লেখা আর হল না
বিনায়ক ব্যানার্জী
বসেছি একটা কলম আর কাগজ নিয়ে। অনেকদিন কিছু লেখা হয়নি লিখব বলে। গ্রীষ্মের দুপুর, নাওয়া খাওয়া সেরে জানলার দিকে চেয়ে সুখটান দিচ্ছি। ভাবের কোন অভাব নেই, অভাব শুধু ভাবের। বাইরে চাঁদি ফাটা রোদ। গাছগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে ওদের মাথাতেও ছাতা ধরতে হবে। মাটির রাস্তা, জনপ্রাণীও নেই। যতদূর দেখা যাচ্ছে সব ঘরগুলোর জানলা দরজা বন্ধ। আমি একাই বোধ হয় জানলা খুলে বসে আছি। তবুও কেউ উঁকি মারছে না।
ভিতরে ফ্যানটা ঘটাং ঘটাং করে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। ওকে আসলে বার্ধক্যে ধরেছে। কদিন হল একটা নতুন টিকটিকির আমদানি হয়েছে। বুঝেছিলাম ওর চেহারা দেখে। একটু বেশী’ই বড়। অবশ্য এসেই একটার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। ছেলে না মেয়ে জানি না কিন্তু। দু’জনে মিলে এখন বইয়ের তাকের অলিগলি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
নাহ্- অনেকক্ষণ হয়ে গেল তবুও একলাইনও লেখা হল না। বসে থাকাই সার। স্মৃতিগুলো মনে হচ্ছে ধূলো পড়ে গেছে। কেউ আর ধরাই দিতে চায় না। ধুর; কি যে করি! এতো সময় কাটানোই দুরহ ব্যপার। আজকের পেপারটাই আবার উলটাতে লাগলাম। সেই এক খবর পলিটিসিয়ান গুলোর বড় বড় ভাষণ, আন্দোলন, হ্যান করব ত্যান করব। বিপদ সাধারন লোককটার। কোন দল ঠিক আর কে ভুল এটা বিচার করতে করতেই জীবন উদ্ধার। ফুটবলের খবরও কিছু নেই। বদলে ইয়া বড় একটা জাপানী তেলের বিঞ্জাপন। লেখা আর আমার হচ্ছে না।
জানলার দিকে তাকিয়ে দেখি ঈশাণ কোনে কালো মেঘ জমাট বাঁধছে। কালবৈশাখী। গাছগুলোকে যেন আরও সবুজ দেখাচ্ছে। কি দ্রুততার সঙ্গে মেঘগুলো জম হচ্ছে। ওরাও কি আন্দোলন করতে আসছে নাকি! মুহূর্তের মধ্যে গোটা আকাশ কালো করে ফেলল। একটা ঠান্ডা হাওয়ায় মনপ্রাণ শীতল হয়ে গেল। গাছগুলো মাথা দোলাতে লাগল। তার মানে ওরাও আন্দোলনে শামিল। শুরু হল ধূলোর ঝড়। হঠাৎ প্রচন্ড বেগে মেঘ ডাকল। সত্যি বলছি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
হঠাৎ মনে পড়ল একটা মুহূর্ত। অনেক বছর আগেকার, আমি তখন স্কুলে পড়ি। সেদিনও ছুটির পর বাড়ি ফেরার সময় কালবৈশাখী শুরু হয়েছিল। ভয় পেয়ে দাড়িয়ে ছিলাম একটা খড়ের চালার মধ্যে। সেখানে একটা মেয়েও ছিল, অপরিচিত, মনে হয় আমার বয়সী। সেদিনও মেঘ ডেকেছিল। মেয়েটা ভয় পেয়ে এগিয়ে এসেছিলো আমার কাছে। না জড়িয়ে ধরেনি। কিন্তু আমি তার গরম নিশ্বাস অনুভব করেছিলাম।