কাবিনবিহীন প্রেম
আজাদ বঙ্গবাসী
জলের কারুকাজ ভেঙে যে জল উঠে যায়
মগ্নের নিরাকারে,তারে ফিরায় কোন রঙের পিয়াস?
ঐশ্বি বর্ণের ধুলো সমবেত ঘোর
কিংবা শূন্যের স্থায়িগহীনে- যে কঠিন ডুবে যেতে পারে
সেই তো শুদ্ধ প্রেমিক।
অথচ- সর্বভূক বাহুতেই অবুঝ জলের শিল্পকীর্তি
হয়ে যায় সেচ্ছাচারী নদী।
কুহক ধ্বনি মিশ্রিত শিৎকার অন্ধ বাহুর মোহনায়
গান হয়ে ফিরে অনন্ত ডানার আলোকে।
ইঙ্গিতের গালি চাপাবার আগেই; ফুল-ফলের তৃপ্ত সেবার আগেই
অজস্র চাহনি ছিড়ে ফেলছে কাবিনের পাতা।
পিতার রক্ত, মায়ের মা চিৎকার, গোল পৃথিবীর রহস্য
উন্মোচনে আগেই; কুমারী সৌকর্য প্রেমিকের আগুনে
প্লাবিত করছে ভরা মৌসুম।
কালস্রোত, মোছনা ওই ধুলোর কণা। ওই আড়ে বসেই হয়ত-
কোন এক যুবক যুবতী শুনাবে শেষ নদীগান।
দেরি
আশরাফুল মন্ডল
দেরি হয়ে গেলো অনেকটাই
দেরি করেছ তুমিও
আমারও দেরি হয়ে গেছে
দুজনের’ই দেরি যখন
দোষ কারোর একার নয় যখন
মান অভিমানের কথাই নেই
যাক গে হোক না দেরি
দু’জনেই জানি আরো ছাড়াছাড়ি
আরো কত দেরি হয় অনেকের
আর দেরি নয় এসো তাড়াতাড়ি
বসি পাশাপাশি
তাকাই পরস্পর
হাত ধরে গাই গান
দীঘিটির সিঁড়িতে বসে হিম মাখি
কুয়াশা ঘেরা চাঁদনী রাতে
মেপে নিই সম্পর্কের বহর
চাঁদ-ফুল
খায়রুল আলম রাজু
চারপাশ জুড়ে তীক্ষন আর্তনাদ
বুনোহাঁসের শঙ্কা ; শকুনের উৎসব!
দুখিনী মায়ের ক্রঁদনোন্মুখ!
ল্যাম্পপোস্টের পাশে লাশের ছায়া!
বিস্ময়কর দৃষ্টির তীক্ষèতায়;
শাড়ির প্রান্তে, খোকার লাশের প্রতিচ্ছবি!
দুখিনী মা শব্দহীন; নিশ্বাসমুক্ত!
অষ্ট প্রহরে, নবত্ব লাশের আগমন!
অভ্যবতা মানবের অশৃঙ্খল কান্ড,
রাষ্ট্রের রশ্নিহীন আইন আধিপত্য দায়ী!
ক্ষারিত হলো মুক্ত নভশ্চর!
ঝরো হলো চাঁদ-ফুল!
তবে আর কত কাল?
জবাব চাই! জবাব দাও...
বাক্যহীন প্রণয়
নাজমুল হুদা
রোজ রোজ তোমার মনের বারান্দায়
টুং টাং শব্দের আলো না পড়লে
ভেংচি মুখে ‘কিছু না'’ বলা বাক্য
রাগের বশে ছুঁড়ে মারো
জানি!
তুমি আজো কাউকে ভালোবাসো না।
অনিয়মের শেষ রেখায় আমি অবস্থান করলে
অভিমানের প্রথম বিন্দুতেই তুমি ঢলে পড়ো
জানি!
তুমি আজো কাউকে ভালোবাসো না।
অশ্রুমাখা দৃষ্টিতে কষ্টফুল ফেরি করে
যখন বলো, ঐ আমি ভালো না রে,
প্রবল আগ্রহে নিয়ে আমি শব্দ ছুঁড়ে
জানতে চেয়ে বলি, ঐ কি হলো রে?
-নাথিং
ইংরেজ শব্দের ঘ্রাণ শুঁকেই নিরবে নিথর থাকি,
নিরবতা কে পুঁজি করে
ওপাশে তুমি কি শত অভিমানের পুঁজি বাড়াও ?
জানি
তুমি আজো কাউকে ভালোবাসো না।
বহুদিনের রচিত
প্রেমিক প্রেমিকার জনপ্রিয় তুমি শব্দ,
হঠাৎ একদিন
কারো অজানা ভুলে হয়ে গেলে স্তব্ধ।
বলছিলে কি সেদিন ?
আপনি বলার গহিনে তুমি বলার অনুভূতি নিয়ে
তোমার মান অভিমান সব কিছু বুঝে নিতে।
জানি
আজো তুমি ভালোবাসো না
‘ভালোবাসি তোমাকে’
বাক্য কখনও কখনও ভালোবাসাও প্রকাশ করে না।
শ্বেত পিঞ্জর
কিশলয় গুপ্ত
জামাটা খুলবো, নাকি দেখাবো হাড় কখানা?
জীবনে শিল্প থাকে যাপনে মুন্সিয়ানা
মনের ঐ শিকল কেটে
কলিজা যাচ্ছে ফেটে
স্বজনে নিচ্ছে চেটে- শাহি খানা।
জীবনে শিল্প থাকে, দেখাবো হাড় কখানা!
জামাটা খুলবো নাকি, সাদা হাড় দেখবি যদি
সাঁতরে পার হয়ে আয় শ্রাবণে পোয়াতি নদী
তীরটা ভাঙতে পারে
তবু গাছ থাকবে পাড়ে
অন্ধের অন্ধকারে- এই অবধি।
সাঁতরে পার হয়ে আয় সাদা হাড় দেখবি যদি!
মৃত তাঁজা খায়
মজনু মিয়া
অষ্টপ্রহর বয়ে চলে বোজা
নিদারুণ করুণ কাহিনী
জীবনে বয়তে অক্ষম হলেও
এ খাবার খাইতে হবে।
চলতে চলতে আষ্টে পিষ্টে লেগে যায়
গায়ের চাম পড়ে যায়,
রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হলেও তার চলার শেষ নাই।
এমন জীবন বহন করে কেউ সুখী হয় না
তবুও জীবন চলে।
পৃথিবীর কোণে কোণে লুকিয়ে আছে
নির্মম এ যাতনার চিত্র,
মুক্তি চায় এ অবয়ব থেকে।
অভিশাপ
চিত্তরঞ্জন দেবনাথ
তুমি বরং অভিশাপ দাও
জল হয়ে যাই-পানীয় জল।
তোমার ভিতর যাবো,
কলিজা দেখবো হৃদপি- দেখবো
দেখবো মনের বল।
অভিশাপ দাও অভিশাপ দাও
জল হয়ে যাই-গঙ্গাজল
হাত ছুঁইবো পা ছুঁইবো
দেখবো তোমার সকল।
অভিশাপ দাও অভিশাপ দাও
জল হয়ে যাই-অশ্রুজল
চোখ দিয়ে সেঁচবো আমি
কান্না অনর্গল।
অভিশাপ দাও অভিশাপ দাও
জল হয়ে যাই-নোনতা জল
কাম শেষে ঘাম হয়ে
ঝরবো অনর্গল।
স্বতঃস্ফুর্তির ভাদর
নিঃশব্দ আহামদ
দ্যাখো, কাশের বাগান দোল খায় হিমের বাতাশ
সেজেছে কেমন নীলচে আকাশ
তুমি এসো আজ এই ভরা ভাদর দিনে
অনন্য এক রূপ সন্ধান- আকস্মিক জল স্নানে ।
সবুজ পসরায় উড়াউড়ি ফড়িং, আকুল আনন্দ সবুজ গাঁয়
জোছনার গানে উড়ে চলে ঈশানে নীল, ত্রস্ত পায়
বেলাভুম ছুঁয়ে উড়ে আসে মথিত হাওয়া-
রোদের ত্বকে উড়ো মেঘের নিয়ত ধাওয়া।
ঘাসের কাছে সকাল এসে ছুঁয়ে গেছে আদর
ব্যাকুলতা ছাপিয়ে হর্ষে কাঁপা এই যে ভাদর
তুলির আঁচড় হয়ে সেজেছে যেনো শান্ত এই প্রকৃতি
দৈন্যতা ঘুচিয়ে সবুজ সম্ভার, ফুলে-ফলে বিস্তৃতি।
বুকের পশমে সঞ্চিত উষ্ণতা, ছুঁয়ে যেতে চায় বুকের নরোম
হাস্নাহেনার পেলবতায় ভাঙিতে চায় প্রেমিকা শরোম
এমনো আনন্দ রচে বেখেয়ালে নিঃশব্দের চোখে
ঊচ্ছ্বাসের স্বতঃস্ফুর্তি হয়ে এস্ট্রেজেনের গন্ধ দিও মেখে।
কালাজ্বরের দাউ দাউ
দ্বীপ সরকার
এইখানে একটা জীবিত নরক আছে-
বুকের ঠিক মাঝখানে
যন্ত্রণার ইপিল গাছটা কো-অপারেট
হতে হতে বংশানুক্রমিক হচ্ছে
আমি বোধের রাঙচিতায় মুখস্থ্য করছি
এইসব ইপিল গাছ-
এভাবেই বহুকাল আমার বুকে
চাষা হচ্ছে বংশ পরম্পরার কালাজ্বরের দাউ দাউ
কালাজ্বরের দাউ দাউ
ভয়ানক কর্পোরেট- জ্বলতেই থাকে।
এইসব দৃশ্যাবলী দেখে কেউ কেউ আমার গলায়
ভড়িয়ে দিচ্ছে তাবিজের ঠোস
প্রকারান্তরে আমি গলায় ঝুলিয়ে রাখছি মরা মানুষের হাড়গুল্ম।
নারীর প্রেমিক
পূর্ণিমা নকরেক
আয়না তুমি ভিন্নরূপ
প্রশান্তি জগতের মধ্যমণি!
বুকে অসীম প্রেমাময়-
জগতের সবাই যখন
তোমার মুখে তাকাই,
তখনি নম্র হয়ে
চোখের পাঁপড়ি সরিয়ে
বুকে তুলে নাও...