অফিসে যাবার বেলায় আমি আর বাবা
আকিব শিকদার
হাতে পায়ে লোশন মালিশকালে মনে পড়লো বাবা তো এ বস্তু মাখেনি কখনো গায়ে...! নাকে মুখে ছাকা ছাকা সরিষার তেল মেখে বলতেনÑ ‘খাঁটি জিনিস, বড়ো উপকারী, চোখে ধরলে আরও ভালো’। সে যুগের মানুষ ছিলেন কি না, এ যুগের কি বুঝবেন...! অথচ লোশন তখনো দোকানে পাওয়া যেতো ঠিকই।
জেল মাখা চুলগুলো পরিপাটি আঁচড়াতে গিয়ে দেখি আগের আয়নাটা ছিলো না এতো বড় আর এতো মসৃণ...! ছিলো একফালি ভাঙা কাঁচ, তাতেও আবার প্রতিবিম্ব বিকৃত। বাবার মাথায় শুষ্ক চুল, চিরুণীর দাঁত কটা বিলীন। নতুন যোগানোর আয়োজন নেইÑ টানাপোড়নে এমনি সাদামাটা বেঁচে থাকা।
রিক্সাতে উঠে যাই অনায়াসে, শুধাই না ভাড়া। বাবা ঠিকই দাম দড় করে চড়তেন, যেন যাত্রা শেষে ধূর্ত চালক একটি টাকাও বেশি খসাতে না পারে। কংবা রাজ্যের পথ পায়ে হেঁটেই দিতেন পাড়ি, তবু পকেটের টাকা পকেটেই থেকে যাকÑএই যেন পণ।
সেন্টের ঘ্রাণমাখা জামা, সিগারেট ফুকে ফুকে চলি। পথের ভিখারি যেই হাত বাড়িয়ে চায় দুটো পয়সা, অমনি দিলাম রাম ধমক, অকথ্য গালি গালাজ তো আছেই। বাবা তাকে ফেরাতেন খালি হাতে, তবু ধমকটা দিতেন না। আর তার কাছে সিগারেট ফুকা মানে অকাতরে অর্থ ওড়ানো। অল্প আয়ের লোকÑ বাউন্ডুলে তোড়জোড় তাকে কি মানায়...?
অফিসে ঢুকেই দেখি বেশুমার মক্কেল প্রতীক্ষা গুণে। চেয়ার টেনে বসতেই টেবিলের আবডালে চলে আসে টাকা। ঘুষ বললে মন্দ শোনায়, বাঁ হাতের কারসাজি ডাকি আমি এ-কে। এমন সুপটুতা দুষ্কর ছিলো বাবার পক্ষে। অতি ভীতু ব্যক্তির দ্বারা হবে কেন এতো নির্ভীক সওদা...!
হয়তো তিনি বলতেনÑ‘এ কাজ করার আগে মরণ দিও প্রভু, তবু ঘুষ নয়।’
বাবাটার লাগি বড়ো মায়া হয়, জীবনটা তার কোনদিন উপভোগ করা হলো না। সে যুগের মানুষ ছিলেন কি না, এ যুগের কি বুঝবেন...!
ফিসারি লিংক রোড,
হারুয়া, কিশোরগঞ্জ।