ভাষা আন্দোলনের ডাকটিকিট
সেই দিনগুলো কোথায় গেল?
আহাদ আদনান
দুপুরবেলায় ভাত ঘুম জমেছে কি জমেনি, এমন সময় ডাকপিয়ন কাকু এসে হাঁক দিত। ‘এই, চিঠি আছে’। এক ছুটে খামটা নিয়ে কী আনন্দ! আমার লক্ষ্য অবশ্য চিঠির দিকে না, খামের উপর ডাকটিকিটের দিকে। এরকম করে একটার পর একটা ডাকটিকিটে ভরে উঠত আমার শখের খাতা। পরীক্ষার খাতায় আর বানিয়ে লিখতে হতোনা আমার প্রিয় শখের কথা।
একসময় বুঝতে শিখলাম, ডাকটিকিট মানে শুধু কয়েক ইঞ্চি কাগজের নকশা নয়। এর সাথে জড়িয়ে থাকে ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিখ্যাত মনিষী, স্মরণীয় ঘটনা। এই যেমন আমাদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে কত ডাকটিকিট আছে সেটা জানেন? বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এখন পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন বিষয়ক ১৪টি স্মারক ডাকটিকিট, ৮টি উদ্বোধনী খাম, ২টি বিশেষ খাম, ৩টি সুভেনির শিট, ২টি ফোল্ডার আর একটি পোস্টকার্ড প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের জন্মের দুইমাসের মাথায়, অর্থাৎ ১৯৭২এর ফেব্রুয়ারি মাসে নিজস্ব প্রথম স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ পায়। বি পি চিতনিশের ডিজাইনে ২০পয়সা মূল্যমানের এই ডাকটিকিটে শহীদ মিনার স্থান পায়। এ উপলক্ষে একটি উদ্বোধনী খামও প্রকাশিত হয়। আরেকটি বিশেষ খাম প্রকাশ করা হয় ভাষা আন্দোলনের ২৫বছর পূর্তি, ১৯৭৭সালে।
এর ১০বছর পরে (১৯৮৭) প্রতিটি ৩টাকা মূল্যমানের ২টি স্মারক ডাকটিকিট, ১টি উদ্বোধনী খাম ও ১টি ফোল্ডার প্রকাশিত হয়। এটি ডাক বিভাগের প্রথম ফোল্ডার। বাকিরউদ্দিন সরদারের নকশা করা ডাকটিকিটে শহীদ মিনার ও আন্দোলনরত ছাত্রজনতার ছবি স্থান পায়।
১৯৯১ সালের ২৫মে শহীদ মিনারের ছবি সম্বলিত ১ টাকা মূল্যমানের পোস্টকার্ড প্রকাশিত হয়। এর নকশা করেছিলেন কে জি মুস্তাফা। নতুন শতাব্দী, অর্থাৎ ২০০০সালে ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ উপলক্ষে প্রতিটি ৪টাকা মূল্যমানের ৪টি স্মারক ডাকটিকিট ও ২টি উদ্বোধনী খাম বের করা হয়। এতে স্থান পেয়েছিল ভাষাশহীদ বরকত, রফিক, সফিউর এবং আব্দুল জব্বারের ছবি।
২০০২সাল ছিল ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর। প্রতিটি ১০টাকা মূল্যমানের ৩টি স্মারক ডাকটিকিট, ৩০টাকা মূল্যমানের ১টি সুভেনির শিট ও ১টি উদ্বোধনী খাম বের করে এই উপলক্ষকে স্মরণ করে ডাক বিভাগ। ডাকটিকিটের নকশা করেন আনোয়ার হোসেন আর সুভেনির শিটের কাইয়ুম চৌধুরী।
২০০৯সালের ২০ফেব্রুয়ারি ৫০টাকা মূল্যমানের ১টি সুভেনির শিট, ১টি উদ্বোধনী খাম ও ১টি ফোল্ডার প্রকাশিত হয়। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১০সালের ২১ফেব্রুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের উদ্বোধন উপলক্ষে ১৫টাকা মূল্যমানের ১টি স্মারক ডাকটিকিট ও ১টি উদ্বোধনী খাম প্রকাশিত হয়।
২০১২ সালে ভাষা আন্দোলনের ষাট বছরের প্রাক্কালে প্রকাশ পায় ২১টাকা মূল্যমানের ১টি স্মারক ডাকটিকিট ও ১টি উদ্বোধনী খাম। ২০১৭সালে প্রকাশিত হয় ১টি বিশেষ খাম। এর পরের বছর প্রকাশ পায় ৫ ও ১০টাকা মূল্যমানের ২টি স্মারক ডাকটিকিট ও ৫০টাকা মূল্যমানের সুভেনির শিট।
এই লেখাটি পড়ে হোয়াটস আপ, ম্যাসেঞ্জার আর ভিডিও কলের যুগের অনেকে ভাবতে পারে ডাকটিকিট, পোস্টকার্ড এগুলো কি জিনিস। হয়ত কেও কেও গুগল দাদা’কে জিজ্ঞেস করতে পারে, ডাকটিকিটের কিছু ছবি দেখাওতো। কে যেন বলেছিল, অতীতের অনেককিছু ফিরে ফিরে আসে। ডাকটিকিট, চিঠি, পোস্টকার্ড এরা কি না ফেরার দেশের বাসিন্দা হয়ে গেছে?
‘পুনর্জন্ম’ ব্যপারটা নস্টালজিক বুদ্ধুদের তাই বুঝি এত প্রিয়।