পদাবলি




আহ্লাদের প্রেমের
মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

প্রেমের জ্বালায়
আহ্লাদে আটখানা; এখনও নদীর পাড়ে;
আবার বৃক্ষের গোড়ায়
বসে শুধুই কাব্য লিখছে আর লিখছে।

কিছু বলতে গেলে
চেঁচামেচি করে ; গলা ফাটিয়ে দেয়।
ধারেকাছে ঘেষতে দেয়া না; কাউকে!

সারাক্ষণ শুধু একা একা
বকবক করে যায়; লোকের মুখে পাগল ;
নামে খ্যাতি অর্জন করেছে।

ক’দিন ধরে  নিজেকে কবি
ভাবতে শুরু করেছে ; তাই খুব শান্তশিষ্ট
পরিবেশে লুকোচুরি খেলে নীলিমার মতো।

কখনো আবার একান্তেই
চাঁদের সাথে নিজের; ভাব বিনিময় করে প্রতিনিয়ত
সংসার ভুলে গিয়ে মগ্ন থাকে।



কোলাজ
সবর্না চট্টোপাধ্যায়

১. ভোর

স্নিগ্ধ মৃদু ছটা
ছুঁয়েছে মাটি
কোলাহল ঘুমন্ত শিশু। শুধু ঘুম নেই
মা হারা চারটে কুকুর ছানার

২. মা

চারটে মেরি বিস্কুট খেতে দিয়েছিলাম।
তুলতুলে ঠান্ডা জিভ চেটে নিল
হাতের তালু
গোলাপি লালার টোকায় নড়ে উঠল ফাঁপা কলসি!
তারপর সূর্য ওঠা আবার।
পাশের দোলনায় ঝাঁপাল একফালি রোদ।
সাদা বিছানাটা হঠাৎ আরও সাদা

ছেড়ে গেছে দু’দিন হল!

৩. জীবন

কেঁপে উঠি। বিদ্যুৎ পড়ে মাঝরাতে
ভূমিকম্পে তছনছ হই রোজ!
তবু তো সাজানো আবার
সপ্তাহে দু’টো সিটিং!
লড়াই শেখাচ্ছেন দু’জন মনোবিদ


রাঙা
ছাদির হুসাইন ছাদি

রাঙা দিনে রাঙা তোতা।
রাঙা জনে-জন।
রাঙা মুখে রাঙা কথা
রাঙা মনে-মন।

রাঙা প্রেমে রাঙা ফুল।
রাঙা ফুলের গন্ধ।
রাঙা কথায় রাঙা সুর
রাঙা সুরের দ্বন্দ্ব।

রাঙা ঠোঁটে রাঙা বঁধু।
রাঙা বঁধুর হাসি।
রাঙা চোখে রাঙা মামা।
রাঙা মামার বাঁশি।

রাঙা জলে রাঙা নৌকা।
রাঙা নৌকার পাল।
রাঙা ঘরে রাঙা টিন
রাঙা টিনের চাল।

রাঙা খেলা রাঙা মেলা।
রাঙা রঙিন দেশ।
রাঙা আমি রাঙা তুমি
রাঙা জাতি বেশ।


শিকড় ছেঁড়ার ইচ্ছা
মাহফুজা মতি জেরিন

হলদে রঙের ঘাসের তলে আছি
তোমার সবুজ আমায় ছুঁতে মানা,
বনের যত হাওয়া রীতির জোরে
তোমার আমার ফুরালো আলপনা।

জারুল গাছে দুইটি টিয়ের খুশি
আমার স্মৃতির কারণ হলো খুব,
কথা ছিল জোড়াপাখির মত
জোছনা নিশির বুকে দিব ডুব।
প্রথম যেদিন আমার ঘওে এলে
বৃষ্টি মেখে ভিজে হলে চুপ,
মুগ্ধ আমি পলক ছাড়া চেয়ে
চোখের নিচে জল ফেলেছি টুপ।

পায়ে আমার বনের শিকড় বাঁধা
তবু এ মন উথাল জোয়ার তুলে,
ইচ্ছে কওে শিকড় ছিঁড়ে ফেলি
তোমায় নিয়ে থাকি জারুল তলে।




ভ্রমের উপাখ্যান
নুশরাত রুমু

মৌন সময়ে পূর্ণিমার পটভূমি থেকে
ভেসে বেড়ায় অহমের ছায়াগুচ্ছ,
কর্ষিত চিন্তাতরঙ্গে রচিত হয় ভ্রমের উপাখ্যান।
সারি সারি অমানুষের বুনো ঘ্রাণে সংক্রমিত সততার চিন্তাশক্তি,
দুর্মতির লোকালয়ে অক্লেশে বয়ে চলে খেদের বাতাস।
মানবিক ব্যঞ্জনার জালে ঘুমন্ত বিবেক ছলকে ওঠে কখনো সখনো।
লিপ্সার গুল্মে প্যাঁচিয়ে সত্যের চামচে নুনও চাখে কেউ কেউ...

শরীরী ভারতবর্ষ
অতনু নন্দী

এখানে ভীষণ আঁধার, সাদা বককেও ঘন লাগে
শরীরের মাঝ বরাবর দু’টি পাহাড়ী টিলা সযতেœ ঢেকে রেখেছি বহুবার,
অনুকৃতি চাঁদ খাবে বলে আগুন নিয়ে
ছুটে এলো অক্টোপাস,
মহা উল্লাসে চটকে খেয়ে গেলো, হারালাম মেয়েবেলা!

হে ঈশ্বর প্রতিধ্বনি দাও, আমি ছিঁড়ে ফেলি দিক চক্রবাল।

রক্তে ভেসে যাচ্ছে আজ জপের মালা,
আমিতো আমার কুসুম হারিয়ে
দেখতে চাইনি শরীরী ভারতবর্ষ!


মানুষ রোগ
নাজমুল হুদা

মানুষ নাই, অথচ মানুষ
সারি সারি ধানের মতো লেপ্টালেপ্টি করে
গ্রীষ্মের সাপ সঙ্গমের মতো গড়াগড়ি খেলে।

মানুষ নাই, অথচ মানুষ
রমনীর কলসভর্তি জলের মতো উপচে পড়ে
সজ্জিত পুতুলের ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে।

মানুষ নাই, মানুষ আছে -
স্বল্পমেয়াদি মূল্যে এন্টিসেপ্টিকের ঘ্রাণ নেয়
পাঁতি হাসের দাম্পত্যে সুখে জলাধারে ভাসে
লাল পিঁপড়ার বিষাক্ত বিষে বিষিয়ে তোলে।

অতঃপর, আমার কোনো মানুষ থাকে না ;
মানুষের মতো একাধারে কল্পনায় বুঝে উঠি
উদয়-অস্তের আলো ডিঙে নীল আমরা ভোগছি
মানুষরোগে- ব্যথায়, শূন্যতায় এদিক ওদিক কাতরাচ্ছি।


আমার এখন ভাল্লাগে না
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র

আমার এখন ভাল্লাগে না তোমার ছায়া
আমার এখন ভাল্লাগে না তোমার মিছে কন্ঠ আর মায়া।
তুমি আমার হতে অযুত মাইল দূরে থাকো
তুমি স্বৈরাচার, তোমার মিছে প্রেম দূরে রাখো!

আমার এখন ভাল্লাগে না সাদা শার্ট পরা
আমার এখন ভাল্লাগে না পড়তে প্রেমের ছড়া।
তুমি আমার স্বপ্ন ছায়াতলা হতে বহুদূর
তুমি করো মিথ্যাচার; তাই আমার মন সেতারে অন্য কামিনীর সুর!

আমার এখন ভাল্লাগে না শুনতে তোমার হাঁসির শব্দ
আমার এখন ভাল্লাগে না আর তোমার অশ্লীল সব গদ্য।
তুমি আমার নীল কলমের চির অরাতি
তুমি থাকো খুব কষ্টে আর নষ্টে; আমি আনন্দে মাতি।

আমার এখন ভাল্লাগে না আটটা-পাঁচটা অফিস
আমার এখন ভাল্লাগে না তোমার কথা, তাতে যতই থাকুক আমিষ।
তুমি আমার পায়ের ধুলো আর ‘কালসাপ!’
তুমি ঠোঁটকাটা, তোমায় ভাবলে পাপ হবে পাপ।

আমার এখন ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না আর তোমার প্রেমের ছাঁপ!

বেদনার জল
আশিক আহমেদ

শরীরের ভাঁজে ভাঁজে মিশে থাকে আমার বেদনা স্মৃতি;
ক্যানভাসে ভেসে উঠে তোমাদের গোলাকার মুখ।

বাবা-মায়ের শূণ্যতায়-
ঘেরা থাকে আমার চারিপাশ।

দাদার নিজ হাতে রোপন করা জামতলায় রেখে গেছে-
সমাধির শেষ ঠিকানা

যেখানে সমাধি হয়ে আছে
আমার বংশের পরম্পরারা আমাদের ও একদিন হতে হবে।

বাবা-মা
তোমাদের সমাধির পাড়ে দাড়ালে-
নিজের অজান্তে দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে আমার বেদনার জল।

দিব্য সাক্ষী হতে হাসনাহেনা গাছটিও ভুল করে না

আরো ও সাক্ষী হয়ে থাকে
ওই নীল আকাশ।

পরিবর্তন
সতী

এখন আর প্রভাত বেলায়
কপাল জুড়ে আমার চুমু লাগেনা
ঘুম জড়ানো দুচোখ খুলেই আমার অভাব জাঁগেনা!
এখন আর সাঁঝের বেলায়
আঁধার খেলায় সরল এ মুখ আঁকেনা
আমার কথা ভেবে কারো
জল দুচোখে থাকে না!
বৃষ্টি সুরে বজ্র ধ্বনিই ভয় কাটাতে জাপটে ধরার
সে আশ আজ আর হাসেনা
পদ্ম ঝিলে পবন দুলে
স্বপ্ন ডিঙ্গা ভাসেনা!
এখন আর সতী বলে মিষ্টি কন্ঠে
আমায় কেউ আর ডাকেনা
ভালোবেসে এখন সে আর
বুক পাজরে পোষে না!




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট