মাতৃভাষার পদাবলি














কামনায় যে সকাল
মো: লুৎফর রহমান রবি

একটা সুন্দর সকালের অপেক্ষায়,
অগুনিত বিনিদ্র রজনীর ঘটে অবসান।
যে সকালে তুমি থাকবে পাশে।
যে সকালে তোমার চুলের সুগন্ধ ভাঙ্গাবে নিদ্রা।
যে সকালে নীল শাড়ি গায়ে জড়ায়ে বাড়িয়ে দিবে প্রেম পিয়াস।
যে সকালে ছোট্ট চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ডাকবে তুমি।
যে সকালে উষ্ণতায় এ হ্রদয়ে ফুটবে কালো গোলাপ।
যে সকালে বৃষ্টি ঝড়বে চারিধার ঝরঝর।
যে সকালে তোমার শাড়ির আঁচলে লুকাবো বদন।
যে সকালে মনন জুড়ে শুধু তোমার প্রতিক্ষা।
যে সকালে পাশাপাশি দু’জনা বসে চখাচখি।
যে সকালে ঝাপটে ধরে বুকে বলবো, ভালোবাসি সখি।
এমনি একটা সকালের প্রতিক্ষা হ্রদয়ে।
শত শত যাতনা করে বিদায়,
গড়েছি ভালোবাসার মহাসিন্ধু।
ভালোবাসি তোকে বন্ধু শত শত বর্ষ পরেও
বলতে চাই ভালোবাসি



যে বিশ্বাস কখনো হারেনা
আবু ইউসুফ সুমন

চারপাশে চলাফেরা করা সংশয়গুলো যখন পাহাড়সম আকার নিয়ে আসে
অবিশ্বাসী শক্তির কাছে আমার অন্তরের সামান্য বিশ্বাসটুকু যখন আর পেরে উঠেনা।

সৃষ্টি হয়েও যখন স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিতে মন বিরোধিতা করে
রঙ বেরঙের শব্দের ফাঁদে পড়ে যখন মিথ্যেগুলো সত্য হয়ে উঠে।

যখন চিন্তার সীমাবদ্ধতাগুলো স্রষ্টার অবাধ্যতায় মনকে উষ্কানি দেয়
ঐশ্বরিক বিশ্বাস ছেড়ে যখন শুধু বস্তুবাদী চোখ দিয়ে দুনিয়াকে দেখি।

যখন অনুমোদিত আলাপের চেয়ে নিষিদ্ধ আলোচনা আকর্ষণীয় হয়ে উঠে
কমনসেন্স আর যুক্তিবোধ লোপ পেয়ে যখন মরিচিকার পিছনে ছুটতে থাকি।

ঠিক তখন একদিন আমি কুরআন নিয়ে বসি; যার প্রত্যেকটি আয়াতের প্রেক্ষাপটও মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করি
আমি একমাত্র সত্য, সভ্য আর পরম মহিমাপূর্ণ আদর্শের সন্ধান পাই, কেঁপে উঠে আমার অন্তরাত্মা।

এই কুরআনের শক্তির কাছেই একদিন পরাজিত হয়েছিলো আরববাসী
নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর মুখনিসৃত বাণীতে
প্রকম্পিত হয় তাদের হৃদয়ের কুঠুরি।

হেরে যায় তাদের সকল সংশয় অবিশ্বাস আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন
প্রবল প্রতিকূল পরিবেশকে পরাস্ত করে দিকবিদিক উড়ে শুধু বিশ্বাসের পতাকা।

যে বিশ্বাস কখনো হারেনি, যে বিশ্বাস কখনো হারেনা
যে বিশ্বাসের পতাকাবাহীদের পরাজিত মুখ কেউ দেখিনি...
হে আল্লাহ, আপনি আমাকে সেই সকল বিশ্বাসীদের দলে কবুল করে নিন।




অস্তমিত প্রায় 
হাসান মাসুদ

বৈঠকী ঢংয়ে কথায় কথায়
ফুরিয়ে যাচ্ছে শীত।

বাবা সারাদিন খাটুনির পর
একটু বিশ্রাম নিতে চেয়েও
নিতে পারছেন না।

ভিটামিন শূন্যতায় ঝাপসা
হয়ে আসছে মায়ের গহীন
চোখ - আমরা হেঁটে চলেছি
নৈপন্থের দিকে।

হটাৎ মনে হলো

শীতের মতই চলাচল হয়ে
বয়সের আলাপচারিতায়
ফুরিয়ে যাচ্ছে বাবা।

আর মায়ের গহীন চোখ দুটোও
স্বপ্ন দেখাতে দেখাতে পুড়ে
যাচ্ছে ইদানিং; তবুও আমরা
হেঁটে চলেছি নৈপন্থের দিকে।



কৃষ্ণচূড়ার ত্রাস
সাব্বির হোসেন 

বসন্তে নিখোঁজ হয়ে দেখো
কত ডালে ঝরে কত ফুল,
নারী যদি ফাগুনের হয় ফুল
নর তুমি নৈঋতের বায়ু কূল।

শিমুল পলাশের আঁচলে মাতাল বাতাস
হলুদ গাঁদায় বয়ে চলে জন¯্রােত,
ভালোবাসো যদি কাছে এসো
এক চিমটি সিঁদুরে রাঙাবো তোমার ঠোঁট।

চোখ যদি ভেজে কালো রাতে
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে ভেজে মন,
তোমার বসন্তে আমার কৃষ্ণচূড়ার ত্রাস
ঊাসন্তী; তুমিই তাঁর কারণ।


ইদানীং ভালোবাসা আঁকা শিখছি
নূরনবী সোহাগ


‘দ’ দিয়ে পাখি আঁকা শিখেছিলাম মায়ের কাছে
দ’য়ের হইছে মাথা ব্যথা, শূন্য আসছে দেখতে
বাইশজন আসছে কবিরাজ, বসতে দিলাম লাঠি
একটানে বানাইলাম পাখি
তখন ছন্দ পড়ে পড়ে পাখি আঁকি
খেয়ালে, দেয়ালে সর্বত্র পাখি আর পাখি
দিনগুলো হয়ে উঠেছিল পাখিময়

ইদানীং জাদুকরের কাছে ভালোবাসা আঁকা শিখছি
চোখ ও চিবুকের গোপনমন্ত্রে; হাসির রঙ ছিটিয়ে
হৃদয়ের মধ্যে সবুজ সবুজ ভালোবাসা আঁকছি
আমার মনের লাজ নেই আর
আপনি ছাড়া কাজ নেই তার
ছন্দ পড়ে পড়ে আমি ভালোবাসা আঁকি অবিরাম
তোয়াক্কা নেই দিন রাতের; সময় কিংবা অসময়
দিনগুলো হয়ে উঠছে ভালোবাসাময়




দুঃখ বলি, শোনো
নিঃশব্দ আহামদ


দুঃখ বলি, শোনো
যে দুঃখ, চেয়েছিলে জানতে
জানো তো, দুঃখ পেলে দুঃখ বাড়ে
চারপাশে

এভাবে সন্ধ্যা আসে, ধুপ জ¦ালাও
শাড়ির ভাঁজে পরিপাটি বেশ
নিজেকে জানান দিতে থাকো, সব ই ঠিকঠাক
ঠিক ভেতর থেকে, গভীরতর-এক কান্না
রোজ লুকায়-গৃহস্থালি চোখ

দ্যাখে দ্যাখে তোমাকে
রোজদিন একটা ভয়, ঠিক এসব সন্ধ্যায়
ভাবায়, আর আমি অভিলাষটুকু মরে যেতে যেতে
শেষবার, ইচ্ছে করে বেঁচে উঠি মরতে মরতে আবার
গমস্ত শূন্যতা পাশে

বয়োভারে নুয়ে যায় বৃক্ষ, বয়সের মতোন
সমবেদনা তার মর্মমূলে, ঠিক তোমার চোখে
আমি শুধু আক্ষেপে বাঁচি, একদিন তুমিও নেবে শোক
এপার ওপারে, যতোটা কাছে থাকার মতো
না, তবু হয়ে উঠেনা-মুছে দেবার ভেজা চোখ

জানো, এতোটা দিনের পরেও কতোটা দুঃখ শেষে
আমরা কেবল মেনে নেবার প্রবণতা করছি মুখস্ত
যদি আসে অপেক্ষার সন্ধ্যায় এমনো শোক



বর্ণমালার ইতিকথা
শাহীন রায়হান

অর্ধেক শহীদ মিনার বিধ্বস্ত পড়ে আছে আহত বর্ণমালায়
অথচ এই বর্ণমালার হৃৎপি-সম
প্রতিটি বর্ণই আমার জন্মদাতা মা
যার অবরুদ্ধ জঠর ছিঁড়ে আমি আজ
অফুরন্ত কথা বলতে শিখেছি-
রাত্রির গাঢ়তম অন্ধকার ঠেলে নীরবে জেগে ওঠা
শহীদ মিনারে আজও আমি ভাষা শহীদের পদধ্বনি শুনি
শুনি রফিক সালাম বরকতের ঊর্দু পোড়ানো অগ্নি শ্লোগান।

আজও আমি প্রজ্জ্বলিত সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়াই
রোদোজ্জ্বল এক নতুন দিনের আলিঙ্গনে
প্রিয়তম বাতাসে শুনি বায়ান্নর প্রতিধ্বনি
যেখানে ঊর্দুর কফিনে মহাসমারোহে বাঁজে
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।


ভাষামানবের গান
সৌরভ দত্ত

অনিকেত সন্ধ্যায় রাশি-নক্ষত্র বদলের পর
ফেনিল জরায়ু  ছিঁড়ে উঠে বসে মিথুনভাষা

সূর্যাস্ত চিনিয়ে দেয় গাছের অস্থিকোটর
আবিষ্কার করি পাখিদের বিমর্ষ গান...

আত্মমুখী কাঁঠালের মর্মরে বেজে ওঠে
সারোদ; হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বাঁশি-

নীল জলের অথই থেকে তুলে আনতে চাই
গায়ে অক্ষর আঁকা একটা ডুবন্ত মানুষকে

দীর্ঘ ছায়ায় বিদ্যাসাগরের চোখ যেন স্বপ্নময়
ইশারার ধ্বনি-আবার কোথায় হারিয়ে যায়

সাতটি তারার তিমির আঁকড়ে পড়ে আছে
আমাদের জন্মান্তরের প্রিয় গুহালিপিগুলো

গ্রাম্য কৃষকের অশস্যল সময়ের না- কবিতায়
কৃষ্ণচূড়ার মত ফুটে আছে বাংলাভাষা।।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট