বৃক্ষ প্রীতি
কাজী তানভীর
কাজী তানভীর
আমাদের গ্রামের অদূরে মাঠ-নদীর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত বৃক্ষটিকে
কেন যেন সবাই ভালোবাসে। ফকফকে রোদেলা দুপুর কিংবা গোধূলির পড়ন্ত বিকেল
কিংবা জোছনাভরা রাতে কাউকে না কাউকে দেখতে পাই বৃক্ষতলে।
মাঝি নৌকা বেঁধে এসে বসে সেখানে । কৃষকের ঘামঝরা ক্লান্ত শরীর বিশ্রাম নেয় সেখানে । বাঁশিওয়ালা রাখালের সুর বাজে সেখানে। ব্যর্থ প্রেমিকের বিরহের জল ঝরে সেখানে। নব্য প্রেমিক প্রেম সন্ধান করে সেখানে। কবির কবিতা জন্ম হয় সেখানে। পাখিরা বাসা বাঁধে সেখানে। নদীর ঊর্মিমালারা পাল তুলে সেখান থেকে। যখন কেউ থাকে না, সবাই আপনালয়ে ফিরে যায় তখনও বৃক্ষের প্রেমালাপ শুনি জিন-পরী ও ভূতদের সাথে।
মাঝি নৌকা বেঁধে এসে বসে সেখানে । কৃষকের ঘামঝরা ক্লান্ত শরীর বিশ্রাম নেয় সেখানে । বাঁশিওয়ালা রাখালের সুর বাজে সেখানে। ব্যর্থ প্রেমিকের বিরহের জল ঝরে সেখানে। নব্য প্রেমিক প্রেম সন্ধান করে সেখানে। কবির কবিতা জন্ম হয় সেখানে। পাখিরা বাসা বাঁধে সেখানে। নদীর ঊর্মিমালারা পাল তুলে সেখান থেকে। যখন কেউ থাকে না, সবাই আপনালয়ে ফিরে যায় তখনও বৃক্ষের প্রেমালাপ শুনি জিন-পরী ও ভূতদের সাথে।
আমিও কম কী! প্রেমে পড়ে গেলাম বৃক্ষটির। কী আছে এমন তার
মাঝে! তাকে কেন ভালো লাগতে হবে সবার! তাকে কেন ভালোবাসতে হবে আমার! কোনোদিন
তো সে বৃক্ষ বলেনি যে, "আমি তোমাকে ভালোবাসি " না আমি বলেছি! কী আজব
কাণ্ড,কীসব অনুভূতিগুলো কুড়েকুড়ে খাচ্ছে আমার ভেতরটাকে, নিজেও টের পাচ্ছি
না।
তবে বৃক্ষটিকে খুব ভালোবাসি। তা চিরসত্য।
তবে বৃক্ষটিকে খুব ভালোবাসি। তা চিরসত্য।
ডাক্তারের ঔষধগুলো যেমন দৈনিক তিনবার খেতে হয়, সুখের পানে!
ঠিক তেমনি প্রাত্যহিক আমাকে তিনবার করে বৃক্ষতলে যেতে হয়। প্রীতির টানে! সে
তো কথা বলতে পারে না যে, তার সাথে কথা বলব। সে তো ধরতে জানে না যে, তার
হাতখানি ধরবো। উপায়হীন প্রেমিকের আর কী করার! তবে, সর্বদা রবের কাছে দোআ
করি যাতে তিনি যেন আমার মতো ইন্দ্রিয় শক্তিগুলো তাকেও দেন। সেও যেন বলতে
পারে, বুঝতে পারে, শুনতে পারে, সবকিছুই যেন করতে পারে! আনমনা হয়ে তার পিটে
পিট লাগিয়ে বসে থাকি সারাক্ষণ। তার দুলদুল পাতার নাচ দেখি অপলক দৃষ্টিতে।
যখনি বাতাসের সাথে হেলে-দুলে খেলে যায়, তখনই আমার মনে প্রফুল্লতার ঢেউ উঠে!
এই যেন সে সর্বস্রষ্টার ইন্দ্রিয় শক্তি উপাহার পেয়েছে! না....না..!আজগুবি
ভাবনা আমার। বাতাস বন্ধ তার নড়াচড়াও বন্ধ! নির্বাক চোখের কথাগুলো কী বুঝ
না হে প্রিয় বৃক্ষ! একটু কথা তো বল! হ্যাঁ, না, কোন সাড়া নেই!!!
বাবা বলেছেন গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে শহরে। কারণ আমার অনলাইন
আবেদনে কলেজ সিলেক্ট হয়েছে টাউনের। গ্রাম থেকে কলেজে আসা-যাওয়া বেশ
কষ্টের। যে কোন মূল্যেই আমার গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে যানযট শহুরে। সব
ঠিকঠাক চলে যাব শনিবার ফজরের নামাজের পর। শনিবারগত রাত অর্থাৎ জুমাবার
রাত্রি গিয়োছিলাম বৃক্ষের কাছে। জানতে চেয়েছে আমার প্রতি তার অনূভুতিগুলো,
জানাতে চেয়েছি আমারগুলোও! জড়িয়ে ধরে বসে রয়েছি বৃক্ষের দেহখানি। অনেক করে
কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু তার তো সেই শক্তিটুকুও নেই!
"আচ্ছা বুঝে নিলাম বা নিজে নিজে মনকলা খেলাম যা-হোক! তুমি আমাকে ভালোবাস। আমি কিন্তু চলে যাচ্ছি গ্রাম ছেড়ে। কখন ফেরা হবে জানি না। নাও হতে পারে ফেরা! তবে তুমি ভালো থেকো। তোমার জন্যে আমার অকাল ভালোবাসা বেঁচে থাকবে। এক ফোটাও কমবে না। হে প্রিয় বৃক্ষ! যাই, ফি আমানিল্লাহ!
"আচ্ছা বুঝে নিলাম বা নিজে নিজে মনকলা খেলাম যা-হোক! তুমি আমাকে ভালোবাস। আমি কিন্তু চলে যাচ্ছি গ্রাম ছেড়ে। কখন ফেরা হবে জানি না। নাও হতে পারে ফেরা! তবে তুমি ভালো থেকো। তোমার জন্যে আমার অকাল ভালোবাসা বেঁচে থাকবে। এক ফোটাও কমবে না। হে প্রিয় বৃক্ষ! যাই, ফি আমানিল্লাহ!
পরের দিন বাবা-মা, ভাই-বোন, মাল-ছামানা সব গুঁছিয়ে গাড়িতে
উঠেছি এবং যাত্রা শুরু করলাম। এমন সময় অচেনা এক সুরওয়ালা ভাঙ্গা-সুরের ডাক
যেন আমার কর্ণপাত হল । যেন কেউ বলছে।
হে প্রিয় তা....ন.....ভী....র..! আমায় ছেড়ে যেও না কোথাও। আমি রবের কাছে ইন্দ্রিয় শক্তি উপহার পেয়েছি, রব আমাকে ইন্দ্রিয় শক্তি দানেছে। তুমি দোআ করেছ তাই! এ'টুকু বলে আর কোনো কথায় শুনতে পেলাম না!
খুব কান্না করেছি বৃক্ষটির জন্যে। প্রতিদিনই কান্না করতাম আর প্রিয় বৃক্ষের জন্য একটা করে চিঠি লিখতাম।
হে প্রিয় তা....ন.....ভী....র..! আমায় ছেড়ে যেও না কোথাও। আমি রবের কাছে ইন্দ্রিয় শক্তি উপহার পেয়েছি, রব আমাকে ইন্দ্রিয় শক্তি দানেছে। তুমি দোআ করেছ তাই! এ'টুকু বলে আর কোনো কথায় শুনতে পেলাম না!
খুব কান্না করেছি বৃক্ষটির জন্যে। প্রতিদিনই কান্না করতাম আর প্রিয় বৃক্ষের জন্য একটা করে চিঠি লিখতাম।
ফাস্ট ইয়ারের পরিক্ষা শেষে গ্রামের বাড়ি ফিরেছি! লিখিত সব
চিঠি সাথে নিয়ে এসেছি! প্ল্যান সব ঠিকঠাক।গ্রামে যাওয়ার পর প্রথম কাজ হবে
লিখিত চিঠিসব তাকে পড়ে শোনানো! গাড়ি থেকে নেমেই ঘরে যাওয়ার আগে গেলাম
বৃক্ষের কাছে। দেখি না কিছুই নেই সেখানে। একটা বড় দালান দাঁড়ানো সেখানে!
খুব রেগেছিলাম হয়তো বাড়িওয়ালা জমি ক্রয় করে বৃক্ষ কেটে বাড়ি করেছে। বিষণ্ণ
মনে বাড়ি ফিরছি। পথে সাজিদের সাথে দেখা, কুশলাদি শেষে জানতে চেয়েছি গাছটির
ব্যাপারে ওর কাছে। সে বলল।
তুমি যেদিন গ্রাম ছেড়েছ সেদিনই তরুতাজা বৃক্ষটি মারা গেল। এসব শুনে আর চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারলাম না! শত ব্যর্থ চেষ্টাতেও ব্যর্থ প্রেমিক আমি!!!
তুমি যেদিন গ্রাম ছেড়েছ সেদিনই তরুতাজা বৃক্ষটি মারা গেল। এসব শুনে আর চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারলাম না! শত ব্যর্থ চেষ্টাতেও ব্যর্থ প্রেমিক আমি!!!