বিজন সংলাপ
মৌসুমী চক্রবর্তী ষড়ঙ্গী
কিছুতেই আজ ঘুমোতে পারছে না প্রত্যুষ। জানালাটা খুলে আকাশের
দিকে তাকালে ধরা পড়ে তারাময় রাতের নানা ইশারা। আকাশের অথৈ বুকে তারাদের
ঝিলমিল শরীরের নানা রূপটান। কাল ৫ই সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস। দেখতে দেখতে
দশটা বছর কোথা থেকে কেটে গেছে ভাবতেই অবাক লাগে প্রত্যুষের। সারা রাত জাগবে
বলে ইচ্ছে করেই আজ ঘুমের ওষুধ আর খায়নি প্রত্যুষ।
মনে হচ্ছে এই তো সেদিন ঘুমের ঘোরে অস্পষ্ট আওয়াজটা শুনতে পেয়ে
তাড়াতাড়ি উঠেছিল প্রত্যুষ। দেখেছিল বাথরুমের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে
প্রিয়া। একটুও সময় নষ্ট করেনি সে। ডঃ বিশ্বাস বলেছিলেন হার্ট অ্যাটাক। অবাক
হয়েছিল প্রত্যুষ , মাত্র বিয়াল্লিশ বছর বয়সে ! তাছাড়া প্রিয়াকে বেশ ফিট
বলা যায়। হাই ব্লাড প্রেশার , হাই কোলেস্টরল কিছুই তো নেই। কোন আর্টারি
ব্লকেজ আছে কি ? সেটা অবশ্য জানা নেই। তবে তার লক্ষণ তো থাকবে , তাও তো
কখনও নজরে আসেনি।
প্রত্যুষ ও প্রিয়া পরস্পর পরস্পরের ছোট বেলার বন্ধু। স্কুল
কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটি সবই ওরা একসঙ্গে করেছে। ছোট থেকেই প্রিয়া খুব
হাসিখুশি ও একটিভ। অপূর্ব নাচতে পারত প্রিয়া। নিজের যোগ্যতায় একটি নামকরা
নাচের স্কুলের ইনচার্জ পর্যন্ত হয়েছিল সে । বিদেশেও বেশ কয়েক বার নাচের
প্রোগাম হয়েছে তার।
বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে “ সূর্যকিরণ নাসিং হোম ”। টানা চারদিন
প্রায় অনিদ্রায় কেটেছে প্রত্যুষের। ডঃ বিশ্বাসকে সবাই ভগবান ডাক্তার বলে
মানেন। সেই হাতের স্পর্শেই হয়ত পরের দিন থেকে প্রিয়াকে একদম সুস্হ মনে
হচ্ছিল। ৫ই সেপ্টেম্বর প্রিয়ার ডিসচার্জ -- ঠিক এমনটা বলে দিনকয়েকের জন্য
ছুটিতে গিয়েছিলেন ডঃ বিশ্বাস। সাবধানতা হিসাবে পরবর্তীতে প্রিয়াকে শহরে
নিয়ে গিয়ে কয়েকটি টেস্ট করাতে হতে পারে এমনটা বলে গিয়েছিলেন।
ডিসচার্জের খবরটা শুনে খুব ঝকঝকে দেখাচ্ছিল প্রিয়াকে। মোবাইল
খুলে হোয়াটস এ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ঝটপট কিছু ম্যাসেজ সেন্ড করার পর
প্রত্যুষকে বাড়ি পাঠানোর জন্য একেবারে অস্হির হয়ে পড়ে সে। প্রত্যুষের হাতটা
ধরে রীতিমতো জেদ করতে থাকে প্রিয়া ,
_ তুমি এক্ষুনি বাড়ি যাও প্রত্যুষ। এ ক’দিন তুমি একটুও ঘুমোওনি , তোমার চোখ মুখের কি অবস্হা হয়েছে দেখেছ ? বাড়ি গিয়ে ফ্রেস হয়ে টানা ঘুমোও। প্লিজ দেরি কোরো না একদম , কাল সকাল- সকাল চলে এসো। তোমার মনে আছে ? কাল সন্ধ্যায় নাচের স্কুলে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান আছে। আমি না যাওয়াতে এ ক’দিনের রিহার্সাল সব রেখাদি একাই সামলেছেন। তুমি আর দেরি কোরো না।
মুখে হাসি নিয়ে প্রত্যুষ বলেছিল ,
_ আচ্ছা ঠিক আছে। আমার জন্য এতকিছু ভাবতে হবেনা তোমায়। সবই আমার মাথায় আছে ।
_ তুমি এক্ষুনি বাড়ি যাও প্রত্যুষ। এ ক’দিন তুমি একটুও ঘুমোওনি , তোমার চোখ মুখের কি অবস্হা হয়েছে দেখেছ ? বাড়ি গিয়ে ফ্রেস হয়ে টানা ঘুমোও। প্লিজ দেরি কোরো না একদম , কাল সকাল- সকাল চলে এসো। তোমার মনে আছে ? কাল সন্ধ্যায় নাচের স্কুলে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান আছে। আমি না যাওয়াতে এ ক’দিনের রিহার্সাল সব রেখাদি একাই সামলেছেন। তুমি আর দেরি কোরো না।
মুখে হাসি নিয়ে প্রত্যুষ বলেছিল ,
_ আচ্ছা ঠিক আছে। আমার জন্য এতকিছু ভাবতে হবেনা তোমায়। সবই আমার মাথায় আছে ।
দেরি করেনি প্রত্যুষ। নার্সিং হোম থেকে ফেরার পথে রাতের রুটি -
তরকা আর পরের দিনের জন্য পূজোর ফুল , দুধ এমন কিছু টুকিটাকি কিনে ঘরে ঢোকে
সে। সব কিছুই ছিমছাম। বুঝলো কাজের বউ পাশের ঘর থেকে চাবি নিয়ে ঘরদোর সব
পরিষ্কার করে রেখে গেছে। অনেকদিন পর নিজের ঘর , ব্যালকনিময় সবুজ গাছ, তার
প্রিয় বিছানা - বালিশ পেয়ে বেশ ফ্রেস ফিল করছিল প্রত্যুষ। অসম্ভব
ক্লান্তির পর গভীর ঘুুম আসাটা স্বাভাবিক । চিন্তা তেমন ছিল না বললেই চলে।
তাই সঙ্গে সঙ্গে ঘুমও এসে হাজির হল।
হঠাৎ ফোনের রিংটা বাজতেই ধড়ফড় করে উঠে বসে প্রত্যুষ । ভেবেছিল
হয়ত অনেক বেলা হয়ে গেছে। ঘড়িতে তখন ঠিক চারটে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে
নাসিং হোম থেকে ফোন ,অপর প্রান্ত থেকে সিস্টার পলির চেনা কন্ঠস্বর ,
_ অনেক চেষ্টা করেও আমরা কিছু করতে পারিনি। ফারদার অ্যাটাকে পেসেন্ট এক্সপ্যায়ার করে গেছে , আপনি একদম দেরি করবেন না। এক্ষুনি চলে আসুন - - - । বাকি কথাগুলোর আর কিছুই শুনতে পায়নি প্রত্যুষ। সবটা যেন ঘটে যাওয়া এক দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল।
_ অনেক চেষ্টা করেও আমরা কিছু করতে পারিনি। ফারদার অ্যাটাকে পেসেন্ট এক্সপ্যায়ার করে গেছে , আপনি একদম দেরি করবেন না। এক্ষুনি চলে আসুন - - - । বাকি কথাগুলোর আর কিছুই শুনতে পায়নি প্রত্যুষ। সবটা যেন ঘটে যাওয়া এক দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল।
কঠিন সত্যের প্রহার যে কি পরবর্তীতে তা প্রতিটি মুহূর্তে জীবন
প্র্যতুষকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে। আত্মীয়স্বজনের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ
নেই আসলে এখন যোগাযোগ রাখতেই কেউ চায় না। ঐ মাঝেসাঝে কেবল টেলিফোনের
যোগাযোগ ঐটুকুই।
মাল্টি স্টোরি বিল্ডিং -এর ফোর্থ ফ্লোরের সুসজ্জিত ঘরটা ও তার
সবটুকু শূন্যতা প্রত্যুষকে যেন গ্রাস করতে থাকে। এখন কেবল নৈঃশব্দের সাথে
সখ্যতা আর শুধু বিজন সংলাপ। সমস্ত খুনসুটি যেন লুকোচুরি খেলায় হঠাৎ করে
লুকিয়ে পড়েছে । এমনটা হবে প্রত্যুষ ভাবেনি কখনও। তবে এটা বুঝেছে সম্পর্কের
যোগ- বিয়োগ বা গুন- ভাগের ফলাফল সব সময় ঠিকঠাক মেলানো যায় না। মনে বিরামহীন
স্মৃতির হিল্লোল নিয়ে প্রত্যুষ বেঁচে আছে । চারিদিকে প্রিয়ার শান্ত নিরালা
প্রেম। নির্জন প্রাঙ্গনে এমন ক্লান্তি প্রহর কাটাতে কাটাতে প্রত্যুষের মতই
হয়ত বেঁচে আছে হাজার হাজার মানুষ। তারা এখন প্রত্যুষের প্রেরণা।
ওয়ারড্রব থেকে পাজামা পাঞ্জাবীটা বের করে রাখে প্রত্যুষ।
সঙ্গে প্রিয়ার নিজের হাতে ডিজাইন করা ম্যাচিং উত্তরীয়। শিক্ষক দিবসের এই
দিনটা প্রিয়ার নাচের স্কুলেই কাটায় প্রত্যুষ। এখন স্কুলটা অনেক বড় হয়েছে আর
নামডাকও হয়েছে প্রচুর। প্রিয়ার দেখা স্বপ্নগুলো তাকে যে সত্য করে তুলতেই
হবে। এক গুচ্ছ চাঁপাফুল রেকাবিতে সুন্দর করে সাজিয়ে প্রত্যুষ প্রিয়ার ছবির
নীচে রেখে মুখ তুলে বলে ,
-- কি , পছন্দ হয়েছে ? তোমার মত সাজাতে পেরেছি তো ?
.-- কি , পছন্দ হয়েছে ? তোমার মত সাজাতে পেরেছি তো ?
Mousumi Chakraborty Sarangi
BL No 11A / 203 , Sector _ 34
Mansaravor Complex
Kamothe , Mansaravor
Navi Mumbai 410209
Maharashtra
Phone number , 8976841307