একগুচ্ছ কদম
আহমদ মেহেদী
এই আমি-
জীবনের এপিঠ-ওপিঠ ভাবতে ভাবতেই
দীর্ঘ ৩০ বছর পার করে দিয়েছি
কখনো রাতের মাতাল সমীরণে,
কখনো রাতের নিস্তব্ধতায়
আবার কখনো বরষা রাতের জ্যোৎস্না- পরীর নিমন্ত্রণে
জেগে থাকে আমার দু’টি বিক্ষুব্ধ চোখ
এই আমি, জেগে আছি ঐ দূর পৃথিবীর পথ চেয়ে।
এই আমি ও জীবনের-
জন্মবিলাপ, জন্মপাপ, জন্মবিলাস, জন্ম-টান তোমার প্রতি
যোগ বিয়োগের সন্নিকটে
আমি আমার রাজ্যের সবকটি দ্বার
খুলে রাখি প্রহরী বিহীন
কেননা- আমি জেগে থাকি, আমাকে জেগে থাকতে হয়।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় পিতা ও সংসারের টানা পোড়েন নিয়ে ভাবতে হয়।
তাদের মুখে একটু হাসি দেখলে শঙ্খ রাতের পাখিরা
আমাকে আপন মনে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়,
‘হে বৎস,এবার একটু ঘুমাও- তোমার রাজ্যের আজ আমরা প্রহরী।
তবুও ছুটে চলা, তবুও জেগে থাকা তুমি
যদি আস এক গুুুচ্ছ কদম হাতে আবার রাতের কামনায়।
হোলি
আয়মান বারী
সবুজের বুক চিরে আজ রক্ত হোলি উদযাপন!
এই কি আমার স্বাধীন বাংলা?
ক্ষমতার কাছে ন্যায্য দাবি হয় যেথা লুণ্ঠিত!
আন্দোলনের গণ জোয়ার কেড়ে নিচ্ছে অত্যাচারীর ঘুম,
লাঠিয়ালেরা নেমে গেছে, চলছে গুম আরখুন।
খুঁজে পাবেনা স্বজন তোমায়
ফিরবেনা আর ঘরে চোখ রাঙানো স্বৈরাচারী
পাঠাবে ঐ কারাগারে।
গায়ের জোরে, পায়ে ঠেলেহচ্ছে গদি লুট
মেনে নেওভাই, দেখে যাও শুধু- রবে কত আর চুপ!
আমার ভাইয়ের রাঙা খুনে রাজপথ রঞ্জিত,
হায়েনার দল খামছে ধরেছে মানচিত্র ক্ষত-বিক্ষত!
বোনের চাপা আর্তনাদে আকাশ-বাতাসভারী
ঋণের হিসেব মিটিয়ে সব তবেই ফিরব বাড়ি।
বাংলা মায়ের দামাল ছেলে নেও শপথ হাতে রেখে হাত
গুড়িয়ে দাও ক্ষমতার চূড়া ভেঙে দাও বিষদাঁত।
তুমি নামে বিচ্ছেদ
সুমন আহমেদ
তুমি নামে কত বিচ্ছেদ- কেবল শুধু আমিই জানি...
বসন্ত ক্ষণে অশান্ত মন- হৃদশূন্য পাতাঝরা বৃক্ষের মতো।
চৈত্রের হাহাকার বয়ে যায় অবিরাম শূন্য হৃদয়ে!
বিষণœ রোদ্দুরে পুড়ে পুড়ে ছাই অসহায় বুকের জমিন;
একফোটা সুখের বৃষ্টির প্রত্যাশায় কতনা আহাজারি।
বেলা-অবেলায় ভাঙে হৃদয়কূল বেদনার ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ।
পাখি মন এখন আর সন্ধ্যা হলে ফেরেনা আপন নীড়ে।
বর্ষা চোখ শ্রাবণ ধারায় ভিজিয়ে দেই রাত্রির শহর; রাতের নিয়ন
আলোতে খুঁজে বেড়াই চিরচেনা মুখ- সেই হারানো সুখ;
না পাওয়ার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে-
প্রতিক্ষণ অবুঝ মন করে যায় তোমার অভিসার।
বুকের জমিনে তিলে তিলে গড়ে উঠা তরুশাখা দুমড়ে মুচড়ে
দূরে নিক্ষেপ করে- বিচ্ছেদ নামের কালবৈশাখী তুমুল ঝড়।
স্বপ্ন উঁকি দিক
আবু ইউসুফ সুমন
বিবর্ণ মুখের গুমোট বাধা একটি নিস্তব্ধ রাতে হেসে উঠে সকল অজানা কষ্টগুলো
চিন্তার আবদ্ধ করিডোরে ভাবনারা নিশ্চল হয়ে যায় অমাবস্যার অন্ধকারে।
হাজারো পূর্ণতা আর অপূর্ণতার সমীকরণ ভেসে উঠে নিষঙ্গ মনের সুগভীর অন্তরালে
ভালো না থাকার উষ্ণ নিশ্বাসে ভারী হয়ে উঠে চারপাশের মৌন পরিবেশ।
প্রিয়জনদের পদচারণায় উদাও হয়ে যাক চোখ বাধা অপ্রত্যাশিত এই মুহূর্তগুলো
সদা-হাস্যজল কাছের মানুষগুলোর স্বপ্ন উঁকি দিক প্রশান্তির খোলা বাতায়নে।
বৈরাগ্য বাসা না বাধুক ধর্মীয় কোনো বিধানের বিচ্ছিন্নতায়
বিশ্বাসীদের হৃদয় প্রতিটি ক্ষণে পরিপূর্ণ থাকুক ফজরের সু-মিষ্টি বাতাসে।
যৌবনের নবারুণ
পরান জহির
প্রতিজনমেই যৌবনের পায়ে আমি এঁকে দিই
দুরন্ত দূর্বার ছবি। বুকে আঁকি সমুদ্রী জলছবি।
যৌবনের কণ্ঠে ফোঁটাই নিযুতকোটি ফুলকলি
যৌবনের আকাশে উড়াই মুক্ত পাখির উড়াল।
যৌবনের ললাটে আমি নবারুণের দৃশ্য আঁকি।
যৌবনের দীপ আমায় পথ দেখায় ধুঁধু আঁধারে
পথ ভুলিনা আমি-পথ দেখাই। পথ সৃষ্টিও করি।
পায়ে পায়ে গর্জে উঠে শিকল ভাঙার নৃত্য-সুর
থেমে যেতে জানেনা যৌবন- যেতে হবে বহুদুর।
জয়
মিসির হাছনাইন
তেইশ বছরের জীর্ণ খাতা উল্টে দেখি-
আমার জয়ের পাতা শূন্য।
শেষ রাতের চোখ বুজে জীবনের সাদা পৃষ্ঠায় ওড়ে যাচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো....
সাদা মেঘ ওড়ে অসীম আকাশে। শ্রাবণের বৃষ্টি ঝরছে,
একি! ভিজে গেছি আমি। পুকুর জলে ভাসছে নীল আকাশ, নীলপদ্ম ফুটে আছে পাশে।
একটা পানকৌড়ি দুপুর জলে উড়ে গেল,
জীবনের যৌবন মধুময়, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ জয়।
অন্ধকার
সৈয়দ শরীফ
ভাবো,
কোনো এক নদীর মাঝখানে একটি
নৌকো- একটি তুমি একটি আমি;
আমাদের চারপাশ কী বিদঘুটে অন্ধকার !
কয়েকশো কোটি তারা স্বাভাবিক নিয়মে জ্বলছে-
কিছু চামচিকে বা বাঁদর উড়ে যাচ্ছে
আমাদের চোখের ঠিক তেরো হাত উপর দিয়ে;
(অন্ধকারে খুব ঝাপসা লাগছে দেখতে)
তুমি ভাবতে পারো,
আমাদের চারপাশ সত্যিই খুব অন্ধকার;
যেহেতু অমাবস্যা চলছে- যেহেতু এখানে
বলা হয়নি ল্যাম্প অথবা জ্বলন্ত কুপি’র গল্প।
তুমি ভাবতেই পারো- আমরা ভেসে চলছি
এক অন্ধকার রাত ও কূল নেই এমন
কোনো নদীর স্রোতে; খুব সহজেই ভাবতে
পারো এসব, যদি এরচেয়ে নিকষ কোনো অন্ধকার
তোমার ভাবনাশক্তিতে আঁচড় কেটে না যায়...
নারী সিরিজ-১
পার্থ কর্মকার
শেষ বিকেলের আকাশ সুন্দর কিন্তু রহস্যঘন।
ঠিক যেন একটা লাল পেরে কাঁচা হলুদ শাড়ি পড়া নারীর দেহ কাঠামো।
নীল আকাশ পরিবর্তন হয়, পরিষ্কার আকাশ মেঘ বাদলের জালে ভরে যায়।
পরিবর্তনের এই খেলা আমি বুঝতে পারি না।
বুঝতে পারি না আমি নারীর দেহের আঁকাবাকা জালের ভেতর সেই রহস্যঘন মনকে।
যা আমাকে আবার সেই আকেশের কাছেই আছড়ে ফেলে।
আকাশ -নারী
সব সুন্দরই কি একই ভাবে রহস্যঘন?
সবুজের দোসরেরা
সাদিক আল আমিন
শ্রাবণকে কখনো জরাজীর্ণ বাস্তুহারা হতে দেখেছো ?
উদোম হৃদয়ে তার বস্ত্রহননের বেদনা বোঝো ?
এতোদিন ওম’ভরা গানে গেয়ে গেছো করুণতম আস্ফালন!
এখন ফিরতি পথে টাকনুভরা জল, আলক্ষেত পদতলে পাড়ি দাও...
শাড়ি গুটিয়ে নাও হাঁটু অবদি; বর্ষা রূপসী...
এবার আমাদের কথা হোক জারুল-জামরুলে
ভেজা কদমের পাতায় পাতায়, শব্দ হোক, উন্মাদনায়।
আমাকে কোনোদিন শীতল রক্তে দেখতে পাবে হয়তো,
আবার তখন ভেবো...
সবুজ পাতারা কতো ভোরে গোসল সেরে রেখেছে সেদিন!
যান্ত্রিকতা
সা’দ সাইফ
স্থির মানবতা; ধেয়ে আসছে কাষ্ঠ পুতুল।
থেমে নেই রোবটের পাষ- আচরণ।
নির্বিকতা অতীতের চৌচালা ঘরে পিদিম জ্বালায়।
অন্ধকার ঘরে আলোর স্ফূরণ; তবু থেকে যায় আঁধারের ছাপ।
আসমান ভরা দেয়া, মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে চতুর্পাশ।
নেই কুকুর বিড়ালের সেই পাঠ্য প্রবাদ।
নির্জীব প্রাণে বাজে কোলাহলের ডামাডোল। থেকে থেকে বের হয় মিষ্টি পাশবিকতা।
আঁধারের কাছে আলোর চিঠিতে চাঁদরাত দেখার সুকরুণ আবদার।
তবু দিনশেষে বেঁচে রয় সিক্ত আবেগের হলুদ খাম।
নষ্ট স্বপ্ন
রুহুল আমিন রাকিব
দগ্ধ অনলে পুড়ে আমার যতনে গড়া ভালোবাসা।
তুমি সেই ধোঁয়া উড়াও পুবাল হাওয়ায়
শীতল করো তোমার দেহ।
অনলে পোড়া অবয় দেখে একটুও মায়া হয়না তোমার মূর্তি ময় পাথর মনের।
আমার আত্মা পোড়ার গন্ধে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বনের পাখি;
থমকে দাঁড়ায় গাছের সবুজ পাতা।
থেমে যায়, নদীর ঢেউ, অবিরাম ডুকরে কেঁদে উঠে পাহাড়ের ঝর্না;
অথচ তুমি সেই কবেই ভুলে গেছ আমার কথা,
সোনার বালিশে মাথা রেখে,
রূপার পালঙ্কে ঘুমাও তুমি।
আর আমি আজও হৃদয় পোড়ার দগদগে ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছি-
একটি সোনালি সকালের অপেক্ষায়।
প্রতিশ্রুতি
শোয়াইব শাহরিয়ার
প্রতারক স্মৃতি মগজে হানে প্রণয়ের ঢেউ
ময়ূর উড়ে আসে;
ঝড়ো হাওয়া হয়ে নিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে!
খুব ভোরে বেদনার ঢেউ বরফ হয়ে আসে
তখন দু'হাতে জ্বালাই প্রতিশ্রুতির আগুন—
থৈথৈ বৃষ্টি নামাই;
ঠোঁটজুড়ে আঁকি নৈসর্গিক তৃপ্তিবিধান।
তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে না তুলতেই নামে বিষণ্ণতা
বলি, বিষণ্ণতার করিডোরে ঢেলে দাও পৌরাণিক মদ—
দ্যাখো, কিভাবে আমরা ভালোবাসার সর্বোত্তম চূড়ায় উঠছি...