নির্বাসিত কন্যা
সুজন বিশ্বাস
কন্যা,
তুমি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে আছ!
তোমার অহংকারী ওই দুর্গম পাহাড়
অতিক্রম করার দুঃসাহস করিনা;
তাইতো তোমার কাছে চিরকালই আমি-
শীতার্ত রজনীতে ঝরে পড়া
শুকনো পাতার মতো দৃশ্যমান।
অথচ, তোমার ওই
অভিমানের পাহাড় ডিঙিয়ে,
সমতলের ঋজুপথে নেমে আসলেই দেখতে;
তোমার জন্য অজস্র চন্দ্রিমায়-
একশো আটটি নীলপদ্ম একত্র করেছি।
সেই সমস্ত যূথবদ্ধ নীলপদ্মরাজি,
আমাদের স্পর্শের আশায় আজো অপেক্ষমাণ।
মৃত্যুদুয়ার
দীপঙ্কর পাড়ুই
মৃত্যুদুয়ার বুঝি ধাপে ধাপ এগিয়ে আসে। মুখাগ্নি যে হাতে হয় ‘ঘি’ এর গন্ধ তোমার শেষ স্পর্শ পেয়ে
ভাসিয়ে দেয় ছাই।
ধূনোগন্ধে ঈশ্বর বুঝি। হাড়ের প্রবল সফলতার পর
জলে ভাসে অধিকার। তুমি তো মিশবে বলেই জন্মেছ
থিতু সময়ে একখ- আলো এসে পড়ে। আবছা হয় স্মৃতিগন্ধ। তর্পণে জুড়োয় ক্ষতের মুখ, মনে পড়ে বাঁচার কথা কি কি বলেছ
শূন্যগোলা
মোঃ রফিকুল ইসলাম
তোমার প্রস্থানে সুনামির তোড়ে ভাঙ্গে
আমার ঘর গেরস্থালি; মরি শূণ্যতায়।
বাতাসের আদ্রতার গভীর চুম্বনে
জং ধরেছে লাঙ্গলের ফলায়।
হালচাষহীন আবাদি জমি বিষাদে কাঁদে,
ফসলের মাঠে দুষ্টু বাতাস দেয় না দোলা।
গুহার আঁধারে পোঁকায় কাটে বীজপত্র,
করুণ চিৎকারে আর্তনাদ করে শূণ্যগোলা।
এক পশলা বৃষ্টি
পার্থ কর্মকার
মেঘগুলো এখন শুধু আমার ভেতরেই বৃষ্টি হয়ে ঝরবে।
কাঁদবে, অশ্রুজলে সিক্ত হবে, হয়তো কখনো অগ্নি উদগিরণ করবে,
তবুও সব আমার থাকবে।
আমার অগ্নি কিংবা বৃষ্টি কোনটাই আর তোমার ঠিকানায় কড়া নাড়বে না।
যদি কখনো তোমার ওড়না ছুয়ে যায় আমার কান,
শুধুমাত্র তখনি এক পশলা ভিজিয়ে দিয়ে যাব তোমার চুল।
জীবন্ত প্রেমিকা চাই
সোলায়মান আহমাদ
স্বপ্নের গন্ধমাখা ভোর দিয়ে মৃত্যুর শেষটানে হৃদয়
প্রথম নিশ্বাসে অক্সিজেনের সাথে লেগে থাকে
ত্রয়োদশ তম প্রেমিকার শরীরী অগ্নিউল্কা!
নেকড়ের মত আঁচড় কেটেছিল ঠোঁটে
আর স্বপ্নের উপর হয়েছিল গ্রেনেড হামলা!
কিন্তু এখন হৃদয় বেঁচে উঠেছে
এবার একটা জীবন্ত প্রেমিকা চাই
যেখানে থাকবে তাজা শরীরী ঘামের গন্ধ,
ঠোঁট কামড়ালে বের হবে রক্তের মত মধু
অঙ্গের আড়ালে থাকবে সুন্দরের লালসা
চোখের আগুনে বার পুড়বে হৃদয়।
রাত্রিতে উন্মেষ হবে রূপবদলের স্বৈরশহর
গরম দুধে নয়
গরম রক্ত পানে ভেসে যাবে অপেক্ষার যন্ত্রণা
আকাশ হয়েছে ক্লান্ত
এবার ঘুমাবে সূর্য
এবার একটা জীবন্ত প্রেমিকা চাই।
একগুচ্ছ প্রেমাণুকাব্য
ফখরুল ইসলাম ওমর
১.
ইচ্ছেগুলো কিচ্ছে হয়ে
উড়ে গেলো আকাশে,
স্বপ্ন আমার ফ্যাকাসে-
একবার পেলাম ভালোবাসা
প্রিয়ার শাড়ীর বাতাসে!
২.
ইচ্ছেরা সব ডানামেলে
উড়ে মিছে ছন্দে,
কামনাটাই মন্দে-
আবার প্রেমিক হতে চাই
প্রেমের সুধার গন্ধে!
৩.
মন মননে নিত্য তুমি
উঠাও প্রেমের সুর,
তুমি আমার হুর-
কাছে ডাকো নেশার চোখে
থেকোনা আর দূর!
৪.
নীল মনের নীলাঞ্জনা
নীল তোমারে ডাকে,
সুখ ঝাঁকে ঝাঁকে-
কাছে এলেই বুঝতে পাবে
প্রেম বলে কাকে!
৫.
কামনারই অন্তমিল
থাকে যদি রোজ,
নিতে হয়না খোঁজ-
যখন তখন প্রেমাদরে
নেয়া যায় তার ডোজ!
৬.
কোথায় তুমি ডাকো আমায়
আরো কাছে আসতে,
তোমায় ভালোবাসতে-
ভালোবাসার সুখ মোহনায়
তোমার বুকে ভাসতে!
প্রেম
মিসির হাছনাইন
কোন এক কৈশোরে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমার ভিজে গেছে শরীর।
মায়ের ছায়ায় মাথা নিচু করে দৌড়ে লাফিয়ে পড়ি নদীর ঘোলা জলে।
নদীর কিনারের মস্ত বড় লাল সূর্যটা মাথায় দিয়ে, শ্রাবণের আকাশে
থেমে থাকা ঘন কালো চুল বাতাসে উড়িয়ে,
বুকের উপরের কালো তিল গোলাপী ওড়নায় ঢেকে, নদীর নরম ঢেউের মতো স্মিত হেসে,
ভেজা ঘাসের উপর আলতা পায়ে জীবন্ত হেঁটে...
আমার ঘোলাটে লাল চোখের
সম্মত পৌরষ নিয়ে দৌঁড়ে যায় কুমারী হরিণী...
হঠাৎ, একদিন অনুভব করলাম আমার শরীরে
ঢুকে গেছে হেমলক বিষ। যৌবনের ঈশ্বরকে সেজদা করে-
মরে যাওয়ার আগে আমি যেন না দেখি আমার হরিণীকে কোন হিং¯্র বাঘের মুখে।
সমাপ্তি
মহসীন আলম শুভ্র
আমি নেই
আমাকে পাবে না আর খুঁজে
রেখে গেছি কবিতা হারানো দিন আর তোমার চিবুকে।
আয়নায় দাঁড়াও যদি অথবা শীতলক্ষ্যার তীরে
দেখো, জুঁই ভেসে যায় ভারত বা রামায়ণে।
নদীমুখী হও, ঋতুমুখী হও
সন্ধ্যার দীপ, তপ’ নত হও যত
কিছুই হবে না আর
চোখের যন্ত্রণায় এপার-ওপার
বিসর্জনের সিলমোহর শেষে আর কি থাকে অধিকার?
আমি নেই; আলবিদা, আলবিদা।
ভালো থেকো, হে শাহাজাদি গুলবাহার!
এখানে ক্লান্তির ছুটি
সৌর শাইন
আঁধারকে কুৎসিত বলার অধিকার আমার নেই।
তুমি কি জানো না কিছু অসীম সুখ তৃপ্তি ওখানেই লুকিয়ে থাকে,
লাজুক আলো তাই মুখ ফিরিয়ে থাকতে ইচ্ছুক!
পৃথিবীর আহ্নিক গতি, এখানে ক্লান্তির ছুটি!
তন্দ্রা বিলাসে সুখ উদযাপন।
জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ তেষ্টা ওখানেই সঞ্চিত,
এসো, সে তেষ্টা করি দূর!
খোঁজ
রূপক সেনগুপ্ত
আমার আমিকে খোঁজ করছিলে?
চাইলেই পেয়ে যেতে লাল শরীরের ওপর
উজাড়ের জজ্ঞ চলে যেখানে দিনরাত
তারই পাশে বসে সবটা দেখছি এক ধ্যানে
চিৎকার করে বলে উঠি ফালতু নাটক, পর্দা পড়ে
নতুন দল নীল, লাল,কমলা, রকমারি পোষাক
পর্দা ওঠে নাটক শুরু
ভালো হবে নিশ্চিত এটা
ওই চিৎকার, ফুঁপিয়ে কাঁদছে বুঝি শ্রাবণ
সেদিন বাড়িতে কাজ ছিলো খুবই জরুরি
পাস কাটানো ছাড়া উপায়
সেদিন পেয়ে যেতে বাড়িতে খোঁজ করছিলে ?
ছারপোকা ও আমি পাশাপাশি শুয়ে থাকি
পোকা হয়ে থাকি
আমার আমিকে খোঁজ করছিলে!
তুমি
হাবিবাতুল উম্মে
আমাকে ভেঙ্গে চুরমার করলে
যা পাই-
তার সবটুকু’ই তুমি ।