পদাবলি : ০২




বাজে ছেলে অথবা এই শহর
জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ

একটা বাজে ছেলের নামে
লিখে দেয়া হলো তাবৎ জনপদ;
ছেলেটা অভিমান করে ঘর ছেড়েছে বলে
তাকে নিয়ে কানাকানি শেষ নেই মানুষের;
কেউ জানে না;
এই ছেলেটা রাজ করতে এসেছে এই শহর...


একক বন্ধন 
মিশির হাবিব 

মায়াবী বুকের আবডালে তৃপ্তিময় সাগর আছে
আড়াল হতে দেবে না প্রেমিক বুক
জল নেই
তীর নেই
আছে শুধু ঢেউ
হৃদয় দোলাবে
মন নাচাবে
নাচিয়ে দুলিয়ে নিয়ে যাবে দজলা ফোরাতের পবিত্র তীর
সুবিশাল সাগরে ডুবেই স্বর্গীয় হয়েছেন অনেক পুরুষত্ব
চাপা উত্তাপ নেভাতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হও পুরুষ সমুদয় প্রেম ঢেলে পূর্ণ করো একক নারীত্ব
বিষাক্ত ইনসোমনিয়ায় ভুগবে না চোখ
হৃদয় বিভক্ত করো না পুরুষ কখনো
একই ফুলে হাজারও বাসর সাজানো যেতে পারে
দলিত পাপড়ির বিলাসিতায় দেহ তৃপ্ত হলেও নির্জীব মন
একই ক্যানভাসে কোটি চিত্রকর্ম আকাঁ যায়-একই তুলিতে
হৃদয় কোনো ক্যানভাস-তুলি নয়
মানব হৃদয় প্রেম নিরপেক্ষ হলেও হৃদয় অপেক্ষক
এক সাগরে দুটি তরী ভাসলেই ভ্রষ্ট হয় ঢেউয়ের মাধুর্য হৃদয় বন্টন করো না পুরুষ হৃদয়ে হৃদয়ে
কেননা প্রতিটি হৃদয়জোড় মহাবৈশ্বিক শ্রেষ্ঠ বন্ধন।

বসন্ত
রিপলু চৌধুরী

আজি বসন্ত এসে গেছে
পুবাল হাওয়া বইছে মনে
নতুন কুড়ি জাগছে বনে বনে
নতুন সুবাস ছড়াচ্ছে মনে।

আজি বসন্ত এসে গেছে
গাছে গাছে শিমুল ফুল ফুটছে
কৃষ্ণ চূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে
বসন্তের কোকিল বইছে গাছের ডালে
বসন্তের হাওয়ায় আজি মন দুলে।

আজি বসন্ত এসে গেছে
মনের বাগানে ফুটিল ফুলরে
ফুলেরগন্ধ হাওয়ায় ভাসে
সেই গন্ধে আমার হৃদয়ে মাঝে আসে।

আজি বসন্ত এসে গেছে
তুমি যখন আস বছর ঘুরে
ঊসন্ত ঋতুর দুলা লাগে সবার ঘরে
বসন্তের ছোঁয়া সবার মনে আনন্দ ধরে
শিল্পীগণ বসন্ত ঋতুর গান ধরে।

আজি বসন্ত এসে গেছে
বসন্তকে বরণ করে নানান সাজে
মন সাজে নানান রঙ এর ফুলের সাজে
চারদিকে বসন্তের গান বাজে
ঊসন্ত এসে গেছে নতুন সাজে।


তুমি চলে যাচ্ছো
শাহীন খান

ঝুমু, তুমি চলে যাচ্ছো, মধু মাখা বসন্তকে উপেক্ষা করে, কোকিলের কণ্ঠ বাক রুদ্ধ করে, আমার পাঁজরে একশ একটা লাত্থি বসিয়ে, হৃদয়টা গুঁড়ো গুঁড়ো করে, ময়লা আবর্জনা বাসী তরকারি, ছেঁড়া ঝালর মতো পড়ে আছি মুখ থুবড়ে ডাস্টবিনে।
তুমি চলে যাচ্ছো, এ বুকে পাথর গড়ে, অবহেলার ড্রেনে ফেলে, খুব বেশি তুফান তুলে। সিডের ঝড় তুলে। ঝলমল গাড়ি হাঁকিয়ে, অজনা অচেনা লোকালয়ে আতসবাজি সানাইয়ের রেশ আর আড়শি পড়শী রেখে।
তুমি চলে যাচ্ছো, কোন এক কবিকে অনন্ত শয্যায় শুইয়ে, গানের পান্ডুলিপি মাড়িয়ে, দূরে, দূর দূরান্তে, এক সমুদ্র দুঃখের কষ্টের মহাসাগরে ভাসিয়ে, এক পৃথিবী অভাবে রেখে, গলিত লাভা চারদিকে ছড়িয়ে।
তুমি চলে যাচ্ছো, দোয়েল বাচ্চার মাথা কেটে, ফুলের চারায় ফুটন্ত পানি ঢেলে, উপড়ে ফেলে! পুঁই গাছের মাচা তছনছ করে, স্বর্ণালী বর্ণালী আকাশ আলকাতরায় লেপটে দিয়ে, অমাবস্যা এনে, চিঠি লেখার প্যাড ইঁদুরকে সঁপে, সাজানো ঘর বোশেখী ঝড়ের কাছে গচ্ছিত রেখে, আলুথালু করে।
তুমি চলে যাচ্ছো, কাঁঠাল গাছটার ডাল ভেঙ্গে, শ্যাওলা দিঘির পাশ ঘেঁষে, কলা পাতা ছিঁড়ে, বাঁশঝাড়, কবরস্থান, শশ্মান আর অলিগলি বস্তির নোংরা মাঝ পথ দিয়ে, রাজপথে। ভ্যানিটি ব্যাগে মুঠোফোন আর সাজুগুজু পণ্য ভরে।
তুমি চলে যাচ্ছো, উঁইপোকায় কাটছে লেপ কাঁথা কম্বল, চশমাটায় পড়েছে দাগ, ইমেলের পাসওয়ার্ড গেছি ভুলে, ফেবুকে আইডি হয়েছে নিষ্ক্রিয়। গুগল হয়ে গেছে এলোমেলো।
তুমি চলে যাচ্ছো, ফরমেট করে যাচ্ছো তোমার সমস্ত ডকুমেন্ট, দাবানলে ফেলে যাচ্ছো সব সব সব, না বলা না দেখা অসুখে নিমজ্জিত করে, গার্মেন্টস কর্মী রূপে কিংবা মুখোশধারী হায়েনা সেজে।
তুমি চলে যাচ্ছো, বিরহের গান হৃদয়ের মেমোরিতে আজীবনের জন্য সেইভ করে দিয়ে আর ছলনাময়ী প্রতারকের বদনামে আখ্যায়িত করে।
তুমি চলে যাচ্ছো, তুমি চলে যাচ্ছে, তুমি চলে যাচ্ছো, আমার গোটা হৃদয়টাকে চিতা বানিয়ে, চোখ দু’টোকে শ্রাবণ বানিয়ে, মনটাকে কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে দিয়ে, সব লন্ডভন্ড করে, চলে যাচ্ছো, চলে যাচ্ছো, চলে যাচ্ছো, চলে যাচ্ছো!




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট