। না আল্লা না জাল্লা। এমনই এক ধরনের মেকি প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিয়ে মাঠে ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা হলাম বাবুরামের সেই দাঁতভাঙা সাপ। সব বুঝি। ফোঁস-ফাঁসও করতে পারি কিন্তু সময়মতো বিষ উগরাতে পারি না। আমাদের হাইব্রিড রাজনীতি সবকিছুকে চিবিয়ে খেয়ে চোবড়া বানিয়ে রেখেছে। ইউনিভার্সিটিতে চাকরি করেছি বটে; কিছুই শিখিয়ে আসতে পারিনি। সরকারি বেতন খেয়ে উল্টো আরো শিখে এসেছি। কীভাবে চাকরি করতে হয় চল্লিশ বছর বুঝিনি। গত পাঁচ বছরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। শেষ দিকে এসে এমন শিক্ষাই দিয়ে ছেড়েছে, জীবন তো জীবনই এমনকি কবরে যেয়েও এর রেশ কাটবে কিনা সন্দেহ। মনে রেখো, রাজনীতি বড়োটাকে আগে খায়। তারপর হাতের কাছে আর কিছু না পেলে ছোটোটার দিকে হাত বাড়ায়। গত পনেরো বছর যাবত কেবল দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ পেয়ে আসছে শিক্ষকরা। ক্লাসে যেয়ে স্টুডেন্টদের সামনে দাঁড়িয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করার ক্ষমতা নেই তাদের। অথচ তাদের কথায়ই চলতে হচ্ছে আমাদের। অনেক আগে চলে আসা উচিত ছিলো। কিন্তু যাবো কোথায়? ওটা ভেবেই এতোদিন সাহস করতে পারিনি। ওখানে লেগে ছিলাম বলে মাঝে-মধ্যে তোমরা যেতে, এখানে-ওখানে ডাক-টাক দিতে। এতে করে আর যাই হোক একটা সম্মানের ভেতর দিয়ে কোনো-মতে দিনগুলো পার করছিলাম। একা মানুষ, সব ছেড়ে বাসায় আশ্রয় নিলে হয়তো আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মতো নিঃসঙ্গতার গুলি খেয়ে আত্মহত্যা করতে হতো। জানো, ইদানিং আরেক রোগে ধরেছে। ঘুম হয় না। চোখ বুজলেই উল্টা-পাল্টা স্বপ্ন দেখি। দেখি আকাশ সমান এক ফণার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। নড়লেই বিষ উগড়ে দেবে।
মনে মনে বলি, এ-দুঃস্বপ্ন তো আমরাও দেখি। পরশু রাতেও একটা দেখলাম। মনে হলে এখনো শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। দেখলাম, বাংলা সিনেমার দুর্বৃত্ত চরিত্রের মতো পাঁচ-সাতজনের একটা দল দেশীয় অস্ত্র হাতে আমাকে তাড়া করছে। ওরা সবাই আমার চেনা-জানা। তারপরও মনে হলো আমাকে দৌড়াতে হবে।
(চলবে)


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট